সামুয়েল মোর্স এর জীবনী | Biography of Samuel Morse

সামুয়েল মোর্স এর জীবনী | Biography of Samuel Morse

May 19, 2025 - 15:55
May 27, 2025 - 11:14
 0  1
সামুয়েল মোর্স এর জীবনী |  Biography of Samuel Morse

শিল্পীসত্ত্বাকে পিছনে ফেলে বিজ্ঞানী বনে যাওয়া একজন স্যামুয়েল মোর্স

জন্ম

স্যামুয়েল ফিনলে ব্রিজ মোর্স

২৭ এপ্রিল ১৭৯১
চার্লসটাউন, ম্যাসাচুসেটস, যুক্তরাষ্ট্র

মৃত্যু

এপ্রিল ২, ১৮৭২ (বয়স ৮০)
নিউ ইয়র্ক সিটি, যুক্তরাষ্ট্র

শিক্ষা

ইয়েল কলেজ

পেশা

চিত্রশিল্পী , আবিষ্কারক

পরিচিতির কারণ

মোর্স কোডের আবিষ্কারক

দাম্পত্য সঙ্গী

  • লুক্রেশিয়া পিকেরিং ওয়াল্টার
  • সারাহ এলিজাবেথ গ্রিসওয়াল্ড

সন্তান

পিতা-মাতা

  • জেডিডায়ে মোর্স (পিতা)

আত্মীয়

সিডনি এডওয়ার্ড মোর্স (ভাই)

স্বাক্ষর

স্যামুয়েল মোর্সের জন্ম


মার্কিন উদ্ভাবক ও চিত্রকর স্যামুয়েল ফিনলে ব্রিজ মোর্স যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটসের চার্লসটাউনে জন্মগ্রহণ করেন। প্রতিকৃতি আঁকিয়ে হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার পর মধ্যবয়সে এসে মোর্স ইউরোপীয় টেলিগ্রাফের ওপর ভিত্তি করে একক তারের টেলিগ্রাফ ব্যবস্থা উদ্ভাবনে ভূমিকা রাখেন। সহ–উদ্ভাবক হিসেবে ১৮৩৭ সালে মোর্স কোড উদ্ভাবন করে তিনি তার যোগাযোগ বা টেলিগ্রাফির বাণিজ্যিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখেন।

ব্যক্তিগত জীবন

স্যামুয়েল এফবি মোর্স মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের চার্লসটাউন শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ধর্মযাজক ও ভূগোলবিদ জেডিডায়ে মোর্স (১৭৬১-১৮২৬) এবং এলিজাবেথ অ্যান ফিনলি ব্রিজের (১৭৬৬-১৮২৬) প্রথম সন্তান। তার পিতা ক্যালভিনিস্ট সম্প্রদায়ের অনুসারী ও আমেরিকান ফেডার‍্যালিস্ট পার্টির সমর্থক ছিলেন। জেডাইডা বিশ্বাস করতেন, ক্যালভিনিস্ট সম্প্রদায়ের পক্ষে সংস্কারপন্থী ঐতিহ্য বজায় রাখা সম্ভব হবে। এছাড়াও তিনি যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ফেডার‍্যালিস্ট পার্টির মিত্রতাপূর্ণ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। জেডাইডা শক্তিশালী এককেন্দ্রিক সরকারব্যবস্থায় বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি তার সন্তান স্যামুয়েলের অন্তঃকরণে ফেডার‍্যালিস্ট ভাবধারা ও ক্যালভিনিস্ট মূল্যবোধের শিকড় প্রোথিত করেছিলেন। মোর্সদের প্রথম আমেরিকান পূর্বসূরির নাম-ও "স্যামুয়েল মোর্স", যিনি ১৬৩৫ সালে ম্যাসাচুসেটসের ডেডহ্যাম শহরে বসবাস করেন।

ম্যাসাচুসেটসের অ্যান্ডওভার শহরের ফিলিপস একাডেমিতে প্রাথমিক শিক্ষালাভের পর ইয়েল কলেজে মোর্স লেখাপড়ার উদ্দেশ্যে গমন করেন। সেখানে তিনি ধর্মীয় দর্শন, গণিত ও অশ্ববিজ্ঞানের উপর পড়াশোনা করেন। ইয়েলে পড়াকালীন মোর্স বেঞ্জামিন সিলিম্যান ও জেরেমিয়াহ ডে প্রদত্ত বিদ্যুতের উপর ভাষণগুলো নিয়মিত শ্রবণ করতেন। এছাড়াও তিনি "ব্রাদার্স ইন ইউনিটি" নামে গুপ্তসংগঠনের সদস্য ছিলেন। ১৮১০ সালে তিনি ইয়েল থেকে সম্মানসহ স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।

১৮১৮ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর নিউ হ্যাম্পশায়ার অঙ্গরাজ্যের কংকর্ড শহরে লুক্রেশিয়া পিকেরিং ওয়াল্টারের সঙ্গে মোর্স বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের প্রথম সন্তান সুসান ১৮১৯ সালে, দ্বিতীয় সন্তান চার্লস ১৮২৩ সালে ও তৃতীয় সন্তান জেমস ১৮২৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন। ১৮৪৮ সালের ১০ আগস্ট মোর্স সারা এলিজাবেথ গ্রিসওয়াল্ড-কে নিউ ইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের ইউটিকা শহরে দ্বিতীয়বার বিবাহ করেন। তাদের চার সন্তান ছিল- স্যামুয়েল (জন্ম:১৮৪৯), কর্নেলিয়া (জন্ম:১৮৫১), উইলিয়াম (জন্ম:১৮৫৩) এবং এডওয়ার্ড (জন্ম:১৮৫৭)।

টেলিগ্রাফ

১৮৩২ সালে জাহাজে করে ইউরোপ থেকে আমেরিকা ফেরার পথে মোর্সের সাথে বস্টন অধিবাসী চার্লস টমাস জ্যাকসনের দেখা গয়। জ্যাকসন তড়িচ্চুম্বকত্ব বিষয়ে অত্যন্ত পারদর্শী ছিলেন। তড়িচ্চুম্বকের উপর কৃত জ্যাকসনের পরীক্ষাগুলো পর্যবেক্ষণ করে মোর্স "এক তারবিশিষ্ট টেলিগ্রাফ উদ্ভাবন করেন।" মোর্স পেটেন্ট অধিকার দাবি করার জন্য যে টেলিগ্রাফ যন্ত্র প্রেরণ করেন, সেটি স্মিথসোনিয়ান ইনস্টিটিউটের আমেরিকান ইতিহাস জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে।এসময় তিনি মোর্স কোড আবিষ্কার করেন, যেটি টেলিগ্রাফের প্রাথমিক ভাষা। তথ্যের ছন্দীয় সঞ্চালনে আজও মোর্স কোড ব্যবহৃত হয়।

প্রথম আন্ডারউড টাইপরাইটার উদ্ভাবিত

জার্মান–মার্কিন প্রকৌশলী ফ্রানজ সাভার ভাগনার প্রথম আন্ডারউড টাইপরাইটার উদ্ভাবন করেন এবং মার্কিন পেটেন্ট অফিসে পেটেন্ট স্বত্বের জন্য আবেদন করেন। ১৮৭৪ সালে থেকে আন্ডারউড পরিবার রেমিংটন টাইপরাইটারের ফিতা (রিবন) ও কার্বন পেপার তৈরি করত। রেমিংটন যখন নিজেরাই রিবন তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়, তখন আন্ডারউড টাইপরাইটার নির্মাণের কথা ভাবে।সাভার ভাগনার একটি টাইপরাইটার উদ্ভাবন করে উদ্যোক্তা জন টমাস আন্ডারউডকে দেখান। আন্ডারউড ভাগনারকে সহযোগিতা করেন এবং তাঁর কোম্পানি কিনে নেন। ১৯০০ সালের মধ্যে ৫টি আন্ডারউড টাইপরাইট বাজারে ছাড়া হয়। এগুলোকে তখন বলা হতো সত্যিকারের প্রথম আধুনিক টাইপরাইটার। ১৯২০–এর দশকে আন্ডারউড বিশ্বের সবচেয়ে বড় টাইপরাইটার উৎপাদক হয়ে ওঠে। কানেকটিকাটের হার্টফোর্ডে তাদের কারখানায় পৃথিবীর অর্ধেকের বেশি টাইপরাইটার তৈরি হতো। হার্টফোর্ড সেই সময়ে আন্ডারউড ও রয়েল টাইপরাইটার কোম্পানি মিলে প্রতি মিনিটে একটি করে টাইপরাইটার উৎপাদন করত। এ জন্য হার্টফোর্ডকে ‘টাইপরাইটারের রাজধানী’ বলা হতো।২৭ এপ্রিল ১৯৫৫


এরিক স্মিড্টের জন্ম

মার্কিন কম্পিউটার প্রোগ্রামার ও গুগলের সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এরিক স্মিড্‌ট যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে জন্মগ্রহণ করেন। ২০০১ থেকে ২০১১ তিনি প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান গুগলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেন ইনকরপোরেটেডের নির্বাহী চেয়ারম্যান হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেন (২০১৫–২০১৭)। ২০১৭ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন অ্যালফাবেটের কারিগরি উপদেষ্টা।

 ২০২২ সালে প্রকাশিত ব্লুমবার্গ বিলিওনিয়ার সূচক অনযায়ী এরিক স্মিড্‌টের সম্পদের পরিমাণ ২ হাজার ৫০১ কোটি মার্কিন ডলার।
শিক্ষানবিশ হিসেবে বেল ল্যাবসে কাজ করার সময় স্মিডট ১৯৭৫ সালে মাইক লেকসের সঙ্গে ইউনিক্স অপারেটিং সিস্টেমের জন্য লেক্স অ্যানালাইসিস প্রোগ্রাম লেখেন। ১৯৯৭ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তিনি নভেলের সিইও হিসেবে কাজ করেন। তিনি অ্যাপল ইনকরপোরেটেডের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যও ছিলেন।

 ২০০৮ সালে গুগলের চেয়ারম্যান থাকার সময় তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বারাক ওবামার পক্ষে প্রচারণায় অংশ নেন। এরপর তিনি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা হিসেবে ওবামার প্রেসিডেন্টস কাউন্সিলের অন্যতম সদস্য হয়ে ওঠেন। ২০২১ সালের অক্টোবরে এরিক স্মিড্‌ট স্পেশাল কম্পিটিটিভ স্টাডিজ প্রজেক্ট প্রতিষ্ঠা করেন। এখনো সেটির চেয়ারম্যার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

ইন্টারনেটে সরাসরি চ্যাট করে কোকো নামের গরিলা

ইন্টারনেটে প্রথম সরাসরি অনুষ্ঠিত আন্তঃপ্রজাতি (ইন্টারস্পেসিস) চ্যাটিংয়ে অংশ নেয় কোকো নামের এক গরিলা। তারকাখ্যাতি পাওয়ার এই কোকো আমেরিকান ইশারাভাষার এক শিক্ষার্থী ছিল। এ ঘটনায় সিলিকন ভ্যালির গরিলা ফাউন্ডেশনের বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করে দেন গরিলাও ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারে।

নাম্বার এইট প্লিজ’- টেলিগ্রাফ অফিসের কর্মীকে কেউ হয়তো কথাটা বললেন। কয়েকশ মাইল দূরে কোনো বন্ধুকে খুব দরকারি কোনো খবর হয়তো পাঠাতে চান তিনি। ‘ডট-ড্যাশ-ডট’ এর সেই বিখ্যাত মোর্স কোডের কাজ তখনই শুরু হয়ে গেল এবং লোকটি কাউন্টার ছাড়ার আগেই হয়তো বন্ধুর কাছে সেই খবর পৌঁছে গেল। তথ্য প্রযুক্তির ব্যাপক উন্নতির ফলে যন্ত্রটার কথা এখন আর সেভাবে কেউ না চিনলেও একসময় দ্রুত তথ্য আদান-প্রদানের সবচেয়ে কার্যকর মাধ্যম ছিল এই টেলিগ্রাফ।

দূরত্বের বাধা অতিক্রম করে প্রায় চিন্তার গতিতে বিভিন্ন দেশের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করা যার জন্যে সম্ভব হয়েছিল তিনি কিন্তু প্রথম জীবনে ছিলেন নামকরা শিল্পী। হ্যাঁ, স্যামুয়েল মোর্সের কথাই বলছি। যৌবনে তিনি একটার পর একটা সুরম্য ছবি এঁকেছেন আর স্বপ্ন দেখেছেন, পঞ্চদশ শতাব্দীর শিল্প ঐশ্বর্যকে যারা পুনরাবিষ্কৃত করবেন, তিনি হবেন তাদেরই একজন। ভেবেছিলেন রাফায়েল, মাইকেল এঞ্জেলো এবং তিশিয়ানের প্রতিভার সঙ্গে একদিন তার প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। পঁচিশ বছর বয়সেই লন্ডনের রয়্যাল একাডেমিতে তার ছবি স্থান পেলেও, শেষপর্যন্ত পৃথিবীর মানুষের কাছে মোর্স আজ টেলিগ্রাফের আবিষ্কারক হিসেবেই পরিচিত।

১৭৯১ সালের ২৭ এপ্রিল বোস্টনে স্যামুয়েল মোর্সের জন্ম। পিতা ধর্মযাজক জেডিয়া মোর্স আর মা এলিজাবেথ ফিনলে মোর্স। ছোটবেলা থেকেই তার মধ্যে বৈজ্ঞানিক বিষয়ে উৎসাহ দেখা যায়। ভাই সিডনীর সাথে নানা পরীক্ষায় মেতে থাকতেন মোর্স। পড়াশোনার জন্য প্রথমে তাকে পাঠানো হয় ফিলিপস একাডেমিতে। কিন্তু সেখানে ভালো ফলাফল না করায় এবং মোর্সের চিত্রকলায় ব্যাপক উৎসাহ দেখে তার পিতা তাকে পাঠালেন ইয়েল কলেজে। সেখান থেকে তার স্নাতক সম্পন্ন হবার আগেই বিদ্যুৎ সম্বন্ধে বহু বক্তৃতা তিনি উৎসাহ নিয়ে শুনতেন। আর অবসর সময় কাটাতেন ছবি এঁকে।

কিন্তু ক্রমশ চিত্রশিল্পের প্রতি বেশি অনুরক্ত হয়ে পড়তে থাকেন তিনি। শেষপর্যন্ত বাবার কাছে অনেক অনুনয়-বিনয় করে ১৯১১ সালে চিত্রকলা নিয়ে পড়াশোনার জন্যে ইউরোপে পাড়ি জমান। ইউরোপ থেকে বাড়িতে প্রথম চিঠি লেখেন, “ইচ্ছে করে আমার চিঠিখানা যেন তোমরা এখনই পেয়ে যাও। কিন্তু তিন হাজার মাইল তো আর এক মুহূর্তে পার হওয়া যায় না।” লন্ডনে যে চার বছর ছিলেন সেই সময় তিনি বিখ্যাত আমেরিকান চিত্রশিল্পী বেনজামিন ওয়েস্টের কাছে কলাবিদ্যা শেখেন এবং কয়েকটি সুন্দর ছবিও আঁকেন।

বোস্টনে ফিরে এসে মোর্স একটি স্টুডিও খোলেন। স্টুডিওতে লাভ হতো খুবই কম। তার দেশের লোকেরা তখনো পোর্ট্রেট ছাড়া অন্য কোনো ছবির বিচার করতে শেখেনি। বাধ্য হয়ে তখন ইজেল কাঁধে করে তাকে নানা জায়গায় ঘুরতে হয়েছে। ১৮১৬ সাল থেকে ১৮১৮ সাল পর্যন্ত তিনি নিউ ইংল্যান্ড থেকে ভারমুস্টের বিভিন্ন শহর ঘুরে ঘুরে এঁকেছেন একেকটি পোর্ট্রেট।

সেসময় লুক্রেসিয়া ভেনের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। লুক্রেসিয়া তাকে অনেক কাজে সাহায্য করেন। তাদের বিবাহিত জীবনকে সুখে-শান্তিতে ভরিয়ে রাখেন। মোর্স যখন ওয়াশিংটনে হ্যামিলটনের পোর্ট্রেট আঁকায় ব্যস্ত, তখন স্ত্রীর মৃত্যু সংবাদ পান। নিউ হ্যাভেন থেকে ওয়াশিংটনে এই খবর পৌঁছাতে সময় লেগেছিল ছ’দিন। অথচ দূরত্ব মাত্র চারশো মাইলেরও কিছু কম। স্ত্রীর মৃত্যুতে মোর্স খুব ভেঙে পড়েন। লুক্রেসিয়া তিনটি সন্তান রেখেই চিরবিদায় নেন পৃথিবী ছেড়ে। মোর্স তাদেরকে আত্মীয়দের বাড়িতে রেখে ১৮২০ সালে বেরিয়ে পরেন ইউরোপ ভ্রমণে।

তিন বছর পর দেশে ফেরার পথে তার জীবনের মোড় ঘুরে যায়। ডক্টর চার্লস জ্যাকসন নামে বোস্টনের জনৈক ভদ্রলোক জাহাজের লোকদের আনন্দদানের জন্য নানারকম বৈদ্যুতিক পরীক্ষা দেখাচ্ছিলেন। তা দেখে মোর্সের মনে হলো, বিদ্যুৎকে ঠিক মতো ব্যবহার করতে পারলে মানুষের ভাষাকেও মুহূর্তের মধ্যে দূরে পাঠানো হয়তো অসম্ভব নয়। মাইলের পর মাইল তারের ভেতর দিয়ে মুহূর্তের মধ্যে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হতে পারে। মোর্স ভাবলেন, তারের যেকোনো অংশে বিদ্যুতের উপস্থিতিকে যদি দেখানো সম্ভব হয়, তবে মানুষের ভাষাকেও বিদ্যুতের সাহায্যে মুহূর্তের মধ্যে পৃথিবীর এক অংশ থেকে অন্য অংশে পাঠিয়ে দেওয়া অসম্ভব হবে না।

যৌবন বয়সের চিত্রশিল্পী স্যমুয়েল মোর্স; source: samuelmorse.net

যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে এসে তিনি নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের চিত্রকলা ও স্থাপত্যের অধ্যাপক নিযুক্ত হন। নিউইয়র্কের ন্যাশনাল একাডেমি অফ ডিজাইন তারই চেষ্টায় প্রতিষ্ঠিত হয়। ঐসময় চিত্রকলা সম্বন্ধে তিনি ধারাবাহিক বক্তৃতা দেন। অনেকের মতে, যুক্তরাষ্ট্রে তিনিই প্রথম এ ধরনের বক্তৃতার সূত্রপাত করেন। কিন্তু টেলিগ্রাফের চিন্তা ক্রমশ আরো বেশি করে তাকে পেয়ে বসে। একটু একটু করে একসময় তিনি একেবারেই আঁকাআঁকি ছেড়ে দেন। ১৮৩৭ সালের পর মোর্সের আঁকা মাত্র একখানি পোর্ট্রেট পাওয়া যায়।

মোর্স যে রাতারাতি টেলিগ্রাফ আবিষ্কার করেছিলেন এমনটি নয়। ১৮২২ সাল থেকেই তড়িৎ সম্পর্কীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষায় তিনি উৎসাহী হয়ে উঠেন। অধ্যাপক বেনজামিন সিলিম্যানের ল্যাবরেটরির পাশেই এক সময় তিনি বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতেন এবং প্রতিদিন সিলিম্যানের ল্যাবরেটরিতে যেতেন। নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জেমস ডানার সঙ্গেও তার হৃদ্যতা গড়ে উঠে। ১৮২৭ সালে তিনি ডানার কাছে বিদ্যুৎ সম্বন্ধে ধারাবাহিক পাঠ নেন। তখন তড়িৎ-চুম্বকের বিভিন্ন পরীক্ষা দেখারও সুযোগ পান। নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকার সময় সেখানকার রসায়নের অধ্যাপক লিওনার্ড গেইল বিদ্যুৎ সম্বন্ধে তার জ্ঞানকে পরিস্ফুরিত করতে সাহায্য করেন।

টেলিগ্রাফ যন্ত্র সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের প্রাথমিক ধারণা দিচ্ছেন মোর্স; source: Educational Technology Clearinghouse

সুদীর্ঘ কষ্টসাধ্য প্রয়াসে ১৮৩৬ সালে তার ডট ও ড্যাশের বর্ণমালাযুক্ত আবিষ্কারটি পরিশীলিত রূপ পেলেও সেটিকে সর্বসাধারণের সামনে হাজির করতে আরো আট বছর সময় লাগে। যে শিল্পী একদিন রঙ নিয়ে নানারকম পরীক্ষা করেছেন, কোনো রঙকে দুধে, কোনোটি আবার বিয়ারে মিশিয়ে বিচিত্র রঙের সৃষ্টি করেছেন, সেই তিনিই তার আবিষ্কৃত যন্ত্রের নকশা আঁকতে শুরু করলেন।

মোর্সের তৈরিকৃত টেলিগ্রাফের প্রাথমিক নকশা; source: Wikimedia Commons

১৮৩৮ সালে তিনি নিজের আবিষ্কারের একটি পেটেন্ট নেন। তবে মোর্স যন্ত্র আবিষ্কারে যত পারদর্শী ছিলেন, টেলিগ্রাফের কোড তৈরিতে তিনি ছিলেন ততটাই অনভিজ্ঞ। তাই তার সাহায্য নিতে হয় বন্ধু আলফার্ড ভেইলের। টেলিগ্রাফ যন্ত্রের পেটেন্ট মোর্সের নামে হওয়ায় পেটেন্ট চুক্তি অনুযায়ী যন্ত্রের সাথে সম্পর্কিত সকল কিছুই মোর্সের নাম পায়। আর তাই ভেইলের তৈরি কোড মোর্স কোড হিসেবে স্বীকৃতি পায়। তবে এ নিয়ে দুই বন্ধুর মধ্যে সম্পর্কে কোনোরকম তিক্ততা আসেনি। মোর্সও ভেইলকে কখনও অস্বীকার করেননি ।

স্যামুয়েল মোর্স ও আলফ্রেড ভেইল; source: Pinterest

১৮৪৪ সালের ৪ঠা মে তারিখে মোর্স তার বন্ধু আলফ্রেড ভেইলকে ওয়াশিংটন থেকে চল্লিশ মাইল দূরে বাল্টিমোরে প্রথম তারবার্তা পাঠান- ‘WHAT HATH GOD WROUGHT’। ডেল ঐ কথাগুলোই তাদের ভাষায় ফিরিয়ে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মোর্সের পরীক্ষা সফল হয়।

মৃত্যু: 

১৮৫২ সালে মোর্স কিং অব রটেমবার্গের গ্রেট গোল্ড মেডেল অব আর্ট অ্যান্ড সায়েন্স পুরস্কার পান। ১৯৮৮ সালে মোর্সের টেলিগ্রাফকে ইনস্টিটিউট অব ইলেট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারস ‘আইইইই মাইলফলক’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। ১৮৭২ সালের ২ এপ্রিল স্যামুয়েল মোর্স মারা যান।

soruse ; prothomalo ...britannica...roar

What's Your Reaction?

Like Like 0
Dislike Dislike 0
Love Love 0
Funny Funny 0
Angry Angry 0
Sad Sad 0
Wow Wow 0