ইমামে আযম আবু হানিফা (রহঃ) জীবনী biography of Imam Abu Hanifa
ইমামে আযম আবু হানিফা (রহঃ) জীবনী biography of Imam Abu Hanifa

উপাধি |
ইমাম আযম |
---|---|
জন্ম | নোমান বিন সাবিত সেপ্টেম্বর ৫, ৬৯৯ খ্রিস্টাব্দ/ শাবান ৪, ৮০ হিজরী কুফা, উমাইয়া খিলাফত |
মৃত্যু | ১৪ জুন ৭৬৭ (বয়স ৬৭)/ ১৫০ হিজরী বাগদাদ আব্বাসীয় খিলাফত |
মৃত্যুর কারণ |
কারাগারে নির্যাতন (কারো মতে বিষপ্রয়োগ) |
জাতীয়তা |
কুফী |
জাতিভুক্ত |
পারসিক (ফার্সি) |
যুগ |
হিজরী প্রথম শতাব্দী |
পেশা |
হানাফি ফিকহের ইমাম |
সম্প্রদায় |
ইমাম মুহাম্মদ, ইমাম আবু ইউসুফ |
মাজহাব |
স্বতন্ত্র মুজতাহিদ |
মূল আগ্রহ |
ফিকহ |
উল্লেখযোগ্য ধারণা |
কিয়াস, ইসতিহসান |
ইমাম আবু হানিফা রহঃ এর জন্ম এবং বাল্যকাল
খলীফা আব্দুল মালেক বিন মারওয়ানের শাসনামলে ৮০ হিজরীতে কুফার পূর্বাঞ্চলে ইমাম আযম আবু হানীফা (রহ.) জন্ম লাভ করেন। এটা কূফায় বসতি স্থাপনের ৬৬ - ৬৭ বৎসর পরের ঘটনা। তখন সাহাবায়ে কিরাম এবং তাবেঈনদের সংখ্যা অধিক ছিল। তাদের কারণে কূফার আনাচে-কানাচে শিক্ষালয় গড়ে উঠেছিল। চারিদিকে দ্বীনি এবং ইলমী মজলিস বসত। এমনি এক পরিবেশে ইমাম আবু হানিফা (রহ.) বোধসম্পন্ন হন । তিনি রেশমী কাপড়ের ব্যবসার মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করতেন। কুফার জামে মসজিদের সন্নিকটে হযরত অমর বিন হোরায়েছ (রা.)-এর বরকতময় স্থানে ছিল তাঁর বাণিজ্যালয়।
শিক্ষা
প্রথমত তিনি কুফা শহরেই অধ্যয়ন শুরু করেন ইলমে কালাম নামক দর্শন ও আধুনিক ভাষাবিজ্ঞান শাস্ত্রে। কিন্তু, এর বিভিন্ন শাখায় বুৎপত্তি অর্জনের পর তা ছেড়ে দিয়ে ২০ বছর বয়সে তিনি ফিকহ্ ও হাদীস শাস্ত্রের গভীর অধ্যয়নে মনোনিবেশ করেন। তিনি হাম্মাদ ইব্ন যাইদকে তাঁর প্রধান শিক্ষক হিসেবে বেছে নেন। হাম্মাদ ছিলেন ঐ সময়ে হাদীসের শ্রেষ্ঠ বিশেষজ্ঞদের অন্যতম। তাঁর তত্ত্বাবধানে ইমাম আবু হানীফাহ আঠারো বছর শিক্ষা লাভ করেন। এ সময়ে তিনি নিজেই শিক্ষাদানের যোগ্যতা অর্জন করেন। তবে হিজরি ১২৪ সালে (৭৪২ খ্রীঃ) হাম্মাদের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি তাঁর ছাত্র হিসেবেই থেকে যান। তারপর চল্লিশ বছর বয়সে আবু হানীফা তাঁর শিক্ষকের স্থান লাভ করেন এবং কুফার শ্রেষ্ঠতম বিশেষজ্ঞে পরিণত হন।
ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) প্রাথমিক জীবন বা ব্যবসায়িক জীবনঃ
Imam Abu Hanifa – ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) এর প্রাথমিক জীবন কেমন ছিল এ বিষয়ে ঐতিহাসিকগণ বেশীকিছু উদ্ধৃত করেননি। তিনি ছিলেন একজন প্রসিদ্ধ কাপড় ব্যবসায়ী। Imam Abu Hanifa – ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) এর পৈত্রিক পেশা ছিল কাপড়ের ব্যবসা। ইরান থেকে শুরু করে ইরাক, সিরিয়া ও হেজায পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলব্যপী বিপুল পরিমণ মুল্যবান রেশমী কাপড়ের আমদানী ও রফতানী হতো। পৈত্রিক এই ব্যবসার সুবাদেই তিনি প্রচুর বিত্তের মালিক ছিলেন। তৎকালীন বিশিষ্ট ওলামাগণের মধ্যে সম্ভবত তিনিই ছিলেন প্রথম ব্যক্তি যিনি রাস্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতা বা বিত্তবানদের হাদীয়া-তোহফা প্রাপ্তির পরোয়া না করে নিজ উপার্জনের দ্বারা জীবিকা নির্বাহ, এলেমের সেবা এবং তার নিকট সমবেত গরীব শিক্ষার্থীদের যাবতীয় ব্যয়ভার নির্বাহ করার ব্যবস্থা করতেন। ১৬ বছর বয়সে তিনি পিতৃহারা হন। পিতা ছিলেন একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যাবসায়ী । তার মৃত্যুর পর এই ব্যাবসার দায়িত্ব নিতে হয় যুবক Imam Abu Hanifa – ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) কে। (আল ফিকহুল আকবার, ভূমিকা, ইমাম আবু হানিফার জীবন ও কর্ম, ইসলামিক ফাউণ্ডেশন)।
তার অসামান্য দক্ষতা ও নিষ্ঠায় ব্যাবসা প্রসারিত করার পাশাপাশি কাপড় তৈরির এক কারখানা স্থাপন করেন। যা কিছু দিনের মধ্যেই অনন্য হয়ে ওঠে। ব্যবসায় তার সততার পরিচয় পেয়ে দিগ্বিদিক থেকে লোকেরা তার দোকানে ভিড় জমাতেন। এভাবে তিনি জন মানুষের কাছে ব্যাপকভাবে পরিচিতি লাভ করলেন। ইমাম শাবী রহ. তাকে ইলমের ব্যাপারে উৎসাহিত করার আগ পর্যন্ত তিনি এ ব্যবসাকেই নিজের ক্যারিয়ার হিসেবে নিয়েছিলেন। (উসুলুদ্দিন ইনদা আবি হানিফা, পৃষ্ঠা- ৬৬)
Imam Abu Hanifa – ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) এর ব্যবসা জীবন থেকে শিক্ষা জীবনে পদার্পণ
কিশোর বয়স থেকেই ইমাম সাহেব পিতার ব্যবসার কাজে যোগ দিয়েছিলেন। ব্যবসায়ীক কাজেই তাকে বিভিন্ন বাজার ও বাণিজ্য কেন্দ্রে যাতায়াত করতে হতো। ঘটনাচক্রে একদিন ইমাম শাবীর (রহঃ) সাথে তার সাক্ষাত হয়ে যায়। প্রথম দর্শনেই ইমাম শাবী Imam Abu Hanifa – ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) এর নিষ্পাপ চেহারার মধ্যে প্রতিভার স্ফুরণ লক্ষ্য করেছিলেন।
তিনি জিজ্ঞেস করলেন, হে বৎস! তুমি কি কর? এ পথে তোমাকে সব সময় যাতায়াত করতে দেখি? ইমাম সাহেব জবাব দিলেন, আমি ব্যবসা করি। ব্যবসার দায়িত্ব পালনার্থেই ব্যবাসায়ীদের দোকানে দোকানে আমাকে যাওয়া-আসা করতে হয়। ইমাম শাবী (রহঃ) পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন, এটা তো তোমার লেখাপড়ার বয়স। কোন আলেমের শিক্ষায়তনেও কি তোমার যাতায়াত আছে? Imam Abu Hanifa – ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) সরলভাবেই জবাব দিলেন, সেরূপ সুযোগ আমার খুব কমই হয়। কিছুক্ষণ আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই ইমাম শাবী আবু হানিফাকে জ্ঞানার্জনে মনোযোগী হওয়ার প্রতি আগ্রহী করে তুললেন। Imam Abu Hanifa – ইমাম আবু হানিফা (রহঃ), ইমাম শাবীর রহ সেই আন্তরিকতাপূর্ণ উপদেশবাণী গুলো আমার অন্তরে গভীরভাবে রেখাপাত করল এবং এরপর থেকেই আমি বিপনীকেন্দ্রগুলোতে আসা-যাওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন শিক্ষা কেন্দ্রেও যাতায়াত শুরু করলাম। এ সময় Imam Abu Hanifa – ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) এর বয়স ছিল উনিশ বা বিশ বছর।(আল ফিকহুল আকবার, ভূমিকা, ইমাম আবু হানিফার জীবন ও কর্ম,ইসলামিক ফাউণ্ডেশন)
হাদিসশাস্ত্রের শিক্ষা গ্রহণ
ফিকাহ অধ্যায়নের পর Imam Abu Hanifa – ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) হাদিস শিক্ষার জন্য তদানিন্তন হাদিস বেত্তাদের খিদমতে হাজির হন এবং শিক্ষা লাভ করেন। তখনও কোন প্রনিধান যোগ্য হাদিস গ্রন্থ সংকলিত হয়নি। কোন একজন মুহাদ্দিস সকল হাদিসের হাফিজ ছিলেন না। প্রথমে তিনি কুফায় অবস্থানরত মুহাদ্দিসদের থেকে হাদিস শেখেন। এরপর তিন বসরা যান। সেখানে হজরত কাতাদাহ রহ.-এর খিদমতে হাজির হন এবং হাদিসের দরস হাসিল করেন। তারপর Imam Abu Hanifa – ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) হজরত শুবা রহ.-এর দরসে যোগ দেন। তাকে হাদিস শাস্ত্রে ‘আমিরুল মুমিনিন’ বলা হয়। কুফা ও বসরার পর Imam Abu Hanifa – ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) হারামাইন শরিফাইন এর দিকে দৃষ্টিপাত করেন । প্রথমে তিনি মক্কা গেলেন এবং সেখানে তিনি হাদিসবিদ হজরত আতা ইবনে আবু রিবাহ রহ. -এর দরবারে যান এবং দরসে শামিল হয়ে শিক্ষা অর্জন করেন। ১১৫ হিজরিতে আতা রহ. ইন্তেকাল করলে তিনি মক্কায় চলে আসেন এবং হজরত ইকরামা রহ. -এর কাছ থেকেও হাদিসের সনদ লাভ করেন। (আল ফিকহুল আকবার, ভূমিকা, ইমাম আবু হানিফার জীবন ও কর্ম, ইসলামিক ফাউণ্ডেশন)
ফিকহ শাস্ত্রের আবিষ্কারক
Imam Abu Hanifa – ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) ফিকহ শাস্ত্রের আবিষ্কারক ছিলেন। ফিকহ ও ইসলামী আইন সংকলন ও সম্পাদনার জন্য তিনি ৪০ জন ফকিহ নিয়ে এক আইনজ্ঞ কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা করেন। ওই যুগে যেসব মাসয়ালা-মাসায়িল সংকলন হয়েছিল, তার সংখ্যা ১২ লাখ ৭০ হাজারের ঊর্ধ্বে। ফিকহ শাস্ত্রে তার অবদানের ব্যাপারে ইমাম শাফেয়ি (রহ.) বলেন, ‘ফিকহ শাস্ত্রের সব মানুষ ছিলেন Imam Abu Hanifa – ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) এর পরিবারভুক্ত। ‘(আছারুল ফিকহিল ইসলামী)।
ইমাম মালেক (রহ.) বলেন, ‘Imam Abu Hanifa – ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) এমন এক ব্যক্তি, তিনি যদি ইচ্ছা করতেন, এই স্তম্ভটিকে সোনা প্রমাণিত করবেন, তবে নিঃসন্দেহে তিনি তা করতে সক্ষম। ‘ (জামিউ বয়ানিল ইলম) । তাই Imam Abu Hanifa – ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) এর নামযুক্ত মাসয়ালাগুলো ও মাযহাব দ্রুত সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে।
হাদিস শাস্ত্রে অবদান
Imam Abu Hanifa – ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) হাদিস শাস্ত্রে অতুলনীয় জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন। তিনি চার হাজার শাইখ থেকে হাদিস সংগ্রহ করেছেন। (আস সুন্নাহ, উকূদুল জামান)।
ইমাম বোখারির অন্যতম ওস্তাদ মক্কী বিন ইব্রাহীম (রহ.), যাঁর সনদে ইমাম বুখারি (রহ.) বেশির ভাগ ‘সুলাসিয়াত’ হাদিস বর্ণনা করেছেন। এই মক্কী বিন ইব্রাহীম Imam Abu Hanifa – ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) এর ছাত্র। তিনি ইImam Abu Hanifa – ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) সম্পর্কে বলেন, ‘আবু হানিফা তার সময়কালের শ্রেষ্ঠ আলেম ছিলেন। ‘ (মানাকেবে ইমাম আজম রহ.) । আবিদ ইবনি সালিহ বলেন, ‘Imam Abu Hanifa – ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) হাদিসের নাসিখ ও মানসুখ নির্ণয়ের ব্যাপারে খুব সতর্ক ছিলেন। ‘ ইমাম আবু হানিফা (রহ.) তার শহরে যেসব হাদিস পৌঁছেছে তার মধ্যে রাসুল (সা.)-এর তিরোধানের সময়কার সর্বশেষ আমল কী ছিল সেসব তার মুখস্থ ছিল।
ইয়াহিয়া ইবনে নাসর বলেন, ‘একদিন আমি Imam Abu Hanifa – ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) এর ঘরে প্রবেশ করি। সেখানে তার কিতাব ভরপুর ছিল। আমি জিজ্ঞাসা করলাম এগুলো কী? তিনি বললেন, এগুলো সব হাদিসের কিতাব, যার মধ্যে আমি সামান্য কিছু বর্ণনা করেছি, সেগুলো ফলপ্রদ- (আস সুন্নাহ, উকদু জাওয়াহিরিল মুনীকাহ)
ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) এর রচিত গ্রন্থাবলী
ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) এর বহু গ্রন্থ অনারব মুসলিম দেশে পাওয়া যায়। তার নিজের লেখা কোন কিতাব নেই। কোন সূত্র ছাড়াই তার রচিত গ্রন্থের অধিকাংশই পৃথিবীর বিভিন্ন মিউজিয়ামে ও গ্রন্থাগারে পাণ্ডুলিপি আকারে সংরক্ষিত রয়েছে। কয়েকটি মুদ্রিত হয়েছে। কয়েকটির একাধিক শরাহ রচিত হয়েছে । এখানে তার পরিচিত ২০টি প্রসিদ্ধ গ্রন্থের নাম উল্লেখ করা হলো-
- ১. আল-ফিকাহুল আকবর।
- ২. আল-ফিকাহুল আবসাত।
- ৩. কিতাব আল আলিম অয়াল মুতাআল্লিম।
- ৪. আল-অসিয়া।
- ৫. আর-রিসালা।
- ৬. মুসনাদে আবি হানিফা ।
- ৭. অসিয়া ইলা ইবনিহি হাম্মাদ।
- ৮. অসিয়া ইলা তিল মিজিহি ইউসুফ ইবনে খালিদ।
- ৯. অসিয়া ইলা তিল মিজিহি আল কাজী আবি ইউসুফ।
- ১০. রিসালা ইলা উসমান আল বাত্তি।
- ১১. আল কাসিদা আল কাফিয়া (আননুমানিয়া)।
- ১২. মুজাদালা লি আহাদিদ দাহ রিন।
- ১৩. মারিফাতুল মাজাহিব।
- ১৪. আল জাওয়াবিত আস সালাসা।
- ১৫. রিসালা ফিল ফারাইয।
- ১৬. দুআউ আবি হানিফা।
- ১৭. মুখাতাবাতু আবি হানিফা মাআ জাফর ইবনে মুহাম্মদ।
- ১৮. বাআজ ফতোয়া আবি হানিফা।
- ১৯. কিতাবের মাক সুদ ফিস সারফ।
- ২০. কিতাবু মাখারিজ ফিল হিয়াল।
What's Your Reaction?






