হিরোডোটাসের জীবনী-biography of herodotus

হিরোডোটাস

May 12, 2025 - 00:10
May 12, 2025 - 01:53
 0  8
হিরোডোটাসের জীবনী-biography of herodotus

ইতিহাসের জনক হিরোডোটাস এবং তার ‘দ্য হিস্টোরিজ’

হেরোডোটাস (আনু. ৪৮৫–৪২৫ খ্রি. পূ.) – ইতিহাসশাস্ত্রের জনক

জন্ম: 

খ্রিস্টপূর্ব ৪৮৪    সারিয়া, এশিয়া মাইনর আচেমেনিড সাম্রাজ্য। 

হিরোডোটাস :

 The Histories  বইটি লেখার জন্য জনপ্রিয়, যা তার গ্রিকো-পারসিয়ান যুদ্ধগুলোর উপর গবেষণার একটি বিশদ নথি। তাকে প্রথম ব্যক্তি হিসেবে ধরা হয় যিনি ঐতিহাসিক বিষয়গুলোর উপর একটি বিশেষ পদ্ধতির অনুসন্ধান করেন, যেখানে তিনি ঐতিহাসিক ধাতুসমুহ সংগ্রহ করেন এবং ইতিহাস লিখনধারা অনুযায়ী সাজান। এ কারণে তাকে ইতিহাসের জনক বা “The Father of History” হিসেবে গন্য করা হয়। এই সম্মান তাকে সর্বপ্রথম খ্রিষ্টপূর্ব প্রথম শতকের রোমান ওরেটর, সিসারো প্রদান করেন।

পরিচ্ছেদসমূহ

জীবন

আধুনিক গবেষকগণ সাধারণত হিরোডোটাস এর জীবন সম্পর্কে বিশ্বাসযোগ্য তথ্য লাভ করতে তার লেখার দিকে মনোযোগ প্রদান করে থাকেন। এছাড়াও তারা “Byzantine”, “Suda” সহ প্রচীন কিন্তু আরো পরের উৎসগুলোর দিকেও মনোযোগ দেন।তথ্যের পরিমাণ এত কম যে সেগুলো খুবই পরে অল্প নির্ভরযোগ্যতা পেয়েছে। এই তথ্যগুলো দিয়ে একটি জীবনী তৈরি করা তাসের বাড়ি তৈরি করার মতো ব্যাপার, যা প্রথম সমালোচনা হিসেবে সামনে আসে। তারপরও কিছু সমস্যা সমাধান হয়ে যেতে পারে।

শৈশব

আধুনিক তথ্যনুযায়ী, তার জীবনকে এভাবে ব্যাখ্যা করা যায়: হিরোডোটাস হেলিকার্নাসাস এ খ্রিষ্টপূর্ব ৫৮৫ এর কাছাকাছি সময়ে জন্মগ্রহণ করেন। “সুদা” থেকে প্রাপ্ত তার পরিবার সম্পর্কিত তথ্য অবিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই। এই তথ্যগুলো হলো: তার পরিবার প্রভাবশালী ছিল, লুক্সেস এবং ড্রইও এর পুত্র ছিলেন এবং থিওডোরাস এর ভাই ছিলেন। এছাড়াও তিনি একজন মহান কবি, পেনিয়াসিস এর ভাই ছিলেন।সেই শহরটি তখন পারসিয়ার অধীনে থাকায় তাকে একজন পারসিয়ান হিসেবে গণ্য করা হয়। তিনি অনেক ছোট থাকতেই কার্টেমিসিয়া অধীনে থাকা বহর সহ গ্রিস দখলের জন্য পারসিয়ানদের প্রস্তুতির বিভিন্ন অংশের এবং সম্রাজ্যের ভিতরের বিভিন্ন ঘটনার স্থানীয় প্রতোক্ষদর্শীদের কথা শোনেন।

হেলিকার্নাসাস এ সাম্প্রতিক আবিস্কৃত লিপিসমূহ থেকে পাওয়া যায় যে তার নাতি লিগদামিস একটি জনসমাবেশে ক্ষমতা ঠিক মতো ধরে রাখার বিরোধ সমাধানের জন্য আলোচনা করেন, যা একজন চাপে থাকা স্বেচ্ছাচারীর সাথে সংগতিপূর্ণ হয়েছে। পরবর্তীতে তার নাম অ্যাথেনীয় “ডেলাইয়ান লীগ” এর শ্রদ্ধা তালিকায় উল্লেখ করা হয় নি, যা নির্দেশ করে যে ৪৫৪ খ্রিষ্টপূর্বের কিছু সময় পূর্বে তার বিরুদ্ধে একটি সফল বিদ্রোহ সংঘটিত হয়।

সমসাময়িক এবং আধূনিক সমালোচনা

অনেক আশ্চর্যজনক এবং প্রচলিত কাহিনী অন্তর্ভুক্ত করায় সমালোচকগণ তাকে “মিথ্যার জনক” বলেছেন।

তিনিই সর্বপ্রথম পঞ্চম খ্রিস্টপূর্বাব্দে গ্রিক-পার্শিয়ান যুদ্ধের ঘটনাবলিকে লিপিবদ্ধ করেন এবং তখন থেকেই শুরু হয় ঐতিহাসিক ঘটনার বিবরণী সংরক্ষণের প্রথা। শুরু হয় ইতিহাস রচনার কাজ।

মহাজ্ঞানী হেরোডোটাসের জন্ম ৪৮৫ খ্রিস্টপূর্বে। এশিয়া মাইনরের হেলিকারনাসাসের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে তাঁর জন্ম। শিক্ষাজীবনও এখানেই শুরু হয়। কিন্তু সারাজীবন জন্মভূমিতে কাটানো সম্ভব হয়নি হেরোডোটাসের।

যৌবনের প্রারম্ভেই তিনি বহিশত্রু টাইউরানানি লিগদামিসদের দ্বারা বিতাড়িত হন। কিন্তু কয়েক বছর পর আবার নিজের শক্তিতেই ফিরে আসেন স্বদেশভূমিতে। প্রতিষ্ঠা করেন প্রশাসনিক সরকার।

কথিত আছে, সেকালের প্রখ্যাত মহাকবি পানিয়াসিস-এর সঙ্গেও তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। তাঁর সঙ্গে একত্রে তিনি দীর্ঘকাল সামোস দ্বীপেও অবস্থান করেছিলেন। কিন্তু দূরে অবস্থান করলেও দেশের প্রতি, হেলিকারনাসাসের প্রতি ছিল তাঁর সার্বক্ষণিক আকর্ষণ। তিনি দূরে বসেই স্বদেশের জন্য কাজ করে যেতেন।

কিন্তু তবু দুর্ভাগ্য হেরোডোটাসের, দেশের জন্য এত কাজ করেও তিনি দেশবাসীর মন জয় করতে পারেননি। হেলিকারনাসাসের অধিবাসীদের কাছে তিনি দিনদিনই যেন অপ্রিয় হয়ে উঠতে থাকেন। তাঁর জনপ্রিয়তা হ্রাস পেতে থাকে দ্রুত। তখন বাধ্য হয়েই তিনি স্বদেশত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন। তিনি চিরদিনের জন্য হেলিকারনাসাস ছেড়ে চলে যান অ্যাথেন্সে। অবশ্য তিনি অ্যাথেন্সেও সবসময় ছিলেন না। এখানকার নতুন উপনিবেশ দক্ষিণ ইতালির থুরি নগরীতে তিনি বাস করতেন।

কথিত আছে, হেরোডোটাস তাঁর বাকি জীবন এখানেই অতিবাহিত করেন। তিনি মারা যান ৪২৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দে। মৃত্যুর পর এখানেই তাঁকে সমাধিস্থ করা হয়।

হেরোডোটাস ছিলেন প্রকৃতপক্ষে জন্মগতসূত্রে এশিয়ান গ্রিক। বাল্য ও যৌবনের কিছু সময় গ্রিসে কাটালেও তাঁর জীবনের পূর্ণ বিকাশ ঘটে এথেন্সে। হেরোডোটাসের সাথে সে-জন্যই এথেন্সের নাম জড়িয়ে আছে। অনেকে তাঁকে এথেন্সের অধিবাসী বলেই জানেন।

হেরোডোটাস ইতিহাসকেও বিজ্ঞান বলে মনে করতেন। বিজ্ঞানের মতোই ঐতিহাসিক তথ্যাবলি ও হাজারো প্রশ্নের সমাধানের ভিত্তিতে এবং অনুসন্ধানের মাধ্যমে সংগ্রহ করতে হয়। তারপর বিচার-বিশ্লেষণের মাধ্যমে আসতে হয় সঠিক সিদ্ধান্তে। ঠিক বিজ্ঞানের মতো করে। যেমন, গ্রিক-পার্শিয়ান যুদ্ধ। এই যুদ্ধ কেন সংঘটিত হয়েছিল? এই যুদ্ধে কোন্ পক্ষ কী আদর্শ ও পটভূমিকায় যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিল, কী কৌশলে এই যুদ্ধ অনুষ্ঠিত হয়েছিল—এসব প্রশ্নের সমাধান বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গিতেই করতে হয়। আর তাই ইতিহাসকেও বিজ্ঞান থেকে আলাদা করে দেখা যায় না।

গ্রিক-পার্শিয়ান যুদ্ধের এই ইতিহাস লেখার কোনো ইচ্ছে ছিল না হেরোডোটাসের। তিনি শুধু এই যুদ্ধের স্থান ও পটভূমির একটি ভৌগোলিক বর্ণনা লিপিবদ্ধ করতে চেয়েছিলেন। তাঁর আগে মাইলেটাসের হেকাটাকাস নামের এক পণ্ডিত ‘পেরিয়েগেসিস’ নামের একটি বই লিখেছিলেন। এতে তিনি ভূমধ্যসাগরের অনেক দ্বীপ, দেশ, সাগর ও উপসাগরের বর্ণনা তুলে ধরেছিলেন। হেরোডোটাসের ইচ্ছে ছিল, তিনিও হেকাটাকাসের অনুকরণেই, তবে এর চেয়ে উন্নত একটি গ্রন্থ রচনা করবেন, যার ভিত্তি হবে গ্রিক- পার্শিয়ান যুদ্ধ।

তাঁর ইতিহাসগ্রন্থ ‘হিস্টোরিস’ (Histories)-এর শুরুতেই তিনি লিপিবদ্ধ করেছেন সেইকালে এশিয়া মাইনরের সর্বাপেক্ষা বৃহৎ গ্রিক সাম্রাজ্য লিডিয়ার রাজা ক্রোসাসের কথা। রাজা ক্রোসাস কেমন করে গুরুত্বপূর্ণ হেলিস নদী কৌশলে অতিক্রম করেছিলেন, তার কথা। তিনি বলেন, রাজা ক্রোসাস এই বিশাল নদীতে একটি শক্ত সেতু তৈরি করে তবেই তা পার হতে সক্ষম হয়েছিলেন। আর এই শক্ত সেতুটি তৈরি করতে সহযোগিতা করেছিলেন আদি বিজ্ঞানী মাইলেটাসের থ্যালেস। মাইলেটাস এবং তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চল সেকালে শিক্ষা ও শিল্পসাহিত্যে ছিল শীর্ষস্থানে। এই মাইলেটাস থেকেই শিক্ষা ও সংস্কৃতির ধারা গ্রিক সাম্রাজ্যে প্রবেশ করে। সেকালে থ্যালেস কেবল একজন বিজ্ঞানীই নন, মাইলেটাসের একজন বিশিষ্ট ব্যক্তিও ছিলেন।

সেকালে এ অঞ্চলের আরেক বিখ্যাত ব্যক্তি ছিলেন হেকাটাকাস। তিনি ছিলেন একজন শ্রেষ্ঠ পরিব্রাজক এবং গদ্যলেখকও।

হেকাটাকাসের কথা হেরোডোটাস তাঁর গ্রন্থে বহুবার উল্লেখও করেছেন। তাঁর মতোই তিনিও দেশের ঐতিহাসিক বিবরণ দিতে গিয়ে সংশ্লিষ্ট দেশের ও কালের জনগণের মুখের কথার ওপর বিশ্বাস স্থাপন করেছেন। তারা যা বলেছে, তাকেই সত্য বলে ধরে নিয়ে তিনি লিপিবদ্ধ করেছেন গ্রন্থে।

একবার তিনি কৃষ্ণসাগরেও ভ্রমণে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেই সফরের পেছনে তাঁর কোনো ঐতিহাসিক তথ্যসংগ্রহের ব্যাপার ছিল না। তিনি গিয়েছিলেন একান্তই দ্বীপ- দীপান্তরের ভৌগোলিক অবস্থান জানার উদ্দেশ্যে। শুধু কৃষ্ণসাগর নয়, একবার সুদূর মিশরেও গিয়েছিলেন। মিশরে যাওয়ার সময় তিনি হেকাটাকাসের লেখা বইখানাও সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল বইতে আলেকজান্দ্রিয়ার যে ভৌগোলিক বর্ণনা আছে, তা পরীক্ষা করে দেখা। সম্ভব হলে তাকে আরও নিখুঁত এবং উন্নত করা।

হেরোডোটাসের এই মিশর ভ্রমণ সম্পর্কে ফরাসি বিশেষজ্ঞ মি. কামিল সৌরডিল ১৯১০ সালে বলেছেন, হিরোডোটাস সম্ভবত মিশরে প্রবেশ করেছিলেন পশ্চিম বদ্বীপের ক্যানোপাস দিয়ে, ডিসেম্বর মাসে। এই সফরের সময় তিনি মিশরের মেমফিস এবং পিরামিড সন্নিহিত অঞ্চলসমূহও পরিদর্শন করেছিলেন। গিয়েছিলেন নীলনদের তীরে প্রাচীন নগরী থিবস পর্যন্ত।

অবশ্য তার কোনো-কোনো বর্ণনা আবার জীববিজ্ঞানের ইতিহাসের সাথে খাপ খায় না। যেমন—তিনি এমন এক জাতের পিঁপড়ের বর্ণনা দিয়েছেন, যেগুলোর আকৃতি ছিল একটি শেয়ালের সমান। বাস্তবে হয়তো এমন দানব-পিঁপড়ার অস্তিত্ব কোথাও ছিল না। তিনি যুদ্ধ-বিগ্রহের বর্ণনার মতোই এসব কথাও লোকের মুখে শুনেই বইতে লিখেছিল। নিজে দেখে পরীক্ষা করে লেখেননি, আর তাতেই এমন তিলের গল্প তাল হয়ে দেখা দিয়েছে।

কিন্তু তাঁর সম্পর্কে মজার ব্যাপার হলো, তিনি ভূগোলবিষয়ে আগ্রহী হলেও শেষ পর্যন্ত যে বিষয়ে গ্রন্থ রচনা করেছিলেন, তা ছিল ইতিহাস। তিনি ভূতত্ত্ব বিষয়ে গবেষণা না করে রচনা করেন গ্রিক-পার্শিয়ান যুদ্ধের কাহিনী। আর তার ফলেই তিনি পরবর্তীকালে পারিচিতি লাভ করেন একজন ঐতিহাসিক হিসেবে।

তিনি গ্রিক-পার্শিয়ান যুদ্ধের শুধু ঐতিহাসিক বর্ণনাই দেননি, এই যুদ্ধের ভিত্তিতে এর ধর্মীয় পরিবেশেরও বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি এই পটভূমিকাতেই প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের সুদীর্ঘকালের সম্পর্কের ধারাবাহিক বর্ণনাও দিয়েছেন। তিনি ইতিহাসের ধারাকে দুটো ভাগে বিভক্ত করে দেখিয়েছেন—একটি ঐতিহাসিক পর্ব, অপরটি প্রাচীন প্রাগৈতিহাসিক পর্ব। এ ধরনের বিভাগ তিনিই প্রথম করে গেছেন।

মূলত হেরোডোটাস ছিলেন প্রাচীন গ্রিসের সর্বশ্রেষ্ঠ এবং প্রথম ঐতিহাসিক। এটাই তাঁর শ্রেষ্ঠ পরিচয়।

ইতিহাসে স্থান

এখানে হেলিকার্নাসাস এর হিরোডোটাস এর গবেষণার ফলাফল রয়েছে। মানুষের ঘটনাসমুহের চিহ্ন সময় দ্বারা মুছে যাওয়া থেকে রক্ষা করা এবং গ্রিক ও অন্যান্যদের স্মরণীয় অর্জণগুলোর খ্যাতি সংরক্ষণ করা এর উদ্দেশ্য; এতে থাকা বিষয়বস্তুর মধ্যে গ্রিকদের সাথে অন্যান্যদের শত্রুতার কারণ বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

পূর্বসূরীগণ

তার অন্যদের অর্জনের নতিসমুহ নিজেই একটি অর্জন, যদিও সেটির বিস্তার বিতর্কিত। ইতিহাসে হিরোডোটাস এর স্থান এবং গুরুত্ব তিনি যে ঐতিহ্যের মধ্যে কাজ করেছেন তা অনুযায়ী বোধ করা যায়। সম্পূর্ণ অক্ষত থাকা সবচেয়ে পুরানো গ্রিক গদ্যটি তার একটি কর্ম। হিরোডোটাস এর সপ্তস পূর্বসূর ছিলেন অগোস্টান রোম এর বড় সমালোচক, হেলিকার্নাসাস এর । তিনি তাদের কর্মগুলোকে সাধারণ, অনলংকৃত তাদের নিজেদের এবং অন্যান্য শহর এবং মানুষের ঘটনাসমুহ, জনপ্রিয় কাল্পনিক কাহিনী যুক্ত, অতি নাটকীয় এবং বোধগোম্যতাহীন, কখনো মুগ্ধকর -সকল বৈশিষ্ট্য যা হিরোডোটাস এর কাজে পাওয়া যায় সেগুলো দিয়ে ব্যাখ্যা করেছেন।

মৃত্যু

খ্রিস্টপূর্ব ৪২৫   থুরি, ক্যালাব্রিয়া বা পেল্লা, ম্যাসেডনে তার শেষ নিঃস্বাশ ত্যাগ করেন।

What's Your Reaction?

Like Like 0
Dislike Dislike 0
Love Love 0
Funny Funny 0
Angry Angry 0
Sad Sad 0
Wow Wow 0