জালালউদ্দিন ফিরোজ খিলজি এর জীবনী | Biography of Jalaluddin firuz Khalji,

জালালউদ্দিন ফিরোজ খিলজি এর জীবনী | Biography of Jalaluddin firuz Khalji,

May 21, 2025 - 12:10
May 28, 2025 - 11:59
 0  0
জালালউদ্দিন ফিরোজ খিলজি এর জীবনী  | Biography of Jalaluddin firuz Khalji,

জালালউদ্দিন খিলজি

দিল্লির সুলতান

রাজত্ব

১৩ই জুন ১২৯০ – ১৯শে জুলাই ১২৯৬

রাজ্যাভিষেক

১৩ই জুন ১২৯০

পূর্বসূরি

শামসুদ্দিন কয়ুমারস

উত্তরসূরি

আলাউদ্দিন খিলজি

জন্ম

১৪ই অক্টোবর ১২২০

দাম্পত্য সঙ্গী

মালিকা-এ-জাহান

বংশধর খান-এ-খান (মামুদ)
আরকলি খান
কদর খান (পরবর্তীতে সুলতান রুকনউদ্দিন ইব্রাহিম)
মালিকা-এ-জাহান (আলাউদ্দিন খিলজির পত্নী)
প্রাসাদ

১৯শে জুলাই ১২৯৬
কারা, ভারত

ধর্ম

সুন্নি (ইসলাম)

মৃত্যু

১৯শে জুলাই ১২৯৬ 

জালালউদ্দিন ফিরোজ খিলজি (Jalal-ud-Din Firuz Khalji) ছিলেন দিল্লি সালতানাতের খিলজি রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রথম সুলতান। তিনি ১২৯০ থেকে ১২৯৬ সাল পর্যন্ত শাসন করেন। তার শাসনামল ছিল তুলনামূলকভাবে শান্তিপূর্ণ ও প্রজাদরদি, যদিও তার শাসন শেষে তার ভাগ্নে আলাউদ্দিন খিলজি তাকে হত্যা করে সিংহাসনে বসেন।

জালালউদ্দিন খিলজি 

(শাসনকাল ১২৯০-১২৯৬; মৃত্যু ১৯শে জুলাই ১২৯৬) ছিলেন খিলজি রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রথম সুলতান, এই বংশ ১২৯০ থেকে ১৩২০ সাল পর্যন্ত দিল্লির সুলতানি শাসন করেছিল। ফিরুজ নামে পরিচিত, জালালউদ্দিন মামলুক রাজবংশের আধিকারিক হিসাবে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেছিলেন। তিনি সুলতান মুইজউদ্দীন কায়কাবাদের রাজসভায় একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ অধিকার করেছিলেন। কায়কাবাদ পক্ষাঘাতগ্রস্থ হওয়ার পরে একদল গণ্যমান্য ব্যক্তি তাঁর নবজাত পুত্র শামসুদ্দীন কয়ুমারসকে নতুন সুলতান হিসাবে নিয়োগ করে জালালউদ্দিনকে হত্যা করার চেষ্টা করেছিল। পরিবর্তে, জালালউদ্দিন তাদের হত্যা করে নিজে বকলমে শাসক হয়ে বসেছিলেন। কয়েক মাস পরে, তিনি কয়ুমারস কে সরিয়ে নিজে নতুন সুলতান হয়ে বসেন।

সুলতান হিসাবে, তিনি একটি মঙ্গোল আক্রমণ প্রতিহত করেছিলেন, এবং অনেক মঙ্গোলকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পরে ভারতে বসতি স্থাপনের অনুমতি দিয়েছিলেন। তিনি চাহামানা রাজা হাম্মিরের কাছ থেকে মন্দাওয়ার এবং ঝৈন দখল করেছিলেন, যদিও তিনি চাহামানা রাজধানী রণথম্বোর অধিকার করতে পারেননি। তাঁর শাসনকালে, তাঁর ভাইপো আলী গুরশাস্প ১২৯৩ সালে ভিলসার এবং ১২৯৬ সালে দেবগিরি আক্রমণ করেছিলেন।

সিংহাসনারোহণের সময় জালালউদ্দিনের বয়স ছিল প্রায় ৭০ বছর, সাধারণ জনগণের কাছে তিনি নরম মনের, নম্র ও সদয় সুলতান হিসাবে পরিচিত ছিলেন। তাঁর রাজত্বের প্রথম বছরে, তিনি রাজধানী দিল্লির পুরানো তুর্কি অভিজাতদের সাথে দ্বন্দ্ব এড়াতে কিলোখ্রি থেকে শাসন পরিচালনা করেছিলেন। বহু অভিজাত মানুষ তাঁকে দুর্বল শাসক হিসাবে বিবেচনা করেছিলেন, এবং বিভিন্ন সময়ে তাঁকে সরিয়ে দেওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করেছিলেন। তিনি বিদ্রোহীদের জন্য হালকা শাস্তি ধার্য করেছিলেন, শুধুমাত্র দরবেশ সিদি মওলার ক্ষেত্রে তাঁর শাস্তি অন্যরকম ছিল, তাঁকে হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে তাকে তিনি মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন। জালালউদ্দিনকে শেষ পর্যন্ত তাঁর ভাইপো আলী গুরশাস্প হত্যা করেছিলেন, যিনি পরবর্তীকালে আলাউদ্দিন খলজি হিসাবে সিংহাসনে আরোহণ করেছিলেন।

প্রাথমিক জীবন

জালালউদ্দিন খিলজি উপজাতির একজন তুর্কি মানুষ ছিলেন। তাঁর পূর্বপুরুষরা তুর্কিস্তান থেকে বর্তমান আফগানিস্তানে চলে এসেছিলেন, যেখানে তাঁরা ২০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে হেলমান্দ এবং লাঘমান প্রদেশে বাস করছিলেন। তাঁরা সেখানে স্থানীয় আফগানদের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে আফগানিস্তানের রীতিনীতি ও আচার ব্যবহার গ্রহণ করেছিলেন। এ কারণেই, যখন তাঁর পরিবার ভারতে পাড়ি জমায়, তখন দিল্লির তুর্কি অভিজাতরা তাঁদের আফগান বলে মনে করেছিলেন।[]

সিংহাসনে আরোহণের আগে জালালউদ্দিন পরিচিত ছিলেন মালিক ফিরুজ নামে। তিনি এবং তাঁর ভাই শিহাবুদ্দিন (আলাউদ্দিন খিলজির পিতা) বেশ কয়েক বছর ধরে দিল্লির সুলতান বলবনের সেবা করেছিলেন॥[] তিনি 'সর-ই-জন্দর' (রাজ দেহরক্ষীদের প্রধান) পদমর্যাদায় উন্নীত হন, এবং পরে সীমান্ত প্রদেশের সমানার শাসক হিসাবে নিযুক্ত হন। সামানার শাসক হিসাবে তিনি মঙ্গোল আক্রমণকারীদের সাথে সুলতানির বিরোধে বিশেষ কৃতিত্ত দেখিয়েছিলেন।

১২৮৭ সালে বলবনের মৃত্যুর পরে, দিল্লির কোতোয়াল মালিক আল-উমারা ফখরুদ্দিন, বলবনের কিশোর নাতি মুইজউদ্দিন কায়কাবাদকে (বা কায়কুবাদ) সরিয়ে সিংহাসন দখল করেন। কায়কাবাদ একজন দুর্বল শাসক ছিলেন, এবং প্রশাসন মূলত তাঁর আধিকারিক মালিক নিজামুদ্দিন পরিচালনা করতেন। নিজামউদ্দিনকে কিছু প্রতিদ্বন্দ্বী আধিকারিক বিষ প্রদান করার পরে, কায়কাবাদ জালাল উদ্দীনকে সমানা থেকে দিল্লিতে ডেকে পাঠান, "শায়েস্তা খান" উপাধি দিয়ে তাঁকে আরিজ-ই-মুমালিক হিসাবে নিয়োগ করেন, এবং তাঁকে বারানের শাসনভার দেন।

এই সময়ের মধ্যে, কায়কাবাদের স্বাস্থ্যের অবনতি হয়েছিল, এবং দুই উচ্চবিত্তদের প্রতিদ্বন্দ্বী গোষ্ঠী দিল্লিতে ক্ষমতার জন্য প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছিল। মালিক আয়েতেমুর সুরখার নেতৃত্বে একটি দল পুরাতন তুর্কি অভিজাতদের শক্তি বজায় রাখার চেষ্টা করছিল, এবং বলবনের পরিবারকে ক্ষমতায় রাখতে চাইছিল।

কয়ুমারসের বকলম প্রশাসক হিসাবে

কায়কাবাদের পক্ষাঘাত যখন দুরারোগ্য হয়ে পড়ল, মালিক সুরখা এবং তার সহযোগী মালিক কাচন তাঁর শৈশব পুত্র কয়ুমারসকে (বা কায়মারথ) দ্বিতীয় শামসুদ্দিন উপাধি দিয়ে সিংহাসনে বসায়। এরপর দুই অভিজাত তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী সম্ভ্রান্তদের হত্যা করার ষড়যন্ত্র শুরু করেছিল, এরমধ্যে জালালউদ্দিনের (তৎকালীন মালিক ফিরুজ) বিরুদ্ধেও চক্রান্ত ছিল। এই সময়, জালালউদ্দিন ভূগাল পাহারিতে (জিয়াউদ্দিন বারানির অনুসারে বাহারপুর) রাজকীয় সেনাবাহিনী পরিদর্শন করছিলেন। তাঁর ভাইপো মালিক আহমদ চাপ, যিনি নায়েব-ই আমির-ই হজিব এর দায়িত্ব সামলাছিলেন, তাঁকে এই ষড়যন্ত্র সম্পর্কে অবহিত করেছিলেন। জালালউদ্দিন তখন তার ঘাঁটি গিয়াসপুরে স্থানান্তরিত করেন এবং আসন্ন মঙ্গোল আক্রমণের প্রস্তুতির অজুহাতে তাঁর আত্মীয়দের বারান থেকে ডেকে পাঠান। সুরখার হত্যার তালিকায় থাকা অন্যান্য কর্মকর্তারাও খিলজির সাথে যোগ দিয়েছিলেন।

এর খুব অল্প সময়ের মধ্যেই জালালউদ্দিন দিল্লির রাজদরবারে গিয়ে দেখা করার আদেশ পেয়েছিলেন, এবং বুঝতে পেরেছিলেন যে এটি তাঁকে হত্যা করার ষড়যন্ত্রের অংশ। তিনি কনৌজ সেনাবাহিনী পরিদর্শন পরিচালনার অজুহাতে দিল্লি যাওয়া বন্ধ রাখলেন। কাচন তখন ব্যক্তিগতভাবে দিল্লি থেকে কনৌজে এসে জালালউদ্দিনকে বলেছিলেন যে তাঁর উপস্থিতি তৎক্ষণাত দিল্লিতে চাওয়া হয়েছে। জালালউদ্দিন ষড়যন্ত্র সম্পর্কে কিছুই না জানার ভান করে, পরিদর্শন শেষ না হওয়া পর্যন্ত কাচনকে তাঁবুতে বিশ্রামের জন্য অনুরোধ করলেন। তাঁবুতে জালালউদ্দিন কাচনের শিরশ্ছেদ করে তার দেহ যমুনা নদীতে নিক্ষেপ করে দুটি প্রতিদ্বন্দ্বী গোষ্ঠীর মধ্যে যুদ্ধ শুরু করেন।

জালালউদ্দিনের ছেলেরা দিল্লি গিয়ে, রাজপ্রাসাদে প্রবেশ করে এবং নামে মাত্র সুলতান কয়ুমারসকে জালালউদ্দিনের শিবিরে নিয়ে আসে। মালিক সুরখা ও তার সহযোগীরা কয়ুমারসকে পুনরুদ্ধার করার চেষ্টা করলেও তারা ধরা পড়ে এবং তাদের হত্যা করা হয়। জালালউদ্দিনের সৈন্যরা দিল্লির কোতোয়াল মালিক আল-উমারা ফখরুদ্দিনের কিছু ছেলেকে অপহরণও করেছিল, আর তাই ফখরুদ্দিন দিল্লির জনগণকে কয়ুমারসকে পুনরুদ্ধার করার চেষ্টা থেকে বিরত করে।

প্রতিদ্বন্দ্বী দলটির আধিকারিকদের নির্মূল করার পরে, জালালউদ্দিন কয়ুমারসকে দিল্লির সুলতান হিসাবে স্বীকৃতি জানান। তিনি ভাতিন্দা, দিপালপুর এবং মুলতান প্রদেশের শাসনভার গ্রহণ করেন। প্রাথমিকভাবে, তিনি বলবনের ভাগ্নে মালিক চাজ্জু এবং ফখরুদ্দিনকে কয়ুমারসের বকলমে শাসনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তবে মালিক চাজ্জু কারা-মানিকপুরের শাসনভার চেয়েছিলেন এবং ফখরুদ্দিনও এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তাই জালালউদ্দিন নিজেই এই পদ গ্রহণ করেন।

কায়কাবাদ মারা যান ১লা ফেব্রুয়ারি ১২৯০: ইয়াহিয়া সিরহিন্দির মতে তিনি উপেক্ষিত হয়ে অনাহারে মারা গিয়েছিলেন, তবে অন্য এক মতানুযায়ী জালালউদ্দিনের আদেশে তাঁকে একজন আধিকারিক হত্যা করে, সেই আধিকারিকের পিতাকে কায়কাবাদ মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন। কয়ুমারসের নামে মাত্র রাজত্বের শাসনকাল (১২৯০) প্রায় তিন মাস অবধি স্থায়ী হয়েছিল, জালালউদ্দিন তাঁকে পদচ্যুত করেন।

সামরিক অভিযান ও প্রশাসনিক কার্যক্রম

জালালউদ্দিন খিলজি মঙ্গোল আক্রমণ প্রতিহত করতে সক্ষম হন এবং কিছু অঞ্চলে অভিযান পরিচালনা করেন। তিনি রান্থামবোর দুর্গ দখলে ব্যর্থ হলেও, অন্যান্য অঞ্চলে সফল অভিযান পরিচালনা করেন। তার শাসনামলে প্রশাসনিক সংস্কার ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা হয়।

⚔️ হত্যাকাণ্ড ও উত্তরাধিকার

১২৯৬ সালে তার ভাগ্নে আলাউদ্দিন খিলজি তাকে হত্যা করে সিংহাসনে বসেন। জালালউদ্দিন খিলজির মৃত্যুর পর তার শাসনামল শেষ হয় এবং খিলজি রাজবংশের নতুন অধ্যায় শুরু হয়।

জালালউদ্দিন ফিরোজ খিলজি ছিলেন একজন ন্যায়পরায়ণ ও প্রজাদরদি শাসক, যিনি তার শাসনামলে শান্তি ও সমৃদ্ধি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছিলেন। তবে তার মৃত্যুর পর তার উত্তরাধিকারী আলাউদ্দিন খিলজি তার শাসনকে আরও বিস্তৃত ও শক্তিশালী করেন।

source    :    Wikipedia

What's Your Reaction?

Like Like 0
Dislike Dislike 0
Love Love 0
Funny Funny 0
Angry Angry 0
Sad Sad 0
Wow Wow 0