নিকোল ওরেম এর জীবনী | Biography of Nicole Oresme
নিকোল ওরেম এর জীবনী | Biography of Nicole Oresme

জন্ম |
আনু. ১৩২৫ ফ্লুরিয়ে, নরম্যান্ডি, ফ্রান্স
|
---|---|
মৃত্যু |
১১ জুলাই ১৩৮২[১] লিসিয়েঁ, নরম্যান্ডি, ফ্রান্স
|
মাতৃশিক্ষায়তন |
নভারে কলেজ (দ্য ইউনিভার্সিটি অফ প্যারিস) |
যুগ |
মধ্যযুগীয় দর্শন |
অঞ্চল |
পাশ্চাত্য দর্শন |
ধারা |
নামবাদ[২] |
প্রতিষ্ঠান |
নভারে কলেজ (দ্য ইউনিভার্সিটি অফ প্যারিস) |
প্রধান আগ্রহ
|
প্রাকৃতিক দর্শন, জ্যোতির্বিজ্ঞান, ধর্মতত্ত্ব, গণিত |
উল্লেখযোগ্য অবদান
|
বর্গাকার স্থানাঙ্ক ব্যবস্থা, হার্মনিক সিরিজের বিভাজনের প্রথম প্রমাণ, গড় দ্রুতি উপপাদ্য |
নিকোল ওরেসমে এর সমম্পর্কিত অজানা তথ্য
নিকোল ওরেসমে
(ইংরেজি: Nicole Oresme; ১৩২০/১৩২৫ - ১১ জুলাই, ১৩৮২) ছিলেন একজন বিশ্বখ্যাত ফরাসি দার্শনিক, যিনি মধ্যযুগে জ্ঞান-বিজ্ঞানের নানা শাখায় অসামান্য অবদান রেখেছেন। তিনি অর্থনীতি, গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, জ্যোতিষশাস্ত্র, জ্যোতির্বিজ্ঞান, দর্শন এবং ধর্মতত্ত্ব বিষয়ে প্রভাবশালী গ্রন্থ রচনা করেছেন। তিনি ছিলেন লিসিয়েঁর বিশপ, একজন সুপণ্ডিত অনুবাদক এবং ফ্রান্সের রাজা পঞ্চম চার্লসের উপদেষ্টা। ১৪শ শতাব্দীর ইউরোপের অন্যতম সৃজনশীল চিন্তাবিদ হিসেবে তিনি আজও স্মরণীয়।
জীবন
নিকোল ওরেসমে ১৩২০/১৩২৫ সালে নরম্যান্ডির কাঁ-এর নিকটবর্তী অ্যালম্যাগনের গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পরিবার সম্পর্কে প্রায় কিছুই জানা যায় না। তিনি যেহেতু কলেজ অফ নাভারে পড়ালেখা করেছেন,যা কিনা রাজকীয়ভাবে পৃষ্ঠপোষিত এবং সহায়তাকৃত ছিল (প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার সময় তাদের খরচ মেটাতে অক্ষম ছাত্রদের জন্য একটি প্রতিষ্ঠান)। তাই এটা সম্ভব যে তিনি একজন কৃষক পরিবারের সন্তান ছিলেন।
ওরেসমে প্যারিসে "আর্টস" অধ্যয়ন করেন, জঁ ব্যুরিদাঁ (প্রাকৃতিক দর্শনের ফরাসি স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা বলে পরিচিত), স্যাক্সনির আলবার্ট ও সম্ভবত মার্সিলিয়াস অফ ইংহেনের সাথে সেখানেই কলাবিদ্যায় স্নাতকোত্তর অর্জন করেন। ১৩৪২ সালের মধ্যে তিনি ইতিমধ্যেই আর্টসের একজন রিজেন্ট মাস্টার ছিলেন যখন উইলিয়াম অফ অককামের প্রাকৃতিক দর্শন নিয়ে বিতর্ক চলছিল ।
১৩৪৮ সালে তিনি প্যারিসে ধর্মতত্ত্বের ছাত্র ছিলেন।
১৩৫৬ সালে তিনি তার ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন এবং একই বছরে তিনি নাভারে কলেজে গ্র্যান্ড মাস্টার (grand-maître) হিসেবে নিযুক্ত হন।
১৩৬৪ সালে তিনি রুয়ান ক্যাথেড্রালের ডিন নিযুক্ত হন। ১৩৬৯ সালের দিকে তিনি চার্লস পঞ্চমের অনুরোধে অ্যারিস্টটলীয় রচনাগুলোর অনুবাদ শুরু করেন এবং এর জন্য তাকে ১৩৭১ সালে পেনশন প্রদান করা হত। তিনি ১৩৭৭ সালে লিসিয়েঁর বিশপ নিযুক্ত হন। ১৩৮২ সালে তিনি লিসিয়েঁতে মারা যান।
বৈজ্ঞানিক কাজ
জ্যোতির্বিদ্যা
অর্সেম জ্যোতির্বিদ্যায় একটি উল্লেখযোগ্য অবদানকারী ছিলেন। তিনি একটি নতুন জ্যোতির্বিদ্যাগত বিশ্ব মডেল প্রস্তাব করেছিলেন যা পৃথিবীকে সূর্যের চারপাশে ঘুরতে বলে। এই মডেলটি পঞ্চম শতাব্দীর গ্রিক দার্শনিক প্লেটো এবং অ্যারিস্টটলের মডেলের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছিল, কিন্তু অর্সেম এটিকে আরও উন্নত করেছিলেন। তিনি গ্রহগুলির কক্ষপথের আকার এবং আকৃতি সম্পর্কেও গবেষণা করেছিলেন।
গণিত
অর্সেম গণিতেও একজন প্রতিভাবান ব্যক্তি ছিলেন। তিনি সংখ্যা তত্ত্ব, জ্যামিতি এবং বীজগণিতের উপর কাজ করেছিলেন। তিনি সংখ্যা তত্ত্বের উপর একটি বই লিখেছিলেন যাতে তিনি প্রাকৃতিক সংখ্যার বৈশিষ্ট্যগুলি অধ্যয়ন করেছিলেন। তিনি জ্যামিতির উপরও একটি বই লিখেছিলেন যাতে তিনি ত্রিভুজ এবং বৃত্তের উপর কাজ করেছিলেন। তিনি বীজগণিতের উপরও একটি বই লিখেছিলেন যাতে তিনি সমীকরণ সমাধানের পদ্ধতিগুলি অধ্যয়ন করেছিলেন।
অর্থনীতি
অর্সেম অর্থনীতিতেও একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তিনি মুদ্রাস্ফীতি এবং দারিদ্র্যের মতো সমস্যাগুলি অধ্যয়ন করেছিলেন। তিনি একটি বই লিখেছিলেন যাতে তিনি মুদ্রাস্ফীতির কারণ এবং প্রভাবগুলি ব্যাখ্যা করেছিলেন। তিনি আরেকটি বই লিখেছিলেন যাতে তিনি দারিদ্র্যের কারণ এবং সমাধানগুলি অধ্যয়ন করেছিলেন।
দর্শন
অর্সেম দর্শনেও একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তিনি যুক্তিবিদ্যা, নীতিশাস্ত্র এবং ঈশ্বরের অস্তিত্বের মতো বিষয়গুলি নিয়ে কাজ করেছিলেন। তিনি একটি বই লিখেছিলেন যাতে তিনি যুক্তিবিদ্যার মূলনীতিগুলি অধ্যয়ন করেছিলেন। তিনি আরেকটি বই লিখেছিলেন যাতে তিনি নীতিশাস্ত্রের মূলনীতিগুলি অধ্যয়ন করেছিলেন। তিনি আরও একটি বই লিখেছিলেন যাতে তিনি ঈশ্বরের অস্তিত্বের পক্ষে যুক্তি দিয়েছিলেন।
অর্সেমের বৈজ্ঞানিক কাজগুলি তার সময়ের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তিনি জ্যোতির্বিদ্যা, গণিত, অর্থনীতি এবং দর্শনের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছিলেন। তার কাজ পরবর্তী প্রজন্মের বিজ্ঞানীদের জন্য অনুপ্রেরণা ছিল।
সম্মানসূচক খ্যাতি
ওরেসমের অর্থনৈতিক চিন্তাধারা তার মৃত্যুর পরও শত শত বছর ধরে সমাদৃত হয়েছে। ১৯২০ সালে প্রকাশিত 'মধ্যযুগীয় অর্থনৈতিক শিক্ষা' শীর্ষক প্রবন্ধে আইরিশ অর্থনীতিবিদ জর্জ ও'ব্রায়েন ওরেসমের 'অর্থের উৎপত্তি, প্রকৃতি, আইন এবং পরিবর্তন' (Treatise on the Origin, Nature, Law, and Alterations of Money) গ্রন্থ সম্পর্কে প্রচলিত ইতিবাচক একাডেমিক মতামতকে সংক্ষেপে বর্ণনা করেছেন:যারা এটি অধ্যয়ন করেছেন তাদের সবার সর্বসম্মত প্রশংসা কুড়িয়েছে গ্রন্থটি। রোশার বলেন যে এতে রয়েছে 'আর্থের একটি তত্ত্ব, চতুর্দশ শতাব্দীতে উদ্ভাবিত, যা আজও উনিশ শতাব্দীতে প্রয়োগ করা নীতিমালার পরীক্ষায় পুরোপুরি সঠিক, এবং এটি একটি সংক্ষিপ্ততা, সুনির্দিষ্টতা, স্বচ্ছতা এবং ভাষার সরলতার সাথে যা এর লেখকের উচ্চতর প্রতিভার আকর্ষক প্রমাণ।
' ব্রান্টসের মতে, 'ওরেসমের গ্রন্থ অর্থনৈতিক বিষয়ে প্রথমে ex professo নিবেদিত গ্রন্থগুলির একটি, এবং এটি এমন অনেক ধারণা প্রকাশ করে যা খুবই যুক্তিযুক্ত, তার পরে দীর্ঘদিন ধরে mercantilism নামে পরিচিত ছিল এমন ধারণাগুলির চেয়েও বেশি যুক্তিযুক্ত, এবং যেসব ধারণাগুলি অর্থকে বিনিময়ের একটি কাউন্টার ছাড়া আর কিছুই না হিসাবে হ্রাস করার অনুমতি দেয় তার চেয়েও বেশি যুক্তিযুক্ত।' ম্যাকলিওড বলেন, 'ওরেসমের অর্থ সম্পর্কিত গ্রন্থ আধুনিক অর্থনৈতিক সাহিত্যের শীর্ষে থাকতে পারে। এই গ্রন্থটি আর্থিক বিজ্ঞানের ভিত্তি স্থাপন করে, যা এখন সমস্ত সুস্থ অর্থনীতিবিদ দ্বারা গৃহীত।
![]()
এস্পিনাস বলেন, 'ওরেসমের রাজনৈতিক অর্থনীতির অন্যতম সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাটিকে সম্পূর্ণ ধর্মনিরপেক্ষ এবং প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে আচরণ করা, মধ্যযুগের অবসান এবং রেনেসাঁর ভোরের একটি সংকেত।' ডক্টর কানিংহাম তার প্রশংসার শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, 'জাতীয় সম্পদ এবং জাতীয় ক্ষমতার ধারণাগুলি কয়েক শতাব্দী ধরে অর্থনৈতিক বিষয়ে শাসনকারী ধারণা ছিল, এবং ওরেসমে অর্থনৈতিক লেখকদের মধ্যে সর্বপ্রথম বলে মনে হয় যাদের দ্বারা এগুলিকে তার যুক্তির ভিত্তি হিসাবে স্পষ্টভাবে গৃহীত হয়েছিল…. মুদ্রা সম্পর্কিত অর্থনৈতিক তত্ত্বের একটি বড় সংখ্যক পয়েন্ট বিচার এবং স্বচ্ছতার সাথে আলোচনা করা হয়।' একমাত্র এন্ডেম্যান ওরেসমের প্রাধান্যের সাথে বিতর্ক করতে ইচ্ছুক, কিন্তু এই প্রশ্নে তিনি একা।
🔹 বৈজ্ঞানিক ও দার্শনিক অবদান
১. 🔭 জ্যোতির্বিজ্ঞান ও মহাবিশ্বতত্ত্ব
-
ওরেসমে প্রথাগত পটোলেমীয় ভূ-কেন্দ্রিক তত্ত্বকে সমর্থন করলেও তিনি ভূমণ্ডলের ঘূর্ণন সম্পর্কিত ধারণা খণ্ডন ও বিশ্লেষণ করেছিলেন।
-
তিনি বলেন যে, পৃথিবী নিজে আবর্তন করতে পারে, এবং এটাই দিনের ও রাতের পরিবর্তনের কারণ হতে পারে—যদিও এই মত তিনি নিজেই পরে খণ্ডন করেছিলেন, কারণ সে সময় এটি ধর্মীয় মতবাদের বিরোধী ছিল।
২. 📊 গণিত ও চলচিত্র (Graphs)
-
ওরেসমে প্রথম দার্শনিক ও গাণিতিক পদ্ধতিতে চলমান বস্তুর গতি চিত্রায়ন করার জন্য গ্রাফিকাল উপস্থাপনা (coordinate-like ideas) ব্যবহার করেন।
-
এটি আধুনিক কার্টেসিয়ান গ্রাফিং সিস্টেম ও গতি বিশ্লেষণের ভিত্তি হিসেবে কাজ করে।
৩. 🔬 পদার্থবিজ্ঞান ও গতি
-
তিনি প্রথম ব্যাখ্যা করেন যে গতি একটি ধ্রুবক হারে বৃদ্ধি পেতে পারে এবং এর ভিজ্যুয়াল উপস্থাপনা সম্ভব। এই কাজটি গ্যালিলিও গ্যালিলেইর কাজের অনেক আগেই করা হয়েছিল।
৪. 💱 অর্থনীতি ও মুদ্রা তত্ত্ব
-
ওরেসমে “De Moneta” নামক গ্রন্থে মুদ্রা ব্যবস্থার ওপর বিশ্লেষণ দেন।
-
তিনি মনে করতেন, মুদ্রার অবমূল্যায়ন রাজতন্ত্রের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা অন্যায় এবং জনগণের উপর প্রতারণার সমান।
৫. 🌐 অনুবাদ ও ব্যাখ্যা
-
তিনি গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টটলের বহু গ্রন্থ ল্যাটিন থেকে ফরাসিতে অনুবাদ করেন এবং সেই সাথে তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা যুক্ত করেন। এ কাজ তাকে ফরাসি রাজসভায় উচ্চ মর্যাদায় উন্নীত করে।
🔹 ধর্মীয় ও প্রশাসনিক ভূমিকা
-
১৩৭৭ সালে তিনি লিসিউ-এর বিশপ নিযুক্ত হন।
-
রাজা চার্লস পঞ্চম-এর উপদেষ্টা হিসেবে রাজনীতি ও ধর্মতত্ত্বে তার পরামর্শ ছিল গুরুত্বপূর্ণ।
🔹 ওরেসমে-এর উত্তরাধিকার
-
নিকোল ওরেসমেকে অনেকে আধুনিক বিজ্ঞানের অগ্রদূত বলে মনে করেন, কারণ তিনি মধ্যযুগীয় চিন্তাধারাকে যুক্তি, গাণিতিক বিশ্লেষণ, ও পরীক্ষাধর্মী দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে মিলিয়ে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেন।
-
তাঁর কাজের প্রভাব গ্যালিলিও, ডেকার্তেস, এবং নিউটনের উপরও প্রতিক্রিয়াশীলভাবে পড়েছিল বলে অনেক ইতিহাসবিদ মনে করেন।
📘 উল্লেখযোগ্য রচনা
-
De Configurationibus Qualitatum et Motuum (চলন ও গুণগত রূপের উপর)
-
De Moneta (মুদ্রা ও অর্থনীতি)
-
Le Livre du ciel et du monde (অ্যারিস্টটলের "On the Heavens"-এর অনুবাদ ও ব্যাখ্যা)
📍 মৃত্যুর প্রেক্ষাপট:
নিকোল ওরেসমে (Nicole Oresme) মারা যান ১১ জুলাই, ১৩৮২ সালে। মৃত্যুর সময় তিনি ছিলেন লিসিউ (Lisieux), ফ্রান্স-এর বিশপ।
-
মৃত্যুকালে তিনি কেবল একজন ধর্মীয় নেতা নন, বরং রাজা চার্লস পঞ্চম-এর উপদেষ্টা এবং ফ্রান্সের অন্যতম বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
-
তার মৃত্যুর পরে, ইউরোপীয় পুনর্জাগরণের সূচনায় তার অনুবাদ, বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা ও দার্শনিক ভাবনা গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
নিকোল ওরেসমে তার সময়ে যেমন ব্যতিক্রমী চিন্তাবিদ ছিলেন, মৃত্যুর পরেও তিনি জ্ঞান-বিজ্ঞান ও দার্শনিক চর্চার ইতিহাসে এক অনন্য ব্যক্তিত্ব হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছেন।
আপনি চাইলে তার মৃত্যুর পর তার কাজের প্রভাব বা উত্তরসূরি দার্শনিকদের ওপর তার প্রভাব নিয়েও জানতে পারেন।
sourse: wikipedia
What's Your Reaction?






