সুনদার পিচাই এর জীবনী | Biography of Sundar Pichai
সুনদার পিচাই এর জীবনী | Biography of Sundar Pichai

সুন্দর পিচাই: ভারতীয় মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে গুগলের সিইও হবার গল্প
জন্ম |
পিচাই সুন্দররাজন
১০ জুন ১৯৭২ মাদুরাই, তামিলনাড়ু, ভারত
|
---|---|
জাতীয়তা |
![]() |
নাগরিকত্ব |
![]() |
শিক্ষা |
বি.টেক, এমএস, এমবিএ |
মাতৃশিক্ষায়তন |
আইআইটি খড়্গপুর (বি.টেক) স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় (এমএস) পেনসিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় (এমবিএ) |
পেশা |
ব্যবসায়ী |
নিয়োগকারী |
গুগল ইনকর্পোরেটেড (২০০৪-বর্তমান) |
উপাধি |
গুগলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা |
বোর্ড সদস্য |
|
দাম্পত্য সঙ্গী |
অঞ্জলি পিচাই |
সন্তান |
২ |
পুরস্কার |
![]() |
পিচাই সুন্দররাজন
(জন্ম: ১০ জুন ১৯৭২; সুন্দর পিচাই নামে অধিক পরিচিত) হলেন একজন ভারতীয় বংশোদ্ভূত আমেরিকান ব্যবসায়িক নির্বাহী। তিনি আলফাবেট ইনকর্পোরেটেড এবং এর সহযোগী প্রতিষ্ঠান গুগলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা।
জন্ম
সুন্দর পিচাই ১৯৭২ সালের ১০ জুন ভারতের তামিলনাড়ুর মাদুরাই তামিল হিন্দু পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা রেগুনাথা পিচাই ছিলেন একজন ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার এবং মা সন্তান জন্ম দেওয়ার পূর্বে শ্রুতিলেখক হিসাবে কাজ করতেন।
শিক্ষা জীবন
পিচাই চেন্নাইয়ে বড় হয়ে এবং জহর বিদ্যালয়-এ পড়াশোনা করেন। তিনি ভানা বাণী বিদ্যালয় থেকে দ্বাদশ শ্রেণি শেষ করেন। এরপরে ভারতীয় প্রযুক্তিবিদ্যা প্রতিষ্ঠান থেকে ডিগ্রী অর্জন করেন। পিচাইয়ের অধ্যাপক সুপারিশ করেন স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করার জন্য কিন্তু তিনি এর পরিবর্তে এমএস এবং এমবিএ ডিগ্রী পশ্চাদ্ধাবন করার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উপাদান বিজ্ঞান ও প্রকৌশল এর উপর এমএস করেন এবং বহার্তন স্কুল অফ দি ইউনিভার্সিটি অফ পেনসিলভানিয়া থেকে এমবিএ করেন।
কর্মজীবন
পিচাই ফলিত সামগ্রীতে প্রকৌশল ও পণ্য পরিচালনা এবং ম্যাকিনসে ও কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরামর্শে কাজ করেন।
তিনি এপ্রিল ২০১১ থেকে জুলাই ২০১৩ পর্যন্ত জাইভ সফটওয়্যারের পরিচালক ছিলেন। তিনি ২০১৩ সালের ১৩ মার্চ অ্যান্ড্রয়েডকে গুগল পণ্যতে যোগ করেন। যদিও তখন অ্যান্ড্রয়েড অ্যান্ডি রুবিন দ্বারা পরিচালিত ছিল।
পিচাই গুগলে যোগদান করেন ২০০৪ সালে। তিনি গুগলের ক্লায়েন্ট সফটওয়্যার, প্রোডাক্ট ম্যানেজমেন্টে নেতৃত্ব দেন; গুগল ক্রোমেও কাজ করেছেন তিনি। ক্রোম অপারেটিং সিস্টেম, সেইসাথে গুগল ড্রাইভেও পরবর্তীকালে তিনি কাজ করেছেন। এছাড়াও তিনি জিমেইল এবং গুগল মানচিত্রের মত বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশনের উন্নয়নও তত্ত্বাবধান করেন।
১৯ নভেম্বর ২০০৯ তারিখে, পিচাই ক্রোম ওএসের একটি নমুনা প্রদর্শন করেন; ২০১১ সালে ক্রোমবুক ট্রায়াল এবং পরীক্ষার জন্য মুক্তি পায় এবং ২০১২ সালে যা সর্বসাধারণের কাছে মুক্তি পায়। ২০ শে মে ২০১০ তারিখে, তিনি গুগলের নতুন ভিডিও কোডেক ভিপি 8-এর ঘোষণা করেন এবং নতুন ভিডিও ফরম্যাট, ওয়েবম চালু করেন।
২০১৪ সালে মাইক্রোসফটের সিইও হওয়ার জন্য পিচাইকে প্রস্তাব করা হয়েছিল, যা অবশেষে সত্য নাদেলাকে দেওয়া হয়।
২০১৫ সালের ১০ আগস্ট সুন্দর পিচাইকে গুগলের পরবর্তী প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে তিনি এই ওয়েব সার্চ জায়ান্টের পেরেন্ট সংস্থা অ্যালফাবেটেরও সিইও পদে অভিষিক্ত হন।
ব্যক্তিগত জীবন
সুন্দর পিচাই অঞ্জলি পিচাইয়ের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন, তাদের দুটি সন্তান আছে। পিচাই ক্রিকেট ও ফুটবল খেলতে ভালবাসেন। তিনি এফ সি বার্সেলোনার সমর্থক ও তিনি বলেন যে "দলের একটি খেলাও তিনি দেখতে ভোলেন না"।
উচ্চশিক্ষার্থে স্বপ্নভরা চোখে মার্কিন মূলুকে পা
যুক্তরাষ্ট্রে পা রেখেছিলেন একটা সুপ্ত বাসনা থেকে, তা হলো ক্যালিফোর্নিয়ার প্রযুক্তি-স্বর্গ সিলিকন ভ্যালিকে তিনি পেতে চান নিজ কর্মস্থল হিসেবে। সেই স্বপ্নের দেশের ক্যালিফোর্নিয়ায় জিনিসপত্রের দামে তাঁর মাথা খারাপ হবার যোগাড়, ব্যাগপ্যাকের দাম কিনা ৬০ ডলার (প্রায় ৫,০০০ বাংলাদেশী টাকা)! ওদিকে ৬ মাস কথা বলতে না পেরে বান্ধবী অঞ্জলিকেও প্রচণ্ড মিস করছিলেন তিনি। যা-ই হোক, ভর্তি হলেন স্ট্যানফোর্ডে।
সুন্দরের অধ্যাপক তাঁকে পিএইচডির জন্য সুপারিশ করলেও সুন্দর পিএইচডি না করে সেখান থেকে ধাতব বিজ্ঞান ও অর্ধপরিবাহী পদার্থবিজ্ঞানের ওপর মাস্টার্স করলেন।
এবার পিএইচডি করতে এসে ড্রপ-আউট হলেন সুন্দর। তারপর সিলিকন ভ্যালিতে অ্যাপ্লাইড ম্যাটিরিয়ালস নামে একটি অর্ধপরিবাহী নির্মাতা প্রতিষ্ঠানে প্রকৌশলী ও প্রোডাক্ট ম্যানেজার হিসেবে চাকরি নেন। বেশিদিন অবশ্য সেখানে টেকেননি সুন্দর। ওদিকে এমএস করতে আমেরিকায় হাজির হয়ে গেলেন সুন্দরের প্রেমিকা অঞ্জলি। তখনই বিয়েটা সেরে নিয়েছিলেন তাঁরা।
এরপর পামার বৃত্তি নিয়ে ২০০২ সালে পেনিসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হোয়ারটন স্কুল থেকে এমবিএ করেন তিনি। প্রকৌশলের পর ব্যবসায়ের ওপর ডিগ্রি যার, কারিগরি দিকের বদলে প্রতিষ্ঠানের পণ্য ব্যবস্থাপনায়ই ঝোঁক বেশি থাকার কথা তাঁর। সে ফর্মুলা মেনেই সুন্দর প্রথম চাকরি নিলেন ম্যাককিনসে এন্ড কোম্পানিতে ম্যানেজমেন্ট কনসালটেন্ট হিসেবে।
গুগলের সাথে অবশেষে যাত্রা শুরু
২০০৪-এ গুগলপ্লেক্সে তিনি যেদিন প্রথম ইন্টারভিউ দিতে এলেন, দিনটি ছিলো একটু উদ্ভট- এপ্রিল ফুল দিবস! কাকতালীয়ভাবে সেদিনই জিমেইল চালু করে গুগল। সেদিন তিনি সহ অন্যান্য চাকরিপ্রার্থীরাও ভেবেছিলেন মার খেতে যাচ্ছে গুগলের এই প্রজেক্ট! প্রথম দফাতেই চাকরিটা হয়ে গেলো তাঁর। গুগলের সার্চ টুলবার নিয়ে কাজ করবার জন্য গঠনকৃত ছোট একটি দলের অন্যতম সদস্য হিসেবে মনোনীত করা হলে সেখানেই গুগল-যজ্ঞের অভিষেক ঘটে সুন্দর পিচাইয়ের।
টুলবারের গুরুত্বে ২০০৬ সালে হঠাৎ করেই বাধ সাধলো মাইক্রোসফট। ইন্টারনেট এক্সপ্লোরারে ডিফল্ট করে দেওয়া হলো বিং-কে। তখন নিজের প্রতিষ্ঠানের জন্য নেতিবাচক এ পরিবর্তনের কার্যকরী ফলাফল প্রশমিত করতে কম্পিউটার নির্মাতাদের তিনি সম্মত করলেন তাদের হার্ডওয়্যারে টুলবার প্রি-ইনস্টল করতে। ফিরে এলো টুলবারের রাজত্ব।
টুলবার থেকেই এলো সুন্দরের ক্যারিয়ারে নয়া মোড়
গুগলের সার্চ টুলবারের সাফল্যই ছিলো সুন্দর পিচাইয়ের ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া মুহূর্ত। কেননা এর মাধ্যমেই তিনি গুগলের প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি পেজ ও সার্গেই ব্রিনকে হাত করে ফেলেন। ফলস্বরূপ, সুন্দর কর্তৃক গুগলের নিজস্ব ব্রাউজার তৈরির পরিকল্পনায় সায় দিয়ে দেন তাঁরা। ব্যস, ২০০৮ সালে চলে এলো ‘গুগল ক্রোম’। অল্প সময়েই মাইক্রোসফটের ইন্টারনেট ইক্সপ্লোরার ও মজিলা ফায়ারফক্সকে ছাপিয়ে ব্রাউজারের দুনিয়ায় একক আধিপত্য কায়েম করে ক্রোম। এর ধারায় পরবর্তীতে ক্রোম সিরিজ হিসেবে বাজারে আসে ক্রোম ওএস, ক্রোমবুকস ও ক্রোমকাস্ট। ক্রোমের কৃতিত্বের পুরস্কারস্বরূপ সে বছরই পণ্যোন্নয়ন বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট হন সুন্দর। চার বছরের মাথায় ক্রোম ও অ্যাপ বিভাগের জ্যেষ্ঠ ভাইস প্রেসিডেন্ট বনে যান তিনি।
ক্রোমের সফলতার পথ ধরে আরো দূরে, অতঃপর…
২০১৩ এর গোড়ায় অ্যান্ড্রয়েডের জনক ও প্রধান অ্যান্ডি রুবিন কর্মস্থল ছাড়লে ল্যারি পেজ সুন্দর পিচাইকে তাঁর স্থলাভিষিক্ত ঘোষণা করেন। ল্যারি পেজের দূরদৃষ্টি সবথেকে ভালো পড়তে পারতেন সুন্দর পিচাই-ই। গুগলের প্রতি দায়িত্বে তিনি এতটাই নিষ্ঠাবান ছিলেন যে, টুইটার কর্তৃক একাধিকবার ‘লোভনীয়’ সুযোগ করেছেন হাসিমুখে প্রত্যাখ্যান। সফলতা ও সততার প্রতিদানস্বরূপ ২০১৪ সালের অক্টোবরে আনুষ্ঠানিকভাবে ল্যারি পেজের সেকেন্ড ইন কম্যান্ড, অর্থাৎ গুগলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদ ‘প্রোডাক্ট চিফ’ ঘোষিত হন সুন্দর।
প্রিয় এ ভাবশিষ্যকে নিয়ে ল্যারি পেজও আপ্লুত।
“সামনে কী হতে যাচ্ছে, তা দেখবার এক অসীম ক্ষমতা আছে সুন্দরের, সেই সাথে আছে একটি বিশাল কর্মীদল ও গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাকে সংহত করবার দক্ষতা।”
সুন্দরের প্রোমোশনের দিন ঘোষণাপত্রে সুন্দরকে ল্যারি পেজ উল্লেখ করেন ‘পারফেক্ট ফিট ফর দিস রোল’। অনুমিতভাবেই ২০১৫ সালের ১০ আগস্ট গুগলের প্রধান কার্যনির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও)-ঘোষিত হন সুন্দর।
সিইও হয়ে তাঁর নতুন চ্যালেঞ্জ গুগলের নয়া অবতার অ্যালফাবেট ইনকর্পোরেটেডকে দাঁড় করানো। গুগল অধীনস্থ সকল কোম্পানি-প্রোডাক্টকে এক সুতোয় গাঁথতে নয়া এ কোম্পানি গড়েছে গুগল স্বয়ং।
কত আয় করেন সুন্দর পিচাই?
কথায় বলে, লোকের আয়-রোজগার নিয়ে জানতে চাওয়া নাকি শোভন নয়! কিন্তু ব্যক্তিটি যখন গুগলের সিইও, তখন জানার আগ্রহটা তুঙ্গে থাকবে, তাই স্বাভাবিক। ২০১৬ সালে তহবিল থেকে সুন্দর পিচাই আয় করেছিলেন ১৯৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (১,৬৬০ কোটি বাংলাদেশী টাকা), যা ২০১৫ এর আয়ের দ্বিগুণ।
২০১৬-তে তাঁর নির্ধারিত মাসিক বেতন ছিলো সাড়ে ৬ লাখ মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশী টাকায় সাড়ে ৫ কোটি টাকা। উল্লেখ্য, এর বাইরেও তহবিল, লভ্যাংশসহ নানা খাত থেকে প্রতি মাসে আরো মোটা অঙ্কই আয় করেন সুন্দর। ২০১৬ সালে তাঁর মোট সম্পদের পরিমাণ ছিলো ১.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এসব তথ্যই ২০১৭-তে প্রকাশিত এবং তা ২০১৬ এর আয়ের ওপর হিসাব করা হয়েছে। গত বছরের তথ্যাদি পেতে আমাদের আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।
ব্যক্তিজীবনে সুন্দর
আইআইটিতে পড়াকালীন প্রেম করেছিলেন যার সাথে, তাঁকে বিয়ে করে আগেই সফল প্রেমিকের খাতায় নাম লেখানো সফল কর্মজীবী সুন্দর এখন এক কন্যা ও এক পুত্রের জনক। তাঁর সাফল্যমণ্ডিত উত্থানে স্ত্রীর রয়েছে বিশাল অবদান। মাইক্রোসফট, ইয়াহু ও টুইটারে মোটা অঙ্কে সিইও হবার অফার পেয়েও গুগলে থেকে যাবার সিদ্ধান্ত সুন্দর নিয়েছিলেন স্ত্রী অঞ্জলির অনুপ্রেরণাতেই।
sourse: roar ...... wikipedia......bhugolshiksha .....roar.media
What's Your Reaction?






