ইব্রাহিম আল ফাজারী এর জীবনী | Biography of Muḥammad Ibrāhīm al-Fazārī

ইব্রাহিম আল ফাজারী এর জীবনী | Biography of Muḥammad Ibrāhīm al-Fazārī

May 20, 2025 - 18:38
May 22, 2025 - 23:50
 0  0
ইব্রাহিম আল ফাজারী এর জীবনী | Biography of Muḥammad   Ibrāhīm al-Fazārī

মুহাম্মাদ ইবনে ইব্রাহিম আল-ফাজারী

মৃত্যু

777 বা ৮০৬

পেশা

দার্শনিক, গণিতবিদ, জ্যোতির্বিজ্ঞানী

যুগ

ইসলামি স্বর্ণ যুগ

আল ফাজারী: আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের পথিকৃৎ মুসলিম বিজ্ঞানী

মুহাম্মদ ইবনে ইব্রাহিম ইবনে হাবিব ইবনে সামরা ইবনে জুনদাব  আল ফাজারী

 ( মৃত্যু ৭৯৬ বা ৮০৬) ছিলেন একজন মুসলিম দার্শনিক, গণিতবিদ এবং জ্যোতির্বিদ ।  তার পিতা ইব্রাহিম আল-ফাজেরিও একজন জ্যোতির্বিদ এবং গণিতবিদও ছিলেন।

কিছু সূত্র তাকে আরব হিসাবে উল্লেখ করেছে,[][][][] অন্যান্য উৎস বলে যে তিনি পারস্য ছিলেন।

আল-ফাজেরী আরবী ও ফারসি ভাষায় বহু বৈজ্ঞানিক গ্রন্থের অনুবাদ করেছিলেন। ইসলামী বিশ্বে প্রথম কোন অ্যাস্ট্রোল্যাব নির্মাণের কৃতিত্ব তার।

ইয়াকুব ইবনে তারিক ও তার পিতার সাথে তিনি ৭ম শতাব্দীতে ভারতীয় গণিতবিদ ও জ্যোতির্বিজ্ঞানী ব্রহ্মগুপ্ত কর্তৃক সংস্কৃত ভাষায় লিখিত ভারতীয় জ্যোতির্বিদ্যা বিষয়ক পুস্তক ব্রহ্মস্ফুটসিদ্ধান্ত থেকে আজ-জাজিল আল সিনা-আল-আরব বা সিন্দহিন্দ আরবী নামে অনুবাদ করতে সহায়তা করেন। সম্ভবত এই অনুবাদটিই ছিল সেই মাধ্যম যার দরুন হিন্দু সংখ্যা পদ্ধতি (অর্থাৎ আধুনিক সংখ্যা চিহ্নিতকরণ) ভারত থেকে মুসলিম বিশ্বে স্থানান্তরিত হয়েছিল।

আল ফাজারী'র পুরা নাম মুহাম্মদ ইবনে ইব্রাহীম ইবনে হাবীব ইবনে সোলায়মান ইবনে সামরা ইবনে জুনদাব আল ফাজারী। তিনি ছিলেন একজন মুসলিম দার্শনিক, গণিতবিদ এবং জ্যোতির্বিদ। তার পিতা ইব্রাহীম আল ফাজারীও একজন জ্যোতির্বিদ এবং গণিতবিদ ছিলেন। তিনি কোন অঞ্চলের মানুষ ছিলেন সেটা পরিস্কারভাবে জানা যায় না। তবে কোন কোন ঐতিহাসিক তাকে আরব হিসাবে উল্লেখ করেছেন। আবার কোন কোন ঐতিহাসিক তাকে পারসীয়ান হিসাবে উল্লেখ করেছেন। জানা যায়, আল ফাজারী ৭৪৬ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহন করেন এবং ৮০৬ খ্রিস্টাব্দে মারা যান।

আল-ফাজারী আরবী ও ফারসী ভাষায় দক্ষ ছিলেন। তিনি বহু বৈজ্ঞানিক গ্রন্থের অনুবাদক ছিলেন। তিনি অষ্টম শতাব্দীর ইসলামী স্বর্ণযুগের মানুষ ছিলেন। ইসলামী বিশ্বের এবং আধুনিক বিশ্বের প্রথম অ্যাস্ট্রোল্যাব নির্মাণের কৃতিত্বও তাঁর। অ্যাস্ট্রোল্যাব হলো একটি বিস্তৃত নত-পরিমাপক এবং একটি অ্যানালগ ক্যালকুলেটর।

যা কিনা জ্যোতির্বিদ্যার বিভিন্ন ধরনের কাজ এবং সমস্যা সমাধানে সক্ষম একটি যন্ত্র। ঐতিহাসিকভাবে, জ্যোতির্বিজ্ঞানী এবং নাবিকরা পথে কিংবা সমুদ্রে চলার সময় তারকা দেখে দিক নির্ধারণর সুবিধায় এটি ব্যবহার করত বলে জানা যায়। যা ইসলামিক স্বর্ণযুগ, ইউরোপীয় মধ্যযুগ, শাস্ত্রীয় প্রাচীনত্ব এবং ইউরোপীয়দের আধুনিক জ্যোতির্বিদদের টেলিস্কোপ আবিষ্কারের যুগের সময় ব্যবহৃত হয়েছিল। তাকে আধুনিক জ্যােতির্বিজ্ঞানের পথিকৃৎ বলা হয়।

ইয়াকুব ইবনে তারিক ও তার পিতার সাথে তিনি ৮ম শতাব্দীতে ভারতীয় গণিতবিদ ও জ্যোতির্বিজ্ঞানী "ব্রহ্মগুপ্ত" কর্তৃক সংস্কৃত ভাষায় লিখিত ভারতীয় জ্যোতির্বিদ্যা বিষয়ক পুস্তক "ব্রহ্মস্ফুটসিদ্ধান্ত" থেকে আজ-জাজিল আল সিনা-আল-আরব বা "সিন্দহিন্দ" নামে আরবীতে অনুবাদ করতে সহায়তা করেন।

ব্রাহ্মস্ফুটসিদ্ধান্ত হলো ব্রহ্মার সংশোধিত নীতিমালা বা সিদ্ধান্ত। ৬২৮ খ্রিস্টাব্দে ব্রহ্মগুপ্তের লেখা এবং বিশেষত সেই সময়ের তুলনায় একটি বিশাল আকৃতির বই। যা কোন গাণিতিক চিহ্নবিহীন পদ্যে রচিত গ্রন্থ।

গাণিতিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের উপর লিখিত এই পুস্তকটি গুরুত্বপূর্ণ গাণিতিক বিষয়াবলী অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে যাদের মধ্যে রয়েছে শূন্য নিয়ে কার্যক্রমের তথা শূন্যের ভূমিকার একটি উত্তম ধারণা, ধনাত্মক বা ঋণাত্মক যেকোন সংখ্যা প্রয়োগের কিছু নিয়ম, বর্গমূল নির্ণয়ের একটি নিয়ম, ধারার সমষ্টি নির্ণয়ের পদ্ধতি উপরন্তু ব্রহ্মগুপ্তের অভেদ ও ব্রহ্মগুপ্তের উপপাদ্য এবং রৈখিক ও দ্বিঘাত সমীকরণ সমাধান। দ্বিঘাত সমীকরণ হচ্ছে প্রাথমিক বীজগাণিতে, চতুর্ভুজ সমমানের সমাধান।

আল ফাজারী'র এই অনুবাদটিই ছিল সেই মাধ্যম, যার দরুন হিন্দু সংখ্যা পদ্ধতি (অর্থাৎ আধুনিক সংখ্যা চিহ্নিতকরণ) ভারত থেকে মুসলিম বিশ্বে স্থানান্তরিত হয়েছিল। যার ফলে আরবের সাথে ভারতীয় উপমহাদেশের মধ্যে নতুন সেতুবন্ধনের দ্বার উন্মোচিত হয়েছিল।

 বৈজ্ঞানিক অবদান

১. জ্যোতির্বিদ্যা ও গণিত

ইব্রাহিম আল-ফাযারী ভারতীয় জ্যোতির্বিদ ব্রহ্মগুপ্তের "ব্রাহ্মস্ফুটসিদ্ধান্ত" (Brāhmasphuṭasiddhānta) গ্রন্থটি আরবি ভাষায় "সিন্ধহিন্দ" (Sindhind) নামে অনুবাদ করেন। এই অনুবাদটি ইসলামি জ্যোতির্বিদ্যার ভিত্তি স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং পরবর্তীতে ইউরোপীয় বিজ্ঞানেও প্রভাব ফেলে।

২. অ্যাস্ট্রোল্যাব নির্মাণ

তিনি ইসলামি বিশ্বের প্রথম অ্যাস্ট্রোল্যাব নির্মাতা হিসেবে পরিচিত। এই যন্ত্রটি আকাশীয় বস্তুর অবস্থান নির্ধারণে ব্যবহৃত হতো এবং সময় নিরূপণ ও নৌ-নির্দেশনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত।

৩. গ্রন্থ রচনা

ইব্রাহিম আল-ফাযারী বিভিন্ন বিষয়ে গ্রন্থ রচনা করেন, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য:

  • "তাসতিহ আল-কুরা" (পৃথিবীর গোলাকৃতি সম্পর্কে)

  • "আল-মিকিয়াস লি-জাওয়াল" (সূর্যাস্ত পরিমাপ)

  • "আল-আমাল বিল অ্যাস্ট্রোল্যাব" (অ্যাস্ট্রোল্যাব ব্যবহারের পদ্ধতি)

প্রভাব ও উত্তরাধিকার

ইব্রাহিম আল-ফাযারীর অনুবাদ ও গবেষণা কাজ পরবর্তী ইসলামি বিজ্ঞানীদের জন্য ভিত্তি স্থাপন করে। তার কাজের উপর ভিত্তি করে আল-খাওয়ারিজমি, আল-বাত্তানি প্রমুখ বিজ্ঞানীরা আরও উন্নত গবেষণা পরিচালনা করেন। বিশেষ করে, ভারতীয় সংখ্যা পদ্ধতি ও শূন্যের ধারণা ইসলামি জগতে তার মাধ্যমেই প্রবেশ করে, যা পরবর্তীতে বিশ্বব্যাপী গাণিতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

 মৃত্যু

ইব্রাহিম আল-ফাযারী ৭৭৭ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন। তার অবদান আজও বিজ্ঞান ও ইতিহাসে স্মরণীয়।

What's Your Reaction?

Like Like 0
Dislike Dislike 0
Love Love 0
Funny Funny 0
Angry Angry 0
Sad Sad 0
Wow Wow 0