রোজালিন ইয়ালো এর জীবনী | Biography of Rosalyn Sussman Yalow

রোজালিন ইয়ালো এর জীবনী | Biography of Rosalyn Sussman Yalow

May 15, 2025 - 16:48
May 20, 2025 - 23:17
 0  1
রোজালিন ইয়ালো এর জীবনী  | Biography of Rosalyn Sussman Yalow

রোজালিন ইয়ালো: নোবেলজয়ী চিকিৎসা-পদার্থবিজ্ঞানী

রজালিন সাসম্যান ইয়্যালো (১৯ জুলাই, ১৯২১ - ৩০ শে মে, ২০১১) ছিলেন একজন আমেরিকান চিকিৎসা পদার্থবিদ এবং রেডিওইমিউনোঅ্যাসে বা রেডিও প্রতিরোধ পরীক্ষা (আরআইএ) পদ্ধতি উন্নয়নের জন্য ১৯৭৭ সালে দেহতত্ত্ব বা চিকিৎসা শাস্ত্রে নোবেল পুরস্কারের সহ-বিজয়ী ছিলেন ( রজার গুলেমিন এবং অ্যান্ড্রু শ্যাচলির সাথে) । তিনি ছিলেন নারীদের মধ্যে দ্বিতীয় (প্রথমজন গের্তি কোরি), এবং আমেরিকান বংশোদ্ভূত প্রথম নারী, যিনি শারীরবিজ্ঞান বা চিকিৎসা শাস্ত্রে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন।

জীবন

শৈশব

রজালিন সাসম্যান ইয়্যালো জন্মেছিলেন নিউয়র্কের ব্রোনেস্ক শহরে, তিনি ছিলেন ক্লারা (নিইই যিপার ) ও সাইমন সাসম্যানের কন্যা এবং তিনি বেড়ে উঠেছেন ইহুদী পরিবারে। তিনি নিউ ইয়র্ক শহরের ওয়াল্টন উচ্চ বিদ্যালয়ে (ব্রোনেস্ক) পড়াশুনা করেছেন। উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনার পর, তিনি হান্টার কলেজে যোগদান করেন এটি ছিল মহিলা কলেজ এবং এখানে ছিলো বিনা বেতনে অধ্যয়ন করার সুযোগ, তার মা আশা করেছিলো ইয়্যালো শিক্ষক হবেন কিন্তু ইয়্যালো সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি পদার্থ বিজ্ঞান নিয়ে অধ্যয়ন করবেন।

উচ্চশিক্ষা

ইয়্যালো টাইপ করতে জানতেন এবং ড রুডল্ফ শোএনহাইমার, যিনি ‍ছিলেন কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি কলেজ অব ফিজিশিয়ান্স এন্ড সার্জন এর বিশিষ্ট প্রাণরসায়নবিদ, তার অধীনে ইয়্যালো সেক্রেটারী হিসেবে খন্ডকালীন চাকরি করতেন । কোনো বিখ্যাত গ্রাজুয়েট স্কুল একটি মেয়েকে ভর্তি এবং আর্থিকভাবে সহায়তা করবে এটা ইয়্যালো বিশ্বাস করতেন না, তাই তিনি আরো একটি চাকরি নিয়েছিলেন, স্টেনোগ্রাফি নিয়ে পড়াশুনা করার শর্তে তাকে সেক্রেটারি হিসাবে নিয়োগ দিয়েছিলেন কলম্বিয়ার আরেক বায়োকেমিস্ট মাইকেল হাইডেলবার্গার । তিনি ১৯৪১ সালের জানুয়ারীতে হান্টার কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন।

কয়েক বছর পরে, তিনি ইউনিভার্সিটি অভ ইলিনয়ের আরবানা শ্যাম্পেইন শাখায় পদার্থবিজ্ঞানে শিক্ষক সহকারী হওয়ার প্রস্তাব পেয়েছিলেন। তিনি এই প্রস্তাবটি আংশিকভাবে গ্রহণ করেছিলেন কারণ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সবে শুরু হয়েছিল এবং অনেক পুরুষ লড়াইয়ে নেমেছিল এবং বিশ্ববিদ্যালয়টি বন্ধ না হওয়ার জন্য মহিলাদেরকে শিক্ষা এবং চাকরির প্রস্তাব দেয়। ১৯১৭ সাল থেকে ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয়েজ এ্যাট আরবানা চ্যাম্পাইন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদের ৪০০ সদস্যের মধ্যে তিনিই ছিলেন প্রথম ও একমাত্র নারী। ১৯৪৫ সালে ইয়্যালো পিএইচ ডি ডিগ্রী অর্জন করেন।

পরবর্তী গ্রীষ্মে, ইয়্যালো নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় বিনা বেতনে পদার্থ বিজ্ঞানের দুটি কোর্স নেন।

জন্ম

রোজালিন সাসম্যান

১৯ জুলাই ১৯২১
নিউয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র

মৃত্যু

৩০ মে ২০১১ (বয়স ৮৯)

জাতীয়তা

আমেরিকান

মাতৃশিক্ষায়তন

হান্টার কলেজ
ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয়েজ এ্যাট আরবানা চ্যাম্পাইন

পরিচিতির কারণ

রেডিওইমিউনোঅ্যাসে (আরআইএ)

দাম্পত্য সঙ্গী

এ. অ্যারন ইয়ালো (এম. ১৯৪৩; ২ সন্তান)

পুরস্কার

১৯৭২ ডিকসন প্রাইজ
১৯৭৫ এএমএ সায়েন্টিফিক অ্যাচিভম্যান্ট এওয়ার্ড
১৯৭৬ মৌলিক চিকিৎসা গবেষণার জন্য অ্যালবার্ট লস্কর এওয়ার্ড
১৯৭৭ মৌলিক চিকিৎসা গবেষণার জন্য অ্যালবার্ট লস্কর এওয়ার্ড
১৯৮৮ বিজ্ঞানে জাতীয় মেডেল

বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন

কর্মক্ষেত্র

চিকিৎসা পদার্থবিজ্ঞান

বিবাহ এবং সন্তান

১৯৪৩ সালের জুন মাসে, তিনি বিয়ে করেন তার সহকর্মী অ্যারন ইয়্যালোকে, যিনি ছিলেন রাব্বির পুত্র। তাদের দুই সন্তান বেনজামিন ও ইলানা এবং তারা কোশের বাড়িতে বেড়ে উঠেছিলো। ”ব্যক্তিগত জীবনের সাথে ক্যারিয়ারের ভারসাম্য বজায় রাখা” ইয়্যালো বিশ্বাস করতেন না এবং এর পরিবর্তে কর্মজীবনের যেখানেই পারেন তিনি তার গৃহজীবনকে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন।যায় হোক, ইয়্যালো প্রাধান্য দিয়েছিলেন চিরচরিত গৃহকত্রী নিয়মকে এবং নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন একজন স্ত্রী এবং মাতৃত্বের চিরায়িত দায়িত্বে।

পুরো ক্যারিয়ার জুড়ে তিনি নারীবাদী সংগঠনগুলি থেকে দূরে ছিলেন, কিন্তু তারপরেও তিনি বিজ্ঞানে আরও বেশি নারীদের অন্তর্ভুক্ত করার পক্ষে ছিলেন।যেহেতু তিনি বিশ্বাস করতেন, যুদ্ধের কারণে তিনি একটি চমৎকার সুযোগ পেয়েছেন পদার্থ বিজ্ঞানে, সেই একই কারণে যুদ্ধের পর নারীদের সংখ্যা কমে যাবে আগ্রহের অভাবে। ইয়্যালো দেখেন নারীবাদী আন্দোলন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাড়াঁয় তার চিরাচরিত বিশ্বাসে এবং তিনি ভাবতেন এটি নারীদেরকে মা ও স্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনে অনুৎসাহিত করবে।

কর্ম

১৯৪১ সালে হান্টার কলেজ থেকে স্নাতক পাস করার পরের মাসে, রজালিন সাসম্যান ইয়্যালো ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয়েজ এ্যাট আরবানা চ্যাম্পাইন বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগ থেকে সহকারী শিক্ষক হওয়ার প্রস্তাব পেয়েছিলেন। একজন নারী হিসেবে ইলিনয়েজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশলী কলেজের পদার্থবিজ্ঞান স্নাতক প্রোগ্রামের গ্রহণযোগ্যতা পেতে তাকে অনেক প্রতিবন্ধকতা পার করতে হয়েছিলো। প্রশিক্ষণ, স্বীকৃতিদান, পদোন্নতি এবং বিজ্ঞানের আরো অনেক উন্নয়নের দিক এবং বিশেষ করে পদার্থ বিজ্ঞান নিয়ন্ত্রণ করতো ক্ষমতাশালী সব পুরুষ ব্যক্তিত্ব।

১৯৪১ সালের সেপ্টেম্বরে যখন ইয়্যালো বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করে, তখন ৪০০ অধ্যাপক ও শিক্ষক সহকারীর মধ্যে তিনিই ছিলেন একমাত্র নারী। দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের মধ্যে তিনিই ছিলেন একমাত্র নারী । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পুরুষ প্রার্থীর ঘাটতির কারণে এই বিখ্যাত গ্র্যাজুয়েট বিদ্যালয়ে ইয়্যালো তার অবস্থানে কৃতিত্ব অর্জন করেছিলেন। তার চারিদিকে জ্ঞানী ব্যক্তি থাকায় বিজ্ঞানের ব্যাপক বিশ্ব সম্পর্কে তারা ইয়্যালোকে সচেতন করেন। তারা তার প্রতিভা বুঝতে পারে, তাকে উৎসাহিত করেন এবং তাকে সমর্থন করেন। ইয়্যালোর সফলতায় তারা সহায়তা করেছিলেন।

তার উচ্চাকাঙ্ক্ষার কারণে তিনি বুঝতে পারতেন তার কর্ম ক্ষেত্রের অন্য নারীরা তার মত নয়। অন্য নারীরা দেখেছিলেন, বিজ্ঞানের সেই সময়ে কোনো নারীর জন্য একমাত্র কাঙ্ক্ষিত পথ পরিত্যাগ করে ইয়্যালোর আগ্রহই তাকে একটি উচ্চ বিদ্যালয়ে বিজ্ঞানের শিক্ষক করে তোলো কিন্তু ইয়্যালো বিজ্ঞানী হতে চেয়েছিলেন। ইলিনয়েজ বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন, জ্ঞান বৃদ্ধির জন্যে তিনি অতিরিক্ত স্নাতক কোর্স নিয়েছিলেন কারণ তিনি তার নিয়মিত পাঠদানের দায়িত্ব ছাড়াও মূল পরীক্ষামূলক গবেষণা করতে চেয়েছিলেন।

কয়েক বছর ধরে ইয়্যালো তার কর্ম ক্ষেত্রের অন্যান্য মহিলাদের সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছিলেন কিন্তু তিনি কখনো পিছু হটেনি অথবা অন্য তরুণীদের থেকে মুখ ফিরিয়েও নেননি, যদিও তিনি বিশ্বাস করতেন তাদেরও সত্যিকারের বিজ্ঞানী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি কখনোই বিজ্ঞান ক্ষেত্রে নারী সংগঠনের পক্ষে ছিলেন না।  এমনকি তিনি উদ্ধৃত করে বলেছেন যে “ এটা আমাকে বিরক্ত করে যে, এখন বিজ্ঞানে নারীদের জন্য বিভিন্ন সংস্থা রয়েছে, যার অর্থ তারা মনে করেন পুরুষদের থেকে তাদের সাথে আলাদা আচরণ করা উচিত। আমি এতে একমত নই। “:৮১ ইয়্যালো নারী চিকিৎসা বা বিজ্ঞান প্রতিনিধিত্বের উন্নতির জন্য চ্যাম্পিয়ন ছিলেন না, তারপরও নোবেল জয়ের পরে মেয়েরা এবং তরুণীরা ইয়্যালোকে একজন আদর্শ মডেল হিসেবে নিয়েছিলো।

ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয়েজ এ্যাট চ্যাম্পাইন আরবানা গ্রাজুয়েট স্কুলে শিক্ষকতা এবং পাঠদানের পর ফেডারেল টেলিকমিউনিকেশন ল্যাবরেটরিতে সহকারী বৈদ্যুতিক প্রকৌশলী হিসাবে ছিলো ইয়্যালোর প্রথম কাজ । সেখানে তিনি আবারও নিজেকে একমাত্র নারী কর্মচারী হিসেবে পেয়েছিলেন। ১৯৪৬ সালে, তিনি পদার্থবিজ্ঞানের পাঠদানের জন্য হান্টার কলেজে ফিরে এসেছিলেন এবং ফলস্বরূপ বহু নারীকে প্রভাবিত করেছিলেন, বিশেষত একজন তরুণী মাইল্ড্রেড ড্রেসেলহাউস। ইয়্যালো প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদানের বাহিরে এবং গবেষণা জীবনের মধ্যে, ভবিষ্যতে "কার্বন বিজ্ঞানের কুইন" পরিচালনার জন্য দায়বদ্ধ ছিলেন। তিনি ১৯৪৬ থেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত পদার্থবিজ্ঞানের প্রভাষক ছিলেন, যদিও ১৯৪৭ সালের মধ্যে, তিনি ব্রোনক্স ভিএ হাসপাতালের পরামর্শদাতা হয়ে ভেটেরান্স অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (ভিএ) সাথে দীর্ঘ সম্পর্কের সূচনা করেছিলেন।

তেজস্ক্রিয় পদার্থের চিকিৎসার ব্যবহার অনুসন্ধান করার জন্য ভিএ গবেষণা কার্যক্রম প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলো। ১৯৫০ সালের মধ্যে, ইয়্যালো ব্রোনক্স ভিএ হাসপাতালে একটি রেডিওআইসোটোপ ল্যাবরেটরি সজ্জিত করেছিলেন এবং অবশেষে পুরো সময় গবেষণায় মনোনিবেশ করার জন্য তিনি শিক্ষকতা ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। সেখানে তিনি সলোমন বেরসনের সাথে রেডিওইমিউনোঅ্যাসে (আরআইএ)বিকাশে সহযোগিতা করেছিলেন, এটি একটি রেডিওআইসোটোপ ট্রেসিং কৌশল যা মানুষের রক্তে বিভিন্ন জৈবিক পদার্থের ক্ষুদ্র পরিমাণ পরিমাপের পাশাপাশি অন্যান্য জলীয় তরলগুলির এক বিশাল সংখ্যাও প্রদান করে । প্রাথমিকভাবে ডায়াবেটিস মেলিটাসে ইনসুলিনের স্তর অধ্যয়ন করার জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল, এই কৌশলটি তখন থেকেই হরমোন, ভিটামিন এবং এনজাইম সহ অন্যান্য শতাধিক পদার্থের জন্য প্রয়োগ করা হয়েছিল - যা আগে থেকে সনাক্ত করা খুব কম ছিলো।

বিপুল বাণিজ্যিক সম্ভাবনা সত্ত্বেও, ইয়্যালো এবং বেরসন এই পদ্ধতি উন্মুক্ত করতে বা পেটেন্ট দিতে অস্বীকার করেছিলেন। ১৯৬৮ সালে, ইয়্যালো মাউন্ট সিনাই হাসপাতালে মেডিসিন বিভাগের গবেষণা অধ্যাপক হিসাবে নিযুক্ত হন, সেখানে তিনি এবং পরে লার্জে সলোমন বেরসন বিশিষ্ট প্রফেসর হন।

পুরস্কার

ইয়্যালোকে পর্তুগালের ফুলব্রাইট ফেলোশিপ প্রদান করা হয়েছিল, এটি প্রতিযোগিতামূলক, যোগ্যতা-ভিত্তিক অনুদানের একটি আমেরিকান স্কলারশিপ প্রোগ্রাম, যা বিজ্ঞান, ব্যবসা, একাডেমি, পাবলিক সার্ভিস, সরকার এবং চারুকলা সহ সকল ক্ষেত্রে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য অংশগ্রহণকারীদের স্পনসর করে।

১৯৬১ সালে, ইয়্যালো আমেরিকান ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশনের এলি লিলি পুরস্কার জিতেছিলেন, যা ডায়াবেটিস এবং এর জটিলতার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে বিশ্বের বৃহত্তম বৈজ্ঞানিক ও চিকিৎসা সম্মেলনে বৈজ্ঞানিক সেশনে অংশ নিতে ১০০ জন জ্ঞানীকে বৃত্তি প্রদান করে। অতিরিক্ত, এটি এই জ্ঞানীদেরকে পেশাদার শিক্ষা কার্যক্রমের অনুষদ হিসাবে পরিবেশন করার জন্য এবং ক্লিনিক্যালভাবে এই রোগটি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে।

এক বছর পরে তাকে গায়ারডনার ফাউন্ডেশন আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছিল, যা বিশ্বের সৃজনশীল এবং দক্ষতা সম্পন্ন সেইসব বায়োমেডিকাল বিজ্ঞানীদের স্বীকৃতি দেয় যারা মানবতাকে এগিয়ে নিয়ে চলেছে।

একই বছর, ইয়্যালো আমেরিকান কলেজ অফ ফিজিশিয়ান্স পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিল, এটি অভ্যন্তরীণ চিকিৎসায় শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি এবং স্বতন্ত্র অবদানকে স্বীকৃতি দেয়।

১৯৭২ সালে, ইয়্যালোকে এক্সিলেন্স ইন রিসার্চ এর জন্য উইলিয়াম এস মিডলটন অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়েছিল, যা বায়োমেডিক্যাল ল্যাবরেটরি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট সার্ভিস এর প্রবীণ বায়ো বায়োমেডিকাল গবেষণা বিজ্ঞানীদের ভেটেরান্সের স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কিত অসামান্য বৈজ্ঞানিক অবদান এবং কৃতিত্বের স্বীকৃতি হিসাবে প্রতি বছর সর্বাধিক সম্মান প্রদান করে।

এছাড়াও ১৯৭২ সালে, তাকে এন্ডোক্রাইন সোসাইটির কোচ অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়, এটি এন্ডোক্রিনোলজির গবেষণা, শিক্ষা এবং ক্লিনিক্যাল অনুশীলনে দক্ষতায় নিজেদের উৎসর্গ করেছেন সেইসব ব্যক্তিদেরকে পুরস্কার দেয়।

১৯৭৫ সালে, ইয়্যালো এবং বেরসন (যিনি ১৯৭২ সালে মারা গিয়েছিলেন) আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন সায়েন্টিফিক অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হয়েছেন, এটি বিশেষ অনুষ্ঠানে দেয়া একটি স্বর্ণপদক পুরস্কার যা অসামান্য বৈজ্ঞানিক কৃতিত্বের স্বীকৃতি স্বরূপ দেয়া হয়।[২১][২২]

পরের বছর তিনি বেসিক মেডিকেল গবেষণার জন্য অ্যালবার্ট লস্কর অ্যাওয়ার্ডের প্রথম মহিলা প্রাপক এবং প্রথম পারমাণবিক পদার্থবিদ হয়েছিলেন। ১৯৪৫ সালে অ্যালবার্ট এবং মেরি লস্কর দ্বারা প্রতিষ্ঠিত, এই পুরস্কারটি এমন বিজ্ঞানীদের সম্মান প্রদানের উদ্দেশ্যে করা হয়েছে যারা মৌলিক জৈবিক আবিষ্কার এবং মানব স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য ক্লিনিক্যাল অগ্রগতি করেছেন।

১৯৭৭ সালে, ইয়্যালো ষষ্ঠ স্বতন্ত্র নারী (মেরি কুরির দুটি জয় বিবেচনা করে সামগ্রিকভাবে, সপ্তম) এবং প্রথম আমেরিকান বংশোদ্ভূত নারী ছিলেন, যিনি বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্রে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেছিলেন। তিনি দেহবিজ্ঞান বা ওষুধ বিভাগে জয়ী বিশ্বের দ্বিতীয় নারীও ছিলেন (প্রথমটি জের্তি কোরি) । রেডিওইমিউনোঅ্যাসে (আরআইএ) কৌশল তৈরিতে তার ভূমিকার জন্য তিনি রজার গুলেমিন এবং অ্যান্ড্রু ভি শ্যাচলির সাথে একত্রে সম্মানিত হয়েছিলেন। মানবদেহে পদার্থ পরিমাপ করে হেপাটাইটিস জাতীয় রোগের জন্য দাতাদের রক্তের স্ক্রিনিং করা সম্ভব হয়েছিল।জীবাণুর অভ্যন্তরে বা বাইরে তরলের মধ্যে ক্ষুদ্র পরিমাণে পাওয়া যায় এমন প্রচুর পরিমাণ পদার্থ পরিমাপ করতে রেডিওইমিউনোঅ্যাসে (আরআইএ) ব্যবহার করা যেতে পারে (যেমন ভাইরাস, ড্রাগ এবং হরমোন)। বর্তমানে সম্ভাব্য ব্যবহারের তালিকা অসীম, তবে বিশেষত, আরআইএ রক্ত-অনুদানের বিভিন্ন ধরনের হেপাটাইটিসের জন্য স্ক্রিনিং করা যায়। এই কৌশলটি হরমোনজনিত স্বাস্থ্য সমস্যাগুলি সনাক্ত করতেও ব্যবহার করা যেতে পারে। আরও, কিছু ক্যান্সার সহ অনেক বিদেশী পদার্থ রক্তে সনাক্ত করতে আরআইএ ব্যবহার করা যেতে পারে। অবশেষে, কৌশলটি অ্যান্টিবায়োটিক এবং ওষুধের মাত্রার কার্যকারিতা পরিমাপ করতে ব্যবহার করা যেতে পারে।

১৯৭৮ সালে, ইয়্যালো আমেরিকান একাডেমি অফ আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেসের ফেলো নির্বাচিত হয়েছিলেন, যা বিজ্ঞান বা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রশিক্ষণ প্রাপ্তদের প্রাথমিক কর্মজীবনের জন্য পাবলিক নীতি এবং প্রশাসনের ক্যারিয়ার সম্পর্কে শেখার সুযোগ দেয়।]

১৯৮৬ সালে, ইয়্যালোকে নিউইয়র্ক একাডেমি অব সায়েন্সেসের ন্যাচারাল সায়েন্সেসে এ ক্রেসি মরিসন পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছিল, যা জনাব আব্রাহাম ক্রেসি মরিসন নিউইয়র্ক একাডেমি অফ সায়েন্সেস এবং এর অধিভুক্ত সমিতিগুলির ক্ষেত্রের মধ্যে একটি বৈজ্ঞানিক বিষয়ের উপর বিশেষ গবেষণাপত্র রয়েছে এমন ব্যক্তিদের অফার বা প্রস্তাব করেন।

১৯৮৮ সালে, ইয়্যালো বিজ্ঞান জাতীয় পদক পেয়েছিলো, যা আমেরিকান ব্যক্তিদের দেওয়া হয় যারা বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তিতে সর্বোচ্চ সম্মানের অধিকারী।

১৯৯৩ সালে, ইয়্যালোকে জাতীয় মহিলা হল অব ফেইম এ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল।

নোবেলজয়ী চিকিৎসা-পদার্থবিজ্ঞানী

আমাদের শরীরের মতো এত জটিল স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র আর একটিও নেই। শরীরের ছোটখাট সমস্যাগুলির সমাধান শরীর নিজে নিজেই করে ফেলে। অনেক সময় আমরা জানতেও পারি না শরীরের স্বাভাবিক রাসায়নিক উপাদানের কী পরিবর্তন ঘটছে। কিন্তু যখনই শরীরের কোন সমস্যা শরীর নিজে নিজে ঠিক করে ফেলতে পারে না, তখন বিভিন্ন উপসর্গের মাধ্যমে শরীর সংকেত দিতে থাকে যে কোথাও কোন সমস্যা দেখা দিয়েছে। তখন দরকার হয় চিকিৎসার। বৈজ্ঞানিক চিকিৎসার জন্য সবচেয়ে জরুরি হলো সঠিকভাবে রোগ নির্ণয়। রোগনির্ণয়ের জন্য বর্তমানে যেসব উন্নত বৈজ্ঞানিক রাসায়নিক পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় তার একটি হলো রেডিওইমিউনোএসে (radioimmunoassay) বা আর-আই-এ (RIA)। এই পদ্ধতির মাধ্যমে আমাদের শরীরের রক্ত এবং অন্যান্য তরল পদার্থের মধ্য অন্য কোন পদার্থ ঢুকে গেলে – তা যত সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম পরিমাণেই হোক না কেন – তা শনাক্ত করা সম্ভব হয়।

শ্বাস-প্রশ্বাসে, খাবারের সাথে, এবং আরো বিভিন্নভাবে আমাদের শরীরে অনবরত ঢুকছে রোগজীবাণু, ভাইরাসছাড়াও আরো অসংখ্য ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান। রক্ত এবং অন্যান্য তরলের সাথে মিশে গিয়ে এগুলি সারা শরীরে ছড়িয়ে যায়। আর-আই-এ পদ্ধতিতে এই উপাদানগুলির উপস্থিতি এবং পরিমাণ সঠিকভাবে নির্ণয় করা যায়। আর-আই-এ পদ্ধতি উদ্ভাবনের ফলে চিকিৎসাবিজ্ঞানের একটি নতুন দিগন্ত খুলে যায়। সম্ভব হয় শরীরের বিভিন্ন হরমোনের মাত্রা মেপে দেখার। কোন ওষুধ রোগীর শরীরে কাজ করছে কী না, ভিটামিন শরীরের উপাদানের সাথে মিশতে পারছে কি না, কিংবা ভাইরাস আক্রান্ত হলে তা কোন্‌ মাত্রায় কতটুকু ক্ষতি করছে এবং তার প্রতিষেধক দিলে তা কার্যকর হচ্ছে কি না সবকিছুই মেপে দেখা সম্ভব হয়েছে এই আর-আই-এ উদ্ভাবনের ফলে।

ওষুধের সঠিক মাত্রা নির্ধারণে অগ্রদূতের ভূমিকা পালন করেছে এই পদ্ধতি। ১৯৫৯ সালে এই পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন পদার্থবিজ্ঞানী রোজালিন ইয়ালো এবং ডাক্তার সোলোমন বারসন। চিকিৎসাবিজ্ঞানের এই যুগান্তকারী আবিষ্কারের জন্য রোজালিন ইয়ালো পেয়েছেন ১৯৭৭ সালের চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কার। অথচ কর্মজীবনের শুরুতে হতদরিদ্র মা-বাবার সন্তান রোজালিন একটি শিক্ষকতার চাকরি চেয়েও পাননি। কাজ শুরু করেছিলেন স্টেনোগ্রাফার হিসেবে। একাগ্রতা, অধ্যবসায় এবং কঠোর পরিশ্রমের ফলে রোজালিন হয়ে উঠেছেন বিশ্বের প্রথম সারির চিকিৎসা-পদার্থবিজ্ঞানী। 

ইহুদি মা-বাবার সন্তান রোজালিনের জন্ম নিউইয়র্ক শহরে ১৯২১ সালের ১৯ জুলাই। তাঁর মা-বাবা পূর্ব ইওরোপ থেকে আমেরিকায় এসেছিলেন অভিবাসী হয়ে। সীমিত সামর্থ্যের মধ্যে কোনো রকমে খেয়ে পরে বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রাম করছিলেন রোজালিনের মা-বাবা। বড় কোন স্বপ্ন দেখার সাহসও তাঁরা দিতে পারেননি তাঁদের সন্তানদের। নিজেরা বেশিদূর পড়াশোনা করতে পারেননি। কিন্তু বুঝতে পেরেছেন সন্তানদের লেখাপড়া শেখাতে পারলে জীবনসংগ্রামে তারা হেরে যাবে না। 

আমেরিকার শিক্ষাব্যবস্থায় ভালো ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বিনামূল্যে পড়াশোনা করার অনেক স্কুল আছে। নিউইয়র্কের ব্রংকস-এর সাধারণ সরকারি স্কুলেই পড়াশোনা রোজালিনের। হাইস্কুলে রসায়নের প্রতি আকৃষ্ট হন রোজালিন। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের পড়াশোনার জন্যও তাঁকে খুঁজতে হয়েছিল বিনাবেতনে পড়াশোনা কোথায় করা যায়। নিউইয়র্কের হান্টার কলেজ ছিল নিউইয়র্ক সিটির মিউনিসিপালিটি পরিচালিত বিনাবেতনে পড়ার কলেজ, যেখানে দরিদ্র পরিবারের মেয়েদের পড়াশোনা করার সুযোগ দেয়া হতো। হান্টার কলেজে স্নাতক পর্যায়ের পড়াশোনা করতে এসে রোজালিনের ভালো লেগে যায় পদার্থবিজ্ঞান।

মেরি কুরির সন্তান ইভ কুরির লেখা মেরি কুরির জীবনী তখন প্রকাশিত হয়েছে। সেই বই পড়ে রোজালিন নিজেকে মেরি কুরির আদর্শে তৈরি করার অনুপ্রেরণা পেলেন। তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ডামাডোল শুরু হয়ে গেছে। নিউক্লিয়ার ফিজিক্সের রমরমা তখন শুরু হয়ে গেছে। সেই সময় নিউক্লিয়ার ফিশানের জনক এনরিকো ফার্মির লেকচার শোনার সুযোগ হলো রোজালিনের। পদার্থবিজ্ঞান,  বিশেষ করে নিউক্লিয়ার ফিজিক্সের প্রতি গভীর ভালোবাসা তৈরি হলো রোজালিনের। মা-বাবা যতই বলুন যে একটা শিক্ষকতার চাকরি পেলেই চলবে, রোজালিন মনস্থির মনস্থির করে ফেলেছেন সুযোগ পেলে পদার্থবিজ্ঞানের গবেষণাই করবেন জীবনে। ১৯৪১ সালে রসায়ন ও পদার্থবিজ্ঞান মেজর নিয়ে স্নাতক পাশ করলেন হান্টার কলেজ থেকে। 

কিন্তু পদার্থবিজ্ঞানের গবেষণা করতে গেলে তো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাগবে, পদার্থবিজ্ঞানে পিএইচডি করতে হবে। পড়াশোনার খরচ চালানোর জন্য বৃত্তি লাগবে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করলেন রোজালিন। কিন্তু সব বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই সরাসরি প্রত্যাখ্যানপত্র পেলেন তিনি। স্নাতকে এত ভালো রেজাল্ট করার পরও কোন বিশ্ববিদ্যালয় তাকে ভর্তির সুযোগ দিচ্ছে না কেন জানতে গিয়ে উত্তর পেলেন – একে তো মেয়ে, তার উপর ইহুদি। শুধুমাত্র একারণেই তাঁর দরখাস্ত বাতিল করে দেয়া হচ্ছিল। 

তাঁর মা-বাবা চেয়েছিলেন মেয়ে যদি কোনোভাবে লেখাপড়া শিখে কোনো একটা স্কুলে শিক্ষকতার চাকরি পায় তাহলে কোনোরকমে খেয়ে পরে বেঁচে থাকতে পারবে। কিন্তু স্কুলের শিক্ষকতার জন্য দরখাস্ত করেও কোন ফল হলো না। অনেকে পরামর্শ দিলেন স্টেনোগ্রাফি শিখে নিলে স্টেনোগ্রাফার হিসেবে কেরানির চাকরি পাওয়া যেতে পারে। রোজালিন বাধ্য হয়ে তাই শুরু করলেন। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রির প্রফেসর রুডলফ শোয়েনহেইমারের স্টেনোগ্রাফার হিসেবে কাজ শুরু করলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে না পারলেও সান্তনা এই যে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকের অফিসে বসে কাজ করছেন। 

অবশেষে একটা সুযোগ এলো রোজালিনের জন্য। তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, আমেরিকা যুদ্ধে জড়িয়ে গেছে। আমেরিকার ছেলেদের অনেকেই যুদ্ধে যোগ দেয়ার কারণে অনেক সিট খালি থেকে যাচ্ছিল। তখন শূন্যতা পূরণ করার জন্য মেয়েদেরকে সুযোগ দেয়া হয়। সেই সুযোগে ইলিনয় ইউনিভার্সিটির আরবানা-শ্যামপেইন ক্যাম্পাসে গ্রাজুয়েট স্কুলে ভর্তির সুযোগ পান রোজালিন। ১৯১৭ সালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হবার পর থেকে রোজালিনের আগে আর কোন মেয়ে পদার্থবিজ্ঞানে ভর্তি হয়নি সেখানে। রোজালিন ছিলেন পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম মেয়ে শিক্ষার্থী। একটা অ্যাসিস্ট্যান্টশিপও পেয়েছিলেন তিনি। স্নাতক পর্যায়ের ফিজিক্সের ক্লাস নিতেন তিনি। তখন ফিজিক্স ডিপার্টমেন্ট ছিল ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টির অধীনে। ফ্যাকাল্টির চারশ’র অধিক অধ্যাপক ও শিক্ষা-সহকারীর মধ্যে রোজালিনই ছিলেন একমাত্র মেয়ে। 

এখানে তাঁর সাথে পরিচয় হয় আরন ইয়ালোর সাথে। আরনও ছিলেন ইহুদি পরিবারের সন্তান। আরনের বাবা ছিলেন নিউইয়র্কের ইহুদি ধর্মযাজক। ১৯৪৩ সালে আরন ও রোজালিনের বিয়ে হয়। পরের চার বছরের মধ্যে তাঁদের দুই সন্তান – বেনজামিন ও ইলানার জন্ম হয়। অন্যান্য সব কাজের মতোই ঘরসংসারও খুব মনযোগ দিয়ে ভালোবেসে করতেন রোজালিন। 

১৯৪৫ সালে নিউক্লিয়ার ফিজিক্সে পিএইচডি সম্পন্ন করেন রোজালিন। দুর্দান্ত ভালো রেজাল্ট করার পরও তিনি কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের কোথাও কোন চাকরি পেলেন না। অনেক দরখাস্ত ব্যর্থ হবার পর প্রথম কাজ শুরু করলেন নিউইয়র্ক সিটির ফেডারেল টেলিকমিউনিকেশান কোম্পানিতে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে। তারপর হান্টার কলেজে যোগ দেন পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক হিসেবে। এরপর ব্রোংক্‌স এর ভ্যাটেরান্স অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (ভিএ) হাসপাতালের নিউক্লিয়ার মেডিসিনের গবেষক হিসেবে ১৯৪৭ সালে। এখানেই তিনি গবেষণা শুরু করলেন চিকিৎসাবিজ্ঞানে রেডিও-আইসোটোপের ব্যবহার সম্পর্কে। 

চিকিৎসাবিজ্ঞানে রেডিও-আইসোটোপের ব্যবহার তখন মাত্র শুরু হয়েছে। রোজালিন দেখতে পাচ্ছেন নিউক্লিয়ার মেডিসিনের বিপুল সম্ভাবনাময় ভবিষ্যত। কিন্তু তাঁর একজন গবেষণা-সহযোগী দরকার যিনি চিকিৎসাবিজ্ঞান সম্পর্কে জানেন। এই কাজের জন্য তিনি বেছে নেন ভিএ হাসপাতালে সদ্য যোগ দেয়া ইন্টার্নি ডাক্তার সোলোমন বারসনকে। ডাক্তার সোলোমন বারসনের সাথে রোজালিনের অচ্ছেদ্য গবেষণা-বন্ধন তৈরি হয়। পরবর্তী বিশ বছরেরও বেশি সময় তাঁরা একসাথে গবেষণা করেছেন। ১৯৭২ সালে ডাক্তার সোলোমন হার্ট অ্যাটাকে মারা যান। 

১৯৫০ এর দশকের শুরুতে রোজালিন ও সোলোমন রক্তে আয়োডিন ও এলবুমিনের বিপাক প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করার পদ্ধতি উদ্ভাবন করলেন। রোগীর শরীরে রেডিও-আইসোটোপ সংযুক্ত রাসায়নিক (রেডিওফার্মাসিউটিক্যাল) ইনজেকশানের মাধ্যমে প্রয়োগ করার পর রোগীর রক্তের তেজস্ক্রিয়তা পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় সময়ের সাথে তেজস্ক্রিয় বিকিরণের মাত্রা কীভাবে ক্রমশ কমে আসে। অতিদ্রুত কমে এলে বুঝতে হবে বিপাক প্রক্রিয়া দ্রুত হচ্ছে, আর বিকিরণের হার যদি কম হয়, বুঝতে হবে বিপাক ধীরগতিতে হচ্ছে। 

রেডিওইমিউনোএসে উদ্ভাবন ও রোজালিন ইয়ালো

রেডিওইমিউনোএসে হচ্ছে রেডিও আইসোটোপের সাথে সংশ্লিষ্ট একটি অ্যান্টিজেনের মাধ্যমে দেহে অ্যান্টিবডির মাত্রা শনাক্তকরণের একটি কৌশল। এ কৌশল উদ্ভাবনের জন্য রোজালিন ১৯৭৭ সালে চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কারে সম্মানিত হন।

তবে এর ২২ বছর আগে ১৯৫৫ সালে তিনি যখন দি জার্নাল অব ক্লিনিকাল ইনভেস্টিগেশন-এ তার উদ্ভাবনটি প্রকাশের জন্য পাঠান, তখন পর্যালোচক তথা রিভিউয়াররা এতে প্রস্তাবিত পদ্ধতি এবং তার ফলাফল নিয়ে সন্দিহান ছিলেন বিধায় তারা একে বাতিল করে দেন।

এতে রোজালিন হতাশ না হয়ে বরং একে আরও সমৃদ্ধ করেন এবং স্বীকৃতিটাও অর্জন করেন। তার নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তির পরবর্তী জীবনে তিনি খুব সানন্দেই তার সেই প্রত্যাখ্যান পত্রটি সবাইকে দেখিয়ে বেড়াতেন।

মৃত্যু: 

১৯৯১ সালে সত্তর বছর বয়সে হাসপাতালের গবেষকের চাকরি থেকে অবসর নিতে হয় তাঁকে। তারপর বেঁচে ছিলেন আরো বিশ বছর। তখনো তাঁর পড়াশোনা, গবেষণা থেমে থাকেনি। ২০১১ সালের ৩০ মে তাঁর জীবনাবসান হয়। 

What's Your Reaction?

Like Like 0
Dislike Dislike 0
Love Love 0
Funny Funny 0
Angry Angry 0
Sad Sad 0
Wow Wow 0