ড্যানিয়েল বার্নোলি এর জীবনী | Biography of Daniel Bernoulli

ড্যানিয়েল বার্নোলি এর জীবনী | Biography of Daniel Bernoulli

May 14, 2025 - 23:36
May 17, 2025 - 01:08
 0  0
ড্যানিয়েল বার্নোলি এর জীবনী | Biography of Daniel Bernoulli

পরিবারের মধ্যেই গণিত নিয়ে রেষারেষি, বার্নৌলিদের সঙ্গে জড়িয়ে অদ্ভুত ইতিহাস

ড্যানিয়েল বার্নোলি

গাণিতিক অর্থনীতি"র জনক দানিয়েল বার্নুলি (গ্রনিঙ্গেন, ফেব্রুয়ারি ৮১৭০০ – বাসেল, মার্চ ১৭১৭৮২) ছিলেন একজন সুইস গণিতবিদ ও পদার্থবিজ্ঞানী।

বার্নোলি পরিবার

বার্নোলি পরিবার হল সুইস গণিতবিদদের একটি পরিবার যারা পদার্থবিদ্যায় ক্যালকুলাস প্রয়োগের পথিকৃৎ ছিলেন। বাসেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতের অধ্যাপক জ্যাকব (১৬৫৪-১৭০৫), সম্ভাব্যতা তত্ত্ব এবং প্রকরণের ক্যালকুলাসের নীতিগুলির উপর তার কাজের জন্য সর্বাধিক পরিচিত। তিনি বার্নোলি সংখ্যাগুলি তৈরি করেছিলেন, যার মাধ্যমে তিনি সূচকীয় সিরিজটি বের করেছিলেন এবং তিনি "অখণ্ড" শব্দটি প্রবর্তন করেছিলেন। তার ভাই জোহান (১৬৬৭-১৭৪৮), যিনি বাসেলের গণিতের অধ্যাপকও ছিলেন, বক্ররেখার দৈর্ঘ্য এবং ক্ষেত্র নির্ধারণের জন্য ক্যালকুলাস ব্যবহার করেছিলেন এবং ডিফারেনশিয়াল সমীকরণ, জাহাজের পালের গণিত এবং আলোকবিদ্যার তত্ত্বে অবদান রেখেছিলেন।

 জোহানের পুত্র ড্যানিয়েল (১৭০০-৮২), ডিফারেনশিয়াল সমীকরণের তত্ত্বকে অগ্রসর করেছিলেন, বিশেষ করে যখন এটি হাইড্রোডায়নামিক্স এবং কম্পনকারী তারের সমস্যার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়। তিনি ১৭৩৪ থেকে ১৭৪২ সাল পর্যন্ত রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে অবস্থিত একাডেমি অফ সায়েন্সেসের গণিতের অধ্যাপক ছিলেন এবং পরে বাসেল বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যানাটমি, উদ্ভিদবিদ্যা, পদার্থবিদ্যা এবং দর্শন পড়াতেন। তিনি বার্নোলির নীতি আবিষ্কার করেন এবং সম্ভাব্যতা তত্ত্বে অবদান রাখেন। তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রকাশনা, হাইড্রোডাইনামিকা , গ্যাস এবং তরল পদার্থের গতিতত্ত্বকে এগিয়ে নিয়ে যায়। 

অদ্ভুত ইতিহাস

ভাবুন তো একবার, নিজের বাবা আপনার মেধা সহ্য করতে পারছেন না। আপনি যে মেধায় আপনার বাবার সমতুল হয়ে উঠেছেন বা তাঁকে ছাপিয়ে গেছেন; এটা তিনি মানতে পারছেন না। বাড়িতে আপনার প্রবেশ নিষেধ করেছেন। তারপর নিজেরই গবেষণাপত্র চুরি করে জার্নালে প্রকাশ করে দিলেন সাল-তারিখের জালিয়াতি করে। হ্যাঁ, এমনটাই ঘটেছিল বার্নৌলিদের খানদানি গণিত পরিবারে। 

খানদানিই বটে! নাহলে এক পরিবার থেকে আট আটজন গণিতজ্ঞ, পদার্থবিদ উঠে আসতে পারেন না, যাঁরা গণিতে এবং ফলিত গণিত বা পদার্থবিজ্ঞানে গভীর ছাপ রেখে গেছেন। সেটা কখনও  সংখ্যাতত্ত্বে ‘বার্নৌলি সংখ্যা’ হয়ে, বীজগণিতে ‘বার্নৌলি পলিনোমিয়াল’, ‘বার্নৌলি ত্রিভুজ’। কখনও বা ফ্লুইড ডাইনামিক্সের ‘বার্নৌলি প্রিন্সিপল’, ডিফারেন্সিয়াল ইক্যুয়েশনের ‘বার্নৌলি সমীকরণ’, আবার কখনও সম্ভাবনা তত্ত্ব ও রাশি বিজ্ঞানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ‘বার্নৌলি প্রসেস’, ‘বার্নৌলি ট্রায়াল’, বা ‘বার্নৌলি ডিস্ট্রিবিউশন’- মসৃণ করেছে আধুনিক গণিতের জয়যাত্রাকে। আদতে এইসমস্ত গাণিতিক উৎকর্ষ কোনো একজন ব্যক্তি বার্নৌলির দ্বারা প্রতিষ্ঠিত নয়। কালের নিরন্তর প্রবাহে একই পরিবারের বিভিন্ন সদস্য বিভিন্ন সময়ে এই অবদানগুলি রেখেছেন। আবার মেধার ঠোকাঠুকিতে ইগোর বিস্ফোরণ রক্তের সম্পর্ককে করেছে বিষময়।         

ডাচ বংশোদ্ভূত বার্নৌলি পরিবার ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার হয়ে বেলজিয়াম থেকে চলে আসেন সুইজারল্যান্ডের বাসেলে। নিকোলাস বার্নৌলি যখন বাসেলে এলেন তখন তিনি একজন প্রতিষ্ঠিত মশলা ব্যবসায়ী। তাঁর তিন সন্তান। জ্যাকব, জোহান আর এক নিকোলাস। পিতা নিকোলাস চাইলেন তাঁর সন্তানেরা দর্শন বা ধর্মতত্ত্ব নিয়ে পড়াশোনা করুক। অথবা পারিবারিক মশলা ব্যবসার দায়িত্ব নিক। বড়ো ছেলে জ্যাকব জন্মগ্রহণ করেন ১৬৫৪ সালে। পিতার নির্দেশে দর্শন নিয়ে পড়াশোনা করলেও খুব দ্রুত গণিতের সৌন্দর্যে আকর্ষিত হলেন। তিনি ছিলেন লিবনিৎসের ক্যালকুলাসের মস্ত বড় সমর্থক। ‘ক্যালকুলাস অফ ভেরিয়েশন’ এর জনক বলা যায় তাঁকে। এছাড়া নেপিয়ার ধ্রুবক (বা অয়লার সংখ্যা) ‘e’ আবিষ্কারের কৃতিত্বও তাঁর। সম্ভাবনা তত্ত্বেও তাঁর গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। ১৬৮৭ সালে বাসেল বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক নিযুক্ত হন। 

 যুগের শেষ ‘জাদুকর’ স্যার আইজ্যাক নিউটন

“আইজ্যাক নিউটন জ্ঞানযুগের প্রথম মানব নন, বরং তিনি যুগের শেষ যাদুকর।”- জন মেনার্ড কীন্স, ১৯৪২

হ্যাঁ, অবাক হবার কিছু নেই, যে অর্থেই কীন্স এ কথা বলে থাকুন না কেন, জীবনের যে বড় অধ্যায় নিউটন অতিপ্রাকৃত, আলকেমি ইত্যাদি বিষয় নিয়ে গবেষণা করেন তাতে তাকে বিজ্ঞানীর পরিচয়ের পাশাপাশি জাদুকর না বলাটাই ভুল। যুগের শেষ জাদুকর। তার রহস্যময় জীবনে প্রবেশের আগে আমাদের প্রথমে তার জীবনের প্রথামার্ধও জানা প্রয়োজন বটে! কীভাবে তিনি আকৃষ্ট হলেন অন্যদিকে? 

১৬৪২ সালের বড়দিন।

সারা ইংল্যান্ডে আজ কেবল আনন্দ আর আনন্দ। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা ছুটে বেড়াচ্ছে রাস্তায়, তুষারের বল নিয়ে হুড়োহুড়ি করছে। নতুন পাওয়া ক্রিসমাস উপহার নিয়ে মাতামাতি চলছে। ক্রিসমাসের টার্কির গন্ধে সুবাসিত রাস্তাঘাট।

কিন্তু আনন্দ নেই একটি ঘরে। লিঙ্কনশায়ারের উলসথর্প ম্যানরে আজ কোনো আনন্দ নেই। প্রসব বেদনায় কাতরাচ্ছেন হান্না। আত্মীয়স্বজন তাকে ঘিরে আছে।

হান্নার স্বামী মারা গিয়েছেন তিন মাস আগেই। তার অনাগত সন্তান জন্ম থেকেই হবে পিতাহারা। কোনো দিন নিজের বাবাকে চিনবে না সে। বাবাহারা এ সন্তানকেই বা ক’জন চিনবে?

কিছুক্ষণ পর হান্না সন্তান প্রসব করলেন। ছেলে হয়েছে তার। কিন্তু নবজাত শিশুকে দেখে খুশির বদলে তিনি ডুকরে কেঁদে উঠলেন, কারণ, এই শিশু অপরিপক্ব হয়েছে, বাঁচবে না। এতই ছোট তার দেহ যে, একটা মগেও এঁটে যায়।

কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে ছোট শিশুটি মারা যায়নি। মায়ের আনন্দ দেখে কে? যে বাবার দেখা শিশুটি কোনোদিন পাবে না, তার নামেই শিশুর নাম রাখলেন তিনি। অন্তত ছেলের নাম দিয়ে হলেও যেন বাবার নাম বেঁচে থাকে।

শিশুর নাম রাখা হল আইজ্যাক। আইজ্যাক নিউটন।

এটা ছিল সেই বছর, যে বছরে গালিলিও গালিলি মারা যান। এক নক্ষত্রের মৃত্যু, আরেক নক্ষত্রের উদয় হয় এই ১৬৪২ সালে।

এ পর্বে আমাদের চরিত্র নিউটন। আগের পর্ব পর্যন্ত ছিলেন নিকোলাস ফ্লামেল। সাথে সাথে কিছু লোককথাও চলে আসবে আর একপর্যায়ে মিলে যাবে দুজনের জীবন একটি বিন্দুতে। তার আগে চলুন নিউটনের কর্মজীবনও জেনে আসা যাক!

নিউটনের বয়স তখনমাত্র তিন। তখন তার মা তাকে ছেড়ে নতুন বিয়ে করলেন আর নিউটনকে রেখে আসলেন তার নানি মার্জারির কাছে। নিউটনের সৎ বাবার নাম ছিল রেভারেন্ড বারনাবাস স্মিথ।

ছোট্ট নিউটন কিছুতেই তার মায়ের এ বিয়ে মেনে নিতে পারতেন না। খুব ঘৃণা করতেন তার নতুন বাবাকে। আর এজন্য নিজের মায়ের সাথেও তার বনিবনা হত না। এতটাই রাগ ছিল তার যে, তিনি একবার তাদের ঘর আগুনে পুড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন!

১২ বছর থেকে ১৭ বছর পর্যন্ত নিউটনকে পড়তে হয়েছিল কিংস স্কুলে। স্কুলের লাইব্রেরির জানালায় এখনও তার স্বাক্ষর দেখা যায়! পরে এ স্কুল থেকে তাকে সরিয়ে নেয়া হয়। 

আসলে, দুজন আলাদা আলাদাভাবে গবেষণা করে নিজের সিদ্ধান্তে পৌঁছান। কিন্তু, সমস্যা শুরু হয় আবিষ্কারকের সম্মান কাকে দেয়া হবে সেটা নিয়ে।

নিউটন ১৬৯৩ এর দিকে সব প্রকাশ করা শুরু করেন, কিন্তু লিবনিজ প্রকাশ শুরু করেন ১৬৮৪ সাল থেকে। লিবনিজের সেই ডিফারেন্সিয়াল মেথড এখন বিশ্বব্যাপী ব্যবহৃত হয়।

১৬৯৯ সালে ইংল্যান্ডের রয়াল সোসাইটির সদস্যরা লিবনিজকে দায়ী করেন তত্ত্বচোর হিসেবে, তিনি নাকি নিউটনের কাছ থেকে ক্যালকুলাসের ধারণা চুরি করেছেন আর নিজের নামে চালিয়ে দিয়েছেন। রয়েল সোসাইটির একজন সদস্য ছিলেন নিউটনও।

১৭১১ সালে পুরো দমে এ বিতর্ক জ্বলে উঠে। রয়াল সোসাইটি দাবি করে, নিউটন আসল উদ্ভাবক আর লিবনিজ একজন ভণ্ড। এ বিতর্ক চলতে থাকে যতদিন না লিবনিজ মারা যান, ১৭১৬ সালে।

বেশিরভাগই হয়তো লিবনিজকে ভণ্ডই ভেবেছিলেন। কিন্তু পরে যখন দেখা গেল রয়াল সোসাইটির সেই ‘লিবনিজ একজন ভণ্ড’-এই মর্মের প্রত্যয়নটা আসলে নিউটনেরই লেখা, তখন সন্দেহ ঘনীভূত হল। আসলে লিবনিজকে অপমান করার জন্য নিউটনের একটা চাল ছিল এটি, কোনো প্রকার সমালোচনা সহ্য করতে পারতেন না নিউটন। তাই এই ব্যবস্থা করেন তিনি।

একটা ঘটনা বলা যায় এখানে, গণিতবিদ বারনুলির নাম হয়ত অনেকেই শুনে থাকবেন। তিনি দুটো সমীকরণ দিয়ে ছয় মাস সময় দিয়েছিলেন সমাধান করার জন্য, ‘ওপেন চ্যালেঞ্জ’। ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও কেউ কোনো সমাধান নিয়ে এলো না। হঠাৎ একদিন লিবনিজ বললেন তিনি একটা সমাধানে আসতে পেরেছেন। প্রায় একই সময়ে, নিউটন একদিন কাজ থেকে বাসায় ফিরে মেইলবক্স চেক করতে গিয়ে বারনুলির কাছ থেকে একটা পত্র পেলেন। খুলে দেখেন সেই সমীকরণ দুটো। তখন বাজে বিকেল চারটা। সেই যে নিউটন বসলেন, ১২ ঘণ্টার আগে তিনি উঠলেন না, রাত ৪টায় তিনি সমীকরণ দুটো সমাধান করে শেষ করলেন। কিন্তু তিনি সেটা নিজের নামে প্রচার করলেন না। ‘অ্যানোনিমাস’ বা নামহীন হিসেবে তিনি রয়াল সোসাইটি থেকে পাবলিশ করলেন, কিন্তু জনাব বারনুলি ঠিকই ধরে ফেললেন এটা নিউটনের। শেষ পর্যন্ত এক্ষেত্রে বারনুলি সমীকরণের সমাধানকারী হিসেবে লিবনিজ আর নিউটন দুজনকেই স্বীকৃতি দেয়া হয়।

মৃত্যু: 

17 March 1782 (aged 82)   বাসেল, Republic of the Swiss এ মৃত্যু বরন করেন।

What's Your Reaction?

Like Like 0
Dislike Dislike 0
Love Love 0
Funny Funny 0
Angry Angry 0
Sad Sad 0
Wow Wow 0