জেনিফার ডাউডনা এর জীবনী | Biography of Jennifer Doudna
জেনিফার ডাউডনা এর জীবনী | Biography of Jennifer Doudna

রসায়নের নোবেল: প্রবল সম্ভাবনার আড়ালে অনৈতিক অন্ধকারের ভয়
জেনিফার অ্যান ডাউডনা (জন্ম ১৯শে ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৪) রসায়নে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী মার্কিন প্রাণরসায়নবিদ। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বার্কলির ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে একাধারে আণবিক জীববিজ্ঞান, কোষ জীববিজ্ঞান ও রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক। ১৯৯৭ সাল থেকে তিনি হাওয়ার্ড হিউস মেডিকেল ইনস্টিটিউট গবেষক হিসেবে নিয়োজিত আছেন।এছাড়াও তিনি ইনোভেটিভ জিনোমিক্স ইন্স্টিটিউটের পরিচালক। জৈবচিকিৎসা ও স্বাস্থ্য বিষয়ের লি কা শিং চ্যান্সেলর অধ্যাপক এবং ইউসি বার্কলির জীববিজ্ঞানের উপদেষ্টা মণ্ডলীর পদে আসীন।
প্রাথমিক জীবন ও শিক্ষা
জেনিফার ডাউডনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসি-তে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক ছিলেন। ডাউডনার মাতা শিক্ষায় স্নাতকোত্তর শিক্ষাক্রম সম্পন্ন করে গৃহিণী ছিলেন। ৭ বছর বয়সে পিতার অভিসন্দর্ভের কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর তারা মিশিগান থেকে হাওয়াইয়ে বাসা পরিবর্তন করেন।
ডাউডনা অল্প বয়সে জনপ্রিয় বিজ্ঞানের বই দ্বারা প্রভাবিত হন। ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়াকালীন মার্কিন প্রাণরসায়নবিদ জেমস ওয়াটসন রচিত "দ্য ডাবল হেলিক্স" (The Double Helix) বইটি তার চিন্তায় বিশাল প্রভাব ফেলে। এছাড়াও উচ্চবিদ্যালয়ের রসায়ন শিক্ষিকা ওয়াংয়ের প্রভাবও তিনি বিভিন্ন সময় স্বীকার করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা ও ডক্টরোত্তর পর্ব
ডাউডনা ক্যালিফোর্নিয়া পমোনা কলেজে প্রাণরসায়নে পড়াশোনার জন্য ভর্তি হন। এই সময় নিজের আত্মবিশ্বাস নিয়ে সন্দেহ হলে তার ফরাসি শিক্ষক তাকে বিজ্ঞান নিয়েই লেগে থাকতে অনুপ্রাণিত করেন। ফ্রেড গ্রিমান এবং করউইন হানশ - দুই রসায়ন অধ্যাপক বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ডাউডনাকে প্রভাবিত করেন। তিনি ১৯৮৫ সালে পমোনা কলেজ থেকে জৈব রসায়নে স্নাতক শেষ করে ১৯৮৯ সালে হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল থেকে জীববৈজ্ঞানিক রসায়ন ও আণবিক ঔষধবিজ্ঞানে ডক্টরেট উপাধি লাভ করেন । তিনি আত্ম-প্রতিলিপিকারী অনুঘটকীয় আরএনএ-এর নকশা নিয়ে জ্যাক সজটাকের অধীনে ডক্টরেট গবেষণা সম্পন্ন করেন।
গবেষণা ও কর্ম
ডাউডনা তার গবেষণাকর্ম শুরু করেন নোবেলজয়ী চিকিৎসাবিদ জ্যাক সজটাকের তত্ত্বাবধানে। তবে ক্রিসপার বিপ্লবের নেতৃত্বদানকারী হিসেবেই মূলতঃ ডাউডনা সুপরিচিত। তিনি ক্রিসপার দ্বারা বংশাণু সম্পাদনার মৌলিক কাজে জড়িত ছিলেন এবং এর উন্নয়নে অবদান রেখেছেন। ২০১২ সালে ডাউডনা এবং এমানুয়েল শারপঁতিয়ে সর্বপ্রথম ব্যাক্টেরিয়ার ব্যবহৃত উৎসেচক ক্রিসপার/ক্যাস৯ যে মনুষ্য নকশাকৃত বংশাণু সম্পাদনায় ব্যবহার করা যেতে পারে, সে ব্যাপারে প্রস্তাবনা রাখেন। এই আবিষ্কার জীববিজ্ঞানের ইতিহাসে অন্যতম বৈপ্লবিক আবিষ্কার হিসেবে স্বীকৃত। প্রায়োগিক ক্ষেত্রে মৌলিক প্রোটিন, কোষবিদ্যা, উদ্ভিদ ও প্রাণীর রোগের চিকিৎসায় ক্রিসপার/ক্যাস৯ প্রযুক্তি ব্যবহারে একাধিক গবেষকদল গবেষণারত আছেন।
ক্রিসপার
২০১২ সালে জেনিফার ডাউডনা ও তার সহকর্মীরা ডিএনএর বংশাণুসমগ্র সম্পাদনার এক নতুন প্রযুক্তি আবিষ্কার করেন। এই প্রযুক্তির ব্যবহারে সময় ও শ্রম দুটিই নাটকীয়ভাবে কমে আসে। তাদের এই আবিষ্কার ক্যাস-৯ নামক এক প্রোটিনের ভিত্তিতে দাঁড়িয়ে আছে, যে প্রোটিনটি স্ট্রেপ্টোকক্কাস ব্যাকটেরিয়ার "ক্রিসপার" রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় উপলব্ধ। এই প্রোটিনটি কাঁচির মতো আক্রমণকারী ভাইরাসের ডিএনএ ব্যাক্টেরিয়ার ডিএনএ থেকে কেটে ফেলতে সক্ষম।
০১৫ সালে ডাউডনা এ ক্রিসপার প্রযুক্তি ও এর নৈতিক ব্যবহার নিয়ে একটি টেড বক্তৃতা প্রদান করেন।
২০২০ সালে ক্রিসপার প্রযুক্তি আবিষ্কারে সহকর্মী এমানুয়েল শারপঁতিয়ে-র সাথে যৌথভাবে রসায়নে নোবেল পদক লাভ করেন।
অন্যান্য অবদান
জেনিফার ডাউডনার আরেকটি উল্লেখযোগ্য আবিষ্কারের হল, হেপাটাইটিস সি ভাইরাস একটি অপ্রচলিত নিয়মে ভাইরাস আক্রান্ত প্রোটন সংশ্লেষণে সক্ষম। তার এই আবিষ্কার শরীরের কোন কোষের ক্ষতি না করেই নতুন ধরনের ঔষধ আবিষ্কারে ব্যবহার করা যেতে পারে।
ব্যক্তিগত জীবন
কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সময়ে ডাউডনা জেমি কেটের সান্নিধ্যে আসেন। ইয়েলে শিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত অবস্থায় তারা বিয়ে করেন। এই দম্পতির ঘরে ২০০৩ সালে পুত্র এন্ড্রু জন্মগ্রহণ করে।
পুরস্কার ও সম্মাননা
- এলান টি ওয়াটআরম্যান পদক (২০০৮)
- ইয়াকব হেস্কেল গ্যাবি পুরস্কার (২০১৪)
- ব্রেকথ্রু প্রাইজ ইন লাইফ সায়েন্স (২০১৫)
- জাপান পদক (২০১৭)
- কাভলি পদক - ন্যানোসায়েন্সে (২০১৮)
- নোবেল পদক - রসায়ন (২০২০)
sourse: wikipedia
What's Your Reaction?






