সিন্দ ইবনে আলী এর জীবনী | Biography of Sanad ibn Aliv
সিন্দ ইবনে আলী এর জীবনী | Biography of Sanad ibn Aliv

🧭 সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
|
সিন্দ ইবনে আলী মুসা: পৃথিবীর ব্যাস নির্ণয়কারী মুসলিম জ্যোতির্বিজ্ঞানী
সিন্দ ইবনে আলী মুসা, সিন্দ ইবনে আলী
(মৃত্যু ৮৬৪ সালের পর) ছিলেন সিন্দের একজন প্রখ্যাত মুসলিম জ্যোতির্বিজ্ঞানী, অনুবাদক, গণিতবিদ ও প্রকৌশলী। তার বাবা ছিলেন মানসুরা,সিন্ধু প্রদেশ এর একজন সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি যিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। সিন্দ ইবনে আলী উচ্চশিক্ষার জন্য বাগদাদ গিয়ে শিক্ষাগ্রহণ করেছিলেন।
জ্যোতির্বিদ্যা-সংক্রান্ত জিজ আল সিন্দ হিন্দ অনুবাদ ও সম্পাদনার জন্য তিনি পরিচিতি লাভ করেন। একজন গণিতবিদ হিসাবে সিন্দ ইবনে আলী আল খোয়ারিজমির সহকর্মী ছিলেন এবং ইয়াকুব ইবনে তারিক এর সাথে মিলে পৃথিবীর ব্যাস নির্ণয়ে ভূমিকা রেখেছিলেন।
সিন্দ ইবনে আলী একজন ভাল প্রকৌশলীও ছিলেন। একবার বনু মুসা গোত্রের দুইজনকে বড় খাল খননের দায়িত্ব দেওয়া হয়।খাল খনন কাজে ত্রুটি দেখা দেয়। খাল খননের গভীরতার পরিমাপ ঠিক না হওয়ায় পানি সৈন্যদের কাছে পৌছাতে পারছিল না। খবরটি খলিফা আল-মুতাওয়াক্কিলকে রাগান্বিত করে তোলে। সিন্দ ইবনে আলী খনন তত্ত্বের বিষয়টির সুন্দর সমাধান দিয়ে তাদের শাস্তির হাত থেকে বাঁচান।
সিন্দ ইবনে আলী মুসা ছিলেন সিন্দের একজন প্রখ্যাত মুসলিম গণিতবিদ, জ্যোতির্বিজ্ঞানী, অনুবাদক ও প্রকৌশলী।
সিন্দ ইবনে আলী মুসা সম্পর্কে খুব বেশী কিছু জানা যায় না। তার কাজের কিছু ডকুমেন্ট ছাড়া, তার নির্দিষ্ট কোন ছবি আজ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তবে যতটুকু জানা যায়, তার বাবার নাম ছিল মানসুরা। যিনি (বর্তমান পাকিস্তান) সিন্ধু প্রদেশের একজন সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি ছিলেন। তিনি পূর্বে অন্য ধর্মের অনুসারী ছিলেন। পরে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন।
সিন্দ ইবনে আলী মুসা উচ্চশিক্ষার জন্য বাগদাদ গিয়েছিলেন। তিনি জ্যোতির্বিদ্যা-সংক্রান্ত জিজ আল সিন্দ হিন্দ অনুবাদ এবং সম্পাদনার কাজ করেছিলেন বলেও জানা যায়। এতে তিনি সেইসময় যথেষ্ট খ্যাতিমান হয়ে উঠেছিলেন। একজন গণিতবিদ হিসাবে সিন্দ ইবনে আলী মুসা আল খোওয়ারেজমী (৭৮০-৮৪৭) এর সহকর্মী ছিলেন। ইয়াকুব ইবনে তারিক (৭২০-৭৯৬) এর সাথে কাজ করে তিনি পৃথিবীর ব্যাস নির্ণয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন।
সিন্দ ইবনে আলী মুসা একজন ভালো প্রকৌশলীও ছিলেন। একবার বনু মুসা গোত্রের দুইজন ব্যক্তিকে বড় খাল খননের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। খাল খনন কাজে একপর্যায়ে ত্রুটি দেখা দেওয়ায়, খাল খননের গভীরতার সঠিক পরিমাপ পাওয়া যাচ্ছিলনা। ফলে সৈন্যদের কাছে পানি পৌঁছাতে পারছিল না। খবরটি খলিফা আল-মুতাওয়াক্কিলকে (৮২২-৮৬১) জানানো হয়। খলিফা রাগান্বিত হয়ে শাস্তি দেওয়ার উদ্যোগ নেন।
সিন্দ ইবনে আলী মুসা খনন তত্ত্বের বিষয়টির গুরুত্ব বুঝে সমাধান বের করে দেন। ফলে উক্ত দুইজন খলিফার ক্রোধ এবং শাস্তির হাত থেকে বেঁচে যান।
অবদান
১. জ্যোতির্বিদ্যা ও গণিত
সিন্দ ইবনে আলী ছিলেন বাগদাদের জ্যোতির্বিদ্যা পর্যবেক্ষণ দলের অন্যতম সদস্য। খলিফা আল-মামুনের নির্দেশে তিনি এবং অপর জ্যোতির্বিদরা মিলে পৃথিবীর পরিধি পরিমাপের চেষ্টা করেন। এই গবেষণার জন্য তারা সিরিয়া ও মেসোপটেমিয়ায় পর্যবেক্ষণ পরিচালনা করেন।
২. অনুবাদ কার্যক্রম
তিনি ব্রাহ্মগুপ্তের ব্রাহ্মস্ফুটসিদ্ধান্ত (Brāhmasphuṭasiddhānta) নামক ভারতীয় জ্যোতির্বিদ্যা গ্রন্থের অনুবাদে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
এই অনুবাদটি ছিল সিন্ধহিন্দ (Sindhind) নামে পরিচিত, যা গণিত ও জ্যোতির্বিদ্যায় ইসলামি বিশ্বে একটি যুগান্তকারী প্রভাব ফেলেছিল।
৩. পৃথিবীর পরিধি নিরূপণ
সিন্দ ইবনে আলী এবং অপর একজন জ্যোতির্বিদ আল-ফারঘানী বা আল-খাওয়ারিজমি-এর সাথে মিলে পৃথিবীর ব্যাসার্ধ ও পরিধি নিরূপণের জন্য দুটি ভিন্ন ভৌগোলিক স্থানে সূর্যের ছায়ার দৈর্ঘ্য পরিমাপ করেন। এই প্রক্রিয়াটি আধুনিক ভূগোল ও জ্যোতির্বিদ্যার ভিত্তি তৈরি করে।
বাইতুল হিকমা (House of Wisdom)
সিন্দ ইবনে আলী ছিলেন বাগদাদের বাইতুল হিকমার একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। এই প্রতিষ্ঠান ছিল পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন গবেষণা কেন্দ্র, যেখানে গ্রিক, ভারতীয়, পারস্য ও সিরিয়ান জ্ঞান আরবি ভাষায় অনুবাদ ও ব্যাখ্যা করা হতো।
মৃত্যু ও উত্তরাধিকার
সিন্দ ইবনে আলী আনুমানিক ৮৩৩ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন।
তার কাজ পরবর্তী অনেক মুসলিম ও ইউরোপীয় বিজ্ঞানীকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে। ভারতীয় গাণিতিক ধারার অনুবাদ ও জ্যোতির্বিদ্যায় তাঁর অবদান ইসলামি বিজ্ঞানচর্চার ইতিহাসে এক অনন্য নিদর্শন।
sourse: wikipedia
What's Your Reaction?






