আহমাদ ইবনে মোহাম্মাদ ইবন কাসির আল-ফারগানি এর জীবনী | Biography of Ahmad ibn Muhammad ibn Kathir al-Farghani
আহমাদ ইবনে মোহাম্মাদ ইবন কাসির আল-ফারগানি এর জীবনী | Biography of Ahmad ibn Muhammad ibn Kathir al-Farghani

সংক্ষিপ্ত পরিচিতি:
|
জ্যোতির্বিদ আল-ফারগানি
আবুল আব্বাস আহমাদ ইবনে মোহাম্মাদ ইবন কাসির আল-ফারগানি (৮০০/৮০৫-৮৭০) বা আল-ফারঘানি, যিনি পশ্চিমা বিশ্বে আলফ্রাগানুস নামে পরিচিত। তিনি ছিলেন একজন আরব অথবা পারস্যর একজন সুন্নি মুসলিম জ্যোতির্বিদ। নবম শতাব্দীতে তিনি ছিলেন বিশ্বের খ্যাতনামা একজন জ্যোতির্বিজ্ঞানী। চাঁদের আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ আলফ্রাগানুস এর নামকরণ তার নামেই করা হয়েছে।
জীবন
বাগদাদে ৭ম আব্বাসীয় খলিফা আল-মামুন এর পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত পৃথিবীর ব্যাস নির্ণয়ের কাজে নিয়োজিত বিজ্ঞানীদের দলে তিনিও ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি কায়রো চলে যান। ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে পুরোনো কায়রোয় গ্রেট নাইলোমিটারের নির্মাণ কাজে আল-ফারগানি তত্ত্বাবধান করেন।
কর্ম
তার লিখিত 'কিতাব ফি জাওয়ামি' 'ইলম আল নুজুম' এ (নক্ষত্র বিজ্ঞানের সারসংক্ষেপ) সৌরপ্রণালীর অন্তর্গত গ্রহগুলোর গতিবিধি, নীহারিকাপুঞ্জ সম্বন্ধে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়।[৪] ১২ শতকে এই বইটি ল্যাটিন ভাষায় অনুবাদ করা হয় এবং ইউরোপে এটি প্রচুর জনপ্রিয়তা লাভ করেপ্রধান অবদানসমূহ:
১. আল-মালক আল-সামা (Kitāb fī ḥarakāt al-samāwīya wa-jawāmiʿ ʿilm al-nujūm)
-
ইংরেজিতে পরিচিত: The Elements of Astronomy on the Celestial Motions
-
এটি আল-ফারগানীর সবচেয়ে বিখ্যাত কাজ। গ্রিক জ্যোতির্বিদ পтолেমি-র Almagest গ্রন্থের সংক্ষিপ্ত কিন্তু ব্যাখ্যামূলক সংস্করণ।
-
এই গ্রন্থে তিনি গ্রহ-নক্ষত্র, পৃথিবী ও আকাশের গঠনের বিভিন্ন দিককে সহজ ভাষায় ব্যাখ্যা করেন।
২. পৃথিবীর পরিধি পরিমাপ
-
আল-মামুনের নির্দেশে পৃথিবীর পরিধি পরিমাপ করতে আল-ফারগানী ও তার সহকর্মীরা ভূমিকা রাখেন।
-
তিনি নির্ধারণ করেন:
প্রতি ১ ডিগ্রি অক্ষাংশের দূরত্ব ≈ ৫৬.৬৬ মাইল (বর্তমানে অনুমিত মানের খুব কাছাকাছি)।
-
এর মাধ্যমে তিনি পৃথিবীর পরিধি নিরূপণ করেন প্রায় ২০,৪০০ মাইল, যা সেই সময়ে অত্যন্ত উন্নত হিসাব ছিল।
৩. প্রকৌশল ও জল ব্যবস্থাপনা
-
তিনি মিসরের কায়রো শহরে নাইলোমিটার (Nilometer) নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
-
এই যন্ত্রের মাধ্যমে নীল নদের পানি ওঠানামা পরিমাপ করা হতো এবং ফসলের পূর্বাভাস ও কর নির্ধারণ করা হতো।
ইউরোপে প্রভাব:
-
তার গ্রন্থটি ১২শ শতকে ল্যাটিনে অনূদিত হয় এবং ইউরোপে দীর্ঘকাল পাঠ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
-
"Alfraganus" নামে তিনি ইউরোপীয় Renaissance যুগের জ্যোতির্বিদদের মধ্যে ব্যাপকভাবে পরিচিত ছিলেন।
-
নিকোলাউস কপার্নিকাস, যিনি সৌরকেন্দ্রিক বিশ্বমডেল দেন, তিনিও আল-ফারগানীর কাজ দ্বারা প্রভাবিত হন।
উত্তরাধিকার:
-
আল-ফারগানী ছিলেন এমন একজন পন্ডিত যিনি গ্রিক জ্যোতির্বিদ্যাকে সংরক্ষণ করেই ক্ষান্ত হননি, বরং তা উন্নত ও সহজ করে বিশাল জ্ঞানভান্ডারে পরিণত করেন।
-
তার কাজ ছিল বিজ্ঞান ও ধর্মের মধ্যে সেতুবন্ধনের একটি নিখুঁত উদাহরণ।
মৃত্যু:
আহমদ ইবন মুহাম্মদ ইবন কাথির আল-ফারগানীর মৃত্যুর সুনির্দিষ্ট তারিখ ইতিহাসে নিশ্চিতভাবে উল্লেখ নেই। তবে ঐতিহাসিকদের অনুমান অনুযায়ী, তিনি আনুমানিক ৮৭০ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন।
মৃত্যুর স্থান ও পরিপ্রেক্ষিত:
-
তাঁর মৃত্যুর স্থানও সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায় না, তবে ধারণা করা হয় যে তিনি মিসর (সম্ভবত কায়রো) বা বাগদাদে ইন্তেকাল করেন, যেহেতু তাঁর জীবনের শেষাংশে তিনি এই দুটি শহরে বৈজ্ঞানিক ও প্রকৌশল কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন।
-
তিনি আব্বাসীয় খলিফা আল-মামুন ও আল-মুতাওয়াক্কিলের রাজসভায় বিজ্ঞানী হিসেবে কাজ করেছিলেন এবং শেষ জীবনে প্রকৌশল ও জ্যোতির্বিদ্যায় অবদান রেখেছিলেন।
সংক্ষেপে:
-
মৃত্যুর সাল: আনুমানিক ৮৭০ খ্রিস্টাব্দ
-
সম্ভাব্য স্থান: মিসর বা বাগদাদ
-
মৃত্যুর পরেও তাঁর কাজ বহু শতাব্দী ধরে ইউরোপ ও ইসলামি বিশ্বে ব্যবহৃত হয়েছে।
What's Your Reaction?






