আলফ্রেড নোবেল এর জীবনী | Biography of Alfred Nobel

আলফ্রেড নোবেল এর জীবনী | Biography of Alfred Nobel

May 15, 2025 - 23:09
May 23, 2025 - 12:48
 0  1
আলফ্রেড নোবেল এর জীবনী | Biography of Alfred Nobel

ডিনামাইটের উদ্ভাবক থেকে শান্তির দূত হয়ে ওঠা আলফ্রেড নোবেলের জন্ম

জন্ম

২১ অক্টোবর ১৮৩৩

মৃত্যু

১০ ডিসেম্বর ১৮৯৬ (বয়স ৬৩)
সানরেমো, লিগুরিয়া, ইতালি

সমাধি

উত্তর কবরস্থান, স্টকহোম, সুইডেন
পেশা রসায়নবিদ, প্রকৌশলী, প্রবর্তক, আর্নামেন্ট প্রস্তুতকারক এবং ডায়নামাইটের আবিষ্কারক।

পরিচিতির কারণ

ডায়নামাইট আবিষ্কার, নোবেল পুরস্কার

পিতা-মাতা

ইমানুয়েল নোবেল (পিতা)
আন্দ্রিয়েট নোবেল (মাতা)

আলফ্রেদ বের্নহার্ড নোবেল:

 (সুয়েডীয় Alfred Nobel আল্‌ফ্রেএদ্‌ বের্ন্‌হাড্‌ নোবেল্‌; জন্ম: ২১ অক্টোবর, ১৮৩৩ - মৃত্যু: ১০ ডিসেম্বর, ১৮৯৬) একজন সুয়েডীয় রসায়নবিদ, প্রকৌশলী, উদ্ভাবক এবং অস্ত্র নির্মাতা। তিনি ডায়নামাইট আবিষ্কার করেন। তিনি ব্যবসায়েও বিশেষ প্রসিদ্ধি অর্জন করেছিলেন। বিখ্যাত ইস্পাত নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোফোর্স এর মালিক ছিলেন অনেকদিন, প্রতিষ্ঠানটিকে এক সময় অন্যতম বৃহৎ অস্ত্র নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেন। তার নামে ৩৫০টি ভিন্ন ভিন্ন পেটেন্ট ছিল যার মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হচ্ছে ডায়নামাইট। মৃত্যুর আগে উইল করে তিনি তার সুবিশাল অর্থ সম্পত্তি নোবেল ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার জন্য রেখে যান। উইলে আরও বলে যান, নোবেল ইনস্টিটিউটের কাজ হবে প্রতি বছর নোবেল পুরস্কার এর অর্থ প্রদান করা।

ব্যক্তিগত জীবন

১৮৩৩ সালে সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে আলফ্রেদ নোবেল জন্মগ্রহণ করেন। সে বছরই তার বাবা ইমানুয়েল নোবেল দেউলিয়া হন। ১৮৩৭ সালে ইমানুয়েল নোবেল স্টকহোমে তার পরিবার রেখে প্রথমে ফিনল্যান্ড এবং পরে রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে যান ভাগ্যের সন্ধানে। সেন্ট পিটার্সবার্গে একটি মেকানিক্যাল ওয়ার্কশপ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮৪২ সালে পরিবারের সবাইকে সেন্ট পিটার্সবার্গে নিয়ে আসেন ইমানুয়েল। ১৮৭২ সালে আলফ্রেদ নোবেলের বাবা ইমানুয়েল মৃত্যুবরণ করেন। ১৮৮৯ সালে নোবেলের মা আন্দ্রিয়েতি মৃত্যুবরণ করেন। তিনিl অবিবাহিত ছিলেন।

কর্মজীবন

১৮৫০-১৮৫২ সাল পর্যন্ত আলফ্রেদ নোবেল ফ্রান্সের পারি গিয়ে টি. জুলস পিলৌজ গবেষণাগারে কাজ করেন কিছুদিন। জার্মানি, ইতালি এবং যুক্তরাষ্ট্রেও ভ্রমণ করেন। ১৮৫৩-১৮৫৬ সালে ক্রিমিয়ার যুদ্ধের সূচনা। যুদ্ধের প্রথম দিকে নোবেল কোম্পানি অনেক সমৃদ্ধি অর্জন করে, কিন্তু যুদ্ধ শেষে যখন রুশ সামরিক বাহিনী অর্ডার উঠিয়ে নেয়া তখন দেউলিয়া হয়ে যায়। আলফ্রেদ নোবেল মরিয়া হয়ে নতুন পণ্য উৎপাদনের চেষ্টা করতে থাকেন। তার রসায়ন শিক্ষক নিকোলাই এন. জিনিন তাকে নাইট্রোগ্লিসারিন এর কথা মনে করিয়ে দেন।

১৮৬২ সালে নোবেল নাইট্রোগ্লিসারিন নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেন। ১৮৬৩ সালে নোবেল তার প্রথম নাইট্রোগ্লিসারিন-জাত পণ্যের পেটেন্ট করেন। একে ইংরেজিতে বলা হচ্ছিল "ব্লাস্টিং অয়েল", এটি এক ধরনের বিস্ফোরক। এরপর "ব্লাস্টিং ক্যাপ" নামক একটি ব্যবস্থা উদ্ভাবন করেন যা নাইট্রোগ্লিসারিন বিস্ফোরণের ট্রিগার হিসেবে কাজ করে। এ সময়ই তিনি স্টকহোমে চলে আসেন এবং এখানেই গবেষণা চালিয়ে যান।

১৮৬৪ সালে স্টকহোমের হেলেনেবোর্গে নাইট্রোগ্লিসারিন প্রস্তুতির সময় বিস্ফোরণে আলফ্রেদ নোবেলের ভাই এমিল মারা যায়। নোবেল পরীক্ষা চালিয়ে যান এবং স্টকহোমে "নাইট্রোগ্লিসারিন এবি" নামক একটি প্রতিষ্ঠান তৈরি করেন। ১৮৬৫ সালে নোবেল তার ব্লাস্টিং ক্যাপ নকশাটির আরও উন্নতি সাধন করেন। সুইডের থেকে জার্মানি চলে এসে হামবুর্গ শহরের নিকটে ক্রুমেল নামক স্থানে "আলফ্রেদ নোবেল অ্যান্ড কোম্পানি" কারখানাটি নির্মাণ করেন। ১৮৬৬ সালে নোবেল যুক্তরাষ্ট্রে "ইউনাইটডে স্টেটস ব্লাস্টিং অয়েল কোম্পানি" প্রতিষ্ঠা করেন। একটি ভয়াবহ বিস্ফোরণে ক্রুমেলের কারখানাটি ধ্বংস হয়ে যায়। এলবে নদীতে একটি ভেলা ভাসিয়ে তাতে নোবেল নাইট্রোগ্লিসারিন বিস্ফোরককে আরও নিরাপদ করার চেষ্টা চালিয়ে যান। এ সময়ই তিনি বুঝতে পারেন, নাইট্রোগ্লিসারিনের সাথে কাইসেলগুর (সিলিকনের মত অধঃক্ষেপ, ডায়াটোমেশাস মাটি হিসেবেও পরিচিত) মেশালে তা স্থিত হয়। এই নতুন মিশ্র বিস্ফোরকের নাম দেন ডায়নামাইট। ১৮৬৭ সালে ডায়নামাইটের জন্য পেটেন্ট অর্জন করেন। ১৮৭১ সালে নোবেল স্কটল্যান্ডের আর্ডিয়ারে "ব্রিটিশ ডায়নামাইট কোম্পানি" প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮৭৭ সালে এই কোম্পানির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছিল "নোবেল'স এক্সপ্লোসিভ কোম্পানি"। ১৮৭৩ সালে ৪০ বছর বয়সে নোবেল প্রভূত সম্পত্তির অধিকারী হন। পারি (প্যারিস) গিয়ে মালাকফ এভিনিউ এ থিতু হন। একই বছর আর্ডিয়ারের কারখানায় নাইট্রোগ্লিসারিন ও ডায়নামাইট উৎপাদন শুরু হয়। ১৮৭৫ সালে নোবেল "ব্লাস্টিং গিলাটিন" উদ্ভাবন করে পরের বছর পেটেন্ট করেন। ফ্রান্সের পারিতে "সোসাইটি জেনারেলে পৌর লা ফেব্রিকেশন দে লা ডাইনামাইট" প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮৭৬ সালে জার্মানির হামবুর্গে আলফ্রেদ নোবেল অ্যান্ড কোম্পানির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ডাইনামাইটাকটাইঙ্গেসেলশাফট (ডিএজি)।

নোবেল একজন ব্যক্তিগত সচিব ও গৃহপরিচারিকা খুঁজতে শুরু করেন। এ সময় তার সাথে বার্থা কিনসে ভন চিনিক আন্ড টেত্তাউ-এর পরিচয় হয় এবং তাকেই ব্যক্তিগত সচিব হিসেবে পছন্দ করেন। কিন্তু কিছুদিন পরেই তিনি নোবেলের চাকরি ছেড়ে দিয়ে শান্তি আন্দোলন শুরু করেন। এই নারীকেই আমরা বের্থা ফন সুটনার নামে চিনি যিনি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করেছিলেন।

১৮৮০ সালে নোবেলের ইতালীয় এবং সুইজারল্যান্ডীয় কোম্পানি একত্রিত করে "ডায়নামাইট নোবেল" গঠন করা হয়। ১৮৮১ সালে পারি-র বাইরে সেভরানে নোবেল জমি ও একটি গবেষণাগার ক্রয় করেন। ১৮৮৫ সালে ডিএজি এবং জার্মানির আরও কিছু ডায়নামাইট কোম্পানি একত্রিত করে "জার্মান ইউনিয়ন" প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৮৮৬ সালে DAG এবং নোবেল'স এক্সপ্লোসিভ কোম্পানি একত্রিত করে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে "নোবেল-ডায়নামাইট ট্রাস্ট কোম্পানি" প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৮৭ - বিস্ফোরক পাউডার "ব্যালিসটিট" উদ্ভাবনের জন্য ফ্রান্সে পেটেন্ট লাভ করেন নোবেল।

১৮৯১ সালে ব্যালিস্টাইট নিয়ে ফরাসি সরকারের সাথে বিতর্কের পর আলফ্রেদ নোবেল পারি ত্যাগ করে ইতালির সান রেমো-তে বসবাস শুরু করেন। ১৮৯৩ সালে নোবেল র‍েগণার সোলম্যান-কে নিয়োগ করেন যাকে পরবর্তীতে তিনি তার উইল এবং টেস্টামেন্ট এর প্রয়োগকর্তা হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন। ১৮৯৪ সালে আলফ্রেদ নোবেল সুইডেনের কার্লস্কোগাতে একটি ছোট মেশিন-ওয়ার্কস এবং একটি বাড়ি ক্রয় করেন। ১৮৯৫ - পারি-র সুয়েডীয়-নরওয়েজীয় ক্লাবে নোবেলের তৃতীয় এবং শেষ উইল স্বাক্ষরিত হয়।

একজন নিঃসঙ্গ মানুষ

৭ অক্টোবর থেকে শুরু হবে চলতি বছরের নোবেল পুরস্কার ঘোষণা। যাঁর নামে ও অর্থায়নে এই পুরস্কার, সেই আলফ্রেড নোবেলকে কেউ বলেন মৃত্যুর কারবারী, কেউ বলেন শান্তির দূত। বাস্তবে কেমন মানুষ ছিলেন তিনি? আলফ্রেড নোবেলের জীবন ও কর্ম নিয়ে বিস্তারিত পড়ুন…

মানুষ হিসেবে কেমন ছিলেন আলফ্রেড নোবেল? যিনি একাধারে একের পর এক বিস্ফোরক ও যুদ্ধাস্ত্রের উপাদান আবিষ্কার করেছেন, সারা ইউরোপে বিরাট বিরাট কারখানা গড়ে তুলে কাড়ি কাড়ি অর্থ উপার্জন করেছেন, কিন্তু জীবন-যাপন করেছেন একাকি, নিরাসক্ত। জীবনে কোনোদিন ধূমপান করেননি, মদ পান করেননি, এমন কি বিয়েও করেননি। তেমন কোনো বন্ধুবান্ধবও ছিল না আলফ্রেড নোবেলের। প্রথম জীবনে কবি হতে চেয়েছিলেন—অনেক কবিতাও লিখেছিলেন। প্রেম ছিল সেসব কবিতায়, ক্ষোভও ছিল। কিন্তু কোনো রচনাই তিনি প্রকাশ করেননি। অন্তর্মুখী এই মানুষটি একদিকে শক্তহাতে ইন্ডাস্ট্রি ও ব্যবসা সামলেছেন, অন্যদিকে নিরলস গবেষণায় আবিষ্কার করেছেন একের পর এক নতুন বিস্ফোরক। কিন্তু তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের চারপাশে একটা অদৃশ্য দেয়াল তুলে রেখেছিলেন—যে দেয়াল ভেদ করে তাঁর মনের খোঁজ পাওয়া সম্ভব ছিল না কারোরই। হাতে গোনা যে কজন মানুষের কাছে কিছু ব্যক্তিগত চিঠিপত্র লিখেছিলেন, তাও তাঁর মৃত্যুর পর প্রায় পঞ্চাশ বছর পর্যন্ত গোপন করে রেখেছিল নোবেল ফাউন্ডেশন।

আলফ্রেড নোবেল তাঁর প্রত্যেকটি চিঠির কপি রাখতেন, একান্ত ব্যক্তিগত চিঠিরও। নোবেল ফাউন্ডেশনের আর্কাইভে আছে তাঁর হাতে লেখা অনেক চিঠি। প্রত্যেকটি চিঠিতে তাঁর নিজের হাতে ক্রমিক নম্বর দেওয়া। ১৯৫০ সালে তাঁর ব্যক্তিগত চিঠিপত্রগুলো প্রকাশ্যে আসার পর আলফ্রেড নোবেলের ব্যক্তিগত ভাবনা-চিন্তাগুলোর কিছু দিক উন্মোচিত হয়। ফরাসি লেখক ভিক্টর হুগো আলফ্রেড নোবেলের নাম দিয়েছিলেন ‘দি ওয়েলদিয়েস্ট ভ্যাগাবন্ড ইন ইউরোপ’। নোবেলের চিঠিগুলো থেকে কিছুটা হলেও দেখা যায় তৎকালীন ইউরোপের সবচেয়ে ধনী এই চিরকুমার ‘ভবঘুরে’র ব্যক্তিগত জীবনের কিছু দিক। 

নোবেলদের পূর্বপুরুষরা ছিলেন নোবেলিয়াস পদবীভুক্ত দরিদ্র কৃষক। আলফ্রেডের ঠাকুরদা নিজের চেষ্টায় নাপিতের কাজ শিখেছিলেন। ক্ষৌরকর্মের পাশাপাশি তিনি ছোটখাটো অস্ত্রোপচারও করতেন। ১৭৭৫ সালে নিজের পদবী নোবেলিয়াসের অর্ধেক ছেঁটে ফেলে ‘নোবেল’ করে নেন। তাঁর বড় ছেলে ইমানুয়েল—আলফ্রেড নোবেলের বাবা।

১৮৩৩ সালের ২১ অক্টোবর সুইডেনের স্টকহোমে ইমানুয়েল ও ক্যারোলিন নোবেলের চতুর্থ সন্তান আলফ্রেড নোবেলের জন্ম। তাঁর বড় তিনজনের একজন জন্মের পরেই মারা যায়। বাকি দুই ভাই রবার্ট ও লুডভিগ। ইমানুয়েল নোবেল ছিলেন প্রকৌশলী। তাঁর নিজের কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্ম ছিল। কনস্ট্রাকশনের কাজে নানারকম বিস্ফোরক নিয়ে পরীক্ষা করতে করতে নতুন অনেক পদ্ধতি আবিষ্কার করছিলেন তিনি। তাঁর ব্যবসায় মাঝে মাঝে খুবই সাফল্য আসছিল, আবার মাঝে মাঝে হারাচ্ছিলেন সর্বস্ব। আলফ্রেডের যখন জন্ম হয়, তখন ইমানুয়েল নোবেলের আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ। তাঁর কনস্ট্রাকশন ফার্ম দেউলিয়া হয়ে গেছে। সুইডেনের বাইরে গিয়ে কিছু করার চেষ্টা করছিলেন তিনি তখন।

এদিকে জন্ম থেকেই ভীষণ রুগ্ন আলফ্রেড। পেটের পীড়া লেগেই আছে, হৃৎপিন্ডের অবস্থাও খুব একটা ভালো নয়। সারাজীবনই শরীর নিয়ে ভুগেছেন আলফ্রেড নোবেল। দুর্বল স্বাস্থ্যের কারণে মাকে আঁকড়ে ধরেই তাঁর বেড়ে ওঠা। সারাক্ষণ শারীরিক কষ্টে ভোগার কারণে আলফ্রেড ছোটবেলা থেকেই কোনো ধরনের খেলাধূলার প্রতি উৎসাহ পাননি। তাই কোনো খেলার সঙ্গীও ছিল না। শৈশবে মা ছাড়া আর কারো সঙ্গেই তাঁর কোনো আত্মিক সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি। দুর্বল স্বাস্থ্যের কারণে কখনোই ছিলেন না হাসিখুশি উচ্ছল। তাঁকে কেউ কখনো প্রাণখুলে হাসতে দেখেনি।

আলফ্রেড নোবেল কি আবিষ্কার করেন?

আলফ্রেড নোবেল ডিনামাইট আবিষ্কার করেন।

আলফ্রেড বের্নহার্ড নোবেল ( জন্মঃ ২১ অক্টোবর, ১৮৩৩ - মৃত্যুঃ ১০ ডিসেম্বর, ১৮৯৬) একজন সুয়েডীয় রসায়নবিদ, প্রকৌশলী, উদ্ভাবক এবং অস্ত্র নির্মাতা। তিনি ডায়নামাইট আবিষ্কার করেন। তিনি ব্যবসায়েও বিশেষ প্রসিদ্ধি অর্জন করেছিলেন।

বিখ্যাত ইস্পাত নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোফোর্স এর মালিক ছিলেন অনেকদিন, প্রতিষ্ঠানটিকে এক সময় অন্যতম বৃহৎ অস্ত্র নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেন। তার নামে ৩৫০টি ভিন্ন ভিন্ন পেটেন্ট ছিল যার মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হচ্ছে ডায়নামাইট।

মৃত্যুর আগে উইল করে তিনি তার সুবিশাল অর্থ সম্পত্তি নোবেল ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার জন্য রেখে যান। উইলে আরও বলে যান, নোবেল ইনস্টিটিউটের কাজ হবে প্রতি বছর নোবেল পুরস্কার এর অর্থ প্রদান করা।

মৃত্যুবরণ

১৮৯৬ সালের শেষার্ধে, ডাক্তাররা স্পষ্টভাবে আলফ্রেদকে বলেছিলেন যে তার স্বাস্থ্যভাল না। কিন্তু আলফ্রেদ তার প্রতি খুব একটা মনোযোগ দেননি। তিনি সান রিমোতে গিয়ে নতুন ঘোড়া কিনে আনলেন। নতুন বাড়ির জন্য দামি আসবাবও কিনেছেন। আলফ্রেদ নোবেল ১৮৯৬ সালের ২১ নভেম্বর সান রিমোতে আসেন। তাদের কাছে মনে হয়েছিল যে তারা এখন দুঃখ এবং উদ্বেগ থেকে মুক্ত। ৭ ডিসেম্বর তিনি সোলম্যানকে একটি চিঠি লিখেছিলেন এবং তখনই তিনি প্যারালাইসিসের মারাত্মক স্ট্রোকের শিকার হন। তার চাকররা তাকে সিঁড়ি দিয়ে উপরের তলায় শোবার ঘরে নিয়ে গেল। তার কথা বলার এবং মনে রাখার ক্ষমতা উপরোক্ত আঘাতের কারণে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হয়েছিল। তিনি তার মাতৃভাষা সুইডিশে কিছু কথা বলার চেষ্টা করেছিলেন। তার ভৃত্য কেবল একটি শব্দ বুঝতে পারত - টেলিগ্রাম। তিনি আলফ্রেদের ভাগ্নে এবং সোলম্যানের কাছে টেলিগ্রাম পাঠিয়েছিলেন। তিন দিন পরে, ১০ ডিসেম্বর সকালে আলফ্রেদ মৃত্যুবরণ করেন। কিন্তু ততক্ষণে ভাতিজা বা সোলম্যান কেউই সান রিমোতে পৌঁছতে পারেননি। আলফ্রেদ যে জিনিসটাকে সারাজীবন ভয় পেয়েছিল, সেটাই ঘটেছে এবং মরার সময় সে কাউকে দেখতে পায়নি। নোবেল পরিবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে তাকে শেষবারের জন্য স্টকহোমে দাফন করা হবে কিন্তু সান রিমোতে যাওয়ার আগে সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠান হবে।

এর জন্য প্যারিস থেকে একজন সুইডিশ পুরোহিতকে ডাকা হয়েছিল। কিন্তু টাকা কতটা প্রিয় এবং তাদের কাছে কতটা প্রিয় ছিল, তা এই সত্য দ্বারা প্রমাণিত হয়েছিল যে একদিকে আলফ্রেদের পাত্র পড়ে ছিল এবং অন্যদিকে ভাগ্নে এবং সোলম্যান মূল্যবান দলিল এবং উইলের অফিসিয়াল কপি খুঁজতে ব্যস্ত ছিলেন। আলফ্রেদ তিনবার উইল করেছিলেন। অনুসন্ধানকারীরা দ্বিতীয় উইলের একটি অনুলিপি পেয়েছিলেন, যা বাতিল করা হয়েছিল। কিন্তু তারপর ১৫ ডিসেম্বর একটি টেলিগ্রাম এল, যা একটি ব্যাংক পাঠিয়েছিল এবং তাতে লেখা ছিল যে আলফ্রেদের শেষ উইল তাদের সাথে ছিল এবং এটি খোলা হয়েছিল। সেই ইচ্ছার বাস্তবায়নের দায়িত্বেও ছিলেন সোলেমান। এখন ডাক্তারের কাছ থেকে ডেথ সার্টিফিকেট নেওয়া হয় এবং ১৭ ডিসেম্বর আলফ্রেদ নোবেলের মৃতদেহ কফিনে রেখে পুরোহিত কিছু অনুষ্ঠান করেছিলেন। এর পর লাশ ট্রেনে করে স্টকহোমের দিকে গেল। ইমানুয়েল সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে লাশটি ১৮৯৬ সালের ৩০ ডিসেম্বর দাফন করা হবে।

What's Your Reaction?

Like Like 0
Dislike Dislike 0
Love Love 0
Funny Funny 1
Angry Angry 0
Sad Sad 0
Wow Wow 0