লেডি লাভলেস এর জীবনী | Biography of Ada Lovelace
লেডি লাভলেস এর জীবনী | Biography of Ada Lovelace

বিশ্বের প্রথম প্রোগ্রামার অ্যাডা লাভলেসের জন্ম
জন্ম |
অগাস্টা অ্যাডা বেরন
১০ ডিসেম্বর ১৮১৫ লন্ডন, ইংল্যান্ড
|
---|---|
মৃত্যু |
২৭ নভেম্বর ১৮৫২ (বয়স ৩৬) লন্ডন, ইংল্যান্ড
|
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন |
|
কর্মক্ষেত্র |
গণিত, কম্পিউটিং |
অগাস্টা অ্যাডা বা লাভলেসের কাউন্টেস
(জন্ম: ডিসেম্বর ১০, ১৮১৫ - মৃত্যু: নভেম্বর ২৭, ১৮৫২) কে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং ধারণার একজন প্রবর্তক মনে করা হয়।
তিনি চার্লস ব্যাবেজের অ্যানালিটিক্যাল ইঞ্জিন-এর একটি বর্ণনা লেখেন।
পুরো নাম তার অ্যাডা অগাস্টা কিং, আর ডাকা হতো কাউন্টেস অফ লাভলেস বা শুধুই অ্যাডা লাভলেস নামে। তার জন্ম হয় লন্ডনের সম্ভ্রান্ত পরিবারে কবি লর্ড বায়রনের কন্যা এবং একমাত্র সন্তান হিসেবে।অ্যাডা মাত্র ৩৬ বছর বেঁচে ছিলেন। ১৮৫২ সালের ২৭ নভেম্বর তার মৃত্যু হয়, জরায়ুর ক্যান্সার এবং অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে।
স্যার চার্লস উইলিয়াম ব্যাবেজ যখন তার ডিফারেন্স মেশিন বা অ্যানালিটিক্যাল ইঞ্জিন নামক কম্পিউটার আবিষ্কারের নেশায় মত্ত, তখন অ্যাডা তার গণিতবিষয়ক বিশ্লষণী ক্ষমতার দ্বারা বুঝতে পেরেছিলেন এই কম্পিউটারগুলোর নাম্বার ক্রাঞ্চিং এর অমিত সম্ভাবনা সম্পর্কে । সে চার্লস ব্যাবেজ তাই লিখে গেছেন তার Decline of Science in England এই বইয়ে। আর এমন একটা সময়ে এই অসামান্যা নারী চার্লস ব্যাবেজকে যেসব সম্ভাবনার কথা জানান তা তার কাজকে আরো বেগবান করেছিল। অ্যাডা অগাস্টা’কে এখন বিশ্বের প্রথম কম্পিউটার প্রোগ্রামার ধরা হয়।
বায়রনের সৎ-বোন অগাস্টা লেই এর নামে মেয়ের নাম রাখা হয়, আর বায়রন তাকে অ্যাডা নাম দেন। মাত্র একমাস যখন অ্যাডা’র বয়স তখন থেকে তার মা অ্যানাবেলা তাকে নিয়ে আলাদা হয়ে যান।
ছোট থেকেই অ্যাডা কিছুটা অসুস্থ্যতায় ভূগছিলেন, প্রচণ্ড মাথাব্যথা হতো এবং দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতা হতো। ১৮২৪ সালে তার বাবা মারা যান, যদিও তিনি তার দায় বহন করতেন না। ১৮২৯ থেকে তিনি হাম এবং পক্ষাঘাতগ্রস্ততায় ভূগছিলেন। কিন্তু ক্র্যাচে ভর দিয়ে হলেও শিক্ষা চালিয়ে গিয়েছেন। ১৮৩২ এ যখন তার বয়স ১৭ তখন তার বিশেষ গাণিতিক প্রতিভার স্ফূরণ ঘটে। তার ছেলেবেলা থেকেই তার মা তাকে গণিতে দক্ষ করে তুলতে চাইতেন বাবার প্রভাব যাতে কোনোভাবেই মেয়ের মধ্যে প্রতিফলিত না হয় এই ভেবে। ১৮৪১ সালের আগে অ্যাডা জানতেনই না লর্ড বায়রন তার বাবা। বাসায় গৃহশিক্ষকেরা বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষা দিতেন তাকে। গণিতজ্ঞ ও যুক্তিবিদ ডি-মরগ্যান তার শিক্ষক ছিলেন। স্যার চার্লস ডিকেন্স, স্যার চার্লস হুইটস্টোন এবং বিজ্ঞানি মাইকেল ফ্যারাডে’র সাথেও তার জানাশোনা ছিল। ১৮৩৩ সালের ৫ জুন তার সাথে পরিচয় হলে তিনি বিশ্ববিখ্যাত স্যার চার্লস ব্যাবেজর অ্যানালিটিক্যাল ইঞ্জিনকে কাজে লাগানোর জন্য 'প্রোগ্রামিং' এর ধারণা দেন। ১৮৪২ সালে ব্যাবেজ তুরিন বিশ্ববিদ্যালয়ে তার ইঞ্জিন সম্পর্কে ধারণা দেন। অ্যাডা তাকে এ বিষয়ে সাহায্য করেন।
চার্লস ব্যাবেজের সঙ্গে তার বেশ ঘনিষ্ঠ এবং রোম্যান্টিক সম্পর্কও গড়ে ওঠে। ব্যাবেজ অ্যাডা’র অসাধারণ ধীশক্তি, সাবলিল লেখনী এবং প্রতিভায় মুগ্ধ ছিলেন। ব্যাবেজ অ্যাডা সম্পর্কে নিজের লেখায় অ্যাডাকে সংখ্যার জাদুকরী আখ্যা দিয়েছেন।চার্লস ব্যাবেজ, যিনি তার সময়ের লোকদের কাছে অনেকটা পাগল হিসেবেই পরিচিত ছিলেন, তার নতুন ধ্যান-ধারণাকে মাত্র গুটিকয়েক যে ক’জন বুঝতে পেরেছিলেন তন্মধ্যে অ্যাডা অগ্রগণ্য। যদিও ইতিহাসবেত্তাদের গলদঘর্ম হতে হয়, অ্যাডা কতোটা প্রভাব বিস্তার করেছিলেন ব্যাবেজের উদ্ভাবনী কাজে তা খুঁজে পেতে। কেননা, ব্যাবেজ কারো প্রতি কৃতজ্ঞতা সচেতনভাবে স্বীকার করেননি। লেডি অ্যানি ব্লান্ট ছিলেন, তার কন্যা, যিনি মধ্যপ্রাচ্য ভ্রমণ করেন এবং সেখানে উন্নত প্রজাতির ঘোড়ার সংকর ঘটান। তাকে মর্যাদা দিতে আমেরিকার প্রতিরক্ষা বিভাগের প্রণিত প্রোগ্রামিং ভাষার নামও রাখা হয় অ্যাডা।কনসিভিং অ্যাডানামে তাকে নিয়ে একটি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। মাইক্রোসফটের প্রোডাক্ট অথেনটিসিটি হলোগ্রামে তার ছবিও আছে।কম্পিউটিং এবং প্রোগ্রামিং এ বিশেষ অবদানের কারণে ২৪ মার্চকে অ্যাডা লাভলেস দিবস হিসেবে বিশ্বব্যাপী উদ্যাপন করা হয়ে থাকে।
জীবনী
বাল্যকাল
লর্ড বায়রন তার সন্তান হিসেবে একটি "অপূর্ব বালক" চেয়েছিলেন; কিন্তুু লেডি বায়রন মেয়ে জন্ম দেয়ায় তিনি নিরাশ হন।বায়রনের সৎ-বোনের নাম অনুসারে সন্তানটির নাম অগাস্টা লেইহ্ রাখা হয় এবং বায়রন নিজে তাকে "অ্যাডা" বলে ডাকতেন।১৮১৬ সালের ১৬ই জানুয়ারিতে লর্ড বায়রনের আদেশে লেডি বায়রন তার পাঁচ-সপ্তাহ বয়সী কন্যাকে নিয়ে কিরকবাই ম্যালরিতে তাঁর পিতৃনিবাশে চলে যান।তৎকালীন ইংরেজ আইন অনুসারে বিচ্ছেদ হলে সকল অভিভাবকত্বের দায়িত্ব পিতার হওয়া সত্ত্বেও তিনি নিজের পিতা হিসেবে কোনো অধিকার দাবি করার প্রচেষ্টা করেনি,তবে তাঁর বোনকে অ্যাডা’র খোজ রাখতে বলেছিলেন।
২১শে এপ্রিলে লর্ড বায়রন তীব্র অনিচ্ছায় আইনী বিচ্ছেদের জন্য সাক্ষর করেন এবং কিছুদিন পর চিরতরে ইংল্যান্ড ছেড়ে চলে যান। একটি বিদ্বেষপূর্ণ বিচ্ছেদের পাশাপাশি লেডি বায়রন আজীবন তাঁর স্বামীর অনৈতিক ব্যবহারের দাবি করতে থাকেন।এই ঘটনাগুলি লাভ্লেসকে ভিক্টোরিয়ান সমাজে কুখ্যাত করে তোলে। আডা-এর তাঁর পিতার সাথে কোনো সম্পর্ক ছিল না। ১৮২৪ সালে অ্যাডা’র আট বছর বয়সেই তিনি মৃত্যুবরণ করেছিলেন। অ্যাডা-এর একমাত্র উল্লেখযোগ্য অভিভাবক তাঁর মা ছিলেনলাভ্লাসের ২০তম জন্মদিনের আগে তাকে তাঁর বাবার পরিবারের চিত্রে দেখানো হয়নি।
লাভ্লেসের মায়ের সাথে তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল না। তাঁকে প্রায় সময়ে তাঁর মাতামহী, জুডিথ হন. লেডি মিলবানকের যত্নে রাখা হতো; যিনি তাঁকে আদরে রাখতেন। তবে, তৎকালীন সামাজিক মনোভাবে যেকোনো বিবাহ বিচ্ছেদ স্বামীর প্রতি অনুকুল ছিল এবং ক্ষতিপূরণ হিসেবে সন্তানের তহবিল দেয়া হতো। এতে, লেডি বায়রনকে নিজেকে স্নেহময় মা হিসেবে প্রদর্শন করতে হতো। এজন্য তিনি লেডি মিলবানকের কাছে উদ্বিগ্নভাবে মেয়ের তহবিল সম্পর্কিত অনেকগুলো চিঠি লেখেন এবং খামে চিঠিগুলো সংরক্ষণ করে রাখার কথা লিখেছিলেন যাতে প্রয়োজনে তিনি সেগুলো ব্যবহার করে মাতৃউদ্বেগ দেখাতে পারেন। এমন একটি চিঠিতে তিনি নিজের মেয়েকে "ইহা" হিসেবে সম্বোধন করেন: "আমি ইহার সাথিয়া কেবল তোমার সন্তুষ্টির নিমিত্তে কথা বলি, আমার নিমিত্তে নয়। এবং ইহা তোমার অধীনে হইলে অনেক খুশি হইব।" লেডি বায়রন তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধুবান্ধবের সাহায্যে কোনো নৈতিক বিচ্যুতির লক্ষণের জন্য কিশোরী মেয়ের উপরে নজর রাখতেন। লাভলেস তাঁদেরকে "Furies" বলতেন এবং পরবর্তীতে অভিযোগ করেছিলেন যে তাঁরা তাঁর সম্পর্কে গল্প অতিরঞ্জিত করে এবং বানিয়ে বলতেন।
লাভলেস শৈশবকাল থকেই প্রায়সময় অসুস্থ থাকতেন। আট বছর বয়সে মাথাব্যাথার ফলে তাঁর দৃষ্টি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ১৮২৯ সালের জুন মাসে হামে আক্রান্ত হওয়ার পরে তিনি নিশ্চল হয়ে পরেন। তাঁকে প্রায় এক বছর অবিরত বিছানায় বিশ্রাম করানো হয়, যা সম্ভবত বিকলতার সময়কাল বাড়িয়ে দিয়েছিল। ১৮৩১ সালের মধ্যে তিনি ক্রাচের সাহায্যে হাটতে পারতেন। তাঁর অসুস্থতার সত্ত্বেও তিনি গাণিতিক ও প্রযুক্তিগত দক্ষতা অর্জন করেছিলেন।খন অ্যাডা এর বারো বছর বয়স, এই "লেডি ফেয়রি", যা বলে আদরের সাথে চার্লস ব্যাবেজ তাকে ডাকতেন, সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি উড়তে চান। অ্যাডা বায়রন এই প্রকল্প চিন্তার সাথে, কল্পনাশক্তি ও আবেগের সাথে অগ্রসর করেছিলেন। ১৮২৮ এর ফেব্রুয়ারি মাসে তার প্রথম পদক্ষেপ ছিল পাখনা প্রস্তুত করা। তিনি বিভিন্ন ধরনের উপাদান ও আকারের বিষয়ে তদন্ত করেছিলেন। তিনি পাখনার জন্য বিভিন্ন উপাদান বিবেচনা করলেন: কাগজ, ওয়েলসিল্ক, তার এবং পালক। তিনি পাখনা ও শরীরের সঠিক অনুপাত নির্ধারণ করতে পাখিদের শরীরতত্ত পরীক্ষণ করেন। তিনি কী সরঞ্জাম করবেন তা স্থির করেছিলেন; উদাহরণস্বরূপ, একটি কম্পাস, "সর্বাধিক সরাসরি পথ দিয়ে দেশ পারাপার" করার জন্য, যাতে তিনি পাহাড়, নদী ও উপত্যকার শীর্ষদেশে থাকেন। তার সর্বশেষ ধাপ ছিল "উড়ার শিল্পে" বস্পশক্তি অন্তর্ভুক্ত করা।
১৮৩৩ সালের প্রথম দিকে অ্যাডা বায়রন তাঁর এক গ্রহশিক্ষকের সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন। ধরা পরায় তিনি তাঁর সাথে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন, কিন্তু শিক্ষকের আত্মীয়স্বজন তাঁকে চিনতে পেরে তাঁর মায়ের সাথে যোগাযোগ করেন। লৌকিক মানহানি প্রতিরোধে লেডি বায়রন এবং তাঁর বন্ধুবান্ধব ঘটনাটিকে চাপিয়ে ফেলে। লাভলেস কখনো তাঁর ছোট সৎবোন এবং লর্ড বায়রন ও ক্ল্যার ক্ল্যারমন্ট-এর মেয়ে, অ্যালেগ্রা-এর সাথে দেখা করেননি। অ্যালেগ্রা ১৮২২ সালে মাত্র ৫ বছর বয়সে মারা যায়। তবে বায়রনের সৎবোন অগস্টা লেইহ্-এর মেয়ে, এলিজাবেথ মেডোরা লেইহ্-এর সাথে লাভ্লেসের যোগাযোগ ছিল, যে লাভ্লেসের সাথে কোর্টে পরিচিত হলে ইচ্ছাকৃতভাবে এড়িয়ে চলেছিল।
প্রাপ্তবয়সকালীন
লাভলেস তাঁর শিক্ষক ম্যারি সমারভিল-এর সাথে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব গড়ে তুলেছিলেন, যিনি তাঁকে পরবর্তীতে চার্লস ব্যাবেজের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। তাঁর সমারভিলের জন্যে দৃঢ় শ্রদ্ধা ও প্রীতি ছিল এবং তাঁরা অনেক বছর যাবত চিঠিবিনিময় করেছিলেন।অন্যান্য পরিচিতদের মধ্যে ছিল বিজ্ঞানী অ্যান্ড্রু ক্রস, স্যার ডেভিড ব্রেউস্টার, চার্লস হুইটস্টোন, মাইকেল ফ্যারাডে এবং লেখক চার্লস ডিকেন্স। তাঁকে ১৭ বছর বয়সে আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রদর্শিত করা হলে তিনি "এবং সেই কালের একটি জনপ্রিয় সুন্দরী হয়ে উঠেন" কিছুটা তাঁর "উজ্জ্বল বুদ্ধি"- এর জন্য।১৮৩৪ এর মধ্যে তিনি নিয়মিত কোর্ট এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া শুরু করেন। তিনি প্রায়ই নাচতেন এবং অনেক মানুষকে মুগ্ধ করতে পেরেছিলেন এবং বেশিরভাগ মানুষই তাঁকে মিষ্টি মনে করতেন; যদিও বায়রনের বন্ধু জন হবহাউস তাঁকে বর্ণনা করেছিলেন- "একটি দাম্ভিক, শুষ্ক-ত্বক বিশিষ্ট তরুণী কিন্তু আমার বন্ধুর কিছু বৈশিষ্ট সমৃদ্ধ, বিশেষ করে মুখটি।"এই বর্ণনার পরে ১৮৩৪ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারিতে একটি সাক্ষাৎকার অ্যাডা হবহাউসকে এতি স্পষ্ট করে বুঝিয়েছিলেন যে তিনি তাঁকে পছন্দ করতেন না, মায়ের সম্ভাব্য প্রভাবের কারণে। এতে তিনি তাঁর বাবার সকল বন্ধুকেই অপছন্দ করতে শুরু করেন। এই প্রথম পরিচয় দীর্ঘকাল স্থায়ী ছিল না এবং পরবর্তীতে তাঁরা বন্ধু হয়ে উঠে।
১৮৩৫ সালের ৮ই জুলাই, তিনি অষ্টম বায়রন রাজা, উইলিয়ামকে বিয়ে করার মাধ্যমে লেডি কিং হয়ে যান। তাদের তিনটি বাড়ি ছিল: ওকহাম পার্ক, সুররে; রস - শিররের লখ টরিডনে অবস্থিত একটি স্কটিশ এস্টেট; এবং লন্ডনে একটি বাড়ি। তারা তাদের হানিমুন সমেরসেটে পলক ওয়েইর এর নিকট একটি ওয়ার্থি মানোরে যাপন করেন। এই মানোরটি ১৭৯৯ সালে একটি শিকার বীরব হিসেবে তৈরি করা হয়েছিল এবং কিং দ্বারা হানিমুনের জন্যে পরিবর্তন করা হয়েছিল। এটি পরবর্তীতে তাদের গ্রীষ্মকালীন বসবাস হয়ে উঠে এবং সেই সময়ে এটির আরো উন্নতি করা হয়। ১৮৪৫ থেকে পরিবারটির প্রধান বাড়ি হর্সলে টাওয়ার্সয়ে অবস্থিত ছিল, যা সংসদ ভবনের স্থপতি চার্লস ব্যারি দ্বারা টুদর্বেথান নকশায় তৈরি করানো হয়েছিল এবং পরে লোভেলাসের নিজের নকশায় প্রসারিত করা হয়।
তাদের তিনটি সন্তান ছিল: বায়রন(জন্ম ১৮৩৬), অ্যানি ইসেবেলা(অ্যানবেলা বলা হতো, জন্ম ১৮৩৭); এবং রালফ গর্ডন(জন্ম ১৮৩৯)। অ্যানবেলা জন্মের তৎক্ষণাৎ পরেই লেডি কিং "একটি একঘেয়েমি এবং যন্ত্রণাদায়ক অসুখ, যা ঠিক হতে কয়েক মাস লেগেছিল।অ্যাডা বিলুপ্ত বারনস লাভলাসের বংশধর ছিল এবং ১৮৩৮ সালে, তার স্বামীকে অ্যার্ল অফ লাভেলাসে ও ভিস্কাউন্ট ওকহামে। Cracroft's Peerage। ২০০৫ ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ জুলাই ২০১৫। |শিরোনাম=
অনুপস্থিত বা খালি (সাহায্য) পরিণত করা হয়, অর্থাৎ অ্যাডা হয় কাউন্টেস অফ লাভলেস। ১৮৪৩-১৮৪৪ সালে অ্যাডা’র মা অ্যাডা’র সন্তানদের শিক্ষা প্রধানের জন্যে এবং অ্যাডা’র "নৈতিক" প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালনের জন্যে উইলিয়াম বেনজামিন ক্যারপেন্টারকে নিযুক্ত করেন। তিনি দ্রুতই অ্যাডা’র প্রেমে পড়ে যান এবং অ্যাডাকে কোনো বিরক্তির মনোভাব প্রকাশ করতে উৎসাহ প্রদান করতেন, এই দাবি করে যে তিনি বিবাহিত এই মানে তিনি কখনো "অনুচিত" ব্যাবহার করবেন না। কিন্তু যখন এটি পরিষ্কার হয়ে উঠে যে তিনি সম্পর্ক তৈরি করার চেষ্টা করছেন, তখন অ্যাডা এটি বন্ধ করে দেয়।
১৮৪১ সালে অ্যাডা’র মা লাভলেস এবং মেডোরা লেইহকে(লর্ড বায়রনের সৎ বোন আগস্টা লেইহয়ের পূত্রি) বলেন যে অ্যাডা’র বাবাই মেডোরার বাবা। ১৮৪১ সালের ২৭শে ফেব্রুয়ারিতে অ্যাডা তার মাকে লিখেন: "আমি একদম অবাক হইনি। আসলে, তুমি এমন জিনিস নিশ্চিৎ করেছ যা নিয়ে আমার বছরের পর বছর ধরে তেমন সন্দেহ ছিল না, কিন্তু এই ধারণা নিয়ে তোমার কাছে কোনো প্রকার ইঙ্গিত করা আমার জন্যে অনুপযুক্ত মনে হয়েছিল।" তিনি এই অজাচার সম্পর্ক নিয়ে বায়রনের কোনো দোষারোপ করেননি, বরং এর পরিবর্তে আগস্টা লেইহকে দোষ দিয়েছিলেন: "আমি আশঙ্কিত যে সে এমন সহজাতভাবে খারাপ যা তিনি কখনো ছিলেন না।" ১৮৪০এর দশকে অ্যাডা বিভিন্ন স্ক্যান্ডালের সাথে জড়িত ছিল: প্রথমত, পুরুষদের সাথে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের প্রতি নরম মনোভাব ছিল, ফলে পরকিয়ার গুজব ছড়িয়েছিল এবং দ্বিতীয়ত, তাঁর জুয়া খেলার প্রতি ভালোবাসা। ১৮৪০ দশকের শেষের দিকে তিনি ঘোড়ার উপর প্রায় ৩০০০ ইউরোর বেশি অর্থ হারিয়েছিলেন। এই জুয়া খেলার ফলে তিনি তাঁর পুরুষ বন্ধুদের সাথে সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন এবং ১৮৫১ সালে তিনি সফল বড় বাজির জন্যে গাণিতিক মডেল তৈরি করার উচ্চাকাঙ্ক্ষী প্রচেষ্টা চালান। এটি অনেক ভয়ংকরভাবে ভুল হওয়ায় তিনি সিন্ডিকেটের কাছে হাজার হাজার পাউন্ডের ঋন তৈরি হয়। এতে তিনি তার স্বামীর কাছে স্বীকার করতে বাধ্য হন।১৮৪৪ সাল থেকে তাঁর অ্যান্ড্রু ক্রসের পুত্র জনের সঙ্গে আবছায়া সম্পর্ক ছিল। জন ক্রস অ্যাডা’র মৃত্যুর পরে একটি আইনী চুক্তির অংশ অনুসারে তাদের অধিকাংশ চিঠিপত্র নষ্ট করে দেন। অ্যাডা তাকে কেবমাত্র এমন জিনিসের উত্তরাধিকার দিয়েছিলেন যা অ্যাডা’র বাবা অ্যাডাকে ব্যাক্তিগতভাবে দিয়েছিলেন।অ্যাডা’র অন্তিম অসুখের সময়ে তিনি প্রায়ই ছোট ক্রসকে তাঁর সাথে দেখা করতে আটকানোর চিন্তায় আশঙ্কিত হতেন।
শিক্ষা
১৮৩২ সালে কেবল ১৭ বছর বয়স থেকেই অ্যাডা’র গাণিতিক দক্ষতা প্রকাশ পেতে শুরু করে । এবং তাঁর প্রাপ্তবয়স্ককালীন জীবনের বেশিরভাগ অংশেই গণিতের প্রতি আগ্রহ আধিপত্য পেয়েছিল। তাঁর মায়ের যেকোনো যেকোনো পাগলামির মূল কারণ বের করার অভ্যাসের ফলে অ্যাডাকে ছোটবেলা থেকে গণিত শিখানোর জন্যে তিনি বায়রনকে একটি কারণ হিসেবে দোষারোপ করতেন। উইলিয়াম ফ্রেন্ড, উইলিয়াম কিং এবং ঊনবিংশ শতকের বিশিষ্ট গবেষক ও বৈজ্ঞানিক লেখক ম্যারি সমেরভিল তাকে ব্যাক্তিগতভাবে গণিত এবং বিজ্ঞান শিখিয়েছিলেন। ১৮৪০ দশকে গণিতবিদ অগাস্টাস দে মর্গান অ্যাডাকে "অ্যাডা’র গণিত পড়ালেখায় অনেক সাহায্য" প্রসারিত করেন। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল ক্যালকুলাসের উন্নত বিষয়গুলো যার মধ্যে বার্নুলির সংখ্যা(এটি ব্যাবেজের অ্যানালিটিকাল জন্যে তাঁর বিখ্যাত অ্যালগরিদম তৈরি করেছিল) ছিল।
লাভলেস প্রায়ই কবিতা ও বিজ্ঞান মিলিয়ে সাধারণ অনুমান গুলিকে প্রশ্ন করতেন। ডিফারেনশিয়াল ক্যালকুলাস অধ্যয়ন করার সময় তিনি দে মর্গানকে লিখেছিলেন:আমি এই মন্তব্য করতে পারি যে সূত্রগুলো কতো বিচিত্র রুপান্তর দিয়ে যায়, কোনো অজ্ঞাত বা আরম্ভকারীর কাছে এগুলো প্রথম দৃষ্টিতে স্পষ্টভাবে অসম্ভব্য পরিচয়গুলো অতিশয় আলাদা মনে হয়, আমার মনে হয় এটি প্রাথমিকগণিত অধ্যয়নের প্রথম জটিলতার একটি। আমার প্রায়ই মানুষের পড়া কিছু নির্দিষ্ট ভুত ও পরীর কথা মনে পড়ে, যারা এক মুহূর্তে কারো কুনুইয়ের কাছে এক রূপে থাকে, কিন্তু পরের মুহূর্তেই অনেক আলাদা রূপ ধারণ করে।লাভলেস বিশ্বাস করতেন যে কার্যকরীভাবে বিজ্ঞান ও গাণিতিক ধারণা প্রয়োগে অন্তর্দৃষ্টি এবং কল্পনাশক্তি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তিনি অধিবিদ্যাকেও গণিতের মতোন গুরুত্ব দিতেন এবং উভয়কেই "আমাদের চারিদিকের অচেনা বিশ্ব দেখার" জন্যে গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জাম মনে করতেন।
কাজ
লাভলেস সারা জীবনই তৎকালীন বৈজ্ঞানিক উন্নয়ন ও কাল্পনিক জিনিসের প্রতি প্রচন্ড আগ্রহী ছিলেন। এর মধ্যে ফ্রেনোলজি ও মেসমেরিসম। ন্তর্ভুক্ত ছিল। অ্যাডা ব্যাবেজের সাথে কাজের পরেও বিভিন্ন প্রকল্পে কাজ জারি রেখেছিলেন। ১৮৪৪ সালে তিনি তার বন্ধু ওরঞ্জও গ্রেইগের কাছে তার একটি মস্তিষ্কে চিন্তা ও নার্ভে অনুভূতি কিভাবে তৈরি হয় তা নিয়ে একটি গাণিতিক মডেল(নার্ভাস সিস্টেমের গণনা) তৈরি করার ইচ্ছা নিয়ে মন্তব্য করেছিলেন। যদিও তিনি এটি করতে পারেননি। কিছু ক্ষেত্রে, মস্তিষ্ক নিয়ে তার আগ্রহ এসেছিল তাঁর মা থেকে পাওয়া তার "সম্ভাব্য" পাগলামি নিয়ে দীর্ঘকালীন চিন্তায় সমাবেশ থাকার ফলে।এক্ষেত্রে গবেষণার অংশ হিসেবে, বৈদ্যুতিক পরীক্ষণ করার জন্যে তিনি ১৮৪৪ সালে বৈদ্যুতিক প্রকৌশলী অ্যান্ড্রু ক্রসের সাথে সাক্ষাৎ করেন। একই বছরে তিনি ব্যা রন কার্ল ভন রেইকেনবাকের রিসার্চেস্ অফ মাগনেটিসম নামে একটি পেপারের জন্যে রিভিউ লিখেছিলেন, কিন্তু এটি পাবলিশ করা হয়নি এবং মনে হয় প্রথম ড্রাফটের পরে আর অগ্রগতি হয়নি। mক্যান্সার হওয়ার পূর্ববর্তী বছরে, ১৮৫১ সালে তিনটি মাকে একটি চিঠিতে উল্লেখ করেছিলেন যে গণিত ও সঙ্গীত সম্পর্কিত "কিছু উৎপাদন" নিয়ে কাজ করছেন
১৮৩৩ সালের জুনে তাদের পারস্পরিক বন্ধু ম্যারি সমারভিলের মাধ্যমে অ্যাডা প্রথমবার চার্লস ব্যাবেজের সাথে সাক্ষাৎ করেন। একই মাসের পরবর্তীতে ব্যাবেজ তার ডিফারেন্স ইঞ্জিনের প্রোটোটাইপ দেখানোর জন্ যে লাভলেসকে আমন্ত্রণ করেন। তিনি ব্যাবেজের যন্ত্রটি দেখে অভিভূত হন এবং সমার্ভিলের সাথে সম্পর্কের সহায়ে প্রায়ই যথাসম্ভব ব্যাবেজের সাথে দেখা করতে যেতেন। ব্যবেজ তাঁর গাণিতিক ও বিশ্লেষণ ক্ষমতা দেখে মুগ্ধ হন। ব্যাবেজ তাকে "সংখ্যার জাদুকরী" বলতেন। ১৮৪৩ সালে তিনি তাকে লিখেছিলেন:এই পৃথিবীর সকল ঝামেলা এবং সম্ভবত বিবিধ মূর্খদের ভুলে যাও—সংক্ষেপে সংখ্যার জাদুকরী বাদে সবকিছুই।
১৮৪২-৪৩ সালে নয় মাস ধরে, ব্যাবেজের নতুন যন্ত্রের পরিকল্পনার উপর ইতালীয় গণিতবিদ লুইগি মেনাব্রিয়ার আর্টিকেল অনুবাদ করেছিলেন। এই আর্টিকেলের সাথে তিনি কয়েকটি নোট যুক্ত করেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেছিলেন যে, অ্যানালিটিক্যাল ইঞ্জিনের কাজ একটি জটিল বিষয়; অনেক আরো বিজ্ঞানীরা এই বিষয়টি বুঝতে পারি নি এবং ব্রিটিশ ব্যবস্থা তেমন কোনো আগ্রহ দেখায়নি। লাভ লেসের নোটে অ্যানালিটিক্যাল ইঞ্জিন ও প্রাথমিক ডিফারেন্স ইঞ্জিনের পার্থক্যও বুঝতে হয়েছিল। তাঁর কাজ তৎকালীন প্রশংসিত হয়েছিল; বিজ্ঞানী মাইকেল ফ্যারাডে নিজেকে তাঁর লেখার সমর্থক মনে করতেন।
এই নোটগুলো মূল অনুচ্ছেদটির তুলনায় প্রায় তিন গুণ দীর্ঘ ছিল এবং এতে(নোট জি এর মধ্যে) অ্যানালিটিক্যাল ইঞ্জিন ব্যবহার করে বার্নুলীর লির সংখ্যার একটি ধারা গণনার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ বিস্তারিতভাবে লিখিত ছিল, এটি কখনো তৈরি করা হলে সঠিকভাবে হিসেব করতে পারতো (ব্যাবেজের কেবল ডিফারেন্স ইঞ্জিন তৈরি করা হয়েছে, ২০০২ সালে লন্ডনে সম্পূর্ণ হয়েছে)। এই কাজের উপর নির্ভর করে, অনেকেই লাভলেসকে প্রথম কম্পিউটার প্রোগ্রামার হিসেবে বিবেচনা করেন এবং তাঁর হিসেবের প্রক্রিয়াকে পৃথিবীর প্রথম কম্পিউটার প্রোগ্রাম বলা হয়। অনেকের এটিতে মতানুবাদ আছে কেননা চার্লস ব্যাবেজের কিছু পূর্ববর্তী লেখনীকে কম্পিউটার প্রোগ্রাম ধরা যায়।
নোট জিতে লাভলেস কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে বরখাস্ত করেছিলেন। তিনি লিখেছিলেন যে, "অ্যানালিটিক্যাল ইঞ্জিনের কিছুই তৈরি করার স্বত্তা নেই। এটি কেবল সেই কাজগুলোই করতে পারে যেগুলো আমরা এটিকে করতে বলতে পারি। এটি কোনো বিশ্লেষণ অনুসরণ করতে পারে; কিন্তু এটির নিজের কোনো বিশ্লেষণধর্মী সম্পর্ক বা সত্য বুঝার কোনো ক্ষমতা নেই।" এই অসমম্মতি বিভিন্ন বিতর্ক ও প্রত্যাখ্যানের বিষয় হয়ে উঠেছে, উদাহরণস্বরূপ এটি অ্যালান টুরিং নিজের "কম্পিউটিং মেশিনারি অ্যান্ড ইন্টেলিজেন্স" পেপারে করেছিলেন। বেশিরভাগ আধুনিক কম্পিউটার বিজ্ঞানীই বিবেচনা করে যে এই দৃষ্টিভঙ্গিটি আদিকালের এবং কম্পিউটার সফওয়্যার এমনভাবে তৈরি করা যেতে পারে যা প্রোগ্রামার দ্বারা বোঝা নাও যেতে পারে।
ব্যাবেজ যখন একটি অসাক্ষরিত ইতিকথায় নিজের মন্তব্য(তাঁর ইঞ্জিনের প্রতি সরকারের ব্যবহার) লিখতে চেয়েছিলেন, যা ভুলে যুক্ত ঘোষণা হিসেবে বোঝা সম্ভব্য- ফলে পেপারগুলো প্রকাশ হওয়ার সময় ব্যাবেজ ও লাভলেস হালকা বিচ্ছিন্ন হয়ে পারে। যখন ট্যালোরের সাইন্টিফিক মেমোর্স সিদ্ধান্ত নেয় যে মন্তব্যটি সাক্ষর করতে হবে, তখন ব্যাবেজ লাভ লেস কে পেপারটি প্রত্যাখ্যান করতে বলে চিঠি লেখেন। এই প্রথম লাভলেস জানতে পারেন যে তিনি সেটি অসাক্ষরিত রেখে দিয়েছিল। লাভ লেস পেপারটি প্রত্যাখ্যান করতে মানা করে ফেরত চিঠি লিখে। ইতিহাসবিদ বেনজামিন উলি ধারণা করেন যে, "ব্যাবেজের কাজ বুঝায় যে তিনি অনেক উৎসাহিত ভাবে অ্যাডা’র অংশগ্রহণ চেয়েছিলেন এবং খুশিখুসি অ্যাডাকে জড়িত করেছিলেন ...কারণ তার 'প্রখ্যাত নাম' আছে। তাদের বন্ধুত্ব উদ্বৃত হয়ে উঠে এবং তারা পত্রবিনিময় চালিয়ে যান। ১৮৫১ সালের ১২ই আগস্ট, যখন অ্যাডা ক্যান্সারে মারা যাচ্ছিলেন, তখন তিনি ব্যবেজকে তার নির্বাহক হতে বলে চিঠি লিখেন, কিন্তু এই পত্রটি ব্যাবেজকে প্রয়োজনীয় আইনী অধিপত্ত দেয়নি। ওয়ার্থী ম্যানোরের ছাদের একটি অংশ ফিলোসফারস্ ওয়াক নামে পরিচিত। এই স্থানটিতে লাভলেস ও ব্যাবেজ গাণিতিক নীতিমালা আলোচনা করতে করতে হাটতেন বলে খ্যাত।
প্রথম কম্পিউটার প্রোগ্রাম
১৮৪০ সালে ব্যাবেজ কে তার অ্যানালিটিক্যাল ইঞ্জিন নিয়ে একটি সেমিনার দেয়ার জন্যে ইউনিভার্সিটি অফ টুরিং-য়ে ডাকা হয়েছিল। এখানে একটি যুবক ইতালীয় প্রকৌশলী ও ভবিষ্যতে ইতালির প্রধানমন্ত্রী, লুইগী মেনাবেরা ব্যাবেজের লেকচারকে ফ্রেঞ্চে লিখেছিলেন এবং এই লেখাকে পরবর্তীতে Bibliothekke unidnsn de Geneve হিসেবে ১৮৪২ সালের অক্টোবরে প্রকাশ করা হয়। ব্যাবেজের বন্ধু চার্লস হুইটস্টোন মেনাবেরার পেপারটিকে ইংলিশে অনুবাদ করার জন্যে অ্যাডা লাভলেসকে নিয়োজিত করেন। অ্যাডা এই পেপারটিকে বিভিন্ন নোট দ্বারা প্রসারিত করেন, যা অনুবাদের সাথে যুক্ত করা হয়েছিল। অ্যাডা লাভলেস ব্যাবেজের সাহায্যের সন্নিবেশে এক বছরের বেশিরভাগ সময়ই এটি করে কাটিয়ে দেন। এই নোটগুলো মেনবেরার পেপারের থেকে বেশি বিস্তারিত ছিল ও এটি পরবর্তীতে ট্যায়লোর-এর সাইন্টিফিক মেমৈর্স ১৮৪৩ সালের সেপ্টেম্বর এডিশনে এএএল নামে প্রকাশিত হয়েছিল।
অ্যাডা লাভলেসের এই নোটগুলোকে বর্ণানুক্রমে A থেকে G পর্যন্ত আখ্যায়িত করা হয়েছিল। নোট জি-তে তিনি অ্যানালিটিক্যাল ইঞ্জিনে বের্ণুলির সংখ্যা হিসেব করার জন্যে একটি অ্যালগরিদমের বর্ণনা করেছিলেন। এটিকে প্রথম প্রকাশিত অ্যালগরিদম মনে করা হয় যা কম্পিউটারে ব্যবহারের জন্যে বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছিল এবং এ কারণেই অ্যাডা লাভলেসকে প্রায়ই প্রথম কম্পিউটার প্রোগ্রামার হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। এই ইঞ্জিন কখনো সম্পূর্ণ হয় নি তাই অ্যাডা’র প্রোগ্রামকে কখনোই পরীক্ষণ করা হয়নি।
অ্যাডা’র মৃত্যুর প্রায় এক শতক পরে, ১৯৫৩ সালে ব্যাবেজের অ্যানালিটিক্যাল ইঞ্জিনের উপর অ্যাডা লাভলেসের নোটগুলোকে বি. ভি. বাউডেনের ফাস্টার দ্যান থউট: এ সিম্পোজিয়াম অন ডিজিটাল কম্পিউটিং মেশিন-এ পরিশিষ্ট হিসেবে পুনরায় প্রকাশ করা হয়। এই ইঞ্জিনকে এখন কম্পিউটারের প্রাথমিক মডেল হিসেবে চেনা হয়েছে নোটগুলোকে এখন একটি কম্পিউটার এবং সফটওয়্যারের বর্ণনা ধরা হয়।
কম্পিউটিং ডিভাইসের সম্ভাবনার অন্তর্দৃষ্টি
অ্যাডা লাভলেস তাঁর নোটগুলোতে অ্যানালিটিক্যাল ইঞ্জিন এবং পূর্ববর্তী গণনা যন্ত্রের মধ্যের পার্থক্যের উপর জোর দেন, বিশেষ করে এটির যেকোনো জটিলতার সমস্যা প্রোগ্রামের মাধ্যমে সমাধান করার ক্ষমতা রয়েছে। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে এই যন্ত্রের ক্ষমতা সংখ্যা গণনার তুলনায় অনেক দূর প্রসারিত হতে পারে। তার নোটগুলোতে, তিনি লিখেছেন:
[অ্যানালিটিক্যাল ইঞ্জিন] সংখ্যা ব্যতীত অন্যান্য বিষয়ের উপরেও কাজ করতে পারে, যদি কার্যপ্রথা ভাবগত বিজ্ঞান দ্বারা তাদের মধ্যকার পারস্পরিক সম্পর্ক থাকে এবং যা ইঞ্জিনের কার্যপ্রথা অনুযায়ী ব্যবহৃত চিন্হ বা কৌশল বদল করা যায়... ধরা যাক, উদাহরণস্বরূপ, ঐক্যতান ও সঙ্গীত রচনার বিজ্ঞানের মধ্যে শব্দের পিচের মধ্যে মৌলিক সম্পর্ক রয়েছে যা উল্লেখ্য বর্ণন বা অভিযোজনের প্রতি সংবেদনশীল, তবে ইঞ্জিনটি সম্ভবত যেকোনো জটিলতার বা ব্যাপ্তির বৈজ্ঞানিক ও বিস্তারিত সঙ্গীত তৈরি করতে পারবে।
এই বিশ্লেষণ পূর্ববর্তী গণনা যন্ত্রের সক্ষমতার নিয়ে ধারণার উপর একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি এবং সত্যায়িত হওয়ার এক শতক পূর্বেই আধুনিক কম্পিউটিংয়ের প্রভাব প্রত্যাশা করতে পেরেছিল। যৌক্তিক চিন্হের উপর ভিত্তি করে যেকোনো প্রক্রিয়ায় কম্পিউটিংয়ের প্রয়োগের ক্ষেত্রে অ্যাডা’র এই অন্তর্দৃষ্টিকে ওয়াল্টার আইজাকসন টেক্সটাইলের একটি পর্যবেক্ষণের সাথে বর্ণিত করেন: "যখন তিনি কিছু যান্ত্রিক তাঁত দেখলেন যা পাঞ্চকার্ড ব্যবহার করে সুন্দর ফোঁড়োন সেলাই করার নির্দেশনা প্রদান করে, এটি তাকে ব্যাবেজের ইঞ্জিনের কথা স্মরণ করিয়ে দেয় কেননা সেটি পাঞ্চকার্ড ব্যবহার করে হিসেব করে।"এই অন্তর্দৃষ্টি কে বেটি টোল ও বেনজামিন উওলির মতোন লেখকেরা গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন, এমনকি প্রোগ্রামার জন গ্রাহাম-কামিং ও মনে করেন(তাঁর প্রকল্প প্ল্যান ২৮ এর উদ্দেশ্য প্রথম সম্পূর্ণ অ্যানালিটিক্যাল ইঞ্জিন তৈরি করা)।
কম্পিউটিংয়ের ইতিহাসবিদ এবং ব্যাবেজ বিশেষজ্ঞ দোরণ সোয়াদ অনুসারে:
অ্যাডা এমন কিছু দেখতে পেয়েছিল যা ব্যাবেজ দেখতে পারেনি। ব্যাবেজের ইঞ্জিনের জগৎ সংখ্যা দ্বারা আবদ্ধ ছিল... যা অ্যাডা দেখেছিল...তা হলো যে সংখ্যা পরিমাণ ব্যতীত অন্যান্য সত্ত্বাও প্রকাশ করতে পারে। তাই কোনো যন্ত্র দ্বারা সংখ্যা পরিবর্তন করা গেলে, যদি সেই সংখ্যাগুলো অন্য জিনিস, অক্ষর, স্বরলিপির প্রতিরূপ হতে পারে তাহলে কোনো মেশিন নিয়ম অনুসারে চিন্হ পরিবর্তন করতে পারে, যার মধ্যে একটি দৃষ্টান্ত হলো সংখ্যা। এটি কোনো সংখ্যা গণনা করার যন্ত্র এবং নিয়ম অনুসারে চিন্হ পরিবর্তন করার যন্ত্রের মধ্যে মূল রূপান্তর এবং এটিই গণনা ও কম্পিউটার -- এবং সাধারণ ক্ষেত্রে মধ্যে মূল রূপান্তর-- আর বর্তমান আধুনিক কম্পিউটিংয়ের উচ্চ স্থল থেকে ফেরত তাকিয়ে দেখলে, আমরা যদি সেই রূপান্তরের ইতিহাসকে ওলোট-পালোট করে দেখি, তখন এই রূপান্তর অ্যাডা স্পষ্টভাবে তাঁর ১৮৪৩ সালের পেপার আবিষ্কার করেছিলেন।
মেকানিজম এবং লজিক্যাল কাঠামোর মধ্যে পার্থক্য
১৮৩৪ সালের প্রবন্ধ অনুসারে ডিফারেন্স ইঞ্জিনের কম্পিউটিং প্রক্রিয়া এবং তাঁর রিভিউ করা অ্যানালিটিক্যাল ইঞ্জিনের যৌক্তিক কাঠামোর মধ্যের পার্থক্য বিস্তারিতভাবে বুঝতেন। তিনি মতবাদ দিয়েছিলেন যে দুইটি ক্ষেত্রেই আলাদা আলাদা বিশেষজ্ঞের প্রয়োজন হতে পারে।১৮৩৪ সালের নিবন্ধে] ইঞ্জিনটি কে প্রথমত যান্ত্রিক দিক দিয়ে বর্ননা করে, ইঞ্জিনটি যেই গাণিতিক নীতিগুলো অনুসরণ করে তাতে মৃদু প্রবেশ করা হয়, কিন্তু এই ইঞ্জিনটি বিভিন্ন প্রকার সরণী গননার পদ্ধতি ও কৌশল অনেক সূক্ষ্মভাবে আলোচনা করা হয়। অন্যদিকে এম. মেনাবেরা এটি অনুমান করে নেন যে ইঞ্জিনটি নির্দিষ্ট কিছু কাজ করতে পারে, কিন্তু কিভাবে পারে তার কোনো ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করেন নি; আর তার পুরো মনোযোগ ছিল যন্ত্রটির অনুমান করা ক্ষমতার মধ্যে ওই বৃহৎ বিষয়টির প্রত্যেকটি শাখা একত্রে আনার জন্যে কিভাবে যৌত্তিক বিধিগুলো সাজানো আর মিশ্রিত করা যায় সেটির প্রতি। এটি পরিষ্কার যে, গণনাকারী ইঞ্জিন আবিষ্কারের সময় বিষয়টির দুইটি শাখাই তদন্ত করার জন্যে সমভাবে গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র... তারা অবিচ্ছিন্নভাবে জড়িত, যদিও অন্তর্গত প্রকৃতির মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে, এ কারণেই হয়তো একই ব্যাক্তি উভয় বিষয়তেই সমভাবে প্রগাঢ় বা সফল প্রমাণিত নাও হতে পারে।
অবদান নিয়ে বিতর্ক
যদিও লাভলেসকে প্রথম কম্পিউটার প্রোগ্রামার মনে করা হয়, কিছু জীবনবৃত্তান্তকারী, কম্পিউটার বিজ্ঞানী ও ইতিহাসবিদ অন্যটি দাবি করে।
অ্যালান জি ব্রম লি ১৯৯০ সালে ডিফারেন্স অ্যান্ড অ্যানালিটিক্যাল ইঞ্জিন প্রবন্ধে লিখেছিলেন:তার নোট এ উল্লিখিত একটি বাদে সকল প্রোগ্রামই বাবেজ তিন থেকে সাত বছর পূর্বে তৈরি করেছিলেন। ব্যতিক্রম একটি তার জন্য ব্যাবেজ তৈরি করেছিলেন, যদিও সেটাতে তিনি একটি "বাগ" শনাক্ত করেন। অ্যাডা যে অ্যানালিটিক্যাল ইঞ্জিনের এর জন্য কোনো প্রোগ্রাম তৈরি করেন নি এটার শুধু প্রমাণ নয়, বরং তাঁর ব্যাবেজ এর সাথে চিঠিপত্র দেখায় যে তাঁর প্রোগ্রাম তৈরি করার জ্ঞান ছিল না।ব্রুস কলিয়ের ১৯৭০ সালে হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির পিএইচডি থিসিসে লিখেছিলেন যে লাভলেস "অ্যানালিটিক্যাল ইঞ্জিনে উল্লেখযোগ্য অনুদান দিয়েছিলেন, কিন্তু কোনো প্রমাণ নেই যে তিনি কোনোভাবে এটির নকশা বা তত্ত্বকে উন্নত করেছে।"ইউজিন এরিক কিম এবং বেটি আলেকজান্দ্রিয়া টুলে ধরেন যে লাভলেসকে প্রথম প্রোগ্রামার মনে করা "সঠিক", কেননা ব্যাবেজ তার অ্যানালিটিক্যাল ইঞ্জিনের জন্যে কিছু প্রাথমিক প্রোগ্রাম লিখেছিলেন, যদিও এর বেশিরভাগই কোনোদিন প্রকাশ পায়নি। ব্রমলে উল্লেখ করেন যে ব্যাবেজ ১৮৩৭ থেকে ১৮৪০ পর্যন্ত কয়েক ডজন নমুনা প্রোগ্রাম তৈরি করেছিলেন, যেই সবগুলো লাভলেসের নোটের পূর্বে হয়েছিল।ডরোথি কে. স্টেইন মনে করেন লাভলেসের নোটগুলো "কোনো বৈজ্ঞানিক উন্নয়নের নীল নকশার তুলনায় লেখকের গাণিতিক অনিশ্চয়তা, আবিষ্কারকের রাজনৈতিক লক্ষ্য এবং সবার উপরে লেখাটির সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রসঙ্গের প্রতিফলক।"
ব্যাবেজের উপরে কাজের জন্যে পরিচিত কম্পিউটিং ইতিহাসের বিশেষজ্ঞ দোরণ সোয়াদ ব্যাবেজের অ্যানালিটিক্যাল ইঞ্জিনের উপর একটি লেকচারের সময় অ্যাডা লাভলেসকে নিয়ে আলোচনা করেছিলেন। তিনি বর্ণনা করেছিলেন যে, অ্যাডা লাভলেসকে কোনো গাণিতিক প্রতিভাবান ব্যাক্তির বদলে "প্রতিশ্রুতিশীল আরম্ভকারী", এবং ব্যাবেজ অ্যানালিটিক্যাল ইঞ্জিন ধারণা করার পাঁচ বছর পরে তিনি গণিতের সাধারণ বিষয়গুলো অধ্যয়ন শুরু করেছিলেন, তাই তিনি কোনো এতে কোনো গুরুত্বপূর্ণ যোগদান করেননি, এবং এটি যে তিনি প্রথম কম্পিউটার প্রোগ্রাম লেখার পরিবর্তে কেবল প্রথম কম্পিউটার প্রোগ্রাম প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু সোয়াদ এ বিষয়ে একমত যে, কেবলমাত্র অ্যাডাই অ্যানালিটিক্যাল ইঞ্জিনকে পরিমাণ ব্যতীত সত্ত্বা ব্যক্ত করার ক্ষমতাসম্পন্ন হিসেবে সম্ভাবনা দেখতে পেয়েছিলেন।
স্টিফেন ওলফ্রাম তাঁর বই আইডিয়া মেকার্স-এ লাভলেসের অবদানের উপর নির্ভরশীল ছিলেন। যদিও তিনি এটি শিকার করেন যে লাভলেসের নোটের পূর্বে ব্যাবেজ অ্যানালিটিক্যাল ইঞ্জিনের জন্যে বেশ কিছু অপ্রকাশিত অ্যালগরিদম লিখেছিলেন, তিনি দাবি করেন যে "অ্যাডা’র বার্ণুলির সংখ্যার হিসাবের মতোন এতো জটিল—বা এতো পরিষ্কার কিছুই নেই। ব্যাবেজ অবশ্যই অ্যাডা’র কাজে সাহায্য ও মন্তব্য প্রদান করেছিলেন, কিন্তু অ্যাডাই স্পষ্টভাবে এটির চালক ছিল।" ওলফার্ম তারপর ইঙ্গীত করেন যে লাভলেসের প্রদান অর্জন ছিল ব্যাবেজের চিঠিপত্র থেকে পরিমার্জন করা "যন্ত্রের একটি ভাবগত প্রক্রিয়ার স্পষ্ট প্রদর্শন—যা ব্যাবেজ কখনো করেননি।
মৃত্যু:
১৮৫২ খ্রিস্টাব্দের ২৭শে নভেম্বর ভলাভলেস জরায়ুর ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ৩৬ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। ই অসুখ কয়েকমাস যাবৎ স্থায়ী ছিল, এ সময়ে অ্যানাবেলা দায়িত্ব নিয়েছিল যে অ্যাডা কার সাথে দেখা করতে পারবে এবং অ্যাডা’র সকল বন্ধুবান্ধব ও বিশ্বস্ত মানুষদের বহির্ভূত করে দেয়। তাঁর মায়ের প্রভাবে, অ্যাডা’র মধ্যে একটি ধর্মীয় পরিবর্তন আসে ও অ্যাডাকে প্রভাবিত করে তাকে দিয়ে অতীতের আচরণের জন্যে অনুতপ্ত করানো হয়। এখানে অ্যানাবেলাকে তাঁর নির্বাহক বানানো হয়। তিনি ৩০শে আগস্ট তাঁর স্বামীর নিকট কিছু শিকার করার পরে তাঁর স্বামীর সাথে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় স্বামী তাঁর মৃতুসজ্জা ছেড়ে চলে গিয়েছিল। তিনি স্বামীকে কি বলেছিলেন তা জানা যায়নি। অ্যাডা’র অনুরোধে তাকে নটিংহামশিরের হুকনালে সেইন্ট ম্যারি ম্যাগডালেনের চার্চ-এ তাঁর পিতার পাশে দাফন করা হয়। হর্স লে টাওয়ারের সাথে সংযুক্ত একটি চ্যাপেলে তাঁর ও তাঁর পিতার জন্যে একটি স্মৃতিস্মারক ল্যাটিনে লেখা আছে।
sourse:wikipedia
What's Your Reaction?






