গ্রেগর ইয়োহান মেন্ডেল ||Biography of Gregor Mendel

গ্রেগর ইয়োহান মেন্ডেল ||Biography of Gregor Mendel

May 14, 2025 - 15:49
May 16, 2025 - 20:03
 0  0
গ্রেগর ইয়োহান মেন্ডেল ||Biography of Gregor Mendel

জন্ম:

১৮২২ সালের ২০ জুলাই হেইঞ্জেনডোর্ফ নামক একটি ছোট্ট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন জোহান মেন্ডেল।

পড়ালেখা:

১৮৪৩-৪৬ পর্যন্ত তিন বছর মেন্ডেল সেন্ট থমাসে জীববিজ্ঞান বিষয়ক পড়ালেখা করেন।

মেন্ডেলের কাজের প্রাথমিক সংবর্ধনা:

১৮৬৫ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি এবং ৮ মার্চ মোরাভিয়ার ব্রনোর ন্যাচারাল হিস্ট্রি সোসাইটির দুটি সভায় মেন্ডেল তার গবেষণাপত্র Versuche über Pflanzenhybriden (" উদ্ভিদ সংকরায়নের পরীক্ষা") উপস্থাপন করেন।
মৃত্যু: 

৬ জানুয়ারি ১৮৮৪

জীবনী:

শৈশব থেকেই তার ছিল উদ্ভিদবিজ্ঞানের প্রতি অগাধ ভালোবাসা, যদিও পড়ালেখা করেছেন পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে। জীববিজ্ঞানী ফ্রাঞ্জ উঙ্গারের কাজ তাকে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত করে। সেই থেকে তিনি তার আশ্রমের বাগানে মটরগাছ নিয়ে গবেষণা করতে শুরু করলেন। খুঁজে পেলেন বংশগতির অনেক অজানা তথ্য। পিতামাতার কাছ থেকে সন্তানের মাঝে যেসব বৈশিষ্ট্য বাহিত হয়, সেগুলো নিয়ে গবেষণা করলেন। আর সেই শুরু থেকে ধীরে ধীরে এগোতে এগোতে একসময় আগাগোড়া একজন সন্ন্যাসী থেকে তিনি হয়ে গেলেন প্রজননবিদ্যার জনক! সেই সন্ন্যাসীর নাম গ্রেগর মেন্ডেল।

জন্ম:

১৮২২ সালের ২০ জুলাই হেইঞ্জেনডোর্ফ নামক একটি ছোট্ট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন জোহান মেন্ডেল। জোহান তার জন্মগত নাম। পরবর্তীতে নামের সাথে গ্রেগর যুক্ত হয়। সে যা-ই হোক, গ্রামটি তখন অস্ট্রিয়ান সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল, যা বর্তমানে চেক প্রজাতন্ত্রের অংশ। দরিদ্র কৃষক পরিবারে জন্ম নিলেও অর্থাভাবে শিক্ষা বঞ্চিত থাকতে হয়নি মেন্ডেলকে। কারণ তার কৃষক বাবা তার শিক্ষার ব্যাপারে ছিলেন অসম্ভব আগ্রহী। তিনি জমিজমা (খুব সামান্যই ছিল) বিক্রি করে ছেলের পড়ালেখা চালিয়ে নিয়েছেন! আর অভাবী বাবার কষ্টোপার্জিত অর্থের প্রতিটি পয়সাই যথার্থ কাজে লাগিয়েছিলেন মেন্ডেল। তার হাই স্কুল পরীক্ষার ফলাফল এতোটাই ভালো হলো যে অলোমুচ বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কলারশিপে পড়ালেখার সুযোগ পেয়ে যান তিনি। সেখানে তিনি পদার্থবিজ্ঞান, গণিত ও দর্শনশাস্ত্র নিয়ে পড়াশোনা করেন।

পড়ালেখা:

বিশ্ববিদ্যালয়ে দু’বছর পড়ালেখার পর তার পরিবারের আর্থিক অবস্থা এতোটাই নড়বড়ে হলো যে, তার পক্ষে আর পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। এই অবস্থায় একদিন তার একজন পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক তাকে নিজের কক্ষে ডেকে নিয়ে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাট চুকিয়ে অন্য কিছু করার পরামর্শ দেন। কিন্তু মেন্ডেল জানালেন তার বিজ্ঞান পড়ার প্রবল ইচ্ছার কথা। তখন সেই শিক্ষকটি তাকে বলেছিলেন, “বিজ্ঞানী হতে চাও? বিজ্ঞানী হতে হলে সন্ন্যাসী হতে হবে!” তিনি মেন্ডেলকে ‘অ্যাবে অব সেন্ট থমাস’ নামক একটি আশ্রমে ভর্তি হবার পরামর্শ দেন। সেখানে ভর্তি হলে মেন্ডেলের তিনদিক দিয়েই সুবিধা হতো। প্রথমত, সেখানে পড়ালেখায় কোনো খরচ নেই। দ্বিতীয়ত, কিছু আয়-রোজগারও করা যাবে আর তৃতীয় এবং সর্বশেষ কারণ, সেখানে উদ্ভিদবিজ্ঞান পড়ালেখার জন্য ছিল বিশাল এক বাগান। কিন্তু সমস্যা ছিল একটাই, আশ্রমে পড়ালেখা করতে হলে সেখানকার সন্ন্যাসী হতে হতো। বিজ্ঞানী হবেন কিনা এমন কিছুই ভাবেননি মেন্ডেল। তথাপি বিজ্ঞান পড়ার জন্য ধর্মবিমুখ মেন্ডেলকে হতেই হলো সন্ন্যাসী!

১৮৪৩-৪৬ পর্যন্ত তিন বছর মেন্ডেল সেন্ট থমাসে জীববিজ্ঞান বিষয়ক পড়ালেখা করেন। পরের বছর তিনি ধর্মযাজক হন। ১৮৪৮ সালে তিনি ‘প্যারিশ’ ভুক্ত হন। প্যারিশ বলতে অনেকটা থানার ওসি হবার মতো ব্যাপার। অর্থাৎ একটি নির্দিষ্ট এলাকার প্রধান যাজক হবার পাশাপাশি নিজস্ব গীর্জা লাভ করেন মেন্ডেল। কিন্তু গীর্জার রুটিনবাঁধা জীবন তাকে খুব দ্রুতই বিরক্ত করে তোলে। এক বছর পরই মেন্ডেল গীর্জা ছেড়ে একটি প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন। তবে প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতা করতেও ভালো লাগেনি মেন্ডেলের। তিনি হাই স্কুলে শিক্ষকতার জন্য নিয়োগ পরীক্ষায় বসলেন এবং দুর্ভাগ্যক্রমে অকৃতকার্য হলেন। নিয়োগ পরীক্ষায় অকৃতকার্য হবার বিষয়টি তাকে ভীষণ মনঃপীড়া দেয়। তিনি তাই ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে গেলেন রসায়ন এবং জীববিজ্ঞান বিষয়ে পড়ালেখা করতে। দু’বছর পর ফিরে এসে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়েই প্রথমে শিক্ষকতা শুরু করেন। ১৮৫৬ সালে আরো একবার হাই স্কুল নিয়োগ পরীক্ষা দিলেন মেন্ডেল এবং আবার অকৃতকার্য হলেন। তবে এবার ভাগ্যের দোষে। পরীক্ষার পুরো সপ্তাহ জুড়েই তিনি ছিলেন ভীষণ অসুস্থ।দ্বিতীয়বার অকৃতকার্য হয়ে আশা ছেড়ে দিলেন মেন্ডেল।

তবে হঠাৎই অন্যদিকে ঝোঁক তৈরি হলো তার। তিনি আবহাওয়াবিদ্যা নিয়ে পড়ালেখা শুরু করে দিলেন। ১৮৬৫ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করলেন ‘অস্ট্রিয়ান মেটেওরোলজিক্যাল সোসাইটি’। মজার ব্যাপার হচ্ছে তিনি এই সোসাইটির সদস্য হিসেবে আজীবন যত গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছেন, জীববিজ্ঞান বিষয়েও তার অতগুলো গবেষণা নেই! তবে মেন্ডেলের এই উত্থান-পতন, নিয়োগ পরীক্ষায় বসা এবং দু’বার অকৃতকার্য হওয়া, আবহাওয়াবিদ্যার প্রতি হঠাৎ ঝোঁক তৈরি হবার সময়টাতেও তিনি একটি বিষয় সর্বদা ঠিক রেখেছেন। সেটি হচ্ছে বংশগতিবিদ্যা নিয়ে পড়ালেখা এবং গবেষণা। যদিও ধর্মযাজকের জীবনটা মেন্ডেল গ্রহণ করতে পারেননি, তথাপি তিনি আজীবন সেন্ট থমাস অ্যাবের সদস্য ছিলেন। ১৮৬৮ সালে তিনি এই আশ্রমের ‘অ্যাবট’ বা মঠাধ্যক্ষ হন। অ্যাবট হিসেবে তিনি অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথেই দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

মেন্ডেলের কাজের প্রাথমিক সংবর্ধনা:

১৮৬৫ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি এবং ৮ মার্চ মোরাভিয়ার ব্রনোর ন্যাচারাল হিস্ট্রি সোসাইটির দুটি সভায় মেন্ডেল তার গবেষণাপত্র Versuche über Pflanzenhybriden (" উদ্ভিদ সংকরায়নের পরীক্ষা") উপস্থাপন করেন। কিন্তু বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায় দ্বারা উপেক্ষা করা হয়েছিল। ১৮৬৬ সালে যখন মেন্ডেলের গবেষণাপত্রটি ব্রুনের Verhandlungen des naturforschenden Vereines-এ প্রকাশিত হয়েছিল, তখন এটিকে উত্তরাধিকারের পরিবর্তে সংকরকরণ সম্পর্কে দেখা হয়েছিল, খুব কম প্রভাব ছিল এবং পরবর্তী পঁয়ত্রিশ বছরে প্রায় তিনবার উদ্ধৃত করা হয়েছিল। তার গবেষণাপত্রটি সেই সময়ে সমালোচিত হয়েছিল, কিন্তু এখন এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হিসাবে বিবেচিত হয়।উল্লেখযোগ্যভাবে, চার্লস ডারউইন মেন্ডেলের গবেষণাপত্র সম্পর্কে অবগত ছিলেন না, এবং ধারণা করা হয় যে তিনি যদি এটি সম্পর্কে সচেতন হতেন তবে জেনেটিক্স যেভাবে বর্তমানে বিদ্যমান তা হয়তো আরও আগে ধরে নিতে পারত।মেন্ডেলের বৈজ্ঞানিক জীবনী এইভাবে অস্পষ্ট, অত্যন্ত আসল উদ্ভাবকদের তাদের প্রাপ্য মনোযোগ পেতে ব্যর্থতার উদাহরণ প্রদান করে

মৃত্যু:    ৬ জানুয়ারি ১৮৮৪ (বয়স ৬১)

বর্নো, অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি

What's Your Reaction?

Like Like 0
Dislike Dislike 0
Love Love 0
Funny Funny 0
Angry Angry 0
Sad Sad 0
Wow Wow 0