এডওয়ার্ড উইটেন এর জীবনী | Biography Edward Witten

এডওয়ার্ড উইটেন এর জীবনী | Biography Edward Witten

May 18, 2025 - 11:48
May 25, 2025 - 20:33
 0  1
এডওয়ার্ড উইটেন  এর জীবনী | Biography Edward Witten

পদার্থবিজ্ঞানে গণিতের বসতি ও একজন নিউটন

জন্ম

২৬ আগস্ট ১৯৫১ (বয়স ৭৩)
বাল্টিমোর, ম্যারিল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র

জাতীয়তা

মার্কিন

মাতৃশিক্ষায়তন

ব্র্যান্ডেস বিশ্ববিদ্যালয় (বি.এ.) ইউনিভার্সিটি অব উইসকনসিন, ম্যাডিসন
প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয় (পিএইচডি)

পরিচিতির কারণ

স্ট্রিং তত্ত্ব
এম-তত্ত্ব
কোয়ান্টাম মহাকর্ষ
কোয়ান্টাম ক্ষেত্র তত্ত্ব
সুপারসিমেট্রি

দাম্পত্য সঙ্গী

ক্লেয়ার ন্যাপি
পুরস্কার ম্যাকআর্থার ফেলোশিপ (১৯৮২)
দিরাক মেডেল (১৯৮৫)
অ্যালবার্ট আইনস্টাইন পুরস্কার (১৯৮৫)
ফিল্ডস পদক (১৯৯০)
হেনরি পয়নকেয়ার পুরস্কার (২০০৬)
অ্যালান টি. ওয়াটারম্যান পুরস্কার (১৯৯৫)
ড্যানি হেইনম্যান পুরস্কার (১৯৯৮)
নেমার পুরস্কার (২০০০)
হার্ভে পুরস্কার (২০০৫)
ক্র্যাফোর্ড পুরস্কার (২০০৮)
লোরেন্‌ৎস পদক (২০১০)
আইজ্যাক নিউটন মেডেল (২০১০)
মৌলিক পদার্থবিদ্যা পুরস্কার (২০১২)

বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন

কর্মক্ষেত্র

তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান
সুপারস্ট্রিং তত্ত্ব

প্রতিষ্ঠানসমূহ

ইন্সটিটিউট ফর অ্যাডভান্সড স্টাডি
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়
ক্যালিফোর্নিয়া ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজি
প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়

ডক্টরাল উপদেষ্টা

ডেভিড জোনাথন গ্রস
ডক্টরেট শিক্ষার্থী জোনাথন ব্যাগার
কামরুন ভাফা
স্টিভেন গিডিংস
জিও-গ্যাং ওয়েন
ইভা সিলভারস্টেইন
শমিত কাচরু
সের্গেই গুকভ
মুকুন্দ রাঙ্গামানি
তামার ফ্রাইডম্যান
পিটার সার্ভেক

এডওয়ার্ড উইটেন

 (ইংরেজি: Edward Witten) (জন্ম ২৬শে আগস্ট, ১৯৫১) গণিতে ফিল্ড্‌স পদক বিজয়ী একজন মার্কিন গণিতবিদ  তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন শহরের ইনস্টিটিউট ফর অ্যাডভান্সড স্টাডির নামক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রাকৃতিক বিজ্ঞান বিদ্যালয়ের একজন অবসরোত্তর সাম্মানিক (ইমেরিটাস) অধ্যাপক। উইটেন স্ট্রিং তত্ত্ব, কোয়ান্টাম অভিকর্ষ, অতিপ্রতিসম কোয়ান্টাম ক্ষেত্রে তত্ত্বসমূহে ও গাণিতিক পদার্থবিজ্ঞানের অন্যান্য ক্ষেত্রের একজন গবেষক। উইটেনের গবেষণাকর্ম বিশুদ্ধ গণিতশাস্ত্রের উপরে তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব ফেলেছে।[] ১৯৯০ সালে আন্তর্জাতিক গণিত সংঘ তাঁকে প্রথম পদার্থবিজ্ঞানী হিসেবে গণিতে ফিল্ডস পদক প্রদান করে। পদার্থবিজ্ঞানে অন্তর্দৃষ্টির জন্য (যেমন সাধারণ আপেক্ষিকতা ক্ষেত্রে ১৯৮১ সালে ধনাত্মক শক্তি উপপাদ্যটির প্রমাণ) এবং জোনসের অপরিবর্তনীয়গুলিকে ফাইনম্যান সমগ্রক হিসেবে ব্যাখ্যা করার জন্য তাঁকে এই পুরস্কার দেওয়া হয়। তাঁকে কার্যত এম-তত্ত্বের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে গণ্য করা হয়।

জীবনী

উইটেন ম্যারিল্যান্ডের বাল্টিমোরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৭১ সালে ব্যাচেলর্স ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞানে ১৯৭৪ সালে এমএ এবং ১৯৭৬ সালে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। তার পিএইচডি উপদেষ্টা ছিলেন নোবেল বিজয়ী পদার্থবিজ্ঞানী ডেভিড জোনাথন গ্রস। তিনি ১৯৮০ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত প্রিন্সটনে পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

১৯৮৮ সালের ঘটনা। গণিতের অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার ফিল্ডস মেডাল দেওয়া হলো পদার্থবিদ এডওয়ার্ড উইটেনকে। কিন্তু উইটেনকে এই সম্মাননা দেওয়ার সিদ্ধান্তের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করলেন গণিত সাম্রাজ্যের কিছু বোদ্ধা। তাঁদের এ রকম রক্ষণশীল চিন্তাধারার পেছনে যুক্তি ছিল, উইটেন গণিতবিদ নন। তাঁর যেমন গণিতে কোনো প্রথাসিদ্ধ স্বীকৃত ডিগ্রি নেই, তেমনি তাঁর কোনো অবদান নেই বিশুদ্ধ গণিতেও। সে সময় সর্বজন শ্রদ্ধেয় গণিতবিদ স্যার মাইকেল আটিয়াহ্ উইটেনকে সম্মাননা দেওয়া জোরালোভাবে সমর্থন করেছিলেন।

কারণ, উইটেনের গবেষণার কারণে গণিতের কয়েকটি শাখায় বেশ কয়েকটি ধাঁধার সমাধান মিলেছিল। এই ঘটনার জেরে ‍‍‍‍‘গণিত কী? গণিতবিদই বা কে?’—এসব প্রশ্ন নিয়ে একাডেমিক জগতে বেশ ভালো একটা আলোচনা জমে ওঠে, যার সুরাহা বোধ হয় এখনো হয়নি।

পাঠকের কাছে এই ঘটনা বর্ণনা করার কারণ হলো, বিজ্ঞান ও গণিতের বিভিন্ন শাখার মধ্যে এই বিভাজন মানবসভ্যতার ইতিহাসে অত্যন্ত নতুন। এই তো ঊনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় অর্ধে প্রাকৃতিক দর্শন ভেঙে তৈরি হয় রসায়ন, পদার্থবিজ্ঞান ইত্যাদি জ্ঞানের শাখা। তাই মহাসমুদ্রে এসে যেমন দেশের ভৌগোলিক সীমারেখার কোনো অর্থ হয় না, ঠিক তেমনি জ্ঞানরাজ্যের পরিসীমায় কে গণিতবিদ, আর কে পদার্থবিদ—এই অহেতুক বিতর্ক করা নেহাত অর্বাচীনের কাজ ছাড়া আর কিছু নয়।

আবিষ্কার:

নিউটনের এই আবিষ্কার থেকে আমরা প্রথম যে শিক্ষা পাই তা হলো, (পদার্থ) বিজ্ঞানের হাত বেশ লম্বা। এর আগে সাধারণ মানুষের ধারণা ছিল, পৃথিবীর বুকে যেসব ‘পার্থিব’ (Terrestrial) ঘটনা ঘটে, তার মৌলিক আইন (আমি ‘সূত্র’ শব্দটি ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকছি) মহাকাশে চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ ও তারকামণ্ডলের জন্য প্রযোজ্য ‘স্বর্গীয়’ (Celestial) আইন থেকে ভিন্ন। নিউটনের মাধ্যাকর্ষণ সূত্রের আবিষ্কার এই দুই জগৎকে একই ছাদের নিচে নিয়ে এল। এই চিন্তাধারার সূত্র ধরেই আমরা আজ পৃথিবীর বুকে গণিতের হিসাব করে দূরের গ্যালাক্সির বিভিন্ন রাশি নির্ধারণের সাহস দেখাই।

নিউটন এখানেই থেমে যেতে পারতেন। কিন্তু তিনি তাঁর সূত্রের গাণিতিক বিশ্লেষণ নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন না। ফলে তিনি তৈরি করেন গণিতের নতুন একটি শাখা, যাকে আজ আমরা ক্যালকুলাস বলে অভিহিত করে থাকি।

তবে নিউটন তাঁর এই গণিতকে ক্যালকুলাস বলতেন না। তিনি একে বলতেন ফ্লাক্সন প্রণালি (The method of fluxions)। আমরা পরে দেখতে পাই, নিউটন ছাড়া স্বাধীনভাবে লিবনিজও একই গাণিতিক পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছিলেন। অবশ্য তাঁর সংকেত ও যুক্তিতে ভিন্নতা ছিল। বর্তমানে ঐতিহাসিক হদিস পাওয়া যাচ্ছে যে চতুর্দশ শতাব্দীতে দক্ষিণ ভারতের গণিতবেত্তাদের মধ্যে ক্যালকুলাসের মতো গণিতের প্রচলন ছিল। তবে এসব দাবি সত্য প্রমাণিত হলেও নিউটনের কৃতিত্ব কোনোক্রমেই ছোট হবে না। এটা বুঝতে গেলে আমাদের পদার্থবিজ্ঞানের হাত ধরে কীভাবে ক্যালকুলাসের জন্ম, তার দিকে পেছনে ফিরে তাকাতে হবে।

গ্যালিলিওর দেওয়া গাণিতিক প্রকাশ x= ½ a t2 আমাদের কাছে অত্যন্ত পরিচিত হলেও এই সমীকরণের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হচ্ছে, এর মধ্যে কোনো কার্যকারণ সম্পর্ক দেওয়া নেই। অর্থাৎ ত্বরণ ঘটার পেছনে কারণ কী, তার ব্যাখ্যা এই সহজ সমীকরণের মধ্যে দেওয়া নেই। তবে পার্থিব বস্তুর স্বাভাবিক চলমান অবস্থা কী হবে, তা সঠিকভাবে চিহ্নিত করে গিয়েছিলেন গ্যালিলিও। সেটা অ্যারিস্টটলীয় সংকীর্ণ ধারণার চেয়ে ঠিক ছিল। অ্যারিস্টটলের ধারণা ছিল, বাইর থেকে কোনো ‘কিছু’ বস্তুর ওপর কাজ না করলে তা স্বভাবতই স্থির অবস্থায় থাকবে। কিন্তু তার পরিবর্তে গ্যালিলিও বলেন, বস্তুটি সমবেগে চলমান থাকবে। এই উপসংহারে আসার জন্য গ্যালিলিওকে অবশ্য বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হয়েছিল। অ্যারিস্টটল তাঁর সিদ্ধান্তের সমর্থনে আসলেই কিছু নাড়াচাড়া করেছিলেন কি না, তার কোনো ঐতিহাসিক প্রমাণ সম্পর্কে আমার জানা নেই।

তবে মহাকর্ষ আবিষ্কারের ফলে নিউটন বেশ কয়েকটি নতুন ধারণা অবতারণার সুযোগ পেলেন। প্রথমত, বস্তুর ওপর দূর থেকে ‘বল’ (Force) প্রয়োগের সুযোগ হলো, যেটাকে আমরা ইংরেজিতে Action at a distance বলি। এর আগে আমরা বল প্রয়োগ করতে হলে বস্তুর সংস্পর্শে আসার ধারণার সঙ্গে পরিচিত ছিলাম। দ্বিতীয়ত, বাইরে থেকে একই বল প্রয়োগ করে ভিন্ন ভিন্ন বস্তুর ত্বরণের মান দেখে আমরা বুঝতে পারি যে ‘ভর’ বলে কিছু আছে। তৃতীয়ত, নিউটনের সবচেয়ে তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণ হলো, এই ত্বরণ ও বলের কার্যকারণ সম্পর্কটি তাৎক্ষণিক। একটা উদাহরণ দিয়ে বলি। ধরা যাক, আমি একটি ক্রিকেট বলকে ব্যাট দিয়ে আঘাত করলাম। এর ফলে বলটির ত্বরণ ঘটবে, মানে বেগের পরিবর্তন ঘটবে। প্রশ্ন হলো, পরিবর্তনটি কখন ঘটবে আর কোন বেগটির কথা আমরা চিন্তা করব, গড় বেগের না কোনো নির্দিষ্ট সময়ের বেগের? আবার, আনুভূমিকভাবে আঘাত করলে বেগের উল্লম্ব অংশের কী পরিবর্তন হবে—এ রকম বহু প্রশ্ন করা যায়। এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে নিউটনকে অন্তরকলনের (Differentiation) ধারণা নিয়ে আসতে হয়।

বর্তমানে উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষাক্রমে ক্যালকুলাসের অর্ধাংশ হিসেবে শিক্ষার্থীরা অন্তরকলন শেখে। তবে অন্তরকলনের কাছাকাছি ধারণা নিউটন ছাড়া তাঁর সমসাময়িক অন্য গণিতবিদ ও বিজ্ঞানীদের কাজের মধ্যেও পাওয়া যায়। সে জন্য নিউটনকে এই গণিত আবিষ্কারের সম্পূর্ণ কৃতিত্ব না দিলেও চলে।

অন্যদিকে নিউটনকে তাঁর জীবনের অনেকটা সময় নিয়ে কাজ করতে হয়েছে সমাকলনের (Integration) উদ্ভাবন নিয়ে। এর কারণ বুঝতে হলে আমাদের পুনরায় নিউটনের মহাকর্ষ আবিষ্কারে ফিরে যেতে হবে। মহাকর্ষকে সর্বজনীন হতে হলে এই সূত্র প্রণয়ন করতে হবে ভরবিশিষ্ট যেকোনো দুটি কণার জন্য। কিন্তু সেটা আপেল ও পৃথিবীর ক্ষেত্রে প্রয়োগ করতে হলে প্রথমেই আমাদের যে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় তা হলো, আপেলের মতো পৃথিবী যে তার বাইরের সব বস্তুকে কেন্দ্রের দিকে টানে, সেটা প্রমাণ করা।

 এটা আবার করতে গিয়ে নিউটনকে দুটো আলাদা উপপাদ্যের অবতারণা করতে হয়, যাদের মধ্যে প্রথমটিকে জ্যামিতি ব্যবহার করে নিউটন খুব সহজেই প্রমাণ করতে পারেন। কিন্তু দ্বিতীয়টি প্রমাণ করা নিউটনের পক্ষে প্রথমে সম্ভব হয়নি। বলা হয়ে থাকে, এই বাহ্যিক শেল (External shell) উপপাদ্য প্রমাণ করার জন্যই সমাকলনের উদ্ভাবন করেন নিউটন। সে জন্য তাঁকে প্রায় চল্লিশ বছরের মতো কাজ করতে হয়েছে।

শেষ করি নিউটনের কাজ কীভাবে গণিতে এক বিপ্লব ঘটিয়েছিল, তার একটি উদাহরণ দিয়ে। পিথাগোরাসের সময় থেকে বিজ্ঞানী আর গণিতবিদেরা পাইয়ের (π) মান নির্ণয় করছিলেন বৃত্তের পরিধি আর ব্যাসার্ধের অনুপাত নেওয়ার চেষ্টা করে। এ জন্য তাঁরা বৃত্তকে একটি সুষম বহুভুজ (Polygon) ধরে নিয়ে তার বাহুর সংখ্যা বাড়িয়ে কে কার চেয়ে দশমিকের পর কত বেশি সংখ্যা নির্ণয় করতে পারেন, তার এক অসুস্থ প্রতিযোগিতায় নেমেছিলেন। স্বয়ং আর্কিমিডিস এ জন্য ব্যবহার করেছিলেন ৯৬ বাহুর বহুভুজ। ১৬৩০ সালে অস্ট্রীয় জ্যোতির্বিদ ক্রিস্টোফ গ্রিনবার্গার ব্যবহার করেছিলেন ১০৪০ বাহুর বহুভুজ। এর মাধ্যমে দশমিকের পর ৩৮ ঘর পর্যন্ত পাইয়ের মান নির্ধারণ করেছিলেন তিনি! আমরা নিশ্চিত, তিনি এই কাজের পেছনে তাঁর প্রায় পুরো জীবনকালই ব্যয় করেছিলেন।

কিন্তু সমাকলন আবিষ্কারের পর ঘটনাটা দাঁড়াল এ রকম—একক ব্যাসার্ধের একটি অর্ধবৃত্তের সমীকরণ হলো y =√(1-x2)। এ কারণে তার ক্ষেত্রফলের মানকে সহজেই লেখা যায়—এখন ইচ্ছা করলে দ্বিপদ উপপাদ্য ব্যবহার করে যে কেউই বাঁ দিকের বর্গমূলকে প্রসারণ করে যত খুশি ঘর পর্যন্ত পাইয়ের মান নির্ণয় করতে পারে। তাতে কাগজ ও সময় দুটোই কম লাগবে।

১৮শ শতক

১৮শ শতকে ইউরোপ মহাদেশে ক্যালকুলাস গাণিতিক বিশ্লেষণের প্রধান হাতিয়ারে পরিণত হয়। গণিতবিদেরা পদার্থবিজ্ঞান, জ্যোতির্বিজ্ঞান ও প্রকৌশলের বিভিন্ন সমস্যার উপর ক্যালকুলাস প্রয়োগ করেন। এগুলি করতে গিয়ে তাঁরা গণিতের নতুন নতুন শাখারও উদ্ভাবন করেন।

জ্যামিতিতে ফরাসি গণিতবিদ গাসপার মোঁজ্‌ বর্ণনামূলক জ্যামিতি নামের শাখার উন্নয়ন ঘটান। মোঁজ যখন ড্রাফটসম্যান ছিলেন, তখন তাঁকে এমন একটি প্রতিরক্ষামূলক দেয়াল পরিকল্পনা করতে বলা হয়, যা শত্রুর অবস্থান নির্বিশেষে রক্ষা করা যাবে। মোঁজ তাঁর নিজের উদ্ভাবিত জ্যামিতিক কলাকৌশলের উপর ভিত্তি করে শত্রুর আক্রমণ-রেখা নির্ণয় করেন এবং দেয়ালের পরিকল্পনাটি রচনা করেন। তাঁর বর্ণনামূলক জ্যামিতির পদ্ধতি প্রকৌশল ও নির্মাণ-সংক্রান্ত নানা সমস্যা সমাধানে কাজে লাগে।

আরেক ফরাসি গণিতবিদ জোসেফ লুই লাগ্রঁজ বিশুদ্ধ গণিতের প্রায় সকল ক্ষেত্রে অবদান রাখেন। এদের মধ্যে ছিল অন্তরক সমীকরণ, ভেদকলন, সম্ভাবনা তত্ত্ব, এবং সমীকরণ তত্ত্ব। এর বাইরে লাগ্রঁজ বলবিজ্ঞান ও জ্যোতির্বিজ্ঞানের ব্যবহারিক সমস্যার সমাধানেও তাঁর গাণিতিক প্রতিভাকে কাজে লাগান। তাঁর জীবনের সেরা কাজ ১৭৮৮ সালে প্রকাশিত Mechanique Analytique (বাংলায় বিশ্লেষণী বলবিজ্ঞান)। এই বইতে লাগ্রঁজ ভেদকলন ব্যবহার করে একটিমাত্র সরল অনুমানের উপর ভিত্তি করে প্রবাহী ও কঠিন পদার্থসমূহের বলবিজ্ঞান বর্ণনা করেন।

১৮শ শতকের শ্রেষ্ঠ গণিতবিদ সুইজারল্যান্ডের লিওনার্ড অয়লারের মত আর কেউ এত বেশি গবেষণাকাজ প্রকাশ করেননি। বিশুদ্ধ ও ফলিত গণিতের সর্বত্র তাঁর আনাগোনা ছিল। লাগ্রঁজের আগেই তিনি বলবিজ্ঞানের ওপর গুরুত্বপূর্ণ কাজ প্রকাশ করেন। ধূমকেতু ও গ্রহসমূহের কক্ষপথ সংক্রান্ত গবেষণার জন্য তিনি অনেক পুরষ্কার পান। কিন্তু তাঁর সেরা কাজ নিঃসন্দেহে বিশুদ্ধ গণিতের উপর। ১৭৪৮ সালে প্রকাশিত Introductio in analysin infinitorum-এ তিনি বক্ররেখার জ্যামিতির দিক থেকে নয়, বরং ফাংশনের দিক থেকে ক্যালকুলাস নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি সংখ্যাতত্ত্ব ও অন্তরক জ্যামিতিতেও (যেখানে বক্ররেখা ও বক্ররৈখিক জগতের বৈশিষ্ট্যাবলি অন্তরকলনের সাহায্যে ব্যাখা করা হয়) অবদান রাখেন।

বিংশ শতাব্দীর গণিত

বিংশ শতাব্দীতে গণিতের সমস্ত ক্ষেত্রে দ্রুত উন্নয়ন ঘটে। একদিকে গণিতের ভিত্তিতে যুক্তিবিজ্ঞানের ব্যবহার আরও সুদৃঢ় হয়, অন্যদিকে দর্শনশাস্ত্রে প্রতীকী যুক্তিবিজ্ঞানের উন্নয়নে গণিত বড় ভূমিকা রাখে। কেবল দর্শন নয়, গণিত পদার্থবিজ্ঞানের আপেক্ষিকতা তত্ত্ব ও কোয়ান্টাম তত্ত্বেও অবদান রাখে। গণনামূলক গণিত, ক্রীড়া তত্ত্ব ও বিশৃঙ্খলা তত্ত্বের মত নতুন নতুন শাখার আবির্ভাব ঘটে। পদার্থবিজ্ঞান ও অর্থশাস্ত্র গণিতের ব্যবহারের মাধ্যমে তাত্ত্বিক ভিত্তি সুদৃঢ় করে। গণিতের সবচেয়ে বিমূর্ত ধারণাগুলিও ব্যবহারিক কাজে লাগতে শুরু করে, এবং তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক গণিতের ভেতরে সীমারেখা টানা দুরূহ হয়ে পড়ে।

গণিতের ভবিষ্যৎ

হিলবার্ট ২০শ শতকের শুরুতে ২৩টি সমস্যা প্রস্তাব করেছিলেন এবং আশা করেছিলেন যে আগামী ১০০ বছর গণিতবিদেরা এই সমস্যাগুলির সমাধানে ব্যস্ত থাকবেন। কিন্তু ২১শ শতকের শুরুতে এসেও কতগুলি সমস্যার আজও সমাধান হয়নি, যেমন মৌলিক সংখ্যা সম্পর্কিত রিমান অনুকল্প।

রয়ে যাওয়া পুরনো সমস্যা আর প্রতিনিয়ত জন্ম নেওয়া নতুন নতুন সমস্যা এটাই নিশ্চিত করে যে ২১শ শতক জুড়ে গাণিতিক গবেষণায় চ্যালেঞ্জ ও প্রাণচাঞ্চল্যের অভাব হবে না। হিলবার্টের রেখে যাওয়া দৃষ্টান্তের অনুকরণে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লে ম্যাথেম্যাটিক্‌স ইন্সটিটিউট ২০০০ সালে গণিতের অসমাধানকৃত সমস্যাগুলির সমাধানের জন্য মিলেনিয়াম পুরষ্কারের ঘোষণা করেছে। ঘোষণাকৃত ৭টি সমস্যার মধ্যে রিমান অনুকল্পও রয়েছে। এর যেকোনটি সমাধান করার জন্য একজন গণিতবিদ এক মিলিয়ন ডলার পুরষ্কার পাবেন।

soruse ; wikipedia 

What's Your Reaction?

Like Like 0
Dislike Dislike 0
Love Love 0
Funny Funny 0
Angry Angry 0
Sad Sad 0
Wow Wow 0