আশরাফ হাকিমি এর জীবনী | Biography of Achraf Hakimi
আশরাফ হাকিমি এর জীবনী | Biography of Achraf Hakimi

ব্যক্তিগত তথ্য |
|||
---|---|---|---|
পূর্ণ নাম |
আশরাফ হাকিমি মুহ | ||
জন্ম |
৪ নভেম্বর ১৯৯৮ | ||
জন্ম স্থান |
মাদ্রিদ, স্পেন | ||
উচ্চতা |
১.৮১ মিটার (৫ ফুট ১১+১⁄২ ইঞ্চি) | ||
মাঠে অবস্থান |
রক্ষণভাগের খেলোয়াড় | ||
ক্লাবের তথ্য |
|||
বর্তমান দল
|
পারি সাঁ-জেরমাঁ |
||
জার্সি নম্বর |
২ | ||
যুব পর্যায় |
|||
২০০৫–২০০৬ |
ওফিগেভি | ||
২০০৬–২০১৬ |
রিয়াল মাদ্রিদ | ||
জ্যেষ্ঠ পর্যায়* |
|||
বছর |
দল | ম্যাচ | (গোল) |
২০১৬–২০১৭ |
রিয়াল মাদ্রিদ কাস্তিয়া | ২৮ | (১) |
২০১৭–২০২০ |
রিয়াল মাদ্রিদ | ৯ | (২) |
২০১৭–২০১৯ |
→ বরুসিয়া ডর্টমুন্ড (ধার) | ৫৪ | (৭) |
২০২০–২০২১ |
ইন্টার মিলান | ৩৭ | (৭) |
২০২১– |
পারি সাঁ-জেরমাঁ | ১ | (১) |
আশরাফ হাকিমি, জীবনযোদ্ধা মায়ের সংগ্রামী ছেলে
আশরাফ হাকিমি মুহ
(আরবি: أشرف حكيمي; জন্ম: ৪ নভেম্বর ১৯৯৮), আশরাফ নামেই অধিক পরিচিত, হলেন স্পেনে জন্মগ্রহণকারী মরক্কোর একজন পেশাদার ফুটবলার, যিনি ফরাসী পেশাদার লিগের শীর্ষস্তর লিগ ১ ক্লাব পারি সাঁ-জেরমাঁ এবং মরক্কো জাতীয় দলের হয়ে একজন রক্ষণভাগের খেলোয়াড় হিসেবে খেলেন। যদিও তিনি মূলত একজন রাইট ব্যাক, তবুও তিনি মাঝে মাঝে একজন সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার হিসেবেও খেলে থাকেন।
জন্ম ও প্রাথমিক জীবন
-
জন্ম: ৪ নভেম্বর ১৯৯৮, মাদ্রিদ, স্পেন
-
উচ্চতা: ১.৮১ মিটার
-
জাতীয়তা: মরক্কো
-
পরিবার: মরক্কোর অভিবাসী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন; ছোটবেলা থেকেই ফুটবলের প্রতি আগ্রহী ছিলেন।
ক্লাব ক্যারিয়ার
রিয়াল মাদ্রিদ (২০১৬–২০১৮)
হাকিমি রিয়াল মাদ্রিদের যুব একাডেমি "লা ফাব্রিকা" থেকে উঠে আসেন। ২০১৭ সালে মূল দলে অভিষেক করেন এবং ২০১৮ সালে ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ জয়ী দলের সদস্য ছিলেন।
দোহা:
হিসেবটা ছিল এইরকম, পেনাল্টি শুট-আউটে তিনি গোল করলেই মরক্কো পৌঁছে যাবে কোয়ার্টার ফাইনালে । এমন সুবর্ণ সুযোগ কেউ ছাড়ে! ২৪ বছরের আশরাফ হাকিমি (Achraf Hakimi) গোল করলেন। মরক্কো (Morocco) পৌঁছে গেল ইতিহাসে। গোটা দল যখন সেলিব্রেশনে ব্যস্ত আশরাফের চোখ তখন মা সাঈদাকে খুঁজে চলেছে। গ্যালারি টপকে পৌঁছে গেলেন মায়ের কাছে। আজকের যাবতীয় সাফল্যের শেকড় যে ওখানেই লুকিয়ে। অতীতকে ভুললে চলবে? বিখ্যাত মানুষরা অতীত ভোলেন না। ভুলতে পারেন না। সংগ্রামের দিনগুলোই তাঁদের জীবনের অনুপ্রেরণা। মাদ্রিদের ছোট্ট ঘর ফুটবলার হয়ে ওঠার স্বপ্ন। রিয়াল মাদ্রিদ থেকে পিএসজি। ক্লাব ফুটবলে সতীর্থ লিওনেল মেসি, নেইমার জুনিয়র, কিলিয়ান এমবাপে। জীবনসঙ্গিনী হিসেবে পেয়েছেন অভিনেত্রী, মডেল হিবা আইবককে। রয়েছে সন্তান। অর্থ, খ্যাতির অভাব নেই। এত প্রতিপত্তি সত্ত্বেও শেকড় ভুলতে পারেননি বলেই জন্মস্থান স্পেন ছেড়ে জাতীয় দলে মরক্কোর জার্সি গায়ে চড়িয়েছেন। জন্ম, বেড়ে ওঠা যে দেশে, সেই স্পেনকেই বিশ্বকাপ থেকে বিদায়ের পথ দেখিয়েছেন!
অতীত জীবন এক বর্ণও লুকোননি। বরং জোর গলায় ফুটবলার হিসেবে গড়ে তোলার পিছনে মায়ের অবদান তুলে ধরেছেন। হাকিমির জন্মের আগে হাসান ও সাঈদা আফ্রিকা ছেড়েছিলেন আরও ভালোভাবে জীবনধারণের আশায়। ক্যাসাব্লাঙ্কা থেকে গেটাফে-তে এসে ঠাঁই নেওয়ার পর আশরাফের জন্ম। হাসান রাস্তায় বসে ফল বিক্রি করতেন, সাঈদা বাড়ি পরিষ্কারের কাজ। হাকিমি বলেছেন, “এমন জায়গা থেকে আমার পরিবার উঠে এসেছিল যেখানে কাজের সুযোগ খুব কম। ওদের প্রতিনিয়ত লড়াই করে বাঁচতে হত। পরিবারে অভাব অনটন ছিল। বাবা-মা তাঁদের জীবনের মূল্যবান দিনগুলি আমার ভবিষ্যতের গড়ার জন্য ব্যয় করেছেন। এখন আমি তাঁদের জন্য রোজ লড়াই করি। বাবা-মার লড়াইটা বর্ণনা করার মতো শব্দ আমার কাছে নেই।”
স্থানীয় দল সিডি কলোনিয়া ওফেগেভিতে খেলা শুরু করেছিলেন খুব ছোট বয়সে। চিঠি মারফত বাড়িতে রিয়াল মাদ্রিদের প্রস্তাব আসে। প্রথমে ভেবেছিলেন কেউ মজা করছে। চিঠি দেখে হাসানও ছেলের লেগ পুলিং শুরু করেন। যখন বুঝলেন মজা নয় পুরোটাই বাস্তব, হাসান-সাঈদা হয়তো চোখের জলে ভেসেছিলেন। ২০১৬ সালে কিশোর হাকিমির উপর ফিফার নিষেধাজ্ঞার খাঁড়া নেমে আসে। বেআইনিভাবে বিদেশ থেকে নাবালক ফুটবলারদের সই করাচ্ছে রিয়াল মাদ্রিদ। এই অভিযোগ খতিয়ে দেখেই ফিফার নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েন হাকিমি। লোনে বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের হয়ে খেলেছেন। ২০১৮ সালে ডর্টমুন্ডে থাকাকালীন প্রেমে পড়েন ১২ বছরের বড় স্প্যানিশ অভিনেত্রী হিবা আইবকের সঙ্গে।
শেষ আটে মরক্কোর স্বপ্ন টিকে রয়েছে পর্তুগালের উপর। কাতারে আফ্রিকান রূপকথা চলবে নাকি ইতি ঘটবে? সেদিনও আল থুমামার গ্যালারিতে থাকবেন হাসান, সাঈদা, হিবা। আশরাফের পায়ে এক নতুন ইতিহাস গড়ার অপেক্ষায়।
বোরুশিয়া ডর্টমুন্ড (২০১৮–২০২০)
দুই বছরের ধারে জার্মান ক্লাব বোরুশিয়া ডর্টমুন্ডে খেলেন, যেখানে তিনি ৫৪টি ম্যাচে ৭টি গোল করেন এবং ২০১৯ সালে ডিএফএল-সুপারকাপ জয় করেন।
ইন্টার মিলান (২০২০–২০২১)
২০২০ সালে ইন্টার মিলানে যোগ দেন এবং ২০২০–২১ মৌসুমে ক্লাবকে ১১ বছর পর সেরি আ শিরোপা জয়ে সাহায্য করেন।
প্যারিস সেন্ট-জার্মেই (২০২১–বর্তমান)
২০২১ সালে €৬৮ মিলিয়ন ট্রান্সফারে PSG-তে যোগ দেন। ২০২৫ সালের মে পর্যন্ত তিনি ক্লাবের হয়ে ১১০টি ম্যাচে ১৭টি গোল করেছেন। তিনি ক্লাবের দ্বিতীয় অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এবং ২০২৯ সাল পর্যন্ত চুক্তি নবায়ন করেছেন।
‘আরব সংস্কৃতি’ কে ভালোবেসে হাকিমি বদলালেন ইতিহাস
ওই মুহূর্তে কী ভাবছিলেন আশরাফ হাকিমি? নতুন ইতিহাস লেখার চাপ তিনি কী একটুও অনুভব করেননি?
বোধ হয় না। অনুভব করলে কী আর ওই সময় ‘পানেনকা’ শটে বল জালে জড়াতে পারতেন! চাপের মুখে মাথা ঠান্ডা রেখে পারফর্ম করার শিক্ষাটা হাকিমি সম্ভবত নিজের জীবন থেকেই পেয়েছেন। হাকিমিকে ফুটবলার বানাতে একটা সময় মাদ্রিদের রাস্তায় ফেরি করে মালামাল বিক্রি করতেন তাঁর বাবা, বাসাবাড়ি পরিষ্কারের কাজ করতেন তাঁর মা। এই গল্পটা তো অনেকেরই জানা।
হাকিমির ওই শটে কী ইতিহাস লেখা হলো, সেটা জানিয়ে রাখা ভালো। মরক্কো তাদের বিশ্বকাপ ইতিহাসে প্রথমবার কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার সুযোগ পেয়েছে। এর আগে ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলেছিল আটলাসের সিংহরা। হাকিমির জন্ম আরও ১২ বছর পর। মরক্কো চতুর্থ আফ্রিকান দেশ ও প্রথম আরব দেশ হিসেবে শেষ আটে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে।
ইতিহাস কিন্তু ভিন্নভাবেই লেখা হতে পারত। তাঁর শটে যে দেশটা বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিয়েছে, হতেই পারত কাতার বিশ্বকাপে সেই স্পেনের প্রতিনিধিত্ব করছেন এই হাকিমি। ফ্রান্সের হয়ে দুর্দান্ত ছন্দে থাকা কিলিয়ান এমবাপ্পে একটা ভালো উদাহরণ হতে পারেন এখানে। এই ফুটবলার ফ্রান্সের হয়ে খেললেও, তাঁর নাড়িপোঁতা কিন্তু আফ্রিকাতেই। আর এক দেশে জন্ম, তবে খেলেন অন্য দেশের হয়ে—ফুটবলে তো এমনটা হরহামেশাই হয়।
শুধু সেই ঠান্ডা মাথার পেনাল্টি নেওয়ার কারণেই তাঁকে নিয়ে এত কথা। মোটেই নয়। মরক্কোর হয়ে পুরো বিশ্বকাপেই পারফর্ম করেছেন এই রাইট ব্যাক। ক্লাবের হয়ে খেলার সময় শুধু ডান প্রান্তে ফেরারির গতিতে ছুটতে দেখা যেত হাকিমিকে। তবে বিশ্বকাপে তাঁর দলের জন্য তিনি দৌড়েছেন পুরো মাঠজুড়েই।
জাতীয় দলের হয়ে পারফর্ম করতে কেন এত মরিয়া থাকেন হাকিমি। সে উত্তর অবশ্য তাঁর কথাতেই পাওয়া যায় ‘ক্লাব ফুটবলে খেলা মানে শুধু একটি শহরের জন্য খেলা। আর দেশের হয়ে খেলা মানে পুরো জাতির জন্য খেলা। এই খেলা মানে পূর্বপুরুষদের জন্য খেলা।’ মাত্র ৭ বছর বয়সে ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদের নজরে আসেন হাকিমি। খেলেছেন রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে। বর্তমানে খেলেন প্যারিস সেন্ট জার্মেই তথা পিএসজিতে।
হাকিমির নায়ক হওয়ার রাতে মরক্কো পেয়েছে আরও এক ‘চরিত্র’। যার নাম ইয়াসিন বুনু। স্পেনের পাবলো সারাবিয়া, কার্লোস সোলেরে ও সের্হিও বুসকেটসের পেনাল্টি শট রুখে দিয়ে তিনিই তো হাকিমির জন্য মঞ্চটা তৈরি করলেন।
আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার
-
জাতীয় দলের অভিষেক: ২০১৬ সালে, মাত্র ১৭ বছর বয়সে
-
ম্যাচ সংখ্যা: ৮৩টি আন্তর্জাতিক ম্যাচে ১০টি গোল (মার্চ ২০২৫ পর্যন্ত)
-
বিশ্বকাপ অংশগ্রহণ: ২০১৮ ও ২০২২
-
আফ্রিকান কাপ অব নেশনস: ২০১৯, ২০২১, ২০২৩
-
২০২৪ অলিম্পিক গেমস: মরক্কো দলের ওভারএজ খেলোয়াড় হিসেবে অংশগ্রহণ করেন।
অর্জন ও সম্মাননা
-
মার্ক-ভিভিয়েন ফোয়ে পুরস্কার: ২০২৫ সালে, লিগ ১-এর সেরা আফ্রিকান খেলোয়াড় হিসেবে
-
CAF বর্ষসেরা দল: ২০১৯, ২০২৩
-
ইউরোপীয় ক্লাব শিরোপা: রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ (২০১৮), ইন্টার মিলানের হয়ে সেরি আ (২০২০–২১), PSG-র হয়ে লিগ ১ শিরোপা (একাধিকবার)
খেলার ধরণ ও প্রভাব
হাকিমি তাঁর গতি, আক্রমণাত্মক খেলা এবং ডান প্রান্তে আধিপত্যের জন্য পরিচিত। PSG-তে তিনি শুধুমাত্র ডান-ব্যাক নয়, বরং উইং-ব্যাক ও মাঝেমধ্যে ফরোয়ার্ড হিসেবেও খেলেন। ২০২৪–২৫ মৌসুমে তিনি ৭টি গোল ও ১৪টি অ্যাসিস্ট করেছেন, যা তাঁর ক্যারিয়ারের সেরা মৌসুমগুলোর একটি।
ব্যক্তিগত জীবন
হাকিমি স্পেনীয় অভিনেত্রী হিবা আবুকের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ ছিলেন। তাঁদের দুটি সন্তান রয়েছে। তবে ২০২৩ সালে তাঁদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়।
সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান (২০২৪–২৫ মৌসুম)
-
ম্যাচ: ৫০টি
-
গোল: ৭টি
-
অ্যাসিস্ট: ১৪টি
-
মিনিট খেলা: ৩,৯৮৫ মিনিট
sourse: prothomalo, wikipedia
What's Your Reaction?






