ইসা ফয়সাল এর জীবনী | Biography of Isa Faysal
ইসা ফয়সাল এর জীবনী | Biography of Isa Faysal

ব্যক্তিগত তথ্য |
|||
---|---|---|---|
পূর্ণ নাম |
মোহাম্মদ ইসা ফয়সাল |
||
জন্ম |
২০ আগস্ট ১৯৯৯ |
||
জন্ম স্থান |
রংপুর, বাংলাদেশ |
||
উচ্চতা |
১.৭৩ মি (৫ ফুট ৮ ইঞ্চি) |
||
মাঠে অবস্থান |
বাম-ব্যাক |
||
ক্লাবের তথ্য |
|||
বর্তমান দল
|
বাংলাদেশ পুলিশ এফসি |
||
জার্সি নম্বর |
১৭ | ||
জ্যেষ্ঠ পর্যায়* |
|||
বছর |
দল | ম্যাচ | (গোল) |
২০১৬–২০১৭ |
বাংলাদেশ পুলিশ এফসি | (০) | |
২০১৭–২০১৮ |
মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র | ৩ | (০) |
২০১৮– |
বাংলাদেশ পুলিশ এফসি | ৯০ | (০) |
জাতীয় দল‡ |
|||
২০১৭ |
বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২০ জাতীয় ফুটবল দল | ১ | (০) |
২০২৩ |
বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২৩ জাতীয় ফুটবল দল | ৩ | (০) |
২০২৩– |
বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল |
১৫ | (০) |
অর্জন ও সম্মাননা
|
|||
* কেবল ঘরোয়া লিগে ক্লাবের হয়ে ম্যাচ ও গোলসংখ্যা গণনা করা হয়েছে এবং ২৪ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখ অনুযায়ী সকল তথ্য সঠিক। |
পুলিশ সদস্য থেকে জাতীয় দলের লেফটব্যাক, স্বপ্নের মতো লাগে ঈসা ফয়সালের
ইসা ফয়সাল একজন পেশাদার বাংলাদেশি ফুটবলার, যিনি লেফট-ব্যাক পজিশনে খেলেন। তিনি বর্তমানে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব বাংলাদেশ পুলিশ এফসি এবং বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের হয়ে খেলছেন।
প্রাথমিক জীবন ও ক্যারিয়ারের শুরু
ইসা ফয়সাল ১৯৯৯ সালের ২০ আগস্ট রংপুরে জন্মগ্রহণ করেন। ২০১৬ সালে তিনি রংপুর জেলা অনূর্ধ্ব-১৮ ফুটবল লিগে অংশগ্রহণ করেন। পরবর্তীতে কোচ আলতাব হোসেনের সহায়তায় তিনি ঢাকায় আসেন এবং বাংলাদেশ পুলিশে কনস্টেবল-কম-খেলোয়াড় হিসেবে যোগ দেন।
ঈসা ফয়সাল
(জন্ম: ২০ আগস্ট ১৯৯৯) একজন বাংলাদেশি পেশাদার ফুটবলার। তিনি বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল ও বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব বাংলাদেশ পুলিশের হয়ে খেলে থাকেন। তিনি লেফটব্যাক হিসেবে খেলেন।
ক্লাব ক্যারিয়ার
-
২০১৬–২০১৭: বাংলাদেশ পুলিশ এফসি-তে প্রথমবারের মতো যোগ দেন।
-
২০১৭–২০১৮: মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্রে খেলেন, যেখানে তিনি ৩টি ম্যাচে অংশগ্রহণ করেন।
-
২০১৮–বর্তমান: আবার বাংলাদেশ পুলিশ এফসি-তে ফিরে আসেন এবং এখন পর্যন্ত ক্লাবের হয়ে ৯৮টি ম্যাচ খেলেছেন। ২০১৯ সালের ১৫ মে তিনি স্বাধীনতা ক্রীড়া সংঘের বিপক্ষে ২–২ গোলে ড্র হওয়া ম্যাচে ক্লাবের হয়ে প্রথম গোল করেন। ২০২৩–২৪ মৌসুম থেকে তিনি ক্লাবের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করছেন।
২০১৬ সালে, ঈসা ফয়সাল অনূর্ধ্ব-১৮ জেলা ফুটবল লিগে রংপুর জেলার হয়ে খেলেন। পরবর্তীতে সেই বছরই, কোচ আলতাব হোসেনের সহায়তায় তিনি ঢাকায় চলে আসেন এবং বাংলাদেশ পুলিশে কনস্টেবল-কাম-খেলোয়াড় হিসেবে যোগ দেন।
২০১৯ সালের ১৫ মে, ২০১৮–১৯ বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে স্বাধীনতা ক্রীড়া সংঘের বিপক্ষে ২–২ গোলে ড্র হওয়া ম্যাচে তিনি ক্লাবের হয়ে নিজের প্রথম গোল করেন।
২০২৩–২৪ মৌসুম থেকে তিনি ক্লাবটির অধিনায়ক নিযুক্ত হন।
আন্তর্জাতিক জীবন
২০২৩ সালের ২২ জুনে, ২০২৩ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে লেবাননের বিপক্ষে ম্যাচে তার জাতীয় দলে অভিষেক হয়।ছোটবেলায় স্বপ্ন দেখতেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেবেন। কিন্তু নিয়তি তাঁকে টেনে এনেছে বাংলাদেশ পুলিশে। এ পর্যন্ত হয়তো বিস্ময়কর কিছু ঘটেনি। কিন্তু ২০১৮ সালে বাংলাদেশ পুলিশে কনস্টেবল পদে যোগ দিয়ে দ্রুত বাঁক নিতে থাকে তাঁর জীবন। যে জীবনে ঈসা ফয়সাল পরিচিত হয়ে উঠেছেন জাতীয় ফুটবল দলের নির্ভরযোগ্য লেফটব্যাক হিসেবে। সাত মাসে খেলে ফেলেছেন সাতটি আন্তর্জাতিক ম্যাচ। হাংজু এশিয়ান গেমসে অলিম্পিক দলের জার্সিতে তিন ম্যাচ যোগ করলে সংখ্যাটা দাঁড়ায় ১০।
এই স্বপ্নযাত্রা সহজ হয়নি। অনেক কিছু পেরিয়ে আসতে হয়েছে ঈসাকে, জয় করতে হয়েছে অনেক বাধা। ঈসার বাবা রংপুরের কাউনিয়ার মীরবাগে তাঁদের বাড়ির পাশে একটি কারখানায় চাকরি করতেন। সেই সময়ের কথা স্মরণ করে ২৫ বছরের ঈসা বলছেন, ‘বাবার বেতন ছিল খুব সীমিত। ফলে খুব কষ্টের ভেতর দিয়ে বড় হয়েছি। মা–বাবা-বড় ভাই—সবাই আমাকে সহযোগিতা করত। কিন্তু খেলার জন্য বাড়ি থেকে রংপুর স্টেডিয়াম যেতে দৈনিক ৫০-৬০ টাকা লাগত। সেই টাকা থাকত না অনেক সময়। তাই নিজেই কাজ-টাজ করে সেই টাকা জোগাড় করতাম। অনেক কষ্টের কাজ।’
কী সেই কাজ, যা করতে কষ্ট হতো তরুণ ঈসার? আজকের জাতীয় ফুটবলার ঈসার কাছে সে এক লড়াইয়ের গল্পই, ‘যেমন ধরুন, চিড়ার মিলে শ্রমিকের কাজ করেছি। মিলে কাজ করে এক মণ ধান ভানলে দেখা যেত ৪০–৪৫ টাকা দিত। এক দিনে দু–তিন মণ ভানতাম। বাড়ি থেকে না করত। আমি তাই গোপনে এটা করতাম। মাঝেমধ্যে এদিক–ওদিক খেপ খেলতাম। তখন খেপে ৫০, ৬০ বা ১০০ টাকা দিত। এভাবে টাকা জোগাতাম। আরও অনেক কাজ করতাম। তখন সপ্তম-অষ্টম শ্রেণিতে পড়ি।’

চিড়ার মিলে আগুনের ফুলকির সামনে কাজ করতে হয়েছে। আর সেটা তাঁর শরীরের জন্য কাজে এসেছে। শীর্ষ স্তরের একজন ফুটবলার হয়ে উঠতে সহায়তা করেছে সেই দিনগুলো। শুরুটা সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সৈনিক চাচা আবু তালেবের হাত ধরে। চাচার সঙ্গে ফুটবল খেলে শৈশব কেটেছে ঈসার। ২০০৯ সালে কাউনিয়ার ধর্মেশ্বর মহেষা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের হয়ে বঙ্গবন্ধু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় টুর্নামেন্টে খেলার মাধ্যমে এক পা এগোনো। ওই টুর্নামেন্টে ঈসার স্কুল একবার চ্যাম্পিয়ন ও একবার রানার্সআপ হয়।
এলাকায় তখন খালি পায়ে ফুটবল খেলা হতো বেশি। ঈসাও খালি পায়ে শুরু করেছিলেন। পরে তাঁকে বুট কিনে দেন ভগ্নিপতি। ঈসার মধ্যে ফুটবল-সম্ভাবনার প্রকাশ ঘটতে থাকে দ্রুত। ২০১৬ সালে রংপুরে শামীম খানের অধীন স্যান্টোস ফুটবল একাডেমিতে ভর্তি হন। পরের বছর বিভাগীয় অনূর্ধ্ব-১৮ ডিএফএ কাপে ঈসার জেলা রংপুর চ্যাম্পিয়ন হয়। ঈসা পান টুর্নামেন্ট-সেরার পুরস্কার। আর সেই টুর্নামেন্টই জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয় তাঁর।
জাতীয় অনূর্ধ্ব-১৮ খেলোয়াড় নির্বাচনের জন্য তখন ঢাকা থেকে কোচ আলতাফ হোসেন যান রংপুরে। সে সময় তিনি পুলিশ টিমের কোচ ছিলেন। তিনিই ঈসাকে নিয়ে আসেন পুলিশ দলের ট্রায়ালে। এরপর কী হলো, শুনুন ঈসার মুখেই, ‘পুলিশ দল সে সময় (২০১৭) পেশাদার লিগের দ্বিতীয় স্তর চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে খেলে। ট্রায়াল দিয়ে এক বছর পুলিশে খেলি। এরপর স্যাররা আমাকে প্রস্তাব দেন চুক্তিতে পুলিশে খেলব, নাকি চাকরি নেব পুলিশে। পরিবারের সঙ্গে কথা বলে কনস্টেবল হিসেবে পুলিশে যোগ দিই ২০১৮ সালে। আমি তখন মাত্র এসএসসি শেষ করেছি (এখন ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষে)।’
চাকরিতে যোগ দেওয়ার পরের মৌসুমেই ঈসার ঝলক। ২০১৯ সালে চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে তাঁর গোলেই চ্যাম্পিয়ন হয়ে প্রিমিয়ার লিগে উঠে আসে পুলিশ। স্বাধীনতা ক্রীড়া চক্রের সঙ্গে শেষ ম্যাচের শেষ দিকে হেডে জয়সূচক গোল করেন ঈসা। পুলিশকে প্রিমিয়ারে তুলে পুলিশের হয়েই টানা পঞ্চম মৌসুম খেলছেন। খেলতে চলেছেন নিজের চতুর্থ প্রিমিয়ার লিগ। এরই মধ্যে এবার স্বাধীনতা কাপে পেয়েছেন পুলিশ দলের অধিনায়কত্বও।
পুলিশে খেলার সময়ই জাতীয় দলের কোচ হাভিয়ের কাবরেরার নজরে পড়েন। ২০২২ সালের ৮ মার্চ ডাক পান জাতীয় দলে। এ বছরের ২২ জুন, লেবাননের বিপক্ষে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম ম্যাচে জাতীয় দলে অভিষেক। সাফের চারটি ম্যাচেই খেলেছেন। এ নিয়ে তাঁর তৃপ্তিও আছে, ‘১৪ বছর পর এবার বাংলাদেশ সাফের সেমিফাইনালে খেলেছে। সেই দলের অংশ হতে পারা আমার কাছে বিশাল অর্জন।’
এর আগে জেমির ডের সময় জাতীয় দলে ডাক পেয়েছিলেন পুলিশ সদস্য এম এ বাবলু। কিন্তু বাবলুর খেলা হয়নি আন্তর্জাতিক ফুটবল, যে স্বাদ পেয়েছেন ঈসা। পুলিশ ফুটবল দলে শুধুই পুলিশ সদস্য মোট ১৩ জন। দলের বাকি সব পুলিশ সদস্যকে ছাপিয়ে গেছেন ঈসা। এখন তিনি সাদ উদ্দিন, ইয়াসিন আরাফাতদের পেছনে ফেলে জাতীয় দলের লেফটব্যাক।
রংপুরে অবশ্য খেলতেন উইঙ্গার হিসেবে। ঢাকায় প্রথম বছরেও উইংয়েই খেলেছেন। পরে হয়ে গেলেন লেফটব্যাক। সেটা কীভাবে? সেই গল্পও বললেন ঈসা, ‘রংপুরে দ্বিতীয় বিভাগে কামাল কাছনার লিবার্টি দলের লেফট উইঙ্গার হিসেবে গোল করেছি কয়েকটি। কিন্তু একদিন অনূর্ধ্ব-১৬ ট্রায়ালে কোচ আমাকে রক্ষণে নামিয়ে দেন। কোচ বলেন, তোমার দমের ঘাটতি আছে। এটা শুনে একটা জেদ কাজ করে।’ বলতে বলতে ঈসা যোগ করেন, ‘ঢাকায় এসে ২০১৮ সালে ভুটানে অনূর্ধ্ব-১৮ সাফ খেলে এসেছি। জাতীয় দলের তখনকার কোচ অ্যান্ড্রু অর্ড বিকেএসপিতে একদিন বলেন, “ঈসা, তোমার কাভারিং ভালো। নিচ থেকে শুরু করলে তোমার জন্য ভালো হবে।” বিকেএসপির সঙ্গে প্রীতি ম্যাচে আমাকে লেফটব্যাকে খেলানো হয়। পরে পুলিশ টিমেও লেফটব্যাকে খেলি।’
আজ তাঁর ভাবলে ভালো লাগে, গত বছরের শুরুর দিকে ক্যানসারে আক্রান্ত বাবাকে ঢাকায় এনে চিকিৎসা করিয়ে মোটামুটি সুস্থ করে বাড়ি পাঠাতে পেরেছেন। জাতীয় দলে খেলার মতো বাবার সুচিকিৎসা করে তাঁকে সুস্থ করে তুলতে পারাটাও কম তৃপ্তি দেয় না ঈসা ফয়সালকে।
আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যান
- ৬ জুন ২০২৪ পর্যন্ত হালনাগাদকৃত।
বাংলাদেশ |
||
---|---|---|
বছর | ম্যাচ |
গোল |
২০২৩ | ৮ |
০ |
২০২৪ | ৩ |
০ |
মোট | ১১ |
০ |
উল্লেখযোগ্য তথ্য
-
ইসা ফয়সাল একজন পুলিশ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এবং একইসঙ্গে পেশাদার ফুটবলে সফল ক্যারিয়ার গড়েছেন।
-
তিনি বাংলাদেশ পুলিশ এফসি-তে অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করছেন।
-
জাতীয় দলের হয়ে তার অভিষেক ২০২৩ সালে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে।
sourse: wikipedia
http://prothomalo.com/sports/football/yqdkkjwmvv
https://en.wikipedia.org/wiki/Isa_Faysal
What's Your Reaction?






