মুঘল সামাজ্যর দ্বিতীয় সম্রাট হুমায়ন এর জীবনী | Biography of Samrat Humayun

মুঘল সামাজ্যর দ্বিতীয় সম্রাট হুমায়ন এর জীবনী | Biography of Samrat Humayun

May 20, 2025 - 16:21
May 23, 2025 - 00:14
 0  0
মুঘল সামাজ্যর দ্বিতীয় সম্রাট হুমায়ন এর জীবনী | Biography of Samrat Humayun

সম্রাট হুমায়ূনের প্রতিকৃতি

২য় মুঘল সম্রাট

১ম রাজত্ব

২৬ ডিসেম্বর ১৫৩০ – ১৭ মে ১৫৪০

রাজ্যাভিষেক

২৯ ডিসেম্বর ১৫৩০, আগ্রা

পূর্বসূরি

বাবর

২য় রাজত্ব

২২ ফেব্রুয়ারি, ১৫৫৫– ২৭ জানুয়ারী, ১৫৫৬

উত্তরসূরি

আকবর (মুঘল সম্রাট)

পূর্ণ নাম  মির্জা নাসির উদ্দিন মুহম্মদ হুমায়ূন میرزا نصیرالدین محمد همایون
জন্ম নাসির উদ্দিন মুহম্মদ
মার্চ ৬, ১৫০৮
কাবুল (বর্তমান আফগানিস্থান)
মৃত্যু

২৭ জানুয়ারি ১৫৫৬ (বয়স ৪৭)

দিল্লি, মুঘল সাম্রাজ্য (বর্তমান ভারত)

সমাধি

হুমায়ুনের সমাধিসৌধ, দিল্লী

প্রধান পত্নী

বেগম-ই-খাস জান-ই-কালান পাদশাহ হাজী বেগা বেগম সাহিবা

সম্রাট হুমায়ুন ছিলেন মোগল সাম্রাজ্যের দ্বিতীয় সম্রাট, যিনি ১৫২৬ থেকে ১৫৪০ এবং ১৫৫৫ থেকে ১৫৫৬ সাল পর্যন্ত শাসন করেছেন। তার শাসনকাল অনেকটাই আলোচিত এবং বিতর্কিত, কারণ তার শাসন ছিল অনেকটা অস্থির এবং তার জীবনে ছিল অনেক উত্থান-পতন। চলুন, তার জীবনী বিস্তারিতভাবে জানি:

মির্জা নাসির উদ্দিন মুহম্মদ হুমায়ূন

(ফার্সি: میرزا نصیرالدین محمد همایون) (মার্চ ৬, ১৫০৮ - ২৭ জানুয়ারী, ১৫৫৬) মুঘল সাম্রাজ্যের দ্বিতীয় সম্রাট, যিনি ১৫৩০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৫৪০ খ্রিষ্টাব্দ এবং ১৫৫৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৫৫৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত দুই দফায় আধুনিক আফগানিস্তান, পাকিস্তান এবং ভারতের উত্তরাঞ্চলে রাজত্ব করেছেন। তিনি এই সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা সম্রাট বাবরের পুত্র ছিলেন। তিনি তার পিতা বাবরের মতই তার রাজত্ব হারিয়েছিলেন, কিন্তু পারস্য সাম্রাজ্যের বাদশাহ শাহ তাহমাস্প এর সহায়তায় পরিনামস্বরূপ আরও বড় রাজ্য পেয়েছিলেন।

১৫৩০-এর ডিসেম্বরে, হুমায়ুন ভারতীয় উপমহাদেশের মুঘল ভূখণ্ডের শাসক হিসেবে দিল্লির সিংহাসনে তার পিতার উত্তরাধিকারী হন। হুমায়ূন যখন ২২ বছর বয়সে ক্ষমতায় আসেন তখন তিনি একজন অনভিজ্ঞ শাসক ছিলেন। তার সৎ ভাই, কামরান মির্জা তাদের পিতার সাম্রাজ্যের উত্তরতম অংশ কাবুল এবং কান্দাহার উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছিলেন।

প্রাথমিক জীবন:

হুমায়ুন জন্মগ্রহণ করেন ১৫০৮ সালের ৬ মার্চ, কাবুলে। তিনি ছিলেন বাবরের দ্বিতীয় পুত্র এবং মায়ের নাম মহল। হুমায়ুনের ভাই ছিলেন কামরান, আসিফ, এবং আকবর। বাবা বাবর ছিল একজন সাহসী যোদ্ধা, যিনি ভারত উপমহাদেশে মোগল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেন। বাবরের মৃত্যুর পর হুমায়ুন মোগল সাম্রাজ্যের শাসনভার গ্রহণ করেন।

বাল্যকাল :

 হুমায়ুন ছিলেন বাবরের জ্যেষ্ঠ পুত্র। হুমায়ুনের ছোট আরো তিন ভাই ছিল। তারা হলেন- কামরান, আসকারী এবং হিন্দাল। 

বাল্যকালেই হুমায়ুনের পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ দেখা দেয় এবং এ সময় তিনি আরবি, ফার্সি, তুর্কি, গণিত, জ্যোতির্বিদ্যা, দর্শন প্রভৃতি বিষয়ে জ্ঞান লাভ করেন। তবে বাল্যকালের শেষ দিকে হুমায়ুন এক দুরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত হয়ে পড়েন ।

যুদ্ধে অংশগ্রহণ : 

কৈশোরকালেই হুমায়ুন সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন এবং সামরিক বিষয়ে বেশ পারদর্শী হয়ে উঠেন। বাবরের ভারত অভিযানের সময় হুমায়ুন পিতার সাথে পানিপথের প্রথম যুদ্ধে ও খানুয়ানের যুদ্ধে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেন এবং বেশ পারদর্শিতার পরিচয় দেন।

শাসনকাল:

হুমায়ুনের শাসনকাল শুরু হয় ১৫২৬ সালে। কিন্তু প্রথম দিকে, তাকে বেশ কিছু সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। তার প্রতিপক্ষ ছিল বাংলার শের শাহ, যিনি তার শাসনকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন।

প্রথম পতন:

১৫৪০ সালে, হুমায়ুন শের শাহ সুরির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে হারেন এবং সুরির সেনারা দিল্লি দখল করে নেয়। হুমায়ুন ভারত ছেড়ে ইরানে পালিয়ে যান, সেখানে তিনি বেশ কিছু বছর নির্বাসনে কাটান। তার সিংহাসনে ফিরে আসার জন্য এই সময়ের মধ্যে অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে।

পুনরায় প্রতিষ্ঠা:

হুমায়ুন ১৫৫৫ সালে ইরান থেকে ফিরে এসে মোগল সাম্রাজ্যের পুনর্স্থাপন করেন। তার সহায়তায় ছিল ইরানি শাসক শাহ তামাসপ। ১৫৫৫ সালে, তিনি শের শাহ সুরির পুত্রদের পরাজিত করে দিল্লি পুনরুদ্ধার করেন।

বৈশিষ্ট্য ও অবদান:

  • বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি: হুমায়ুন মোগল সাম্রাজ্যে সাহিত্য, সংস্কৃতি, এবং বিজ্ঞানকে উত্সাহিত করেছেন। তার শাসনামলে নানা ধরণের প্রশাসনিক সংস্কারও করা হয়।

  • হুমায়ুন মসজিদ: তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে নির্মিত হয়েছিল বিখ্যাত হুমায়ুন মসজিদ, যা পরে ইউনেরকো বিশ্ব ঐতিহ্যের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

হুমায়ুনের উত্তরাধিকার:

হুমায়ুনের মৃত্যুর পর তার পুত্র আকবর মোগল সাম্রাজ্যকে আরও বিস্তৃত করেন এবং ভারতবর্ষের অন্যতম শক্তিশালী শাসক হয়ে ওঠেন। তার শাসনকালেই মোগল সাম্রাজ্য গড়ে ওঠে এক শক্তিশালী সাম্রাজ্যে।

হুমায়ুনের জীবন ছিল অস্থিরতার মধ্যে, তবে তার শাসন ও যাত্রার পরে মোগল সাম্রাজ্য এক শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, যা ভারতীয় ইতিহাসে অমর হয়ে রয়েছে।

মানুষ হিসেবে সম্রাট হুমায়ুন অত্যন্ত নম্র, ভদ্র, শিক্ষিত, বিনয়ী, আমোদপ্রিয় আর শান্তিপ্রিয় ছিলেন। মুঘল সম্রাটদের মধ্যে সম্রাট হুমায়ুনের চেয়ে বিনয়ী সম্রাট আর কেউ ছিলেন না। সমস্যা হলো, শাসনকার্য পরিচালনা করতে গেলে বিনয় দিয়ে চলে না। প্রয়োজনে কঠোর হতে হয়, তড়িৎকর্মা হতে হয়, উদ্দ্যমী হতে হয়। দুঃখের বিষয় হলো সম্রাট হুমায়ুনের মাঝে এর সবগুলোর ঘাটতিই ছিলো।

মানুষ হিসেবে তিনি অত্যন্ত উঁচু মাপের হলেও শাসক হিসেবে নিজের প্রতিভা কখনোই খুলে ধরতে পারেননি তিনি। শাসক হিসেবে জীবনে তিনি প্রচুর ভুল করেছেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সেই ভুল থেকে শিক্ষাও নেননি। সম্রাট হুমায়ুন সম্পর্কে বলা হয়, কোথাও পিছলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকলে সম্রাট হুমায়ুন অবশ্যই সেখানে পিছলে যেতেন, এমনকি তিনি মৃত্যুবরণও করলেন সেই পিছলে গিয়েই। সম্ভবত এই একটি লাইনই সম্রাট হুমায়ুনের সমগ্র জীবনকে সংক্ষেপে প্রকাশ করার জন্য যথেষ্ট!

মৃত্যুঃ

হুমায়ুন ১৫৫৬ সালে দিল্লি থেকে শাসন শুরু করেছিলেন, কিন্তু দুঃখজনকভাবে মাত্র কয়েক মাস পর, ۲۷ জুন, তিনি একটি দুর্ঘটনায় মারা যান। এটি তার জীবনের শেষ হতে পারে, তবে তার সিংহাসনে থাকার সময় থেকে ভারতের ইতিহাসে তার কাজ এখনও প্রভাব ফেলেছে।

What's Your Reaction?

Like Like 0
Dislike Dislike 0
Love Love 0
Funny Funny 0
Angry Angry 0
Sad Sad 0
Wow Wow 0