সম্রাট আকবরের জীবনী | Biography Of Mughal Emperor Akbar

সম্রাট আকবরের জীবনী | Biography Of Mughal Emperor Akbar

May 20, 2025 - 00:47
May 27, 2025 - 23:29
 0  2
সম্রাট আকবরের জীবনী | Biography Of Mughal Emperor Akbar

দ্রুত তথ্য: 

সম্রাট আকবর

পরিচিত : বিখ্যাত মুঘল শাসক
জন্ম :  ১৫ অক্টোবর, ১৫৪২ উমেরকোট, রাজপুতানা (বর্তমান সিন্ধু, পাকিস্তান)।
পিতা-মাতা : হুমায়ুন, হামিদা বানু বেগম
মৃত্যু :  ২৭ অক্টোবর, ১৬০৫, ফতেহপুর সিক্রি, আগ্রা, মুঘল সাম্রাজ্য (বর্তমান উত্তর প্রদেশ, ভারত)।

সম্রাট আকবর ছিলেন মুঘল সাম্রাজ্যের তৃতীয় সম্রাট এবং মুঘল ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রভাবশালী শাসক। তাঁর শাসনকাল ছিল ১৫৫৬ থেকে ১৬০৫ পর্যন্ত, এবং তিনি মুঘল সাম্রাজ্যকে এক বিশাল, শক্তিশালী এবং সুসংগঠিত সাম্রাজ্যে পরিণত করেছিলেন। আকবরের শাসনকাল ছিল সংস্কৃতি, ধর্ম, প্রশাসন এবং সামরিক ক্ষেত্রে ব্যাপক সংস্কারের সময়।

আকবরের জন্ম :

সম্রাট আকবর মুঘল সাম্রাজ্যের তৃতীয় সম্রাট, যিনি ১৫৫৬ থেকে ১৬০৫ খ্রিষ্টাব্দ অব্দি রাজত্ব করেন। পৃথিবীর ইতিহাসে ইনি মহান শাসকদের অন্যতম হিসেবে মহামতি আকবর নামেও পরিচিত। পিতা সম্রাট হুমায়ুনের মৃত্যুর পর ১৫৫৬ সালে মাত্র ১৩ বছর বয়সে আকবর ভারতের শাসনভার গ্রহণ করেন। বৈরাম খানের তত্ত্বাবধানে তিনি সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ায় সাম্রাজ্য বিস্তার করতে থাকেন। ১৫৬০ সালে বৈরাম খাঁকে সরিয়ে আকবর নিজে সকল ক্ষমতা দখল করেন। কিন্তু আকবর ভারতবর্ষ ও আফগানিস্তানে তার সাম্রাজ্য বিস্তার চালিয়ে যান। ১৬০৫ সালে তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত প্রায় সমস্ত উত্তর ভারত তার সাম্রাজ্যের অধীনে চলে আসে। আকবরের মৃত্যুর পর তার পুত্র সম্রাট জাহাঙ্গীর ভারতবর্ষের শাসনভার গ্রহণ করেন ও সাম্রাজ্য বিস্তারে মনোনিবেশ করেন।

জীবনের প্রথমার্ধ:

আকবরের জন্ম দ্বিতীয় মুঘল সম্রাট হুমায়ুন এবং তার কিশোরী কনে হামিদা বানু বেগমের ঘরে ১৫৪২ সালের ১৪ অক্টোবর সিন্ধুতে, যা বর্তমানে পাকিস্তানের অংশ । যদিও তার পূর্বপুরুষদের মধ্যে চেঙ্গিস খান এবং তৈমুর (তামেরলেন) উভয়ই ছিলেন, বাবরের নবপ্রতিষ্ঠিত সাম্রাজ্য হারানোর পর পরিবারটি পলাতক ছিল । হুমায়ুন ১৫৫৫ সালের আগে উত্তর ভারত ফিরে পাননি।

বাবা-মা পারস্যে নির্বাসিত থাকাকালীন, ছোট্ট আকবরকে আফগানিস্তানে তার এক চাচার কাছে লালন-পালন করা হয়েছিল, একদল সেবিকার সাহায্যে। তিনি শিকারের মতো গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা অর্জন করেছিলেন কিন্তু কখনও পড়তে শেখেননি (সম্ভবত শেখার অক্ষমতার কারণে)। তা সত্ত্বেও, আকবরের সারা জীবন দর্শন, ইতিহাস, ধর্ম, বিজ্ঞান এবং অন্যান্য বিষয়ের উপর লেখা তাকে পড়তে হত এবং তিনি যা শুনেছিলেন তার দীর্ঘ অংশগুলি মুখস্থ করে বলতে পারতেন।

শাসনকাল:

  • ১৫৫৬ সালে আকবর পূর্ণাঙ্গভাবে মুঘল সাম্রাজ্যের শাসক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন।

  • তাঁর শাসনকাল ছিল প্রায় ৫০ বছর, যা মুঘল সাম্রাজ্যের সবচেয়ে সমৃদ্ধ এবং সুসংগঠিত সময়।

প্রশাসনিক সংস্কার:

  • রাজনৈতিক শৃঙ্খলা: আকবর প্রশাসনিক দিক থেকে অনেক বড় সংস্কার করেছিলেন। তিনি দক্ষ মন্ত্রী ও সেনাপতি নিয়োগ করেন, যারা সাম্রাজ্যের শাসন পরিচালনায় সহায়ক ছিলেন।

  • নবাব ব্যবস্থা: আকবর তার সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে নবাবদের নিয়োগ করেন, যারা স্থানীয় শাসকদের প্রতিনিধিত্ব করতেন। এই ব্যবস্থা মুঘল সাম্রাজ্যের শাসন ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করে তোলে।

  • জ্যোতিষশাস্ত্র এবং মুদ্রাবিদ্যা: আকবর নিজেই মুদ্রা তৈরি করতে আগ্রহী ছিলেন এবং মুদ্রাবিদ্যার উন্নতির জন্য অনেক পদক্ষেপ নেন।

সামরিক কৃতিত্ব:

  • আকবরের সেনাবাহিনী ছিল অত্যন্ত শক্তিশালী এবং ঐক্যবদ্ধ। তিনি বিভিন্ন রাজা ও রাজ্যকে একত্রিত করতে বিভিন্ন যুদ্ধ পরিচালনা করেন।

  • পানি পাটন (১৫৫৬): আকবরের প্রথম বড় যুদ্ধ ছিল পানি পাটন যুদ্ধে, যেখানে তিনি হেম চন্দ্রের বিরুদ্ধে বিজয়ী হন এবং মুঘল সাম্রাজ্যকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করেন।

ধর্মীয় তাত্পর্য:

  • আকবর ধর্মীয় সহিষ্ণুতা ও একতা প্রতিষ্ঠার জন্য সুপরিচিত। তিনি ইসলামিক ধর্মের পাশাপাশি অন্যান্য ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা রাখতেন।

  • তিনি দ্বীন-ই-ইলাহি নামে একটি নতুন ধর্ম প্রচলন করেন, যার মূল লক্ষ্য ছিল বিভিন্ন ধর্মের মধ্যে মিলনের প্রচেষ্টা করা। তবে এই ধর্ম সেভাবে জনপ্রিয় হয়নি।

  • আকবরের শাসনামলে হিন্দুদের প্রতি তার মনোভাব ছিল সহানুভূতিশীল, এবং তিনি হিন্দু ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতেন এবং তাদের বিশ্বাসের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতেন।

সংস্কৃতি ও শিল্পকলার উন্নতি:

  • আকবর অত্যন্ত সংস্কৃতিপ্রেমী ছিলেন। তিনি সাহিত্য, স্থাপত্য এবং শিল্পকলা বিষয়ক প্রচুর উদ্যোগ গ্রহণ করেন।

  • তাঁর শাসনামলে মুঘল স্থাপত্যের নতুন ধারা তৈরি হয়, যেমন ফতেপুর সিকরিআলেমগির মসজিদ

  • মুঘল চিত্রকলার বিকাশ: আকবরের সভায় একাধিক প্রতিভাবান চিত্রকরদের অধীনে চিত্রকলার নতুন ধারার সূচনা হয়।

  • আলেকজান্ডার ওরিয়েন্টাল নামে একটি বিখ্যাত গ্রন্থও তাঁর শাসনকালে তৈরি হয়।

আকবরের মৃত্যু:

  • আকবর ১৬০৫ সালের ৩ নভেম্বর ৬৩ বছর বয়সে আগ্রা দুর্গে মারা যান।

  • তাঁর পরবর্তী শাসক ছিলেন তাঁর পুত্র জাহাঙ্গীর

উপসংহার:

আকবর ছিলেন একজন বিচক্ষণ, প্রাজ্ঞ এবং সর্বদা সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য সচেষ্ট শাসক। তাঁর শাসনকাল কেবলমাত্র সাম্রাজ্যের সামরিক শক্তি এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার কারণে নয়, বরং তাঁর ধর্মীয় সহিষ্ণুতা, সাংস্কৃতিক অগ্রগতি এবং প্রশাসনিক দক্ষতার কারণে ইতিহাসে এক অনন্য স্থান অধিকার করেছে।

SOURSE ; wikipedia 

What's Your Reaction?

Like Like 0
Dislike Dislike 0
Love Love 0
Funny Funny 0
Angry Angry 0
Sad Sad 0
Wow Wow 0