বাংলার নবাব সিরাজ উদ দৌলা এর জীবনী | Biography Of Siraj Ud Daulah In bangla

বাংলার নবাব সিরাজ উদ দৌলা এর জীবনী | Biography Of Siraj Ud Daulah In bangla

May 19, 2025 - 20:30
May 27, 2025 - 12:11
 0  0
বাংলার নবাব সিরাজ উদ দৌলা এর জীবনী | Biography Of Siraj Ud Daulah In bangla

সিরাজউদ্দৌলার জন্ম 

সিরাজউদ্দৌলা ১৭৩৩ সালের প্রায় দিকে বাংলার মুর্শিদাবাদে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন নবাব আলীবর্দী খানের নাতি এবং মীনার, আলীবর্দীর মেয়ে, ও জৈনুদ্দীনের পুত্র। সিরাজের জন্মের পর থেকেই তাঁর পরিবারে তাঁকে অত্যন্ত স্নেহ করা হতো। তাঁর দাদা, আলীবর্দী খান, বাংলার নবাব ছিলেন এবং সিরাজকে তিনি অত্যন্ত পছন্দ করতেন।

সিরাজ ছোট থেকেই অত্যন্ত সাহসী ও উদ্যমী ছিলেন। পরিবারের সমৃদ্ধি এবং রাজনৈতিক প্রভাবের মধ্যে বেড়ে ওঠা সিরাজ খুব অল্প বয়স থেকেই শাসন ও যুদ্ধের পাঠ নেওয়া শুরু করেন। দাদার সান্নিধ্যে থেকেই তাঁর মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলীর বিকাশ ঘটে এবং তাঁর ভবিষ্যতের রাজনৈতিক দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে ওঠে।

রাজ্যাভিষেক

১৭৪৬ সালে আলিবর্দী খান মারাঠাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে গেলে কিশোর সিরাজ তার সাথী হন। আলিবর্দি সিরাজ-উদ-দৌলাকে বালক বয়সেই পাটনার শাসনকর্তা নিযুক্ত করেছিলেন। তার বয়স অল্প ছিল বলে রাজা জানকীরামকে রাজপ্রতিনিধি নিযুক্ত করা হয়। কিন্তু বিষয়টি সিরাজদ্দৌলাকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি। তাই তিনি একদিন গোপনে কয়েকজন বিশ্বস্ত অনুচরকে নিয়ে ভ্রমণের নাম করে স্ত্রী লুৎফুন্নেসাকে সঙ্গে নিয়ে মুর্শিদাবাদ থেকে বের হয়ে পড়েন। তিনি সোজা পাটনা গিয়ে উপস্থিত হন এবং জানকীরামকে তার শাসনভার ছেড়ে দেওয়ার আদেশ দেন। কিন্তু নবাবের বিনা অনুমতিতে জানকীরাম তার শাসনভার ছেড়ে দিতে অস্বীকৃতি জানান। দুর্গের দ্বার বন্ধ করে বৃদ্ধ নবাবের কাছে বিস্তারিত তথ্য জানিয়ে দূত পাঠান। অন্যদিকে জানকীরামের আচরণে ভীষণ ক্ষুদ্ধ হয়ে সিরাজদ্দৌলা দুর্গ আক্রমণ করেন। উভয়পক্ষে লড়াই শুরু হয়ে গেলে হতাহতের ঘটনাও ঘটে। ঘটনার সংবাদ পেয়ে আলিবর্দি খাঁ দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছান এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন। সেদিনই আলিবর্দি খাঁ দুর্গের অভ্যন্তরস্থ দরবারে স্নেহভাজন দৌহিত্রকে পাশে বসিয়ে ঘোষণা দেন,

ইতিহাসে এই ঘটনাকে সিরাজ-উদ-দৌলার যৌবরাজ্যাভিষেক বলে অভিহিত করা হয়েছে। এই সময়ে সিরাজ-উদ-দৌলার বয়স ছিল মাত্র সতেরো বছর। তবে তাকে সিংহাসনের উত্তরাধিকারী মনোনয়ন করার ঘটনা তার আত্মীয়বর্গের অনেকেই মেনে নিতে পারেনি। অনেকেই তার বিরোধিতা শুরু করেন। এদের মধ্যে ছিলেন আলিবর্দি খাঁর বড় মেয়ে ঘসেটি বেগম এবং তার স্বামী নোয়াজেশ মোহাম্মদ। এছাড়া আলিবর্দী খানের জীবদ্দশায় সিরাজ-উদ-দৌলা ঢাকার নৌবাহিনীর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

শাসনকালের চ্যালেঞ্জগুলো 

সিরাজের শাসনকালের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রভাব এবং তাদের কর্মকাণ্ড। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলার অভ্যন্তরে তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম বাড়িয়ে তুলছিল এবং বাংলার সম্পদ শোষণ করছিল। সিরাজ এই শোষণের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে শুরু করেন, যার ফলে তাঁর শাসনের শুরু থেকেই ইংরেজদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের অবনতি ঘটে।

এছাড়াও, সিরাজের শাসনকাল জুড়ে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র, স্থানীয় জমিদারদের বিরোধিতা এবং তার নিজের বাহিনীর মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল। তবে সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল তাঁর নিজস্ব সেনাবাহিনীর ভিতরে বিশ্বাসঘাতকতা, যা পরবর্তীতে পলাশীর যুদ্ধে তার পরাজয়ের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

ইংরেজদের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতির সূচনা 

সিরাজউদ্দৌলা ইংরেজদের বাংলায় বাড়তি প্রভাব সম্পর্কে সচেতন ছিলেন এবং তাঁদের কার্যক্রমে বাধা দেওয়ার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেন। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর ফাঁকি এবং অবৈধ বাণিজ্যের কারণে সিরাজ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন এবং ইংরেজদের কার্যক্রম সীমিত করার চেষ্টা করেন। সিরাজ বিশ্বাস করতেন যে, ইংরেজরা বাংলার সম্পদ শোষণ করছে এবং তাঁদের বাণিজ্যিক কার্যক্রম রাজনৈতিকভাবে হস্তক্ষেপ করছে। এই কারণেই ইংরেজদের সাথে তার সম্পর্ক ক্রমশ খারাপের দিকে যেতে থাকে।

পলাশীর যুদ্ধ এবং এর ফলাফল 

১৭৫৭ সালের পলাশীর যুদ্ধ বাংলার ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, যা শুধুমাত্র সিরাজউদ্দৌলার শাসনের শেষ নয়, বরং বাংলার স্বাধীনতার শেষকেও চিহ্নিত করে। এই যুদ্ধে সিরাজউদ্দৌলা এবং ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মধ্যে সামরিক দ্বন্দ্ব ঘটে যা বাংলার ভাগ্য চিরতরে বদলে দেয়।

ক. পলাশীর যুদ্ধের প্রেক্ষাপট 

ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ক্রমবর্ধমান প্রভাব এবং সিরাজের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের অবনতি পলাশীর যুদ্ধের পেছনের প্রধান কারণ ছিল।
রবার্ট ক্লাইভ এবং ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কলকাতা দখলের প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিল এবং সিরাজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে বাংলার রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করতে চেয়েছিল। এই ষড়যন্ত্রে মীর জাফরের মতো সিরাজের কিছু নিজস্ব কর্মকর্তাও যুক্ত হয়েছিল। সিরাজের প্রশাসনের দুর্বলতা এবং সেনাবাহিনীর ভেতরের বিশ্বাসঘাতকতা এই যুদ্ধকে আরও ত্বরান্বিত করেছিল।

খ. যুদ্ধের প্রধান খেলোয়াড়রা (Key Players in the Battle):

  • সিরাজউদ্দৌলা: যুদ্ধের প্রধান প্রতিরোধকারী এবং বাংলার শাসক।
  • রবার্ট ক্লাইভ: ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সেনাপতি, যিনি এই যুদ্ধে ইংরেজদের নেতৃত্ব দেন।
  • মীর জাফর: সিরাজের সেনাপতি, যিনি যুদ্ধের সময় ব্রিটিশদের সাথে ষড়যন্ত্র করে সিরাজকে বিশ্বাসঘাতকতা করেন।
    মীর জাফর ও রবার্ট ক্লাইভের মধ্যে গোপন চুক্তি হয়েছিল যে মীর জাফর সিরাজকে বিশ্বাসঘাতকতা করবে এবং এর বিনিময়ে তাকে নবাব করা হবে।

গ. সিরাজের পরাজয়ের কারণ (Reasons Behind Siraj’s Defeat):

সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের প্রধান কারণ ছিল তাঁর সেনাবাহিনীর ভেতরের বিশ্বাসঘাতকতা।
মীর জাফর এবং অন্যান্য প্রধান সেনাপতিদের বিশ্বাসঘাতকতা সিরাজকে পরাজিত করতে বাধ্য করে। পলাশীর যুদ্ধে সিরাজের বাহিনী দুর্বল হয়ে পড়ে এবং ইংরেজরা সামরিক কৌশলে বিজয় অর্জন করে। সিরাজে

পলাশী যুদ্ধে নবাবের পরাজয়:

১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশী যুদ্ধে সিরাজউদ্দৌলার সাথে ব্রিটিশ বাহিনীর বিপরীত যুদ্ধে তিনি পরাজিত হন। এই যুদ্ধে তার সেনাপতি, মীর জাফর এবং অন্যান্য সহযোগীরা ব্রিটিশদের পক্ষ নিয়ে তাকে বিশ্বাসঘাতকতা করেন। পলাশী যুদ্ধে পরাজয়ের পর, সিরাজউদ্দৌলা ধরা পড়ে এবং তাকে হত্যা করা হয়।

মৃত্যু ও প্রভাব:

পলাশী যুদ্ধে পরাজিত হয়ে সিরাজউদ্দৌলা বন্দী হন এবং তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এর ফলে বাংলা নবাবি শাসন সমাপ্ত হয় এবং ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলা এবং পরবর্তীতে পুরো ভারতবর্ষের উপর আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে শুরু করে।

নবাব সিরাজউদ্দৌলার অবদান:

১. সিরাজউদ্দৌলা একটি শক্তিশালী এবং স্বাধীন বাংলা রাষ্ট্র গঠন করতে চেয়েছিলেন।
২. তিনি অত্যন্ত সাহসী এবং পল্টু শাসক ছিলেন, যিনি ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন।
৩. তার শাসনকালে বাংলা সমৃদ্ধি লাভ করেছিল, কিন্তু ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে তার সংগ্রাম তাকে পরাজিত করেছিল।

সিরাজউদ্দৌলা ছিলেন এক সাহসী শাসক, যিনি ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। তবে, তার পতনের পর থেকেই ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়, যা পরবর্তীতে পুরো উপমহাদেশকে উপনিবেশিত করে।

sorusse : wikipedia ...thedailystar 

What's Your Reaction?

Like Like 0
Dislike Dislike 0
Love Love 0
Funny Funny 0
Angry Angry 0
Sad Sad 0
Wow Wow 0