মতিয়া চৌধুরী জীবনী || biography of Matia Chowdhury

মতিয়া চৌধুরী জীবনী || biography of Matia Chowdhury

May 13, 2025 - 20:06
May 15, 2025 - 17:08
 0  1
মতিয়া চৌধুরী  জীবনী  || biography of Matia Chowdhury

জন্ম 
তিনি ১৯৪২ সালের ৩০ জুন পিরোজপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন।

পারিবারিক জীবন

পিতা মহিউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা এবং মা নুরজাহান বেগম ছিলেন গৃহিণী। ব্যক্তিজীবনে ১৯৬৪ সালের ১৮ জুন খ্যাতিমান সাংবাদিক বজলুর রহমানের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।

রাজনৈতিক ও কর্মজীবন
তিনি ইডেন কলেজে পড়ার সময় ছাত্র রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৬৫ সালে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন এর সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৬৭ সালে "অগ্নিকন্যা" নামে পরিচিত মতিয়া পূর্ব পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে যোগ দেন এবং এর কার্যকরী কমিটির সদস্য হন। ১৯৭০ ও ১৯৭১ এর মাঝামাঝি সময়ে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম, প্রচারণা, তদবির এবং আহতদের শুশ্রুষায় সক্রিয় অংশগ্রহণকারী ছিলেন।১৯৭১ সালে তিনি আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হয়েছিলেন। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের সময়কালে তিনি বেশ কয়েকবার গ্রেফতার হন।

১৯৯৬ ও ২০০৯ এবং ২০১৩ সালে আওয়ামী লীগ শাসনামলে কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি আওয়ামীলীগের ১ নং প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ১২ জানুয়ারি ২০২৩ সালে তিনি জাতীয় সংসদের সংসদ উপনেতা হিসেবে দায়িত্ব নেন।পরে তিনি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত হলে পুনরায় তিনি ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে জাতীয় সংসদের সংসদ উপনেতা হিসেবে দায়িত্ব নেন। ২০২৪ সালে অসহযোগ আন্দোলনের পর রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত করলে তিনি সংসদ সদস্য পদ হারান।


ইডেন থেকে উত্থান

দীর্ঘকাল ধরে কর্মী ও অনুসারী ছিলেন এবং তার পরিবারের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ ছিলেন এমন কয়েকজন জানিয়েছেন যে, পুলিশ কর্মকর্তা বাবার সন্তান মতিয়া চৌধুরী জন্মগ্রহণ করেছিলেন পিরোজপুরে ১৯৪২ সালের ত্রিশে জুন।

স্কুলজীবন শেষে ইডেন কলেজে এইচএসসিতে ভর্তি হন এবং এর মধ্যে ছাত্র ইউনিয়নের মাধ্যমে রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন। পরে ভর্তি হয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯৬৪ সালে ছাত্র ইউনিয়ন থেকেই তিনি ডাকসুর জিএস নির্বাচিত হয়েছিলেন।

ওই বছরেই তিনি সাংবাদিক বজলুর রহমানের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। প্রয়াত মি. রহমান পরবর্তীকালে দৈনিক সংবাদের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ছিলেন।

ষাটের দশকে পাকিস্তানি সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে যে তুমুল আন্দোলন গড়ে ওঠেছিলো তাতে মতিয়া চৌধুরী সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিলেন। সে সময় কয়েক দফায় কারাগারে যেতে হয়েছে এবং এর মধ্যে একবার টানা দু বছর জেলে ছিলেন তিনি।

ষাটের দশকেই দেশজুড়ে 'অগ্নিকন্যা' হিসেবে পরিচিত পান এবং তিনি গুরুত্বপূর্ণ ছাত্রনেতা হিসেবে আবির্ভূত হন। এক পর্যায়ে ছাত্র ইউনিয়ন দুভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে- তার ও রাশেদ খান মেননের নেতৃত্বে।

তখন আওয়ামী লীগ বা ছাত্রলীগের সাথে না থাকলেও ১৯৬৬ সালে আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের ঘোষিত ছয় দফার সমর্থনে ব্যাপক সক্রিয় ছিলেন মতিয়া চৌধুরী।

ন্যাপ থেকে আওয়ামী লীগে

ছাত্রজীবন শেষ হওয়ার পর ১৯৬৭ সালে তিনি যোগ দিয়েছিলেন অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে। এ সময় রাজনৈতিক নেতা হিসেবে তিনি ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছিলেন।

১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে সামরিক শাসক আইয়ুব খানের পতনের পর আরও অনেক রাজনৈতিক সাথে তিনিও জেল থেকে ছাড়া পেয়ে আবার রাজনীতিতে মনোনিবেশ করেন।

মুক্তিযুদ্ধেও তিনি সক্রিয় ছিলেন। কমিউনিস্ট পার্টি ও ছাত্র ইউনিয়ন যে গেরিলা বাহিনী গঠন করেছিলো তাতেও তিনি সংগঠক ছিলেন।

তবে মুক্তিযুদ্ধের পর আবার ন্যাপের রাজনীতি শুরু করেন। সে সময় তিনি আওয়ামী লীগের কট্টর সমালোচক হিসেবে আলোচিত ছিলেন।

“আওয়ামী লীগের সমালোচক ছিলেন। পরে ১৯৭৯ সালে আওয়ামী লীগেই যোগ দিয়ে শেখ হাসিনার আস্থাভাজন হয়ে ওঠেছিলেন। মূলত শেখ হাসিনার বিষয়ে কট্টর ছিলেন তিনি। শেখ হাসিনাকে যারা ঘিরে ছিলেন এবং পরে তাকে বেপরোয়া হয়ে উঠতেও সাহায্য করেছেন- মতিয়া চৌধুরীও ছিলেন তাদের একজন,” বলছিলেন মহিউদ্দিন আহমেদ।

২০০৭ সালে বাংলাদেশে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা দলটিতে সংস্কার আনার পক্ষে অবস্থান নেয়। এর বিপরীতে মতিয়া চৌধুরীসহ অন্যরা শেখ হাসিনার পক্ষে তাদের দৃঢ় অবস্থান প্রকাশ করেন।

পরে শেখ হাসিনা কারাগার থেকে বেরিয়ে আসেন এবং ২০০৯ সালের নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় গেলে মতিয়া চৌধুরীর অবস্থান দলে আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে।

২০০৪ সালে সরকার বিরোধী এক কর্মসূচিতে মতিয়া চৌধুরী

ছবির উৎস,Getty Images

ছবির ক্যাপশান,২০০৪ সালে সরকার বিরোধী এক কর্মসূচিতে মতিয়া চৌধুরী

মোজাম্মেল হোসেন মঞ্জু বলছেন মুক্তিযুদ্ধসহ জাতীয় জীবনের নানা উত্থান পতনে মতিয়া চৌধুরীর নেতৃত্ব তারা দেখেছেন।

“ষাটের দশকের বর্ণাঢ্য যুগে যে কয়জন ছাত্রনেতার নাম শুনেছি তার মধ্যে একজন মতিয়া চৌধুরী। তবে দীর্ঘ বাম রাজনীতির অভিজ্ঞতা ও ব্যক্তিত্বের প্রখরতা নিয়ে তিনি হয়ে গেলেন শেখ হাসিনার অনুসারী। দলকে ইতিবাচক ধারায় রাখতে কার্যকর কোন ভূমিকা রাখতে পারেননি তিনি,” বলছিলেন তিনি।

তবে তিনি মনে করেন মতিয়া চৌধুরীর ব্যক্তিগত আত্মত্যাগ ও দেশপ্রেম তাকে অনেকটা সময় রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিক করে রাখবে।

“এমন দেশপ্রেম ও আত্মত্যাগ খুব বেশি দেখা যায় না। মন্ত্রী হিসেবেও তার খুব একটা সমালোচনা নেই”।

মতিয়া চৌধুরী শেরপুর-১ আসন থেকে বেশ কয়েকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৯৬, ২০০৯ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী ছিলেন।

এরপর ২০২৪ সালের নির্বাচনের পর জাতীয় সংসদের উপ-নেতা করা হয়েছিলো তাকে।

মন্ত্রিসভায় মতিয়া চৌধুরীর সহকর্মী সাবেক পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান বলছেন সততা ও সাদামাটা জীবনযাপন মতিয়া চৌধুরীকে গণমানুষের নেতায় পরিণত করেছিলো।

“তিনি ছিলেন আমাদের ছাত্রজীবনের আইকন। সব প্রগতিশীল আন্দোলনে ছিলেন সামনের সাড়িতে। মন্ত্রী হিসেবেও প্রশংসা কুড়িয়েছেন। সততা ও নিষ্ঠার প্রশ্নে কখনো তাকে আপোষ করতে দেখিনি,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

আজকের যুগের মতো হাতে হাত রেখে পার্কে বা রেস্টুরেন্টে মুখোমুখি বসার পরিবেশ-সুযোগ বা ইচ্ছে কোনোটাই ছিল না তাদের। রাজনীতির মাঠে ব্যস্ত ছিলেন, তবু সেটা প্রেমই ছিল। মতিয়া চৌধুরী জানিয়েছেন বজলুর রহমানের সঙ্গে তার প্রেম ও পরিণয়ের কাহিনি।  

তাদের ঠিক প্রথাগত প্রেম ছিল না। ছিল পরস্পরের প্রতি ভালো লাগা, শ্রদ্ধাবোধ, বিশ্বাস আর আকর্ষণ। দুজন দুজনের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলেন জীবনে চলার পথে সঙ্গী হবেন, একসঙ্গে জীবন কাটাবেন, বিয়ে করে সংসার করবেন; হবেন পরস্পরের প্রতি নির্ভরশীল, বন্ধু ও সহযোগী।

মতিয়া চৌধুরীর প্রেম ও বিয়ের গল্প

আজকের যুগের মতো হাতে হাত রেখে পার্কে বা রেস্টুরেন্টে মুখোমুখি বসার পরিবেশ-সুযোগ বা ইচ্ছে কোনোটাই ছিল না তাদের। ইচ্ছা ছিল লেখাপড়া শেষে কম-বেশি গুছিয়ে নিয়ে বিয়ে করবেন, কিন্তু বিশেষ পরিস্থিতির কারণে একজনের লেখাপড়া শেষ হওয়ার আগেই তারা বিয়ের পিঁড়িতে বসতে বাধ্য হন। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী এবং দৈনিক সংবাদের প্রয়াত সম্পাদক বজলুর রহমানের প্রেম-বিয়ে-ভালোবাসার গল্পটি এ রকম।

সফল রাজনীতিক, দুবারের কৃষিমন্ত্রী, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী তার প্রেম ও বিয়ের গল্প নিউজবাংলার কাছে তুলে ধরেছেন।

মতিয়া চৌধুরী ও বজলুর রহমানের পরিচয় ষাটের দশকের শুরুতে, বরিশালে। মতিয়া চৌধুরী পিরোজপুরের সন্তান। বজলুর রহমান ময়মনসিংহের। বজলুর রহমান তখন বরিশালে তার গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করছিলেন। থাকতেন শহরের একটি মেসে। সেখানে তার রুমমেট ছিলেন মতিয়া চৌধুরীর ছোট মামা মোস্তফা জামাল হায়দার, যিনি মতিয়া চৌধুরীর চেয়ে মাত্র আট মাসের বড় ছিলেন। এ কারণে মামার সঙ্গে তার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল।

মামার সূত্রেই মামার রুমমেট বজলুর রহমানের সঙ্গে পরিচয় হয় মতিয়ার। পরবর্তী দেখা-সাক্ষাৎগুলোতে ধীরে ধীরে ভালো লাগা গড়ে ওঠে। পরিচয়ের পর থেকেই মতিয়া চৌধুরীদের বাসায় বজলুর রহমানের যাতায়াত বেড়ে যেতে থাকে। বাসার আড্ডার ভিড়ে তারা বুঝে নেন একে অপরের মনের কথা। দুজন সিদ্ধান্ত নেন লেখাপড়া শেষে সুবিধামতো সময়ে বিয়ে করবেন। বিয়ে তারা করেছিলেন, কিন্তু সেটা সুবিধামতো সময়ে হয়নি; বরং ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ সময়ে। ১৯৬৪ সালের ১৮ জুন পারিবারিক আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে তাদের বিয়ে হয়, কিন্তু বিয়ের আগে ঘটে এক নাটকীয় ঘটনা।

ইডেন কলেজে এইচএসসি এবং বিএসসি শেষে ১৯৬৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জীববিজ্ঞানে মাস্টার্সে ভর্তি হন মতিয়া চৌধুরী। ততদিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে মাস্টার্স শেষ করে দৈনিক সংবাদে সহকারী সম্পাদক (অ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটর) হিসেবে যোগ দিয়েছেন বজলুর রহমান। দুজনেই ছাত্র ইউনিয়ন করতেন, তবে ক্যাম্পাসে বা রাজপথে তাদের দেখা-সাক্ষাৎ হয়নি বললেই চলে। তাদের ভাব বিনিময় হতো মতিয়া চৌধুরীদের বাসায়।

মতিয়া চৌধুরী আগে থেকে সক্রিয় ছাত্র রাজনীতি করতেন, যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আরও বেগবান হয়েছে। ১৯৬৩-৬৪ সালে ছাত্র ইউনিয়ন থেকে রোকেয়া হলের ভিপি এবং ১৯৬৪ সালে ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন তিনি। সে সময় যে কয়েকজন ছাত্রনেতা আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাদের অন্যতম ছিলেন মতিয়া চৌধুরী। তাকে আন্দোলন থেকে কোনোভাবে নিবৃত্ত করতে না পেরে সরকার ভিন্ন পন্থা বেছে নেয়। তার বাবা তৎকালীন পুলিশ কর্মকর্তা মহিউদ্দিন আহমেদ চৌধুরীকে চাপ দিতে শুরু করে সরকার।

একপর্যায়ে মতিয়া চৌধুরীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার হুমকিও দেয়া হয়। এ বিষয়ে মতিয়া জানান, তারা বাবাকে একটি চিঠি দেয়া হয়, যাতে লেখা ছিল ‘কন্ট্রোল ইয়োর ওয়ার্ড (Ward), আদারওয়াইজ ডিপার্টমেন্টাল অ্যাকশন শুড বি টেইকেন এগেইনস্ট ইউ।’

এরপর মতিয়া চৌধুরী সিদ্ধান্ত নেন বাবাকে অভিভাবকের দায়িত্ব থেকে ভারমুক্ত করার। তিনি তার ভাইয়ের মাধ্যমে বজলুর রহমানকে চিঠি পাঠান, যাতে বজলুর রহমান বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসে। চিঠি পেয়ে মতিয়া চৌধুরীর বাসায় বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে হাজির হন বজলুর রহমান। মতিয়া চৌধুরীর বাবা তার সঙ্গে কথা বলেন।

তখন মতিয়া তার বাবাকে জানান, তিনি অভিভাবকত্ব থেকে তাকে মুক্তি দিতে চান। এর প্রতিক্রিয়ায় তার বাবার মুখে কষ্টের ছায়া পড়ে। তিনি বজলুর রহমানের প্রস্তাবে আপত্তি না করে তাকে পারিবারিকভাবে প্রস্তাব পাঠাতে বলেন। পরে বজলুর রহমান অভিভাবকদের নিয়ে মতিয়া চৌধুরীর বাসায় গিয়ে প্রস্তাব দেন। আলাপ-আলোচনা শেষে দুই পরিবারের সম্মতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯৬৪ সালের ১৮ জুন তাদের বিয়ে হয়।

মতিয়া চৌধুরী জানান, বিয়ের অল্প কিছুদিন পরই তিনি গ্রেপ্তার হন; শুরু হয় ছন্নছাড়া জীবন। রাজনীতি এবং সরকারবিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে পুলিশের গ্রেপ্তার এড়াতে বারবার পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে; সংসার সেভাবে করা হয়ে ওঠেনি।

রাজনৈতিক জীবনে মতিয়া চৌধুরীকে ১৫ বার গ্রেপ্তার হতে হয়েছে। এর মধ্যে আইয়ুব শাসনামলে পরপর চারবার জেলে যেতে হয়েছে তাকে। শেষ দুই বছর টানা জেলেই থাকতে হয়েছে। ১৯৬৯ সালে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জাতি স্বৈরশাসকের কবল থেকে মুক্তি পেলে তিনিও মুক্তি পান।

১৯৭৫ সালের পর প্রাণনাশের হুমকিতে বেশ কয়েক মাস কাটিয়েছেন আত্মগোপনে। সেনাশাসক জিয়াউর রহমানের আমলে আবারও জেলে যেতে হয়েছে। টানা পাঁচ মাস কারাগারেই কাটান। এরশাদ সরকারের আমলে ৯ বার যেতে হয়েছে কারাগারে।

১৯৯১ সালে খালেদা জিয়া ক্ষমতাসীন হওয়ার পর আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মতিয়া চৌধুরীকেও জেলে যেতে হয়।

ছাত্ররাজনীতি করতে গিয়ে মাস্টার্স শেষ করতে পারেননি। প্রয়োজন হয় অভিভাবক বদলের। রাজপথের আন্দোলন, জেল-জুলুম আর নির্যাতনের দিনগুলোতে বটবৃক্ষের মতোই ছায়া দিয়েছেন জীবনসঙ্গী বজলুর রহমান। ২০০৮ সালে বজলুর রহমানের মৃত্যু এসে বিচ্ছেদ ঘটায় যৌথ পথ চলার।

মৃত্যু

মতিয়া চৌধুরী ২০২৪ সালের ১৬ অক্টোবর ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।তাকে দাফনের জন্য তার পরিবারের পক্ষ থেকে শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে প্লট চেয়ে আবেদন করা হলেও প্রধান উপদেষ্টা তা অনুমোদন না করায় তাকে তার স্বামী বজলুর রহমানের কবরের উপরে সমাহিত করা হয়।একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধাদের মৃত্যুর পর দাফনের আগে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ‘গার্ড অব অনার’ দেওয়ার নিয়ম থাকলেও মতিয়া চৌধুরীকে তা দেওয়া ছাড়াই দাফন করা হয়।

What's Your Reaction?

Like Like 0
Dislike Dislike 0
Love Love 0
Funny Funny 0
Angry Angry 0
Sad Sad 0
Wow Wow 0