ডনা থিও স্ট্রিকল্যাণ্ড এর জীবনী - biography of Donna Strickland

ডনা থিও স্ট্রিকল্যাণ্ড এর জীবনী - biography of Donna Strickland

May 13, 2025 - 13:01
May 14, 2025 - 18:20
 0  1
ডনা থিও স্ট্রিকল্যাণ্ড এর জীবনী - biography of Donna Strickland

৫৫ বছর পর পদার্থবিজ্ঞানে নোবেলজয়ী নারী ডোনা স্ট্রিকল্যান্ড

ডনা থিও স্ট্রিকল্যাণ্ড

লেজার রশ্মির পালসের দৈর্ঘ্য ছোট করে এনে এর শক্তি বহুগুণে বাড়িয়ে তোলার কৌশল লেজার মাইক্রোমেশিন, লেজার সার্জারী, ভেষজবিদ্যা এবং মৌলিক বিজ্ঞানের অধ্যয়নে ব্যবহৃত হয়।

তিনি ওয়াটারলু বিশ্ববিদ্যালয়ের মহাকাশ বিভাগ ও পদার্থবিজ্ঞানের সহযোগী অধ্যাপক। মারি ক্যুরি  মারিয়া গোপার্ট মায়ারের পরে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল বিজয়ী তিনি তৃতীয় নারী।

প্রাথমিক জীবন ও শিক্ষা:

ডনা স্ট্রিকল্যাণ্ড কানাডার অন্টারিওর গুলেফ শহরে ১৯৫৯ সালের ২৭ মে জন্মগ্রহণ করেন। ইংরেজি শিক্ষকএডিট যে র‍্যানি এবং তড়িৎ প্রকৌশলী লিলয়েড স্ট্রিকল্যাণ্ডের সন্তান তিনি।

ডনা স্ট্রিকল্যান্ড ওয়াটারলু বিশ্ববিদ্যালয়ে তার সঙ্গীদের নিয়ে

স্ট্রিকল্যাণ্ড ম্যাকমাস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চেয়েছিলেন, কারণ প্রকৌশল পদার্থবিজ্ঞান বিশেষ করে লেজার ও তড়িৎ অপটিক্সের প্রতি তার আগ্রহ ছিল। ​১৯৮১ সালে স্ট্রিকল্যাণ্ড ম্যাকমাস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকৌশল পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক সম্পন্ন করেন। এবং ১৯৮৯ সালে রোচেস্টার বিশ্ববিদ্যলয় থেকে পদার্থবিজ্ঞানে, (মুলত অপটিক্সের উপর) পিএইচডি করেন। তার ডক্টরাল থিসিসের শিরোনাম ছিল "ডেভেলপমেন্ট অব এন আল্ট্রা-ব্রাইট লেসার এন্ড এন এপ্লিকেশন টু মাল্টিফোটন আয়োনাইজেশন"। তিনি ডক্টরাল রিসার্চ সম্পন্ন করেন ল্যাবরেটরী ফর লেজার এনার্জেটিক্সে এবং তার বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা ছিলেন জেরার্ড মুরু। তারা যুগ্মভাবে ১৯৮৫ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে চার্পড পালস অ্যামপ্লিফিকেশনের এমন কৌশল আবিষ্কার করেন। যার ফলে "লেজার রশ্মির পালসের দৈর্ঘ্য ছোট করে এনে এর শক্তি বহুগুণে বাড়িয়ে তোলা হয় এবং লেসার বিমের কোনো ক্ষতিও হয় না"। এ আবিষ্কারের দরুন তারা দুইজনেই ২০১৮ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল লাভ করেন। সিপিএ পদ্ধতিতে শুধু পালসের শক্তিই বহুগুণ বৃদ্ধিই নয়, লেজার সিস্টেমের আকারো অনেক ছোট করে আনা সম্ভব হয়েছে, যার ফলে একটি টেরাওয়াট লেজার সিস্টেম সাধারণ একটি টেবিলের ওপর ("table-top terawatt lasers") স্থাপন করা সম্ভব।

পুরস্কার এবং পরিচিতি

তিনি ২০১১ তে সহ সভাপতি এবং ২০১৩ তে

 তাকে অভিনন্দন জানান, তিনি বলেন, "ড. স্ট্রিকল্যান্ড যা অর্জন করেছেন নারীর পদার্থবিজ্ঞানের অর্জন হিসেবে তাকে উৎযাপন করা উচিত এবং নারীর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে পেশা গঠনের জন্য তার এ অর্জন প্রেরণাদায়ী হয়ে উঠবে। যখন নারীর ক্ষমতায়ন হয় তাদের প্রয়োজন স্টেম ক্ষেত্রে উন্নয়ন করা, যার ফলে সবাই সুবিধাভোগ করতে পারে...[ড.মুরু এবং ড. স্ট্রিকল্যান্ডের] কাজ চোখের অপারেশনে ভূমিকা রাখবে একইসাথে তা ক্যান্সার থেরাপি ও ভবিষ্যতে পদার্থবিজ্ঞান সংক্রান্ত গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রাখবে বলেই আশা করা যায়।

মাত্র তৃতীয় নারী হিসেবে পদার্থে নোবেল জিতে নেয়া বিজ্ঞানী

২০১৮ সালের ২ অক্টোবর। পদার্থবিজ্ঞানে নোবেলজয়ী বিজ্ঞানীদের নাম ঘোষণার জন্য রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্স থেকে তোড়জোড় চলছে। অবশেষে এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। ঘোষিত হলো তিন পদার্থবিদের নাম- আমেরিকান আর্থার অ্যাশকিন, ফ্রেঞ্চ জেরার্ড মোরোউ এবং কানাডিয়ান ডোনা স্ট্রিকল্যান্ড। অপটিকাল টুইজার আবিষ্কারের জন্য অ্যাশকিন পাবেন পুরস্কারের অর্ধেক অর্থ। আঙুলের মতো লেজার বিমের মাধ্যমে ক্ষুদ্র কণা, পরমাণু, কোষ কিংবা ভাইরাসকে নড়াচড়া করানো যাবে এর মাধ্যমে। আর পুরস্কারের বাকি অর্ধেক ভাগাভাগি করে নেবেন মোরোউ এবং স্ট্রিকল্যান্ড, যৌথভাবে চার্পড পালস অ্যামপ্লিফিকেশন (CPA) আবিষ্কারের জন্য। এর মাধ্যমে স্বল্পদৈর্ঘ্যের, কিন্তু উচ্চ শক্তিসম্পন্ন লেজার লাইটের পালস নির্মাণ সম্ভব।

সাথে সাথে বিশ্বজুড়ে বিজ্ঞানী সম্প্রদায়ের মাঝে সাড়া পড়ে গেলো। ৫৫ বছর পরে নোবেল জিতে নেয়া নারী পদার্থবিদের নামে সবাই ইন্টারনেটে খোঁজাখুঁজি শুরু করলেন। কিন্তু কী তাজ্জব ব্যাপার, উইকিপিডিয়ায় তো ডোনা স্ট্রিকল্যান্ডের নামে কোনো পেজই নেই ।

তার মাত্র একদিন আগের কথা। ইতালীয় গবেষক আলেসান্দ্রো স্ট্রামিয়া নোবেল অরগানাইজেশনের এক সেমিনারে বক্তব্য দিয়ে সমালোচনার ঝড় বইয়ে দিয়েছেন। তার দাবি, “পদার্থবিদ্যার সৃষ্টি এবং উন্নতি এসেছে কেবলই পুরুষদের কাঁধে ভর করে”। নারীবিদ্বেষী এই বক্তব্যের জন্য ইউরোপের খ্যাতনামা ফিজিক্স রিসার্চ সেন্টার সার্ন তাকে বরখাস্তও করে দিয়েছে। তবে চোখে আঙুল দিয়ে দেখানোর কাজটি কিন্তু করলেন স্ট্রিকল্যান্ডই।

সেই কথা থাক। নারী হিসেবে না, একজন পদার্থবিদ হিসেবে ডোনা কীভাবে লেজার টেকনোলজিতে যুগান্তকারী ভূমিকা রেখে চলেছেন, সেই নিয়েই আমাদের আজকের এই আয়োজন।

১৯৫৯ সালের ২৭ মে কানাডার অন্টারিওতে জন্মগ্রহণ করেন ডোনা থিও স্ট্রিকল্যান্ড। অসাধারণ প্রতিভাধর এই নারীর মা লিলয়েড স্ট্রিকল্যান্ডও ছিলেন একজন ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। সুতরাং পদার্থবিদ্যার প্রতি আগ্রহটা তার জন্মগতই।

স্ট্রিকল্যান্ড ১৯৮১ সালে কানাডার হ্যামিল্টনের ম্যাকমাস্টার ইউনিভার্সিটি থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং ফিজিক্সের ওপরে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপরে তিনি উচ্চশিক্ষা অর্জনের জন্য যান নিউ ইয়র্কের রচেস্টার ইউনিভার্সিটিতে। সেখানেই প্রথম পরিচয় হয় ফরাসি পদার্থবিদ জেরার্ড মোরোউর সাথে। মোরোউ ছিলেন স্ট্রিকল্যান্ডের ডক্টোরাল সুপারভাইজর। ১৯৮৯ সালে তিনি ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। তার থিসিসের নাম ছিল ‘ডেভেলপমেন্ট অফ অ্যান আলট্রা-ব্রাইট লেজার অ্যান্ড অ্যান অ্যাপ্লিকেশন টু মাল্টি-ফোটন আয়োনাইজেশন।

পরবর্তীতে কানাডার অটোয়াতে অবস্থিত ন্যাশনাল রিসার্চ কাউন্সিলে ১৯৮৮ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত সহকারী গবেষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন স্ট্রিকল্যান্ড। এর পরে ক্যালিফোর্নিয়ার লরেন্স লিভারমোর ন্যাশনাল ল্যাবরেটরির লেজার বিভাগে কাজ করেন। খ্যাতনামা প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির অ্যাডভান্সড টেকনোলজি সেন্টারে ১৯৯২ সাল থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত ফটোনিক্স এবং অপ্টো-ইলেকট্রনিক ম্যাটেরিয়াল বিষয়ক গবেষণা টিমের অংশ ছিলেন তিনি। অবশেষে ১৯৯৭ সালে কানাডার ওয়াটারলু ইউনিভার্সিটির পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর হিসেবে যোগদান করেন। সেই বিভাগে ফুলটাইম প্রফেসর হিসেবে যোগদান করা প্রথম নারী তিনিই। মজার ব্যাপার, যোগদানের ২১ বছর পেরিয়ে গেলেও প্রফেসর পদের জন্য আবেদন করার ব্যাপারে কোনো গুরুত্ব দেননি তিনি। তবে নোবেলজয়ের পরে এ পদে আবেদন করেছেন এবং সাথে সাথেই প্রফেসর পদে উন্নীত হয়েছেন। স্ট্রিকল্যান্ড ২০০৮ সাল থেকে অপটিকাল সোসাইটির সদস্য। এর লিডারের দায়িত্বও পালন করেছেন ২০১১ এবং ২০১৩ সালে।

১৯০৩ সালে সর্বপ্রথম নারী হিসেবে পদার্থে নোবেল পেয়েছিলেন প্রখ্যাত পোলিশ বিজ্ঞানী মেরি কুরি, পরে ১৯১১ সালে রসায়নেও নোবেল পেয়েছিলেন তিনি। আর ১৯৬৩ সালে ইউজিন উইগনার আর জে হ্যান্স জেনসেনের সাথে যুগ্মভাবে নোবেল পেয়েছিলেন আরেক পোলিশ নারী পদার্থবিদ মারিয়া গেপার্ট মেয়ার।

What's Your Reaction?

Like Like 0
Dislike Dislike 0
Love Love 0
Funny Funny 0
Angry Angry 0
Sad Sad 0
Wow Wow 0