হারম্যান হলেরিথ এর জীবনী | Biography of Herman Hollerith
হারম্যান হলেরিথ এর জীবনী | Biography of Herman Hollerith

হারম্যান হোলেরিথ ও কম্পিউটার পাঞ্চ কার্ড
জন্ম | ২৯ ফেব্রুয়ারি, ১৮৬০, বাফেলো, নিউ ইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র |
মৃত্যু
|
১৭ নভেম্বর, ১৯২৯, ওয়াশিংটন, ডিসি (বয়স ৬৯ বছর) |
উদ্ভাবন | ট্যাবুলেটিং মেশিন (Tabulating Machine) |
হারম্যান হলারিথ
(ইংরেজি ভাষায়: Herman Hollerith) (২৯শে ফেব্রুয়ারি, ১৮৬০ – ১৭ই নভেম্বর, ১৯২৯) একজন মার্কিন পরিসংখ্যানবিদ যিনি পাঞ্চ-কার্ডভিত্তিক যান্ত্রিক ট্যাবুলেটর উদ্ভাবন করেন যা দিয়ে কোটি কোটি উপাত্ত থেকে পরিসংখ্যান দ্রুত ট্যাবুলেট করা যেত।
ব্যক্তিগত জীবন
হলারিথ নিউ ইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের বাফেলো শহরে জার্মান পিতা-মাতার ঘরে জন্ম নেন। সিটি কলেজ অফ নিউ ইয়র্ক এবং কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ মাইন্স-এ পড়াশোনা করেন ও মাইনিং বা খনন প্রকৌশলী হিসেবে স্নাতক হন। ১৮৯০-এ কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি লাভ করেন। ১৯২৯ সালে হার্ট অ্যাটাকে মারা যান।
কর্মজীবন
পড়াশোনা শেষ করে তিনি মার্কিন আদম শুমারি দফতরে চাকরি পান। পরবর্তীকালে ম্যাসাচুসেটস ইন্সটিটিউট অফ টেকনলজিতে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন।
তার শ্যালক রেশম-বোনার ব্যবসায় জড়িত ছিলেন এবং তার কাছ থেকেই তিনি জাকার তাঁত (Jacquard loom)-এর কথা শোনেন। তাঁতটিতে কার্ডের ভেতরে ফুটো করে রেশম বুননের জটিল নকশাগুলি প্রোগ্রাম করা হত। এর থেকেই পরে ট্রেন টিকেটের পাঞ্চ ছবির চলন শুরু হয়, যাতে যাত্রীর বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য (যেমন উচ্চতা ও চুলের রঙ) কন্ডাকটর টিকেটের কোণায় পাঞ্চ করে রাখতে পারতেন। এইসব উদাহরণ দেখে হলারিথ ঠিক করলেন যে আদমশুমারির তথ্য সংগ্রহকারীরাও একই পদ্ধতি প্রয়োগ করতে পারেন। তারা পাঞ্চ কার্ডে তথ্য সংগ্রহ করবেন এবং পরে এই কার্ডগুলি পরে জাকার তাঁতের অনুসরণে তৈরি করা একটি যন্ত্র দিয়ে সুবিন্যস্ত করে নেয়া হবে। এই উদ্ভাবনটির নতুনত্ব ছিল এই যে এক কার্ডেই কোন ব্যক্তির সমস্ত তথ্য পাওয়া যেত এবং কার্ডের ফুটোগুলি যান্ত্রিকভাবে নয়, বরং বৈদ্যুতিকভাবে অনুধাবন করা হত।
ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস মেশিন্স
১৯১১ সালে হলারিথের প্রতিষ্ঠান আরও দুটি কোম্পানির সাথে মিলে কম্পিউটিং ট্যাবুলেটিং রেকর্ডিং কর্পোরেশন গঠন করে। পরে ১৯২৪ সালে টমাস জে ওয়াটসনের সভাপতিত্বে কোম্পানিটির নাম বদল করে রাখা হয় আইবিএম।
হারম্যান হোলেরিথ ও কম্পিউটার পাঞ্চ কার্ড
হারম্যান হোলেরিথ প্রথম যন্ত্রচালিত ক্যালকুলেটর ডিজাইন করেননি। এই কৃতিত্ব ইংরেজ গণিতবিদ চার্লস ব্যাবেজ-এর, যিনি ১৮২৩ সালে একটি যান্ত্রিক ক্যালকুলেটরের ধারণা দেন। তবে, অর্থের অভাবে তিনি তার মেশিনটি নির্মাণ করতে পারেননি। ব্যাবেজ তার ডিজাইনে একটি পাঞ্চ কার্ড সিস্টেম অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন, যা ১৭৪৫ সালে ফ্রান্সে উদ্ভাবিত জাকার্ড লুম-এর মতো। জাকার্ডের লুম বস্ত্রের ডিজাইন স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্ধারণের জন্য পাঞ্চ কার্ড ব্যবহার করত।
হোলেরিথের ট্যাবুলেটিং মেশিন, যা প্রথমে "প্রেস" নামে পরিচিত ছিল, এতে একটি বৈদ্যুতিক সেন্সিং যন্ত্র ছিল যা নন-কন্ডাক্টিভ উপাদানে নির্দিষ্ট স্থানে গর্তের সংখ্যা রেকর্ড করত। যখন কার্ডে গর্ত থাকত, তখন বৈদ্যুতিক সিগনাল প্রবাহিত হয়ে সার্কিট সম্পূর্ণ হতো। শুরুতে তিনি ছিদ্রযুক্ত টেপ ব্যবহার করতেন, পরে তা বদলে তিনি এমন কার্ড ব্যবহার শুরু করেন যেগুলো সেই সময়ের ডলার বিলের মাপের ছিল। এর ফলে মেশিনে অর্থ সংরক্ষণের জন্য ব্যবহারযোগ্য কেস অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হয়।
হোলেরিথের ট্যাবুলেটিং মেশিনের কাজের ধাপ:
১. তথ্য প্রবেশ: অপারেটর ডেটা অনুযায়ী বিভিন্ন প্যাটার্নে ছোট কার্ডে গর্ত করেন। প্রতিটি গর্ত একটি প্রশ্নের ভিন্ন উত্তর নির্দেশ করে (যেমন: বয়স, চালের পরিমাণ, মৃত্যু কারণ)।
২. বাছাই প্রক্রিয়া: অপারেটর কার্ডগুলো মেশিনের সোর্টারে চালান, যা নির্দিষ্ট শ্রেণিতে বিভাজন করে (যেমন ২০-২৯ বছর বয়সীদের একসঙ্গে)।
৩. গণনা: একই সঙ্গে কার্ডগুলো গণনা করে অ্যাকাউন্টিং মেশিন দ্বারা প্রতিটি শ্রেণির ফলাফল সংরক্ষণ করা হয়।
এই বৈদ্যুতিক-যান্ত্রিক পদ্ধতিতে প্রতিটি পাঞ্চ গর্তের সঙ্গে একটি ডায়াল কাউন্টার যুক্ত ছিল। প্রতিবার বৈদ্যুতিক সংকেত প্রবাহিত হলে সংশ্লিষ্ট ডায়াল এক ইউনিট বাড়ত। প্রতিটি ডায়ালে ঘড়ির মতো দুটি হাত ছিল—একটি এককের সংখ্যা, অন্যটি দশকের সংখ্যা দেখাত। প্রতি প্রসেসিং সেশনের শেষে অপারেটররা ডায়াল থেকে মোট ফলাফল লিপিবদ্ধ করতেন।
আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি:
১৮৯০ থেকে ১৯০০ সাল পর্যন্ত হোলেরিথ তার মেশিনের উন্নয়ন চালিয়ে যান। এ সময় তার পদ্ধতি কানাডা, নরওয়ে, অস্ট্রিয়া ও যুক্তরাজ্য-এর আদমশুমারিতে ব্যবহৃত হয়। ইউরোপীয় পণ্ডিতরা আমেরিকার তুলনায় তার উদ্ভাবনের গুরুত্ব দ্রুত বুঝতে পেরেছিলেন। ১৮৯৫ সালে তিনি বার্ন, সুইজারল্যান্ড-এ আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যান ইনস্টিটিউটের এক সম্মেলনে তার প্রযুক্তির ওপর মন্তব্য করেন।
ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও উত্তরোত্তর সাফল্য:
১৮৯৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে এসে তিনি Tabulating Machine Company (TMC) প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি তার যন্ত্র ও কার্ড উৎপাদন ও বিক্রি শুরু করেন। পরবর্তীতে এতে কার্ড ফিডার, স্বয়ংক্রিয় পাঞ্চিং, এবং সাজানো ও যোগ করার সুবিধা যুক্ত করা হয়। এগুলো রেলপথের মালামালের হিসাব ও কৃষিপণ্যের উৎপাদন রেকর্ড করতে ব্যবহৃত হতে থাকে।
হোলেরিথের উদ্ভাবনের পেটেন্ট ও বিক্রি তাকে মিলিয়নিয়ার করে তোলে। ১৯১১ সালে TMC একীভূত হয়ে Computing Scale Company of America ও International Time Recording Company-র সঙ্গে মিলে CTR (Calculating-Tabulating-Recording Company) হয়।
টমাস জে. ওয়াটসনের ভূমিকা:
১৯১৪ সালে CTR একটি নতুন ম্যানেজার টমাস জে. ওয়াটসন-কে নিয়োগ দেয়, যিনি আগে National Cash Register (NCR)-এ কাজ করতেন। যদিও তিনি ১৯১২ সালে Sherman Antitrust Act লঙ্ঘনের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হন, ১৯১৫ সালে মামলাটি বাতিল হয় এবং তিনি CTR-এর প্রেসিডেন্ট হন।
ওয়াটসন হোলেরিথের প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ গুরুত্ব বুঝে ওঠেন। তিনি CTR-কে কেবল স্কেল ও ঘড়ি নয়, বরং বড় আকারের ট্যাবুলেটিং সিস্টেম তৈরির মাধ্যমে অফিস ও সরকারি কাজের জন্য অনন্য করে তোলেন। তিনি কম দামে গণবিক্রিত পণ্য নয়, বরং উন্নত প্রযুক্তির দিকে মনোযোগ দেন।
মৃত্যু ও উত্তরাধিকার
হারম্যান হোলেরিথ ১৯২৯ সালের ১৭ নভেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। তাকে ওয়াশিংটন, ডিসি’র জর্জটাউন অঞ্চলের ওক হিল সিমেটারি-তে সমাহিত করা হয়েছে।
হোলেরিথ কার্ড, হোলেরিথ স্ট্রিংস, এবং হোলেরিথ কনস্ট্যান্টস তার নাম অনুসারে নামকরণ করা হয়েছিল, যা তার অবদানের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি স্বরূপ।
তার প্রপৌত্র রাইট রেভারেন্ড হারম্যান হোলেরিথ চতুর্থ ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ার সাউদার্ন ডায়োসিসের এপিসকোপাল (Episcopal) বিশপ। অপর এক প্রপৌত্র র্যান্ডলফ মার্শাল হোলেরিথ হলেন একজন এপিসকোপাল যাজক এবং বর্তমানে ওয়াশিংটন ন্যাশনাল ক্যাথেড্রাল-এর ডিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
sourse: encyclopedia ... wikipedia
What's Your Reaction?






