হাবিল (আ.) এর জীবনী | Biography of Abel

হাবিল (আ.) এর জীবনী | Biography of Abel

May 28, 2025 - 23:18
Jun 20, 2025 - 18:40
 0  1
হাবিল (আ.) এর জীবনী | Biography of Abel

হাবিল
הֶבֶל
هابيل
পিতা-মাতা

আদম ও হবা

আত্মীয়

আদিপুস্তক মতে:
কয়িন (ভাই)
শেথ (ভাই)
পরবর্তীকালীন ঐতিহ্যমতে:
অক্‌লিমা (বোন)
অবান (বোন)
অসুরা (বোন)

হাবিল (আ.) এর জীবনী

হেবল

 (হিব্রু ভাষায়: הֶבֶל Héḇel, in pausa הָבֶל‬, Hā́ḇel; প্রাচীন গ্রিক: Ἅβελ, Hábel; আরবি: هابيل, প্রতিবর্ণীকৃত: Hābīl, অনুবাদ 'হাবিল') হলেন ইব্রাহিমীয় ধর্মসমূহে বাইবেলের আদিপুস্তকে উল্লিখিত একজন ব্যক্তিত্ব। তিনি ছিলেন কাবিলের ছোট ভাই এবং প্রথম দম্পতি আদম  হাওয়ার কনিষ্ঠ পুত্র।[] তিনি ছিলেন একজন মেষপালক যিনি তার পালের প্রথমজাত কয়েকটি পশু ও এদের মেদ উপহাররূপে সদাপ্রভুর উদ্দেশে উৎসর্গ করেন। সদাপ্রভু হেবলের উপহার গ্রহণ করেন, কিন্তু তার ভাইয়ের উপহার অগ্রাহ্য করেন। হিংসার দরুন কয়িন হেবলকে হত্যা করে।

আদিপুস্তক অনুসারে, এটাই ছিল মানব ইতিহাসের প্রথম হত্যাকাণ্ড।

পরিচয়

হাবিল ছিলেন আদমের দ্বিতীয় ছেলে। তার সাথে জন্ম নেয় এক কন্যা। তার নাম গাযা। আদমের প্রথম ছেলের নাম কাবিল ও কন্যার নাম একলিমা।

বিবাহ নিয়ে কাবিলের সাথে দ্বন্দ্ব ও হাবিলের মৃত্যু

আদমকে প্রদত্ত বিধান অনুযায়ী এক গর্ভের ছেলে সাথে আরেক গর্ভের মেয়ের বিবাহ হত। এ অনুযায়ী হাবিলের সাথে বিবাহ একলিমার এবং কাবিলের সাথে বিবাহ গাযার হওয়ার কথা। একলিমা ছিলেন সুন্দরী আর গাযা ছিলেন কালো। তাই কাবিল জেদ ধরে বসে একলিমাকে বিবাহ করার। কিন্তু আদম কাবিলের দাবি প্রত্যাখ্যান করে বিফহান অনুযায়ী বিবাহ দেন। ফলে কাবিল রেগে যায় এবং হাবিলকে হত্যা করে।

কাবিল ও হাবিল নামে দুই ভাইয়ের ঘটনা ইসলামের ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইসলামের ইতিহাস অনুসারে কাবিল ও হাবিলের মাধ্যমেই প্রথম কুরবানি শুরু হয়। তাদের মধ্য থেকেই পৃথিবীতে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে এবং তাদের মাধ্যমেই মৃতদেহ কবর দেবার নিয়ম চালু হয়। জুমার নামাজের আগে কিংবা কুরবানির ঈদের নামাজের আগে বিশেষ আলোচনায় কুরবানির ইতিহাস সম্বন্ধে আলোকপাত করতে গিয়ে ইমাম সাহেবরা প্রায় সময়ই কাবিল ও হাবিলের ঘটনার উল্লেখ করেন। খ্রিস্টধর্মে তাদেরকে কেইন ও এবেল নামে ডাকা হয়। কাবিল ও হাবিলের ঘটনা সম্বন্ধে আলোচনা করতে গেলে উল্লেখ করতে হবে তাদের পিতা হযরত আদম (আ:) ও মাতা বিবি হাওয়া (আ:) এর কথা।

হযরত আদম (আ:) ও বিবি হাওয়া (আ:) উভয়ে জান্নাতের সুসজ্জিত বাগানে বসবাস করছিলেন। কিন্তু তাদের পিছু লাগলো ‘ইবলিস’ নামে এক পাপিষ্ঠ শয়তান। ইবলিস চাইলো তারা যেন সুখের জান্নাতে থাকতে না পারে। যতটা না সুখের জান্নাত থেকে বিতাড়িত করার ইচ্ছে ছিল ইবলিসের, তারচেয়েও বেশি ইচ্ছে ছিল তারা যেন আল্লাহর দেয়া আদেশ অমান্য করে তাঁকে নাখোশ করে। আদম (আ:) ও হাওয়া (আ:)-কে আল্লাহ একটি বিশেষ গাছের ফল খাওয়ার ব্যাপারে নিষেধ করেছিলেন। ইবলিস বেছে বেছে ঐ বিশেষ ফলটিকেই টার্গেট করলো। দুজনকে প্ররোচিত করে ভুলিয়ে-ভালিয়ে ঐ গাছের ফল খাইয়ে দিলো। আদম (আ:) ও হাওয়া (আ:) দৃশ্যত পাপ করে বসলেন। জান্নাতে পাপের স্থান নেই, তাই শাস্তিস্বরূপ আল্লাহ তাদেরকে পৃথিবীতে পাঠিয়ে দিলেন। বলা হলো, পৃথিবীতে ভালো কাজ করে নিজেদের মার্জনা করতে পারলে তারা আবারো জান্নাতে ফিরে যেতে পারবেন।

কিন্তু অশান্তি তারপরও রয়ে গেল, কারণ পৃথিবীতেও অস্তিত্ব বিরাজমান সেই পাপিষ্ঠ শয়তান ইবলিসের। ইবলিস শয়তান তার শেষ চাওয়া হিসেবে আল্লাহর কাছ থেকে বিশেষ কয়েকটি ক্ষমতা চেয়ে নিয়েছিল। অভিশপ্ত হবার আগে ইবলিস আল্লাহর অনেক ইবাদত করেছিল। এই ইবাদতের প্রতিদানস্বরূপ আল্লাহ তাকে তার চাহিদা অনুসারে এই ক্ষমতাগুলো প্রদান করেছিলেন। প্রাপ্ত ক্ষমতাগুলোর মধ্যে একটি হলো, যেকোনো সময় বিশ্বের যেকোনো স্থানে সে অবস্থান করতে পারবে। সে হিসেবে আদম-হাওয়ার পৃথিবীতে চলে আসা তার জন্য তেমন কঠিন কিছু নয়।

যা-ই হোক, পৃথিবীতে আগমনের পর হযরত আদম (আ:) ও বিবি হাওয়া (আ:) এর সন্তান জন্ম হতে লাগলো। ধীরে ধীরে মানুষ বাড়তে লাগলো পৃথিবীতে। কিন্তু এখানে দৃশ্যত একটি সীমাবদ্ধতা থেকে গেল। আদম (আ:) ও হাওয়া (আ:) যেহেতু পৃথিবীর প্রথম মানব-মানবী, তাই তাদের পরের প্রজন্মে যত সন্তানের জন্ম হবে তারা সকলেই হবে ভাই-বোন। ইসলামী নিয়ম অনুসারে, ভাই বোনের মাঝে কখনো বিয়ে হয় না। সে হিসেবে এটিই হতো পৃথিবীর শেষ মানব প্রজন্ম। এরপর মানবজাতি বিলুপ্ত হয়ে যেতো। কিন্তু এখানে তো পুরো মানবজাতির অস্তিত্বের প্রশ্ন, তাই বিশেষ একটি ব্যবস্থার মাধ্যমে এর সমাধান করা হলো।

বিবি হাওয়ার গর্ভে তখন সন্তান জন্ম নিতো জোড়ায় জোড়ায়। প্রতি জোড়ায় একজন ছেলে আর একজন মেয়ে জন্ম হতো। একই জোড়ার ছেলে ও মেয়েরা পরস্পর বিয়ে করতে পারবে না। বিয়ে করতে হলে ভিন্ন জোড়ার কাউকে করতে হবে। কাবিল ও হাবিল ছিল ভিন্ন জোড়ার, তাই তাদের ব্যাপারটি স্বাভাবিক নিয়মেই সমাধান হয়ে যায়। একজন আরেকজনের জোড়ার মেয়েকে বিয়ে করবে।

কিন্তু এখানে একটি সমস্যা দেখা দেয়। হাবিলের জোড়ার মেয়েটি তেমন সুন্দরী ছিল না। সেই তুলনায় কাবিলের জোড়ার মেয়েটি ছিল অনেক বেশি সুন্দরী। নিয়ম অনুসারে হাবিল অধিক সুন্দরী মেয়েটিকে পায় আর কাবিল পায় কম সুন্দরী মেয়েটিকে। কিন্তু কাবিল বেঁকে বসে, সে হাবিলের জোড়ার মেয়েটিকে বিয়ে করবে না। যেভাবেই হোক, নিজের জোড়ার সুন্দরী মেয়েটিকেই বিয়ে করবে।

এমতাবস্থায় পিতা হযরত আদম (আ:) একটি মীমাংসা করলেন। তাদের দুজনকে আল্লাহর নামে কুরবানি দিতে বললেন। যার কুরবানি আল্লাহ গ্রহণ করবেন, তার ইচ্ছাই জয়ী হবে। কার কুরবানি গৃহীত হলো আর কার কুরবানি গৃহীত হলো না, তা কীভাবে বোঝা যায়? তখনকার কুরবানি এখনকার কুরবানির মতো ছিল না। সে সময়ে কোনো জিনিস কুরবানি দিলে আসমান থেকে আগুন এসে ঐ জিনিসকে পুড়িয়ে দিতো। কুরবানির বস্তুকে ভূমি থেকে উপরে কোনো স্থানে উপস্থাপন করা হতো, আকাশ থেকে আগুন এসে যদি বস্তুকে পুড়িয়ে দিতো, তাহলে বোঝা যেতো আল্লাহ কর্তৃক কুরবানী গৃহীত হয়েছে।

পিতা আদম (আ:) এর দেওয়া মীমাংসা অনুসারে তারা উভয়েই কুরবানির বস্তু উপস্থাপন করলো আল্লাহর কাছে। হাবিল একটি সুস্থ ও মোটাতাজা দুম্বা উৎসর্গ করলো আর কাবিল তার কিছু সবজি ও শস্য উৎসর্গ করলো। তখন সবজি ও শস্যও কুরবানির জন্য উৎসর্গ করা যেতো। কোনো কোনো উৎস থেকে জানা যায়, হাবিল উৎসর্গ করেছিল উৎকৃষ্ট মানের দুম্বা আর কাবিলের শস্য ছিল নিকৃষ্ট মানের। আল্লাহ হাবিলের কুরবানিকেই কবুল করলেন। উপর থেকে আগুন দিয়ে দুম্বাটিকে পুড়িয়ে নিলেন, কিন্তু কাবিলের শস্যকে কিছুই করলেন না। সে হিসেবে বিয়ের নিয়ম আগের মতোই রইলো, হাবিল বিয়ে করবে কাবিলের জোড়ায় জন্ম নেয়া মেয়েটিকে।

কিন্তু কাবিল এই অপমান সহ্য করতে পারলো না। সে ভাবলো, হাবিলের জন্য তার কুরবানি আল্লাহ গ্রহণ করেননি। কুরবানিতে প্রত্যাখ্যাত হওয়াতে এবং স্ত্রী হিসেবে কাঙ্ক্ষিত মেয়েকে না পাওয়াতে সে অত্যন্ত ক্রোধান্বিত হয়ে গেল। ক্রোধের বশে হাবিলকে সে বললো, তোর ইচ্ছা কোনোভাবেই আমি পূরণ হতে দেবো না। প্রয়োজনে তোকে হত্যা করবো, যেন তুই আমার জোড়ার মেয়েটিকে বিয়ে করতে না পারিস

 কোনো কোনো উৎস থেকে জানা যায়, তাকে এমন সর্বনাশা ভাবনার উস্কানি দিয়েছিল সেই পাপিষ্ঠ ইবলিস শয়তান।

কাবিলের এমন আচরণে হাবিল অনেক সুন্দর উত্তর দিয়েছিল। সে বলেছিল, আল্লাহ তাদের কুরবানিই কবুল করেন যার উদ্দেশ্য সৎ। আর তুমি আমাকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে আমার গায়ে আঘাত করলেও, আমি তোমাকে কিছু করবো না। কারণ আমি আমার প্রতিপালককে ভয় করি। কিন্তু এই কথায় কাবিলের উদ্দেশ্যের কোনো পরিবর্তন হলো না। ক্রোধের বশবর্তী হয়ে সে হত্যা করলো তার আপন ভাইকে।

এরপরই কাবিলের মন গলে যায় এবং অনুভব করে, আহারে, কত বড় ভুল করে ফেললো সে! নিজের ভাইকে নিজ হাতে মেরে ফেললো, এর চেয়ে বড় ধৃষ্টতা আর কী হতে পারে! ভেতরে ভেতরে সে অনেক অনুতপ্ত হলো এবং নিজের অপকর্ম কীভাবে ঢাকবে, তা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়লো। তখনো মৃতদেহ সৎকারের ব্যাপারে কোনো নিয়ম তৈরি হয়নি, কারণ এর আগে কোনো মানুষের মৃত্যু ঘটেনি। মৃত দেহটিকে নিয়ে কী করবে এ নিয়ে যখন সে চিন্তায় মগ্ন তখন দেখলো, একটি কাক তার ঠোঁট দিয়ে ঠুকরে ঠুকরে একটি গর্ত করলো। তারপর সেই গর্তে একটি মৃত কাককে টেনে এনে কবর দিয়ে দিলো। এটি দেখে কাবিল ভাবলো, তাকেও হয়তো এভাবে কবর দিতে বলা হচ্ছে। তাই একটি গর্ত করে সে তার ভাইকে কবর দিয়ে দিলো। ইসলামের ইতিহাস অনুসারে এটিই ছিল মানবজাতির প্রথম কবর। কোনো কোনো উৎস থেকে জানা যায়, কাক দুটি ছিল ফেরেশতা এবং এদেরকে আল্লাহই পাঠিয়েছিলেন, যেন এদের দেখে কাবিল শিখতে পারে।

অনেকে দাবি করে থাকেন, হাবিলের কবর এখনো দেখা যায় এবং এটি সিরিয়ার দামেস্কে অবস্থিত। দামেস্কের উত্তরে একটি স্থান আছে, যা মাকতালে হাবিল বা হাবিলের হত্যাস্থল নামে পরিচিত। এ প্রসঙ্গে হাফিজ ইবনে আসাকির একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করেন তার একটি বইয়ে। তিনি উল্লেখ করেন, আহমদ ইবনে কাসির একবার রাসুল (সা:)-কে স্বপ্নে দেখেছিলেন। রাসুলের (সা:) পাশে হাবিলও ছিল। এক প্রশ্নের জবাবে হাবিল তখন কসম করে বললো, এটিই আমার হত্যাস্থল। তখন রাসুল (সা:) হাবিলের দাবিকে সত্য বলে সমর্থন করলেন। তবে এটি শুধুই স্বপ্ন বলে ধর্মীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারে একে গ্রহণযোগ্য বলে ধরা হয় না।

কুরআন শরীফে তাদের সম্পর্কে বিস্তারিত বলা নেই। এমনকি তাদের দুজনের নামও উল্লেখ নেই। শুধু ‘আদমের দুই পুত্র’ নামে তাদের কথা উল্লেখ আছে। তবে তৌরাত গ্রন্থ ও কিছু হাদিসে তাদের ঘটনার বিস্তারিত বলা আছে। ইবনে কাসিরের লেখা ‘আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া’তে এই ঘটনার সুন্দর বিবরণ লিপিবদ্ধ আছে।

ইসলামের দৃষ্টিকোণে কাবিল ও হাবিলের ঘটনার তাৎপর্য অনেক। কাবিল ও হাবিলের ঘটনা উল্লেখের পরপরই কুরআনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি আয়াত আছে। সেখানে উল্লেখ আছে,

কেউ কাউকে হত্যা করলে সে যেন সমস্ত মানবজাতিকেই হত্যা করলো, আর কেউ কারো প্রাণ রক্ষা করলে সে যেন সমস্ত মানবজাতিকেই রক্ষা করলো।

এ প্রসঙ্গে একটি হাদিস আছে। রাসুল (সা:) বলেছেন,

পৃথিবীতে যখনই অন্যায়ভাবে কোনো হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়, তখন পাপের একটি অংশ অবশ্যই আদমের প্রথম পুত্র কাবিলের উপর পড়ে। কেননা সে-ই প্রথম ব্যক্তি, যে অন্যায় হত্যাকাণ্ডের সূচনা করে।

প্রথম কুরবানি

আদম কাবিলের দাবি সঠিক কি না, তা প্রমাণ করার জন্য কুরবানির ব্যবস্থা করেন। কুরআনে শুধু হাবিল ও কাবিলের কুরবানি দেওয়া এবং একজনের কবুল হওয়ার কথা রয়েছে। হাবিল দিল একটি মেষ কুরবানি এবং কাবিল দিল এক আঁটি ফসল। তারা উভয়ে কুরবানি কবুল করার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে। তখন অদৃশ্য থেকে আগুন এসে হাবিলের কুরবানি গ্রাস করল, কিন্তু কাবিলের কুরবানি মাটিতে পড়ে রইল।

হজরত আদম এবং হাওয়া (আ.)–এর অনেক সন্তান ছিল। তাদের দুই ছেলে ছিল—কাবিল ও হাবিল। কাবিল ছিল বড়। মা-বাবার কথা মেনে চলত না। হাবিল ছিল ছোট। মা-বাবাকে মেনে চলত।

আদম ও হাওয়া (আ.)–এর আকলিমা নামে একটি মেয়ে ছিল। কাবিল তাকে বিয়ে করতে চাইত। কিন্তু আদম ও হাওয়া (আ.) চাইলেন আকলিমাকে ছোট ছেলে হাবিলের সঙ্গে বিয়ে দিতে। কাবিল তা মেনে নিতে পারেনি। এভাবে কাবিল নিজের মা-বাবা এবং ভাইয়ের শত্রু হয়ে গেল। তাদের মধ্যে বেঁধে গেল বিবাদ। তখন সৃষ্ট এ বিবাদ নিরসনে আল্লাহ হুকুম দিলেন, ‘তোমরা কোরবানি করে পাহাড়ের ওপর রেখে এসো। যার কোরবানি কবুল হবে, তার সঙ্গে আকলিমার বিয়ে হবে।’

এটি দেখে বড় ভাই কাবিল খুব রেগে গেল। সে হাবিলকে বলল, ‘আমি তোমাকে হত্যা করব।’ হাবিল বলল, ‘আল্লাহ সৎ বান্দার কোরবানি কবুল করেন। এখন তুমি যদি আমার সঙ্গে লড়াই করো, তবে আমি তোমার গায়ে হাত তুলব না।’ অবশেষে এর জেরে একদিন বড় ভাই কাবিল ছোট ভাই হাবিলকে হত্যা করল। এটা ছিল পৃথিবীর প্রথম মানুষ হত্যা। হাবিলকে হত্যার পর কাবিল চিন্তায় পড়ে গেল যে তার লাশ এখন কী করবে, কীভাবে তা লুকিয়ে রাখবে!

তখন কাবিল দেখতে পেল, একটি কাক ঠোঁট দিয়ে মাটি খুঁড়ে অন্য একটি কাককে দাফন করছে। এটা দেখে কাবিলও তার ভাই হাবিলের লাশ মাটির নিচে দাফন করল।

এ ঘটনা জানতে পেরে হজরত আদম ও হাওয়া (আ.) খুব কষ্ট পেলেন। কোরআনে হজরত আদম (আ.)–এর দুই ছেলে হাবিল ও কাবিলের গল্প আছে।

কোরআনে এসেছে, ‘আদমের দুই পুত্র (হাবিল ও কাবিল)-এর বৃত্তান্ত তুমি তাদেরকে ভালো করে শোনাও। যখন তারা দুজনে কোরবানি করেছিল তখন একজনের কোরবানি কবুল হলো আর অন্যজনের কোরবানি কবুল হলো না। তাদের একজন বলল, 'আমি তোমাকে খুন করবই।' অপরজন বলল, 'আল্লাহ্ সংযমীদের কোরবানি কবুল করেন। আমাকে খুন করার জন্য তুমি হাত তুললেও তোমাকে খুন করার জন্য আমি হাত তুলব না; আমি তো বিশ্বজগতের প্রতিপালককে ভয় করি। আমি চাই, তুমি আমার ও তোমার পাপের ভার বইবে ও বাস করবে আগুনে। আর এটাই জালিমদের কর্মফল।'
 তারপর তার মন তাকে ভাইকে খুন করতে উত্তেজিত করল ও সে (কাবিল) তাকে (হাবিলকে) হত্যা করল, তাই সে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হলো। তারপর আল্লাহ পাঠালেন এক কাক যে তার ভাই-এর লাশ কীভাবে গোপন করা যায় তা দেখাবার উদ্দেশ্যে মাটি খুঁড়তে লাগল। সে বলল, 'হায়। আমি কি এ-কাকের মতোও হতে পারলাম না, যাতে আমার ভাই-এর লাশ গোপন করতে পারি?' তারপর সে অনুতপ্ত হলো।

কুরবানী এবং ঈর্ষা

আল্লাহ তাআলা আদম (আ.)-কে নির্দেশ দেন, তিনি তাঁর ছেলেদের কুরবানী দিতে বলুন। উদ্দেশ্য ছিল, কার কুরবানী আল্লাহ কবুল করেন তা দেখে বুঝা যাবে কে আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়। হাবিল ছিলেন ধর্মভীরু ও পরহেজগার, তাই তিনি সর্বোত্তম পশু কুরবানী করেন। অন্যদিকে কাবিল ছিলেন অহংকারী ও ঈর্ষাকাতর, তিনি তার জমি থেকে নিম্নমানের ফসল কুরবানী করেন।

আল-কুরআনের ভাষায়:

"তুমি তাদেরকে আদমের দুই পুত্রের কথা সত্যসহ শুনাও। তারা উভয়ে একটি কুরবানী করেছিল, তাদের একজনের কুরবানী কবুল করা হয়েছিল এবং অন্যজনের কুরবানী কবুল করা হয়নি। সে বলল: 'আমি অবশ্যই তোমাকে হত্যা করব।' সে বলল: 'আল্লাহ তো পরহেজগারদের কুরবানীই কবুল করে।'"
—সূরা আল-মায়েদা, আয়াত ২৭

হত্যাকাণ্ড

হাবিলের কুরবানী কবুল হওয়ায় কাবিলের অন্তরে ঈর্ষা ও হিংসা জন্ম নেয়। সে হাবিলকে হত্যা করার সংকল্প করে এবং একপর্যায়ে হাবিলকে হত্যা করে। এটি ছিল মানব ইতিহাসের প্রথম হত্যাকাণ্ড

হত্যার পর ঘটনা

কুরআনে বলা হয়েছে, কাবিল জানত না কীভাবে ভাইয়ের মৃতদেহ দাফন করতে হয়। তখন আল্লাহ একটি কাক পাঠালেন, যা আরেকটি কাকের মৃতদেহ মাটি চাপা দিচ্ছিল। এই দৃশ্য দেখে কাবিল লজ্জিত হলো এবং ভাইয়ের মৃতদেহ দাফন করল।

"অতঃপর আল্লাহ একটি কাক পাঠালেন, যা মাটি খুঁড়ে দেখাল কীভাবে সে তার ভাইয়ের মৃতদেহ ঢাকছে। সে বলল, 'হায়! আমি কি এতটা অক্ষম যে, আমি আমার ভাইয়ের মৃতদেহ ঢাকতে পারি না!' এরপর সে অনুতপ্ত হলো।"
—সূরা আল-মায়েদা, আয়াত ৩১

শিক্ষা ও বার্তা

হাবিল (আ.)-এর কাহিনী মানবজাতিকে হিংসা, অহংকার ও অবিচার থেকে সতর্ক করে। তিনি একজন শান্তিপ্রিয় ও ধার্মিক মানুষ হিসেবে নিজের জীবন উৎসর্গ করলেও, তাঁর মৃত্যু আমাদের শেখায়—হিংসা ও অবিচার কীভাবে মানব সমাজকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যেতে পারে।

sourse: wikipedia, prothomalo, archive.roar

What's Your Reaction?

Like Like 0
Dislike Dislike 0
Love Love 0
Funny Funny 0
Angry Angry 0
Sad Sad 0
Wow Wow 0