যুল-কারনায়েন (আঃ) এর জীবনী | Biography of Dhu al-Qarnayn
যুল-কারনায়েন (আঃ) এর জীবনী | Biography of Dhu al-Qarnayn

সুরা কাহাফে জুলকারনাইনের ঘটনা
জুলকারনাইন
(বিকল্প উচ্চারণ: যালকারনাইন) কুরআনে উল্লিখিত একজন ব্যক্তি। কুরআনের সূরা কাহাফ্-এ জুলকারনাইন নামটি উল্লিখিত আছে। কুরআনের ব্যাখ্যাকারীদের কারো কারো মতে তিনি একজন নবী ছিলেন। অন্যপক্ষে, প্রাচীনকালে আরব উপদ্বীপে জুলকারনাইন নামটি পরিচিত ছিল অল্প বয়সী উচ্চ ক্ষমতাধর একজন শাসক হিসেবে। জুলকারনইন শব্দটির আক্ষরিক অর্থ হল "দুই শিং বিশিষ্ট"। জুলকারনাইন কে তা নিয়ে কিছু তত্ত্ব আছে যার মধ্যে সর্বাধিক প্রচারিত হলো মেসেডোনিয়ার সম্রাট আলেকজাণ্ডারকেই (৩য়) কুরআনে জুলকারনাইন হিসাবে অভিহিত করা হয়েছে।
বিস্তারিত পরিচয়
কোরআন মাজিদে জুলকারনাইন এর পরিচয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়নি এবং কোন হাদিসেও জুলকার নাইন এর বিস্তারিত পরিচয় উল্লেখ করা হয়নি ।
কুরআনে জুলকারনাইন সম্পর্কিত বর্ণনা
কুরআন মাজীদের সূরা কাহাফের আয়াত নম্বর ৮৩-৯৯ অংশে জুলকারনাইন সম্পর্কিত বর্ণনা আছে। নবী হিসেবে জুলকারনাইনের নাম উল্লেখ নেই যদিও কিন্তু তিনি নবী ছিলেন না এমনটিও বলা হয়নি। বলা হয়েছে যে, আল্লাহ তাকে সকল বিষয়ে পথনির্দেশ বা দিকনির্দেশ এবং/অথবা কার্যোপকরণ দিয়েছেন। তিনি এরপর দুটি পথ অনুসরণ করেন। এর মধ্যে এক পথে গিয়ে তিনি ইয়াজুজ-মাজুজের হাতে অত্যাচারিত এক জাতির দেখা পান। তিনি তাদের জন্য গলিত তামার তৈরি একটি প্রাচীর বানিয়ে দেন। সূরা কাহাফ ৮৩-৮৬ নম্বর আয়াতে নিম্নরূপ বর্ণিত আছেঃ"তারা আপনাকে জুলকারনাইন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। বলুনঃ আমি তোমাদের কাছে তাঁর কিছু অবস্থা বর্ণনা করব।
আমি তাকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত করেছিলাম এবং প্রত্যেক বিষয়ের কার্যোপকরণ দান করেছিলাম। অতঃপর তিনি এক কার্যোপকরণ অবলম্বন করলেন।অবশেষে তিনি যখন সুর্যের অস্তাচলে পৌছলেন; তখন তিনি সূর্যকে এক পঙ্কিল জলাশয়ে অস্ত যেতে দেখলেন এবং তিনি সেখানে এক সম্প্রদায়কে দেখতে পেলেন। আমি বললাম, হে জুলকারনাইন! আপনি তাদেরকে শাস্তি দিতে পারেন অথবা তাদেরকে সদয়ভাবে গ্রহণ করতে পারেন।"
জুলকারনাইন পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে বেড়াতেন নির্যাতীত, বঞ্চিত, শাসকের হাতে শোষিত লোকদের মুক্তি দিতেন। কুরআনের বর্ণনা অনুযায়ী অরুণাচলে, যেখান থেকে সূর্য উদিত হয় সেখানে ইয়াজুজ, মাজুজের হাত থেকে জনগণকে রক্ষা করার জন্য দেয়াল তুলে দিয়েছিলেন জুলকারনাইন। আর সে স্থানটি পাহাড়ের প্রাচীরের মাঝখানে। সূরা কাহাফের ৯৩ হতে ৯৮ নম্বর আয়াতে জুলকারনাইনের এই প্রাচীর নির্মাণের উল্লেখ আছে। ধারণা করা হয় এই জাতি ধাতুর ব্যবহার জানতো। তারা হাপর বা ফুঁক নল দ্বারা বায়ু প্রবাহ চালনা করে ধাতুকে উত্তপ্ত করে গলাতে পারতো এবং তারা লোহার পিন্ড ও গলিত তামাও তৈরি করতে পারতো। জুলকারনাইন তাদের প্রতিরোধ প্রাচীর তৈরি করার জন্য উপাদান ও শ্রম সরবরাহ করতে বললেন। তারা নিজেরাই জুলকারনাইনের আদেশ মত দুই পর্বতের মাঝে শক্ত লোহার প্রাচীর বা দ্বার তৈরি করলো।
বাইবেলে উল্লেখ
ইয়াজুজ মাজুজ জাতি কে বাইবেলে গগ ম্যাগগ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে।
জুলকারনাইন এবং আলেকজান্ডার বিতর্ক
আধুনিক যুগের গবেষক ও পন্ডিতদের মতে কুরআনে উল্লিখিত জুলকারনাইনের মাধ্যমে ঐতিহাসিক সম্ভাব্য ৩ টি চরিত্র নির্দেশ করা হতে পারে , যারা হলেন ;- আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট
- সাইরাস দ্য গ্রেট
- হিমায়ার সাম্রাজ্যের একজন শাসক।
জুলকারনাইনের প্রাচীর
এই প্রাচীরটির সঠিক অবস্থান জানা যায়নি। এ সম্পর্কে নানা মতবাদ প্রচলিত। একটি মতবাদ অনুসারে, কুরআনের বর্ণনা অনুযায়ী অরুণাচলে, যেখান থেকে সূর্য উদিত হয় সেখানে ইয়াজুজ, মাজুজের হাত থেকে জনগণকে রক্ষা করার জন্য দেয়াল তুলে দিয়েছিলেন জুলকারনাইন। আর সে স্থানটি পাহাড়ের প্রাচীরের মাঝখানে। এই বর্ণনার সাথে মিলে যায় এমন একটি দেয়াল রয়েছে কাসপিয়ান সাগর উপকূলে। ইতিহাসবিদদের দ্বারা স্বীকৃত যে এ দেয়াল তৈরি করেছিলেন আলেকজান্ডার। যা তৈরি করতে লোহা ও তামা ব্যবহৃত হয়েছে।
সেখানে একটি তোরণ রয়েছে যেটি ‘কাসপিয়ান গেট’ বা আলেকজান্ডারের গেট নামে পরিচিত। দারিয়াল এবং দারবেন্ত নামে দুটি শহরে এর ব্যপ্তি। দারিয়াল রাশিয়া এবং জর্জিয়ার সীমান্তে অবস্থিত। এটিকে বলা হয় কাজবেক পাহাড়ের পূর্ব প্রান্ত। দারবেন্ত রাশিয়ার দক্ষিণে অবস্থিত একটি শহর। কাসপিয়ান সাগরের দক্ষিণপূর্ব উপকূলে নির্মীত এ দেয়ালটি তোলা হয়েছে দুটি পাহাড়ের মধ্যবর্তী ফাঁকা স্থানে। এ পাহাড় দুটিকে বলা হয় পৃথিবীর উঠান। আলেকজান্ডার নির্মীত এ দেয়ালের উচ্চতা ২০ মিটার এবং এটি ৩ মিটার (১০ ফুট) পুরু।
জুলকারনাইন এবং ইসলাম অনুসারে তার নবীত্ব
অনেকে বলেছেন তিনি নবী ছিলেন। আবার অনেকে বলেছেন তিনি নবী ছিলেন না তিনি ছিলেন আল্লাহ'র একজন অলি এবং ন্যায়পরায়ন বাদশা। আবার ইবনে কাসির তার তাফসীরে ইবনু কাসিরে লিখেছেন: "তিনি যে আল্লাহ তায়ালার সাথে সরাসরি কথা বলেছেন এটা কাসফ বা ইলহাম এর ধারা সম্ভব নয়। হয় তিনি নবী ছিলেন না হয় তার আমলে কোন নবীর উপস্থিতি ছিল"। অনেকে মনে করেন তিনি হজরত খিজির (আ) এর আমলের বাদশাহ ছিলেন এবং খিজির (আলাইহিস সালাম) ছিলেন তার উজির।পবিত্র কোরআনের ১৮ তম সুরা আল কাহাফ। কাহাফ মানে গুহা। এ সুরার আয়াত সংখ্যা ১১০। মক্কায় অবতীর্ণ এই সুরায়, গুহাবাসীদের বিবরণ স্থান পেয়েছে। জ্ঞানান্বেষণে এক আল্লাহ ভক্ত মহাপুরুষের সাক্ষাৎ এবং জুল কারনাইন ও ইয়াজুজ মাজুজের বিবরণ রয়েছে। সরল পথের আলোচনা করে মোহাম্মদ (সা.)-কে সান্ত্বনা দেওয়া হয়েছে।
জুলকারনাইন ছিলেন ন্যায়পরায়ণ ও সৎ বাদশাহ। তিনি পশ্চিম থেকে পূর্ব পর্যন্ত সফর করেছিলেন। দুই পর্বতের মাঝখানে তিনি এক জনগোষ্ঠীকে খুঁজে পান। তারা তাঁর কাছে ইয়াজুজ ও মাজুজের হাত থেকে রক্ষা পেতে একটি দেয়াল নির্মাণের আবেদন জানাল। জুলকারনাইন কাজটি করে দিতে সম্মত হলেন। তিনি তাঁর কাজ নিয়ে গর্ব দেখাননি।
কোরআনে আছে, ওরা বলল, 'হে জুলকারনাইন! ইয়াজুজ ও মাজুজ পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করছে; আমরা কি তোমাকে কর এই শর্তে দেব যে তুমি আমাদের ও ওদের মধ্যে এক প্রাচীর গ'ড়ে দেবে?' সে বলল, 'আমার প্রতিপালক আমাকে যে-ক্ষমতা দিয়েছেন তা-ই ভালো। সুতরাং তোমরা আমাকে শ্রম দিয়ে সাহায্য করো, আমি তোমাদের ও ওদের মাঝখানে এক মজবুত প্রাচীর গড়ে দেব। তোমরা আমার কাছে লোহার তাল নিয়ে আসো।' তারপর মধ্যবর্তী ফাঁকা জায়গা পূর্ণ হয়ে যখন লোহার ঢিবি দুটো পাহাড়ের সমান হলো তখন বলল, 'তোমরা হাপরে দম দিতে থাকো।'
যখন তা আগুনের মতো গরম হলো তখন সে বলল, 'তোমরা গলানো তামা নিয়ে আসো, আমি তা ওর ওপর ঢেলে দেব।' এরপর ইয়াজুজ ও মাজুজ তা পার হতে পারল না বা ভেদ করতেও পারল না। সে (জুলকারনাইন) বলল, 'এ আমার প্রতিপালকের অনুগ্রহ। এখন আমার প্রতিপালকের প্রতিশ্রুতি পূর্ণ হবে তখন তিনি ওকে চূর্ণবিচূর্ণ করে দেবেন, আর আমার প্রতিপালকের প্রতিশ্রুতি সত্য।' সেদিন আমি ওদেরকে দলে দলে তরঙ্গের আকারে ছেড়ে দেব, আর শিঙায় ফুঁ দেওয়া হবে। তারপর আমি ওদের সকলকেই একত্র করব। আর সেদিন আমি জাহান্নামকে প্রত্যক্ষভাবে উপস্থিত করব অবিশ্বাসীদের কাছে, যাদের চক্ষু আমার নিদর্শনের প্রতি ছিল অন্ধ, আর যাদের শোনারও ক্ষমতা ছিল না। (সুরা সুরা কাহাফ, আয়াত ৯৪ থেকে ১০১)
পবিত্র কোরআনের ১৮ তম সুরা আল কাহাফ। কাহাফ মানে গুহা। এ সুরার আয়াত সংখ্যা ১১০। মক্কায় অবতীর্ণ এই সুরায়, গুহাবাসীদের বিবরণ স্থান পেয়েছে। সরল পথের আলোচনা করে মোহাম্মদ (সা.)-কে সান্ত্বনা দেওয়া হয়েছে, মক্কাবাসীদের পথদ্রষ্টতার জন্য চিন্তা করা নিরর্থক, তাদের ধ্বংস অনিবার্য। জ্ঞানান্বেষণে এক আল্লাহ ভক্ত মহাপুরুষের সাক্ষাৎ এবং জুল কারনাইন ও ইয়াজুজ মাজুজের বিবরণ রয়েছে।
জুমাবারে সুরা আল কাহাফ পড়তে বলা হয়েছে। হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) রাসুল (সা.)–এর পক্ষ থেকে বর্ণনা করেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহাফ পাঠ করবে, তার জন্য এক জুমা থেকে অপর জুমা পর্যন্ত নূর বর্ষিত হবে।’
সুরা কাহাফে চারটি ঘটনা, চারটি বক্তব্য ও উপদেশ রয়েছে। সুরার ১ থেকে ৮ আয়াতে রয়েছে বক্তব্য। ৯ থেকে ২৬ আয়াতে আছে আসহাবে কাহাফের ঘটনা। ২৭ থেকে ৩১ আয়াতে আবার বক্তব্য এসেছে। ৩২ থেকে ৪৪ আয়াতে দুটি বাগানের মালিকের ঘটনা রয়েছে। এরপর আবার লম্বা বক্তব্য ও উপদেশ এসেছে ৪৫ থেকে ৫৯ আয়াতে।
এ সুরায় দুটি কাহিনি এসেছে ৬০ থেকে ১০১ আয়াতে। সে দুটি হলো মুসা (আ.) ও খিজির (আ.) ঘটনা এবং জুলকারনাইন সম্পর্কিত ঘটনা। আবার সুরা শেষ হয়েছে বক্তব্য ও উপদেশ দিয়ে।
গুহাবাসীর চমকপ্রদ আখ্যান
অবিশ্বাসে ভরা সমাজে কয়েকজন যুবক আল্লাহর প্রতি ইমান এনেছিলেন। বিরূপ পরিস্থিতির শিকার হয়ে তাঁরা একটি গুহায় গিয়ে লুকালেন। সেখানে আল্লাহ তাঁদের সবাইকে দীর্ঘ সময়ের জন্য ঘুম পাড়িয়ে রাখলেন।
ঘুম ভাঙার পর তাঁরা বুঝতেই পারেননি, তাঁদের ঘুমের মধ্যে আল্লাহ অনেকগুলো বছর অতিবাহিত করে ফেলেছেন। এ অবস্থায় তাঁদের একজন খাবার কিনতে শহরে গেলেন। তিনি ভেবেছিলেন, লোকজন তাঁকে চিনে ফেলবে এবং তাঁর ক্ষতি করার চেষ্টা করবে। কিন্তু অবাক হয়ে দেখলেন, কেউ তাঁকে চেনে না। খাবার কিনে টাকা পরিশোধ করার সময় পুরোনো মুদ্রা দেখে শহরের লোকেরা হতবাক হয়ে গেল।
এ ঘটনার তাৎপর্য একাধিক। তবে আল্লাহ কীভাবে তাঁর ওপর সমর্পিত বান্দাদের কী করে চরম প্রতিকূল পরিস্থিতি থেকে রক্ষা করেন, তা দেখানো হয়েছে।
বাগানের মালিকের সম্পদের ঘটনা
এক ব্যক্তির সুন্দর একটি বাগান ছিল। কিন্তু লোকটি ছিলেন অহংকারী। পবিত্র কোরআন আছে, ‘আর তার প্রচুর ধনসম্পদ ছিল, তারপর কথায় কথায় সে তার বন্ধুকে বলল, ধনসম্পদে আমি তোমার থেকে বড় এবং জনবলেও তোমার চেয়ে শক্তিশালী’ (কোরানশরিফ: সরল বঙ্গানুবাদ, ‘সুরা কাহাফ’, আয়াত ৩৪, অনুবাদ: মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, প্রথমা প্রকাশন)।
অহংকারী হয়ে আল্লাহর নিয়ামতের কথা ভুলে যাওয়ায় আল্লাহ তাঁর বাগান ধ্বংস করে দেন।
ঘটনাটি তাদের জন্য, যারা নিজের অহংবোধে আল্লাহর নিয়ামতের কথা ভুলে যায়। তাঁরা ভুলে যায় যে আল্লাহ চাইলেই মুহূর্তে তাদের কাছ থেকে সবকিছু কেড়ে নিতে পারেন।
ঈমান ও নেতৃত্বের দৃষ্টান্ত
যুল-কারনায়েন ছিলেন এক মহান নেতা যিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে পরিচালিত হতেন। তাঁর মধ্যে ছিল:
-
ঈমানদারিত্ব
-
ন্যায়পরায়ণতা
-
ভ্রমণপ্রিয়তা
-
গণমানবতার কল্যাণের জন্য কাজ করার মানসিকতা
তিনি ক্ষমতার অহংকারে অন্ধ হননি, বরং সর্বত্র আল্লাহর স্মরণ করেছেন ও তার পথেই চলেছেন।
যুল-কারনায়েন থেকে শিক্ষা
১. নেতৃত্ব মানে শুধু ক্ষমতা নয়, বরং দায়িত্ব ও আল্লাহভীতি।
2. অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো প্রতিটি ঈমানদারের দায়িত্ব।
3. মানুষের কল্যাণে কাজ করা মহান গুণ।
4. ঈমানদার শাসকের নেতৃত্ব সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারে।
sourse: wikipedia ,,,,,,,,,, prothomalo
What's Your Reaction?






