মিকা (আ.) এর জীবনী | Biography of Michael (archangel)
মিকা (আ.) এর জীবনী | Biography of Michael (archangel)

মিকাইল
|
|
---|---|
প্রধান স্বর্গদূত |
|
শ্রদ্ধাজ্ঞাপন |
ইহুদিধর্ম খ্রিষ্টধর্ম ইসলাম |
বৈশিষ্ট্যাবলী |
প্রধান স্বর্গদূত |
মিকা (আ.) এর জীবনী
মিকাইল (হিব্রু ভাষায়: מִיכָאֵל, Mîkhā'ēl; গ্রিক: Μιχαήλ, Mikhaḗl; লাতিন: Michahel; আরবি: ميخائيل، مِيكَالَ، ميكائيل, Mīkā'īl, Mīkāl, Mīkhā'īl) হলেন ইহুদিধর্ম, খ্রিষ্টধর্ম ও ইসলামের একজন প্রধান স্বর্গদূত বা ফেরেশতা। ক্যাথলিক, পূর্ব অর্থডক্স, অ্যাংলিকান ও লুথারীয় মতাবলম্বীরা তাঁকে প্রধান স্বর্গদূত সন্ত মিকাইল বা সন্ত মিকাইল বলে অবিহিত করে থাকে। প্রাচ্য অর্থডক্স ও পূর্ব অর্থডক্স মণ্ডলীসমূহ তাঁকে ট্যাক্সিয়ার্চ সন্ত মিকাইল নামে সম্বোধন করে। অন্যান্য প্রোটেস্ট্যান্ট মণ্ডলীসমূহে তাঁকে প্রধান স্বর্গদূত মিকাইল বলে ডাকা হয়।
বাইবেলের পুরাতন নিয়মের দানিয়েলের পুস্তকে মিকাইলের নাম তিনবার উল্লেখ করা হয়েছে। ইহুদিধর্মে ঈশ্বর ও ইস্রায়েলীয়দের মাঝে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে স্বর্গদূতদের সাহায্য প্রার্থনার ক্ষেত্রে রাব্বাইদের কঠোর বিধিনিষেধ থাকা সত্ত্বেও মিকাইলকে ইহুদি জাতির রক্ষাকর্তা হিসেবে গণ্য করার ধারণাটি প্রভাবশালী হয়ে ওঠে এবং ইহুদি স্তোত্রমালায় মিকাইলের একটি বিশেষ অবস্থান তৈরি হয়।
নতুন নিয়মের প্রকাশিত বাক্য পুস্তকে মিকাইল শয়তানের বিরুদ্ধে ঈশ্বরের সৈন্যদলের নেতৃত্ব দেন এবং স্বর্গের যুদ্ধে শয়তানকে পরাজিত করেন। যিহূদার পত্রে মিকাইলকে নির্দিষ্টভাবে প্রধান স্বর্গদূত মিকাইল বলে অবিহিত করা হয়। ৪র্থ শতাব্দীতে খ্রিষ্টানরা মিকাইলের নামে মঠ তৈরি করে এবং তাঁকে একজন আরোগ্যদাতা স্বর্গদূত হিসেবে দেখা শুরু করে। কালের পরিক্রমায় খ্রিষ্টান বিশ্বে তাঁর ভূমিকা একজন রক্ষাকর্তা এবং অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে সদাপ্রভুর সৈন্যবাহিনীর সেনাপতিতে পর্যবসিত হয়।
মুসলমানরা তাঁকে হজরত মিকাইল (আ.) হিসেবে অবিহিত করে থাকে। ইসলাম অনুসারে মিকাইল প্রধান ফেরেশতাদের একজন এবং তিনি প্রাকৃতিক শক্তির দায়িত্বে নিয়োজিত। পবিত্র কোরআনের সূরা আল-বাকারার ৯৮ নং আয়াতে ফেরেশতা জিব্রাইলের পাশাপাশি মিকাইলের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
ধর্মীয় বিশ্বাস
ইসলাম
ইসলামে মিকাইল হলেন অন্যতম প্রধান আধ্যাত্মিক ফেরেশতা এবং তিনি প্রকৃতির কাজে নিয়জিত। তার অশ্রু থেকে ফেরেশতা তৈরি করা হয়। এ জাতীয় ফেরেশতাগণ তার সাহায্যকারী।
সূরা আল-বাকারায় কুরআনে মিকাইলের উল্লেখের একত্রে আছে: সুন্নি ইসলামে মিকাইল আদমের সৃষ্টির বিবরণে উপস্থিত হন। তদনুসারে, তাঁকে এক মুঠো পৃথিবীর মাটি আনতে প্রেরণ করা হয়েছিল; কিন্তু পৃথিবী থেকে সে মাটি আনতে পারেন নি, যার কিছু অংশ জ্বলে যায়। এটি আল-থালাবী দ্বারা বর্ণিত করা হয়েছে যার বর্ণনায় বলা হয়েছে যে ঈশ্বর ফেরেশতাকে বলবেন যে কেউ কেউ তাঁর কথা মানবে এবং কেউ কেউ তা মানবে না।
শিয়া ইসলামে, দোয়া উম্মে দাউদের ৬ষ্ঠ ইমাম জাফর আল-সাদিকের পাঠকের অনুরোধে জানানো হয়েছে, মিকাইল দোয়া করেন:
"হে আল্লাহ! আপনার করুণার মিকাইল- ফেরেশতাকে আপনার নেয়ামত দান করুন এবং নেয়ামত দান করুন অনুগ্রহ ও ক্ষমা প্রার্থনাকারীদের এবং যে মানুষকে অনুগত সেবার জন্য তৈরি করেছেন। "
বিদ্যুতের এত গতি নেই যা বোরাকের ছিল। বিদ্যুৎ সেকেন্ডে এক লক্ষ ৮৬ হাজার মাইল বা তিন লক্ষ কিলোমিটার যেতে পারে। কিন্তু বোরাকের যে গতির কথা বলা হয়েছে দৃষ্টির শেষ সীমায় এক এক কদম রাখত, এ গতি তো বিদ্যুতের গতির চেয়ে অনেক বেশি। এই বোরাকে করে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিয়ে যাওয়া হয়। বাইতুল মোকাদ্দাস থেকে আসমানের দিকে আরোহণের সময় একটা চলন্ত সিঁড়ি আসে। তিনি বোরাক সহ সেই চলন্ত সিঁড়িতে করে ঊর্ধ্ব জগতে আরোহণ করেন। এজন্যই মেরাজকে মেরাজ বলা হয়। মেরাজ শব্দের অর্থ হল সিঁড়ি।
যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিয়ে যাওয়া হয়, তখন তাঁকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য সাত আসমানে বিশিষ্ট নবীগণকে রাখা হয়। প্রথম আসমানে হযরত আদম আ. তাঁকে অভ্যর্থনা জানান। দ্বিতীয় আসমানে হযরত ঈসা আ. ও ইয়াহ ইয়া আ., তৃতীয় আসমানে হযরত ইউসুফ আ., চতুর্থ আসমানে হযরত ইদ্রীস আ., পঞ্চম আসমানে হযরত হারুণ আ., ষষ্ঠ আসমানে হযরত মূসা আ., এবং সপ্তম আসমানে হযরত ইবরাহীম আ. তাঁকে অভ্যর্থনা জানান। সপ্তম আসমানে বাইতুল্লাহর মত হুবহু একটা ঘর আছে, যার নাম বাইতুল মা’মুর । দুনিয়াতে যেমন আমরা কা’বা শরীফ তাওয়াফ করি তেমনি বায়তুল মামুরে সর্বক্ষণ ফেরেশতারা তাওয়াফ করেন।
হাদীসে আছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, প্রতিদিন সেখানে এমন ৭০ হাজার ফেরেশতা তাওয়াফের জন্য আসেন, যারা ভবিষ্যতে আর কোন দিন এখানে আসবেন না। তাহলে কত অসংখ্য ফেরেশাত আল্লাহ তৈরি করে রেখেছেন। এই বাইতূল মামুনের পাশে আছে সিদরাতুল মুনতাহা। “সিদরাতুন” অর্থ বরই গাছ, আর মুনতাহা অর্থ সর্বশেষ ষ্টেশন। এটাকে সিদরাতুল মুনতাহা বা সর্বশেষ ষ্টেশন এজন্য বলা হয় যে, দুনিয়া থেকে যত ফেরেশতারা উপরের দিকে যান, তারা ঐ পর্যন্ত যেতে পারেন, এর উপরে আর যেতে পারেন না।
তাই এখান থেকে যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আরও ঊর্ধ্বে আল্লাহর দরবার পর্যন্ত নেয়া হয়, তখন জিব্রীল আ. বলেছিলেন, এবার আপনি একাই যাবেন, আমার পক্ষে আর উপরে যাওয়া সম্ভব না। আর যদি একবার ডানা মেলেও উপরে যেতে চাই, তাহলে আল্লাহর তাজাল্লীতে আমার ডানা পুড়ে ছারখার হয়ে যাবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, এই সিদরাতুল মুনতাহার যে বরই গাছ, এই বরই গাছের এক একটা বরই হল হাজারের মটকার মত। তখনকার যুগে হাজার নামক জায়গায় বড় বড় মটকা তৈরি হতো। গ্রাম দেশে এখনও এরকম বড় বড় মটকা দেখা যায়। এরকম মটকার মত এক একটা বরই হবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তার এক একটা পাতা হল হাতির কানের মত।
এই সিদরাতুল মুনতাহার কাছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত জিব্রাইল আ. কে তার আসল রুপে দেখেছিলেন। তিনি দেখেছিলেন জিব্রাইল আ. এর ছয়শত ডানা আছে। তিনি এত বড় যেন মহাকাশের দুই প্রান্ত পর্যন্ত ভরে গেছে।
এই সিদরাতুল মুনতাহার পাশে আছে জান্নাত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমাকে জান্নাতের সব স্তর ঘুরিয়ে দেখানো হয়েছে। একটা ঘর দেখিয়ে জিব্রাইল আ. বলেছেন, হে মুহাম্মাদ! আপনার জন্য হবে এই ঘরটা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তখন আমার সঙ্গী ছিলেন জিব্রাইল আ. আর মিকাইল আ.। আমার ঘরটা দেখানোর পর আমি বললাম, আমাকে এই ঘরটায় একটু প্রবেশ করার অনুমতি দেয়া হোক। সঙ্গী ফেরেশতা বললেন, এখনও আপনার সময় হয়নি, এখনও দুনিয়ায় আপনার হায়াত বাকী রয়ে গেছে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কলমের লেখার খসখস আওয়াজ শোনোনো হয়েছিল। দুনিয়ার শুরু থেকে নিয়ে অনন্ত কাল পর্যন্ত যা কিছু ঘটেছে এবং ঘটবে, এই সব কিছু লওহে মাহফুজে লিখে রাখা হয়েছে। আল্লাহর হুকুমে বিশেষ একটা কলম এই সব কিছু লিখে রেখেছে। আল্লাহ কলমকে হুকুম দিয়েছিলেন; তুমি লিখে ফেল?। কলম বলেছিল ; কি লিখব?
আল্লাহ বলেছিলেন ঃ তাকদীর লেখ। তখন আল্লাহর হুকুমে কলম যা কিছু হয়েছে এবং হবে সবকিছু লিখে ফেলে। লওহে মাহফুজ হল বিশেষ একটা সংরক্ষিত ফলক যাতে আদি-অন্তের সবকিছু লিখে রাখা হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, লউহে মাহফূযে ঐ যে কলম লিখেছিল, কলমের সেই লেখার খসখস আওয়াজ আমাকে শোনানো হয়েছে। এভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অনেক কিছু দেখানো হয়, অনেক কিছু জানানো হয়। যত বিষয়ে আমরা না দেখে ঈমান রাখি, সে সব কিছু তাঁকে দেখানো হয়।
এটাই মেরাজের শিক্ষা যে, গায়েবের সব বিষয়ে আমাদের বিশ্বাস ও ইয়াকীনকে আরো দৃঢ় করবো এবং মেরাজের রাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাযসহ যেসব বিধান আল্লাহর কাছ থেকে নিয়ে এসেছিলেন সেসব বিধান পালনে পাবন্দ হওয়া । শবে মেরাজের পুণ্য রজনীতে মহান আল্লাহ তাঁর যে সব কুদরতের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছিলেন, এ থেকে শিক্ষা নেয়ার মত আছে অনেক কিছুই। (সমাপ্ত)
sourse: wikipedia .... britannica
What's Your Reaction?






