ম্যানুয়েল নয়্যার এর জীবনী | Biography of Manuel Neuer
ম্যানুয়েল নয়্যার এর জীবনী | Biography of Manuel Neuer

ম্যানুয়েল নয়্যার: এক সুইপার-কিপারের কিংবদন্তি হওয়ার গল্প
ব্যক্তিগত তথ্য |
|||
---|---|---|---|
পূর্ণ নাম |
মানুয়েল পিটার নয়ার[১] | ||
জন্ম |
২৭ মার্চ ১৯৮৬ | ||
জন্ম স্থান |
গেলসেনকির্খেন, জার্মানি | ||
উচ্চতা |
১.৯৩ মিটার (৬ ফুট ৪ ইঞ্চি) | ||
মাঠে অবস্থান |
গোলরক্ষক | ||
ক্লাবের তথ্য |
|||
বর্তমান দল
|
বায়ার্ন মিউনিখ | ||
জার্সি নম্বর |
১ | ||
যুব পর্যায় |
|||
১৯৯১–২০০৫ |
শালকে ০৪ | ||
জ্যেষ্ঠ পর্যায়* |
|||
বছর |
দল | ম্যাচ | (গোল) |
২০০৪–২০০৬ |
শালকে ০৪ ২ | ২৬ | (০) |
২০০৫–২০১১ |
শালকে ০৪ | ১৫৬ | (০) |
২০১১– |
বায়ার্ন মিউনিখ | ৩৩৫ | (০) |
জাতীয় দল‡ |
|||
২০০৪ |
জার্মানি অনূর্ধ্ব-১৮ | ১ | (০) |
২০০৪–২০০৫ |
জার্মানি অনূর্ধ্ব-১৯ | ১১ | (০) |
২০০৫–২০০৬ | জার্মানি অনূর্ধ্ব-২০ | ৪ | (০) |
২০০৬–২০০৯ | জার্মানি অনূর্ধ্ব-২১ | ২০ | (০) |
২০০৯– | জার্মানি | ১১৭ | (০) |
মানুয়েল পিটার নয়ার
(জার্মান: Manuel Neuer; জন্ম: ২৭ মার্চ ১৯৮৬; মানুয়েল নয়ার নামে সুপরিচিত) হলেন একজন জার্মান পেশাদার ফুটবল খেলোয়াড়। তিনি বর্তমানে জার্মানির পেশাদার ফুটবল লিগের শীর্ষ স্তর বুন্দেসলিগার ক্লাব বায়ার্ন মিউনিখ এবং জার্মানি জাতীয় দলের হয়ে গোলরক্ষক হিসেবে খেলেন।
১৯৯১–৯২ মৌসুমে, মাত্র ৫ বছর বয়সে, জার্মান ফুটবল ক্লাব শালকে ০৪-এর যুব পর্যায়ের হয়ে খেলার মাধ্যমে নয়ার ফুটবল জগতে প্রবেশ করেছেন এবং এই দলের হয়ে খেলার মাধ্যমে তিনি ফুটবল খেলায় বিকশিত হয়েছেন। ২০০৩–০৪ মৌসুমে, জার্মান ক্লাব শালকে ০৪-এর হয়ে খেলার মাধ্যমে তিনি তার জ্যেষ্ঠ পর্যায়ের খেলোয়াড়ি জীবন শুরু করেছেন; শালকে ০৪-এর হয়ে ছয় মৌসুমে ১৫৬ ম্যাচে অংশগ্রহণ করার পর ২০১১–১২ মৌসুমে তিনি প্রায় ৩০ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে আরেক জার্মান ক্লাব বায়ার্ন মিউনিখে যোগদান করেছেন।
২০০৪ সালে, নয়ার জার্মানি অনূর্ধ্ব-১৮ দলের হয়ে জার্মানির বয়সভিত্তিক পর্যায়ে অভিষেক করেছিলেন। প্রায় পাঁচ বছর যাবত জার্মানির বয়সভিত্তিক দলের হয়ে খেলার পর, তিনি ২০০৯ সালে জার্মানির হয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অভিষেক করেছেন; জার্মানির জার্সি গায়ে তিনি এপর্যন্ত ১১৭ ম্যাচে অংশগ্রহণ করেছেন। তিনি জার্মানির হয়ে সর্বমোট চারটি ফিফা বিশ্বকাপ এবং সর্বমোট তিনটি দক্ষিণ আমেরিকান চ্যাম্পিয়নশিপে (২০১২, ২০১৬ এবং ২০২০) অংশগ্রহণ করেছেন, যার মধ্যে ২০১৪ সালে ইওয়াখিম ল্যোভের অধীনে ফিফা বিশ্বকাপের শিরোপা জয়লাভ করেছেন।
ব্যক্তিগতভাবে, নয়ার বেশ কিছু পুরস্কার জয়লাভ করেছেন, যার মধ্যে ২টি বর্ষসেরা জার্মান ফুটবলার এবং ৫টি বর্ষসেরা ইউরোপীয় গোলরক্ষক অন্যতম।
প্রারম্ভিক জীবন
মানুয়েল পিটার নয়ার ১৯৮৬ সালের ২৭শে মার্চ তারিখে জার্মানির গেলসেনকির্খেনে জন্মগ্রহণ করেছেন এবং সেখানেই তার শৈশব অতিবাহিত করেছেন।
আন্তর্জাতিক ফুটবল
নয়ার জার্মানি অনূর্ধ্ব-১৮, জার্মানি অনূর্ধ্ব-১৯, জার্মানি অনূর্ধ্ব-২০, জার্মানি অনূর্ধ্ব-২১ এবং জার্মানি অনূর্ধ্ব-২৩ দলের হয়ে খেলার মাধ্যমে জার্মানির প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ২০০৪ সালের ২০শে মে তারিখে তিনি জার্মানি অনূর্ধ্ব-১৮ দলের হয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অভিষেক করেছেন। জার্মানির বয়সভিত্তিক দলের হয়ে তিনি প্রায় ৫ বছরে ৩৬ ম্যাচে অংশগ্রহণ এবং একটি শিরোপা জয়লাভ করেছেন।
২০০৯ সালের ২রা জুন তারিখে, ২৩ বছর, ২ মাস ও ৬ দিন বয়সে, ডান পায়ে ফুটবল খেলায় পারদর্শী নয়ার সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিরুদ্ধে অনুষ্ঠিত প্রীতি ম্যাচে অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ফুটবলে জার্মানির হয়ে অভিষেক করেছেন। তিনি উক্ত ম্যাচের মূল একাদশে অন্তর্ভুক্ত ছিলেন ম্যাচে তিনি ১২ নম্বর জার্সি পরিধান করে গোলরক্ষক হিসেবে খেলেছিলেন। ম্যাচটি জার্মানি ৭–২ গোলের ব্যবধানে জয়লাভ করেছিল। জার্মানির হয়ে অভিষেকের বছরে নয়ার সর্বমোট ২ ম্যাচে অংশগ্রহণ করেছেন। ২০১০ সালের ২৭শে জুন তারিখে, ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ম্যাচের প্রথম গোলে অ্যাসিস্ট করার মাধ্যমে তিনি আন্তর্জাতিক ফুটবলে তার প্রথম অ্যাসিস্টটি করেছেন। অন্যদিকে, ২০১৪ সালের ৩রা সেপ্টেম্বর তারিখে, আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে অনুষ্ঠিত ম্যাচে তিনি জার্মানির হয়ে প্রথমবারের মতো অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন,ম্যাচটি আর্জেন্টিনা ৪–২ গোলের ব্যবধানে জয়লাভ করেছিল, যেখানে তিনি পূর্ণ ৯০ মিনিট খেলেছেন।
২০১৪ সালের ৪ঠা জুলাই তারিখে ব্রাজিলের রিউ দি জানেইরুর মারাকানা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ফ্রান্সের বিরুদ্ধে ম্যাচে অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে তিনি জার্মানির জার্সি গায়ে তার ৫০তম ম্যাচ খেলেছেন, ম্যাচটি জার্মানি ১–০ গোলের ব্যবধানে জয়লাভ করেছিল, যেখানে তিনি পূর্ণ ৯০ মিনিট খেলেছেন; অন্যদিকে, ২০২১ সালের ৭ই জুন তারিখে নয়ার তার খেলোয়াড়ি জীবনে ১০০তম ম্যাচে অংশগ্রহণ করেছে, লাতভিয়ার বিরুদ্ধে জার্মানির ডুসেলডর্ফে অনুষ্ঠিত উক্ত ম্যাচটি জার্মানি ৭–১ গোলের ব্যবধানে জয়লাভ করেছিল।
পরিসংখ্যান
আন্তর্জাতিক
দল |
সাল | ম্যাচ | গোল |
---|---|---|---|
জার্মানি |
২০০৯ |
২ | ০ |
২০১০ |
১৩ | ০ | |
২০১১ |
১০ | ০ | |
২০১২ |
১১ | ০ | |
২০১৩ |
৮ | ০ | |
২০১৪ |
১৩ | ০ | |
২০১৫ |
৬ | ০ | |
২০১৬ |
১১ | ০ | |
২০১৮ |
১০ | ০ | |
২০১৯ |
৮ | ০ | |
২০২০ |
৪ | ০ | |
২০২১ |
১২ | ০ | |
২০২২ |
৯ | ০ | |
সর্বমোট |
১১৭ | ০ |
জার্মানিকে চতুর্থবারের মতন বিশ্বজয়ী করতে নয়্যারের ভূমিকার জন্য তিনি হয়তো গোল্ডেন বলও জিততে পারতেন; কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা জাদুকর মেসির হাতেই উঠে। এমনকি ব্যালন ডি ‘অর জয়ের দৌড়েও অন্য সবার চেয়ে এগিয়ে ছিলেন। কিন্তু এখানেও রোনালদো-মেসির পরে তৃতীয় স্থান লাভ করেন তিনি। তবে এই বিশ্বকাপের নয়্যারকে ফুটবল্প্রেমীরা একটু বিশেষ কারণেই মনে রাখবে। কেননা এই নয়্যারের হাত ধরেই যেন পূর্ণতা পেয়েছিল অন্য এক শিল্প। কী সেই শিল্প?
ফুটবল হচ্ছে গোলের খেলা। হাজার হাজার দর্শক গাঁটের টাকা খরচ করে মাঠে যায় নিজের দলের জয় দেখতে। আর এই জয়-পরাজয় নির্ধারণ হয় গোলের দ্বারা। তাই যারাই নিজের দলকে এই গোল উপহার দেয়, তারাই সবার চোখের মণি। ম্যাচ জিতলে দলের ফরোয়ার্ড প্লেয়াররাই যেন অন্য সবার চেয়ে একটু বেশি প্রশংসা পায়। গোল বানিয়ে দেয়ার জন্য মাঝমাঠের খেলোয়ারেরাও সবার হাততালি শুনতে পায়।
কিন্তু এইদিক দিয়ে গোলকিপার ও ডিফেন্ডাররা ব্যতিক্রম। তাদের ভালো খেলা প্রায়ই সবার অগোচরে থেকে যায়। কিন্তু তারা একটা ভুল করলেই সবার রাগ গিয়ে পড়ে তাদের উপর। যেন সব দোষ তাদের একার। একের পর এক সমালোচনার তীর ধেয়ে আসতে থাকে তাদের দিকে, এমনকি আসে প্রাণনাশের হুমকিও (কলম্বিয়ার ডিফেন্ডার আন্দ্রেস এস্কোবার)। গোলরক্ষকরা যেন আরোও অভাগা, ডিফেন্ডারের ভুলে গোল খেলেও দোষ যেন কিপারের কাঁধেই বর্তায়। এমনকি কোনো কোনো গোলরক্ষককে বাকি জীবন মানুষের চক্ষুশূল হয়ে থাকতে হয়েছে, এমনও নিদর্শন রয়েছে। এই যেমন ১৯৫০ সালে ঘরের মাঠের বিশ্বকাপ ফাইনালে উরুগুয়ের ঘিগিয়ার কাছে গোল খাওয়ার জন্য ব্রাজিল গোলরক্ষক বারবোসাকে তার জীবনের বাকি পঞ্চাশ বছর ব্রাজিলের ফুটবলপ্রেমীদের চোখের বিষ হয়ে থাকতে হয়েছে। এ নিয়ে তিনি আক্ষেপ করে বলেছিলেন,
“ব্রাজিলের আইনে যাবজ্জীবন সাজার মেয়াদ ৩০ বছর। কিন্তু আমার জন্য তা হয়ে গেছে ৫০ বছর। সেটাও এমন কিছুর জন্য, যার জন্য আমি সম্পূর্ণরূপে দায়ীও নই।”
তবে কিংবদন্তি সোভিয়েত গোলরক্ষক লেভ ইয়াসিনের হাত ধরে সবাই বুঝতে পারে, গোলরক্ষকরাও ম্যাচ জেতাতে জানেন। এরপর গর্ডন ব্যাঙ্কস, সেপ মেয়ার, দিনো জফ, গোয়কচিয়া, অলিভার কান, ইকার ক্যাসিয়াসরা সেই ধারা অব্যাহত রাখেন। তবে ম্যানুয়েল নয়্যার বহু বছর পর প্রায় ভুলে যাওয়া একটি শিল্পকে শুধু জাগিয়েই তোলেননি, গড়ে তুলেছেন আরেকটি প্রজন্মও – যেখানে একজন গোলরক্ষকের ভূমিকা আরও আকর্ষণীয়, সুইপিং-কিপিং।
একজন সুইপার-কিপারের কাজ বুঝতে গেলে প্রথমে জানতে হবে একজন সেরা গোলরক্ষকের কী কী গুণ থাকতে হয়। অন্যসব প্লেয়ারদের মতো একজন কিপারেরও থাকতে হইয় পজিশন জ্ঞান, একনিষ্ঠ মনোযোগ, আত্মবিশ্বাস, রিফ্লেক্স। এই গুণের উপর ভর করেই একজন কিপার মাঠের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন (গোল বাঁচানো) করেন। তবে একজন সুইপার-কিপারকে এর পাশাপাশি আরও বড় কিছুর দায়িত্ব পালন করতে হয়।
এবার আসা যাক সুইপারের কাজে। সুইপার হচ্ছেন সেই খেলোয়াড়, যারা ডিফেন্ডার ও গোলকিপারের মাঝামাঝি অবস্থান করে আক্রমণ প্রতিহত করতে অগ্রগণ্য ভূমিকা পালন করেন। সুইপাররা অন্য সবার চেয়ে খেলাটিকে ভালো পড়তে পারেন বলেই তারা প্রতিপক্ষের আক্রমণকে ট্যাকল করে শেষ মুহূর্তে ভণ্ডুল করে দেন। সাধারণত ডিফেন্ডারদের একজনই এই ভূমিকা পালন করতেন। এই ভূমিকাতে বিশ্বসেরা ছিলেন জার্মানির ‘কাইজার’-খ্যাত ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার, ইতালির ফ্রাঙ্কো বারেসি, ফ্রান্সের লরা ব্লাঙ্করা। কিন্তু তাই বলে কিপাররাও এই ভূমিকা পালন করতে পারেন কি?
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে ফিরে যেতে হবে পঞ্চাশের দশকে। সেই সময় অপরাজেয় ‘ম্যাজিক্যাল ম্যাগিয়ার্স‘-খ্যাত হাঙ্গেরি দলের গোলরক্ষক ছিলেন জিউলা গ্রোসিকস। পোস্টের সামনে তার অসামান্য তৎপরতার জন্য তাকে ‘ব্ল্যাক প্যানথার’ নামেও ডাকা হতো। তিনিই প্রথম কিপার হিসেবে ডিফেন্সের লাস্ট লাইন হিসেবে কাজ করতেন। ক্ষেত্রবিশেষে তাকেও ডি-বক্সের বাইরে এসে সুইপারের ভূমিকা নিতে হয়েছে। সেই সময়ের আরেক সুইপার-কিপার ছিলেন আর্জেন্টিনার অ্যামাদেও।
এরপর বহু বছরের অনুপস্থিতিতে এই শিল্পকে সবাই ভুলে যায়, যা নয়্যার শুধু ফিরিয়েই আনেননি, পূর্ণতাও প্রদান করেছেন। নিজের সুইপিং-কিপিং দিয়ে দলকে একের পর এক ট্রফি জিতিয়ে হয়েছেন ফুটবল কিংবদন্তি।
১.৯৩ মিটার (৬ ফুট ৪ ইঞ্চি) লম্বা এই সুইপার-কিপারের ক্যারিয়ার শুরু জার্মান বুন্দেসলিগার শালকে-০৪ ক্লাবে। এই ক্লাবের জুনিয়র স্কোয়াড থেকে শুরু হলেও পরে খেলেছেন সিনিয়র দলে। এই ক্লাবেই ২০০৬-১১ পর্যন্ত খেলেছেন, জিতেছেন ডিএফবি পোকাল, দলকে উঠিয়েছেন উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে, জার্মানির অনূর্ধ্ব-২১ দলের হয়ে জিতেছেন ২০০৯ ইউরো। ২০১১ সালের জুনে বায়ার্ন মিউনিখে ট্রান্সফার হয়ে আসার পর নয়্যার একের পর এক ট্রফি জিতে গেছেন তার ক্লাব এবং দেশের হয়ে, রেখেছেন অবিশ্বাস্য ধারাবাহিকতা।
sourse: wikipedia .. archive
What's Your Reaction?






