বিজ্ঞানী টমাস আলভা এডিসনের জীবনী-biography of thomas alva admission

বিজ্ঞানী টমাস আলভা এডিস

May 12, 2025 - 17:27
May 13, 2025 - 12:32
 0  1
বিজ্ঞানী টমাস আলভা এডিসনের জীবনী-biography of thomas alva admission

বিজ্ঞানী টমাস আলভা এডিসনের জীবনের  জানা-অজানা তথ্য

জন্ম

 ১১ ফেব্রুয়ারি ১৮৪৭  মিলান, ওহাইও এ জন্মগ্রহণ করেন

 পেশা

 আবিষ্কারক, বিজ্ঞানী, ব্যবসায়ী

 দাম্পত্য সঙ্গী

 মেরি স্টিলওয়েল (বি. ১৮৭১১৮৮৪)

 মৃত্যু

 অক্টোবর ১৮, ১৯৩১ (বয়স ৮৪)  ওয়েস্ট অরেঞ্জ, নিউ জার্সি

জন্ম:

১১ ফেব্রুয়ারি ১৮৪৭  মিলান, ওহাইও এ জন্মগ্রহণ করেন।

ছেলেবেলা:

টমাস এডিসন ১৮৪৭ সালের ১১ই ফেব্রুয়ারি আমেরিকার ওহাইয়ো অঙ্গরাজ্যের মিলানে জন্মগ্রহণ করেন। রাজনৈতিক কারণে কানাডা থেকে বিতাড়িত স্যামুয়েল এডিসন, এবং স্কুল শিক্ষিকা ন্যান্সি এডিসনের ৭ ছেলেমেয়ের মধ্যে টমাস ছিলেন সবার ছোট। ছোটবেলায় টমাসের ওপর তাঁর মায়ের দারুন প্রভাব ছিল। কদম ছোটবেলায় লালজ্বরে আক্রান্ত হয়ে টমাসের দুই কানে ইনফেকশন হয় এবং বড় হয়েও তিনি কানে প্রায় শুনতেনই না।
১৮৫৪ সালে এডিসন পরিবার মিশিগানের পোর্ট হার্টনে চলে যায়, এবং সেখানে টমাসকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেয়া হয়। টমাস আলভা এডিসনের স্কুল জীবন ছিল মাত্র ১২ সপ্তাহ বা তিন মাসের মত। তিনি এতই দুষ্টু আর পড়াশোনায় অমনোযোগী ছিলেন যে, তাঁর স্কুল থেকে প্রতিদিন অভিযোগ আসতে শুরু করল। মা ন্যান্সি এডিসন এক পর্যায়ে তাঁকে স্কুল থেকে ছাড়িয়ে এনে বাসায় পড়াতে শুরু করেন।

এডিসনের বয়স যখন ১১ বছর, তখন তাঁর মা লক্ষ্য করলেন, ছেলে নিজের ইচ্ছায়ই বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আগ্রহের সাথে পড়াশুনা করছে। ন্যান্সি টমাসকে তাঁর নিজের যা পড়তে ভালো লাগে – তা-ই পড়ার স্বাধীনতা দিয়েছিলেন। এবং দেখা গেল, এতে করে টমাসের পড়ার প্রতি দারুন একটি আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। ইচ্ছামত জ্ঞান অর্জন করার এই স্বভাবই পরে ‘লিটল্ টমাস’ কে টমাস আলভা এডিসন, দি গ্রেট ইনভেনটর হতে সাহায্য করেছে। ১২ বছর বয়সে গ্রান্ড ট্রাঙ্ক রেললাইনে পত্রিকা বিক্রী করতে দেয়ার জন্য বাবা-মা’কে রাজি করিয়ে ফেলেন টমাস। খবরের কাগজের ছাপাখানায় নিয়মিত যাতায়াত করার সুযোগে টমাস অল্প দিনের মধ্যেই নিজের একটি ছোট নিউজপেপার প্রকাশ করে ফেলেন, যার নাম ছিল, “দি গ্রান্ড ট্রাঙ্ক হেরাল্ড”। সাম্প্রতিক মজার ঘটনা নিয়ে করা পত্রিকাটি যাত্রীদের মধ্যে দারুন জনপ্রিয় হয়েছিল। এই পত্রিকার মাধ্যমেই টমাস এডিসন একজন বিশাল উদ্যোক্তা হওয়ার পথে হাঁটা শুরু করেন।

রেল স্টেশনের বগিতে মাঝে মাঝে লুকিয়ে লুকিয়ে তিনি বিভিন্ন কেমিকেল মিশিয়ে পরীক্ষা করতেন। এরকমই এক পরীক্ষার সময়ে একটি ব্যাগেজ বগিতে আগুন ধরে যায়। ট্রেনের কন্ডাক্টর দৌড়ে এসে টমাসের কান্ড দেখে তার গালে চড় মেরে বসে, এবং সেই ট্রেনে টমাসের ওঠা নিষেধ করে দেয়।এরপর থেকে টমাসকে ট্রেনে উঠে পত্রিকা বিক্রী করার বদলে প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে পত্রিকা বেচতে হতো।

টেলিগ্রাফ চালানো শেখা ও চাকরি জীবন:

এডিসন যখন রেলস্টেশনে কাজ করতেন, তখন একবার একটি ৩ বছরের বাচ্চাকে ট্রেনের নিচে পড়া থেকে বাঁচান। বাচ্চাটির বাবা ছিলেন একজন টেলিগ্রাফ অপারেটর, এবং তিনি টমাসকে প্রস্তাব দেন যে তিনি তাকে টেলিগ্রাফ মেশিন অপারেট করা শেখাতে চান। টমাস শিখতে শুরু করেন, এব‍ং ১৫ বছর বয়সের মধ্যেই তিনি টেলিগ্রাফ অপারেটরের চাকরি করার মত দক্ষ হয়ে ওঠেন।

পরের ৫ বছর তিনি একজন ফ্রিল্যান্স টেলিগ্রাফ অপারেটর হিসেবে পুরো মধ্য-পশ্চিম আমেরিকা ঘুরে বেড়ান। সেই সময়ে আমেরিকায় সিভিল ওয়ার বা গৃহযুদ্ধ চলছিল, এবং অনেক টেলিগ্রাফ অপারেটর যুদ্ধে যোগ দেয়ার কারণে কাজের প্রচুর সুযোগ ছিল। অবসর সময়ে তিনি প্রচুর পড়াশুনা করতেন, এবং গবেষণা করতেন। টেলিগ্রাফের প্রযুক্তি নিয়ে পড়াশুনা ও গবেষণা করতে গিয়ে তিনি ইলেক্ট্রিক্যাল সাইন্স নিয়ে অনেক কিছু জানতে পারলেন এবং পরবর্তীতে বিজ্ঞানের এই শাখাটিতেই তিনি সবচেয়ে বেশি কাজ দেখিয়েছেন।

৮৬৬ সালে, ১৯ বছর বয়সে বার্তা সংস্থা “এপি” বা এ্যাসোসিয়েটেড প্রেস এ টেলিগ্রাফ অপারেটর হিসেবে চাকরি নেন। নাইট শিফটের চাকরি হওয়ায় টমাস আলভা এডিসন নিজের গবেষণা ও পড়াশুনার জন্য অনেক সময় পেতেন। তিনি শুধু পড়েই থেমে যেতেন না, বিভিন্ন জিনিস নিয়ে সব সময়ে এক্সপেরিমেন্ট বা পরীক্ষা নিরীক্ষা করতেন। ধীরে ধীরে তাঁর মধ্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পড়াশুনা করে সেগুলো মিলিয়ে নতুন চিন্তা করার একটা স্বভাব গড়ে উঠতে থাকে। বেশ কয়েক বছর টেলিগ্রাফ অপারেটর হিসেবে দারুন কাজ করার পর ১৮৬০ এর দশকের শেষ দিকে টমাসের কাজ কমে যেতে শুরু করল। কারণ, প্রথম দিকে কাগজে লেখা কোড পড়ে টেলিগ্রাফ অপারেট করতে হলেও, পরে যখন যান্ত্রিক শব্দ দিয়ে টেলিগ্রাফ এর অর্থ উদ্ধার করার নতুন প্রযুক্তি এলো, কানে কম শোনা টমাস এডিসন আর কাজ করতে পারছিলেন না।

১৮৬৮ সালে টমাস বাড়ি ফিরে দেখতে পেলেন তাঁর প্রাণপ্রিয় মা ন্যান্সি এডিসন রীতিমত মানসিক রোগী হয়ে গেছেন। তাঁর বাবাকেও কাজ থেকে অবসর দেয়া হয়েছে। পুরো পরিবারের অবস্থাই তখন খুব খারাপ হয়ে গিয়েছিল। টমাস বুঝতে পারলেন যে, এই অবস্থা তাঁকেই সামাল দিতে হবে। এক বন্ধুর পরামর্শে টমাস এডিসন বোস্টনে চলে যান এবং সেখানে গিয়ে বিখ্যাত “ওয়েস্টার্ণ ইউনিয়ন কোম্পানী”-তে কাজ নেন। সেই সময়ে বোস্টন ছিলো আমেরিকার বিজ্ঞান ও শিল্প চর্চার কেন্দ্র, টমাস আলভা এডিসনের জীবন কাহিনী এখানে সবচেয়ে বড় মোড়টি নেয়।

সেখানে থাকা অবস্থায়ই তিনি নতুন কিছু আবিষ্কারের চেষ্টা শুরু করেন। তিনি একটি ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) রেকর্ডার তৈরী করেন এবং তার পেটেন্ট নিজের নামে করে নেন। কিন্তু তখনকার রাজনীতিবিদরা চাননি যে ভোট দেয়ার প্রক্রিয়া এত তাড়াতাড়ি হোক। তারা এই প্রক্রিয়া চালু করার জন্য আরও সময় চাচ্ছিলেন।

প্রারম্ভিক পেশাজীবন:

টমাস এডিসন তার পেশাজীবন শুরু করেছিলেন বন্দর হুরন থেকে ডেট্রয়েট পর্যন্ত ট্রেনগুলোতে ক্যান্ডি, সংবাদপত্র এবং শাকসবজি বিক্রি করার মাধ্যমে। তিনি ১৩ বছর বয়সে প্রতি সপ্তাহে ৫০ ডলার লাভ করতেন, যার বেশিরভাগই বৈদ্যুতিক এবং রাসায়নিক পরীক্ষার সরঞ্জাম কেনার জন্য ব্যয় করতেন। তিনি তিন বছর বয়সী জিমি ম্যাকেনজিকে রানওয়ে ট্রেনের ধাক্কায় রক্ষা করার পর তিনি টেলিগ্রাফ অপারেটর হয়েছিলেন। জিমির বাবা, মিশিগানের মাউন্ট ক্লেম্যানস-এর স্টেশন এজেন্ট জে. ইউ. ম্যাকেনজি এতটাই কৃতজ্ঞ যে তিনি টেলিগ্রাফ অপারেটর হিসাবে এডিসনকে প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন। হুরন বন্দর থেকে দূরে এডিসনের প্রথম টেলিগ্রাফি কাজটি গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রেলওয়ের অন্টারিওর স্ট্রাটফোর্ড জংশনে ছিল। তিনি নেয়ার কলিজিওন হিসেবে দ্বায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তিনি গুণগত বিশ্লেষণও অধ্যয়ন করেছিলেন এবং চাকরি ছাড়ার আগ পর্যন্ত ট্রেনে রাসায়নিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছিলেন।

এডিসন রাস্তায় সংবাদপত্র বিক্রির একচেটিয়া অধিকার অর্জন করেছিলেন এবং চার সহকারীদের সহায়তায় তিনি টাইপ করে গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক হেরাল্ড মুদ্রণ করেছিলেন, যা তিনি তাঁর অন্যান্য কাগজপত্রের সাথে বিক্রি করেছিলেন। এটার মাধ্যমে এডিসনের দীর্ঘ উদ্যোগী উদ্যোগ শুরু হয়েছিল, কারণ তিনি ব্যবসায়ী হিসাবে তার প্রতিভা আবিষ্কার করেছিলেন। এই প্রতিভার জন্য অবশেষে তাকে জেনারেল ইলেকট্রিক ছাড়াও আরো ১৪ টি সংস্থা খুঁজে পেয়েছিল, যা এখনও বিশ্বের বৃহত্তম প্রকাশ্যে ব্যবসায়ের সংস্থাগুলির মধ্যে একটি।

এডিসনের ১৯ বছর বয়সে ১৮৬৬ সালে তিনি লুভলে স্থানান্তরিত হন। সেখানে তিনি কর্মচারী হিসেবে ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নে যোগ দেন। তিনি এসোসিয়েটেড প্রেস ব্যুরো সংবাদ সংস্থাতে কাজ করেছেন। এডিসন নাইট শিফটের জন্য অনুরোধ করেন, যা তাকে তার দুটি প্রিয় মনোরঞ্জনের জিনিস — পড়া এবং পরীক্ষা বা এক্সপেরিম্যান্ট করতে প্রচুর সময় দিবে। অবশেষে, তার কাজের ক্ষেত্রের তন্ময়তা তাকে মূল্যবান বানায়। ১৮৬৭ সালে এক রাতে, তিনি ফ্লোরে সালফিউরিক অ্যাসিড ছিটিয়ে একটি সীসা-অ্যাসিড ব্যাটারি নিয়ে কাজ করছিলেন। এটি ফ্লোরবোর্ডের মধ্যে এবং নীচে দিয়ে এটি গিয়ে তাঁর বসের ডেস্কের দিকে ছড়িয়েছিল। পরদিন সকালে এডিসনকে চাকরি বরখাস্ত করা হয়েছিল।

বিবাহ এবং সন্তান

ডিসেম্বর ২৫, ১৮৭১ সালে টমাস আলভা এডিসন ১৬ বছর বয়সি মেরি স্টিলওয়েলকে বিয়ে করেন। তাদের তিনটি সন্তান ছিল। তাদের নামঃ

১। মেরিওন এসটেলা এডিসন (১৮৭৩–১৯৬৫)
২। টমাস আলভা এডিসন জুনিয়র (১৮৭৬–১৯৩৫)
৩। উইলিয়াম লেসলি এডিসন (১৮৭৮–১৯৩৭)

মেরি এডিসন ১৮৮৪ সালের আগস্টের ৯ তারিখে মৃত্যু বরণ করেন। তারপর ওহাইওতে টমাস এডিসন ২০ বছর বয়সি মিনা মিলারকে বিয়ে করেন। তিনি বিখ্যাত উদ্ভাবক লুইস মিলারের কন্যা ছিলেন। তাদের তিনটি সন্তান রয়েছে। তাদের নামঃ

১। মেডেলিইন এডিসন (১৮৮৮–১৯৭৯)
২। চার্লস এডিসন (১৮৯০–১৯৬৯), যিনি তার বাবার মৃত্যুর পর প্রতিষ্ঠানটি দেখাশোনা করতেন এবং পরে নিউ জার্সির গভর্নর নির্বাচিত হন।
৩। থিওডর এডিসন(১৮৯৮–১৯৯২), পদার্থবিদ যার ৮০টির বেশি পেটেন্ট রয়েছে।

টমাস আলভা এডিসন এর সফল আবিষ্কারক ও উদ্যোক্তা হয়ে ওঠা:

১৮৬৯ সালে, ২২ বছর বয়সী টমাস আলভা এডিসন নিউ ইয়র্ক শহরে পাড়ি জমান এবং তাঁর প্রথম সফল আবিষ্কারটি করেন। এটি ছিলো একটি স্টক টিকার প্রিন্টার, তিনি যার নাম দিয়েছিলেন “ইউনিভার্সাল স্টক প্রিন্টার”। স্টক টিকার হলো শেয়ার বা স্টক মার্কেটের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বা স্টকের মূল্য ওঠা নামা করার সংকেত। টমাসের আবিষ্কারের ফলে কখন কোনটির দাম উঠছে বা নামছে – তা খুব সহজে দেখা যেতো, এবং একই সাথে টমাসের প্রিন্টার অনেকগুলো স্টক একসাথে দেখাতে পারতো। “গোল্ড এ্যান্ড স্টক টেলিগ্রাফ কোম্পানী” তাঁর কাজে দারুন মুগ্ধ হয়ে তাঁকে ৪০ হাজার ডলার দিয়ে যন্ত্রটির স্বত্ব কিনে নেয়। ১৮৭০ এর দশকে ৪০ হাজার ডলার মানে বিশাল অংক।

এই সাফল্যের পর টমাস টেলিগ্রাফ অপারেটরের চাকরি ছেড়ে পুরোপুরি আবিষ্কারক হয়ে যাবেন বলে ঠিক করেন। ১৮৭০ সালে আমেরিকার নিউ জার্সিতে তিনি প্রথম তাঁর নিজের ল্যাব স্থাপন করেন। সেখানে কয়েকজন মেশিন অপারেটরও নিয়োগ দেন।
তাঁর ল্যাবটি আসলে ছিলো তাঁর ব্যবসায়িক কারখানা। সেখানে তিনি নতুন নতুন যন্ত্র তৈরী করতেন, এবং সবচেয়ে বেশি দাম যে দিতে পারতো- তার কাছে বিক্রী করতেন। যে টেলিগ্রাফ দিয়ে তাঁর কর্মজীবনের শুরু, সেই যন্ত্রের উন্নতিও তিনি করেছিলেন। প্রথম ল্যাব থেকেই তিনি “কোয়ার্ডার প্লেক্স” টেলিগ্রাফ আবিষ্কার করলেন, যা একটি তারের মধ্যদিয়ে দুইটি আলাদা জায়গায় সিগন্যাল পাঠাতে পারতো। সেই সময়ে এটা ছিল একটি যুগান্তকারী আবিষ্কার।

তিনি ফোনোগ্রাফ আবিষ্কার করেন, যেটি আসলে প্রথম কার্যকর অডিও রেকর্ডিং যন্ত্র। যদিও এই ফোনোগ্রাফ সাধারণ মানুষের কাছে আসতে আরও ১০ বছরের মত লেগেছিল, কিন্তু এই যন্ত্রের মাধ্যমেই এডিসন প্রথমবারের মত সারা বিশ্বে বিখ্যাত হন।

ব্যবহারযোগ্য ইলেকট্রিক বাল্ব:

অনেকেরই ধারণা যে প্রথম ইলেকট্রিক বাল্ব টমাস এডিসনের আবিষ্কার। এটা আসলে পুরোপুরি ঠিক নয়। এর আগেও অনেকে গ্যাস ও আগুনের বাতির বিকল্প নিয়ে গবেষণা করেছেন। ১৮০০ সালে ইতালিয়ান বিজ্ঞানী আলেসান্দ্রো ভোল্‌টা থেকে শুরু করে বৃটিশ বিজ্ঞানী হামপ্রে ড্যাভি, হেনরি উডওয়ার্ড ও ম্যাথু ইভান্স পর্যন্ত অনেকেই চেষ্টা করেছেন ইলেকট্রিসিটি চালিত বাতি তৈরী করার। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাঁরা সফল হলেও, সাধারণ মানুষের ব্যবহার করার মত, এবং ব্যবসায়িক ভাবে বিক্রীর যোগ্য করে কেউ এই বাতি বানাতে পারেননি। কথিত আছে, টমাস আলভা এডিসনকেও সফল ভাবে ইলেকট্রিক বাতি বানাতে গিয়ে ১০ হাজার বার ব্যর্থ হতে হয়েছিলো। এই প্রসঙ্গে পরে তিনি বলেছিলেন “আমি ১০ হাজার বার ব্যর্থ হইনি, আমি এটি কাজ না করার ১০ হাজারটি কারণ বের করেছি।

তিনি উডওয়ার্ড ও ইভান্স এর গবেষণার স্বত্ব বা কপিরাইট কিনে নিয়ে তাদের প্রজেক্টের ওপর গবেষণা চালাতে থাকেন, এবং ১৮৭৯ সালে তিনি আধুনিক লাইট বাল্বের সফল ডিজাইনটি করতে সক্ষম হন। অন্য সবার মত, টমাসও কাজটি করতে গিয়ে বার বার ব্যর্থ হয়েছেন। কিন্তু অন্যরা ব্যর্থ হয়ে গবেষণা থামিয়ে দিলেও টমাস তা চালিয়ে গিয়ে অবশেষে সফল হয়েছিলেন। পরবর্তীতে তিনি আধুনিক লাইট বাল্বের পেটেন্টটি নিজের নামে করে নেন।

১৮৮০ সালের জানুয়ারিতে তিনি তাঁর ইলেকট্রিক কোম্পানী গড়ার কাজ শুরু করেন। তাঁর স্বপ্ন ছিলো পৃথিবীর সব শহরে তিনি বিদ্যু‌ৎ ও আলো পৌঁছে দেবেন। সেই বছর তিনি “এডিসন ইল্যুমিনেটিং কোম্পানী” প্রতিষ্ঠা করেন। পরে যেটি “জেনারেল ইলেকট্রিক কর্পোরেশন” নামে পরিচিতি পায়। জেনারেল ইলেকট্রিক এখনও পৃথিবীর সেরা ইলেকট্রিক কোম্পানী গুলোর একটি।
১৮৮১ সালে টমাসের কোম্পানী বেশ কয়েকটি শহরে পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপন করা শুরু করেন। ১৮৮২ সালে তাঁর কোম্পানী ম্যানহাটনের ৫৯টি বাড়িতে তাদের বিদ্যু‌ৎ ও আলোর সেবা দেয়া শুরু করে।

টমাস এডিসনের অন্যান্য আবিষ্কার ও উদ্যোগ:

৮৮৭ সালে আমেরিকার নিউ জার্সির ওয়েস্ট-অরেঞ্জ নামক জায়গায় টমাস বিশাল একটি ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ ল্যাব প্রতিষ্ঠা করেন। সেখানে তিনি লাইট ও বিদ্যু‌ৎ এর প্রযুক্তিকে আরও এগিয়ে নেয়ার পাশাপাশি, ফোনোগ্রাফ এবং মোশন পিকচার ক্যামেরার কার্যকর মডেল তৈরী করেন। এছাড়া আধুনিক ব্যাটারীও তৈরী করেন, যা অনেক বেশি সহজে অনেক বেশি বিদ্যু‌ৎ ধরে রাখতে পারতো।

এর পরের কয়েক দশকে এডিসন আবিষ্কারকের পাশাপাশি দক্ষ একজন ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট ও বিজনেস ম্যানেজার হয়ে উঠতে থাকেন, যা আমেরিকার অর্থনীতির আজকের পর্যায়ে আসার পেছনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ ছিল। যদিও প্রথম দিকে তিনি কর্পোরেট পরিবেশে ঠিক মানিয়ে নিতে পারছিলেন না, তবে ধীরে ধীরে তিনি ব্যাপারটা শিখে নেন।১৮৯৬ সালের ২৩শে এপ্রিল নিউ ইয়র্ক শহরের ‘কোস্টার এ্যান্ড বিয়াল’স মিউজিক হল’ এ, ইতিহাসের প্রথম ব্যক্তি হিসেবে এডিসন চলচ্চিত্র প্রদর্শন করেন।

০ শতকের (১৯০১-২০০০) শুরুর দিকে যখন মোটর গাড়ির ব্যবহার শুরু হচ্ছিল, এডিসন ইলেকট্রিক কার নিয়ে গবেষণা শুরু করলেন। তিনি এমন একটি ব্যাটারি বানাতে চাইছিলেন যা একটি গাড়িকে যথেষ্ঠ সময় চালানোর মত এনার্জি ধরে রাখতে পারে। যদিও শেষ পর্যন্ত ইলেকট্রিক গাড়ির চেয়ে তেলে চলা গাড়িই পায়। এর একটি প্রধান কারণ, আজকের দিনের মত তখন ইলেকট্রিসিটি এতটা সহজে পাওয়া যেত না। টমাস পরে তাঁর বন্ধু ফোর্ড মোটরস এর প্রতিষ্ঠাতা হেনরি ফোর্ড এর জন্য গাড়ির যন্ত্রাংশ বানিয়ে দেন। টমাস আলভার বানানো প্রযুক্তি দশকের পর দশক ধরে গাড়িতে ব্যবহার হয়েছে। আজকের জনপ্রিয় গাড়ির ব্র্যান্ড ইলন মাস্ক এর “টেসলা মোটরস” এর গাড়িগুলো টমাস আলভা এডিসনের ইলেকট্রিক কারের আইডিয়া থেকেই অনুপ্রাণিত।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ে আমেরিকান সরকার তাঁকে “ন্যাভাল কনসালটিং বোর্ড” এর প্রধান হতে অনুরোধ করে। এই বোর্ডটি সেনাবাহিনী ও নৌ বাহিনীর অস্ত্র পরীক্ষা ও তার উন্নয়ন করতো। দেশপ্রেমের জায়গা থেকে তিনি কাজটি করতে রাজি হয়েছিলেন, কিন্তু নীতিগত জায়গা থেকে হত্যা ও ধ্বংসের বিরুদ্ধে থাকার কারণে, মিসাইল ডেটেক্টর, অস্ত্রের লোকেশন বের করার টেকনিক – ইত্যাদি প্রজেক্টে কাজ করলেও কোনও অস্ত্র বানানোর প্রজেক্টে তিনি কাজ করেননি। তাঁর সাথে সরকারের চুক্তির শর্তই ছিল যে, তিনি শুধু ডিফেনসিভ ও টেকনিক্যাল বিষয়গুলোতে কাজ করবেন। 

মৃত্যু:

১৯২০ দশকের শেষের দিকে, টমাসের বয়স যখন আশির ঘরে, তাঁর বেশিরভাগ সময়ই কাটতো ফ্লোরিডাতে। সেখানেই আধুনিক গাড়ির জনক হেনরি ফোর্ড এর সাথে তাঁর বন্ধুত্ব আরও গভীর হয়। ওই বয়সেও তিনি ইলেকট্রিক ট্রেন এর মত প্রজেক্টে কাজ করেছেন তিনি।

What's Your Reaction?

Like Like 0
Dislike Dislike 0
Love Love 0
Funny Funny 0
Angry Angry 0
Sad Sad 0
Wow Wow 0