মাদার তেরেসার এর জীবনী | Biography Of Mother Teresa

মাদার টেরিজা জীবনী | Biography of Mother Teresa Bangla | মাদার তেরেসার জীবন কাহিনী

May 27, 2025 - 22:19
Jun 20, 2025 - 16:54
 0  0
মাদার তেরেসার এর জীবনী | Biography Of Mother Teresa

নাম

মাদার টেরিজা

প্রকৃত নাম

অ্যাগনিস গঞ্জা বোজাঝিউ

জন্ম

২৬ আগস্ট ১৯১০

জন্মস্থান

ইউস্কুপ, অটোম্যান সাম্রাজ্য (অধুনা স্কপিয়ে, উত্তর মেসিডোনিয়া)

পিতা

নিকোল্লে বোজাঝিউ

মাতা

ড্রানাফাইলে বোজাঝিউ

পেশা

ক্যাথলিক সন্ন্যাসিনী, ধর্মপ্রচারক

নাগরিকত্ব

আলবেনীয় (১৯১০-১৯২৮), ব্রিটিশ ভারতীয় (১৯২৮-১৯৪৭), ভারতীয় (১৯৪৭-১৯৯৭)
পুরস্কার নোবেল শান্তি পুরস্কার (১৯৭৯)
ভারতরত্ন (১৯৮০)
প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অফ ফ্রিডম (১৯৮৫)
বালজান পুরস্কার (১৯৭৮)

ধর্ম

ক্যাথলিক খ্রিস্টান

মৃত্যু

৫ই সেপ্টেম্বর, ১৯৯৭ (৮৭ বছর বয়স )

প্রথম জীবন:

১৯১০ সালে ২৬শে আগস্ট আলবেনিয়াতে এক ক্যাথলিক খ্রিষ্টান পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন মাদার টেরেজা। পিতা ছিলেন নিকোলাস বোজাঝিউ নামের এক কৃষক ও মাতা দ্রোনাফাইল বোজাঝিউ। জন্মসূত্রে পাওয়া নাম ছিলো অ্যাগনেস। এই ছোট্ট মেয়েটির গরীব মা-বাবা কোনদিনও ভাবতে পারেনি যে একদিন তাদের এই ছোট্ট মেয়ে বড় হয়ে পৃথিবীর সবার দুঃখমোচন করার জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করবে! ছোট্ট অ্যাগনেস করুণাময় যীশু এবং মাতা মেরির মূর্তির সামনে দাঁড়িয়ে নতমস্তকে সকল মানুষের দুঃখ মোচন করার জন্য প্রার্থনা করতেন সেটি ছিল তাদের অজানা। এইভাবে প্রার্থনা করতে করতে একদিন নিজেই বেরিয়ে পড়েন মানুষের দুঃখ মোজন করার জন্য এবং ধীরে ধীরে হয়ে ওঠেন সকলের প্রিয় মাদার টেরেজা, সকলের মা!

অ্যাগনেসরা ছিলেন দুই বোন ও এক ভাই, জন্ম থেকেই এই ছোট্ট মেয়েটির ছিল একটি পা কৃশ। শারীরিক এই প্রতিবন্ধকতার জন্য তিনি সবসময় নিজেকে লজ্জার আবরণে ঢেকে রাখতেন। মাত্র ৭ বছর বয়সে অ্যাগনেস পিতৃহারা হন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ক্ষত বিক্ষত যুগস্লোভিয়াতে তিনটি শিশুকে অনেক কষ্টে লালন পালন করেন তাদের মা। মায়ের অনুপ্রেরণা তেই খুব কম বয়স থেকে দুর্ভিক্ষ এবং কষ্টে জর্জরিত মানুষদের দুঃখমোচনের জন্য আকৃষ্ট হন ছোট্ট অ্যাগনেস।

শিক্ষা ও কর্মজীবন:

প্রথম জীবনে স্থানীয় সরকারি স্কুলেই নিজের প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন অ্যাগনেস ও পরে নিজের পিতৃভূমিতেই বাকি শিক্ষা সম্পন্ন করেন। প্রথমে তিনি এখানেই শিক্ষিকা হিসেবে সেন্ট মার্গারেট স্কুলে অংশগ্রহণ করেন এবং মাত্র তিনটি শিশুকে নিয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন। এরপর মাত্র ১৮ বছর বয়সে ১৯২৯ সালে মাদার ভারতে আসেন। ১৮ বছর বয়স থেকেই তিনি নিজেকে মানুষের সেবার কাজে বিলিয়ে দেন। এরপর কলকাতার এন্টালিতে সেন্ট মেরিজ হাইস্কুলে ভূগোল শিক্ষিকা হিসাবে কাজ শুরু করেন পরে লরেটো স্কুলেও যোগদান করেন। ১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতার প্রাককালে ভারতীয় নাগরিকত্ব পান। এখানে থাকা অবস্থায় পঞ্চাশের মন্বন্তর, হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা শহরে নেমে আসে অবর্ণনীয় দুঃখ আর মৃত্যুর মিছিল যা মাদার টেরেজার মনে এনেছেন গভীর ক্ষত! সিস্টার অ্যাগনেস এই সময়েই শুরু করলেন তাঁর কাজ । অচিরেই তিনি বুঝতে পারলেন পেছনে বঙ্গন রেখে দরিদ্র ‘ আর্তের সেবা হয়। এখানকার অতি দীন ক্ষুধার্ত মানুষদের পাশে ‘ আশা–ভরসার ঝুলি নিয়ে দাঁড়াতে হলে তাকে চার দেওয়ালের গণ্ডির নিশ্চিত জীবন থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

আয়ারল্যান্ড থেকে কলকাতা

সন্ন্যাসজীবনের প্রশিক্ষণ এবং ইংরেজি শিক্ষার জন্য অ্যাগনেসকে আয়ারল্যান্ডের রাজধানী ডাবলিনে পাঠানো হয়। সেখানে প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রায় ছয় সপ্তাহ শেষে ১৯২৮ সালের ডিসেম্বর ভারতবর্ষের উদ্দেশে সমুদ্রপথ পাড়ি দেন তিনি। ১৯২৯ সালে ভারতের কলকাতায় পৌঁছান। এরপর সেখানকার একটি স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন।

১৯৩১ সালে অ্যাগনেস সন্ন্যাসিনী হিসেবে প্রথম শপথ গ্রহণ করেন। তখন তিনি সাধু সেন্ট তেরেসার নামানুসারে ‘সিস্টার ম্যারি তেরেসা’ নাম গ্রহণ করেন। এরপর ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত কলকাতার সেন্ট মেরি হাইস্কুলে ভূগোল, ইতিহাস ও ক্যাথেসিজম বিষয়ে পাঠদান করেন। পাশাপাশি বাংলা ও হিন্দি ভাষা রপ্ত করারও চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে স্কুলের অধ্যক্ষের দায়িত্ব পান।

শিক্ষকতা করার ফাঁকে ফাঁকে প্রতিদিন কলকাতা শহরের বিভিন্ন বস্তিতে ঘুরে বেড়াতেন মাদার তেরেসা। ১৯৪৩ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কলকাতায় দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। এ সময় পশ্চিমবঙ্গ এক বিশাল হাহাকারের রাজ্যে পরিণত হয়। হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারায়। এমন অবস্থায় বস্তিবাসীদের অবর্ণনীয় দুঃখ–দুর্দশা নিজ চোখে দেখতে বস্তিতে যেতেন তিনি। চেষ্টা করতেন তাদের সাহায্য করতে।

১৯৪৬ সালের ১০ সেপ্টেম্বর মাদার তেরেসা কলকাতা থেকে ট্রেনে দার্জিলিং যাচ্ছিলেন। ওই সময় ট্রেনে বসে তিনি ভারতের মানুষের কল্যাণে জীবন উৎসর্গ করার সিদ্ধান্ত নেন। পরে ক্ষুধার্ত ও নিঃস্বদের ডাকে সাড়া দিতে কাজ শুরু করেন।

মাদার টেরেজার বাণী:

১৯৪৬ সালের ১০ ই সেপ্টেম্বর দার্জিলিং যাওয়ার সময় এক অলৌকিক উপলব্ধি হল তার । মাদার টেরেজা যেন ঈশ্বরের প্রত্যাদেশ শুনতে পেলেন । এই উপলব্ধি নিজের ভাষায় ব্যক্ত করেন তিনি। তিনি বলেন,”…a call within a call……The message was clear. I was to leave the convent and help the poor, while living among them!” আমৃত্যু তিনি দরিদ্র o নিপীড়িত মানুষের সেবার কাজে নিযুক্ত থেকেছেন। তিনি মনে করতেন যে, গরিবের সেবা করতে হলে গরিব হয়ে তাদের মধ্যে থেকেই তা করতে হবে। ঈশ্বরের এই আদেশ লাভের দিনটিকে আমৃত্যু স্মরণ করতেন মাদার। তিনি বলতেন “দ্য ডে অব ডিসিশন”(The Day of Decision) — অর্থাৎ অনুপ্রেরণার দিন।

মাদারের প্রতিষ্ঠা:

১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে ‘ডায়োসিসান ধর্মপ্রচারকদের সংঘ’ করার জন্য ভ্যাটিকানের অনুমতি লাভ করেন। এই সংঘই পরবর্তীতে ‘মিশনারিস অফ চ্যারিটি’ হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে কলকাতার মতিঝিল বস্তির দুঃস্থ ও দুর্গত মানুষদের দেখে হতদরিদ্র এবং দুরারোগ্য মানুষদের আশ্রয় ও চিকিৎসা দিতে ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার কালীঘাটে এক পরিত্যক্ত হিন্দু মন্দিরকে ‘কালীঘাট হোম ফর দ্যা ডাইং’এ রূপান্তরিত করেন, পরবর্তীতে ইহার নাম পরিবর্তন করে রাখেন ‘নির্মল হৃদয়’। এসময়ই মাদার টেরেসা টিটাগড়ে কুষ্ঠরোগীদের সেবার জন্য একটি আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন যার নাম দেন ‘শান্তি নগর’। তিনি মিশনারিস অফ চ্যারিটির উদ্যোগে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও কুষ্ঠরোগের চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপন করেন। এছাড়াও অনাথ শিশুদের লালন পালন করতেন এবং তাদের জন্য থাকার জন্য ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে ‘নির্মল শিশু ভবন’ স্থাপন করেন যা বসতিহীন শিশুদের কাছে এনে দিয়েছিল একধরণের স্বর্গ।

দয়াময়ী মাদার টেরেজা:

নীল পাড় যুক্ত সাদা সুতির শাড়ি পরিধান করে তিনি বাম কাঁধে ঝুলিয়ে নিলেন পবিত্র ক্রুশ চিহ্ন । ১৯৫০ সালে গঠিত হল “মিশনারিজ অফ চ্যারিটি”। মহামান্য পোপ তাঁকে দিলেন সানন্দ স্বীকৃতি । ১৯৫৪ সালে মহাতীর্থ কালীঘাটে স্থাপিত হল ‘নির্মল হৃদয়’- মুমূর্ষু সদন। সেসব অসহায়, নিরাশ্রয় নরনারী মৃত্যু পথযাত্রী, তাঁরা যাতে শান্তিতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে পারে কিংবা পেতে পারেন নবজীবনের ঠিকানা সেজন্যই এই প্রতিষ্ঠানের জন্ম। অর্ধলক্ষাধিক মানুষ আজ পর্যন্ত সেখানে লাভ করেছে করুণাময়ী জননীর স্নেহশীতল করস্পর্শ, পেয়েছে পরিচ্ছন্ন শয্যা, থালাভরা খাদ্য এবং সস্নেহ শুশ্রুষা।


i) এই করুণাময়ী জননীর স্পর্শ বর্তমানে ছড়িয়ে আছে ভারতের পঁয়ত্রিশটি শহরে, গঞ্জে এবং ভারতের বাইরে এবং পৃথিবীর নানা বিন্দুতে। এক বিশাল সেবিকা বাহিনী, বিশাল সেবাকর্মীর দল তার নেতৃত্বে মানবতার সেবার জন্য উৎসর্গকৃত-জীবন। সেই সময় টিটাগড়ে কুষ্ঠরোগীদের জন্য তিনি একটি আশ্রম খুলেছিলেন যার নাম দেওয়া হয়েছিল ‘শান্তিনগর’। এছাড়া মিশনারিস অফ চ্যারিটি উদ্যোগ গ্রহণ করে কলকাতার বাইরে, প্রত্যন্ত অঞ্চলে বেশ কিছু কুষ্ঠরোগ চিকিৎসা কেন্দ্র ও স্থাপন করে। এই কেন্দ্রগুলোতে ঔষধ, ব্যান্ডেজ ও খাদ্য সুবিধা দেয়া হয়। ভারতবর্ষে তাঁর তত্ত্বাবধানে ছিল ৬০ টি স্কুল,২১৩ টি দাতব্য চিকিৎসালয় এবং ৫৪ টি কুষ্ঠ চিকিৎসাকেন্দ্র।


ii) ভারতের বাইরেও তার কর্মকাণ্ড ছড়িয়ে আছে। ১৯৬৫ সালে দরিদ্রদের জন্য ভারতের বাইরে প্রথম আশ্রম ঠিক হলেন ভেনিজুয়েলায়। ১৯৭১ সালের মিশনারি কর্মকাণ্ডের জন্য নিউইয়র্কে একটি আশ্রম করেন। এখন এই মুহূর্তে পৃথিবীর জুড়ে ‘মিশনারিজ অফ চ্যারিটি’তে চার হাজারেরও বেশি সন্ন্যাসিনি এবং লক্ষ লক্ষ স্বেচ্ছাসেবী কাজ করে চলেছেন। মাত্র পাঁচ জন সন্ন্যাসিনী কে নিয়ে যে কেন্দ্র স্থাপন হয়েছিল তার খ্যাতি এবং সেবা চারিদিকে এখন ছড়িয়ে পড়েছে। ১৯৬৮ সালে রোম, তানজানিয়া ও অস্ট্রিয়া এবং ১৯৭০ এর সময় এশিয়া, ইউরোপ, আফ্রিকা ও আমেরিকার কয়েক ডজন দেশে এর শাখা বিস্তারিত হয়ে থাকে।

দাতব্য প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু

বছর চারেক পরে ১৯৫০ সালে জনহিতৈষী প্রতিষ্ঠান ‘মিশনারিজ অব চ্যারিটি’ গড়ে তোলেন। যার শাখা বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে আছে। ১৯৫২ সালে এই চ্যারিটির অধীনেই গড়ে ওঠে ‘নির্মল হৃদয়’। এটি মুমূর্ষু মানুষের আশ্রয় ও সেবাকেন্দ্র। ভারতীয় কর্মকর্তাদের সহায়তায় একটি পরিত্যক্ত হিন্দু মন্দিরকে এই সেবাকেন্দ্রে রূপান্তরিত করেন। নির্মল হৃদয়ের আদি নাম ‘হোম ফর দ্য ডাইং’। এটি ছিল দরিদ্রদের জন্য নির্মিত দাতব্য চিকিৎসাকেন্দ্র। এ ছাড়া কুষ্ঠরোগীদের জন্য গড়ে তোলেন ‘শান্তিনগর’।

এরপর ধীরে ধীরে কলকাতার বাইরেও মিশনারিজ অব চ্যারিটির সেবা ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ শুরু করেন মাদার তেরেসা। ১৯৬৫ সালে বিশ্বব্যাপী কাজ করার অনুমতি পান। ১৯৭১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে প্রথম শাখা খোলা হয়। বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ৯০টি দেশে এই চ্যারিটির শাখা রয়েছে।

কাজের নানা স্বীকৃতি

মানবসেবার স্বীকৃতি হিসেবে অসংখ্য আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন মাদার তেরেসা। ১৯৭১ সালে পোপ জন শান্তি পুরস্কার পান। বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় অবদানের চেষ্টাস্বরূপ ১৯৭২ সালে নেহরু পুরস্কার দেওয়া হয়। ওই বছরই ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক পদক ভারতরত্ন পুরস্কার পান তিনি। ১৯৭৫ সালে বিশ্ববিখ্যাত সাময়িকী ‘টাইম ম্যাগাজিন’ তাঁকে নিয়ে প্রচ্ছদ করে। তিনি ভারতসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মোট ৮৪টি পুরস্কার ও সাম্মানিক উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন।

আর্তমানবতার সেবায় আত্মোৎসর্গের স্বীকৃতিস্বরূপ মাদার তেরেসা ১৯৭৯ সালে নোবেল শান্তিতে পুরস্কার লাভ করেন। নোবেল পুরস্কার গ্রহণ অনুষ্ঠানে দেওয়া ভাষণে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, পৃথিবীতে বোমা বা বন্দুক আমাদের দরকার নেই। বরং শান্তি আনতে সবাই একতাবদ্ধ হোন, একে অপরকে ভালোবাসুন। সেই শান্তি আনুন, যা সবাইকে আনন্দ দেয় আর ঐক্যবদ্ধ থাকার শক্তি জোগায়। আর এভাবেই আমরা পৃথিবীর সব মন্দকে জয় করতে পারব।’

ওই সময় মিশন অব চ্যারিটিতে ১ হাজার ৮০০-এর বেশি সন্ন্যাসিনী ও ১ লাখ ২০ হাজার কর্মী ছিলেন। ভারতের ৮০টির বেশি শাখায় ও বিশ্বের ১০০টির বেশি দেশে তাঁরা মানবহিতৈষী কাজে জড়িত ছিলেন।

১৯৮৯ সালে দ্বিতীয়বার হার্ট অ্যাটাক হওয়ার পর মাদার তেরেসার দেহে কৃত্রিম পেসমেকার স্থাপন করা হয়। এই পরিস্থিতিতে তিনি ‘মিশনারিজ অব চ্যারিটি’র প্রধানের পদ ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাব করেন। কিন্তু চ্যারিটির নানরা গোপন ভোটের মাধ্যমে তাঁকে প্রধান থাকার অনুরোধ করেন। অগত্যা তিনি চ্যারিটির প্রধান হিসেবে কাজ চালিয়ে যেতে থাকেন। তবে শেষমেশ ১৯৯৭ সালে মিশনারিজ চ্যারিটির প্রধানের পদ থেকে সরে দাঁড়ান তিনি। সিস্টার নির্মলা তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন। ওই বছরের ৫ সেপ্টেম্বর এই মহীয়সী নারী পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চিরবিদায় নেন।

মৃত্যুর পর নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী ও ভারতরত্ন সম্মানে ভূষিত মাদার তেরেসাকে কলকাতার মাদার হাউসেই সমাহিত করা হয়।

মৃত্যুর সময় মাদার তেরেসার মিশনারিজ অব চ্যারিটিতে সিস্টারের সংখ্যা ছিল ৪ হাজার এবং ব্রাদারহুড সদস্য ৩০০ আর স্বেচ্ছাসেবীর সংখ্যা ছিল ১ লাখের বেশি। পৃথিবীর ১২৩টি দেশে মোট ৬১০টি কেন্দ্রে ধর্মপ্রচারের কাজ পরিচালিত হচ্ছিল।

এসব কেন্দ্রের মধ্যে ছিল এইডস, কুষ্ঠ ও যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য চিকিৎসাকেন্দ্র, সুপ কিচেন, শিশু ও পরিবার পরামর্শকেন্দ্র, এতিমখানা ও বিদ্যালয়। মাদার তেরেসা কখনোই জাতি-ধর্ম-বর্ণের সীমানায় নিজেকে আবদ্ধ রাখেননি। আর্তমানবতার সেবায় তিনি মাতৃস্নেহে যেভাবে পৃথিবীর সব জাতি-ধর্ম-বর্ণের মানুষের ভালোবাসার টানে আবদ্ধ করেছেন, তেমনি বিশ্ববাসী মাদার তেরেসাকে পরম শ্রদ্ধায় স্মরণ করে।

মাদার তেরেসার মৃত্যুর দুই বছর পর ১৯৯৯ সালে তাঁকে ‘সন্ত’ হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। সাধারণত এই প্রক্রিয়া শেষ করতে পাঁচ বছর সময় লাগে। ২০০৩ সালের ১০ অক্টোবর পোপ দ্বিতীয় জন পল জানান, সন্ত হওয়ার জন্য মাদার তেরেসা তিনটি ধাপ অতিক্রম করেছেন। এরপর কেটে যায় এক যুগের বেশি সময়। ২০১৬ সালের ৪ সেপ্টেম্বর মাদার তেরেসাকে সন্ত স্বীকৃতি দেওয়া হয়। বিশ্বের ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস এ স্বীকৃতি দেন।

পোপ বলেন, সন্ত ঘোষণার পরও ক্যাথলিকদের কাছে তিনি মাদার তেরেসা হিসেবেই থাকবেন। পোপ সন্ত তেরেসার কাজকে ‘দরিদ্রতমদের সঙ্গে ঈশ্বরের নিবিড়তম সখ্যের প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা’ হিসেবে অভিহিত করেন।

মাদার তেরেসা দেখিয়ে গেছেন শুধু ভালোবাসা দিয়েই পৃথিবীর বুকে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। এই বিশ্বাস থেকেই তিনি ভালোবাসা দিয়ে পৃথিবীর বুকে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য নিরন্তর কাজ করে গেছেন। তাই তো ১১৪তম জন্মদিনে বিশ্বব্যাপী শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করা হচ্ছে মহীয়সী এই নারীকে।

মাদার তেরেসা দুর্ভিক্ষের সময় : 

 সেটা ছিল দ্বিতীয় শিশুকের চাল । মানুষের সৃষ্ট দুর্ভিক্ষে শহর কলকাতার তখন নাতিপাস । দুমুঠো ভাতে ‘ আশা , একটি ফ্যানের আশায় দলে দলে গ্রামের মানুষ ভিড় করছে কলকাতায় , অনাহারে কুখাদ্য খেয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে মারা যাচ্ছে । 

 সিস্টার অ্যাগনেস এই সময়েই শুরু করলেন তাঁর কাজ । অচিরেই তিনি বুঝতে পারলেন পেছনে বঙ্গন রেখে দরিদ্র ‘ আর্তের সেবা হয় । এখানকার অতি দীন ক্ষুধার্ত মানুষদের পাশে ‘ আশা – ভরসার ঝুলি নিয়ে দাঁড়াতে হলে তাকে চার দেওয়ালের গণ্ডির নিশ্চিত জীবন থেকে বেরিয়ে আসতে হবে । 

 ১৯৪৬ খ্রি : ১০ ই সেপ্টেম্বর দার্জিলিং যাওয়ার সময় এক অলৌকিক উপলব্ধি হল তার । মাদার তেরেসা (Mother Teresa) যেন ঈশ্বরের প্রত্যাদেশ শুনতে পেলেন ।

পুরস্কার

  • ১৯৬২ সালে ‘পদ্মশ্রী পুরস্কার’ সম্মানে ভূষিত হন।
  • ১৯৬২ সালে তিনি রমন ম্যাগসেসে পুরস্কার পান।
  • ১৯৭২ সালে ‘নেহেরু পুরস্কার’ লাভ করেন।
  • ১৯৭৩ সালে তিনি টেমপেল্টন পুরস্কার পান।
  • ১৯৭৮ সালে ‘বালজান পুরস্কার’ পান।
  • ১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দে ভারতের প্রথম মহিলা হিসাবে ‘নোবেল শান্তি পুরস্কার’ পান ।
  • ১৯৮০ সালে ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান ‘ভারতরত্ন’ লাভ করেন।
  • ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দে পান ‘প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অফ ফ্রীডম’ সম্মান।

মাদার তেরেসার মিশনারী অব চ্যারিটি স্থাপন 

 ১৯৫০ খ্রি : একান্ত নিঃস্ব অবস্থায় শুরু করলেন মাদার তেরেসা (Mother Teresa) এর প্রথম সেবাব্রতের কাজ । স্থাপন করলেন তাঁর মিশনারী অব চ্যারিটি । 

এভাবেই কলকাতায় মাদার তেরেসা (Mother Teresa) আত্মনিয়ােগ করলেন মানুষ ও মানবতার সেবায় । মনপ্রাণ ঢেলে দিলেন নিপীড়িত দুইদরিদ্র অসহায় গণদেবতার সেবায় । তিলে তিলে গড়ে তুলতে লাগলেন তার সেবা প্রতিষ্ঠান । দুঃখী দুঃস্থ আর্ত জর্জরিত মানুষকে তিনি একান্ত মায়ের স্নেহ – মমতায় বুকে তুলে নিতে লাগলেন ।

 মাত্র পাঁচ টাকা মূলধন নিয়ে মাদার তেরেসা (Mother Teresa) যে মিশনারিজ অব চ্যারিটি প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলেছিলেন , তা আজ সারা বিশ্বে সম্প্রসারিত হয়েছে শত শাখা – প্রশাখায় । মানবতার সেবা ও শিক্ষা সম্প্রসারণের জন্য তিনি বহুদেশে বহু শিশুভবন , মহিলা কর্মকেন্দ্র , ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসা কেন্দ্র , খাদ্য ও বস্ত্র বিতরণ কেন্দ্র এবং কুষ্ঠাশ্রম ইত্যাদি স্থাপন করেছেন ।

মাদার তেরেসার রোগীদের জন্য চিকিৎসা ও সেবাকেন্দ্র গড়ে তোলা :

 মাদার তেরেসা কুষ্ঠ রােগীদের জন্য গড়ে তােলেন একটি চিকিৎসা ও সেবাকেন্দ্র । এই মহীয়সী নারী বৃদ্ধ বয়সেও সেবাব্রতের কাজে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে – দেশে অক্লান্তভাবে ঘুরে বেড়িয়েছেন । মাঝে মাঝে মাদার তেরেসা (Mother Teresa) অসুস্থ হয়ে পড়েন ও আবার সুস্থ হয়ে মানবতার সেবায় আত্মনিয়ােগ করেন । মুমূর্যদুস্থ দরিদ্রকে বুকে জড়িয়ে ধরেন । মাতৃত্বের এমন দৃষ্টান্ত বিশ্বে বিরল ।

 মানুষকে ভালবাসার অতুলনীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন মাদার তেরেসা । গােটা বিশ্ব তা স্বীকার করেছে আনত মস্তকে , দুহাত ভরে পুরস্কার দিয়েছে তাকে ।

অসুস্থ, মৃত, এতিম এবং কুষ্ঠরোগীদের সাহায্য করা

ভারতে লক্ষ লক্ষ মানুষ অভাবগ্রস্ত ছিল। খরা, বর্ণপ্রথা , ভারতের স্বাধীনতা এবং দেশভাগ - এই সব কারণেই রাস্তায় বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা বেড়ে গিয়েছিল। ভারতের সরকার চেষ্টা করছিল, কিন্তু সাহায্যের প্রয়োজন এমন বিশাল জনগোষ্ঠীকে সামলাতে পারেনি।

হাসপাতালগুলি যখন বেঁচে থাকার সম্ভাবনা থাকা রোগীদের দ্বারা উপচে পড়ছিল, তখন মাদার তেরেসা ২২শে আগস্ট, ১৯৫২ তারিখে মৃতদের জন্য নির্মল হৃদয় ("নিষ্পাপ হৃদয়ের স্থান") নামে একটি আবাসস্থল খুলেছিলেন।

প্রতিদিন, সন্ন্যাসিনীরা রাস্তা দিয়ে হেঁটে যেতেন এবং কলকাতা শহর কর্তৃক দান করা একটি ভবনে অবস্থিত নির্মল হৃদয়ে মৃত্যুবরণকারী ব্যক্তিদের নিয়ে আসতেন। সন্ন্যাসিনীরা এই লোকদের স্নান করিয়ে খাওয়াতেন এবং তারপর তাদের একটি খাটে শুইয়ে দিতেন। তাদের ধর্মীয় রীতিনীতি মেনে মর্যাদার সাথে মৃত্যুবরণ করার সুযোগ দেওয়া হত।

১৯৫৫ সালে, মিশনারিজ অফ চ্যারিটি তাদের প্রথম শিশু ভবন (শিশু ভবন) খোলে, যা এতিমদের যত্ন নেয়। এই শিশুদের থাকার ব্যবস্থা করা হত, খাওয়ানো হত এবং চিকিৎসা সহায়তা দেওয়া হত। সম্ভব হলে, শিশুদের দত্তক নেওয়া হত। যাদের দত্তক নেওয়া হয়নি তাদের শিক্ষা দেওয়া হত, ব্যবসায়িক দক্ষতা অর্জন করা হত এবং বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করা হত।

ভারতের বস্তিতে, বিপুল সংখ্যক মানুষ কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত ছিল, এমন একটি রোগ যা বড় ধরনের বিকৃতি ঘটাতে পারে। সেই সময়ে, কুষ্ঠরোগীদের (কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের) সমাজচ্যুত করা হত, প্রায়শই তাদের পরিবার পরিত্যক্ত করত। কুষ্ঠরোগীদের ব্যাপক ভয়ের কারণে, মাদার তেরেসা এই অবহেলিত মানুষদের সাহায্য করার উপায় খুঁজে বের করতে সংগ্রাম করেছিলেন।

মাদার তেরেসা অবশেষে জনসাধারণকে এই রোগ সম্পর্কে শিক্ষিত করার জন্য একটি কুষ্ঠ তহবিল এবং একটি কুষ্ঠ দিবস তৈরি করেন এবং কুষ্ঠরোগীদের তাদের বাড়ির কাছে ওষুধ এবং ব্যান্ডেজ সরবরাহ করার জন্য বেশ কয়েকটি ভ্রাম্যমাণ কুষ্ঠ ক্লিনিক (প্রথমটি সেপ্টেম্বর 1957 সালে খোলা হয়েছিল) প্রতিষ্ঠা করেন।

১৯৬০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে, মাদার তেরেসা শান্তি নগর ("শান্তির স্থান") নামে একটি কুষ্ঠরোগী উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন যেখানে কুষ্ঠরোগীরা থাকতে এবং কাজ করতে পারতেন।

আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি

মিশনারিজ অফ চ্যারিটির দশম বার্ষিকী উদযাপনের ঠিক আগে, তাদের কলকাতার বাইরে, কিন্তু ভারতের মধ্যেই বাড়ি স্থাপনের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই, দিল্লি, রাঁচি এবং ঝাঁসিতে বাড়ি স্থাপন করা হয়েছিল; শীঘ্রই আরও বাড়ি তৈরি করা হয়েছিল।

তাদের ১৫তম বার্ষিকী উপলক্ষে, মিশনারিজ অফ চ্যারিটিকে ভারতের বাইরে বাড়ি স্থাপনের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। ১৯৬৫ সালে ভেনেজুয়েলায় প্রথম বাড়িটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। শীঘ্রই বিশ্বজুড়ে মিশনারিজ অফ চ্যারিটির বাড়ি তৈরি হয়েছিল।

মাদার তেরেসার মিশনারিজ অফ চ্যারিটি যখন আশ্চর্যজনক হারে সম্প্রসারিত হচ্ছিল, তখন তার কাজের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও বৃদ্ধি পাচ্ছিল। যদিও মাদার তেরেসা ১৯৭৯ সালে নোবেল শান্তি পুরষ্কার সহ অসংখ্য সম্মানে ভূষিত হয়েছিলেন , তবুও তিনি কখনও তার কৃতিত্বের জন্য ব্যক্তিগত কৃতিত্ব নেননি। তিনি বলেছিলেন যে এটি ঈশ্বরের কাজ এবং তিনি কেবল এটিকে সহজতর করার জন্য ব্যবহৃত হাতিয়ার ছিলেন।

বিতর্ক

আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির সাথে সাথে সমালোচনাও শুরু হয়। কিছু লোক অভিযোগ করে যে অসুস্থ এবং মৃতদের জন্য ঘরগুলি অস্বাস্থ্যকর ছিল, যারা অসুস্থদের চিকিৎসা করত তারা সঠিকভাবে চিকিৎসার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ছিল না, মাদার তেরেসা মৃতদের আরোগ্য লাভের চেয়ে ঈশ্বরের কাছে যেতে সাহায্য করতে বেশি আগ্রহী ছিলেন। অন্যরা দাবি করে যে তিনি মানুষকে খ্রিস্টধর্মে ধর্মান্তরিত করতে সাহায্য করেছিলেন।

মাদার তেরেসা গর্ভপাত এবং জন্মনিয়ন্ত্রণের বিরুদ্ধে খোলাখুলি কথা বলার সময়ও অনেক বিতর্কের জন্ম দিয়েছিলেন। অন্যরা তার সমালোচনা করেছিলেন কারণ তারা বিশ্বাস করেছিলেন যে তার নতুন সেলিব্রিটি মর্যাদার মাধ্যমে, তিনি দারিদ্র্যের লক্ষণগুলিকে প্রশমিত করার পরিবর্তে এর অবসান ঘটাতে কাজ করতে পারতেন।

পরবর্তী বছর এবং মৃত্যু

বিতর্ক সত্ত্বেও, মাদার তেরেসা অভাবীদের পক্ষে ছিলেন। ১৯৮০-এর দশকে, মাদার তেরেসা, ইতিমধ্যেই তার ৭০-এর দশকে, নিউ ইয়র্ক, সান ফ্রান্সিসকো, ডেনভার এবং ইথিওপিয়ার আদ্দিস আবাবায় এইডস আক্রান্তদের জন্য "গিফট অফ লাভ" হোম খুলেছিলেন।

১৯৮০ এবং ১৯৯০ এর দশক জুড়ে, মাদার তেরেসার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে, কিন্তু তিনি এখনও বিশ্বজুড়ে ভ্রমণ করেছিলেন, তার বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছিলেন।

১৯৯৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর ( রাজকুমারী ডায়ানার মৃত্যুর মাত্র পাঁচ দিন পর) ৮৭ বছর বয়সে মাদার তেরেসা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে , বিশ্ব তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে। লক্ষ লক্ষ মানুষ তার মরদেহ দেখার জন্য রাস্তায় সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়েছিল, আর লক্ষ লক্ষ মানুষ টেলিভিশনে তার রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া দেখেছিলেন।

শেষকৃত্যের পর, মাদার তেরেসার মরদেহ কলকাতার মিশনারিজ অফ চ্যারিটির মাদার হাউসে সমাহিত করা হয়। মাদার তেরেসার মৃত্যুতে, তিনি ১২৩টি দেশের ৬১০টি কেন্দ্রে ৪,০০০ এরও বেশি মিশনারিজ অফ চ্যারিটি সিস্টার রেখে গেছেন।

নোবেল পুরস্কার জয়ী মাদার তেরেসা 

 ১৯৭৯ খ্রিঃ মাদারকে শান্তির জন্য দেওয়া হল নােবেল পুরস্কার । ১৯৮০ খ্রিঃ মাদার তেরেসা (Mother Teresa) পেলেন ভারত সরকারের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান ভারতরত্ন ।

মাদার তেরেসার সন্ত উপাধি :

 প্রয়াত মাদার তেরেসাকে ৪ ঠা সেপ্টেম্বর ২০১৬ “ সন্ত ” উপাধিতে ভূষিত করেছেন রােমান ক্যাথলিক চার্চের পােপ ফ্রান্সিস ।

স্বাস্থ্যহানি ও মৃত্যু

১৯৮৩ সালে পোপ জন পল ২ এর সাথে দেখা করার উদ্দেশ্যে রোম সফরের সময় মাদার তেরেসার প্রথম হার্ট অ্যাটাক হয়। ১৯৮৯ সালে আবার হার্ট অ্যাটাক হওয়ার পর তার দেহে কৃত্রিম পেসমেকার স্থাপন করা হয়। ১৯৯১ সালে মেক্সিকোতে থাকার সময় নিউমোনিয়া হওয়ায় হৃদরোগের আরও অবনতি ঘটে। এই পরিস্থিতিতে তিনি মিশনারিস অফ চ্যারিটির প্রধানের পদ ছেড়ে দেয়ার প্রস্তাব করেন। কিন্তু চ্যারিটির নানরা গোপন ভোটগ্রহণের পর তেরেসাকে প্রধান থাকার অনুরোধ করে। অগত্যা তেরেসা চ্যারিটির প্রধান হিসেবে কাজ চালিয়ে যেতে থাকেন।

১৯৯৬ সালের এপ্রিলে পড়ে গিয়ে কলার বোন ভেঙে ফেলেন। আগস্টে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হন। এর পাশাপাশি তার বাম হৃৎপিণ্ডের নিলয়, রক্ত পরিবহনে অক্ষম হয়ে পড়ে। ১৯৯৭ সালের ১৩ই মার্চ মিশনারিস অফ চ্যারিটির প্রধানের পদ থেকে সরে দাড়ান। ৫ই সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেন।

কলকাতার আর্চবিশপ হেনরি সেবাস্তিয়ান ডি'সুজা বলেন, তেরেসা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর তিনি এক ধর্মপ্রচারককে এক্‌জোর্সিজ্‌ম করতে বলেছিলেন। কারণ তার ধারণা ছিল, কোন শয়তান তেরেসাকে আক্রমণ করেছে।

মৃত্যুর সময় মাদার তেরেসার মিশনারিস অফ চ্যারিটিতে সিস্টারের সংখ্যা ছিল ৪,০০০; এর সাথে ৩০০ জন ব্রাদারহুড সদস্য ছিল। আর স্বেচ্ছাসেবীর সংখ্যা ছিল ১০০,০০০ এর উপর। পৃথিবীর ১২৩টি দেশে মোট ৬১০টি কেন্দ্রে ধর্মপ্রচারণার কাজ পরিচালিত হচ্ছিল। এসব কেন্দ্রগুলোর মধ্যে ছিল এইড্‌স, কুষ্ঠরোগ  যক্ষ্মা রোগে আক্রান্তদের জন্য চিকিৎসা কেন্দ্র, সুপ কিচেন, শিশু ও পরিবার পরামর্শ কেন্দ্র, এতিমখানা ও বিদ্যালয়। না সে মানুষকে

sourse: wikipedia,   exam365bengali,  bhugolshiksha

What's Your Reaction?

Like Like 0
Dislike Dislike 0
Love Love 0
Funny Funny 0
Angry Angry 0
Sad Sad 0
Wow Wow 0