আসিফ আলী জারদারির জীবনী | Biography Of Asif Ali Zardari

আসিফ আলী জারদারির জীবনী | Biography Of Asif Ali Zardari

May 11, 2025 - 22:51
May 12, 2025 - 02:06
 0  0
আসিফ আলী জারদারির জীবনী  | Biography Of Asif Ali Zardari

আসিফ আলি জারদারি

জন্ম: জুলাই ২৬; ১৯৫৫ পাকিস্তানের ১৪তম রাষ্ট্রপতি ও পাকিস্তান পিপলস পার্টির সহ সভাপতি। পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো তার স্ত্রী ছিলেন। বেনজির ভূট্টোর দ্বিতীয় দফা শাসনামলে জারদারি পরিবেশ বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব প্রাপ্ত মন্ত্রী ছিলেন। তিনি পাকিস্তান পিপলস পার্টির সংসদ সদস্যদের সভাপতি এবং ২০০৭ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তান পিপলস পার্টির সহ-সভাপতি ছিলেন। তিনি স্বাধীনতার পর জন্মগ্রহণকারী প্রথম রাষ্ট্রপতি। তিনি পাকিস্তানের দ্বিগুণ নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর বিধবা স্ত্রী। তিনি ২০১৮ থেকে ২০২৩ এবং ২০২৪ সালে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের সদস্য ছিলেন।

পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট

 হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) কো-চেয়ারম্যান আসিফ আলী জারদারি।

তিনি পাকিস্তান তেহরিক-ইনসাফ (পিটিআই) সমর্থিত সুন্নি ইত্তিহাদ কাউন্সিলের প্রার্থী মাহমুদ খান আচাকজাইকে হারিয়েছেন। খবর ডনের

শনিবারের এ নির্বাচনে জারদারি পেয়েছেন ৪১১ ভোট। আচাকজাই পেয়েছেন ১৮১ ভোট। অনানুষ্ঠানিক ফলাফল অনুযায়ী, জোট সরকারের মনোনীত প্রার্থী জারদারি জাতীয় পরিষদ এবং সিনেট থেকে ২৫৫ ভোট পেয়েছেন আর আচাকজাই ১১৯ ভোট পেয়েছেন।

পাকিস্তানের নির্বাচিত আইনপ্রণেতারা গোপন ব্যালটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করেন। দেশটির পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেট, নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদ এবং পাঞ্জাব, সিন্ধু, খাইবার পাখতুনখাওয়া ও বেলুচিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যরা প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট দেন। এর মধ্যে খাইবার পাখতুনখাওয়া ছাড়া সবকটি প্রাদেশিক পরিষদে পরাজিত হন আচাকজাই। খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশে এসআইসিতে যোগ দিয়ে পিটিআই-সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সেখানে সরকার গঠন করেছে।

আজকের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হওয়ায় আসিফ আলী জারদারি দ্বিতীয়বারের মতো দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন। এর আগে ২০০৮ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ছিলেন তিনি। পাকিস্তান মুসলিম লিগের (পিএমএল-এন) নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের শরিক দলগুলো প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে আসিফ আলী জারদারিকে সমর্থন দিয়েছে।

প্রাথমিক জীবন এবং শিক্ষা

জারদারি ১৯৫৫ সালের ২৬ জুলাই সিন্ধুর করাচিতে একটি বিশিষ্ট সিন্ধি-বেলুচ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন এবং করাচিতে তার লালন-পালন ও শিক্ষা লাভ করেন তিনি জারদারি পরিবারের সদস্য এবং উপজাতীয় প্রধান ও বিশিষ্ট জমিদার হাকিম আলী জারদারি এবং বিলকিস সুলতানা জারদারির একমাত্র পুত্র। তাঁর পিতামহী ছিলেন ইরাকি বংশোদ্ভূত,তাঁর মা ছিলেন হাসান আলী এফেন্দির নাতনী, যিনি তুর্কি বংশোদ্ভূত একজন সিন্ধি শিক্ষাবিদ এবং সিন্ধু মাদ্রাসাতুল ইসলামের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে পরিচিত।

তার যৌবনকালে, তিনি জারদারি ফোর নামে পরিচিত একটি পোলো দলের নেতৃত্ব দিতেন এবং বক্সিং অনুশীলন করতেন তার বাবা করাচির একটি বিখ্যাত সিনেমা হল বাম্বিনোর মালিক ছিলেন এবং তিনি তার স্কুলে সিনেমার সরঞ্জাম দান করেছিলেন। তিনি ছোটবেলায় ১৯৬৯ সালে সালগিরা নামে একটি সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন। জারদারির প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে এখনও প্রশ্ন রয়েছে।তিনি করাচি গ্রামার স্কুল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। তাঁর সরকারী জীবনী অনুসারে তিনি ১৯৭২ সালে পেটারোর ক্যাডেট কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেনতিনি ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত করাচির সেন্ট প্যাট্রিকস হাই স্কুলেপড়াশোনা করেছেন; সেই স্কুলের একজন কেরানি বলেছেন যে তিনি সেখানে তার চূড়ান্ত পরীক্ষায় ফেল করেছিলেন। ২০০৮ সালের মার্চ মাসে, তিনি দাবি করেন যে তিনি ১৯৭০-এর দশকের গোড়ার দিকে লন্ডন স্কুল অফ বিজনেস স্টাডিজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন  জারদারির সরকারী জীবনীতে বলা হয়েছে যে তিনি ব্রিটেনের পেডিনটন স্কুলেও পড়াশোনা করেছেন। তবে, তার ব্রিটিশ শিক্ষা নিশ্চিত করা হয়নি, এবং অনুসন্ধানে লন্ডনের কোনও পেডিনটন স্কুলের সন্ধান পাওয়া যায়নি। তার ডিপ্লোমার বিষয়টি বিতর্কিত ছিল কারণ ২০০২ সালে সংসদ সদস্য পদের প্রার্থীদের কলেজ ডিগ্রিধারী থাকা বাধ্যতামূলক ছিল  কিন্তু ২০০৮ সালের এপ্রিলে পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট এই নিয়মটি বাতিল করে দেয়

যখন কাউন্সিল নির্বাচনে হেরেছিলেন

১৯৫৫ সালে জন্ম নেওয়া আসিফ আলি জারদারি তিন কন্যার সাথে তার বাবা মায়ের একমাত্র পুত্র। তিনি প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন সেন্ট প্যাট্রিক স্কুল থেকে, তারপর তিনি পাতারো ক্যাডেট কলেজে ভর্তি হন, আর তার যে আত্মজীবনী লেখা সেখানে বলা আছে এরপর তিনি লন্ডন থেকে বিজনেসের উপর স্নাতক সম্পূর্ণ করেন।

আসিফ আলি জারদারির বাবা হাকিম আলি জারদারি চলচ্চিত্র ব্যবসার সাথে জড়িত ছিলেন। জমিদারি ছাড়াও তিনি করাচিতে নির্মাণ ব্যবসায় যুক্ত ছিলেন এবং তিনি একসময় শেখ মুজিবের আওয়ামী লীগের সাথে রাজনীতি করতেন।

পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশনের রেকর্ড ঘেঁটে জানা যায়, হাকিম জারদারি ১৯৮৫ সালে জেনারেল জিয়াউল হকের সময় নওয়াবশাহ থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেন।

তবে তার বাবার নির্বাচনের আগেই আসিফ আলী জারদারি নওয়াবশাহ জেলা কাউন্সিল নির্বাচনে প্রার্থী হন এবং হেরে যান।

১৯৮৩ সালের সেই সময়টায় সিন্ধু প্রদেশে গণতন্ত্র পুর্নবহালের দাবিতে জোরদার আন্দোলন চলছিল এবং ঐ একই বছর নওয়াবশাহর সাকরান্দ শহরের ‘পানহাল চান্দিও গ্রামে সেনাবাহিনীর দেওয়া আগুনে ১৬জন পিপিপি কর্মী মারা যায় এবং ৫০ জন আহত হয়।

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে আসিফ আলি জারদারিকে বর্ণনা করা হয় একজন ‘চতুর’ রাজনীতিবিদ হিসেবে।

তবে পাকিস্তানের মানুষ ১৯৮৭ সালের আগে আসিফ আলি জারদারির নামের সাথে পরিচিত ছিল না। সে বছরের ডিসেম্বরে তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভু্ট্টোর মেয়ে, আরেক সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোকে বিয়ে করেন এবং তারপরই তার নাম সারা দেশে পরিচিত হয়ে পড়ে।

তাদের বিয়ের পরের বছর ১৯৮৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে ভুট্টোর পাকিস্তান পিপলস পার্টি জয়লাভ করে এবং দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন বেনজির ভুট্টো।

বেনজির তার স্বামীকে প্রধানমন্ত্রী ভবনে নিয়ে আসেন, আর তারপরই আসিফ জারদারির রাজনীতি, বিতর্ক এবং দুর্নীতির যে অভিযোগ, সেটার অধ্যায় শুরু হয়।

‘মি. টেন পার্সেন্ট’ ও অন্যান্য অভিযোগ

প্রেসিডেন্ট গোলাম ইশাক খান বেনজির ভুট্টোর নির্বাচিত সরকারকে দুই বছ

রের মাথায় বাতিল করেন এবং সংসদ ভেঙে দেন।

আর সংসদ ভেঙে দেওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই ১৯৯০ সালের ১০ই অক্টোবর আসিফ আলি জারদারি প্রথমবারের মতো গ্রেফতার হন, এরপর নওয়াজ শরিফের মুসলিম লীগ সরকার গঠন করে।

তিনি ছাড়া পান ১৯৯৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে, যখন নওয়াজ শরিফের সরকারও ভেঙে যায়।

আসিফ জারদারি আর্থিক দুর্নীতি অপহরণ ক্ষমতার অপব্যবহারের নানা অভিযোগে অভিযুক্ত হন কিন্তু সে সব কোনটাই কখনও আদালতে প্রমাণিত হয় নি।

নব্বইয়ের দশকেই সরকারি বিভিন্ন চুক্তিতে দুর্নীতির অভিযোগে তার নামের সাথে ‘মি. টেন পার্সেন্ট’ ট্যাগ যুক্ত হয়, যা তাকে বছরের পর বছর তাড়া করেছে, এবং এই অভিযোগও কখনও আদালতে প্রমাণিত হয় নি।

১৯৯৩ সালের জাতীয় নির্বাচনে আবারও পিপলস পার্টি জয়লাভ করে এবং দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন বেনজির ভুট্টো। কিন্তু এবারও তার সরকার পুরো মেয়াদ শেষ করার আগেই ১৯৯৬ সালের নভেম্বরে ক্ষমতাচ্যুত হয়।

বেনজির সরকারের এই দ্বিতীয় মেয়াদে আসিফ জারদারির বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার এবং দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে।

বেনজির সরকারের যখন পতন ঘটে সেসময় আসিফ জারদারি দুবাইয়ে ছিলেন এবং দুবাই থেকে পাকিস্তানে ফেরার পর দিনই গ্রেফতার হন তিনি।

দীর্ঘ কারাবাস

আসিফ জারদারি দ্বিতীয় দফা আটক থাকাকালে পাকিস্তানে দুইটি সরকারের পরিবর্তন ঘটে যেখানে প্রথমে নওয়াজ শরিফ আসেন ও পরবর্তীতে মার্শাল ল জারি করে ক্ষমতা নেন জেনারেল মোশাররফ।

যদিও সে সময় পিপলস পার্টির নেতাদের ধারণা ছিল সরকারে পরিবর্তন আসলে জারদারি মুক্তি পাবেন কিন্তু সেরকমটা ঘটেনি।

আসিফ জারদারির বিরুদ্ধে দুর্নীতি অর্থ পাচার ও হত্যার অভিযোগ ওঠে। বেনজির ভুট্টোর ভাই মূর্তুজা ভুট্টোকে হত্যার অভিযোগও ওঠে তার বিরুদ্ধে যেই অভিযোগ থেকে পরে মুক্তি পান তিনি।

মি. জারদারির মুক্তি তখনই সম্ভব হয় যখন তার দল পিপলস পার্টি পারভেজ মোশাররফের সাথে একটা বোঝাপড়ায় আসে, যাতে জেনারেল মোশাররফ ন্যাশনাল রিকনসিলিয়েশন অর্ডিন্যান্স (এনআরও) জারি করেন, ফলে জারদারির বিরুদ্ধে মামলাগুলো বাতিল হয়ে যায়, পরে আদালত থেকেও এসব মামলায় ছাড়া পান তিনি।

তার এই দীর্ঘ কারাবাস তাকে পাকিস্তানের সবচেয়ে বেশি সময় ধরে কারাগারে থাকা রাজনীতিবিদে পরিণত করে। পরে সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন কারাগারের সময়টা তাকে জীবন সম্পর্কে অনেক শিক্ষা দিয়েছে।

তার অনুপস্থিতিতে ছেলেমেয়েদের পুরো ভার পড়ে বেনজির ভুট্টোর উপর।

গার্ডিয়ানকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে আসিফ জারদারি বলেন কারাগারে থাকার সময় তিনি তার সন্তানদের বড় হওয়া দেখা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। মুক্তির পরপরই তিনি প্রথমে দুবাই চলে যান ও সেখান থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দেন।

What's Your Reaction?

Like Like 0
Dislike Dislike 0
Love Love 0
Funny Funny 0
Angry Angry 0
Sad Sad 0
Wow Wow 0