নেলসন ম্যান্ডেলার জীবনী- Biography of Nelson Mandela

নেলসন ম্যান্ডেলার জীবনী- Biography of Nelson Mandela

May 12, 2025 - 23:24
May 13, 2025 - 01:21
 0  6
নেলসন ম্যান্ডেলার জীবনী- Biography of Nelson Mandela

কিংবদন্তীর রাষ্ট্রনায়ক নেলসন ম্যান্ডেলা

নেলসন ম্যান্ডেলার জন্ম দক্ষিণ আফ্রিকার এম্ভেজে গ্রামে। ম্যান্ডেলার বাবার নাম গাডলা হেনরি এমফাকানিসিওয়া (১৮৮০-১৯৩০)। তিনি ছিলেন থেম্বু গোত্রের প্রধান। এই গোত্র খোসা ভাষায় কথা বলে।  ম্যান্ডেলার মা নোসেকেনি ফ্যানি ছিলেন তাঁর স্বামীর তৃতীয় স্ত্রী ।
নেলসন ম্যান্ডেলার জন্ম ১৯১৮ সালের ১৮ জুলাই। তখন ম্যান্ডেলাকে সবাই চিনতেন তাঁর গোত্র নামেই, রোহিলালা।

পিতৃবিয়োগের পর, জঙ্গিনাতাবা ডালিন্ডিয়েবো নামে উচ্চপদস্থ থেম্বু রিজেন্ট দত্তক নেন ম্যান্ডেলাকে। উদ্দেশ্য, থেম্বু ট্রাইবের পরের নেতা হিসেবে ম্যান্ডেলাকে গড়ে পিঠে নেওয়া। 

 নেলসন ম্যান্ডেলার পরিবারে তিনিই প্রথম প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া করেন। ম্যান্ডেলা  প্রাইমারি স্কুল শেষ করেন আঞ্চলিক এক কনভেন্ট থেকে। সেখানে একজন শিক্ষক তাঁকে নেলসন নাম দেন। তখন আফ্রিকার ছাত্রদের ইংলিশ নাম দেবার একটা চল ছিল। ম্যান্ডেলা মাধ্যমিক শিক্ষার জন্য মেথডিস্ট প্রতিষ্ঠান, ক্লার্কবারি বোর্ডিং আর হিল্ডটাউনে কাটান।

নেলসন ম্যান্ডেলা ১৯৩৯ সালে ফোর্ট হেয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। তখনকার আফ্রিকান শিক্ষার্থীদের জন্য একমাত্র পশ্চিমা উচ্চশিক্ষার বন্দোবস্ত সেখানেই ছিল। সেখানেই দেখা হয় বন্ধু এবং ভবিষ্যতের বাণিজ্য সহযোগী (১৯১৭-১৯৯৩) অলিভার টেম্বোর সঙ্গে। দুজনকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতি ভঙ্গের অপরাধে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয় ।

নেলসন ম্যান্ডেলা যখন খবর পান বাড়িতে তাঁর বিয়ের তোড়জোড় চলছে, তখন পালিয়ে নাইটগার্ডের চাকরি নেন। পরে আইনের পড়াশোনা শেষ করে, আইনজীবী হিসেবে জীবন শুরু করেন। এরই মধ্যে আফ্রিকায় কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন তিনি, যোগ দেন আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসে।

নেলসন ম্যান্ডেলা ধীরে ধীরে এএনসি (আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস)এর সাথে শক্তভাবে জড়িয়ে পড়েন। দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদী আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আরও জোরদার করতে শুরু করেন ১৯৫২ সাল থেকে। এই সময়ে বন্ধু অলিভারের সাথে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ আইন পরামর্শ কেন্দ্র খোলেন। উদ্দেশ্য ছিল, বর্ণবাদী আইনের শিকার ব্যক্তিদের স্বল্পমূল্যে আইনি সহায়তা দেওয়া। আর ১৯৫৫ সাল থেকে স্বাধীনতার ইশতেহার নিয়ে লোকজনকে বর্ণবাদী আইনের বিরুদ্ধে উজ্জীবিত করতে থাকেন ম্যান্ডেলা।

নেলসন ম্যান্ডেলা সহ আরও ১৫৫ জন আন্দোলনকারীকে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে ডিসেম্বর ৫, ১৯৫৬তে গ্রেফতার করা হয়। যদিও ১৯৬১ সালে সকলে ছাড়া পেয়ে যান, ততদিনে অন্তর্কলহে দুই দলে ভাগ হয়ে গেছে ম্যান্ডেলার দল। নতুন একটি দল তৈরি হয় ১৯৫৯ সালে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে দুই দলকেই নিষিদ্ধ ঘোষণা করে বর্ণবাদী সরকার। ম্যান্ডেলা বুঝতে পারেন, এবার ঘোড়ার চাল দেবার পালা।

নেলসন ম্যান্ডেলা ১৯৬১ সালে স্পিয়ার অফ দ্য নেশন নামে এএনসির নতুন একটি সশস্ত্র অংশের নেতৃত্ব দেওয়া শুরু করেন। এই সময় তিনি বেআইনিভাবে দেশের বাইরে ভ্রমণ করেন। ইথিওপিয়ায় আফ্রিকান জাতীয়তাবাদী নেতাদের এক সম্মেলনে অংশ নেয়। আলজেরিয়ার পৌঁছে গেরিলা যুদ্ধের প্রশিক্ষণ ও শেষ করেন।

নেলসন ম্যান্ডেলা দেশে ফেরার কিছু পরেই ১৯৬২ সালের পাঁচ আগস্ট, বেআইনিভাবে দেশ ছাড়া ও ১৯৬১ এর শ্রমিক অসন্তোষ উস্কে দেবার অভিযোগে গ্রেফতার হন।

ম্যান্ডেলার বিরুদ্ধে আদালতে রাষ্ট্রদ্রোহ, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড এবং তাঁর ও তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে  সশস্ত্র ষড়যন্ত্রেরর অভিযোগ আনা হয়। প্রমাণ ও হয়, অল্পের জন্য ফাঁসির দড়ি থেকে রেহাই পান তাঁরা। ম্যান্ডেলা ও তাঁর সঙ্গীদের রিভোনিয়া ট্রায়ালে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়

নেলসন ম্যান্ডেলা জেলে ছিলেন ২৭ বছর। তাঁর ১৮ বছর কেটেছে রবেন জেলে। কেপ টাউনের একটু দূরে কুষ্ঠ রোগীদের কলোনি ছিল সেটা একসময়। শুধু স্ত্রী উইনি ম্যান্ডেলাকে দেখার অনুমতি ছিল তাঁর। তাও ছমাসে একবার। এর মাঝেই লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনের স্নাতক ডিগ্রি পেয়ে যান। নিজের আত্মজীবনী লং ওয়াক টু ফ্রিডম এর ছদ্মবেশে রাজনৈতিক ইশতেহারও বাইরে পাঠান তিনি। ১৯৮২ সালে ম্যান্ডেলাকে মূল ভূখণ্ডের পলসমুর জেলে নিয়ে আসা হয়।

পরের বছর দক্ষিণ আফ্রিকার নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট এফ ডব্লু  ডি ক্লার্ক এএনসির ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন। তিনি নিজের দলের রক্ষণশীল অংশের সাথে গাঁটছড়া ভেঙ্গে, এক বর্ণবাদবিহীন আফ্রিকার স্বপ্ন দেখান জাতিকে। ফেব্রুয়ারি ১১, ১৯৯০ সালে তাঁর নির্দেশে জেল থেকে ছাড়া পান ম্যান্ডেলা।

নেলসন ম্যান্ডেলা ও ডি ক্লার্ক  বর্ণবাদবিহীন আফ্রিকার জন্য দক্ষিণ আফ্রিকার সরকারের বিভিন্ন অংশের সাথে জোর আলোচনা শুরু করেন। এই আলোচনার জেরেই দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে বিদায় নেয় বর্ণবাদী সব আইন ও প্রথা। তাঁদের অবদানের জন্য যৌথভাবে দ্য ক্লার্ক এবং নেলসন ম্যান্ডেলাকে ভূষিত করা হয় নোবেল শান্তি পুরষ্কারে। সময় ছিল ১৯৯৩ সালের ডিসেম্বর।

প্রারম্ভিক জীবন:

জন্ম ও পারিবারিক পরিচিতি:

নেলসন ম্যান্ডেলা ১৯১৮ সালের ১৮ই জুলাই দক্ষিণ আফ্রিকার তৎকালীন কেপ প্রদেশের থেম্বু রাজবংশের ক্যাডেট শাখায় উমতাতার নিকটবর্তী ম্‌ভেজো গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার নামের মধ্যাংশ রোলিহ্লাহ্লা একটি খোসা ভাষার শব্দ, যার অর্থ "সমস্যা সৃষ্টিকারী"; তার জীবনের শেষভাগে তিনি তার বংশের নাম "মাদিবা" হিসেবে পরিচিতি অর্জন করেন। তার প্রপিতামহ নগুবেংচুকা (মৃত্যু ১৮৩২) ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার বর্তমান পূর্ব কেপ প্রদেশের ট্রান্সকেই অঞ্চলের থেম্বু জাতিগোষ্ঠীর ইনকোসি এনখুলু অর্থাৎ রাজা। এই রাজার এক পুত্র ম্যান্ডেলা হলেন নেলসন ম্যান্ডেলার পিতামহ। নেলসনের বংশগত নাম ম্যান্ডেলাই এই পিতামহ থেকেই পাওয়া। তবে নেলসনের পিতামহী ইক্সহিবা গোত্রের হওয়ায় রীতি অনুযায়ী তার ক্যাডেট শাখার বংশধরদের কেউ থেম্বু রাজবংশে আরোহণ করার অধিকার রাখেন না, কিন্তু উত্তরাধিকারসূত্র রাজকীয় উপদেষ্টা হয়ে থাকেন।

ম্যান্ডেলার বাবা গাদলা হেনরি মপাকানইসা ম্যান্ডেলা (১৮৮০-১৯২৮) ম্‌ভেজো গ্রামের মোড়ল ও শাসকের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। একজন শ্বেতাঙ্গ ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক তার পূর্ববর্তী পদাধিকারী দুর্নীতির দায়ে পদচ্যুত হলে তিনি ১৯১৫ সালে এই পদে আসীন হন। ১৯২৬ সালে গাদলাও দুর্নীতির দায়ে পদচ্যুত হন, তবে ম্যান্ডেলাকে বলা হয়েছিল যে ঔপনিবেশিক শাসকদের বিরাগভাজন হওয়ায় ও ম্যাজিস্ট্রেটের চাহিদা পূরণ করতে না পারায় তার পিতাকে পদচ্যুত হয়েছিলেন। তিনি তখন তার পরিবারসহ কুনু গ্রামে বসতি স্থাপন করেন। পদচ্যুত হওয়া সত্ত্বেও গাদলা ইনকোসিদের প্রিভি কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন এবং থেম্বুর শাসনকর্তা হিসাবে জোঙ্গিন্তাবা দালিন্দ্যেবোকে নির্বাচিত করায় ভূমিকা রাখেন। গাদলা ছিলেন কাতামা দেবতার অনুসারী। তার চার স্ত্রী, চার পুত্র ও নয় কন্যা ছিল। তারা সকলেই ভিন্ন ভিন্ন গ্রামে বাস করতেন। ম্যান্ডেলার মাতা ছিলেন গাদলার তৃতীয় স্ত্রী নোসেকেনি ফ্যানি। ফ্যানি ছিলেন ম্‌পেম্ভু খোসা গোত্রের ন্‌কেদামার কন্যা।

শৈশব: ১৯১৮-১৯৩৪:

ম্যান্ডেলা পরবর্তী কালে বলেন যে তার প্রারম্ভিক জীবন ঐতিহ্যবাহী থেম্বু প্রথা ও নিষেধে জেলে আবদ্ধ ছিল। তার শৈশব কাটে তার দুই বোনের সাথে তার মাতামহের বাড়ি কুনু গ্রামে। তার পিতামাতা দুজনেই অশিক্ষিত ছিলেন। তার মাতা খ্রিস্টান ধর্মে বিশ্বাসী ছিলেন এবং তিনি ম্যান্ডেলার যখন সাত বছর বয়স, তখন তাকে স্থানীয় মেথডিস্ট বিদ্যালয়ে পাঠান। তিনি তার পরিবারের প্রথম সদস্য যিনি স্কুলে পড়াশোনা করেছেন। ম্যান্ডেলা রাজপ্রাসাদের কাছে একটি মিশনারি স্কুলে পড়াশোনা করেন। মেথডিস্ট হিসেবে অভিসিঞ্চিত ম্যান্ডেলাকে স্কুলে পড়ার সময়ে তার শিক্ষিকা ম্‌দিঙ্গানে তার ইংরেজি নাম রাখেন "নেলসন"। ম্যান্ডেলার বয়স যখন ৯ বছর, তখন তার পিতা কুনুতে আসেন। সেখানেই তিনি এক চিকিৎসার অযোগ্য এক রোগে মারা যান। ম্যান্ডেলার ধারণা তিনি যক্ষ্মা রোগে মারা গিয়েছিলেন। ম্যান্ডেলা পরবর্তী কালে বলেন তিনি বংশ পরম্পরা অনুযায়ী তার পিতার "বিদ্রোহচারণ" ও "পক্ষপাতহীনতার একগুঁয়ে জ্ঞান" লাভ করেছিলেন।

ম্যান্ডেলার পিতার মৃত্যুর পর তার মাতা তাকে মকেকেজেনিতে নিয়ে যান। সেখানে থেম্বু রীতি অনুযায়ী ১৬ বছর বয়সে ম্যান্ডেলাকে আনুষ্ঠানিকভাবে তার গোত্রে বরণ করে নেওয়া হয়। থেম্বু শাসক জোঙ্গিন্তাবা দালিন্দ্যেবো তখন তার অভিভাবক নিযুক্ত হন। এরপর অনেক বছর তিনি তার মাতাকে দেখেননি। জোঙ্গিন্তাবা ও তার স্ত্রী নোয়েঙ্গল্যান্ড তাকে তাদের নিজেদের সন্তানের মত স্নেহ করতেন এবং তাদের পুত্র জাস্টিস ও কন্যা নমাফুর সাথে লালনপালন করেন। ম্যান্ডেলা তার অভিভাবকদের সাথে প্রতি রবিবার গির্জায় যেতে, ফলে খ্রিস্টধর্ম তার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে ওঠে।

তিনি রাজপ্রাসাদের নিকটবর্তী মেথডিস্ট মিশন বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। সেখানে তিনি ইংরেজি, খোসা, ইতিহাস ও ভূগোল বিষয়ে জ্ঞানার্জন করেন। রাজপ্রাসাদে আগত বয়োজ্যেষ্ঠ আগন্তুকদের নিকট থেকে গল্প শোনে আফ্রিকান ইতিহাস সম্পর্কে তার ভালোবাসা জন্মে এবং তিনি জোয়ি নামক একজন সাম্রাজ্যবিরোধী আগন্তুকের দ্বারা প্রভাবিত হন। সেই সময়ে তিনি ইউরোপীয় ঔপনিবেশিকতাবাদীদের অত্যাচারী নয় বরং উপকারী মনে করতেন, কারণ তারা দক্ষিণ আফ্রিকায় শিক্ষা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিয়ে এসেছিল। ১৬ বছর বয়সে তিনি, জাস্টিস ও আরও কয়েকজন বালক তিহালার্হায় উলওয়ালুকু খতনা করতে যান। এই প্রথাকে বালক থেকে প্রাপ্ত বয়স্কে রূপান্তরের অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হত। এরপর ম্যান্ডেলার নামকরণ করা হয় দালিবুঙ্গা।

ক্লার্কবারি, হেল্ডটাউন ও ফোর্ট হেয়ার: ১৯৩৪-১৯৪০

থেম্বু রাজদরবারের প্রিভি কাউন্সিলর হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জনের লক্ষ্যে ১৯৩৩ সালে ম্যান্ডেলা এঙ্গকোবোর ক্লার্কবারি মেথডিস্ট উচ্চ বিদ্যালয়ে মাধ্যমিক শিক্ষা গ্রহণের জন্য ভর্তি হন। পশ্চিমা-ধারার এই প্রতিষ্ঠানটি কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকানদের জন্য থেম্বুল্যান্ডের সর্ববৃহৎ বিদ্যালয়। সেখানে ম্যান্ডেলা ৩ বছরের জায়গায় মাত্র ২ বছরেই জুনিয়র সার্টিফিকেট পরীক্ষায় পাস করেন। ১৯৩৭ সালে ম্যান্ডেলা ফোর্ট বোফোর্ট শহরের মিশনারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হেল্ডটাউন স্কুলে ভর্তি হন। জাস্টিসসহ থেম্বু রাজপরিবারের অধিকাংশ সদস্য এখানেই পড়াশোনা করত। এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইংরেজি সংস্কৃতি ও সরকারের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করতেন, কিন্তু ম্যান্ডেলা স্থানীয় আফ্রিকান সংস্কৃতির প্রতি আগ্রহী ছিলেন। এইখানের তার প্রথম খোসা বংশের বাইরের কারও সাথে বন্ধুত্ব হয়, যে সতো ভাষী ছিল। এছাড়া এখানে তিনি তার প্রিয় একজন শিক্ষকের দ্বারা প্রভাবিত হন, যিনি খোসা বংশীয় হয়েও একজন সতোকে বিয়ে করে এই রীতি ভেঙ্গে দেয়। ম্যান্ডেলা হেল্ডটাউনে থাকাকালীন অবসর সময়ে দৌড় ও মুষ্টিযুদ্ধের মতো খেলাধুলায় নিয়মিত অংশ নিতে শুরু করেন।

জোঙ্গিন্তাবার সহায়তায় বিদ্যালয় থেকে পাস করার পর ম্যান্ডেলা ফোর্ট হেয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাচেলর অব আর্টস কোর্সে ভর্তি হন। ফোর্ট হেয়ার হল পূর্ব কেপের অ্যালিসে অবস্থিত কৃষ্ণাঙ্গদের জন্য একটি অভিজাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এখানে ১৫০ জনের মত শিক্ষার্থী পড়াশোনা করত। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষে তিনি ইংরেজি, নৃতত্ত্ব, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, স্থানীয় প্রশাসন, ও রোমান ওলন্দাজ আইন বিষয়ে অধ্যয়ন করেন। তার লক্ষ্য ছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুবাদক বা কেরানি হওয়া। ম্যান্ডেলা ওয়েসলি হাউজ ছাত্রাবাসে থাকতেন এবং এখানেই তার নিজের গোত্রীয় কে. ডি. মাটানজিমা এবং অলিভার টাম্বোর সাথে তার বন্ধুত্ব হয়। টাম্বো আর ম্যান্ডেলা আজীবন ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন এবং পরবর্তী দশকে কমরেড হন। অন্যদিকে কাইজার (কে ডি) মাটানজিমা ছিলেন ট্রান্সকেইয়ের সিংহাসনের উত্তরাধিকারী। এই বন্ধুর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সুবাদেই পরবর্তীকালে ম্যান্ডেলা বান্টুস্থানের রাজনীতি ও নীতিনির্ধারণে জড়িত হন। তবে এসব নীতিমালার ক্ষেত্রে ম্যান্ডেলা ও মাটানজিমার মতবিরোধ হয়।

জোহানেসবার্গে আগমন: ১৯৪১-১৯৪৩:

ম্যান্ডেলা ১৯৪০ সালের ডিসেম্বরে ফোর্ট হেয়ার ছাড়ার অল্প পরেই জানতে পারেন, জোঙ্গিন্তাবা তার সন্তান জাস্টিস (যুবরাজ ও সিংহাসনের উত্তরাধিকারী) এবং ম্যান্ডেলার বিয়ে ঠিক করার ঘোষণা দিয়েছেন। ম্যান্ডেলা ও জাস্টিস এভাবে বিয়ে করতে রাজি ছিলেননা। তাই তারা দুজন কুইন্সটাউন হয়ে জোহানেসবার্গে চলে যান। তারা ১৯৪১ সালের এপ্রিলে জোহানেসবার্গে পৌঁছান। সেখানে ম্যান্ডেলা শুরুতে একটি খনিতে প্রহরী হিসেবে কাজ নেন। সেখানে তিনি প্রথমবারের মত দক্ষিণ আফ্রিকার পুঁজিবাদী কার্যক্রম দেখতে পান। তবে অল্পদিন পরেই খনির মালিক ইদুনা জেনে যান যে, ম্যান্ডেলা বিয়ে এড়াতে জোঙ্গিন্তাবার কাছ থেকে পালিয়ে এসেছেন। এটা জানার পর খনি কর্তৃপক্ষ ম্যান্ডেলাকে ছাঁটাই করেন। তিনি তার এক আত্মীয়ের সাথে জর্জ গচ টাউনশিপে থাকা শুরু করেন, যিনি তাকে স্থাবর সম্পত্তি ব্যবসায়ের সাথে জড়িত ও আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের কর্মী ওয়াল্টার সিসুলুর সাথে পরিচয় করিয়ে দেন।

সিসুলু ম্যান্ডেলাকে ইহুদি উদারপন্থী ল্যাজার সিডেল্‌স্কি পরিচালিত জোহানেসবার্গের আইনি প্রতিষ্ঠান উইটকিন, সিডেল্‌স্কি অ্যান্ড এডেলম্যানে কেরানি হিসেবে চাকুরি পেতে সহায়তা করেন। এই প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সুবাদে তিনি গৌর রাডেবে এবং নাট্য ব্রেগম্যানের সাথে পরিচিত হন। রাডেবে ছিলেন এএনসি ও কমিউনিস্ট পার্টির খোসা সদস্য এবং ব্রেগম্যান ছিলেন একজন ইহুদি কমিউনিস্ট, যিনি ম্যান্ডেলার প্রথম শ্বেতাঙ্গ বন্ধু। ম্যান্ডেলা কমিউনিস্ট পার্টির সমাবেশে অংশগ্রহণ করতেন, যেখানে তিনি ইউরোপীয়, আফ্রিকান, ভারতীয় ও বিভিন্ন বর্ণের মানুষদের সম-মিশ্রণ দেখে মুগ্ধ হন। তিনি পরবর্তী কালে বলেন তিনি এই দলে যোগ দেননি কারণ এই দলের নাস্তিক্যবাদ তার খ্রিস্টধর্মের বিশ্বাসের সাথে সাংঘর্ষিক এবং তিনি মনে করেন দক্ষিণ আফ্রিকার সংগ্রামের মূল কারণ বর্ণবৈষম্য, শ্রেণিভিত্তিক দ্বন্দ্ব নয়। এই সময়ে ম্যান্ডেলা তার উচ্চ শিক্ষা চালু রাখার জন্য ইউনিভার্সিটি অব সাউথ আফ্রিকার দূরশিক্ষণ কার্যক্রমের ভর্তি হন। 

স্বল্প পারিশ্রমিকে চাকরি করা ম্যান্ডেলা জোহানেসবার্গের উত্তরের দিকের শহর আলেক্সান্দ্রাতে এক খোমা পরিবারের বাড়িতে একটি কক্ষে বাস করতেন। দারিদ্রে জর্জরিত এবং অপরাধ ও দূষণেরঙ্গেই শহরটি ম্যান্ডেলার মনে বিশেষ জায়গা করে নিয়েছিল। দারিদ্রপীড়িত হওয়া স্বত্বেও অল্প কিছুদিনের জন্য একজন সোয়াজি তরুণীর সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠেছিল। অর্থ সঞ্চয় ও জোহানেসবার্গের নিকটে থাকার লক্ষ্যে তিনি ভিটভাটারস্র্যান্টে নেটিভ লেবার অ্যাসোসিয়েশনের প্রাঙ্গণে বিভিন্ন গোত্রের খনিকর্মীদের সাথে বসবাস শুরু করেন। এই প্রাঙ্গণে বিভিন্ন প্রধান ব্যক্তিবর্গ আসতেন, এরই ফলে তিনি একবার বসতোল্যান্ডের রানীর প্রতিনিধির সাথে সাক্ষাৎ করেছিলেন। ১৯৪১ সালের শেষভাগে জোঙ্গিতাবা জোহানেসবার্গে আসেন এবং থেম্বুল্যান্ডে ফিরে যাওয়ার পূর্বে তিনি ম্যান্ডেলাকে পালিয়ে আসার জন্য ক্ষমা করে দেন। থেম্বুল্যান্ডে যাওয়ার পর ১৯৪২ সালের শীতকালে তিনি মারা যান। ম্যান্ডেলা ও জাস্টিস শেষকৃত্যের একদিন পরে সেখানে পৌঁছান। ১৯৪৩ সালের শুরুতে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করার পর ম্যান্ডেলা জোহানেসবার্গে ফিরে আসেন এবং থেম্বুল্যান্ডের প্রিভি কাউন্সিলর হওয়ার পরিবর্তে আইনজীবী হিসেবে তার রাজনৈতিক পথ অনুসরণ করেন। তিনি এই প্রসঙ্গে পরবর্তী কালে বলেন যে তিনি কোন আগমন বার্তা পাননি, কিন্তু তিনি নিজেকে এই কাজ জড়িয়ে ফেলেন এবং অন্য কিছু করতে পারতেন না বলে মনে করেন।

রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড

আইন অধ্যয়ন ও এএনসি ইয়ুথ লিগ: ১৯৪৩-১৯৪৯

ম্যান্ডেলা ভিটভাটারস্র্যান্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে স্নাতকোত্তর পড়াশোনা শুরু করেন। এখানে তিনিই একমাত্র কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকান শিক্ষার্থী ছিলেন এবং বর্ণবাদের শিকার হন। এখানে উদারপন্থী ও কমিউনিস্ট ইউরোপীয়, ইহুদি ও ভারতীয় শিক্ষার্থীদের সাথে তার বন্ধুত্ব হয়, তাদের মধ্যে ছিলেন জো স্লোভো, হ্যারি শোয়ার্জ এবং রুথ ফার্স্ট। পরবর্তী কালে এই বন্ধুরা বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় কর্মী হিসেবে অংশ নেন। রাজনীতির সাথে অধিকতর সম্পৃক্ত হয়ে ম্যান্ডেলা ১৯৪৩ খ্রিষ্টাব্দের আগস্ট মাসে বাসের ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে ধর্মঘটে যোগ দেন। আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসে যোগ দিয়ে তিনি ওয়াল্টার সিসুলুর দ্বারা প্রভাবিত হন এবং তার পুরনো বন্ধু অলিভার টাম্বোসহ অন্যান্য সক্রিয় কর্মীদের নিয়ে সিসুলুর ওরল্যান্ডোর বাড়িতে সময় কাটাতেন।

১৯৪৩ খ্রিষ্টাব্দে ম্যান্ডেলা আফ্রিকান জাতীয়তাবাদের "আফ্রিকানিস্ট" শাখার সাথে সম্পৃক্ত এএনসির সদস্য অ্যান্টন লেম্বেডের সাথে সাক্ষাৎ করেন। আফ্রিকান জাতীয়তাবাদ উপনিবেশিকতা ও সাম্রাজ্যবাদ বা কমিউনিস্টদের সাথে সম্পৃক্ততার ঘোর বিরোধী ছিল। কৃষ্ণাঙ্গের বাইরে ও কমিউনিস্টদের সাথে তার বন্ধুত্ব থাকা স্বত্ত্বেও ম্যান্ডেলা লেম্বেডের মতাদর্শকে গ্রহণ করেন এবং মনে করেন কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকানদের পুরোপুরিভাবে স্বাধীন হতে হবে। তাদের বশ্যতা স্বীকারের বিপরীতে আফ্রিকানদের গণ-আন্দোলনের জন্য তরুণ শাখার গুরুত্ব অনুধাবণ করে এএনসির সভাপতি আলফ্রেড বিটিনি জুমার সাথে আলোচনা করতে ম্যান্ডেলা একটি প্রতিনিধি দলের সাথে জুমার সোফিয়াটাউনের বাড়িতে যান। ১৯৪৪ সালের পুণ্য রবিবারে বান্টু মেন্‌স সোশ্যাল সেন্টারে আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস ইয়ুথ লিগ প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি হন লেম্বেড এবং ম্যান্ডেলা এই দলের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য হন।

সুলুর বাড়িতে ম্যান্ডেলা ইভলিন মেসের সাথে পরিচিত হন। মেস ছিলেন প্রশিক্ষণাধীন নার্স ও এএনসি কর্মী। তিনি ট্রান্সকেইয়ের এংকোবোর থেকে এসেছিলেন। তাদের মধ্যে অচিরেই সম্পর্ক তৈরি হয় এবং ১৯৪৪ সালের অক্টোবরে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। শুরুতে তারা মেসের এক আত্মীয়ের বাড়িতে থাকতেন। পরে ১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দের গোড়ার দিকে অরল্যান্ডো শহরে একটি ভাড়া বাড়িতে চলে যান। তাদের প্রথম সন্তান, মাদিবা "থেম্বি" থেম্বেকিলে, ১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে জন্মগ্রহণ করে। এরপর ১৯৪৭ সালে তাদের কন্যা, মাকাজিউই, জন্মগ্রহণ করে, কিন্তু মেনিনজাইটিসে আক্রান্ত হয়ে মাত্র নয় মাস বয়সে মারা যায়।ম্যান্ডেলা তার মাতা ও বোন লিবিকে তার সাথে থাকার জন্য আমন্ত্রণ জানান।

১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই মাসে ম্যান্ডেলা অসুস্থ লেম্বেডকে দেখতে হাসপাতালে যান। লেম্বেড সেখানে মারা যান। ম্যান্ডেলা এএনসি ইয়ুথ লিগের সভাপতি হন। পিটার ম্‌দা কমিউনিস্ট ও কৃষ্ণাঙ্গ ব্যতীত অন্যদের সাথে সহযোগিতার আশ্বাস দেন। ম্যান্ডেলা ম্‌দার এই প্রস্তাবে অস্বীকৃতি জানান এবং ১৯৪৭ সালের ডিসেম্বর মাসে এএনসি ইয়ুথ লিগ থেকে কমিউনিস্টদের বহিষ্কার করার ব্যর্থ চেষ্টা চালান। তার মতে কমিউনিস্টদের মতাদর্শ ছিল অ-আফ্রিকান। ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে ম্যান্ডেলা এএনসির ট্রান্সভাল প্রদেশ শাখার নির্বাহী কমিটিতে নির্বাচিত হন এবং আঞ্চলিক সভাপতি সি. এস. রামোহানোর অধীনে দায়িত্ব পালন করেন। যখন রামোহানো কমিটির বিরুদ্ধে গিয়ে ভারতীয় ও কমিউনিস্টদের সহযোগিতার ইচ্ছাপোষণ করেন, তাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা সদস্যদের মধ্যে ম্যান্ডেলা অন্যতম ছিলেন।

১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দের দক্ষিণ আফ্রিকার সাধারণ নির্বাচনে কেবল শ্বেতাঙ্গদের ভোট দেওয়ার অনুমতি ছিল। দানিয়েল ফ্রঁসোয়া মালানের নেতৃত্বে আফ্রিকানদের নিয়ন্ত্রিত হেরেনিজ নাসিওনালে পার্টি নির্বাচনে জয়লাভ করে। তারা আফ্রিকানার পার্টির সাথে যুক্ত হয়ে ন্যাশনাল পার্টি গঠন করে। এই দলটি বর্ণবাদে বিশ্বাসী ছিল এবং বিভিন্ন জাতিকে আলাদা করে রাখার পক্ষপাতী ছিল। ন্যাশনাল পার্টির ক্ষমতায় আসার প্রেক্ষাপটে ম্যান্ডেলা সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। এই সম্মেলনে মুক্তি সনদ প্রণয়ন করা হয়, যা ছিল দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের মূল ভিত্তি। এএসনিতে ম্যান্ডেলার প্রভাব আরও বাড়তে থাকলে তিনি ও তার দলের সদস্যরা সরাসরি বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের সক্রিয় হয়ে পড়েন। সেই কার্যাবলির মধ্য উল্লেখযোগ্য ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার ভারতীয় সম্পদ্রায়ের কৌশল অনুসারে বর্জন ও ধর্মঘট ডাকা। জুমা এইসব কার্যক্রমকে সমর্থন দেননি এবং তাকে ভোটের মাধ্যমে সভাপতি পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়। জেমস মরোকা তার স্থলাভিষিক্ত হন এবং বিপ্লবী নির্বাহী সদস্য হিসেবে যুক্ত হন সিসুলু, ম্‌দা, ট্যাম্বো, ও গডফ্রি পিটজে । এই সময়ে রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে ওঠায় ম্যান্ডেলা তৃতীয় বারের মত ভিটভাটারস্র্যান্টে শেষ বর্ষে অকৃতকার্য হন। ১৯৪৯ সালের ডিসেম্বরে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি নেওয়ার পরিকল্পনা বাদ দেন।

গণ-কংগ্রেস ও রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা: ১৯৫৫-১৯৬১

১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দের জনগণের সম্মেলনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন। এএনসি-র নেতা অ্যালবার্ট লুথুলি, অলিভার ট্যাম্বো ও ওয়াল্টার সিসুলু অনুভব করেন, আফ্রিকানিস্টরা এই আন্দোলনে খুব তাড়াহুড়া করছে, আর তাদের নেতৃত্বকে অস্বীকার করছে। তার বন্ধু আইনজীবী অলিভার টাম্বো মিলে ম্যান্ডেলা অ্যান্ড টাম্বো নামের আইনি প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করতেন। এই প্রতিষ্ঠানটি উকিল নিয়োগ করার মতো টাকা নেই, এমন দরিদ্র কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকানদের স্বল্প মূল্যে আইনগত সাহায্য প্রদান করত। দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী শ্বেতাঙ্গ সরকার ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দের ৫ ডিসেম্বর তারিখে ম্যান্ডেলাসহ ১৫০ জন বর্ণবাদবিরোধী কর্মীকে দেশদ্রোহিতার অপরাধে গ্রেপ্তার করে। এই মামলাটি সুদীর্ঘ ৫ বছর ধরে (১৯৫৬-১৯৬১) চলে, কিন্তু মামলার শেষে সব আসামি নির্দোষ প্রমাণিত হন। ১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দে ম্যান্ডেলা এএনসি-র সশস্ত্র অঙ্গসংগঠন উমখোন্তো উই সিযওয়ে (অর্থাৎ "দেশের বল্লম", সংক্ষিপ্ত নাম MK)-এর নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন এই সংগঠনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা। তিনি বর্ণবাদী সরকার ও তার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অন্তর্ঘাতী ও চোরাগোপ্তা হামলা পরিকল্পনা ও সমন্বয় করেন। এতে বর্ণবাদী সরকার পিছু না-হটলে প্রয়োজনবোধে গেরিলা যুদ্ধে যাওয়ার জন্যও ম্যান্ডেলা পরিকল্পনা করেন। এছাড়া ম্যান্ডেলা বিদেশে এমকে-র জন্য অর্থ জোগাড় ও সামরিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার জন্য কাজ শুরু করেন।

মৃত্যৃ: 

ম্যান্ডেলার দেহে ২০০১ সালে প্রস্টেট ক্যান্সার সহ আরো রোগ ধরা পড়ে। তাঁর সম্মানে ২০০৯ সালে ১৮ জুলাই কে ‘নেলসন ম্যান্ডেলা ইন্টারন্যাশনাল ডে’ হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়। গণতন্ত্র, স্বাধীনতা, শান্তি এবং মানবাধিকারে প্রচুর অবদান রাখায় এই সম্মান। নেলসন ম্যান্ডেলা ৫ ডিসেম্বরের  ২০১৩ ফিরে ফিরে আসা ফুসফুসের সংক্রমণে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন

What's Your Reaction?

Like Like 0
Dislike Dislike 0
Love Love 0
Funny Funny 0
Angry Angry 0
Sad Sad 0
Wow Wow 0