চিত্রনায়ক রাজীব এর জীবনী | Biography Of Rajib
চিত্রনায়ক রাজীব এর জীবনী | Biography Of Rajib

ওয়াসীমুল বারী রাজীব
(জানুয়ারি ১, ১৯৫২–নভেম্বর ১৪, ২০০৪) যিনি রাজীব নামেই বেশি পরিচিত, ছিলেন একজন বাংলাদেশী অভিনেতা। তিনি প্রায় চার শতাধিক বাংলা চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। খলনায়ক হিসেবে সফল হলেও অনেক চলচ্চিত্রে ভিন্ন চরিত্রেও অভিনয় করেছেন তিনি। তার উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রের মধ্য রয়েছে তিনি দাঙ্গা (১৯৯২), হাঙর নদী গ্রেনেড (১৯৯৭), ভাত দে (১৯৮৪) প্রভৃতি। ১৯৮২ সালে কাজী হায়াৎ-এর ‘খোকন সোনা’ নামের একটি সিনেমা দিয়ে চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় রাজীবের।
বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতে তার অবদানের জন্য তিনি চার বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের পেয়েছেন।
পারিবারিক জীবন
তার স্ত্রীর নাম ইসমত আরা।এই দম্পতির পাঁচ সন্তান। তিন ছেলে, প্রথম দুই ছেলে সন্তান জমজ ছিলেন-এরা ১৯৯৬ সালে দুর্ঘটনায় নৌকা ডুবে মৃত্যুবরণ করেন। তৃতীয় ছেলের নাম সায়নুল বারী দ্বীপ। দুই মেয়ে- নাম রানিসা রাজীব ও রাইসা রাজীব
রাজনৈতিক জীবন
তার স্ত্রীর নাম ইসমত আরা।এই দম্পতির পাঁচ সন্তান। তিন ছেলে, প্রথম দুই ছেলে সন্তান জমজ ছিলেন-এরা ১৯৯৬ সালে দুর্ঘটনায় নৌকা ডুবে মৃত্যুবরণ করেন।
তৃতীয় ছেলের নাম সায়নুল বারী দ্বীপ। দুই মেয়ে- নাম রানিসা রাজীব ও রাইসা রাজীব।
রাজনৈতিক জীবন
রাজীব বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) অঙ্গ সংগঠন জাতীয়তাবাদী সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংসদের (জাসাস) প্রতিষ্ঠাতা সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।
পরে সাধারণ সম্পাদক ও মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এর সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করে গেছেন
শক্তিমান জাঁদরেল অভিনেতা রাজীব-এর ১৬তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ নভেম্বর, ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে, ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল মাত্র ৫২ বছর। প্রয়াত এই গুণি অভিনেতার স্মৃতির প্রতি জানাই বিন্ম্র শ্রদ্ধা। তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।
অভিনেতা রাজীব ( আব্দুল বারেক/ওয়াসীমুল বারী) ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দের ১ জানুয়ারি, পটুয়াখালী জেলার, শ্রীরামপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম আব্দুল জব্বার।
তিনি স্থানীয় পটুয়াখালী হাই স্কুল থেকে, ১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দে এসএসসি পাস করেন। এরপর ঢাকায় এসে তিতাস গ্যাস কোম্পানিতে চাকরি নেন। চাকরি করা অবস্থায়ই তিনি ‘টি এন্ড টি কলেজে’ নাইট শিফট্-এ লেখাপড়া চালিয়ে যান এবং এইচএসসি পাস করেন।
এক সময় তিনি জড়িত হন, তিতাস গ্যাস কোম্পানির শ্রমিক ইউনিয়নের সাথে। আর এই ইউনিয়নের বার্ষিক মঞ্চনাটকে অভিনয় করেন রাজীব।
শুরু হয় তাঁর মঞ্চনাটকে অভিনয় করা। এরপরে ঢাকার বিভিন্ন মঞ্চে ও ঢাকার বাইরে থিয়েটার-যাত্রায় তিনি একজন পেশাদার অভিনেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন।
একদিন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে ‘মা মাটি মানুষ’ নাটকে তাঁর অভিনয় দেখে, অভিনেতা-চিত্রপরিচালক আবদুস সাত্তার রাজীবকে চলচ্চিত্রে অভিনয় করার আমন্ত্রন জানান। আর এভাবেই, আবদুস সাত্তার পরিচালিত, ১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দে মুক্তিপ্রাপ্ত
‘রাখে আল্লাহ মারে কে’ ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় রাজীব-এর।
ঢাকাই চলচ্চিত্রের শক্তিমান এই অভিনেতা প্রায় চার শতাধিক বাংলা চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন।
তাঁর মধ্যে উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রগুলো– খোকন সোনা, পরাণ পাখি, বিদ্রোহী, মানিক রতন, মায়ের দাবী, শক্তি, ভাত দে, সম্রাট, রাজভিখারী, নকল শাহজাদা, হিসাব নিকাশ, আন্দাজ, আওয়াজ, ফুলের মালা, পদ্মগোখরা, স্ত্রী, সালমা, শক্তিশালী, জামানা, বউ শ্বাশুড়ী, সত্যমিথ্যা, বিরাজ বউ, সন্ধান, পুষ্পমালা, জারকা, নবাব, সাহেব, খামোশ, দাগী, উসিলা, কাবিন, আয়নামতি, চাচা ভাতিজা, চন্দনা ডাকু, অবিশ্বাস, আদর্শবান, সহধর্মিনী, নিয়ত, হীরামতি, সাজানো বাগান, অবুঝ হৃদয়, জিজ্ঞাসা, সাজা, অগ্নিপুরুষ, প্রেম প্রতিজ্ঞা, প্রায়শ্চিত্ত, আকর্ষন, প্রতিক্ষা, গরীবের বউ, ঘর আমার ঘর, গরীবের প্রেম, মিয়া ভাই, প্রেমদিওয়ানা, আপন ঘর, ওমর আকবর, বিশ্বাস অবিশ্বাস, চোর ডাকাত পুলিশ, লাওয়ারিশ, বিশাল, ন্যায়যুদ্ধ, অচেনা, বাসনা, স্ত্রীর পাওনা, স্বপ্ন, লক্ষ্মীর সংসার, দায়িত্ব, দাঙ্গা, ক্ষমা, প্রেম লড়াই, মাটির কসম, দিনকাল, চাঁদের আলো, এই নিয়ে সংসার, সম্পর্ক, ত্রাস, কেয়ামত থেকে কেয়ামত, সতর্ক শয়তান, জিদ, লাভ, লেডি ইন্সপেক্টর, টাকার অহংকার, প্রেম প্রতিশোধ, আজকের শয়তান, জীবন দিয়ে ভালবাসি, বিক্ষোভ, অন্তরে অন্তরে, প্রানের চেয়ে প্রিয়, দেনমোহর, বাবার আদেশ, চরম আঘাত, প্রিয় তুমি, চালবাজ, সোহরাব রুস্তম, চাঁদাবাজ, মহামিলন, স্বপ্নের ঠিকানা, খুনী আসামী, লুটতরাজ, ভন্ড, মুক্তি চাই, রঙ্গীন নয়নমণি, স্বপ্নের পৃথিবী, সত্যের মৃত্যু নাই, দূর্জয়, হাঙর নদী গ্রেনেড, প্রেম পিয়াসী, প্রেমের তাজমহল, বুকের ভেতর আগুন, অনন্ত ভালবাসা, মগের মুল্লুক, স্বপ্নের বাসর, চেয়ারম্যান, ওদের ধর, বিদ্রোহ চারিদিকে, মাস্তানের উপর মাস্তান, ও প্রিয়া তুমি কোথায়, জুম্মন কসাই, আব্বাজান, হৃদয়ের বন্ধন, শেষ যুদ্ধ, মায়ের সম্মান, মায়ের জেহাদ, ভালবাসা কারে কয়, মেঘের পরে মেঘ, সাহসী মানুষ চাই, আব্বাস দাড়োয়ান, বাঘের বাচ্চা ইত্যাদি।
রজীব বেতার-মঞ্চ এবং টেলিভিশনেও দাপটের সাথে অভিনয় করে গেছেন।
অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি, বন্ধু ও সহকর্মী মিজু আহমেদের সাথে মিলে চলচ্চিত্র প্রযোজনা সংস্থা চালু করেন। তাদের প্রযোজনা সংস্থা, ফ্রেন্ডস মুভিজ থেকে বেশকিছু ব্যবসাসফল ছবি নির্মিত হয়েছে।
রাজীব চার-চারবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে পুরস্কৃত হয়েছেন।
শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন যেসব ছবিতে— হীরামতি (১৯৮৮), দাঙ্গা (১৯৯১), বিদ্রোহ চারিদিকে (২০০০) ও সাহসী মানুষ চাই (২০০৩)।
রাজীব বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপি’র অঙ্গ সংগঠন জাতীয়তাবাদী সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংসদের (জাসাস) প্রতিষ্ঠাতা সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। পরে সাধারণ সম্পাদক ও মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এর সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করে গেছেন।
তিনি বিএফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
ব্যক্তিজীবনে রাজীব দুইবার বিয়ে করেন। প্রথম স্ত্রী কুলসুমের সাথে বনিবনা না হওয়াতে তাঁকে ডিফোর্স দেন। পরে তিনি ইসমত আরা’র সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। এই দম্পতির পাঁচ সন্তান। তিন ছেলে, দুই মেয়ে। এখানে উল্লেখ্য যে, প্রথম দুই জমজ ছেলে সন্তান- জয় ও বিজয় ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দে, নৌকা ডুবে মৃত্যুবরণ করেন। তৃতীয় ছেলে, সায়নুল বারী দ্বীপ। দুই মেয়ে, রানিসা রাজীব ও রাইসা রাজীব।
বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের তুমুল জনপ্রিয় একজন অভিনেতা ছিলেন রাজীব।
একজন শক্তিমান জাঁদরেল অভিনেতা ছিলেন রাজীব। একজন কিংবদন্তীতুল্য প্রতিভাবান অভিনেতা ছিলেন রাজীব। যিনি খলনায়ক হিসেবে নিজেকে নিয়ে গেছেন সাফল্যের সর্বোচ্চ শিখড়ে। এক সময় তাঁর বলা অনেক সংলাপ মানুষের মুখে মুখে ফিরতো।
ভিলেন তথা খলচরিত্রের একজন অভিনেতা এত জনপ্রিয় হতে পারে! এ আসলে সত্যিই বিস্ময়।
প্রথমদিকে নায়ক হিসেবে চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেন তিনি। কিন্তু নায়ক হিসেবে সিনেমাদর্শকদের গ্রহনযোগ্যতা না পাওয়ায়, নায়ক চরিত্রে তাঁর অভিনীত ছবি ব্যবসায়ীকভাবে সফল না হওয়ায়, তিনি তাঁর অভিনয় ট্র্যাক বদলে ফেলেন। আর তখনই সাফল্যের দেখা পান তিনি।
খলনায়ক বা মন্দলোকের চরিত্রে অভিনয় করে একসময় পৌছে যান সাফল্যের শীর্ষে।
একের পর এক অভিনয় করেন হিট-সুপারহিট সব চলচ্চিত্রে। নির্মাতাদের প্রথম পছন্দের খলনায়ক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন, বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে।
শুধু ভিলেন বা খলনায়ক কেনো, সব ধরণের চরিত্রেই অভিনয় করার দক্ষতা বা ক্ষমতা ছিল তাঁর। যার প্রমাণ তিনি রেখেছেন অনেক ছবিতেই। বহু ছবিতে তিনি ভালো মানুষের চরিত্রে অভিনয় করেছেন, সফল হয়েছেন এবং দর্শকদের প্রসংশাও পেয়েছেন।
কেয়ামত থেকে কেয়ামত, অন্তরে অন্তরে, মাটির কসম, সোহরাব রুস্তম, জুম্মন কসাই, প্রেমের তাজমহল, হৃদয়ের বন্ধন, বাবার আদেশ, হাঙর নদী গ্রেনেড’সহ অনেক চলচ্চিত্রেই তিনি ভিন্ন ভিন্ন গুরত্বপূর্ণ ও ব্যতিক্রমী চরিত্রে অভিনয় করেছেন এবং একজন গুণি অভিনেতা হিসেবে তাঁর দক্ষতাও দেখিয়েছেন। তাঁকে শুধু ভিলেন বা খলঅভিনেতা হিসেবেই অবিহিত করা যাবে না, আসলে তিনি একজন জাত অভিনেতা।
বাংলাদেশে চলচ্চিত্র শিল্পের সাফল্যের জৌলুসময় সময়ের স্বর্ণালী তারকা রাজীব। যাদের অভিনয় প্রতিভায় বাণিজ্যের সোনালী সিঁড়ি ছুঁয়েছে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র, রাজীব ছিলেন তাদেরই অন্যতম একজন। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে যে কজন মানুষের অবদান উল্লেখ করতেই হয়, তাদের মধ্যে রাজীবও একজন।
লক্ষ-কোটি ভক্ত-দর্শকদের হৃদয়ে রাজীবের মতো অভিনেতা, অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবেন অনন্তকাল
মৃত্য
রাজিব ২০০৪ সালের ১৪ নভেম্বর ক্যান্সারে আক্রান্ত্র হয়ে ৫২ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। ঢাকার উত্তরার ৪ নম্বর সেক্টরে সিটি করপোরেশনের কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়
১৯৯৭ | হাঙর নদী গ্রেনেড | ||
২০০১ | স্বপ্নের বাসর | ||
১৯৯৬ | স্বপ্নের পৃথিবী | ||
১৯৯৫ | স্বপ্নের ঠিকানা | ||
১৯৯৬ | সত্যের মৃত্যু নাই | ||
১৯৯৫ | শেষ সংগ্রাম | ||
১৯৯২ | শেষ খেলা | ||
১৯৯৭ | লুটতরাজ | ||
১৯৯৪ | রাজ পথের রাজা | ||
২০০২ | মাস্তানের উপর মাস্তান | - | |
১৯৯৮ | মায়ের কসম | ||
১৯৯৫ | মহামিলন | ||
১৯৯৯ | মগের মুল্লুক | ||
১৯৮৪ | ভাত দে | ইয়াজিদ মিয়া | |
১৯৯৮ | ভন্ড | ||
১৯৯৭ | বুকের ভেতর আগুন | ||
১৯৯৪- | বিক্ষোভ | মাহমুদ চৌধুরী | |
১৯৯৫ | বাবার আদেশ | ||
১৯৯৬ | বশিরা | ||
২০০১ | বন্ধু যখন শত্রু | কামরান | |
১৯৯৭ | প্রেম পিয়াসী | ||
১৯৯৩ | প্রেম দিওয়ানা | ||
১৯৯৮ | দেশ দরদী | ||
১৯৯৫ | দেনমোহর | ||
১৯৯৬ | দূর্জয় | ||
১৯৯২ | দাঙ্গা | কালু মিয়া | |
১৯৯২ | ত্রাস | ||
১৯৯৪ | জীবন দিয়ে ভালোবাসি | ||
২০০১ | চেয়ারম্যান | ||
১৯৯৭ | গুন্ডা পুলিশ | ||
১৯৮২ | খোকন সোনা | ||
১৯৯৬ | খলনায়ক | দাউদ হায়দার | |
১৯৯৭ | ক্ষুধার জ্বালা | ||
১৯৯৩ | কেয়ামত থেকে কেয়ামত | মির্জা মোহাম্মদ সালাউদ্দিন | |
১৯৯৫ | ওরা তিনজন | ||
২০০১ | ওদের ধর | ||
২০০২ | ও প্রিয়া তুমি কোথায় | ||
১৯৯৫ | আন্দোলন | ||
১৯৯৪ | অন্তরে অন্তরে | মানিক | |
১৯৯৯ | অনন্ত ভালবাসা | আশরাফ চৌধু |
What's Your Reaction?






