হযরত যাকারিয়া আঃ এর জীবনী | Biography of Prophet Zakariya

হযরত যাকারিয়া আঃ এর জীবনী | Biography of Prophet Zakariya

May 19, 2025 - 16:38
May 26, 2025 - 01:51
 0  1
হযরত যাকারিয়া আঃ এর জীবনী | Biography of Prophet Zakariya

হযরত জাকারিয়া (আঃ) এর জন্ম পরিচয় ছকের মাধ্যমে:

বিষয়

বিস্তারিত

নাম

হযরত জাকারিয়া (আঃ)

পিতা

হযরত ইমরান (আঃ)

মাতা

হযরত আসমা (আঃ)

জাতি

বনি ইসরাঈল (ইহুদী সম্প্রদায়)

জন্ম স্থান

পবিত্র বাইতুল মাকদিস (যিরুজালেম)
জন্মকাল বিশেষভাবে সঠিক তারিখ নির্দিষ্ট নয়, তবে বলা হয় তিনি একজন পুণ্যাত্মা নবী হিসেবে প্রাপ্ত বয়সে জন্মগ্রহণ করেছিলেন

গ্রন্থ

তওরাত (যেহেতু তিনি বনি ইসরাঈল সম্প্রদায়ের নবী ছিলেন)

পূর্ববর্তী নবী

হযরত ইসমাইল (আঃ), হযরত দাউদ (আঃ) ইত্যাদি

মরণকাল

তাঁর মৃত্যুর সঠিক বছরও জানা যায় না, তবে তিনি ৬০-৭০ বছর বয়সে মারা গিয়েছিলেন বলে উল্লেখ করা হয়

হযরত জাকারিয়া (আঃ) এর পূর্ণাঙ্গ জীবনী:

হযরত জাকারিয়া (আঃ) ছিলেন বনি ইসরাঈল সম্প্রদায়ের এক মহান নবী। তাঁর জীবনীতে অনেক পুণ্য ও শিক্ষা রয়েছে, যা মানবজাতির জন্য অনুসরণযোগ্য।

বংশ পরিচয়:

হযরত জাকারিয়া (আঃ) ছিলেন পবিত্র বংশের সন্তান, যার পূর্বপুরুষদের মধ্যে বহু নবী ছিলেন। তিনি ইসরাঈলের এক বিশিষ্ট পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, যার পিতা ছিলেন হযরত ইমরান (আঃ) এবং মাতা ছিলেন হযরত আসমা (আঃ)। তিনি নিজেও নবী ছিলেন, এবং তার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা বনি ইসরাঈলকে দিকনির্দেশনা প্রদান করেছেন।

হযরত যাকারিয়া (আঃ) ছিলেন দাঊদ ও সুলাইমান (আঃ) এর বংশধর। যাকারিয়া (আঃ) ছিলেন বনী ইসরাঈলের নবী ইয়াহইয়া (আঃ) এর পিতা। কুরআন মাজীদে আল্লাহ তায়ালা যাকারিয়া (আঃ)-কে সন্তান প্রদানের ঘটনা মানুষের নিকট বর্ণনা করেছেন। আল্লাহ যখন যাকারিয়াকে পুত্ৰ সন্তান দান করেন তখন তিনি ছিলেন বৃদ্ধ। তাঁর স্ত্রী যৌবনকাল থেকেই ছিলেন বন্ধ্যা। আর এখন বার্ধক্যে আক্রান্ত। কিন্তু এসব প্রতিকূল অবস্থা বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও যাকারিয়া (আঃ) আল্লাহর রহমত ও অনুগ্রহ থেকে নিরাশ হননি।

তিনি নিরবে নিভৃতে তাঁর প্রতিপালককে এই বলে আহ্বান করেছিলেন, হে আমার প্রতিপালক, তোমাকে আহ্বান করে আমি কখনও ব্যৰ্থ হইনি। আমি আশংকা করি আমার পর আমার স্বগোত্রীয়দের সম্পর্কে। আমার স্ত্রী বন্ধ্যা। সুতরাং তুমি তোমার নিকট হতে আমাকে দান কর উত্তরাধিকারী। যে আমার উত্তরাধিকারিত্ব করবে এবং উত্তরাধিকারিত্ব করবে ইয়াকুবের বংশের। এবং হে আমার প্রতিপালক, তাকে করো সন্তোষভাজন।

হযরত যাকারিয়ার সন্তান কামনার পেছনে যে প্রেরণাটি কাজ করেছিল তা এই যে, তিনি হযরত মারইয়াম বিনতে ইমরানকে বায়তুল মুকাদ্দাসে দেখাশুনার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। বায়তুল মুকাদ্দাসের যে কক্ষে মারইয়াম (আঃ) থাকতেন, সে কক্ষে যাকারিয়া (আঃ) যখনই যেতেন, দেখতেন ভিন্ন মৌসুমের পর্যাপ্ত ফল মারইয়ামের পাশে মওজুদ রয়েছে। এটি ছিল আওলিয়াদের কারামতের একটি নিদর্শন। তিনি জিজ্ঞেস করেছিলেনঃ হে মারইয়াম, এসব তুমি কোথায় পেলে?

তখন তিনি উত্তরে বলেছিলেনঃ এ আল্লাহর নিকট হতে, আল্লাহ যাকে ইচ্ছা অপরিমিত জীবনোপকরণ দান করেন”। তখন হযরত যাকারিয়ার অন্তরে এ কথার উদয় হল যে, যে সত্তা মারইয়ামকে ভিন্ন মৌসুমের ফল দান করছেন, তিনি আমাকে এই বৃদ্ধ বয়সে সন্তানও দান করতে পারেন। সেখানেই যাকারিয়া (আঃ) তাঁর পালনকর্তার নিকট প্রার্থনা করলেনঃ “হে আমার পালনকর্তা, আপনার নিকট থেকে আমাকে পূত পবিত্র সন্তান দান করুন। নিশ্চয়ই আপনি প্রার্থনা শ্রবণকারী।

হযরত যাকারিয়া ও ইয়াহইয়া (আ:) হযরত যাকারিয়া ও ইয়াহ্ইয়া(আলাইহিমাস সালাম)1.সন্তান লাভের জন্য যাকারিয়ার দো‘আ2.ইয়াহইয়ারবৈশিষ্ট্য1.ইয়াহ্ইয়া ও যাকারিয়ার মৃত্যুযাকারিয়া ও ইয়াহইয়া সুলায়মান পরবর্তী দুই নবী পরস্পরে পিতা-পুত্র ছিলেন এবং বায়তুল মুক্বাদ্দাসের অধিবাসী ছিলেন। ইয়াহইয়া ছিলেন পরবর্তী নবী ঈসা (আঃ)-এর আপন খালাতো ভাই এবং বয়সে ছয় মাসের বড়। তিনি ঈসার ছয় মাস পূর্বেই দাওয়াতেরকাজ শুরু করেন। হযরত যাকারিয়া ও ইয়াহ্ইয়া (আঃ) সম্পর্কে ৪টি সূরার ২২টি আয়াতে বর্ণিত হয়েছে। তন্মধ্যে সূরা আন‘আমে কেবল ১৮ জন নবীর নামের তালিকায় তাঁদের নাম উল্লেখিত হয়েছে। বাকী অন্য সূরাগুলিতে খুবই সংক্ষেপে কেবল ইয়াহ্ইয়ার জন্মবৃত্তান্ত সম্পর্কে বর্ণনা এসেছে।যাকারিয়া (আঃ) সম্পর্কে কুরআনে কেবল এতটুকু বর্ণিতহয়েছে যে, তিনি মারিয়ামের লালন-পালনকারী ছিলেন।

পুত্রের জন্য প্রার্থনা

যখন তিনি বৃদ্ধ বয়সে পৌঁছান, তখন জাকারিয়া চিন্তা করতে শুরু করেন যে তার মৃত্যুর পরে কে ঈশ্বরের বার্তা প্রচারের উত্তরাধিকার অব্যাহত রাখবে এবং তার পরে কে মন্দিরের দৈনন্দিন সেবা পরিচালনা করবে। জাকারিয়া ঈশ্বরের কাছে পুত্রের জন্য প্রার্থনা করতে শুরু করেছিলেন। সন্তানের জন্মের জন্য প্রার্থনা করা কেবল সন্তানের আকাঙ্ক্ষার বাইরে ছিল না।[2] তিনি নিজের জন্য এবং জনসাধারণের জন্য প্রার্থনা করেছিলেন - তাদের একজন বার্তাবাহকের প্রয়োজন ছিল, একজন ঈশ্বরের লোক যিনি জাকারিয়ার পরে প্রভুর সেবায় কাজ করবেন। জাকারিয়ার চরিত্র এবং গুণাবলী ছিল এবং তিনি এটিকে তার সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ হিসাবে তার আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকারীর কাছে হস্তান্তর করতে চেয়েছিলেন। তার স্বপ্ন ছিল পরিবারকে পিতৃপুরুষ ইয়াকুবের উত্তরসূরীদের কাছে ফিরিয়ে আনা এবং ইসরায়েলের জন্য ঈশ্বরের বার্তা পুনর্নবীকরণ নিশ্চিত করা। যেমন কুরআন বর্ণনা করে:

১৯:৪ বলছে, “হে আমার প্রভু! আমার হাড়গুলি ভঙ্গুর হয়ে গেছে, এবং আমার মাথা জুড়ে ধূসর চুল ছড়িয়ে পড়েছে, কিন্তু আমি তোমার কাছে প্রার্থনা করে কখনও নিরাশ হইনি, হে আমার প্রভু!

১৯:৫ এবং আমার পরে আমার আত্মীয়দের ঈমানের বিষয়ে আমি উদ্বিগ্ন, কারণ আমার স্ত্রী বন্ধ্যা। অতএব, তোমার অনুগ্রহে আমাকে একজন উত্তরাধিকারী দান করো,

১৯:৬ যে আমার এবং ইয়াকুবের পরিবারের কাছ থেকে নবুয়তের উত্তরাধিকারী হবে, এবং হে আমার প্রভু, তাকে তোমার পছন্দনীয় করে তুলো!”

নবুয়ত ও দাওয়াত

হযরত যাকারিয়া (আঃ) আল্লাহর পক্ষ থেকে নবুয়তপ্রাপ্ত হন। তিনি বনী ইসরাঈলকে আল্লাহর পথে আহ্বান করেন এবং আল্লাহর বিধান অনুযায়ী জীবনযাপনের জন্য দিকনির্দেশনা দিতেন। তিনি অত্যন্ত ধার্মিক, বিনয়ী ও নিরহংকার ব্যক্তি ছিলেন।

 আল্লাহর আরাধনা ও বিশেষ দোয়া

যাকারিয়া (আঃ) ছিলেন একজন বৃদ্ধ এবং তাঁর স্ত্রী ছিলেন বন্ধ্যা। কিন্তু তিনি আল্লাহর কাছে একটি নেক সন্তান চেয়ে প্রার্থনা করেন। তাঁর দোয়া কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে:

رَبِّ لَا تَذَرْنِي فَرْدًا وَأَنتَ خَيْرُ الْوَارِثِينَ
“হে আমার পালনকর্তা! আমাকে একা রেখো না, আর তুমি তো সেরা উত্তরাধিকারী।”
— সূরা আল-আন্বিয়া (২১:৮৯)

আল্লাহ তাঁর এই প্রার্থনা কবুল করে তাঁকে এক পুত্র সন্তানের সুসংবাদ দেন, যার নাম হয় ইয়াহইয়া (আঃ)

 কুরআনে যাকারিয়া (আঃ)

যাকারিয়া (আঃ)-এর কাহিনী কুরআনের একাধিক স্থানে এসেছে:

  1. সূরা মারিয়াম (১৯:২-১৫)

  2. সূরা আল-ইমরান (৩:৩৮-৪১)

  3. সূরা আল-আন্বিয়া (২১:৮৯-৯০)

এই আয়াতগুলোতে তাঁর দোয়া, সন্তান লাভের সংবাদ, ও আল্লাহর প্রতি তাঁর গভীর আস্থা ও আনুগত্যের বর্ণনা পাওয়া যায়।

 সন্তান: হযরত ইয়াহইয়া (আঃ)

আল্লাহ তাঁকে একটি পুত্র দান করেন—ইয়াহইয়া (আঃ), যিনি নিজেও একজন নবী ছিলেন। ইয়াহইয়া (আঃ) ছিলেন সত্যবাদী, সৎচরিত্রের অধিকারী এবং নির্ভীকভাবে সত্য প্রচারকারী।

প্রার্থনা ও মুজেজা:

হযরত জাকারিয়া (আঃ) আল্লাহর কাছে সন্তান লাভের জন্য গভীরভাবে প্রার্থনা করেন। আল্লাহ তাআলা তার প্রার্থনা কবুল করেন এবং তাকে একজন পুত্রসন্তান দান করেন। যদিও তার স্ত্রীর বয়স অনেক বেশি হয়ে গিয়েছিল এবং তিনি সন্তান ধারণের সক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছিলেন, তবুও আল্লাহ তার প্রার্থনার সম্মান দেন এবং তাঁর স্ত্রীর গর্ভে সন্তান দেন। হযরত ইয়াহিয়া (আঃ) ছিলেন একটি আল্লাহর মুজেজা।

যাজক কর্তব্য:

হযরত জাকারিয়া (আঃ) ছিলেন পবিত্র মন্দিরের যাজক এবং বাইতুল মাকদিসে তাঁর কাজ ছিল আল্লাহর নির্দেশানুসারে লোকদের মাঝে বিচার ও ধর্মীয় শিক্ষা প্রদান করা। তিনি নবী হিসেবে জনগণের মধ্যে সতর্কতা ও আল্লাহর ভয়ের বিষয়টি প্রচার করতেন।

শিক্ষণীয় দিক

হযরত যাকারিয়া (আঃ)-এর জীবনী থেকে নিচের বিষয়গুলো শিখা যায়:

  1. আল্লাহর প্রতি ভরসা: বৃদ্ধ বয়সেও সন্তান লাভের আশা রাখার মাধ্যমে তিনি আল্লাহর উপর পরিপূর্ণ ভরসা প্রদর্শন করেন।

  2. ধৈর্য ও আনুগত্য: তিনি সব সময় আল্লাহর আদেশ মানতেন এবং ইবাদতে ব্যস্ত থাকতেন।

  3. দোয়ার শক্তি: তাঁর দোয়া কবুল হওয়া আমাদের শেখায়—আল্লাহ সবকিছু করতে সক্ষম, এমনকি অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারেন।

মৃত্যু:

হযরত জাকারিয়া (আঃ) একটি অত্যন্ত সম্মানজনক জীবন অতিবাহিত করেছিলেন। তার মৃত্যু সম্পর্কে কিছু বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায় না, তবে বিভিন্ন হাদিসে বলা হয় যে তিনি অনেক বয়সে মারা গিয়েছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর, তার কাজে অব্যাহত ছিলেন তাঁর সন্তান হযরত ইয়াহিয়া (আঃ), যিনি পরে নিজে এক মহান নবী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।

হযরত যাকারিয়া (আঃ) স্বাভাবিকভাবে মৃত্যুবরণ করেছিলেন নাকি নিহত হয়েছিলেন, এ সম্পর্কে ওহাব ইবন মুনাব্বিহ থেকে একটি বর্ণনায় রয়েছে যে, যাকারিয়া (আঃ) তাঁর সম্প্রদায় থেকে পালিয়ে একটি গাছের মধ্যে ঢুকে পড়েন। সম্প্রদায়ের লোকজন ঐ গাছটি করাত দ্বারা দ্বিখণ্ডিত করে ফেলে। করাত যখন তার দেহ স্পর্শ করে, তখন তিনি চিৎকার করেন। আল্লাহ তখন ওহী প্রেরণ করে তাঁকে জানান, তোমার চিৎকার বন্ধ না হলে যমীন উলটিয়ে দেয়া হবে। অতঃপর তিনি চিৎকার বন্ধ করে দেন এবং তার দেহ দ্বিখণ্ডিত হয়ে যায়। অপর বর্ণনায় বলা হয় যে, হযরত যাকারিয়া স্বাভাবিকভাবেই মৃত্যুবরণ করেছিলেন।

ওয়াহাব বিন মুনাবিবহ বলেন, গাছের ফাটলে আশ্রয় গ্রহণকারীব্যক্তি ছিলেন শা‘ইয়া ( ﺷﻌﻴﺎ)। আর যাকারিয়া স্বাভাবিক মৃত্যু বরণ করেন। মানছূরপুরীবাইবেলের বর্ণনার আলোকে বলেন, ইয়াহ্ইয়াকেপ্রথমে কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়। কিন্তু বাদশাহর প্রেমিকা ঐ নষ্টা মহিলা তার মাথা দাবী করায় জেলখানায় তাকে হত্যা করে তারছিন্ন মস্তক ও রক্ত এনে ঐ মহিলাকে উপহার দেওয়া হয়। অতএব উক্ত দুই নবীর মৃত্যুরসঠিক ঘটনার বিষয়ে আল্লাহই সর্বাধিক অবগত।

https://shirshobindu.com/archives/174406

https://en.wikipedia.org/wiki/Zechariah_in_Islam

What's Your Reaction?

Like Like 0
Dislike Dislike 0
Love Love 0
Funny Funny 0
Angry Angry 0
Sad Sad 0
Wow Wow 0