দাউদ (আ). এর জীবনী | Biography of (Dāwūd Alaihissalam)

দাউদ (আ). এর জীবনী | Biography of (Dāwūd Alaihissalam)

May 26, 2025 - 12:30
 0  1
দাউদ (আ). এর জীবনী | Biography of (Dāwūd Alaihissalam)

নবী

দাউদ
دَاوُود
দায়ূদ

আলাইহিস সালাম
ইসলামি চারুলিপিতে লেখা দাউদ

জন্ম

খ্রিস্টপূর্ব ১০ম শতাব্দী
জেরুসালেম

মৃত্যু

খ্রিস্টপূর্ব ৯ম শতাব্দী
জেরুসালেম

অন্যান্য নাম

হিব্রু ভাষায়: דָּוִד
রোমানীকরণ: Dāwīḏ সিরীয়: ܕܘܝܕ‎, প্রতিবর্ণী. Dawīd
কইনি গ্রীক: গ্রিক: Δαυίδ

পরিচিতির কারণ

গলিয়াৎকে পরাজিত করা; ইস্রায়েল ও যিহূদা যুক্তরাজ্যের রাজা হওয়া; আসমানি কিতাব যাবুর লাভ করা; ইস্রায়েলের প্রতি ভবিষ্যদ্বাণী ও সতর্কতা প্রদান; অসাধারণ সংগীতজ্ঞান ও অপূর্ব কণ্ঠস্বর

পূর্বসূরী

রাজত্ব: তালুত, নবুয়ত: শমূয়েল

উত্তরসূরী

সুলায়মান

সন্তান

সুলায়মান

দাউদ (আ.)-এর রাজত্ব ও মুজিজা

হজরত দাউদ (আ.)-এর রাজত্ব ছিল বর্তমান ফিলিস্তিনসহ সমগ্র ইরাক ও সিরিয়া এলাকায়। ক্ষমতার অধিকারী হয়েও তিনি ছিলেন আল্লাহর প্রতি অনুগত ও কৃতজ্ঞ। আল্লাহ পবিত্র কোরআনে তাঁর কৃতজ্ঞতার সুনামও করেছেন। তাঁর মুজিজাগুলো ছিল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। পর্বতমালা ও পাখিদের তাঁর অনুগত করে দেওয়া হয়েছিল। কঠিন লোহা তাঁর হাতে মোমের মতো গলে যেত। তিনি লোহাকে যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে ব্যবহার করে নকশা গড়তে পারতেন। তৎকালীন যুগের অত্যাধুনিক বর্ম ইত্যাদি তিনিই বানাতে পারতেন। পবিত্র কোরআনে তাঁর সেই শৈল্পিক দক্ষতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

দাউদ (আরবি: دَاؤُوْد; রোমানীকরণ: Dāʾūd বা আরবি: دَاوُوْد; রোমানীকরণ: Dāwūd ) ছিলেন একজন নবী ও আল্লাহর রাসুল,  যিনি প্রাচীন ইসরায়েল রাজ্যের একজন ধার্মিক এবং ঐশ্বরিকভাবে অনুমোদিত রাজা হিসাবে ইসলাম ধর্মে সম্মানিত। হিব্রু বাইবেল অনুসারে তিনি ইস্রায়েল ও যিহুদা যুক্তরাজ্যের প্রথম রাজা, যার রাজত্বকাল ছিল আনুমানিক ১০১০-৯৭০ খ্রিস্টপূর্ব। আল্লহর পক্ষ নিকট থেকে যাবুর কিতাব প্রাপ্তির জন্য মুসলমানরা দাউদকে একজন রাসুল হিসেবেও সম্মান করে।[] কুরআনে দাউদ নবীর কথা ষোলবার উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি ইসলামে মুহাম্মাদ সা. এর পূর্ববর্তী নবীদের যোগসূত্র হিসাবে উপস্থিত হয়েছেন।

নাম

ডেভিডের কুরআনের আরবী রূপ হলো দাউদ, যা কোনি গ্রিক: Δαυίδ এবং সিরিয়: ܕܘܝܕ‎, রোমানীকরণ: Dawīd (যা হিব্রু: דָּוִד, রোমানীকরণ: Dāwīd অনুসরণ করে) এর থেকে আলাদা। এই রূপটি কুরআনে ষোলবার প্রদর্শিত হয়েছে।

উল্লেখযোগ্য বিষয়

দাউদ বনী ইসরাঈলের দ্বাদশ গোত্রের মধ্যে ইয়াহুদার বংশের সাথে সম্পর্কিত ছিলেন। মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক (রা.) ওহাব ইবনে মুনাব্বেহ-এর মাধ্যমে দাউদের চেহারা/গঠনের বর্ণনা পাওয়া যায়। তিনি ক্ষুদ্রাকৃতি, নীল চোখ, দেহে অতি অল্প পরিমাণ লোম ছিল। মুখের চেহারা থেকে অন্তরের পবিত্রতা দেখা যেত। দাউদের সাথে বনী ইসরাইলদের বন্ধুত্বের কারণে তালুতের পরেই তিনি শাসন ক্ষমতা পেয়ে যান। মহান আল্লাহ তাকে নবুয়তও প্রদান করেন। পূর্বে বনী ইসরাইলের এক বংশের কাছে ছিল শাসন ক্ষমতা আর অন্য বংশের কাছে ছিল নবুয়ত। দাউদ প্রথম দুটোই একসাথে পান।

 তিনি মহান আল্লাহর নবীও ছিলেন, আবার বাদশাহও ছিলেন। তিনি বনী ইসরাইলীদের সামাজিক ও সামগ্রিক জীবন দেখাশুনা করতেন। এই জন্য মহান আল্লাহ তাকে খলীফা হিসাবে আখ্যায়িত করলেন। দাউদ মুসার শরীয়তকে নতুন জীবন দিয়েছিলেন।‘যাবুর’ কিতাবটি মহান আল্লাহর প্রশংসায় ভরপুর ছিল। দাউদের গলায় মহান আল্লাহ যাদুর সুর দান করেছিলেন যে, তেলাওয়াতের সময় মানুষ তো অবশ্যই পাখি,জীব-জন্তু পর্যন্ত অভিভূত হয়ে যেত।‘যাবুর’ শব্দের অর্থ পারা বা খন্ড। মহান আল্লাহর দয়ায় তার বিরুদ্ধে প্রস্তুতি কম/বেশি যাই থাকুক না কেন, সাফল্য সবসময় তার পক্ষেই থাকতো। সুতরাং অল্প সময়ের মধ্যে তার সাম্রাজ্য সিরিয়া,ইরাক,ফিলিস্তিন এবং পূর্ব জর্ডানের সমস্ত এলাকা তার অধীনে এসে যায়।হেজাযের কিছু অংশ তার নিয়ন্ত্রণে আসে। প্রজাদের তার সম্পর্কে ধারণা ছিল যে, যেকোন জটিল বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবার মত ক্ষমতা তার আছে।

বনু ইস্রাঈলগণের নিকটে একটা সিন্দুক ছিল। যার মধ্যে তাদের নবী মূসা, হারূন ও তাদের পরিবারের ব্যবহৃত কিছু পরিত্যক্ত সামগ্রী ছিল। তারা এটাকে খুবই বরকতময় মনে করত এবং যুদ্ধকালে একে সম্মুখে রাখত। একবার আমালেক্বাদের সাথে যুদ্ধের সময় বনু ইস্রাঈলগণ পরাজিত হলে আমালেক্বাদের বাদশাহ জালূত উক্ত সিন্দুকটি নিয়ে যায়। এক্ষণে যখন বনু ইস্রাঈলগণ পুনরায় জিহাদের সংকল্প করল, তখন আল্লাহ তাদেরকে উক্ত সিন্দুক ফিরিয়ে দিতে মনস্থ করলেন। অতঃপর এই সিন্দুকটির মাধ্যমে তাদের মধ্যেকার নেতৃত্ব নিয়ে ঝগড়ার নিরসন করেন। সিন্দুকটি তালূতের বাড়িতে আগমনের ঘটনা এই যে, জালূতের নির্দেশে কাফেররা যেখানেই সিন্দুকটি রাখে, সেখানেই দেখা দেয় মহামারি ও অন্যান্য বিপদাপদ। এমনিভাবে তাদের পাঁচটি শহর ধ্বংস হয়ে যায়।

 অবশেষে অতিষ্ঠ হয়ে তারা একে তার প্রকৃত মালিকদের কাছে পাঠিয়ে দেবার সিদ্ধান্ত নিল এবং গরুর গাড়িতে উঠিয়ে হাঁকিয়ে দিল। তখন ফেরেশতাগণ আল্লাহর নির্দেশমতে গরুর গাড়িটিকে তাড়িয়ে এনে তালূতের ঘরের সম্মুখে রেখে দিল। বনু ইস্রাঈলগণ এই দৃশ্য দেখে সবাই একবাক্যে তালূতের নেতৃত্বের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করল। অতঃপর তালূত আমালেক্বাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনার প্রস্তুতি শুরু করলেন। অল্প বয়ষ্ক তরুণ দাউদ ছিলেন উক্ত সেনা দলের সদস্য। পথিমধ্যে সেনাপতি তালূত তাদের পরীক্ষা করতে চাইলেন। সম্মুখেই ছিল এক নদী। মৌসুম ছিল প্রচন্ড গরমের। পিপাসায় ছিল সবাই কাতর।"অতঃপর তালূত যখন সৈন্যদল নিয়ে বের হল, তখন সে বলল, নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদেরকে পরীক্ষা করবেন একটি নদীর মাধ্যমে। যে ব্যক্তি সেই নদী হতে পান করবে, সে ব্যক্তি আমার দলভুক্ত নয়। আর যে ব্যক্তি স্বাদ গ্রহণ করবে না, সেই-ই আমার দলভুক্ত হবে। তবে হাতের এক আঁজলা মাত্র। অতঃপর সবাই সে পানি থেকে পান করল, সামান্য কয়েকজন ব্যতীত।

 পরে তালূত যখন নদী পার হল এবং তার সঙ্গে ছিল মাত্র কয়েকজন ঈমানদার ব্যক্তি (তখন অধিক পানি পানকারী সংখ্যাগরিষ্ট) লোকেরা বলতে লাগল, আজকের দিনে জালূত ও তার সেনাবাহিনীর সাথে যুদ্ধ করার শক্তি আমাদের নেই। (পক্ষান্তরে) যাদের বিশ্বাস ছিল যে, আল্লাহর সম্মুখে তাদের একদিন উপস্থিত হতেই হবে, তারা বলল, কত ছোট ছোট দল বিজয়ী হয়েছে বড় বড় দলের বিরুদ্ধে আল্লাহর হুকুমে। নিশ্চয়ই ধৈর্যশীলদের সাথে আল্লাহ থাকেন।" (বাক্বারাহ ২/২৪৯)। নদী পার হওয়া এই স্বল্প সংখ্যক ঈমানদারগণের সংখ্যা ছিল মাত্র ৩১৩ জন, যা শেষনবীর সাথে কাফেরদের বদর যুদ্ধকালে যুদ্ধরত ছাহাবীগণের সংখ্যার সাথে মিলে যায়।

 পানি পানকারী হাযারো সৈনিক নদী পারে আলস্যে ঘুমিয়ে পড়ল। অথচ পানি পান করা থেকে বিরত থাকা স্বল্প সংখ্যক ঈমানদার সাথী নিয়েই তালূত চললেন সেকালের সেরা সেনাপতি ও শৌর্য-বীর্যের প্রতীক আমালেক্বাদের বাদশাহ জালূতের বিরুদ্ধে। বস্তুতবাদীগণের হিসাব মতে এটা ছিল নিতান্তই আত্মহননের শামিল। এই দলেই ছিলেন দাউদ।"আর যখন তারা জালূত ও তার সেনাবাহিনীর সম্মুখীন হল, তখন তারা বলল, হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদের ধৈর্য দান কর ও আমাদেরকে দৃঢ়পদ রাখ এবং আমাদেরকে তুমি কাফির সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সাহায্য কর।"( বাক্বারাহ ২/২৫০)

জালূত বিরাট সাজ-সজ্জা করে হাতীতে সওয়ার হয়ে সামনে এসে আস্ফালন করতে লাগল এবং সে যুগের যুদ্ধরীতি অনুযায়ী প্রতি -পক্ষের সেরা যোদ্ধাকে আহবান করতে থাকল। অল্পবয়ষ্ক বালক দাউদ নিজেকে সেনাপতি তালূতের সামনে পেশ করলেন। তালূত তাকে পাঠাতে রাযী হলেন না। কিন্তু দাউদ নাছোড় বান্দা। অবশেষে তালূত তাকে নিজের তরবারি দিয়ে উৎসাহিত করলেন এবং আল্লাহর নামে জালূতের মোকাবিলায় প্রেরণ করলেন। বর্ণিত আছে যে, তিনি এ ঘোষণা আগেই দিয়েছিলেন যে, যে ব্যক্তি জালূতকে বধ করে ফিলিস্তিন পুনরুদ্ধার করতে পারবে, তাকে রাজ্য পরিচালনায় শরীক করা হবে। অস্ত্রে-শস্ত্রে সজ্জিত জালূতকে মারা খুবই কঠিন ছিল। কেননা তার সারা দেহ ছিল লৌহ বর্মে আচ্ছাদিত। তাই তরবারি বা বল্লম দিয়ে তাকে মারা অসম্ভব ছিল।

আল্লাহর ইচ্ছায় দাউদ ছিলেন পাথর ছোঁড়ায় উস্তাদ। সমবয়সীদের সাথে তিনি মাঠে গিয়ে নিশানা বরাবর পাথর মারায় দক্ষতা অর্জন করেছিলেন। দাউদ পকেট থেকে পাথরখণ্ড বের করে হাতীর পিঠে বসা জালূতের চক্ষু বরাবর নিশানা করে এমন জোরে মারলেন যে, তাতেই জালূতের চোখশুদ্ধ মাথা ফেটে মগয বেরিয়ে চলে গেল। এভাবে জালূত মাটিতে লুটিয়ে পড়লে তার সৈন্যরা পালিয়ে গেল। যুদ্ধে তালূত বিজয় লাভ করলেন।

দাউদ একজন দক্ষ কর্মকার ছিলেন। বিশেষ করে শত্রুর মোকাবিলার জন্য উন্নত মানের বর্ম নির্মাণে তিনি ছিলেন একজন কুশলী কারিগর। যা বিক্রি করে তিনি সংসার যাত্রা নির্বাহ করতেন। রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে নিজের ভরণপোষণের জন্য কিছুই নিতেন না।

বনু ইস্রাঈলদের জন্য শনিবার ছিল সাপ্তাহিক ছুটির দিন এবং ইবাদতের জন্য নির্দিষ্ট ও পবিত্র দিন। এ দিন তাদের জন্য মৎস্য শিকার নিষিদ্ধ ছিল। তারা সমুদ্রোপকুলের বাসিন্দা ছিল এবং মৎস্য শিকার ছিল তাদের পেশা। ফলে দাউদের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই তারা ঐদিন মৎস্য শিকার করতে থাকে। এতে তাদের উপরে আল্লাহর পক্ষ হতে ‘মস্খ’বা আকৃতি পরিবর্তনের শাস্তি নেমে আসে এবং তিনদিনের মধ্যেই তারা সবাই মৃত্যু মুখে পতিত হয়। আল্লাহ বলেন " তোমরা তাদেরকে ভালরূপে জেনেছ, যারা শনিবারের ব্যাপারে সীমালঙ্ঘন করেছিল। আমি বলেছিলাম: তোমরা লাঞ্ছিত বানর হয়ে যাও। অতঃপর আমি এ ঘটনাকে তাদের সমসাময়িক ও পরবর্তীদের জন্য দৃষ্টান্ত এবং আল্লাহভীরুদের জন্য উপদেশ গ্রহণের উপাদান করে দিয়েছি।" (সুরা বাকারাহ-৬৫-৬৬)।

তাফসীরে কুরতুবীতে বলা হয়েছে যে, ইহুদীরা প্রথমে গোপনে ও বিভিন্ন কৌশলে এবং পরে ব্যাপকভাবে নিষিদ্ধ দিনে মৎস্য শিকার করতে থাকে। এতে তারা দুদলে বিভক্ত হয়ে যায়। সৎ ও বিজ্ঞ লোকেরা একাজে বাধা দেন। অপরদল বাধা অমান্য করে মাছ ধরতে থাকে। ফলে প্রথম দলের লোকেরা শেষোক্তদের থেকে পৃথক হয়ে যান। তাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেন। এমনকি তাদের বাসস্থানও পৃথক করে নেন। একদিন তারা অবাধ্যদের এলাকায় চরম নীরবতা লক্ষ্য করেন। অতঃপর তারা সেখানে পৌঁছে দেখলেন যে, সবাই বানর ও শূকরে পরিণত হয়ে গেছে। ক্বাতাদাহ বলেন যে, বৃদ্ধরা শূকরে এবং যুবকেরা বানরে পরিণত হয়েছিল। রূপান্তরিত বানরেরা নিজ নিজ আত্মীয়-স্বজনকে চিনতে পেরেছিল এবং তাদের কাছে গিয়ে অঝোর নয়নে অশ্রু বিসর্জন করেছিল।

বাইবেলের পুরানো নিয়মে (ওল্ড টেস্টামেন্ট) দাউদকে বলা হয়েছে সেন্ট লুইস ডেভিড। দাউদের মাজার এখনও আছে যা ইহুদীরা সংরক্ষণ করে রেখেছেন। সে মাজারের গেটে এখনও লেখা আছে 'কিং সেন্ট ডেভিড'।

কুরআনে উল্লেখ

আল্লাহ তা'আলা পবিত্র কুরআনে বলেন, " তারপর ঈমানদাররা আল্লাহর হুকুমে জালূতের বাহিনীকে পরাজিত করে দিল এবং দাউদ জালূতকে হত্যা করল। আর আল্লাহ দাউদকে দান করলেন রাজ্য ও অভিজ্ঞতা। আর তাকে যা চাইলেন শিখালেন। আল্লাহ যদি একজনকে অপরজনের দ্বারা প্রতিহত না করতেন, তাহলে গোটা দুনিয়া বিধ্বস্ত হয়ে যেতো। কিন্তু বিশ্ববাসীর প্রতি আল্লাহ একান্তই দয়ালু, করুণাময়।৷" (সুরা বাকারা-২৫১)

"আমি পর্বতমালাকে তার অনুগামী করে দিয়েছিলাম, তারা সকাল-সন্ধ্যায় তার সাথে পবিত্রতা ঘোষণা করত। আর পক্ষীকুলকেও, যারা তার কাছে সমবেত হত। সবাই ছিল তাঁর প্রতি প্রত্যাবর্তনশীল।" (সুরা সোয়াদ-১৮,১৯)

"তারা যা বলে তাতে আপনি(মুহাম্মাদ সা.) সবর করুন এবং আমার শক্তিশালী বান্দা দাউদকে স্মরণ করুন। সে ছিল আমার প্রতি প্রত্যাবর্তনশীল"। (সুরা সোয়াদ ১৭)

"আমি দাউদের প্রতি অনুগ্রহ করেছিলাম এই আদেশ মর্মে যে, হে পর্বতমালা, তোমরা দাউদের সাথে আমার পবিত্রতা ঘোষণা কর এবং হে পক্ষী সকল, তোমরাও। আমি তাঁর জন্য লৌহকে নরম করে ছিলাম। এবং তাকে আমি বলে ছিলাম: প্রশস্ত বর্ম তৈরী কর, কড়াসমূহ যথাযথভাবে সংযুক্ত কর এবং সৎকর্ম সম্পাদন কর। তোমরা যা কিছু কর, আমি তা দেখি।" (সুরা সাবা-১০-১১)

বিশেষ গুণাবলী

[সম্পাদনা]
  • বোখারী শরীফে আছে যাবুর কিতাব জনাব দাউদ অতিদ্রুত তেলাওয়াত বা আবৃত্তি করতে পারতেন। এমনকি তিনি ঘোড়ার পিঠের গদী বাঁধতে যতটুকু সময় লাগতো, এসময়ের মধ্যেই যাবুর আবৃত্তি করে শেষ করতে পারতেন।
  • সূরা আম্বিয়া: ৭১ নম্বর আয়াতে আল্লাহ এই বর্ণনা দিয়েছেন,

"বুখারী ও মুসলিমের হাদীসে মুহাম্মাদ বলেন:মহান আল্লাহর নিকটে সর্বাধিক পছন্দনীয় হল দাউদের সালাত এবং সর্বাধিক পছন্দনীয় সিয়াম ছিল দাউদের সিয়াম। তিনি অর্ধরাত্রি পর্যন্ত ঘুমাতেন। অতঃপর এক তৃতীয়াংশ সালাতে কাটাতেন এবং শেষ ষষ্টাংশে নিদ্রা যেতেন। তিনি একদিন অন্তর একদিন সিয়াম রাখতেন। শত্রুর মোকাবিলায় তিনি কখনও পশ্চাদপসরণ করতেন না"।

  • সূরা সাবায় বর্ণনা করা হয়,

আল্লাহপাক পাহাড়-পর্বত ও পশু-পাখিকে জনাব দাউদের অনুগত করে দিয়েছিলেন। তারা তাঁর সাথে তসবিহ পাঠ করতো বা ঈশ্বরের স্মরণসূচক আবৃত্তি করতো। বৃক্ষ, পাথর ও শিলাখন্ড থেকেও তাসবিহ ধ্বনিত হতো।

এবং আমি দাউদকে আমার তরফ থেকে মর্যাদা দিয়েছি। আর আমি আদেশ করেছি যে, হে পাহাড় ও পক্ষীকূল! তোমরা দাউদের সাথে মিলে তাসবিহ পাঠ ও পবিত্রতা বর্ণনা কর

কোরআনে হজরত দাউদ (আ.)-এর প্রতি পাহাড়-পর্বত ও পশুপাখির আনুগত্য ও আল্লাহর তাসবিহ পাঠের কথা বলা হয়েছে।

কোরআনে আছে, ‘আর আমি সোলায়মানকে এ বিষয়ের মীমাংসা জানিয়ে দিয়েছিলাম এবং তাদের প্রত্যেককে আমি হিকমত ও জ্ঞান দিয়েছিলাম। আমি পাহাড় ও পাখিদের জন্য নিয়ম করে দিয়েছিলাম যেন ওরা দাউদের সঙ্গে আমার পবিত্র মহাকীর্তন করে। আমি ছিলাম এসবের কর্তা। আমি তাকে তোমাদের জন্য বর্ম তৈরি করতে শিখিয়েছিলাম, যা যুদ্ধে তোমাদেরকে রক্ষা করে। সুতরাং তোমরা কি হবে না? কৃতজ্ঞ হবে না। (সুরা আল আম্বিয়া, আয়াত: ৭৯-৮০)

দাঊদ (আঃ)-এর বৈশিষ্ট্য সমূহ

আল্লাহ প্রত্যেক নবীকে স্বতন্ত্র কিছু বৈশিষ্ট্য দান করেছেন। সেমতে দাঊদ (আঃ)-কে প্রদত্ত বৈশিষ্ট্য সমূহ নিম্নে বিবৃত হ’ল।-

১. আল্লাহ দাঊদ (আঃ)-কে আধ্যাত্মিক ও দৈহিক শক্তিতে বলিয়ান করে সৃষ্টি করেছিলেন। যেমন আল্লাহ বলেন,

وَاذْكُرْ عَبْدَنَا دَاوُودَ ذَا الْأَيْدِ إِنَّهُ أَوَّابٌ-(ص ১৭)- ‘স্মরণ কর, আমার বান্দা দাঊদকে। সে ছিল শক্তিশালী এবং আমার প্রতি সদা প্রত্যাবর্তনশীল’ (ছোয়াদ ৩৮/১৭)। আয়াতের প্রথমাংশে তাঁর দৈহিক ও দুনিয়াবী শাসন শক্তির কথা বলা হয়েছে এবং শেষাংশে তাঁর আধ্যাত্মিক শক্তির কথা বলা হয়েছে। এজন্য যে, বিরাট ও অপ্রতিদ্বন্দ্বী বাদশাহ হওয়া সত্ত্বেও তিনি সর্বদা আল্লাহর প্রতি নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন। সকল কাজে তাঁর দিকেই ফিরে যেতেন।

বুখারী ও মুসলিমের এক হাদীছে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, আল্লাহ তা‘আলার নিকটে সর্বাধিক পসন্দনীয় ছালাত হ’ল দাঊদ (আঃ)-এর ছালাত এবং সর্বাধিক পসন্দনীয় ছিয়াম ছিল দাঊদ (আঃ)-এর ছিয়াম। তিনি অর্ধরাত্রি পর্যন্ত ঘুমাতেন। অতঃপর এক তৃতীয়াংশ ছালাতে কাটাতেন এবং শেষ ষষ্টাংশে নিদ্রা যেতেন। তিনি একদিন অন্তর একদিন ছিয়াম রাখতেন। শত্রুর মোকাবিলায় তিনি কখনো পশ্চাদপসরণ করতেন না’।[6]

২. পাহাড় ও পক্ষীকুল তাঁর অনুগত ছিল। যেমন আল্লাহ বলেন,إِنَّا سَخَّرْنَا الْجِبَالَ مَعَهُ يُسَبِّحْنَ بِالْعَشِيِّ وَالْإِشْرَاقِ- وَالطَّيْرَ مَحْشُوْرَةً، كُلٌّ لَّهُ أَوَّابٌ-(ص ১৮-১৯)-

‘আমরা পর্বতমালাকে তার অনুগত করে দিয়েছিলাম। তারা সকাল-সন্ধ্যায় তার সাথে পবিত্রতা বর্ণনা করত’। ‘আর পক্ষীকুলকেও, যারা তার কাছে সমবেত হ’ত। সবাই ছিল তার প্রতি প্রত্যাবর্তনশীল’ (ছোয়াদ ৩৮/১৮-১৯)। একই মর্মে বক্তব্য এসেছে সূরা সাবা ১০ আয়াতে। অন্যদিকে আল্লাহ দাঊদ-পুত্র সুলায়মানের অধীনস্ত করে দিয়েছিলেন বায়ুকে ও জিনকে। পাহাড় ও পক্ষীকুল হযরত দাঊদ (আঃ)-এর কিভাবে আনুগত্য করত- সে বিষয়ে কোন বক্তব্য কুরআনে আসেনি। তাফসীরবিদগণ নানাবিধ সম্ভাবনা ব্যক্ত করেছেন। আমরা সেগুলিকে এড়িয়ে গেলাম। কেননা ইবনু আববাস (রাঃ) বলেছেন, أَبْهِمُوا مَا أَبْهَمَهُ اللهُ ‘আল্লাহ যে বিষয়কে অস্পষ্ট রেখেছেন, তোমরাও তাকে অস্পষ্ট থাকতে দাও’।[7]

৩, ৪ ও ৫. তাঁকে দেওয়া হয়েছিল সুদৃঢ় সাম্রাজ্য, গভীর প্রজ্ঞা ও অনন্য বাগ্মিতা। যেমন আল্লাহ বলেন,

وَشَدَدْنَا مُلْكَهُ وَآتَيْنَاهُ الْحِكْمَةَ وَفَصْلَ الْخِطَابِ-(ص ২০)- ‘আমরা তার সাম্রাজ্যকে সুদৃঢ় করেছিলাম এবং তাকে দিয়েছিলাম প্রজ্ঞা ও ফায়ছালাকারী বাগ্মিতা’ (ছোয়াদ ৩৮/২০)। উল্লেখ্য, আবু মূসা আশ‘আরী (রাঃ) ও ইমাম শাবী বলেন যে, ‘তিনিই সর্বপ্রথম বক্তৃতায় হাম্দ ও ছালাতের পর أما بعد (‘অতঃপর’) শব্দ যুক্ত করেন’।[8] পূর্বেই আমরা বলেছি যে, তাঁর এই সাম্রাজ্য ছিল শাম ও ইরাক ব্যাপী। যা আধুনিক সিরিয়া, লেবানন, জর্ডান, ফিলিস্তীন ও ইরাককে শামিল করে। আল্লাহ বলেন,

يَا دَاوُودُ إِنَّا جَعَلْنَاكَ خَلِيْفَةً فِي الْأَرْضِ فَاحْكُمْ بَيْنَ النَّاسِ بِالْحَقِّ وَلَا تَتَّبِعِ الْهَوَى فَيُضِلَّكَ عَنْ سَبِيْلِ اللهِ إِنَّ الَّذِيْنَ يَضِلُّوْنَ عَنْ سَبِيْلِ اللهِ لَهُمْ عَذَابٌ شَدِيْدٌ بِمَا نَسُوْا يَوْمَ الْحِسَابِ-(ص ২৬)-

‘হে দাঊদ! আমরা তোমাকে পৃথিবীতে খলীফা করেছি। অতএব তুমি মানুষের মাঝে ন্যায়সঙ্গত ফায়ছালা কর এবং খেয়াল-খুশীর অনুসরণ কর না। তাহ’লে তা তোমাকে আল্লাহর পথ হ’তে বিচ্যুত করবে। নিশ্চয়ই যারা আল্লাহর পথ হ’তে বিচ্যুত হয়, তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি এ কারণে যে, তারা হিসাব দিবসকে ভুলে যায়’ (ছোয়াদ ৩৮/২৬)

৬. লোহাকে আল্লাহ তাঁর জন্য নরম করে দিয়েছিলেন। যেমন আল্লাহ বলেন,

وَلَقَدْ آتَيْنَا دَاوُودَ مِنَّا فَضْلاً يَا جِبَالُ أَوِّبِيْ مَعَهُ وَالطَّيْرَ وَأَلَنَّا لَهُ الْحَدِيْدَ- أَنِ اعْمَلْ سَابِغَاتٍ وَقَدِّرْ فِي السَّرْدِ وَاعْمَلُوْا صَالِحاً إِنِّيْ بِمَا تَعْمَلُوْنَ بَصِيْرٌ- (سبا ১০-১১)-

‘...এবং আমরা তার জন্য লোহাকে নরম করে দিয়েছিলাম’ ‘এবং তাকে বলেছিলাম প্রশস্ত বর্ম তৈরী কর ও কড়াসমূহ যথাযথভাবে সংযুক্ত কর এবং তোমরা সৎকর্ম সম্পাদন কর। তোমরা যা কিছু কর, তা আমরা দেখে থাকি’ (সাবা ৩৪/১০-১১)

উল্লেখ্য যে, হযরত দাঊদ (আঃ) একজন দক্ষ কর্মকার ছিলেন। বিশেষ করে শত্রুর মোকাবিলার জন্য উন্নত মানের বর্ম নির্মাণে তিনি ছিলেন একজন কুশলী কারিগর। যা বিক্রি করে তিনি সংসার যাত্রা নির্বাহ করতেন। রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে নিজের ভরণপোষণের জন্য কিছুই নিতেন না। যদিও সেটা নেওয়া কোন দোষের ছিল না। এখানে লোহাকে বাস্তবে মোমের মত নরম করার প্রকাশ্য অর্থ নিলে সেটা হবে তাঁর জন্য মু‘জেযা স্বরূপ, যা মোটেই অসম্ভব নয়। অবশ্য নরম করে দেওয়ার অর্থ লোহাকে সহজে ইচ্ছামত রূপ দেওয়ার ও উন্নতমানের নির্মাণ কৌশল শিক্ষাদানও হ’তে পারে। যেমন অন্যত্র আল্লাহ বলেন,

وَعَلَّمْنَاهُ صَنْعَةَ لَبُوْسٍ لَّكُمْ لِتُحْصِنَكُمْ مِّنْ بَأْسِكُمْ فَهَلْ أَنْتُمْ شَاكِرُوْنَ-(الأنبياء ৮০)-

‘আর আমরা তাকে তোমাদের জন্য বর্ম নির্মাণ কৌশল শিক্ষা দিয়েছিলাম, যাতে তা যুদ্ধের সময় তোমাদেরকে রক্ষা করে। অতএব তোমরা কি কৃতজ্ঞ হবে? (আম্বিয়া ২১/৮০)

ইতিহাস থেকে জানা যায় যে, ভারতবর্ষের বাদশাহ আওরঙ্গযেব (১৬৫৮-১৭০৭ খৃ:) নিজ হাতে টুপী সেলাই করে তা বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে কিছুই নিতেন না। বস্ত্ততঃ নবী-রাসূলগণই ছিলেন সকল উন্নত চরিত্রের পথিকৃৎ।

৭. আল্লাহ পাক দাঊদকে নবুঅত দান করেন এবং তাকে এলাহী কিতাব ‘যবূর’ দান করে কিতাবধারী রাসূলের মর্যাদায় অভিষিক্ত করেন। যেমন তিনি বলেন, -وَآتَيْنَا دَاوُودَ زَبُوْراً ‘আমরা দাঊদকে ‘যবূর’ প্রদান করেছিলাম’ (নিসা ৪/১৬৩)। হযরত দাঊদকে যে আল্লাহ অতুলনীয় সাম্রাজ্য দান করছিলেন, সেটা যেন যবূরের ভবিষ্যদ্বাণীরই বাস্তব রূপ। কেননা যবূরে আল্লাহ তাঁর সৎকর্মশীল বান্দাদেরকে পৃথিবীর অধিকারী হওয়ার সুসংবাদ দিয়েছেন। যেমন আল্লাহ বলেন,

وَلَقَدْ كَتَبْنَا فِي الزَّبُوْرِ مِنْ بَعْدِ الذِّكْرِ أَنَّ الْأَرْضَ يَرِثُهَا عِبَادِيَ الصَّالِحُوْنَ-(الأنبياء ১০৫)-

‘আমরা বিভিন্ন উপদেশের পর যবূরে একথা লিখে দিয়েছি যে, আমার সৎকর্মশীল বান্দাগণ অবশেষে পৃথিবীর উত্তরাধিকারী হবে’ (আম্বিয়া ২১/১০৫)

sourse : wikipedia

https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%A6%E0%A6%BE%E0%A6%89%E0%A6%A6_(%E0%A6%A8%E0%A6%AC%E0%A7%80)

https://www.hadithbd.com/books/detail/?book=15&chapter=4446

https://www.hadithbd.com/books/detail/?book=15&chapter=4445

https://www.prothomalo.com/religion/islam/becajximkr

What's Your Reaction?

Like Like 0
Dislike Dislike 0
Love Love 0
Funny Funny 0
Angry Angry 0
Sad Sad 0
Wow Wow 0