স্টিফেন হকিং এর জীবনী-biography of stephen hawking
স্টিফেন হকিং

স্টিফেন হকিং : সময়ের জীবনী লিখেছিলেন যিনি
জন্ম ও শৈশব
তার বাবা-মা দুজনেই অক্সফোর্ডে পড়াশোনা করতেন, কিন্তু তখন তাদের দেখা হয়নি। আমরা অনেক সময় যুদ্ধকালীন সময়ের রোমান্সের গল্প পড়ি। তাদের গল্পটা বুঝি অনেকটা সেরকমই। পড়াশোনা শেষ করার পর, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবার কিছু সময় পর লন্ডনে তাদের দেখা হয়েছিলো। চারিদিকে জার্মান বোমা পড়ছে, এমন একটা সময়ে মা ইসোবেলের গর্ভে এলেন স্টিফেন হকিং। তার জন্ম হয়েছিলো অক্সফোর্ডেই, ১৯৪২ সালের ৮ই জানুয়ারি। জন্মের আগেই গর্ভবতী মা লন্ডন ছেড়ে অক্সফোর্ডে চলে এসেছিলেন, কারণ লন্ডনে তখন প্রায়ই সাইরেন বাজে; “বোমারু বিমান আসছে”- সেই সাইরেন।
মেধাবী পরিবারেই জন্ম হয়েছিলো তার, এবং মা-বাবা ছেলেমেয়ের পড়াশোনার দিকে বেশ মনযোগও দিয়েছিলেন। প্রাইমারি স্কুলে অনেকদিন পার করার পরেও হকিং পড়তে পারতেন না, এজন্য তিনি স্কুলকেই দোষ দিয়েছেন। অবশ্য সেটা কেটে গিয়েছিলো কয়েক বছরের মধ্যেই, ইন্টারমিডিয়েটও পাশ করে ফেলেছিলেন অন্যদের চেয়ে এক বছর আগেই, প্রধান শিক্ষকের বিশেষ অনুমতি নিয়ে।
জন্ম |
১৯৪২ সালের ৮ই জানুয়ারি |
শিক্ষা |
সেন্ট আলবান্স স্কুল |
কর্মক্ষেত্র |
সাধারণ আপেক্ষিকতা, কোয়ান্টাম মহাকর্ষ |
মৃত্যু |
১৪ মার্চ ২০১৮ (বয়স ৭৬) , ক্যামব্রিজ, যুক্তরাজ্য। |
অক্সফোর্ডে পড়াশোনা
১৯৫৯ সাল। হকিং এর বয়স ১৭।
আগেই বলেছি, তার বাবা-মা অক্সফোর্ডে পড়েছিলেন। ইউরোপ-আমেরিকাতে একটা জিনিস খুব বেশি চলে। বাবা-মা চায়, তাদের সন্তান তাদেরই ইউনিভার্সিটিতে পড়ুক; তারা যে হাউজে থাকতেন, সেই হাউজেরই সদস্য হোক। নিজ নিজ হাউজের জন্য অনেকে অনেক অনুদানও দেয়।
বাবা চাইলেন, “তুমি আমার ছেলে, তুমি আমার মত ডাক্তারি পড়বে”।
ছেলে বললো, “গণিত পড়বো”।
বাবা বললেন, “গণিত পড়লে খাবে কী? তাছাড়া তুমি অক্সফোর্ডে পড়বে, এটা নিয়ে কোনো ওজর আপত্তি শোনা হবে না। অক্সফোর্ডে গণিত বলে কোনো বিষয় নাই”। হুম, ঐ আমলে অক্সফোর্ডে ম্যাথামেটিক্স ছিলো না।ছেলে বললো, “আচ্ছা, অক্সফোর্ডে পড়বো, কিন্তু ডাক্তারি পড়বো না। ফিজিক্স-কেমিস্ট্রি পড়বো।
এটা নিয়ে কোনো ওজর আপত্তি শোনা হবে না।” —- এগুলো সম্পূর্ণ আমার মস্তিষ্কপ্রসূত কাল্পনিক ডায়লগ, কিন্তু কাহিনী সত্য!
যাই হোক, তরুণ হকিং সাহেব “আইনস্টাইন” ডাকনামটার নামকরণের সার্থকতা যাচাই করে যাচ্ছিলেন অক্সফোর্ডে এসেও। পড়াশোনা নাকি পানিভাত ছিলো তার কাছে। তাকে পদার্থবিজ্ঞানে একাডেমিক কোনো সমস্যা দিলেই সমাধান হাজির- এটা তার তৎকালীন প্রফেসর রবার্ট বারম্যানের মন্তব্য। এজন্য পড়াশোনার দিকে তার ধ্যান ছিলো খুবই কম। অনার্স জীবনের তৃতীয় বছরে পড়াশোনা বলতে প্রায় বাদ দিয়ে টোঁটো করে ঘুরে বেড়াতে লাগলেন, বন্ধু বান্ধব বানানোর দিকে মনযোগ দিলেন। চতুর্থ বছরে, ফাইন্যাল পরীক্ষার ফলাফল এমন হলো যে ফার্স্ট ক্লাস নাকি সেকেন্ড ক্লাস- সেটা নির্ধারণের জন্য ভাইভা প্রয়োজন হলো। অমনযোগী ছাত্র হিসেবে ততদিনে তিনি বেশ সুনাম(!) কামিয়েছেন। ভাইভাতে গিয়ে তিনি সেটার সুযোগ নিলেন। ভবিষ্যত পরিকল্পনা জিজ্ঞেস করার পর তিনি যা বলেছিলেন, সেটা সরাসরি অনুবাদ করে তুলে দিচ্ছি, “যদি আমাকে ফার্স্ট ক্লাস দেন, তাহলে কেম্ব্রিজে চলে যাবো, ওখানে গিয়ে মহাবিশ্বতত্ত্ব পড়বো।
কেম্ব্রিজে পিএইচডির দিনগুলি
বিখ্যাত জ্যোতির্বিদ ফ্রেড হয়েল তখন কেম্ব্রিজে পড়াচ্ছেন। হকিং চেয়েছিলেন, তার সাথে কাজ করতে। কিন্তু তাকে সুপারভাইজার হিসেবে পাওয়া গেলো না। হয়েল অনেক ব্যস্ত ছিলেন, এটা একটা কারণ হতে পারে। যারা হয়েলকে চেনেন না, তাদের উদ্দেশ্যে বলছি – আমরা এখন জানি যে, আমরা সবাই নক্ষত্রের সন্তান। আমাদের শরীরের প্রত্যেকটি অণু পরমাণু কোনো একটা নক্ষত্রের হৃদয়ে তৈরি হয়েছে। কার্ল সেগান এই ধারণাটাকে সবার মধ্যে জনপ্রিয় করে দিয়েছিলেন “we are star stuff” উক্তি দিয়ে। কিন্তু সেই একাডেমিক গবেষণা করেছিলেন ফ্রেড হয়েল এবং তার সহযোগী গবেষকরা (মার্গারেট বারবিজ, জেফ্রি বারবিজ, আর উইলিয়াম ফাওলার)। B2FH paper লিখে গুগল করলেই আর্টিকেলটা পেয়ে যাবেন। এমন একটা গবেষকের সাথে কাজ করতে না পেরে ভীষণ মন খারাপ হয়েছিলো তার। তবে, তিনি যাকে পেয়েছিলেন, সেটা হকিং এর জন্য শাপে বর হবে একদিন। তার সুপারভাইজার ছিলো ডেনিস সিয়ামা, আধুনিক মহাবিশ্বতত্ত্বের জনকদের একজন। তার সাথে কাজ করতে গিয়ে, প্রথমদিকে নিজের গণিতজ্ঞান নিয়েও ঠোকর খাচ্ছিলেন হকিং। আগেই বলেছি, তিনি অক্সফোর্ডে ছিলেন, আর সেখানে গণিতের জন্য উৎসর্গীকৃত বিভাগও ছিলো না তখন। তবু সাধারণ আপেক্ষিকতা আর মহাবিশ্বতত্ত্ব নিয়ে কাজ শিখে নিতে লাগলেন তিনি। ডেনিসও খুব ধৈর্য নিয়ে তার সাথে আলোচনা করতেন।
মোটর নিউরন রোগ বা ALS
পেশী নাড়ানো যায় না, আস্তে আস্তে শরীর দুর্বল হতে থাকে, শারীরিকভাবে অথর্ব হয়ে পড়ে রোগী, কথা বলা অসম্ভব হয়ে যায়, খাবার গেলা যায় না, আস্তে আস্তে নিঃশ্বাসও আটকে যেতে থাকে – কারণ এই রোগে পেশী নাড়ানোর জন্য যে নিউরনগুলো দায়ী, সেগুলোর মৃত্যু ঘটতে থাকে আস্তে আস্তে। রোগের নাম মোটর নিউরন রোগ বা Amyotrophic lateral sclerosis (ALS). এই রোগে আক্রান্ত রোগী মারা পড়ে কয়েক বছরের মধ্যেই। আর সেই রোগে স্টিফেন হকিং আক্রান্ত হলেন মাত্র ২১ বছর বয়সে, ১৯৬৩ সালে। ডাক্তাররা বললো, হাতে আর দু বছরের মত সময় আছে। কোনো কোনো ডাক্তার বললো, ২৫ বছর পর্যন্ত বাঁচবেন না হকিং।
এটা জানার পর মানসিকভাবেও ভেঙে পড়লেন তিনি, পড়াশোনা ছেড়ে দিতে চাইলেন। ডাক্তাররা বললো, “ব্যস্ত থাকো, কিছু একটা নিয়ে লেগে থাকো। পড়াশোনাটা ছেড়ো না”। তার সুপারভাইজার ডেনিস সিয়ামাও বললেন, “এসো, আমি জানি, তুমি পারবে”। সবচেয়ে বড় খুঁটি হয়ে পাশে দাঁড়ালো সদ্য প্রেমিকা জেইন ওয়াইল্ড। বললো, “চলো, আমরা বিয়ে করে ফেলি”।
হকিং সেই সময়ের কথা রোমন্থন করে বলেছিলেন, “আমাদের বাগদান (এঙ্গেইজমেন্ট) আমাকে বেঁচে থাকার রসদ যুগিয়েছিলো”। ১৯৬৫ সালে দুজন বিয়েও করে ফেললেন।
হাবিশ্বতত্ত্ব নিয়ে গবেষণা
ঠিকমত কলমটাও ধরতে পারতেন না তিনি, যখন আবার গবেষণায় ফিরেছিলেন। তখনো তার ডক্টরাল থিসিসের বিষয় ঠিক হয়নি। তখন তিনি একটা বিষয়ে আগ্রহ খুঁজে পেলেন। রজার পেনরোজ তখন বেশ বিখ্যাত গবেষক ছিলেন। কৃষ্ণগহ্বর নিয়ে তিনি চমৎকার কিছু কাজ করেছিলেন। বলেছিলেন, কৃষ্ণগহ্বরের কেন্দ্রে নাকি স্থান-কালের অনন্যতা আছে। সহজ ভাষায়, এটার কেন্দ্রে গিয়ে স্থান আর কাল এমনভাবে অবস্থান করে যেন এটা অসীম, কিন্তু অত্যন্ত ক্ষুদ্র একটা জায়গায়। অর্থাৎ, সেখানে সময় যেন থেমে আছে মহাকর্ষের টানে, আর একই টানে স্থানও বেঁকে গিয়ে ক্ষুদ্র হয়ে গেছে ধারণার অতীত একটা অবস্থানে। হকিং ভাবলেন, একই কাহিনী যদি গোটা মহাবিশ্বের ক্ষেত্রে কাজে লাগানো যায়, তাহলে কেমন হয়?
জর্জ লেমিত্রে আর এডুইন হাবলের কল্যাণে বৃহৎ বিস্ফোরণ তত্ত্ব ততদিনে অনেক জনপ্রিয়। আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতা তত্ত্বের জনপ্রিয়তার কথা না হয় আর নাই বললাম। এগুলোকে ভিত্তি হিসেবে ধরে তিনি তার থিসিস লেখা শুরু করলেন ১৯৬৫ সালে, Properties of extending universe অথবা “প্রসারণশীল মহাবিশ্বের বৈশিষ্ট্যগুলো”। ১৯৬৬ সালে সেটাকে অনুমোদন দেয়া হলো। পেনরোজ স্বয়ং তার থিসিস কমিটিতে ছিলেন। আমার মনে হয় না, ডেনিস তার পাশে খুঁটি হয়ে দাঁড়িয়ে না থাকলে এত কিছু সম্ভব হতো। পিএইচডি জীবনে সুপারভাইজারই সবচেয়ে বড় কথা। ঐ অবস্থায় সুপারভাইজার যদি বলতেন, “আমি কোনো সাহায্য করতে পারবো না”, তাহলে সেই থিসিস কখনো আলোর মুখ দেখতো না।
কৃষ্ণগহ্বর নিয়ে গবেষণা + হকিং বিকিরণ + কৃষ্ণগহ্বর তথ্য বৈপরীত্য
পিএইচডি শেষে তিনি কেম্ব্রিজে পেনরোজের সাথেই কাজ শুরু করলেন। ১৯৭০ সালে পেনরোজ এবং তিনি মিলে প্রমাণ করে দেখালেন যে আমাদের এই ব্রহ্মাণ্ড কোনো এক অনন্যতা থেকেই শুরু হয়েছে। একই বছরে তিনি কৃষ্ণগহ্বর নিয়েও আরো বিস্তৃত কাজ শুরু করলেন। তিনি প্রস্তাব করলেন যে, কৃষ্ণগহ্বরের ঘটনাদিগন্ত বা ইভেন্ট হরাইজন (যেখানে ঢুকে গেলে আর মুক্তি নেই, গহ্বর আপনাকে শুষে নেবেই, সেটা) সময়ের সাথে ছোটো হয় না। অন্য গবেষকদের সাথে মিলে কৃষ্ণগহ্বরের ক্রিয়াকৌশল নিয়ে চারটা নীতি উত্থাপন করলেন ১৯৭০ সালে। ঘটনা দিগন্ত ছোটো না হওয়ার বৈশিষ্ট্যটা রাখলেন দ্বিতীয়তে। ১৯৭৩ সালে জর্জ এলিসের সাথে যুগ্মলেখক হিসেবে তিনি প্রথম বই প্রকাশ করলেন। নাম – The Large Scale Structure of Space-Time.
একই বছরে তিনি মহাবিরক্ত হয়ে খেয়াল করলেন যে কৃষ্ণগহ্বর নিয়ে তার দেয়া দ্বিতীয় নীতিটা ভুল। কারণ কিছু রাশিয়ান গবেষকরা দেখিয়েছিলো যে হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তা নীতি অনুসারে ঘূর্ণনরত কৃষ্ণগহ্বর থেকে কণা নির্গত হবার কথা। হকিং গবেষণা করে দেখালেন যে, কাহিনী সত্য। ১৯৭৪ সালে তিনি বললেন, “কৃষ্ণগহ্বর থেকে বিকিরণ হয়, এবং এটা ততদিন চলবে, যতদিন এটার শক্তি শেষ না হয়, যতদিন এটা বিকিরণ করতে করতে উবে না যায়।” এই বিকিরণকে এখন হকিং বিকিরণ বা Hawking Radiation বলা হয়।
১৯৮১ সালে তিনি প্রস্তাব করেন যে, বিকিরণ করতে করতে যখন কৃষ্ণগহ্বর উবে যায়, তখন এর ভেতরের তথ্যগুলোও হারিয়ে যায়। কিন্তু তথ্য তো কখনো হারিয়ে যায় না। তাই, এটা নিয়ে পদার্থবিজ্ঞান জগতে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া (পড়ুন, যুক্তিপূর্ণ আলোচনা-সমালোচনা) শুরু হয়ে যায়।
কৃষ্ণগহ্বর নিয়ে গবেষণা + হকিং বিকিরণ + কৃষ্ণগহ্বর তথ্য বৈপরীত্য
পিএইচডি শেষে তিনি কেম্ব্রিজে পেনরোজের সাথেই কাজ শুরু করলেন। ১৯৭০ সালে পেনরোজ এবং তিনি মিলে প্রমাণ করে দেখালেন যে আমাদের এই ব্রহ্মাণ্ড কোনো এক অনন্যতা থেকেই শুরু হয়েছে। একই বছরে তিনি কৃষ্ণগহ্বর নিয়েও আরো বিস্তৃত কাজ শুরু করলেন। তিনি প্রস্তাব করলেন যে, কৃষ্ণগহ্বরের ঘটনাদিগন্ত বা ইভেন্ট হরাইজন (যেখানে ঢুকে গেলে আর মুক্তি নেই, গহ্বর আপনাকে শুষে নেবেই, সেটা) সময়ের সাথে ছোটো হয় না। অন্য গবেষকদের সাথে মিলে কৃষ্ণগহ্বরের ক্রিয়াকৌশল নিয়ে চারটা নীতি উত্থাপন করলেন ১৯৭০ সালে। ঘটনা দিগন্ত ছোটো না হওয়ার বৈশিষ্ট্যটা রাখলেন দ্বিতীয়তে। ১৯৭৩ সালে জর্জ এলিসের সাথে যুগ্মলেখক হিসেবে তিনি প্রথম বই প্রকাশ করলেন। নাম – The Large Scale Structure of Space-Time.
একই বছরে তিনি মহাবিরক্ত হয়ে খেয়াল করলেন যে কৃষ্ণগহ্বর নিয়ে তার দেয়া দ্বিতীয় নীতিটা ভুল। কারণ কিছু রাশিয়ান গবেষকরা দেখিয়েছিলো যে হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তা নীতি অনুসারে ঘূর্ণনরত কৃষ্ণগহ্বর থেকে কণা নির্গত হবার কথা। হকিং গবেষণা করে দেখালেন যে, কাহিনী সত্য। ১৯৭৪ সালে তিনি বললেন, “কৃষ্ণগহ্বর থেকে বিকিরণ হয়, এবং এটা ততদিন চলবে, যতদিন এটার শক্তি শেষ না হয়, যতদিন এটা বিকিরণ করতে করতে উবে না যায়।” এই বিকিরণকে এখন হকিং বিকিরণ বা Hawking Radiation বলা হয়।
১৯৮১ সালে তিনি প্রস্তাব করেন যে, বিকিরণ করতে করতে যখন কৃষ্ণগহ্বর উবে যায়, তখন এর ভেতরের তথ্যগুলোও হারিয়ে যায়। কিন্তু তথ্য তো কখনো হারিয়ে যায় না। তাই, এটা নিয়ে পদার্থবিজ্ঞান জগতে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া (পড়ুন, যুক্তিপূর্ণ আলোচনা-সমালোচনা) শুরু হয়ে যায়।
ডিভোর্স, বিয়ে, এবং ডিভোর্স
বলতে গেলে ঐ সময়েই তিনি রাতারাতি সুপারস্টার হয়ে যান। আর হ্যাঁ, টাকাপয়সার সমস্যা আর কোনোদিন দেখতে হয়নি তাকে বা তার পরিবারকে। তবে ব্যক্তিগত জীবনে সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। দাম্পত্য জীবনে বেশ অসুখী ছিলেন তিনি। তাদের মধ্যে ভালোবাসা ছিলো ঠিকই, কিন্তু একসাথে থাকা আর সম্ভব হচ্ছিলো না।
১৯৯০ সালে, হকিং তার এক নার্সের সাথে থাকা শুরু করেন। ১৯৯৫ সালে জেইনের সাথে তার ডিভোর্স হয়ে যায়। আর সেই নার্সকে বিয়ে করেন হকিং। ২০০৬ সালের দিকে সেই সম্পর্কেরও ইতি টানেন তিনি। জেইনের সাথে পুনরায় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলেন। জেইন আগে একটা বই লিখেছিলেন, Music to Move the Stars. ২০০৭ সালে সেটার একটা পরিমার্জিত রুপ বের করেন, Travelling to Infinity: My Life with Stephen.
স্বাস্থ্যের অবনতি
আস্তে আস্তে যে আঙুল দিয়ে ক্লিকার ব্যবহার করতেন, সেটাও অসাড় হয়ে যেতে লাগলো। ২০০৮ সালের দিকে, তার গ্র্যাজুয়েট এসিস্ট্যান্ট চশমায় ইনফ্রারেড লাগিয়ে গালের পেশীর নড়াচড়া দিয়ে যোগাযোগ করার ব্যবস্থা করলো। কিন্তু ধীরে ধীরে সেটাও দুর্বল হয়ে যেতে লাগলো। ২০১১ এর দিকে, মিনিটে ১৫টার জায়গায় ২টা শব্দে এসে ঠেকলো তার যোগাযোগের গতি। তিনি ইন্টেলকে চিঠি লিখলেন, ওরা কোনো সাহায্য করতে পারবে কিনা জানতে চেয়ে। ইন্টেল একটা টিম পাঠালো, যাতে কম্পিউটার-হিউম্যান ইন্টারএকশন ডিজাইনার ছিলেন পিট ডেনম্যান। কাহিনীটা অদ্ভুত!
পিট ডেনম্যান নিজেও হুইলচেয়ার ব্যবহার করতেন। ঘাড় ভেঙে যাওয়ার পর যখন তাকে হুইলচেয়ারে আটকে পড়তে হয়েছিলো, তখন তার মা তাকে “কালের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস” বইটা দিয়ে বলেছিলেন, “হুইলচেয়ারে বসেও মানুষ চমৎকার সব কাজ করতে পারে”। স্টিফেন হকিং ছিলেন পিট ডেনম্যানের প্রেরণা; আর তার প্রেরণার মানুষটা তাদের সাথে ৩০টা শব্দ বলতে ২০ মিনিট নিয়েছিলেন।
স্টিফেন হকিং এর ধর্মবিশ্বাস
আইনস্টাইনের ধর্মবিশ্বাস নিয়ে অনেকে টানাহ্যাঁচড়া করে। আইনস্টাইন প্রচলিত কোনো ধর্মের ঈশ্বরে বিশ্বাস না করলেও বারংবার মহাবিশ্বের ঐকতানকে ঈশ্বরের নাম দিয়ে উক্তি দিয়েছেন। হকিং এর ধর্মবিশ্বাস নিয়ে টানাটানি করার কোনো সুযোগ নেই। অবশ্য সেটা সাম্প্রতিক সময়ে। একসময় তিনিও উদাহরণ দিতে গিয়ে ঈশ্বর শব্দটা ব্যবহার করেছেন। কালের সংক্ষিপ্ত ইতিহাসে তিনি লিখেছেন, “যদি কোনোদিন আমরা একটা পূর্ণাঙ্গ তত্ত্ব আবিষ্কার করতে পারি, সেটা হবে মানুষের যুক্তিক্ষমতার সর্বোচ্চ বিজয়- আর সেদিন আমরা ঈশ্বরের মন বুঝতে পারবো”। কেউ টানাটানি করতে চাইলে এই লাইনটা নিয়ে করতে পারে; যদিও একই বইতে তিনি লিখে দিয়েছিলেন, “মহাবিশ্বের উৎপত্তি বর্ণনা করার জন্য ঈশ্বরের অস্তিত্বের প্রয়োজন নেই”। ২০১৪ সালে এটাকে আরো খোলাসা করে বলেছেন, “ঈশ্বরের মন বুঝতে পারা বলতে আমি বুঝিয়েছি, যদি কোনো ঈশ্বর থেকে থাকে–যা আসলে নেই–তাহলে সেই ঈশ্বরের যা যা জানার কথা, আমরা তাই জানবো। আমি নাস্তিক’।
স্টিফেন হকিং এর জীবনী
অধ্যাপক স্টিফেন হকিং শূন্য মাধ্যাকর্ষণ বিমানের সময় ওজনহীনতার স্বাধীনতা অনুভব করেন। (চিত্রের ক্রেডিট: জেরো-জি)
2014 সালে, হকিং তার তত্ত্বটি সংশোধন করেছিলেন, এমনকি লিখেছিলেন যে "কোনও ব্ল্যাক হোল নেই" - কমপক্ষে, যেভাবে মহাজাগতিকবিদরা traditionতিহ্যগতভাবে তাদের বোঝেন। তাঁর তত্ত্বটি একটি "ইভেন্ট দিগন্তের" অস্তিত্বকে সরিয়ে দেয়, যেখানে কোনও কিছুই এড়াতে পারে না। পরিবর্তে, তিনি প্রস্তাব করেছিলেন যে এমন একটি "আপাত দিগন্ত" থাকবে যা কৃষ্ণগহ্বরের মধ্যে কোয়ান্টাম পরিবর্তন অনুসারে পরিবর্তিত হবে। তবে তত্ত্বটি বিতর্কিত থেকে যায়। [জিনিয়াসের প্রতিকৃতি: স্টিফেন হকিং প্রদর্শনী ফটোগুলি]
হকিংও প্রস্তাব দিয়েছিলেন যে মহাবিশ্বের নিজের কোনও সীমানা নেই, অনেকটা পৃথিবীর মতো। যদিও গ্রহটি সীমাবদ্ধ তবে এর চারপাশে কেউই (এবং মহাবিশ্বের মাধ্যমে) অনন্তভাবে ঘুরে বেড়াতে পারে, এমন কোনও প্রাচীরের মুখোমুখি হয় না যা "শেষ" হিসাবে বর্ণনা করা হয়।
হকিংয়ের বই
হকিং একজন জনপ্রিয় লেখক ছিলেন। তাঁর প্রথম বই "আ ব্রিফ হিস্ট্রি অফ টাইম" (দশম বার্ষিকী সংস্করণ: বান্টাম, 1998) প্রথম 1988 সালে প্রকাশিত হয়েছিল এবং আন্তর্জাতিক সেরা বিক্রেতার হয়ে ওঠে। এতে হকিং ল্যাপারসনের কাছে মহাবিশ্বের জন্ম ও মৃত্যুর বিষয়ে প্রশ্ন তুলে ধরার লক্ষ্য রেখেছিলেন।
হকিং ননসিস্টিস্টদের লক্ষ্য করে অন্যান্য নন-ফিকশন বই লিখতে লাগলেন। এর মধ্যে রয়েছে "এ ব্রাইফার হিস্ট্রি অফ টাইম," "দ্য ইউনিভার্স ইন নটশেল," "দ্য গ্র্যান্ড ডিজাইন" এবং "অন কাঁধের কাঁধগুলি।
মৃত্যু
তিনি জন্মেছিলেন গ্যালিলিওর মৃত্যুবার্ষিকীতে। আর মৃত্যুবরণ করলেন আইনস্টাইনের জন্মবার্ষিকীতে। ২০১৮ সালের ১৪ই মার্চ, স্টিফেন হকিং ইংল্যান্ডের কেম্ব্রিজে মৃত্যুবরণ করেন।
What's Your Reaction?






