রোনাল্ড আরাউহো

রোনাল্ড ফেদেরিকো আরাউজো দা সিলভা (Ronald Federico Araújo da Silva) একজন উরুগুয়ান পেশাদার ফুটবলার, যিনি লা লিগার ক্লাব এফসি বার্সেলোনা এবং উরুগুয়ে জাতীয় দলের হয়ে সেন্টার-ব্যাক হিসেবে খেলেন।

ব্যক্তিগত তথ্য

• জন্ম তারিখ: ৭ মার্চ ১৯৯৯

• জন্মস্থান: রিভেরা, উরুগুয়ে

• উচ্চতা: ১.৮৮ মিটার

• পজিশন: সেন্টার-ব্যাক (প্রয়োজনে রাইট-ব্যাক হিসেবেও খেলেন)

• বর্তমান ক্লাব: এফসি বার্সেলোনা (জার্সি নম্বর ৪)

• জাতীয়তা: উরুগুয়ে

ক্লাব ক্যারিয়ার

আরাউজো তার পেশাদার ক্যারিয়ার শুরু করেন উরুগুয়ের রেন্তিস্তাস ক্লাবে। ২০১৮ সালে তিনি এফসি বার্সেলোনার 'বি' দলে যোগ দেন এবং ২০২০ সালে মূল দলে উন্নীত হন। ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে তিনি ক্লাবের সাথে তার চুক্তি ২০৩১ সাল পর্যন্ত নবায়ন করেন, যা তার ভবিষ্যৎ নিয়ে চলমান জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটায় ।

ক্লাব ক্যারিয়ার

রেন্তিস্তাস

ব্রাজিল-উরুগুয়ান পিতা ও ব্রাজিলিয়ান মায়ের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন রোনাল্ড আরাউজো, উরুগুয়ের রিভেরা শহরে, যা ব্রাজিল সীমান্তের কাছে অবস্থিত। তিনি রিভেরার স্থানীয় ক্লাব হুরাকান থেকে রেন্তিস্তাস ক্লাবে যোগ দেন।

আরাউজো ২০১৬ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর রেন্তিস্তাসের হয়ে সিনিয়র দলে অভিষেক করেন, সেগুন্দা ডিভিশনের একটি অ্যাওয়ে ম্যাচে তাকুয়ারেম্বোর বিপক্ষে ১–০ গোলের জয়ে ম্যাচের শেষদিকে বদলি খেলোয়াড় হিসেবে মাঠে নামেন।

২০১৬ সালের ৯ ডিসেম্বর তিনি তার প্রথম সিনিয়র গোলটি করেন, সেন্ট্রাল এস্পানিওলের বিপক্ষে ঘরের মাঠে ২–২ গোলে ড্র হওয়া ম্যাচে সমতাসূচক গোলটি করেন।

২০১৭ মৌসুমে তিনি নিয়মিত মূল একাদশে খেলতে শুরু করেন এবং ওই বছরের ১৭ জুন ভিলা এস্পানিওলার বিপক্ষে একটি অ্যাওয়ে ম্যাচে হ্যাটট্রিক করেন, ম্যাচটি ৩–২ গোলে রেন্তিস্তাস জয় লাভ করে।

রেন্তিস্তাসেই আরাউজো তার খেলোয়াড়ি অবস্থান পরিবর্তন করেন—একজন ফরোয়ার্ড থেকে ডিফেন্ডারে রূপান্তরিত

বস্টন রিভার
২০১৭ সালের ২৮ জুলাই, রোনাল্ড আরাউজো উরুগুয়ের প্রিমেরা ডিভিশনের ক্লাব বস্টন রিভার-এ যোগ দেন।
তিনি এই লিগে প্রথম ম্যাচ খেলেন ২০১৭ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর, এল টাঙ্কে সিসলির বিপক্ষে ১–০ গোলের ঘরের মাঠের জয়ে, ম্যাচের শেষদিকে ম্যাক্সিমিলিয়ানো সিগালেসের পরিবর্তে মাঠে নেমে।

বার্সেলোনা
২০১৮ সালের ২৯ আগস্ট, আরাউজো এফসি বার্সেলোনা-র সাথে পাঁচ বছরের চুক্তি করেন, যার স্থানান্তরমূল্য ছিল ১.৭ মিলিয়ন ইউরো এবং আরও ৩.৫ মিলিয়ন ইউরো ভেরিয়েবলস হিসেবে নির্ধারিত হয়। তাকে প্রথমে বার্সার রিজার্ভ দল সেগুন্দা ডিভিশন বি-তে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর, তিনি প্রথমবারের মতো বার্সেলোনার মূল দলের এবং লা লিগার হয়ে অভিষেক করেন, সেভিয়ার বিপক্ষে ৪–০ গোলে ঘরের মাঠে জয়লাভের ম্যাচে ৭৩তম মিনিটে জঁ-ক্লেয়ার তোডিবোর পরিবর্তে মাঠে নামেন। তবে ৮৬তম মিনিটে হাভিয়ের হের্নান্দেজকে ফাউল করার কারণে সরাসরি লাল কার্ড পান।

২০২০–২১ মৌসুমে, আরাউজো বার্সেলোনার মূল দলে উন্নীত হন এবং তাকে জার্সি নম্বর ৪ প্রদান করা হয়, যা এর আগে ইভান রাকিটিচ পরতেন।
২০২০ সালের ১৯ ডিসেম্বর, তিনি লা লিগায় বার্সেলোনার হয়ে প্রথম গোল করেন, ভ্যালেন্সিয়ার বিপক্ষে ঘরের মাঠে ২–২ গোলে ড্র হওয়া ম্যাচে।

২০২২ সালের ২০ মার্চ, আরাউজো তার প্রথম এল ক্লাসিকো গোল করেন, সান্তিয়াগো বার্নাবেউতে রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে ৪–০ গোলে জয়ী ম্যাচে উসমান ডেম্বেলের কর্নার থেকে হেড করে গোলটি করেন।

২০২২–২৩ মৌসুমে, প্রথম ২১টি লিগ ম্যাচে তিনি আন্দ্রেয়াস ক্রিস্টেনসেন এবং মাঝে মাঝে জুল কুন্দের সঙ্গে ডিফেন্সিভ জুটি গঠন করেন, যার ফলে বার্সেলোনা ইউরোপের শীর্ষ ৫ লিগের মধ্যে সর্বাধিক (১৬টি) ক্লিন শিট রাখতে সক্ষম হয়।

২০২৩ সালের ২১ জুলাই, বার্সেলোনা আরাউজোকে দলের তৃতীয় অধিনায়ক হিসেবে ঘোষণা করে।
২০২৩ সালের ৪ নভেম্বর, তিনি ২০২৩–২৪ মৌসুমে তার প্রথম গোলটি করেন, রিয়াল সোসিয়েদাদের বিপক্ষে ৯২তম মিনিটে স্টপেজ টাইমে গোল করে দলকে ১–০ ব্যবধানে জয় এনে দেন।

২০২৪ সালের ১৬ এপ্রিল, চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার-ফাইনালের দ্বিতীয় লেগে প্যারিস সেন্ট-জার্মেইনের বিপক্ষে ম্যাচের প্রথমার্ধেই তিনি ব্র্যাডলি বারকোলাকে ফাউল করে সরাসরি লাল কার্ড পান। ওই ম্যাচে বার্সেলোনা দুই গোলে এগিয়ে থাকলেও এরপর খেলার গতিপথ পিএসজির পক্ষে চলে যায় এবং শেষ পর্যন্ত বার্সেলোনা ৪–১ গোলে হেরে, মোট ৬–৪ ব্যবধানে বাদ পড়ে।

২০২৫ সালের ২৩ জানুয়ারি, আরাউজো তার চুক্তি নবায়ন করে ২০৩১ সাল পর্যন্ত বার্সেলোনায় থাকার সিদ্ধান্ত নেন।

 আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার

উরুগুয়ে জাতীয় দলের হয়ে আরাউজো ২১টি ম্যাচে অংশগ্রহণ করেছেন এবং ২টি গোল করেছেন । তিনি ২০২০ সালে জাতীয় দলে অভিষেক করেন এবং তখন থেকে দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

আন্ডার-১৮ এবং আন্ডার-২০ স্তরে উরুগুয়ের প্রতিনিধিত্ব করার পর, রোনাল্ড আরাউজো ২০২০ সালের ৫ অক্টোবর প্রথমবারের মতো সিনিয়র জাতীয় দলে ডাক পান, ২০২২ ফিফা বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে চিলি এবং ইকুয়েডরের বিপক্ষে দুটি ম্যাচের জন্য।

৮ দিন পরে, তিনি জাতীয় দলের হয়ে পূর্ণ অভিষেক করেন, যেখানে উরুগুয়ে ইকুয়েডরের বিপক্ষে ৪–২ গোলে পরাজিত হয় এবং আরাউজো প্রথম একাদশে ছিলেন।

২০২১ সালের জুনে, ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত কোপা আমেরিকা ২০২১-এর জন্য আরাউজো উরুগুয়ের চূড়ান্ত ২৬ সদস্যের স্কোয়াডে অন্তর্ভুক্ত হন। তবে তিনি চোটের কারণে টুর্নামেন্টে উরুগুয়ের পাঁচটি ম্যাচের একটিতেও অংশগ্রহণ করতে পারেননি।

আরও একবার চোটে ভোগা অবস্থাতেই, তিনি ২০২২ ফিফা বিশ্বকাপ স্কোয়াডে অন্তর্ভুক্ত হন, আশায় ছিলেন যে নকআউট পর্বের আগে সুস্থ হয়ে উঠবেন। কিন্তু উরুগুয়ে গ্রুপ পর্বেই বাদ পড়ে, ফলে তিনি বিশ্বকাপে কোনো ম্যাচে খেলেননি।

২০২৩ সালের ১৬ নভেম্বর, আরাউজো জাতীয় দলের হয়ে প্রথম গোলটি করেন আর্জেন্টিনার বিপক্ষে, ২০২৬ ফিফা বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের পঞ্চম রাউন্ডে, বুয়েনোস আইরেসের লা বোম্বোনেরা স্টেডিয়ামে। ম্যাচের ৪১তম মিনিটে ম্যাতিয়াস ভিনার নিচু ক্রস থেকে বল পেয়ে, ডান দিক থেকে শট নিয়ে আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্তিনেজকে পরাস্ত করে বল পাঠান বাঁ দিকের নিচের কোণে।

 খেলার ধরণ

প্রথমে একজন স্ট্রাইকার হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করলেও, ১৭ বছর বয়সে তিনি সেন্টার-ব্যাক পজিশনে রূপান্তরিত হন। তার উচ্চতা, গতি এবং শারীরিক সক্ষমতা তাকে ডিফেন্সে শক্তিশালী করে তোলে। তিনি এক-অন-এক পরিস্থিতিতে দক্ষ এবং সঠিক সময়ে চ্যালেঞ্জ করতে সক্ষম। ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গার ভিনিসিয়াস জুনিয়র তাকে "সবচেয়ে শক্তিশালী এবং দক্ষ ডিফেন্ডার" হিসেবে উল্লেখ করেছেন ।

রোনাল্ড আরাউজো শুরুতে একজন স্ট্রাইকার ছিলেন। তবে তার শারীরিক সক্ষমতা ও গঠন দেখে যুব কোচরা তাকে ১৭ বছর বয়সে সেন্টার-ব্যাকে রূপান্তর করেন।

তিনি মূলত একজন ডান-পায়ের সেন্টার-ব্যাক, কিন্তু প্রয়োজন হলে রাইট-ব্যাক পজিশনেও খেলতে পারেন। বিশেষ করে প্রতিপক্ষের দক্ষ উইঙ্গারদের ঠেকাতে এই পজিশনে তাকে মাঝেমধ্যে ব্যবহার করা হয়।

প্রতিরক্ষামূলক দৃঢ়তা তার অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য। একে-অপরের বিরুদ্ধে দ্বৈরথে (one-on-one duels) তিনি খুবই সফল, এবং সঠিক সময়ে ট্যাকল করার ক্ষমতা রয়েছে তার। তার দ্রুতগতি ও অ্যাথলেটিক গঠন তাকে দ্রুত বলের পেছনে ফিরে আসতে এবং বড় এলাকা কাভার করতে সহায়তা করে, যা তাকে উচ্চ রক্ষাতান্ত্রিক লাইন (high defensive line)-এ একটি অমূল্য সম্পদে পরিণত করেছে।

ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গার ভিনিসিয়ুস জুনিয়র তাকে প্রশংসা করে বলেছেন:

"সে আমার জীবনে দেখা সবচেয়ে শক্তিশালী ডিফেন্ডার। সে খুব শক্তিশালী এবং দারুণ ভালো খেলোয়াড়।"

উচ্চতায় ১.৮৮ মিটার হওয়ায়, আরাউজো বিমানযুদ্ধে (aerial duels) আধিপত্য বিস্তার করেন, উভয় দিকেই—আক্রমণ ও রক্ষণে। সেট-পিস থেকে গোল করার ক্ষেত্রে তিনি একটি বড় হুমকি, কারণ তিনি প্রায়শই প্রতিপক্ষকে লাফিয়ে টপকে যান এবং ক্লাব ও দেশের হয়ে গুরুত্বপূর্ণ গোল করেছেন।

তবে, তার বল কন্ট্রোল ও পাসিং স্কিল নিয়ে মাঝে মাঝে সমালোচনা হয়। উদাহরণস্বরূপ, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ কোয়ার্টার-ফাইনালে লুইস এনরিকে বলেছিলেন যে তিনি তার খেলোয়াড়দের নির্দেশ দিয়েছিলেন আরাউজোর পায়ে বল থাকলে তাকে প্রেস করতে।

আরাউজোর রক্ষণাত্মক সিদ্ধান্তগ্রহণ ক্ষেত্রেও কিছু ঘাটতি আছে। কখন ইন্টারসেপ্ট করতে হবে, আর কখন পজিশন ধরে থাকতে হবে—এই বিষয়ে মাঝে মাঝে ভুল সিদ্ধান্ত নেন, যা তাকে পজিশনিংয়ে সমস্যায় ফেলে।

সাম্প্রতিক খবর

২০২৫ সালের মে মাসে, আরাউজো বার্সেলোনায় তার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে নিশ্চিত করে বলেন, "আমি বার্সেলোনার অধিনায়ক এবং ২০৩১ সাল পর্যন্ত চুক্তিবদ্ধ, তাই আমি ক্লাবে থাকব" ।

sourse: wikipedia

https://en-m-wikipedia-org.translate.goog/wiki/Ronald_Ara%C3%BAjo?_x_tr_sl=en&_x_tr_tl=bn&_x_tr_hl=bn&_x_tr_pto=imgs

https://en.wikipedia.org/wiki/Ronald_Ara%C3%BAjo