রাষ্ট্রবিজ্ঞানে জনক এরিস্টটল এর জীবনী-biography of aristotle

রাষ্ট্রবিজ্ঞানে জনক এরিস্টটল এর জীবনী

May 12, 2025 - 20:44
May 13, 2025 - 12:28
 0  1
রাষ্ট্রবিজ্ঞানে জনক এরিস্টটল এর জীবনী-biography of aristotle

রাষ্ট্রবিজ্ঞানে জনক এরিস্টটল

নাম (Name)

এরিস্টটল (Aristotle)

জন্ম (Born)

খ্রীষ্টপূর্ব ৩৮৪ অব্দে (384 BC)
পিতা/মাতা নিকোম্যাকাস(পিতা)

ফায়েস্তিসও (মাতা)

জন্মস্থান (Birthplace)

গ্রীস

যুগ

প্রাচীন দর্শন

ধারা

পেরিপ্যাটেটিক দার্শনিক ধারাকে উদ্বুদ্ধ করেন এবং এরিস্টটলবাদ এর জন্ম দেন

আগ্রহ

রাজনীতি, অধিবিদ্যা, বিজ্ঞান, যুক্তিবিদ্যা, নীতিবিদ্যা

অবদান 

গোল্ডেন ম্যান, কারণ, যুক্তি, জীববিজ্ঞান, অনুরাগ

মৃত্যু (Death)

এরিস্টটল খ্রীষ্টপূর্ব ৩২২ সনে ৬২ বছর বয়সে মৃত্যুমুখে পতিত হন

জন্ম

অ্যারিস্টটল খ্রিষ্টপূর্ব ৩৮৪ সালে থারেস উপকূলবর্তী স্টাগিরাস নামক এক গ্রিক উপনিবেশে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা নিকোম্যাকাস ম্যাসিডোনিয়ার রাজা আমিন্টাসের রাজসভায় গৃহচিকিৎসক ছিলেন। এ চিকিৎসা ব্যবসায়ই তাদের পরিবারিক জীবিকা উপার্জনের একমাত্র উপায় ছিল। তার পিতার প্রেরণায় তিনি ডাক্তার হবার চেষ্টা করেছিলেন।  জীবনের শুরু থেকেই মেসিডোনিয়ার রাজসভার সাথে সম্পর্ক থাকা, তার ভবিষ্যৎকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছিল।

প্রাথমিক জীবন

আনুমানিক ৩৮৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দে প্রাচীন গ্রীসের উত্তরাঞ্চলে সমুদ্র উপকূলবর্তী স্টাগিরা নামক এক উপনিবেশে জন্মগ্রহণ করেন অ্যারিস্টটল। বাবা নিকোম্যাকাস ছিলেন মেসিডোনিয়ার রাজা ২য় অ্যামিন্টাস-এর গৃহ-চিকিৎসক। তার মা ফায়েস্তিসও ছিলেন সম্ভ্রান্ত পরিবারের সদস্য। রাজদরবারে কাজের সুবাদে অ্যারিস্টটলের বাবার আয় ছিল খুব ভাল। ফলে অ্যারিস্টটলের শৈশব কাটে বেশ স্বাচ্ছন্দে। তবে কৈশোরে পা রাখতেই বাবাকে হারান তিনি। কয়েক বছর পর মাকেও হারিয়ে সম্পূর্ণ নিঃস্ব হয়ে যান কিশোর অ্যারিস্টটল। তবে রাজদরবারের পৃষ্ঠপোষকতায় কখনো অর্থাভাবের মুখ দেখেননি তিনি। তাছাড়া তার দুলাভাই তথা বড় বোনের স্বামী প্রোক্সেনাস তার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ফলে তেমন সমস্যায় পড়তে হয়নি তাকে।

রসায়ন এবং আলকেমিতে অ্যারিস্টটলের অবদান

অ্যারিস্টটলের রসায়ন বিষয়ক গবেষণা শুরু হয় আরেক প্রাচীন রসায়নবিদ এম্পেডোক্লিস এর তত্ত্ব থেকে। এম্পেডোক্লিস মনে করতেন পৃথিবীর সকল বস্তু তৈরি হয়েছে চারটি মৌলিক উপাদান মাটি, পানি, বায়ু এবং আগুন থেকে। এই উপাদানগুলোর ভিন্ন ভিন্ন অনুপাতের মিশ্রণেই তৈরি হয় ভিন্ন ভিন্ন বস্তু। এ তত্ত্বে অ্যারিস্টটল সম্পূর্ণ বিশ্বাস করতেন। কিন্তু তিনি এ চারটি মূল উপাদানের সাথে আরো একটি উপাদান যোগ করেন। তিনি সেই উপাদানটির নাম দেন ‘ফার্স্ট এলিমেন্ট’ বা ‘প্রথম উপাদান’, যা পরে কুইন্টেসেন্স নামে পরিচিতি লাভ করে। তিনি বিশ্বাস করতেন চারটি পার্থিব উপাদান সমান্তরালে চলে। কিন্তু প্রথম উপাদানটি, যা কিনা বিশুদ্ধ ও নিখুঁত, বৃত্তাকারে চলে। এ উপাদানটি কখনোই বাকি উপাদানগুলোর সাথে মেশেনি এবং চাঁদ, সূর্য, গ্রহগুলোতে এ উপাদান থাকায় সেগুলো বৃত্তাকারে চলে! অ্যারিস্টটলের এই তত্ত্বের প্রভাব এতটাই বেশি ছিল যে তা হাজার বছর যাবত রসায়ন শাস্ত্রের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করে। তার এই তত্ত্বে সম্পূর্ণরূপে বিশ্বাসী ছিলেন প্রাথমিক যুগের আলকেমিস্টরা। তারা বিশ্বাস করতেন যে, যদি তারা প্রথম উপাদানের প্রকৃতি শনাক্ত করতে পারেন, তাহলে তা দিয়ে মানুষের রোগ নির্ণয় করা সম্ভব হবে। এমনকি মানুষকে চিরজীবী করাও সম্ভব!

জীববিজ্ঞান

জীববিজ্ঞানী হিসেবে অ্যারিস্টটল ছিলেন অধিক নির্ভুল। রসায়নের তুলনায় জীববিজ্ঞানে তার অবদানও অনেক বেশি। তার লেখা কিছু জীববিজ্ঞানের বই এখনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ানো হয়। তিনি জীবের শ্রেণীবিন্যাস করেছিলেন এবং বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে বিভিন্ন প্রাণীকে বিভিন্ন গ্রুপে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। তিনি ১১টি গ্রুপ তৈরি করেছিলেন এবং প্রতিটি গ্রুপের নাম দেন জেনাস। তিনিই প্রথম জীববিজ্ঞানী যিনি পর্যবেক্ষণ করেন যে ডলফিন তার নবজাতককে দুধ পান করায়। তিনি ঘোষণা দেন ডলফিন কোনো মাছ নয়। তিনিই প্রথম প্রাণীদের বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে শ্রেনীবিন্যাস করেন যা ক্যারোলাস লিনিয়াসও করেন। পুরো জীবনে তিনি প্রায় ৬০০ প্রাজাতি শনাক্ত করেন।

ভূতত্ত্ব

বিখ্যাত ভূতত্ত্ববিদ লায়েল অ্যারিস্টটলের পৃথিবীর ভূতল নিয়ে গবেষণায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। অ্যারিস্টটল দীর্ঘদিন পর্যবেক্ষণ করে বলেন যে পৃথিবীর পৃষ্ঠতল কখনোই অপরিবর্তনীয় ছিল না। কারণ নদী শীতকালে শুকিয়ে যায়, আবার আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত থেকে একটি দ্বীপ তৈরি হয়ে যায়, বিস্তৃত সমতল ভূমি কখনো বা পানিতে প্লাবিত হয়, আবার কখনো যে স্থান পানির নীচে ছিল তা চর আকারে জেগে ওঠে। তার মতে এসব পরিবর্তন অনেক ধীরে ধীরে ঘটতো বলে মানুষ সহজে পর্যবেক্ষণ করতে পারতো না। কেননা মানুষের জীবনকাল সংক্ষিপ্ত।

জোতির্বিজ্ঞান এবং পদার্থবিজ্ঞান

অ্যারিস্টটল পদ্ধতিগতভাবে বিজ্ঞানী ছিলেন না বলা চলে। কেননা তিনি পরীক্ষণ বা পরিমাপ না করে কেবল পর্যবেক্ষণের উপর নির্ভরশীল ছিলেন। তাই তার পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ক চিন্তা-ভাবনা একরকম দর্শনই ছিল বলা চলে। ফলে অধিকাংশই ছিল ভুলে ভরপুর। তার তত্ত্বের প্রভাব ছিল অপরিসীম, যা সুদীর্ঘকাল বিজ্ঞান, বিশেষ করে পদার্থবিজ্ঞানের গবেষণাকে পিছিয়ে দেয়। চলুন দেখা যাক তার পদার্থবিজ্ঞান এবং জোতির্বিজ্ঞান সংক্রান্ত কিছু ভুল।

  • তিনি বিশ্বাস করতেন সূর্য পৃথিবীর চারপাশে ঘোরে। তার এই বিশ্বাস কোপারনিকাস আর গ্যালিলিওর আগপর্যন্ত বিজ্ঞানীদেরকে অন্ধ করে রাখে।
  • তিনি বলেছিলেন স্বর্গের (মহাকাশের) সবকিছুই পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে।
  • অ্যারিস্টটল মনে করতেন স্বর্গ (চাঁদকে নির্দেশ করে) একেবারে নিখুঁত। পরে গ্যালিলিও চাঁদের কলঙ্ক আবিষ্কার করলে অ্যারিস্টটলপন্থীরা তার শত্রু বনে যান।
  • অ্যারিস্টটল সাধারণ পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে বলেছিলেন যে ভারী বস্তু হালকা বস্তুর চেয়ে দ্রুততর সময়ে মাটিতে পতিত হয় যা গ্যালিলিও ভুল প্রমাণ করেন।

অ্যারিস্টটলের অনেক ভুলই পরবর্তীতে সংশোধিত হয়েছিল কিন্তু মানুষ সেগুলোকে বর্জন করে। তার মৃত্যুর মাত্র ১০০ বছর পরই অ্যারিস্টার্কাস বলেন যে সূর্য নয় বরং পৃথিবী ও অন্যান্য গ্রহগুলোই সূর্যের পাশে ঘুরছে। তবে অ্যারিস্টটলের ব্যাপক প্রভাবের কাছে বৈজ্ঞানিক এই সত্যটি হার মানতে বাধ্য হয় এবং দীর্ঘ দু’হাজার বছর তার তত্ত্বই মানুষের মনে বদ্ধমূল ছিল।

দর্শন

অ্যারিস্টটলের দর্শনের মূল বিষয় ছিল পদ্ধতিগতভাবে যুক্তি প্রদান। তিনি আলোচনা করতেন কিভাবে ব্যবকলন এবং অনুমানের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যেতে পারে। তার এই ব্যবকলনীয় তত্ত্বকে আধুনিক দার্শনিকগণ নাম দিয়েছেন ‘সিলোগিজম’। এছাড়া তর্ক বিতর্কের মাধ্যমে যুক্তি প্রতিষ্ঠায়ও অ্যারিস্টটল গুরুত্ব দিয়েছিলেন। দর্শন শাস্ত্রের উপর রচিত তার দুটি বই হলো ‘নিকোম্যাসিয়ান এথিকস’ এবং ‘প্রায়র অ্যানালিটিকস’।

বিখ্যাত লেখাসমূহ

অ্যারিস্টটল প্রায় ২০০-এর মতো নোট/গবেষণা প্রবন্ধ লিখেছিলেন। তার ছাত্র থিওফ্রাস্টাস তার মৃত্যুর পর কাজগুলো সংরক্ষণ করেন এবং  তার ছাত্র নিলিয়াস সেগুলোর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। অ্যারিস্টটলের সেই ২০০ কাজের মধ্যে এখন মাত্র ৩১টিই টিকে আছে, যার অধিকাংশই হাতে লেখা। যুক্তিতর্কের উপর তার লেখা ক্যাটাগরিস, অন ইন্টারপ্রিটেশন, প্রায়র অ্যানালিটিকস ও পোস্টেরিয়র অ্যানালিটিকস উল্লেখযোগ্য।

বস্তুর ধরন ও গঠন নিয়ে তিনি ‘মেটাফিজিক্স’ নামে একটি বই লেখেন। তাছাড়া মানুষের আচরণ ও বিচার বিশ্লেষণ নিয়ে তার দুটি বিখ্যাত কাজ হচ্ছে ‘নিকোমেসিয়ান এথিকস’ এবং ‘ইউডেমিয়ান এথিকস’। ‘অন দ্য হেভেনস’, ‘অন দ্য সোল’ এবং ‘রেটরিক’ হচ্ছে তার আরো কিছু বিখ্যাত কাজ। মনোবিজ্ঞান নিয়েও রয়েছে তার কিছু জ্ঞানগর্ভ লেখা।

এরিস্টটল এর গুরু প্লেটো 

 এরিস্টটলেরজ্ঞানের রাজ্যে বিশ্ববিজয় একদিকদিয়ে চিন্তায় আনলে । তাঁর এককালীন ছাত্র মহামতি আলেকজান্ডারের চেয়েও বেশি গৌরবের । যদিও এরিস্টটল তার গুরু প্লেটোর তুলনায় বহুমুখি প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন বেশি , একই সঙ্গে দার্শনিক ও বৈজ্ঞানিক রচনাবলীর একবিশাল ভান্ডার বিশ্বকেদান করেছেন । তবে এরিস্টটল তার গবেষণাকর্মের্তার ছাত্র আলেকজান্ডারের কাছ থেকে আর্থিক সহবহুদিক দিয়ে অনেক সাহায্য সহযােগিতা পেয়েছিলেন — যা প্লেটো পাননি ।

এরিস্টটল এর মৃত্যু

 এরিস্টটল খ্রীষ্টপূর্ব ৩২২ সনে ৬২ বছর বয়সে মৃত্যুমুখে পতিত হন ।

What's Your Reaction?

Like Like 0
Dislike Dislike 0
Love Love 0
Funny Funny 0
Angry Angry 0
Sad Sad 0
Wow Wow 0