মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী এর জীবনী || Biography of Maulana Abdul Hamid Khan Bhashani
মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী এর জীবনী || Biography of Biography of Maulana Abdul Hamid Khan Bhashani

জন্ম |
মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ১২ ডিসেম্বর ১৮৮০ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন |
শিক্ষাজীবন |
ছোটবেলায় তিনি স্থানীয় মক্তবে আরবি, ফারসি ও ধর্মীয় শিক্ষা লাভ করেন। |
রাজনীতিতে প্রবেশ |
মাওলানা ভাসানী ১৯২০-এর দশকে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। |
মৃত্যু |
মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দের ১৭ নভেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন |
মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ১২ ডিসেম্বর ১৮৮০ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি সিরাজগঞ্জে ধানগড়া পল্লীতে জন্ম গ্রহন করেন। মাওলানা ভাসানীর পিতা হাজী শারাফত আলী ও মাতা বেগম শারাফত আলী। তাদের চারটি সন্তানের মধ্যে এক মেয়ে ও তিন ছেলে, মাওলানা ভাসানী ছিলেন সবার ছোট। মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর ডাক নাম ছিল চেগা মিয়া।
আনুমানিক ১৯২৫ জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার জমিদার শামসুদ্দিন আহম্মদ চৌধুরীর মেয়ে আলেমা খাতুন ভাসানীকে বিবাহ করেন। যিনি (পীর মা হিসেবে খ্যাত) তার বাবা পাঁচবিবির জমিদার কর্তৃক পৈতৃক সুত্রে প্রাপ্ত সকল জমি মওলানা ভাসানীর জনকল্যাণমূলক কাজে (হক্কুল এবাদ মিশন) এ দান করেন। তার ২টি কন্যা সন্তান এবং ২টি ছেলে সন্তান ছিল, তাহার আদরের নাতনীর নাম শায়লা খান ভাসানী তাহার বড় ছেলে আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ মজুমদার (ভাসান)।
মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ৩য় সহধর্মিনী হামিদা খানম ভাসানী ১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দে বগুড়া জেলার আদমদিঘি থানার কাঞ্চনপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা কাসেম উদ্দিন সরকার জমিদারশ্রেণীভুক্ত একজন সমাজ হিতৈষি ধর্মপ্রাণ মুসলমান ছিলেন। অত্র এলাকায় কৃষক সংগঠনের রেশ ধরেই মওলানা ভাসানীর সাথে তাঁর পরিচয়। ১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ ডিসেম্বর (বাংলা ১৩ পৌষ), সোমবার সুবেহ- সাদিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুরারোগ্য ক্যান্সার ব্যাধীতে মত্যুবরণ করেন হামিদা খানম। তার ১টি ছেলে সন্তান ও ২টি কন্যা সন্তান ছিল।
প্রাথমিক জীবন ও শিক্ষাজীবন
মাওলানা ভাসানীর জন্ম ১৮৮০ সালে সিরাজগঞ্জ জেলার ধানগড়া গ্রামে, এক দরিদ্র কৃষক পরিবারে। তাঁর পিতার নাম হাজী শরাফত আলী। ছোটবেলায় তিনি স্থানীয় মক্তবে আরবি, ফারসি ও ধর্মীয় শিক্ষা লাভ করেন। পরবর্তীতে তিনি দেওবন্দ মাদ্রাসায় ভর্তি হন এবং ইসলামি চিন্তাধারায় গভীর জ্ঞান অর্জন করেন। তাঁর শিক্ষাজীবন তাকে একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনে উদ্বুদ্ধ করে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলন যদি ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট থেকে দেখা যাবে, মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী প্রথম তাঁর বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে স্বায়ত্তশাসন, এমনকি স্বাধীনতার ইস্যুকে সামনে নিয়ে আসছেন। মাওলানা ভাসানী ১৯৪৮ সালের ১৯ মার্চ ভাষার অধিকার প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘আমরা কি সেন্ট্রাল গভর্নমেন্ট এর গোলাম?’ পঞ্চাশের দশকের শুরু থেকেই মাওলানা ভাসানী পূর্ব বাংলার স্বায়ত্তশাসন স্বাধীকার এসব বিষয় জাতীয় রাজনীতির সামনে তুলে ধরেন।কিন্তু হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী প্রধানমন্ত্রী হয়ে মাওলানা ভাসানীকে খন্ডন করে বলেন, পূর্ব পাকিস্তানে ৯৮ স্বায়ত্তশাসন দেওয়া হয়ে গেছে’।
একইভাবে তিনি ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনের আগে যে ২১ দফা ঘোষণা করেছেন, সেখানে ১৯ দফায় তিনি বলেছেন, ‘লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে পূর্ববঙ্গকে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনর প্রদান ও সার্বভৌমিক করা হইবে এবং দেশরক্ষা, পররাষ্ট্র ও মুদ্রা ব্যতীত আর সমস্ত বিষয় পূর্ববঙ্গ সরকারের হাতে আনয়ন করা হইবে’। বাঙালির মুক্তির সনদ হিসেবে চিহ্নিত ১৯৬৬ সালে ছয় দফার মূল বক্তব্যে কিন্তু ভাসানীর যুক্তফ্রন্টের ১৯ দফারই প্রতিফলন।
১৮৮০ খ্রিস্টাব্দের ১২ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জের ধানগড়া পল্লীতে এই দেশ বরেণ্য নেতা জন্ম গ্রহন করেন। তার পিতা হাজী শারাফত আলী ও মাতা বেগম শারাফত আলী। পিতা মাতা সহ পরিবারে তিন ভাই ও এক বোন ছিলেন। তিনি অল্প বয়সে পিতাকে হারিয়েছেন। তাঁর কিছুদিন পর এক মহামারীতে মাতা বেগম শারাফত আলী ও দুই ভাই মারা যান। বেঁচে থাকেন ছোট শিশু আব্দুল হামিদ খান।
পিতা মাতার মৃত্যুর পর মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী প্রথমে কিছুদিন চাচা ইব্রাহিমের আশ্রয়ে ছিলেন। এই সময়ে ইরাকের এক আলেম ও ধর্ম প্রচারক নাসিরুদ্দিন বোগদাদী সিরাজগঞ্জে আসেন। হামিদ তার আশ্রয়ে কিছুদিন কাটান। স্থানীয় স্কুল ও মাদ্রাসায় কয়েক বছর অধ্যায়ন ছাড়া তাঁর বিশেষ কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল না। তিনি টাঙ্গাইলের কাগমারিতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট এলাকায় কালা গ্রামে একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন।
১৯৯১ সালে ব্রিটিশ বিরোধী অসহযোগ ও খেলাফত আন্দোলনে যোগদানের মধ্য দিয়ে তাঁর রাজনৈতিক জীবনের সূচনা হয়। পরে কংগ্রেসে যোগদান করে অসহযোগ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে দশ মাস কারাদণ্ড ভোগ করে। মওলানা ভাসানী ১৯২৫ সালে জয়পুরহাটের পাচঁবিবি উপজেলার জমিদার শামসুদ্দিন আহম্মদ চৌধুরীর মেয়ে আলেমা খাতুনকে বিবাহ করেন। ১৯২৬ সালে তিনি তাঁর সহধর্মিণী আলেমা খাতুন কে নিয়ে আসাম গমন করেন এবং আসামে প্রথম কৃষক প্রজা আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটান। ১৯২৯-এ আসামের ধুবড়ী জেলার ব্রহ্মপুত্র নদের ভাসানচরে প্রথম কৃষক সম্মেলন আয়োজন করেন।এখান থেকে তার নাম রাখা হয় “ভাসানীর মাওলানা ”এরপর থেকে তার নামের শেষে “ভাসানী” শব্দ যুক্ত হয়।
মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ১৯৩১-এ সন্তোষের কাগমারীতে, ১৯৩২-এ সিরাজগঞ্জের কাওরাখোলায় ও ১৯৩৩-এ প্রথম কৃষক আন্দোলন সম্মেলন করেন। তারপর ১৯৩৭ সালে ভাসানী মুসলিম লীগে যোগ দেন এবংঅচিরেই দলের আসাম শাখার সভাপতি নির্বাচিত হন। ভারত বিভাগের সময় ভাসানী আসামের গোয়ালপাড়া জেলায় এ প্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। আসাম সরকার তাকে গ্রেপ্তার করে এবং ১৯৪৭ সালের শেষের দিকে এ শর্তে মুক্তি দেয় যে, তিনি আসাম ছেড়ে চলে যাবেন। ১৯৪৮ এ মুক্তি পান।
তিনি ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে যোগ দেন। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে কয়েকজন ছাত্র নিহত হন। ভাসানী এর কড়া প্রতিবাদ করেন এবং ২৩ ফেব্রুয়ারি তাঁকে তাঁর গ্রামের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠানো হয়। ১৯৫৭ সালে কাগমারিতে আওয়ামী লীগের এক সম্মেলন আহবান করেন। তিনি এ দলের সভাপতি হন এবং এর সেক্রেটারি জেনারেল হন পশ্চিম পাকিস্তানের মাহমুদুল হক ওসমানীর। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে শেখ মুজিবুর রহমানের অসহযোগ আন্দোলনের প্রতি সমর্থন প্রদান করেন। ২৫ মার্চ রাতে মওলানা ভাসানী সন্তোষে তার গৃহে অবস্থান করেন।
মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী রাজনীতির পাশাপাশি তিনি সমাজ সংস্কার মূলক কর্মকান্ডে জড়িত ছিলেন। তিনি জয়পুরহাটের পাঁচবিবিতে মহিদপুর হক্কুল এবাদ মিশন প্রতিষ্ঠা করেন তার অধীনে ডিগ্রি মেডিকেল টেকনিক্যাল স্কুল, হাজী মহসিন কলেজ ( প্রস্তাবিত কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়) প্রতিষ্ঠা করেন,পরে সেটি জাতীয়করণ করা হয়। তিনি কারিগরি শিক্ষা কলেজ ও শিশু কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন সন্তোষে। আসামে মাওলানা ভাসানী ত্রিশটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়াও কাগমারিতে মওলানা মোহাম্মদ আলী কলেজ সন্তোষে (সন্তোষে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়) যা কিনা “মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববদ্যালয়”২০০২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং সেটি প্রকৃতি প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ২য় স্থানে আছে।
ভাসানীর আন্দোলন ও কাগমারী সম্মেলন (১৯৫৭)
১৯৫৭ সালের কাগমারী সম্মেলন ছিল মাওলানা ভাসানীর জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এখানে তিনি পাকিস্তানি শাসকদের উদ্দেশ্যে ‘আসসালামু আলাইকুম’ বলে পূর্ব বাংলার মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান। এই সম্মেলনে তিনি পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসনের দাবি তোলেন, যা পরবর্তীতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ভিত্তি তৈরি করে।
স্বাধীনতা সংগ্রামে ভূমিকা
মাওলানা ভাসানী বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। তিনি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীনতার পক্ষে অবস্থান নেন। পাকিস্তানের শাসকদের বিরুদ্ধে তাঁর তীব্র প্রতিবাদ মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রাণিত করেছিল।
মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দের ১৭ নভেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। তাকে টাঙ্গাইল জেলার সদর উপজেলার উত্তর-পশ্চিমে নামক স্থানে পীর শাহ জামান দিঘির পাশে সমাহিত করা হয়। সারা দেশ থেকে আগত হাজার হাজার মানুষ তার জানাজায় অংশগ্রহণ করেন।
জন্ম
পরিবার
ভাষা আন্দোলনে মাওলানা ভাসানীর অবদান
মাওলানা ভাসানীর জীবনী
সমাজ সংস্কার
মৃত্যু
Tags:
What's Your Reaction?






