পৃথিবীতে কোন নবীর পর কে আসেন এবং তাদের সংক্ষিপ্ত জীবনী
পৃথিবীতে কোন নবীর পর কে আসেন এবং তাদের সংক্ষিপ্ত জীবনী

নবী-রাসুলরা আল্লাহর মনোনীত ও প্রেরিত পুরুষ। পৃথিবীর বুকে আল্লাহর একত্ববাদের প্রতিষ্ঠা ও তাঁর দ্বিন প্রচারের জন্য আল্লাহ তাঁদের নির্বাচিত করেছেন। পৃথিবীতে আল্লাহ তাআলা অসংখ্য নবী-রাসুল প্রেরণ করেছেন। তাঁদের ভেতর ২৫ জনের নাম পবিত্র কোরআনে উল্লেখ আছে।
১. হজরত আদম (আ.)
আল্লাহ হযরত আদম(আ)কে সৃষ্টির সেরা হিসাবে সৃষ্টি করেন। হযরত আদম(আ:) ছিলেন দুনিয়ার প্রথম মানুষ। কোরআন বলে যে, আমি আদম(আ)কে বর্তমান মানুষের আকারে সৃষ্টি করি। অর্থাৎ শুরু থেকেই মানুষের এই আকার।তারপর স্বজাতির হযরত হাওয়া(আ:)কে সৃষ্টি করে মানুষের ধারাবাহিক বংশবৃদ্ধির পথ নিশ্চিৎ করা হয়।কোরআন মানুষ জাতিকে “সৃষ্টির সেরা” বলে মানুষকে সম্মানিত করেছে। পৃথিবীর প্রথম মানব ও প্রথম নবী আদম (আ.)। তাঁর মাধ্যমেই নবী আগমনের ধারাক্রম শুরু হয়।শুরুতে তিনি এবং মা হাওয়া জান্নাতে ছিলেন। পরবর্তীতে দুনিয়ায় বসবাস শুরু করেন। আবু উমামা বাহেলি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করে, হে আল্লাহর রাসুল, আদম (আ.) কি নবী ছিলেন? রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, হ্যাঁ, আল্লাহর কালামপ্রাপ্ত (নবী ছিলেন)।’ (সহিহ আলবানি, হাদিস : ৩৫৯) হযরত বাবা আদম (আঃ) পেশায় ছিলেন কৃষক। তিনি চাষ-বাস করতেন। এভাবেই তিনি জীবন যাপন করেছেন। মূলত কৃষিকাজ কর্ম ছিল তার প্রধান পেশা।
শিশ ইবনে আদম (আ.)
ঐতিহাসিকরা বলেন, আদম (আ.)-এর পর তাঁর পুত্র শিশ (আ.)-কে আল্লাহ নবী মনোনীত করেন। আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.) বলেন, ‘আদম (আ.) মারা যাওয়ার পর তাঁর পুত্র শিশ তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন।’ (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, পৃষ্ঠা : ২৩২) হযরত শীস (আঃ) পেশায় ছিলেন একজন তাঁতী। তুলো, রেশমগুটি থেকে সুতো কেটে কাপড় বানাতেন। তবে তিনি চাষবাস করতেন বলেও জানা যায়। অর্থাৎ মূল পেশায় ছিলেন তাতী আর পাশাপাশি তিনি অন্যান্য কাজও করতেন যেমন আমাদের সমাজের শ্রমজীবী মানুষ করে থাকে।
২. হজরত ইদরিস (আ.)
শিশ (আ.)-এর পর কোন নবীর আগমন হয়েছিল, তা নিয়ে ঐতিহাসিকদের ভেতর মতভিন্নতা রয়েছে। আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.)-সহ এক দল ঐতিহাসিকের মত হলো, তিনি ছিলেন ইদরিস (আ.)। অন্যরা বলেছেন নুহ (আ.)। কোরআনের দুটি আয়াতে এ নবী প্রসঙ্গে বলা হয়েছে। ইতিহাস থেকে জানা যায়, হজরত ইদ্রিস (আ.)ই প্রথম কলম আবিষ্কার করে লিখিত জ্ঞানের সূচনা করেন। এ ছাড়াও পোশাক সেলাইয়ের পদ্ধতিও তিনি আবিষ্কার করেছেন বলে জানা যায়। জানা যায় হযরত ইদ্রীস (আঃ) পেশায় একজন দর্জি। আরো জানা যায় ইতিহাসে তিনি প্রথম সুঁইয়ের আবিষ্কার ও ব্যবহার করেন। শীস আঃ তুলো ও রেশম থেকে সুতা তৈরি করে কাপড় বানাতে জানতেন। আর ইদ্রিস আঃ সেই কাপড় সেলাই করে জামায় রূপান্তর করতেন।
৩. হজরত নুহ (আ.)
কোরআনে ৪৩ বার উল্লেখ করা হয়েছে এই নবীর নাম। তিনি সাড়ে নয় শত বছর দাওয়াতি কাজ করে মাত্র আশি জন নারী পুরুষকে হেদায়াতের পথে আনতে পেরেছেন। নুহ (আ.) ছিলেন প্রথম রাসুল (যেসব নবী আল্লাহর পক্ষ থেকে শরিয়ত বা জীবনবিধান লাভ করেছিলেন)। পবিত্র কোরআনের একাধিক স্থানে নুহ (আ.)-এর বর্ণনা এসেছে। তিনি তাঁর মূর্তিপূজারি জাতিকে সাড়ে ৯০০ বছর ইসলামের দাওয়াত দেন। কিন্তু খুব সামান্যসংখ্যক মানুষই তা গ্রহণ করে। অতঃপর তাদের অবাধ্যতার জন্য আল্লাহ মহাপ্লাবনের মাধ্যমে সেই জাতিকে ধ্বংস করে দেন। তাদের পরিণতি সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি নুহকে তার জাতির কাছে প্রেরণ করেছিলাম। সে তাদের মধ্যে ৫০ বছর কম এক হাজার বছর অবস্থান করে। অতঃপর মহাপ্লাবন তাদের গ্রাস করে। কারণ তারা ছিল সীমালঙ্ঘনকারী।’ (সুরা : আনকাবুত, আয়াত : ১৪) হযরত নূহ (আ) জীবিকার নির্বাহ করার দিক থেকে ছিলেন একজন কাঠমিস্ত্রি । অর্থাৎ তিনি কাঠ কেঠে কাঠ দিয়ে বিভিন্ন জিনিস তৈরি করে জীবীকা নির্বাহ করতেন। আপনারা জানেন তাঁকে আল্লাহ তায়ালা কাঠ দিয়ে বড় নৌকা তৈরির আদেশ দিয়েছিলেন।
৪. হজরত হুদ (আ.)
নুহ (আ.)-এর পর হুদ (আ.)-এর আগমন হয়। মোট সাতটি আয়াতে এ নবীর আলোচনা করা হয়েছে কোরআনে। তিনি আদ জাতির কাছে প্রেরিত হয়েছিলেন। আদ জাতি খুবই উন্নত প্রযুক্তিসমৃদ্ধ জাতি ছিলো।পবিত্র কোরআনের বর্ণনা থেকেও বোঝা যায়, নুহ (আ.)-এর পর হুদ (আ.)-এর জাতির মাধ্যমে পৃথিবীতে নতুন সভ্যতার বিকাশ হয়। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা স্মরণ করো, যখন নুহের পর তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছিল।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৬৯) হযরত হুদ (আ) মূলত ব্যবসার সূচনা করেন। তিনি পশুপালনও করতেন। আধুনিক যুগের অনেকটা মুদি দোকানের মত প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির ব্যবসা করতেন। তিনি এসব জিনিস বিক্রি করে তথা ব্যবসা করে জীবন যাপন করেছেন।
৫. হজরত সালেহ (আ.)
কোরআনের মোট ৯ জায়গায় এ নবীর প্রসঙ্গ এসেছে। পবিত্র কোরআনের বর্ণনা থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে হুদ (আ.)-এর জাতির পর সালেহ (আ.)-এর জাতির আবির্ভাব হয়। ইতিহাসে তারা ‘সামুদ’ নামে পরিচিত। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা স্মরণ করো, যখন আদ জাতির পর তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছিল।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৭৪) হযরত সালেহ (আ) পেশায় ছিলেন একজন গোয়ালা। তিনি উটের পালন করতেন। আর সেই উটের দুধ বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। অর্থাৎ হযরত সালেহ আঃ ছিলেন একজন গোয়ালা ছিলেন।
৬. হজরত ইবরাহিম (আ.)
মুসলিম জাতির পিতা ইবরাহিম (আ.)-এর আগমন সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তাদের পূর্ববর্তী নুহ, আদ, সামুদ সম্প্রদায়, ইবরাহিমের সম্প্রদায় এবং মাদিয়ান ও বিধ্বস্ত নগরের অধিবাসীদের সংবাদ কি তাদের কাছে আসেনি?’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ৭০) এই আয়াতের বিবরণ থেকে ধারণা হয়, সামুদ সম্প্রদায়ের পর ইবরাহিম (আ.)-এর আগমন হয়। তাঁর সম্প্রদায়ের নাম ছিল সাবিয়া। তারা চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ ও নক্ষত্রগুলোর পূজা করত। তিনি তাদের একত্ববাদের পথে আহ্বান জানান। কিন্তু তারা তা প্রত্যাখ্যান করে এবং ইবরাহিম খলিলুল্লাহ (আ.)-কে আগুনে পুড়িয়ে মারার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র করে। কিন্তু আল্লাহ তাদের ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দেন।
হজরত ইবরাহিম (আ.) ইরাকে জন্মগ্রহণ করেন ও ফিলিস্তিনে বসতি স্থাপন করেন। তাকে মুসলিম মিল্লাতের পিতা বলে কোরআনে উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি কাবা ঘরের নির্মাতা ছিলেন। বিভিন্ন গ্রন্থ থেকে জানা যায় হযরত ইব্রাহিম (আঃ) পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি তথা নির্মান কাজ করতেন। তবে তিনি কৃষিকাজ ও পশুপালনও করেছেন এমনটাও জানা যায়। তবে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে তিনি রাজমিস্ত্রী ছিলেন। তিনি আল্লাহ তায়ালার আদেশে পবিত্র কাবা ঘর তৈরি করেন।
৭. হজরত লুত (আ.)
ইবরাহিম (আ.)-এর যুগেই লুত (আ.) প্রেরিত হন। কোরআনের বিবরণ থেকেও বিষয়টি স্পষ্ট হয়। ইরশাদ হয়েছে, ‘লুত তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করল। ইবরাহিম বলল, আমি আমার প্রতিপালকের উদ্দেশে দেশত্যাগ করছি। তিনি পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়।’ (সুরা : আনকাবুত, আয়াত : ২৬)
লুত (আ.): কথা ২৭ বার উল্লেখ করা হয়েছে কোরআনে। তার সম্প্রদায়ের লোকেরা সমকামিতার মতো জঘন্য পাপে লিপ্ত ছিলো। ফলে আল্লাহতায়ালা তাদের কঠোর শাস্তি দিয়ে দুনিয়া থেকে নিশ্চিহ্ন করে দেন। হযরত লুত (আ) পেশায় ছিলেন একজন চাষী। তাঁর সম্প্রদায়ের মত তিনি কৃষিকাজ করতেন। আমরা ইতিহাস থেকে তাঁর অনেক পাণ্ডিত্য সম্পর্কে জানতে পারি।
৮. হজরত ইসমাঈল (আ.)
ইবরাহিম (আ.) ও তাঁর স্ত্রী হাজেরা (আ.)-এর ঔরসে জন্ম হয় ইসমাঈল (আ.)-এর। তিনি পবিত্র কাবাঘর নির্মাণে তাঁর পিতাকে সাহায্য করেন। ইসমাঈল (আ.)-কে আরব জাতির পিতা বলা হয়। তাঁর বংশধররা আরবসভ্যতার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। নবী মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন তাঁর বংশধর। তিনি আমালিক ও জুরহুম গোত্রের লোকদের মধ্যে এবং ইয়ামান অধিবাসীদের দ্বিনের দাওয়াত দেন।
পবিত্র কোরআনে মোট ১২টি আয়াতে তার সম্পর্কে বলা হয়েছে। তিনি ছিলেন পরম ধৈর্যের প্রতীক। কোরবানি ও হজের সঙ্গে ইসমাইল (আ.) এর স্মৃতি জড়িত।আমরা জানি হযরত ইসমাইল (আ) তাঁর পিতা ইব্রাহিমের মত একই পেশা গ্রহণ করেছিলেন। তার সাথে তিনি শিকারও করতেন।আবার ভাষার দিক থেকে অনেক পাণ্ডিত্য অর্জন করেছিলেন অর্থাৎ তিনি বহুভাষী ছিলেন।
৯. হজরত ইসহাক (আ.)
ইবরাহিম (আ.) ও তাঁর স্ত্রী সারার ঔরসে জন্ম নেন ইসহাক (আ.)। তাঁর বংশধরদের মধ্য থেকে অসংখ্য নবী ও রাসুলের আগমন হয়। তাঁদের বেশির ভাগই বনি ইসরাঈলের নবী হিসেবে আগমন করেন। কোরআনের মোট ১৭ বার আলোচিত হয়েছে তার নাম। তিনি ও ইসমাঈল (আ.) সম্পর্কে ভাই ছিলেন। হজরত ইসহাক (আ.) অন্যতম মর্যাদাবান নবী ছিলেন। হযরত ইসহাক (আ) পেশাগতভাবে ছিলেন একজন মেষপালক ও রাখাল। তিনি মেষপালন ও অন্যান্য পশুপালন করতেন। তা থেকে অর্জিত টাকা আয় হলে সেই অর্থ দিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে জীবন যাপন করেছেন।
১০. হজরত ইয়াকুব (আ.): মোট ১৬টি আয়াতে আলোচিত হয়েছে তার নাম। তার আরেক নাম হলো- ইসরাইল। তিনি ইউসুফ (আ.) এ পিতা।
ইসহাক্ব (আঃ)-এর দুই যমজ পুত্র ঈছ ও ইয়াকূব-এর মধ্যে ছোট ছেলে ইয়াকূব নবী হন। ইয়াকূবের অপর নাম ছিল ‘ইস্রাঈল’।যার অর্থ আল্লাহর দাস। নবীগণের মধ্যে কেবল ইয়াকূব ও মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর দু’টি করে নাম ছিল। মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর অপর নাম ছিল ‘আহমাদ’ (ছফ ৬১/৬)। ইতিহাস থেকে আমরা জানতে পারি হযরত ইয়াকুব (আ) ছিলেন একজন রাখাল। তিনি পশু পালন করে জীবীকা অর্জন করতেন। অর্থাৎ তাঁর পেশা ছিল রাখালের কাজ করা। এছাড়াও তিনি কৃষিকাজ ও অন্যান্য স্বাভাবিক কাজ করে জীবন যাপন করেছেন।
১১. হজরত ইউসুফ (আ.): ২৭টি আয়াতে উল্লেখ হয়েছে তার নাম। তার পিতা ইয়াকুব (আ.), তার দাদা ইসহাক (আ.) ও পরদাদা ইবরাহীম (আ)ও নবী ছিলেন। অন্যান্য নবী রাসূলগনের পেশা সম্পর্কে আমরা না জানলেও হযরত ইউসুফ (আ) এর জীবনী পেশা সম্পর্কে আমরা জানি। কারন আমরা অনেকেই দীপ্ত টিভির ইউসুফ জুলেখা দেখেছি। তিনি মূলত সরকারি কাজ কর্মে নিয়োজিত ছিলেন।আর তিনি ছিলেন কৃষি দফতরের প্রতিষ্ঠাতা ও ঘড়ির আবিষ্কারক। এই ক্ষেত্রে তিনিও পরোক্ষভাবে কৃষিকাজ করেছেন। কৃষি বিষয়ক অনেক কাজ তাঁর থেকে সাধারণ মানুষ জানিতে পেরেছে।
১২. হজরত শোয়াইব (আ.): ১১টি আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে তার নাম। তার সম্প্রদায় ওজনে কম দেওয়ার অপরাধে খোদায়ি গজবে ধ্বংস হয়ে যায়। হযরত শুয়াইব (আ)ও ছিলেন কৃষক। তিনি জীবীকা নির্বাহ করার জন্য কৃষিকাজ করেছেন। এভাবে দিকে খা যাচ্ছে প্রায় সব নবী রাসূলগনের পেশা ছিক কৃষি ও ব্যবসা।
১৩. হজরত আইয়ুব (আ.): কোরআনের ৪ জায়গায় আলোচিত হয়েছে তার নাম। আল্লাহতায়ালা তাকে দীর্ঘকাল কঠিন অসুখ দিয়ে পরীক্ষা করেছিলেন। কিন্তু তিনি ধৈর্যধারণ করে সে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। আমরা জানি হযরত আইয়ুব (আ) ও একজন ছিলেন কৃষক।তিনি কৃষি কাজ করে জীবীকা নির্বাহ করতেন।
১৪. হজরত যুলকিফল (আ.): পবিত্র কোরআনে দুই জায়গায় তার নাম এসেছে। তিনি পুরো পৃথিবীর বাদশাহ ছিলেন।
তিনি ইফরাঈম বিন ইউসুফ বিন ইয়াকূব-এর বংশধর ছিলেন। তিনি ইলিয়াস (আঃ)-এর চাচাতো ভাই এবং তাঁর নায়েব বা প্রতিনিধি ছিলেন। হযরত ইলিয়াস (আঃ) সুলায়মান (আঃ) পরবর্তী পথভ্রষ্ট বনু ইস্রাঈলগণের প্রতি প্রেরিত হয়েছিলেন। তাঁর পরে আল-ইয়াসা‘ নবী হন এবং তিনি ইলিয়াস (আঃ)-এর শরীয়ত অনুযায়ী ফিলিস্তীন অঞ্চলে জনগণকে পরিচালিত করেন ও তাওহীদের দাওয়াত অব্যাহত রাখেন। বাইবেলে উনার নাম ‘ইলিশা ইবনে সাকিত’ বলা হয়েছে। এর পরে নবী হন এবং ফিলিস্তীন অঞ্চলে বনু ইস্রাঈলগণের মধ্যে তাওহীদের দাওয়াত দেন। আমরা জানতে পারি হযরত যুল-কিফল (আ) পেশায় একজন বেকারি কর্মী ছিলেন। তার মানে তিনি রুটি বানাতেন এবং এই রুটি বানানোর কাজ করেই তিনি জীবীকা নির্বাহ করতেন।
১৫. হজরত মুসা (আ.): পবিত্র কোরআনে সবচেয়ে বেশি বার তার নাম উল্লেখ করা হয়েছে। মোট ১৩৭ বার এসেছে তার নাম।
মূসা (আ.) হ’লেন ইবরাহীম (আঃ)-এর ৮ম অধঃস্তন পুরুষ। মূসা (আ.)-এর পিতার নাম ছিল ‘ইমরান’ ও মাতার নাম ছিল ‘ইউহানিব’। তবে মায়ের নামের ব্যাপারে মতভেদ আছে। উল্লেখ্য যে, মারিয়াম (আ.)-এর পিতার নামও ছিল ‘ইমরান’। যিনি ছিলেন হযরত ঈসা (আঃ)-এর নানা। মূসা ও ঈসা উভয় নবীই ছিলেন বনু ইস্রাঈল বংশীয় এবং উভয়ে বনু ইস্রাঈলের প্রতি প্রেরিত হয়েছিলেন (সাজদাহ ৩২/২৩, ছফ ৬১/৬)। মূসার জন্ম হয় মিসরে এবং লালিত-পালিত হন মিসর সম্রাট ফেরাঊনের ঘরে। তাঁর সহোদর ভাই হারূণ (আ.) ছিলেন তাঁর চেয়ে তিন বছরের বড় এবং তিনি মূসা (আ.)-এর তিন বছর পূর্বেই মৃত্যুবরণ করেন। উভয়ের মৃত্যু হয় মিসর ও শাম-এর মধ্যবর্তী তীহ্ প্রান্তরে বনু ইস্রাঈলের ৪০ বছর আটক থাকাকালীন সময়ে।
ইমরানের ঘরে হজরত মুসা আ.-এর জন্ম এমন সময়ে হয়েছিলো যখন ফেরআউন বনি ইসরাইলের সদ্যপ্রসূত বালক শিশুদেরকে হত্যা করে ফেলার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ফেলেছিলো। এ কারণে মুসা আ.-এর মা ও পরিবারের লোকেরা তাঁর জন্মের পর অত্যন্ত বিচলিত ও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলো যে কীভাবে এই শিশুটিকে হত্যাকারীদের দৃষ্টি থেকে রক্ষা করা যায়। এভাবে তিন মাস পর্যন্ত তাঁকে সবার দৃষ্টি থেকে গোপনে রাখা হলো। তাঁর জন্মগ্রহণের সংবাদও কাউকে জানতে দেয়া হলো না। কিন্তু গুপ্তচরদের অনুসন্ধান এবং পরিস্থিতি গুরুতর হওয়ার কারণে বেশিদিন এই ঘটনা গোপনীয় রাখার ভরসা পাওয়া গেলো না। ফলে তাঁর মায়ের উদ্বেগ ও অস্থিরতা বৃদ্ধি পেতে থাকলো। এই কঠিন ও করুণ পরিস্থিতিতে অবশেষে আল্লাহ তাআলা সাহায্য করলেন এবং মুসা আ.-এর মায়ের অন্তরে এমন কৌশলের উদ্ভব ঘটিয়ে দিলেন যে, একটি সিন্দুক নির্মাণ করো। সিন্দুকে আলকাতরা ও তেলের পালিশ লাগাও।
পানি যেনো ভেতরে প্রবেশ করতে না পারে। শিশুটিকে সিন্দুকে ভরো এবং তারপর তা নীলনদের স্রোতে ভাসিয়ে দাও। মুসা আ.-এর মাই তা-ই করলেন। তৎক্ষণাৎ তিনি তাঁর বড় কন্যা ও মুসা আ.-এর সহোদরা বোনকে নির্দেশ দিলেন, তিনি যেনো সিন্দুকটির ভেসে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নদের তীরের ওপর দিয়ে হেঁটে যান এবং সিন্দুকটির প্রতি দৃষ্টি রাখেন। তিনি যেনো লক্ষ করেন, কীভাবে আল্লাহ তাআলা মুসা আ.-কে রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করেন। কেননা, মুসা আ.-এর মাকে আল্লাহপাক এই সুসংবাদ পূর্বেই জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, আমি এই শিশুকে তোমারই কোলে ফিরিয়ে দেবো এবং এই শিশুকালের পরিক্রমায় নবী ও রাসুল হবে। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখতে পাই হযরত মুসা (আ) : ছিলেন রাখাল, কিছু কাল অন্যের কর্মচারী হিসেবেঅ নিয়োজিত ছিলেন। তবে তিনি জীবনের অধিকাংশ সময়ই কৃষিকাজের সাথে নিয়োজিত ছিলেন।
১৬. হজরত হারুন (আ.): ২০টি আয়াতে তার প্রসঙ্গ এসেছে। তিনি মূসা (আ.)-এর ভাই ছিলেন। চমৎকার কথা বলার স্টাইল ছিলো এ নবীর।
হজরত হারুন আ. হজরত মুসা আ.-এর সহোদর ও বড়ভাই ছিলেন। হযরত হারুন (আ) পেশায় ছিলেন একজন আমলা। অর্থাৎ তিনি রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তা ছিলেন। জনগণের সাথে ছিল তাঁর সুন্দর সম্পর্ক। আপনারা ইতিহাস পড়লে আরো জানতে পারবেন।
১৭. হজরত দাউদ (আ.): হযরত দাঊদ (আঃ) সম্পর্কে কুরআনের ৯টি সূরায় ২৩টি আয়াতে বর্ণিত হয়েছে। তিনি ছিলেন শেষনবী (সা.)-এর আগমনের প্রায় দেড় হাযার বছরের পূর্বেকার নবী দাঊদ (আ.) কেবল রাষ্ট্রক্ষমতা হাতে পেয়েই শক্তিশালী হননি, বরং তিনি জন্মগতভাবেই ছিলেন দৈহিকভাবে শক্তিশালী এবং একই সাথে ঈমানী শক্তিতে বলিয়ান। নিম্নোক্ত ঘটনায় তা বর্ণিত হয়েছে।-
তাকে যাবুর কিতাব প্রদান করা হয়েছিল। তিনি একদিন রোজা রাখতেন, আরেকদিন রাখতেন না। তিনি মনোমুগ্ধকর সুরের অধিকারী ছিলেন।
বর্তমান ফিলিস্তীন সহ সমগ্র ইরাক ও শাম (সিরিয়া) এলাকায় তাঁদের রাজত্ব ছিল। পৃথিবীর অতুলনীয় ক্ষমতার অধিকারী হয়েও তাঁরা ছিলেন সর্বদা আল্লাহর প্রতি অনুগত ও সদা কৃতজ্ঞ। হযরত দাঊদ (আ) জীবিকা নির্বাহ করেছেন কামারের কাজ করে। অর্থাৎ তিনি একজন কামার ছিলেন। লোহা বা মেটালের বিভিন্ন জিনিস তৈরি করে জীবীকা নির্বাহ করতেন।
১৮. হজরত সোলায়মান (আ.): মোট ১৭ বার উল্লেখ হয়েছে তার নাম। তিনি হজরত দাউদ (আ.) এর ছেলে। তিনিও সারা পৃথিবীর বাদশাহ ছিলেন।
হযরত দাঊদ (আঃ)-এর মৃত্যুর পর সুযোগ্য পুত্র সুলায়মান তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন। শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর আবির্ভাবের ন্যূনাধিক দেড় হাযার বছর পূর্বে তিনি নবী হন। সুলায়মান ছিলেন পিতার ১৯জন পুত্রের অন্যতম। আল্লাহ পাক তাকে জ্ঞানে, প্রজ্ঞায় ও নবুঅতের সম্পদে সমৃদ্ধ করেন। এছাড়াও তাঁকে এমন কিছু নে‘মত দান করেন, যা অন্য কোন নবীকে দান করেননি। ইমাম বাগাভী ইতিহাসবিদগণের বরাতে বলেন, সুলায়মান (আঃ)-এর মোট বয়স হয়েছিল ৫৩ বছর। তের বছর বয়সে রাজকার্য হাতে নেন এবং শাসনের চতুর্থ বছরে বায়তুল মুক্বাদ্দাসের নির্মাণ কাজ শুরু করেন। তিনি ৪০ বছর কাল রাজত্ব করেন (মাযহারী, কুরতুবী)। তবে তিনি কত বছর বয়সে নবী হয়েছিলেন সে বিষয়ে কিছু জানা যায় না।
শুধু সমগ্র পৃথিবীর নয়, বরং জ্বীন জাতি, বিহঙ্গকুল ও বায়ুর ওপরও তার আধিপত্য ছিল। এতকিছুর পরেও তিনি মৃত্যুর কবল থেকে রেহাই পাননি। নির্দিষ্ট সময়ে তাকেও মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হয়েছে।
বায়তুল মোকাদ্দাসের নির্মান কাজ শুরু করেছিলেন হজরত দাউদ (আ.) কিন্তু হজরত সোলায়মান (আ.) তা শেষ করেন। তার মৃত্যুর পূর্বে কিছু কাজ অবশিষ্ট ছিল। আর এই কাজ করার দ্বায়িত্ব অবাধ্য জ্বীনদের ওপর ন্যস্ত ছিল। তারা হজরত সোলায়মান (আ.)-এর ভয়ে কাজ করত। জ্বীনরা তার মৃত্যু সংবাদ শুনলেই তৎক্ষণাৎ কাজ করা বাদ দিত। যার ফলে নির্মাণ কাজ অসমাপ্ত থেকে যেত। এইজন্য মৃত্যুর পূর্বক্ষণে তিনি মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হয়ে মেহরাবে প্রবেশ করলেন এবং ইবাদতের উদ্দেশ্যে লাঠিতে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে গেলেন। যথা সময়ে তার আত্মা দেহপিঞ্জর ছেড়ে গেল। লাঠির ওপর দেহের ভর থাকায় বাইরে থেকে দেখে মনে হতো তিনি ইবাদতে মশগুল রয়েছেন। অবশেষে এক বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর বাইতুল মোকাদ্দাসের নির্মাণ কাজও সমাপ্ত হয়ে গেল। হজরত সোলায়মান (আ.)-এর লাঠিতে মহান আল্লাহ তায়ালা উইপোকা লাগিয়ে দিয়েছিলেন। পবিত্র কোরআন পাকে এই উইপোকাকেই ‘দাব্বাতুল আরদ’ বলা হয়েছে। উইপোকা ভেতরে ভেতরে লাঠি খেয়ে ফেলল। লাঠি নষ্ট হয়ে গেলে সোলায়মান (আ.)-এর অসার দেহ মাটিতে পড়ে গেল। এবং তখনই জ্বীনেরা জানতে পারল যে সোলায়মান (আ.) এর মৃত্যু হয়ে গেছে আর তখন তারা সেই জায়গা ত্যাগ করল।
সুলায়মান (আঃ) ৫৩ বছর বেঁচেছিলেন। তন্মধ্যে ৪০ বছর তিনি রাজত্ব করেন। তাঁর মৃত্যুর পরে তাঁর পুত্র রাহবা‘আম ১৭ বছর রাজত্ব করেন। অতঃপর বনু ইস্রাঈলের রাজত্ব বিভক্ত হয়ে যায়। সুলায়মান মনছূরপুরীর হিসাব মতে শেষনবী (সা.)-এর আবির্ভাবের প্রায় ১৫৪৬ বছর পূর্বে সুলায়মান (আঃ) মৃত্যুবরণ করেন।
সুলায়ামন (আঃ)-কেও আল্লাহ বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য দান করেছিলেন, যা আর কাউকে দান করেননি। যেমন: (১) বায়ু প্রবাহ অনুগত হওয়া (২) তামাকে তরল ধাতুতে পরিণত করা (৩) জিনকে অধীনস্ত করা (৪) পক্ষীকূলকে অনুগত করা (৫) পিপীলিকার ভাষা বুঝা (৬) অতুলনীয় সাম্রাজ্য দান করা (৭) প্রাপ্ত অনুগ্রহ রাজির হিসাব না রাখার অনুমতি পাওয়া। হযরত সুলাইমান (আ) পেশায় মূলত শাসক ছিলেন। আমরা জানি সোলাইমান আঃ অর্ধ পৃথিবী শাসন করেছেন। অনেক পশু পাখি জীব যন্তু তার ভাষা বুঝত। জীন জাতি তার সিংহাসন বহন করত। আরো অনেক রহস্যময় ঘটনা তাঁর জীবনের সাথে জড়িত ছিল।
১৯. হজরত ইলিয়াস (আ.): পবিত্র কোরআনে মোট ৩ বার উল্লেখ করা হয়েছে তার নাম।
কুরআনে হযরত ইলইয়াসের(আ:) কথা সুরা আনামের ৮৫ আয়াত ও সুরা সফফাতের ১৩১,১৪৩ আয়াতে বলা হয়েছে। তিনি শাম-বাসীদের জন্য প্রেরিত হয়েছিলেন ও তখন ‘বা’ালবাক্কা শহর ছিল উন্নত। উনার জাতি বা’আল দেবতার মূর্তি-পূজা করত।
ঐতিহাসিক বর্ণনায় এ বিষয়ে প্রায় সবাই একমত যে, তিনি হযরত হিয্ক্বীল (আঃ)-এর পর এবং হযরত আল-ইয়াসা‘ (আঃ)-এর পূর্বে দামেষ্কের পশ্চিমে বা‘লা বাক্কা অঞ্চলের বনু ইস্রাঈলগণের প্রতি প্রেরিত হয়েছিলেন। জানা যায় হযরত ইলিয়াস (আ) পেশায় একজন তাঁতী ছিলেন, তিনি দর্জি আর কৃষিকাজ করে জীবীকা নির্বাহ করতেন।
২০. হজরত ইয়াসা (আ.): কোরআনে কারিমে ২ বার আলোচনা করা হয়েছে তার প্রসঙ্গ।
তিনি ইফরাঈম বিন ইউসুফ বিন ইয়াকূব-এর বংশধর ছিলেন। তিনি ইলিয়াস (আঃ)-এর চাচাতো ভাই এবং তাঁর নায়েব বা প্রতিনিধি ছিলেন। হযরত ইলিয়াস (আঃ) সুলায়মান (আঃ) পরবর্তী পথভ্রষ্ট বনু ইস্রাঈলগণের প্রতি প্রেরিত হয়েছিলেন। তাঁর পরে আল-ইয়াসা‘ নবী হন এবং তিনি ইলিয়াস (আঃ)-এর শরী‘আত অনুযায়ী ফিলিস্তীন অঞ্চলে জনগণকে পরিচালিত করেন ও তাওহীদের দাওয়াত অব্যাহত রাখেন। বাইবেলে তাঁর বিস্তারিত অবস্থা বর্ণিত হয়েছে। সেখানে তাঁর নাম ‘ইলিশা ইবনে সাকিত’ বলে উল্লেখিত হয়েছে। জানা যায় হযরত ইলিয়াস (আ) পেশায় একজন তাঁতী ছিলেন, তিনি দর্জি আর কৃষিকাজ করে জীবীকা নির্বাহ করতেন। তাহলে দেখা যাচ্ছে অধিকাংশ নবী রাসূলগন খেটে খাওয়া মানুষের মত কাজ করে জীবীকা নির্বাহ করতেন।
২১. হজরত ইউনুস (আ.): মোট ২টি আয়াতে উল্লেখ হয়েছে তার নাম। তাকে মাছে গিলে ফেলেছিল। পরে একটি দোয়া করার পর আল্লাহতায়ালা তাকে মুক্তি দেন। যা দুআ ইউনুস নামে পরিচিত।
ইউনুস (আ.) বর্তমান ইরাকের মসুল নগরীর নিকটবর্তী ‘নিনাওয়া’ জনপদের অধিবাসীদের প্রতি প্রেরিত হন। তিনি তাদের তাওহিদের দাওয়াত দেন এবং ইমানের আহ্বান জানান। কিন্তু তারা তাঁর প্রতি অবাধ্যতা প্রদর্শন করে। বারবার দাওয়াত দিয়ে প্রত্যাখ্যাত হয়ে তিনি এলাকা ত্যাগ করে চলে যান। যাওয়ার আগে তিনি নির্দিষ্ট তারিখে আজাব আসার ঘোষণা দেন। ইতিমধ্যে তাঁর কওমের ওপর আজাব নাজিল হওয়ার পূর্বাভাস দেখা দেয়, যদিও তখনো আজাব আসেনি।
এ সময় জনপদবাসী ভাবতে শুরু করে, ইউনুস (আ.) অবশ্যই আল্লাহর নবী। আর নবী কখনো মিথ্যা বলেন না। তাই ইউনুস (আ.)-এর জাতি ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে দ্রুত কুফর ও শিরক থেকে তাওবা করে। জনপদের আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা গবাদি পশুসহ সব কিছু নিয়ে জঙ্গলে পালিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে তারা শিশু ও গবাদি পশুগুলো পৃথক করে দেয়। তারপর তারা আল্লাহর দরবারে কায়মনোচিত্তে কান্নাকাটি শুরু করে। তারা দৃঢ়ভাবে তাওবা করে। আসন্ন আজাব থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করে। আল্লাহ তাদের তাওবা কবুল করেন এবং তাদের ওপর থেকে আজাব উঠিয়ে নেন। হযরত ইউনুস (আ) তাঁর বাবার মতই একজন জেলে ছিলেন। তিনি মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন। মাছ ধরে মাছ বিক্রি করতেন বা বিনিময়ে অন্য খাদ্য বা পণ্য সংগ্রহ করতেন।
২২. হজরত জাকারিয়া (আ.): যাকারিয়া (আঃ) সম্পর্কে কুরআনে কেবল এতটুকু বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি মারিয়ামের লালন-পালনকারী ছিলেন। এ বিষয়ে আল্লাহ সূরা আলে-ইমরানে যা বলেন, তার সার-সংক্ষেপ এই যে, ইমরানের স্ত্রী মানত করেছিলেন যে, আমার গর্ভের সন্তানকে আমি আল্লাহর জন্য উৎসর্গ করে দিলাম। তিনি ধারণা করেছিলেন যে, তার একটি পুত্র সন্তান হবে এবং তাকে তিনি আল্লাহর ঘর বায়তুল মুক্বাদ্দাসের খিদমতে নিয়োগ করবেন। কিন্তু পুত্রের স্থলে কন্যা সন্তান অর্থাৎ মারিয়াম জন্মগ্রহণ করলে তিনি হতাশ হয়ে পড়েন। আল্লাহ তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন, لَيْسَ الذَّكَرُ كَالأُنْثَى ‘এই কন্যার মত কোন পুত্রই নেই’ (আলে-ইমরান ৩/৩৬)। হযরত যাকারিয়া (আ) ছিলেন একজন কাঠমিস্ত্রি। কাঠের মাধ্যমে বিভিন্ন দৃষ্টিনন্দন জিনিস তৈরি করতেন। তা বিক্রি করে আয় করতেন। আর তা দিয়ে জীবন যাপন করতেন।
২৩. হজরত ইয়াহইয়া (আ.): সূরা মারইয়ামে হযরত ইয়াহিয়া (আ:) কথা বলা হয়েছে। যাকারিয়া (আঃ) ও ইয়াহইয়া (আঃ) সুলায়মান (আঃ) পরবর্তী দুই নবী, যারা পরস্পরের পিতা-পুত্র ছিলেন এবং বায়তুল মুক্বাদ্দাসের অধিবাসী ছিলেন। ইয়াহইয়া ছিলেন পরবর্তী নবী ঈসা (আঃ)-এর আপন খালাতো ভাই এবং বয়সে ছয় মাসের বড়। তিনি ঈসার (আঃ) ছয় মাস পূর্বেই দাওয়াতের কাজ শুরু করেন। হযরত যাকারিয়া ও ইয়াহ্ইয়া (আঃ) সম্পর্কে ৪টি সূরার ২২টি আয়াতে বর্ণিত হয়েছে। তন্মধ্যে সূরা আন‘আমে কেবল ১৮জন নবীর নামের তালিকায় তাদের নাম উল্লেখিত হয়েছে। বাকী অন্য সূরাগুলিতে খুবই সংক্ষেপে কেবল ইয়াহ্ইয়ার (আঃ) জন্ম বৃত্তান্ত সম্পর্কে বর্ণনা এসেছে। হযরত ইয়াহিয়া (আ) পেশাগত দিক থেকে শিকার এর কাজ ও ফলমূলাদি সংগ্রহের কাজ করতেন। এর মাধ্যমে তিনি যা আয় করতেন তা নিয়েই পরিবার ও সংসার পরিচালনা করতেন।
২৪. হজরত ঈসা (আ.): মোট ২৫ বার উল্লেখ হয়েছে ঈসা (আ.) এর প্রসঙ্গ। তিনি বনী ইসরাইল সম্প্রদায়ের সর্বশেষ নবী। ওনার আরেক নাম মসিহ।
হজরত ঈসা (আ.) ছিলেন বনি ইসরাঈলের সর্বশেষ নবী ও কিতাবধারী রাসুল। তাঁর ওপর ইনজিল নামের কিতাব নাজিল হয়েছে। তাঁর পর থেকে শেষ নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর আবির্ভাব পর্যন্ত আর কোনো নবী আগমন করেননি। এই সময়টাকে ‘রাসুল আগমনের বিরতি কাল’ বলা হয়। কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার অব্যবহিত কাল আগে হজরত ঈসা (আ.) আল্লাহর হুকুমে আবার পৃথিবীতে অবতরণ করবেন এবং মুহাম্মদি শরিয়ত অনুসরণ করবেন। তিনি ইমাম মাহদির নেতৃত্বে সারা পৃথিবীতে শান্তির রাজ্য কায়েম করবেন। তিনি উম্মতে মুহাম্মদির সঙ্গে বিশ্বসংস্কারে ব্রতী হবেন। হযরত ঈসা (আ) জীবিকা নির্বাহ করার জন্য শিকারী পেশাকে বেছে নিয়েছিলেন। তিনি শিকার করে তা থেকে যা আয় হত তা দিয়ে জীবন যাপন করতেন আর মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকতেন। তাঁকে আল্লাহ তায়ালা আকাশে তুলে নিয়েছেন। আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উম্মত হিসেবে তিনি পৃথিবীতে আবার আসবেন।
২৫. সর্বশেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)
আল্লাহ তাআলা মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ বিন আবদুল মুত্তালিব (সা.)-এর মাধ্যমে নবী-রাসুলের ধারাক্রমের ইতি টানেন। তিনি ছিলেন ইসমাঈল (আ.)-এর বংশধর। মক্কার কোরাইশ বংশে জন্মগ্রহণ করলেও তিনি কিয়ামত পর্যন্ত আগত সব মানুষের নবী। তাঁর পরে আর কোনো নবী আগমন করবেন না। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘মুহাম্মদ তোমাদের মধ্যে কোনো পুরুষের পিতা নন, তবে তিনি আল্লাহর রাসুল এবং সর্বশেষ নবী। আল্লাহ সব বিষয়ে অবগত।’ (সুরা : আহজাব, আয়াত : ৪০)
হজরত মুহাম্মাদ (সা.): পবিত্র কোরআনের চার জায়গায় নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তবে নবীজি (সা.) কে সম্বোধন করা হয়েছে ৪৫০টি আয়াতে। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) পেশায় ছিলেন ব্যবসায়ী ও রাখাল। হযরত খাদিজাতুল কুবরা রাঃ এর ব্যবসার কাজে তিনি নিযুক্ত ছিলেন। অর্থাৎ তিনি অন্যের ব্যবসায় কর্মচারী হিসেবেও কর্মরত ছিলেন।
মানব জাতির আদি পিতা আদম আ. থেকে হজরত মুহাম্মদ সা. পর্যন্ত পূর্বপুরুষগণের নামের তালিকা একনজরে দেখে নিন—
১. হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সা.)
২. তার পিতা আব্দুল্লাহ।
৩. তার পিতা আব্দুল মোত্তালিব।
৪. তার পিতা হাসিম।
৫. তার পিতা আব্দ মানাফ।
৬. তার পিতা কুছাই।
৭. তার পিতা কিলাব।
৮. তার পিতা মুরাহ।
৯. তার পিতা কা’ব।
১০. তার পিতা লুই।
১১. তার পিতা গালিব।
১২. তার পিতা ফাহর।
১৩. তার পিতা মালিক।
১৪. তার পিতা আননাদর
১৫. তার পিতা কিনান।
১৬. তার পিতা খুজাইমা।
১৭. তার পিতা মুদরাইকা।
১৮. তার পিতা ইলাস।
১৯. তার পিতা মুদার।
২০. তার পিতা নিজার।
২১. তার পিতা মা’দ।
২২. তার পিতা আদনান।
২৩. তার পিতা আওয়াদ।
২৪. তার পিতা হুমাইসা।
২৫. তার পিতা সালামান।
২৬. তার পিতা আওয।
২৭. তার পিতা বুয।
২৮. তার পিতা কামওয়াল।
২৯. তার পিতা ওবাই।
৩০. তার পিতা আওয়ান।
৩১. তার পিতা নাসিদ।
৩২. তার পিতা হিযা।
৩৩. তার পিতা বালদাস।
৩৪ . তার পিতা ইয়াদলাফ।
৩৫. তার পিতা তাবিখ।
৩৬. তার পিতা জাহিম।
৩৭. তার পিতা নাহিস।
৩৮. তার পিতা মাখি।
৩৯. তার পিতা আ’য়েফ।
৪০. তার পিতা আবকার।
৪১. তার পিতা উবাইদ।
৪২. তার পিতা আদ দাহা।
৪৩. তার পিতা হামদান।
৪৪. তার পিতা সানবার।
৪৫. তার পিতা ইয়াসরিবি।
৪৬. তার পিতা ইয়াহজিন।
৪৭. তার পিতা ইয়ালহান।
৪৮. তার পিতা ইরাওয়া।
৪৯. তার পিতা আইযি।
৫০. তার পিতা যিশান।
৫১. তার পিতা আইছার।
৫২. তার পিতা আফনাদ।
৫৩. তার পিতা আইহাম।
৫৪. তার পিতা মুকাসির।
৫৫. তার পিতা নাহিস।
৫৬. তার পিতা যারিহ।
৫৭. তার পিতা সামি।
৫৮. তার পিতা মায্যি।
৫৯. তার পিতা ইওয়াদ।
৬০. তার পিতা ইরাম।
৬১. তার পিতা হিদার।
৬২. তার পিতা হযরত ইসমাইল (আ.)।
৬৩. তার পিতা হযরত ইবরাহিম (আ.)।
৬৪. তার পিতা তারক।
৬৫. তার পিতা নাহুর।
৬৬. তার পিতা সারুয।
৬৭. তার পিতা রা’উ।
৬৮. তার পিতা ফাহিয।
৬৯. তার পিতা আবীর।
৭০. তার পিতা আফরাহশাদ।
৭১. তার পিতা সাম।
৭২. তার পিতা হযরত নূহ (আ.)।
৭৩. তার পিতা লামিক।
৭৪. তার পিতা মাতু সালিখ।
৭৫. তার পিতা হযরত ঈদ্রীস (আ.)।
৭৬. তার পিতা ইয়ারিদ।
৭৭. তার পিতা মালহালিল।
৭৮. তার পিতা কিনান।
৭৯. তার পিতা আনস।
৮০. তার পিতা হজরত শীস (আ.)।
৮১. তার পিতা হজরত আদম (আ.)।
What's Your Reaction?






