নাহিদ রানা এর জীবনী | Biography of Nahid Rana
নাহিদ রানা এর জীবনী | Biography of Nahid Rana

ব্যক্তিগত তথ্য |
|
---|---|
জন্ম |
২ অক্টোবর ২০০২ চাঁপাইনবাবগঞ্জ |
উচ্চতা |
১.৯০ মিটার (৬ ফুট ৩ ইঞ্চি) |
ব্যাটিংয়ের ধরন |
ডানহাতি |
বোলিংয়ের ধরন |
ডানহাতি ফাস্ট |
ভূমিকা |
বোলার |
ঘরোয়া দলের তথ্য |
|
বছর |
দল |
২০২১–বর্তমান |
রাজশাহী বিভাগ |
২০২৩ |
খুলনা টাইগার্স |
২০২৩–বর্তমান |
শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাব |
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান |
নাহিদ রানা: গোল্ড, পিওর গোল্ড
নাহিদ রানা
(জন্ম: ২ অক্টোবর ২০০২) একজন বাংলাদেশি ক্রিকেটার, যিনি একজন ডানহাতি ফাস্ট বোলার। যার বলের সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ১৫২ কিলোমিটার। ঘরোয়া ক্রিকেটে তিনি রংপুর রাইডার্স এর হয়ে খেলেন( বিপিএল ২০২৪-২০২৫)।
প্রারম্ভিক জীবন
নাহিদ চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় বেড়ে ওঠেন এবং ২০২০ সালে ক্রিকেট খেলা শুরু করেন। ২০২০ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর তিনি রাজশাহীর একটি ক্রিকেট একাডেমিতে প্রশিক্ষণ নেয়া শুরু করেন। শুরুতে তিনি রাজশাহী বিভাগের ব্যাটসম্যানদের জন্য নেট বোলার হিসেবে কাজ করতেন এবং পরে তাঁর উচ্চ গতির বোলিং দিয়ে নির্বাচকদের নজর কাড়েন।
ঘরোয়া ক্যারিয়ার
নাহিদ ৩১ অক্টোবর ২০২১ তারিখে ২০২১–২২ জাতীয় ক্রিকেট লিগ-এ রাজশাহী বিভাগের হয়ে তার প্রথম শ্রেণির অভিষেক ঘটে। ২০২২ সালের ৩১ অক্টোবর ২০২২–২৩ জাতীয় ক্রিকেট লিগ-এ বরিশাল বিভাগের বিপক্ষে তিনি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তার প্রথম পাঁচ উইকেট শিকার করেন। তিনি ৩২টি উইকেট নিয়ে টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহক হন২০২৩ সালের জানুয়ারিতে তিনি ২০২২–২৩ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ-এ খুলনা টাইগার্স-এর হয়ে খেলার জন্য নির্বাচিত হন। তিনি ২০২৩ সালের ২৪ জানুয়ারি সেই টুর্নামেন্টে খুলনা টাইগার্সের হয়ে তার টোয়েন্টি২০ অভিষেক ঘটে। তাঁর অভিষেক ম্যাচে তিনি ৪ ওভারে ২০ রান দিয়ে ১টি উইকেট নেন এবং ক্রমাগত ১৪০-১৪৮ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা বেগে বল করে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
তিনি ২১ মার্চ ২০২৩ তারিখে ২০২২–২৩ ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগ-এ শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাব-এর হয়ে তার লিস্ট এ ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে।
আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার
২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে, তাকে ২০২২ এশিয়ান গেমস-এর জন্য বাংলাদেশের দলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।২০২৪ সালের মার্চে, তিনি শ্রীলংকার বিপক্ষে সিরিজের জন্য বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেট দলে প্রথমবারের মতো ডাক পান তিনি ২২ মার্চ ২০২৪ তারিখে শ্রীলংকার বিপক্ষে বাংলাদেশের হয়ে তাঁর টেস্ট অভিষেক করেন।
পাকিস্তান সফরে ২য় টেস্টের ২য় ইনিংসে রানা ১৫২ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা বেগে বল করেন, যা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কোনো বাংলাদেশি পেসারের দ্বারা নিক্ষিপ্ত দ্রুততম বল। এর আগে কোনো বাংলাদেশি বোলার ১৫০ এর কোটা ছুঁতে পারেননি।
রংপুর ১৫৫ রান ডিফেন্ড করে মূলত নাহিদের গতির ঝাঁজে। ৪ ওভার বল করে ২৭ রানে তিনি পান ৪ উইকেট। স্বীকৃত টি-টোয়েন্টিতে এটি তার সেরা ফিগার।
সোহান জানান, নাহিদ কীভাবে বল করবেন সেটা বেশিরভাগ সময় নিজে নিজেই ঠিক করছেন, 'নাহিদ স্বাধীনভাবে বোলিং করছে। খুবই দ্রুতগতির বোলার। নিজের মতোই বোলিং করছে। যখন কোনো কিছু নিয়ে সংশয়ে থাকে, তখন আমাকে বলে যে এটা করতে চাচ্ছি এখন। আমার মনে হয়, ও নিজের শতভাগ দেওয়ার চেষ্টা করছে। ভালো বোলিং করছে।'
'মাত্র দুটি ম্যাচ হয়েছে। আমরা দল থেকে চাইব, সে যেভাবে শতভাগ দেওয়ার চেষ্টা করছে, সেটাই করুক। প্রক্রিয়াটা অনুসরণ করুক।'
জাতীয় দলের হয়ে টানা খেলে আসার পর বিপিএলের মতন লম্বা আসর। নাহিদের মতন গতি তারকার ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্টের ইস্যুও আছে। সোহান অবশ্য মনে করেন এই ব্যাপারে এখন বাংলাদেশের সব পেসারই সতর্ক, 'পেস বোলার যারাই থাকে, সবারই একটা সেট-আপ থাকে কীভাবে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করবে। একইসঙ্গে দল ওর কাছে যেটা চাচ্ছে, সেটা দেওয়ার জন্য ভালোভাবে চেষ্টা করছে। ও খুব ভালোভাবে জানে নিজের যত্ন কীভাবে নিতে হবে।'
রহস্য জানালেন নাহিদ রানা
তাঁর বলের গতি লম্বা সময় ধরেই আলোচনায়। চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে উঠে জাতীয় দলে পৌঁছেছেন—এখন নাহিদ রানা প্রথমবারের মতো খেলতে গেছেন আইসিসির টুর্নামেন্টে। সব জায়গায়ই আকর্ষণের কেন্দ্রে নাহিদ ও তাঁর বলের গতি।
চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে আগামীকাল ভারতের বিপক্ষে নিজেদের প্রথম ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। এর আগে আজ বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেনের কাছে নাহিদকে নিয়ে অনেক কিছুই জানতে চেয়েছেন ভারতীয় সাংবাদিকেরা। বাংলাদেশের কোনো বোলার ১৫০ কিলোমিটার গতিতে বল করছেন, তা নিয়ে আগ্রহ থাকারই কথা।
এ বিষয়ে রানার কাছে জানতে চেয়েছে আইসিসিও। প্রথমবার কোনো বৈশ্বিক আসরে খেলতে যাওয়া রানা গতি তোলার পেছনের রহস্য জানিয়ে বলেছেন, ‘আমি মাঠে ও মাঠের বাইরে প্রতিদিনই শিখছি। ফিটনেস, শরীর, ডায়েট কীভাবে ঠিক রাখতে হয়—পরিকল্পনা বুঝে তা বাস্তবায়ন, কোচ ও অভিজ্ঞদের কাছ থেকে শেখা...সবই। শরীরের দিকে খেয়াল রাখা ও ফিট থাকাই জোরে বল করার মূল রহস্য।’

গতির কারণে আলোচনায় আসা রানার ওপর প্রত্যাশা দিনে দিনে বেড়েছে। এবারের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতেও তাঁর প্রতি অনুমিতভাবেই চোখ থাকবে। তাঁর ওপর থাকা প্রত্যাশার কথা জানেন রানাও, ‘যদি ভালো অনুভব করি, আমি জানি গতিও ঠিক থাকবে। দল চায় আমি জোরে বল করি। তারা আমাকে আক্রমণাত্মক মাধ্যম হিসেবে দেখে। আমিও চেষ্টা করি শক্তির জায়গায় নজর রেখে ও স্থির থেকে তাদের আস্থার প্রতিদান দিতে।’
বাকি সবার মতো প্রথমবার আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে খেলতে যাওয়া রানার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের পথচলার এখনো এক বছরও পেরোয়নি। এর মধ্যে সাদা পোশাকের ক্রিকেটেই দেখা গেছে বেশি। ৬ টেস্টের পাশাপাশি আছে ২১টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা। তবে ওয়ানডে খেলেছেন মাত্র তিনটি।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মানিয়ে নিতে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলার অভিজ্ঞতা কাজে এসেছে বলেও জানিয়েছেন নাহিদ, ‘বিশ্বের সেরা ক্রিকেটারদের বিপক্ষে খেলতে পারাটা অনুপ্রেরণার সর্বোচ্চ ধাপ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের প্রতিটি মুহূর্তই আমি উপভোগ করছি। সবকিছু দ্রুত ঘটে যাচ্ছে, তবে আমি সবকিছুর জন্যই কৃতজ্ঞ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মানিয়ে নেওয়া সহজ নয়। কিন্তু আমি সৌভাগ্যবান যে অভিষেকের আগেই ভালো পরিমাণের প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছি। আমার মনে হয় এটাই ভালো বিষয়, সব ধরনের পরিস্থিতি ও কন্ডিশনের মুখোমুখি হয়ে এসেছি। যদিও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট একদমই আলাদা।’গতির আলোচনা কেমন লাগে বিষয়ে রানার উত্তর, ‘আমার মনোযোগটা থাকবে ছন্দ ঠিক রেখে বল ছাড়ার দিকে। কিন্তু একই সঙ্গে, যখন আপনি দেখেন বা শুনেন যে ১৫০ কিলোমিটার গতিতে বল করছেন, ভালোই লাগে।’
পিওর গোল্ড
‘গোল্ড, পিওর গোল্ড’…নাহিদ রানাকে নিয়ে লিখতে বসে ড্যানি মরিসনের কথাটা বারবার কানে বাজছে। গোল্ড, পিওর গোল্ড…।
ড্যানি মরিসনকে কি পরিচয় করিয়ে দিতে হবে? সাবেক কিউই পেস বোলার। ৪৮টি টেস্ট খেলেছেন, ৯৮টি ওয়ানডে। তবে তরুণ ক্রিকেট অনুসারীদের কাছে তিনি কথায় কথায় মজা করা এক ধারাভাষ্যকার। বলে ভালোই গতি ছিল, তবে যে সীমানাটা পেরোলে ফাস্ট বোলার বলা যায়, সেই লক্ষ্মণরেখা পেরোতে পারেননি। এ কারণেই হয়তো নাহিদ রানার মহিমাটা ড্যানি মরিসন আরও ভালো বোঝেন। নাহিদ রানা সম্পর্কে বলেন, ‘গোল্ড, পিওর গোল্ড।’
ক্রিকেটে এক্সপ্রেস ফাস্ট বোলাররা আসলেই তা–ই। ‘এক্সপ্রেস’ কথাটা খেয়াল করতে বলি। বলের গতি ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটার পেরোলেই তাঁকে আপনি ফাস্ট বোলার বলে ফেলতে পারেন। তবে এক্সপ্রেস ফাস্ট বোলার বলতে হলে অন্তত ঘণ্টায় ১৪৫ কিলোমিটার গতি চাই। এমন না যে, এটার নির্দিষ্ট কোনো সংজ্ঞা আছে, ‘একজন বোলার ঘণ্টায় ১৪৫ কিলোমিটার গতিতে বোলিং করিলে তাহাকে এক্সপ্রেস ফাস্ট বোলার বলা হইবে।’ এসব পরিভাষা মুখে মুখে হয়েছে। তা এই এক্সপ্রেস ফাস্ট বোলারদের বলতে পারেন ক্রিকেটের সবচেয়ে অমূল্য রত্ন। চেষ্টাচরিত্র করে কারও বলের গতি হয়তো একটু বাড়ানো যায়, কিন্তু এক্সপ্রেস ফাস্ট বোলার তৈরি করা যায় না। এক্সপ্রেস ফাস্ট বোলাররা গতির ঝড় তোলার সহজাত ক্ষমতা নিয়ে জন্মান।
নাহিদ রানাকে নিয়ে লিখতে বসে ‘ফাস্ট বোলিং কাহাকে বলে এবং উহা কত প্রকার ও কী কী’ টাইপ রচনা ফেঁদে বসায় বিরক্ত হতে পারেন। কিন্তু উপায় নেই। কারণ, নাহিদ রানার অনন্যতা ওই গতিতেই। বাংলাদেশের ক্রিকেটে ১৪০ কিলোমিটারের বোলার বেশ কজনই এসেছেন, এখনো আছেন। কিন্তু ধারাবাহিকভাবে ১৪৫ কিলোমিটারের বেশি গতিতে বোলিং করে প্রায়ই সেটিকে ১৫০ কিলোমিটার ছুঁই ছুঁই করে ফেলা বোলার এর আগে কখনো আসেনি। বাংলাদেশের পটভূমিতে নাহিদ রানা তাই হয়তো ‘গোল্ড, পিওর গোল্ড’–এর চেয়েও বেশি।
বলে বেশি গতি থাকার একটা বিপদও আছে। গতির নেশা বিষম নেশা, সেই নেশায় লাইন–লেংথের কথা অনেক সময় মনে থাকে না। শুরুতে নাহিদ রানারও এই সমস্যা ছিল। গত বছর মার্চে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট অভিষেকে বলের গতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে তাঁর রান বিলানো। দুই ইনিংস মিলিয়ে ৫ উইকেট, তবে বিনিময়মূল্যটা ছিল বড় চড়া। রান দিয়েছিলেন ওভারে প্রায় সোয়া ৬ করে। ক্রিকেট ইতিহাসে সম্ভবত সবচেয়ে বেশি ফাস্ট বোলার উৎপাদন করা ওয়েস্ট ইন্ডিজে এ ধরনের বোলারদের একটা নাম আছে—ডা ওয়াইল্ড থিং! এখানে ‘ডা’ মানে ‘দ্য’। ওয়াইল্ড থিং মানে তো বুঝতেই পারছেন। বল কোথায় যাবে, তার কোনো ঠিকঠিকানা নেই।
সিলেটে জীবনের প্রথম টেস্টে নাহিদ রানা ছিলেন সেই ‘ডা ওয়াইল্ড থিং’। মাস পাঁচেক পর পাকিস্তান সফরের প্রথম টেস্টেও। প্রথম ইনিংসে উইকেট তো পানইনি, ১৯ ওভারে রান দিয়েছিলেন ১০৫। সেখান থেকে নাহিদ রানার প্রত্যাবর্তনটা তাঁর বলের গতির মতোই চোখধাঁধানো। পাকিস্তানেই পরের টেস্টে গতির সঙ্গে লাইন–লেংথের বিবাদভঞ্জন, দ্বিতীয় ইনিংসে ৪৪ রানে ৪ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের জয়েও বড় ভূমিকা তাঁর।
যে পাকিস্তান থেকে নানা সময়ে ‘বিশ্বের দ্রুততম বোলার’ সম্ভবত সবচেয়ে বেশি এসেছে, সেই পাকিস্তানে বাইরের কোনো ফাস্ট বোলার গতির ঝড় তুললে তাতে আলাদা একটা মাত্রা যোগ হয়। তার ওপর দুই দল মিলিয়েই ওই সিরিজের আলোচিত বোলার ছিলেন নাহিদ রানা। সেটিও কোথায়—তর্কযোগ্যভাবে ইতিহাসেরই সবচেয়ে ভীতিকর ফাস্ট বোলার শোয়েব আখতারের শহর রাওয়ালপিন্ডিতে।
মাস দুয়েকের মধ্যে জ্যামাইকার কিংস্টনে এর চেয়েও উজ্জ্বল হয়ে উঠবেন নাহিদ রানা। শোয়েবের কারণে পিন্ডি বিখ্যাত হতে পারে, কিন্তু ফাস্ট বোলিংয়ের কথা বললে জ্যামাইকার সঙ্গে এর কোনো তুলনাই চলে না। কিংবদন্তি সব ফাস্ট বোলারের দেশ ওয়েস্ট ইন্ডিজে গতিময় বোলিং নিয়ে যত কীর্তিগাথা, যত গল্প, তার প্রায় সবই হয় বারবাডোজের কেনসিংটন ওভালে, নয়তো কিংস্টনের স্যাবাইনা পার্কে।
sourse ; prothomalo ... prothomalo ..thedailystar ..wikipedia
What's Your Reaction?






