তিতুমীরের বাঁশের কেল্লা ও তার জীবনী

তিতুমীরের বাঁশের কেল্লা ও তার জীবনী

May 10, 2025 - 13:55
May 10, 2025 - 14:12
 0  1
তিতুমীরের বাঁশের কেল্লা ও তার জীবনী

জন্ম

সৈয়দ মীর নিসার আলী, যিনি তিতুমীর নামে পরিচিত। ছিলেন একজন কৃষক নেতা ও ধর্মীয় সংস্কারক। তিনি ১৭৮২ সালে পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনার চাঁদপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ব্রিটিশ শাসকদের অত্যাচার ও জমিদারদের অন্যায় কর আদায়ের বিরুদ্ধে তিনি সাধারণ মানুষকে সংগঠিত করেছিলেন।

প্রারম্ভিক জীবন

১৮২২ সালে তিতুমীর মক্কায় হজ্ব পালনের উদ্দেশ্যে যান।[১২] তিনি সেখানে আরবের স্বাধীনতার অন্যতম পথপ্রদর্শক সৈয়দ আহমেদ শহীদের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন ও ওয়াহাবী মতবাদে অনুপ্রাণিত হন। সেখান থেকে এসে (১৮২৭) তিতুমীর তার গ্রামের দরিদ্র কৃষকদের সাথে নিয়ে জমিদার এবং ব্রিটিশ নীলকদের বিরুদ্ধে সংগঠিত হয়ে আন্দোলন শুরু করেন। তিনি এবং তার অনুসারীরা তৎকালীন হিন্দু জমিদারদের অত্যাচারের প্রতিবাদে ধুতির বদলে 'তাহ্‌বান্দ' নামে এক ধরনের বস্ত্র পরিধান শুরু করেন। তিতুমীর হিন্দু জমিদার কৃষ্ণদেব রায় কর্তৃক মুসলমানদের উপর বৈষম্যমূলকভাবে আরোপিত 'দাঁড়ির খাজনা' এবং মসজিদের করের তীব্র বিরোধিতা করেন। তিতুমীর ও তার অনুসারীদের সাথে স্থানীয় জমিদার ও নীলকর সাহেবদের মধ্যে সংঘর্ষ তীব্রতর হতে থাকে। আগেই তিতুমীর পালোয়ান হিসাবে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন এবং পূর্বে জমিদারের লাঠিয়াল হিসাবে কর্মরত ছিলেন। তিনি তার অনুসারীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে তোলেন।

তিতুমীরের অনুসারীর সংখ্যা বেড়ে এক সময় ৫,০০০ এ গিয়ে পৌঁছায়।[১৩] তারা সশস্ত্র সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত হয়। ১৮৩১ সালের ২৩ অক্টোবর বারাসতের কাছে বাদুড়িয়ার ১০ কিলোমিটার দূরে নারিকেলবাড়িয়া গ্রামে তারা বাঁশের কেল্লা তৈরি করেন। বাঁশ এবং কাদা দিয়ে তারা দ্বি-স্তর বিশিষ্ট এই কেল্লা নির্মাণ করেন।

জন্ম

জন্ম: ২৭ জানুয়ারি১৭৮২, ১৪ মাঘ, ১১৮২ বঙ্গাব্দ 

পেশা

সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী বিদ্রোহী নেতা

পিতা

সৈয়দ মীর হাসান আলি 

মাতা

আবিদা রুকাইয়া খাতুন 

মৃত্যু 

১৯ নভেম্বর, ১৮৩১

বারাসাতের যুদ্ধ ও তিতুমীরের মৃত্য

তিতুমীর বর্তমান চব্বিশ পরগনা, নদীয়া এবং ফরিদপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের অধিকার নিয়ে সেখানে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। নিজেকে 'বাদশাহ করে মৈনুদ্দিন নামে জনৈক ওয়াহাবীকে প্রধানমন্ত্রী ও তার ভাগ্নে গোলাম মাসুমকে সেনাপতি নিযুক্ত করেন। স্থানীয় জমিদারদের নিজস্ব বাহিনী এবং ব্রিটিশ বাহিনী তিতুমীরের হাতে বেশ কয়েকবার পরাজয় বরণ করে। তন্মধ্যে বারাসত বিদ্রোহ অন্যতম। উইলিয়াম হান্টার বলেন, ঐ বিদ্রোহে প্রায় ৮৩ হাজার কৃষকসেনা তিতুমীরের পক্ষে যুদ্ধ করেন।

অবশেষে ১৮৩১ সালের ১৩ নভেম্বর ব্রিটিশ সৈন্যরা তাদের চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে। তিতুমীর স্বাধীনতা ঘোষণা দিলেন, "ভাই সব, একটু পরেই ইংরেজ বাহিনী আমাদের কেল্লা আক্রমণ করবে। লড়াইতে হার-জিত আছেই, এতে আমাদের ভয় পেলে চলবে না। দেশের জন্য শহীদ হওয়ার মর্যাদা অনেক। তবে এই লড়াই আমাদের শেষ লড়াই নয়। আমাদের কাছ থেকে প্রেরণা পেয়েই এ দেশের মানুষ একদিন দেশ উদ্ধার করবে । আমরা যে লড়াই শুরু করলাম, এই পথ ধরেই একদিন দেশ স্বাধীন হবে। ১৪ নভেম্বর কর্নেল হার্ডিং-এর নেতৃত্বে ব্রিটিশ সৈন্যরা ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তিতুমীর ও তার অনুসারীদের আক্রমণ করে। তাদের সাধারণ তলোয়ার ও হালকা অস্ত্র নিয়ে তিতুমীর ও তার সৈন্যরা ব্রিটিশ সৈন্যদের আধুনিক অস্ত্রের সামনে দাঁড়াতে পারে নি। ১৯ নভেম্বর।   তিতুমীর ও তার চল্লিশ জন সহচর শহীদ হন। তার বাহিনীর প্রধান মাসুম খাঁ বা গোলাম মাসুমকে ফাঁসি দেওয়া হয় এবং বাশেঁর কেল্লা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। 

সম্মাননা

তিতুমীর বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রেরণার উৎস হিসাবে কাজ করেছে। ১৯৭১ সালে মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ কলেজ কে তার নাম অনুসারে সরকারি তিতুমীর কলেজ নামকরণ করা হয়। তার নামে বুয়েট এ একটি ছাত্র হলের নামকরণ করা হয় তিতুমীর হল বিবিসির জরিপে তিনি ১১ তম শ্রেষ্ঠ বাঙালি। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে তিতুমীরের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৭৪ সালের ১০ ডিসেম্বর শেখ মুজিবুর রহমান খুলনা শহরে রূপসা নদীর তীরে 'বানৌজা তিতুমীর' নামে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর একটি ঘাঁটি কমিশন করেন ও ‘নেভাল এনসাইন’ প্রদান করেন। এছাড়া বাংলাদেশ নৌবাহিনীর একটি জাহাজের নামকরণ করা হয় বিএনএস তিতুমীর। রাজশাহী ও নীলফামারী জেলার চিলাহাটি স্টেশনের মধ্যে 'তিতুুমীর এক্সপ্রেস' নামে একটি আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করে। পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগণার বারাসাত শহরে চাঁপাডালি মোড়ে শহরের মূল বাসস্ট্যান্ডকে তিতুমীরের নাম যোগ করে তিতুমীর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল করা হয়েছে।
মৃত্যু
অবশেষে ১৮৩১ সালের ১৪ নভেম্বর কর্নেল হার্ডিং-এর নেতৃত্বে ব্রিটিশ সৈন্যরা ভারী অস্ত্রশস্ত্র ও কামানগোলা নিয়ে তিতুমীর ও তাঁর অনুসারীদের অক্রমন করে। তিতুমির তাঁর অনুসারীদের নিয়ে যুদ্ধে অবতীর্ণ হন, কিন্তু কামানগোলার আঘাতে তিতুমিরের বাঁশের কেল্লা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়। যেই যুদ্ধে বাঁশের বিরুদ্ধে ইংরেজদের কামানগোলা ব্যবহার করতে হয়, সেই যুদ্ধে বাঁশ কত বড় একটা অস্ত্র ছিল তা বলা বাহুল্য। অবশেষে ১৯শে নভেম্বর তিতুমীর নিহত হন। তাঁর বাঁশের কেল্লা ধ্বংস করে দেয়া হয়।

What's Your Reaction?

Like Like 0
Dislike Dislike 0
Love Love 0
Funny Funny 0
Angry Angry 0
Sad Sad 0
Wow Wow 0