জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচ এর জীবনী | Biography Of Zlatan Ibrahimovic

জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচ এর জীবনী | Biography Of Zlatan Ibrahimovic

May 21, 2025 - 16:13
May 28, 2025 - 22:48
 0  1
জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচ এর জীবনী | Biography Of  Zlatan Ibrahimovic

পূর্ণ নাম

জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচ
জন্ম 
৩ অক্টোবর ১৯৮১ (বয়স ৪৩)

জন্ম স্থান

মালমো, সুইডেন

উচ্চতা

১.৯৫ মিটার

মাঠে অবস্থান

স্ট্রাইকার

জার্সি নম্বর

১১

পূর্ণ নাম
জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচ
জন্ম
৩ অক্টোবর ১৯৮১ (বয়স ৪৩)
জন্ম স্থান
মালমো, সুইডেন
উচ্চতা
১.৯৫ মিটার
মাঠে অবস্থান
স্ট্রাইকার
ক্লাবের তথ্য বর্তমান দল
এসি মিলান
জার্সি নম্বর
১১
যুব পর্যায়
১৯৮৯–১৯৯১ এফ সি রোসেনগার্ড
১৯৯১–১৯৯৫ এফ বি কে বালকান
১৯৯৫–১৯৯৯ মালমো এফ এফ
জ্যেষ্ঠ পর্যায়*
বছর দল ম্যাচ (গোল)
১৯৯৯–২০০১ মালমো এফ এফ ৪০ (১৬)
২০০১–২০০৪ আয়াক্স ৭৪ (৩৫)
২০০৪–২০০৬ জুভেন্টাস ৭০ (২৩)
২০০৬–২০০৯ ইন্টার মিলান ৮৮ (৫৭)
২০০৯–২০১০ বার্সেলোনা ২৯ (১৬)
২০১০–২০১১ → এসি মিলান (ধার) ২৯ (১৪)
২০১১–২০১২ এসি মিলান ৩২ (২৮)
২০১২–২০১৬ প্যারিস সেইন্ট-জার্মেইন ৬২ (৫৫)
২০১৬–২০১৭ ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ৩৪ (২৯)
২০১৭–২০১৯ এলএ গ্যালাক্সি ৫৬ (৫২)
২০২০– এসি মিলান ৬০ (৩৩)
জাতীয় দল‡
২০০১ সুইডেন অনুর্ধ্ব-২১ (৬)
২০০১– সুইডেন ১২১ (৬২)

১৯৮১ সালে ৩ অক্টোবর সুইডেনের মালমোতে বসনিয়ান বাবা এবং ক্রোয়েশিয়ান মায়ের ঘরে জন্ম হয় জাতান ইব্রাহিমোভিচের। জাতানের বাবা এবং মায়ের সম্পর্ক খুব একটা ভালো ছিলো না। ফলে দুই বছর বয়সেই বাবা-মায়ের বিবাহ বিচ্ছেদের সাক্ষী হতে হয় ইব্রাহিমোভিচকে। সুইডেনের ডিভোর্সের আইন অনুসারে জাতানের লালন-পালনের দায়িত্ব পান তার মা। সেখান থেকেই কঠিন এক শৈশবের শুরু হয় তার।

“আমার মায়ের সাথে বসবাস করা আর পরিবারে নতুন একজন সৎ বাবার আগমন দেখা আমার জন্য খুব কঠিন অভিজ্ঞতা ছিল।’”নিজের আত্মজীবনী ‘I am Zlatan’-এ এভাবেই নিজের শৈশবের কথা জানান এই সুইডিশ ফুটবলার।


ছোটবেলায় জাতান ইব্রাহিমোভিচ

বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ খুব ভালভাবে নিতে পারেননি ইব্রাহিমোভিচ। ফলে এক পর্যায়ে তার শরীরের ওজন অস্বাভাবিক হারে কমে যায় । এই অবস্থা কেটে উঠতে ইব্রার বেশ সময় লাগে। পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠেন যখন বাবার সাথে সম্পর্ক স্থাপন করার সুযোগ পান। মায়ের চেয়ে বাবাকেই বেশি পছন্দের ছিল ইব্রাহিমোভিচের। বাবার সাথে বেশ কিছু ঘটনার কথা বর্ণনা করেন ইব্রাহিমোভিচ। একবার ইব্রার বাবার হাতে খুব বেশি টাকা ছিলো না। কিন্তু তিনি ইব্রার জন্য IKEA থেকে একটি খাট কিনেন। খাট কিনলেও সেটি বাসায় নিয়ে যাওয়ার ভাড়া ছিলো না তাদের।

“আমরা নিজেরাই খাটটি বহন করে বাসায় নিয়ে যাই। এটি খুবই চমৎকার অভিজ্ঞতা ছিল। আমি আমার মায়ের সাথে সময় কাটিয়েছি কিন্তু সত্যিকারে বাস করেছি আমার বাবার সাথে। একবার আমার বাবা আমাকে তার বেতনের সব টাকা দিয়ে দিয়েছিলেন, যাতে এটা আমি নিজের জন্য সংরক্ষণ করতে পারি।”স্ত্রীর সাথে বিচ্ছেদ হওয়ার পরেও সেফিক ইব্রাহিমোভিচের মানসিক অবস্থা খুব ভাল ছিলো না। বলকান যুদ্ধে নিজের গ্রামে সার্বিয়ান সৈন্যদের আক্রমণের স্মৃতি তাকে তাড়া করে বেড়াচ্ছিল। বেশিরভাগ সময়ে মদেই ডুবে থাকতেন তিনি। ফলে ইব্রার শৈশব ছিল খুবই একা এবং মেজাজ থাকতো রুক্ষ। জাতানের ভাষায়, “আমার ছেলেবেলার সবচেয়ে কঠিন সময় ছিল বাবার সঙ্গ না পাওয়া।”


ইব্রাহিমোভিচ এবং তার বাবা;

বসনিয়ান কেয়ারটেকার এবং ক্রোয়েশিয়ান ক্লিনারের ছেলে হিসেবে জাতান ইব্রাহিমোভিচের জন্য বেড়ে ওঠা অনেক কঠিন ছিল। অল্প বয়সে বাবা-মায়ের বিচ্ছেদের খারাপ প্রভাবে ইব্রা একরোখা চরিত্রের মানুষ হিসেবেই বেড়ে উঠেন। তার মতে, “কেউ আমাকে জিজ্ঞেস করত না, আমার দিন কেমন ছিল।” ঘরে কারো সান্নিধ্য না পেলেও মালমোর অভিবাসী, যারা নিজেদের গ্যাংস্টার ধরনের যাবতীয় কাজকর্মের প্রতিনিয়ত হতেন মিডিয়ার সংবাদ, তাদের মাঝেই নিজেকে খুঁজে পেয়েছিলেন লম্বা নাকধারী এই যুবক। এই সময়টাতেই আত্মপরতা এবং মেজাজি স্বভাব সত্যিকার অর্থে ভর করে ইব্রাহিমোভিচের উপর। সেই সময়ে ইব্রা আত্মপ্রকাশ করেছিলেন সাইকেল এবং মিষ্টি চোর হিসেবে। একটি সাক্ষাতকারে ইব্রাহিমোভিচ বলেন, “আমাদের কিছু দরকার হলে আমাদের কাজ ছিল দোকানে যাওয়া আর চুরি করা…বিশেষ করে সাইকেলের সাথে আমার বেশ সখ্যতা ছিল।” 

একবার তো এমনই হয়েছে যে, নিজের কোচের সাইকেল চুরি করে ফেলেছিলেন ভুল করে! পরে বুঝতে পেরে কীভাবে ফেরত দেবেন, ঠিক করতে পারছিলেন না। শেষ পর্যন্ত ফেরত দিলে কোচ বুঝতে পারলেও তেমন কিছু বলেননি।

নিজের জন্মস্থান রোজেনগার্ডকে জাতান এখনও স্বর্গ বলেই মনে করেন। সাম্প্রতিক সময়ে জাতান জানান, নিজের পুরনো বাসস্থানকে বিশ্বের সবচেয়ে দামী হোটেলগুলোর চেয়েও বেশি আপন মনে হয় তার। যদিও জাতান ভোলেননি, রোজেনগার্ড ছিল খুবই ভয়ংকর জায়গা।

তিনি বলেন,“ফুটবল আমাকে মুক্ত করেছে। একটা সময়ে রোজেনগার্ডে মদ এবং নেশা ছিল আমার জীবন। আমি খুশি যে আমি এগুলো থেকে দূরে থাকতে পেরেছি। সুতরাং যাদের বাবা নেই, যারা নিজেদেরকে ভিন্ন ভাবে অথবা যারা নিজেদেরকে দুর্ভাগা মনে করে তাদের প্রতি আমার উপদেশ থাকবে, নিজের উপর বিশ্বাস রাখো, একদিন তুমি পারবে সফল হতে। সুযোগ সব সময়েই আছে, সবকিছুই তোমার উপর নির্ভর করে।”

নিজের জন্মস্থান রোজেনগার্ডে জাতান

৬ বছর বয়সে একজোড়া বুট পাওয়ার পর জাতান নিজের মায়ের ঘরের বাইরের মাঠে খেলা শুরু করেন। ছোট এবং নুড়ি পাথরে ভরা রুক্ষ মাঠে জাতান এবং বন্ধুরা বিভিন্ন স্কিল, ট্রিকস, স্পিন, ফ্লিক এবং শট অনুশীলন করতো। জায়গা কম থাকায় পায়ে এবং মাথায় দুই জায়গাতেই খুব দ্রুত হতে হত। জাতানের মতে,

“যখন আমরা রোজেনগার্ডে ফুটবল খেলতাম , ফুটবল মানেই ছিল অন্যের পায়ের ফাঁক দিয়ে বল বের করা, ভিন্ন ভিন্ন স্কিল প্রদর্শন। প্রতিটি ট্রিকের পর দর্শকরা উল্লাস করতো। কে সবচেয়ে কঠিন শট মারতে পারে, কে সবচেয়ে ভালো মুভ দেখাতে পারে- সেগুলোই ছিল আসল। আমি এটি খুবই ভালোবাসতাম।”

নিজের খরচ জোগাতে ১৫ বছর বয়সে ফুটবল খেলার পাশাপাশি মালমো ডকে কাজ শুরু করেন তিনি। একপর্যায়ে ফুটবল খেলা ছেড়ে দেওয়ার চিন্তাভাবনা করেন। কিন্তু তার কোচ বুঝিয়ে শুনিয়ে ফুটবল খেলায় মনোযোগ ফিরিয়ে নিয়ে আসেন তার। পেশাদার ফুটবলার হিসেবে নিজের ক্যারিয়ার গড়ার চিন্তা করলে আরও একবার বাধার সম্মুখীন হন ইব্রা। ১৭ বছর বয়সে যোগ দেন নিজের শহরের সবচেয়ে বড় ক্লাব মালমোতে। একই দলের আরেক খেলোয়াড়ের বাবা-মা আরও কয়েকজনের অভিভাবক সহ ইব্রাকে ক্লাব থেকে বহিষ্কারের জন্য ক্লাবের ম্যানেজমেন্ট বরাবর দরখাস্ত করেন। এর পেছনে কারণ ছিল, ইব্রা তাদের একমাত্র ছেলের মাথায় ঢুস মেরেছিল। ইব্রা বলেন,“সেই খেলোয়াড় তার বাবা-মায়ের কাছ থেকে একটি চিঠি পেয়েছিলো এবং সবাইকে অনুরোধ করছিলো, যাতে সবাই এটিতে স্বাক্ষর করে যাতে তারা আমাকে ক্লাব থেকে বের করে দেয়। আমি যদি আমাকে আবার আগের জায়গায় ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারি তাহলে আমি কখনোই এটি আবার করতাম না। কিন্তু তখন আমি ছিলাম একজন রাগী যুবক।”

ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে মালমোতে

১৮ বছর বয়সে ইব্রাহিমোভিচ বুঝতে পারেন, ফুটবলে তার ভালো ভবিষ্যৎ আছে, একমাত্র ফুটবলই পারে তাকে দরিদ্রতা থেকে মুক্ত করতে। ১৯৯৯ সালে দ্বিতীয় বিভাগের দল মালমো ফুটবল ক্লাবের হয়ে তার অভিষেক হয় পেশাদার ফুটবলে এবং পরের মৌসুমেই মালমোকে তুলে নিয়ে আসেন সুইডেনের প্রথম বিভাগে। পরের বছরই ৬ ফুট ৫ ইঞ্চি উচ্চতার এই স্ট্রাইকার তৎকালীন সুইডিশ ট্রান্সফার রেকর্ডে পাড়ি জমান বিখ্যাত ডাচ ক্লাব আয়াক্স ফুটবল ক্লাবে। সেখানে অসাধারণ নৈপুণ্যের সাথে লিগ জেতেন দুবার। মাঠে সাফল্য আসলেও মিডিয়াতে ততদিনে মেজাজি খেলোয়াড়ের তকমা পেয়ে যান জাতান।

যদিও জাতান অসাধারণ প্রতিভার অধিকারী ছিলেন, কিন্তু তিনি যেখানেই গিয়েছেন বিতর্ক তার পিছু ছাড়েনি। এটির কারণ হতে পারে জাতানের উদ্ধত স্বভাব, যার কারণ ছিল তার দুঃসহ শৈশব। এর মাঝে দুটি ঘটনা মিডিয়াতে বেশ আলোড়ন তুলেছিল। আয়াক্সে থাকাকালীন নিজের দলের খেলোয়াড় রাফায়েল ভন ডার ভার্টের সাথে ঝগড়ার পরে তার পা ভেঙে দেবেন বলে হুমকি দিয়েছিলেন জাতান। কিছুদিন পরে নেদারল্যান্ড এবং সুইডেন আন্তর্জাতিক ম্যাচে মুখোমুখি হলে জাতানের ট্যাকলে ইনজুরড হয়ে মাঠ ছাড়েন এই ডাচ খেলোয়াড়। পরবর্তীতে ভন ডার ভার্ট দাবি করেন, জাতান এটি ইচ্ছে করে করেছেন। তবে নিজের বায়োগ্রাফিতে এই অভিযোগ অস্বীকার করে এটি অনিচ্ছাকৃত ছিল বলে জানান ইব্রা।

তায়কান্দোতে ব্ল্যাকবেল্টধারী সুগঠিত দেহের অধিকারী ইব্রা আরেকবার মারামারিতে জড়ান এসি মিলান সতীর্থ আমেরিকান ফুটবলার অগুচি অনিউর সাথে। অনিউ নিজেও ছিলেন জাতানের মতোই দীর্ঘ এবং বিশাল দেহের অধিকারী। এই মারামারিতে জাতানের মেরুদণ্ডের হাড় ভেঙে গিয়েছিলো। জানা যায়, এই দুজনের মধ্যকার এই মারামারি থামাতে কোচ সহ প্রায় ১০ জন মানুষ লেগেছিল। বারবার ক্লাব বদলের কারণেও জাতান জন্ম দিয়েছেন অনেক বিতর্কের। এই কারণে অনেক খেলোয়াড় এবং দর্শকের তেমন একটা পছন্দের পাত্র নন এই স্ট্রাইকার।

দুই সন্তান এবং প্রেমিকার সাথে জাতান

১০ বছর বয়সে নিজের পাড়ার ক্লাব এফবিকে বলকানের হয়ে যখন খেলছিলেন, একটি ম্যাচে দ্বিতীয় অর্ধে মাঠে নামেন তিনি, যখন তার দল ৫-০ তে পিছিয়ে ছিল। দ্বিতীয়ার্ধে ম্যাচের দায়িত্ব একাই নিজের মাথায় তুলে নেন। একাই ৮ গোল করে দলকে জেতান ৮-৫ গোলে। এই ম্যাচের মাধ্যমেই জন্ম হয়েছিলো জাতান ইব্রাহিমোভিচের। খুব অল্প বয়সেই ইউরোপের অনেক বড় দলের নজর পড়েছিল এই সুইডিশ বালকের উপর।

ব্যক্তিগত জীবনে এখনো বিয়ে না করলেও সাবেক সুইডিশ মডেল হেলেনা সেগারের সাথে দীর্ঘদিনের সম্পর্কে আছেন জাতানের। তাদের রয়েছে দুই সন্তান। নিজের শরীরে ট্যাটু আঁকাতে পছন্দ করেন এই তারকা। ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে একবার গোল করে জাতান নিজের জার্সি খুলে ট্যাটু প্রদর্শন করেন। জাতিসংঘের ফুড প্রোগামের অংশ হিসেবে জাতান বিশ্বজুড়ে ক্ষুধার্ত আছে এমন ৫০ জনের নাম নিজের শরীরে লেখান। জাতানের শরীরে অনেকগুলোই ট্যাটু আছে, কিন্তু কিছু ট্যাটু আছে যেগুলো তার ব্যক্তিত্বকে প্রকাশ করে। তার শরীরে রয়েছে ড্রাগনের একটি ট্যাটু, যেটি জাতানের যোদ্ধার মতো মানসিকতার পরিচয় বহন করে। আরও আছে কই মাছের একটি ট্যাটু, যেটি প্রকাশ করে স্রোতের বিপরীতে যাওয়ার মনোভাব।

ফুটবলের বাইরে সফল ব্যবসায়ীও জাতান ইব্রাহিমোভিচ। সুইডেনে A-Z নামে একটি ব্র্যান্ড রয়েছে তার। সুইডিশ জাতীয় দল থেকে অবসর নেওয়া এই তারকার মোট সম্পদের পরিমাণ আনুমানিক ১৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। আর ফোর্বসের মতে, তার বার্ষিক আয় ৩২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

সুইডিশ হলেও জাতানের ফুটবল আইডল ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার রোনালদো। ছোটবেলায় রোনালদোকেই অনুকরণ করার চেষ্টা করতেন ৩৬ বছর বয়সী এই ফুটবলার। ভিন্ন ভিন্ন ক্লাবের হয়ে লিগ জেতা এই স্ট্রাইকার যেখানেই গেছেন, যেই কোচের অধীনেই খেলেছেন, গোল করেছে অনেক। নিজের সময়ের অন্যতম সেরা এই স্ট্রাইকার বলেন,

“আমি সবসময়েই নিজেকে দ্বিতীয়তে রাখতে পছন্দ করি। আমি যেখানেই গিয়েছি আমার সতীর্থদের, ভক্তদের খুশি করার চেষ্টা করেছি। আমি গত ১০ বছরে ৫টি ভিন্ন ক্লাবের ৯ বার লিগ জিতেছি। কিন্তু আমি তখনই সন্তুষ্ট, যখন আমার সতীর্থ, কোচ, ভক্ত সবাই খুশি। আমার হৃদয় অনেক বড়।”

সুইডিশ হলেও জাতানের ফুটবল আইডল ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার রোনালদো

জাতানের সাক্ষাতকারগুলো দেখলে একটি জিনিস স্পষ্ট বোঝা যাবে যে, তার নিজেকে খুবই পছন্দ। বাস্তবিকেই নিজের নাম তার এতটাই পছন্দ যে, ২০০৩ সালে সুইডেনে নিজের নাম ট্রেডমার্ক হিসেবে রেজিস্ট্রেশন করান, যাতে অন্য কেউ তার নাম বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করতে না পারে। ফ্রান্সে এখন ‘Zlataner’ এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে ‘To Crush’। সুইডিশ শব্দভাণ্ডারে ক্রিয়াপদ হিসেবে ‘To Zlatan’ শব্দটি যুক্ত করা হয়েছে, যেটির অর্থ হচ্ছে ‘To do something audacious or outrageously brilliant’। জাতান ইব্রাহিমোভিচ শুধু একজন ফুটবলারের নাম নয়। তিনি হয়ে উঠেছেন একজন প্রতীক, জীবনযাপনের এক স্বতন্ত্র ধারা।

নিজের রাগী স্বভাব এখনো বজায় থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে ইব্রা বলেন, “আগে রাগ আমাকে নিয়ন্ত্রণ করতো কিন্তু এখন আমি এখন রাগকে নিয়ন্ত্রণ করি।” ৯ বার সুইডেনের সেরা খেলোয়াড়ের খেতাব পাওয়া এই খেলোয়াড় ২০১১ সালে নিজের আত্মজীবনী ‘I am Zltan’ প্রকাশ করেন। বেস্ট সেলিং খেতাব পাওয়া এই বইয়ে নিজের শৈশবের বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন তিনি। পেপ গার্দিওলার সাথে তার সম্পর্ক নিয়েও বেশ খোলাখুলি আলোচনা করেছেন এখানে। ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে বইটির ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশিত হয়।

জীবনী

জ্লাতান 1981 সালে সুইডেনের মাল্মে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি পাঁচ বছর বয়সে তার প্রথম জোড়া ফুটবল বুট পেয়েছিলেন এবং এই ছোট বয়সেও এটি স্পষ্ট ছিল যে তিনি একটি অসাধারণ ফুটবলার হওয়ার সম্ভাবনা পেয়েছিলেন। তিনি সুইডেনের অন্যতম রাউজেস্ট অঞ্চল হিসাবে পরিচিত কুখ্যাত পাড়া রোজেনগার্ডে বেড়ে ওঠেন, তবে এটি তাকে বাধা দেয়নি। কয়েক বছর ধরে স্থানীয় সুইডিশ ক্লাবের হয়ে খেলার পরে তিনি তার কৈশোরে মাল্মা এফএফ -তে স্থানান্তরিত হয়েছিলেন এবং এখানেই তিনি একজন পেশাদার ফুটবলার হিসাবে ক্যারিয়ার শুরু করতে শুরু করেছিলেন।

জ্লাতান মাল্মা এফএফের যুব একাডেমির মাধ্যমে অগ্রসর হয়েছিল এবং সিনিয়র স্তরে তাঁর যুগান্তকারী ১৯৯৯-২০০০ মৌসুমে এসেছিল যখন তিনি কোচ রোল্যান্ড অ্যান্ডারসনের অধীনে মালমা এফএফের প্রথম দলের হয়ে খেলেছিলেন। জ্লাতান সুইডেনকে তার দুর্দান্ত কৌশল এবং দুর্দান্ত গোল স্কোরিংয়ের ক্ষমতা দিয়ে অবাক করে দিয়েছিল। একজন দৃ determined ় 18 বছর বয়সী হিসাবে তিনি ইতিমধ্যে এই মুহুর্তে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে তিনি জাপান এবং কোরিয়ায় বিশ্বকাপ 2002 সালে সুইডেনের হয়ে খেলতে যাচ্ছেন।

বিশ্বজুড়ে শীর্ষ ক্লাবগুলি দ্বারা অনুধাবন করার পরে, জ্লাতান অবশেষে আজাক্সে স্থানান্তর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন এবং তিনি জুলাই 2001 সালে আমস্টারডাম ক্লাবে যোগদান করেছিলেন। তিনি 9 নম্বর শার্ট পেয়েছিলেন, যা এর আগে নওয়ানকো কানু, প্যাট্রিক ক্লুইভার্ট এবং কিংবদন্তি মার্কো ভ্যান বাস্টেন পরেছিলেন। সুইডেনের অনূর্ধ্ব -২০-এর হয়ে খেলার পরে, সুইডিশ জাতীয় দলের পরিচালক টমি সডারবার্গ এবং লার্স লেগারব্যাক ২০০১ সালের জানুয়ারিতে সুইডেনের ফ্যারো দ্বীপপুঞ্জের বিপক্ষে আন্তর্জাতিক আত্মপ্রকাশের জন্য জ্লাতানকে বেছে নিয়েছিলেন এবং তার পর থেকে জ্লাতান সুইডিশ জাতীয় দলের অংশ ছিলেন।

জ্লাতান তার প্রথম মৌসুমটি আজাক্সে শেষ করেছিলেন, ঠিক যেমন তিনি এটি শুরু করেছিলেন, শীর্ষে। তিনি ডাচ কাপ ফাইনালে উট্রেচটের বিপক্ষে গোল্ডেন গোলটি করেছিলেন এবং অ্যাজাক্স লিগ এবং কাপ উভয়ই জিতেছিলেন। ২০০২ বিশ্বকাপে সুইডিশ স্কোয়াডের ২৩ জন খেলোয়াড়ের একজন হিসাবে নির্বাচিত হওয়ার পরে তাঁর সাফল্য অব্যাহত ছিল, যেখানে তিনি আর্জেন্টিনা এবং সেনেগালের বিপক্ষে খেলেছিলেন।
আইএমডিবি মিনি জীবনী লিখেছেন: বেনামে


পরিবার

বাচ্চারা
ম্যাক্সিমিলিয়ান ইব্রাহিমোভিচ
ভিনসেন্ট ইব্রাহিমোভিচ
বাবা -মা
সেফিক ইব্রাহিমোভিচ
জুরকা গ্রাভিক
আত্মীয়
সানেলা ইব্রাহিমোভিচ (ভাইবোন)
সাপকো ইব্রাহিমোভিচ (অর্ধ ভাইবোন)
আলেকসান্দার জর্ডজেভিক (অর্ধ ভাইবোন)
মনিকা অ্যানিক (অর্ধ ভাইবোন)
ভায়োলেটা অ্যানিক (অর্ধ ভাইবোন)


ট্রিভিয়া

তিনি অভিনেতা মিকেল পার্সব্র্যান্ডের সাথে ভাল বন্ধু।
স্টকহোমে 4 সেপ্টেম্বর 2014 এ সুইডিশ জাতীয় দল বনাম এস্তোনিয়ায় 50 টি গোলের সাথে গোলের রেকর্ড সেট করুন। 1932 সাল থেকে রেকর্ডটি পরাজিত করুন।
মাল্মা এফএফ (1999-2001), এএফসি অ্যাজাক্স (2001-2004), জুভেন্টাস এফ.সি. (2004-2006), ইন্টার মিলান (2006-2009), এফসি বার্সেলোনা (২০০৯-২০১০), এ.সি. মিলান (২০১০-২০১২, ২০২০-), প্যারিস সেন্ট-জার্মেইন (২০১২-২০১)), ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড এফ.সি. (2016-2018) এবং লস অ্যাঞ্জেলেস গ্যালাক্সি (2018-19)।
2016 সালে 11 বার (একটানা 10 গোল্ডেন বল) জন্য গুলডবোলেন (গোল্ডেন বল) পেয়েছেন।
২২ শে আগস্ট, ২০০৪ -এ ন্যাক ব্রেডার বিপক্ষে জ্লাতানের অন্যতম গোল ছিল ইউরোসপোর্টের "বছরের লক্ষ্য" হিসাবে বিবেচিত। জ্লাতান কিপারের পিছনে গোলটি রাখার আগে বেশ কয়েকটি এনএসি ডিফেন্ডারদের মাধ্যমে ড্রিবল করেছিল।


উদ্ধৃতি

এজেন্টরা কেবল খারাপ খেলোয়াড় বিক্রি করার জন্য। বড় ক্লাবগুলি সরাসরি আমার কাছে আসে।
আমি জুয়ার মধ্যে নেই, আমি রুলেট এবং ব্ল্যাক জ্যাকের মধ্যে পার্থক্য জানি না।

What's Your Reaction?

Like Like 0
Dislike Dislike 0
Love Love 0
Funny Funny 0
Angry Angry 0
Sad Sad 0
Wow Wow 0