কুমার সাঙ্গাকারা এর জীবনী | Biography Of Kumar Sangakkara
কুমার সাঙ্গাকারা এর জীবনী | Biography Of Kumar Sangakkara

ব্যক্তিগত তথ্য |
|
---|---|
পূর্ণ নাম |
কুমার চোকশানাদা সাঙ্গাকারা
|
জন্ম |
২৭ অক্টোবর ১৯৭৭ |
ডাকনাম |
সাঙ্গা |
ব্যাটিংয়ের ধরন |
বামহাতি |
বোলিংয়ের ধরন |
ডানহাতি অফ ব্রেক |
ভূমিকা |
উইকেট-রক্ষক, ব্যাটসম্যান |
খেলোয়াড়ী জীবন
দ্বিতীয় উইকেট তথা টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে যে-কোন উইকেটে সবচেয়ে দীর্ঘতম জুটি গড়েন তিনি। জুলাই, ২০০৬ সালে টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘতম জুটি হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট দলের বিপক্ষে জয়াবর্ধনের সাথে ৬২৪ রান করেন।[৯] দ্বিতীয় উইকেটে তৎকালীন বিশ্বরেকর্ড ছিল কলম্বোয় অনুষ্ঠিত ভারত ক্রিকেট দলের বিপক্ষে রোশন মহানামা-সনাথ জয়াসুরিয়া’র ২২৫ রান।
৩ ডিসেম্বর, ২০১৪ তারিখে সফরকারী ইংল্যান্ড দলের বিপক্ষে হাম্বানতোতা’র মহিন্দ রাজাপক্ষ আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত তৃতীয় একদিনের আন্তর্জাতিকে ১৩,০০০ রান সংগ্রহ করেন। এরফলে তিনি একদিনের আন্তর্জাতিকের ইতিহাসে চতুর্থ খেলোয়াড় হিসেবে এ মাইলফলক স্পর্শ করেন। তার পূর্বে রয়েছেন - শচীন তেন্ডুলকর, রিকি পন্টিং ও সনাথ জয়াসুরিয়া। এছাড়াও এ খেলায় তিনি ৬৩ রান সংগ্রহ করে একদিনের আন্তর্জাতিকের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বাধিক ৯১টি অর্ধ-শতক করেন। ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৪ তারিখ অনুযায়ী তার পূর্বে ৯৬টি অর্ধ-শতক নিয়ে শীর্ষে অবস্থান করছেন কেবলমাত্র শচীন তেন্ডুলকর
ব্যক্তিগত জীবন
কুমারী এবং চোকশানাদা সাঙ্গাকারা দম্পতির সন্তান কুমার সাঙ্গাকারা শ্রীলঙ্কার মাতালে এলাকায় ১৯৭৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ক্যান্ডি’র ট্রিনিটি কলেজে তাঁর প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক শিক্ষাজীবন সমাপণ করেন। বিদ্যালয় জীবনে ক্রিকেট এবং টেনিস খেলায় নিয়মিত অংশ নিতেন। পরবর্তীতে বিদ্যালয় প্রধান লিওনার্দ দ্য অলোইজ তাঁর মাকে পরামর্শ দেন সাঙ্গাকারাকে ক্রিকেট খেলায় মনোনিবেশ ঘটাতে। চার ভাই এবং দুই বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ। তন্মধ্যে এক ভাই ও এক বোন তাকে টেনিস খেলোয়াড় হিসেবে দেখতে চেয়েছিলেন।
দীর্ঘদিনের বান্ধবী ইয়েহালিকে বিয়ে করেন সাঙ্গাকারা।বর্তমানে সে পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে শ্রীলঙ্কা ল কলেজে আইন বিষয়ে পড়াশোনা করছে। তার পিতা ক্যান্ডি’র শীর্ষস্থানীয় আইনজীবী। ৩০ জুন, ২০০৯ সালে যমজ সন্তানরূপে এক কন্যা ও এক পুত্র সন্তানের জনক হন সাঙ্গাকারা
কীর্তিগাঁথা
বিশ্বের প্রথম ও একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ২০১৫ ODI ক্রিকেট বিশ্বকাপে টানা চার সেঞ্চুরি হাকাঁন।
টেস্ট ক্রিকেটে তিনি কয়েকবার বিশ্বের ১নং ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্ট ক্রিকেট রেটিংয়ে আরোহণ করেন। এবি ডি ভিলিয়ার্সের সাথে ২০০৫ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত বেশ কয়েকবার আইসিসি টেস্ট ব্যাটিং র্যাঙ্কিংয়ে অবস্থান করেন। আগস্ট, ২০১৪ সালে তিনি আইসিসি টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষে ছিলেন। ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যান এবং ব্রায়ান লারা'র পর তিনি তৃতীয় খেলোয়াড় হিসেবে ৮টি ডাবল সেঞ্চুরি করে কৃতিত্বের অধিকারী হয়েছেন। ২১ অক্টোবর, ২০১১ তারিখে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এ কীর্তি গড়েন।
অধিনায়কত্ব
অধিনায়ক হিসেবে অর্জন | ||||||
---|---|---|---|---|---|---|
খেলা | জয় | পরাজয় | ড্র | ফলাফল নিষ্পত্তি হয়নি | ||
টেস্ট ক্রিকেট | ১৫ | ৫ | ৩ | ৭ | – | |
একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট | ৪৫ | ২৭ | ১৪ | – | ৪ | |
টি২০আই | ২১ | ১২ | ৯ | – | – |
৩১ বছর বয়সে ৮০টি টেস্ট ও ২৪৬টি একদিনের খেলার অভিজ্ঞতার ঝুলি নিয়ে শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক হিসেবে সকল ধরনের ক্রিকেটে অধিনায়কত্ব লাভ করেন এবং মাহেলা জয়াবর্ধনের স্থলাভিষিক্ত হন। ২০০৯ সালের জুন মাসে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত আইসিসি বিশ্ব টুয়েন্টি২০ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে অধিনায়কত্বের অভিষেক ঘটান।
২০১৪ আইসিসি বিশ্ব টুয়েন্টি২০
এই টুর্নামেন্টের চূড়ান্ত খেলায় ৩৫ বলে ৫২ এবং ৩১ বলে ৫৯ এর ইনিংস খেলেন ও ভারতের দেয়া ১৩১ রানের সহজ গন্ডি পেরিয়ে প্রথমবারের মতো শ্রীলংকাকে বিজয়ী করতে সক্ষম হন।
কুমার সাঙ্গাকারা; ক্রিকেট বিশ্বের এক লিজেন্ডের বিদায়
একজন ক্রিকেট লিজেন্ড, শুধু তার সময়েরই নয়, সর্বকালের সেরাদের একজন ব্যাটসম্যান বিদায় জানালেন ক্রিকেটকে। ব্যাকরণবিহীন ব্যাটসম্যানদের যুগে তার ক্ল্যাসিক ব্যাটিংয়ে ছাড়িয়ে গেছেন সবাইকে। চোখ ধাঁধানো সব ড্রাইভ, কাট, পুল সটে দেড় দশক ধরে মাতিয়েছেন ক্রিকেট বিশ্ব। টেস্ট, ওয়ানডে এবং হালের টি২০, তিন ফরম্যাটেই তিনি ছিলেন অসামান্য।আমার সময়ের সেরা ব্যাটসম্যানদের মাঝে সাঙ্গাকেই এক নাম্বারে রাখব। সাঙ্গা শুধু একজন অসাধারণ ব্যাটসম্যানই ছিলেন না, ছিলেন অসামান্য মানুষও। ভদ্রলোকের খেলা বলে পরিচিত ক্রিকেটে ছিলেন তিনি ভদ্রদের ভদ্র, মাঠে কিংবা মাঠের বাহিরে কোথাও তার বাজে আচরণের কথা শুনিনি। আপাত দৃষ্টিতে নীরহ, সাদাসিধে অমায়িক সাঙ্গা ছিলেন বোলারদের আতঙ্কের নাম, বিদায়ী বিশ্বকাপে টানা চার সেঞ্চুরি কথাটির যথার্থ প্রমান। ১৫ বছরের টেস্ট ক্যারিয়ারে ১৩৪ ম্যাচে ৩৮ সেঞ্চুরি ও ৫২টি হাফ সেঞ্চুরি সহ রান করেছেন ১২৪০০। ১১ টি ডাবল সেঞ্চুরি নিয়ে স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের (১২টি) নিচেই তার স্থান। মাহেলা জয়াবর্ধনের সাথে তর গড়া ৭৪১ রানের জুটি টেস্ট ক্রিকেটে সর্বোচ্চ। ওয়ানডে ক্রিকেটে ৪০৪ ম্যাচে ২৫টি সেঞ্চুরি ও ৯৩টি হাফসেঞ্চুরিতে তার সংগ্রহ ১২২৩৪ রান।
তার সময়ের ক্রিকেট লিজেন্ড মাস্টার ব্যাটসম্যান শচীন টেন্ডুলকার সাঙ্গা সম্পর্কে বলেন, " ব্যাটিংয়ের একটা নিজস্ব ধরন ছিল ওর। বাঁহাতিদের ব্যাটিং দেখতে এমনিতেই সবসময় ভালো লাগে, ওর ব্যাটিংও ছিল তা-ই। প্রতিপক্ষ হিসেবে ছন্দে থাকা সাঙ্গাকারার ব্যাটিং দেখতে অবশ্যই আমার ভালো লাগত না! শুধু শ্রীলঙ্কানদের জন্যই নয়, বিশ্ব জুড়েই অনেক ক্রিকেটারের আদর্শ সে। ওকে আমার সবসময়ই বিপজ্জনক মনে হয়েছে একটা বিশেষ সামর্থ্যের কারণে। উইকেটে অনেক সময়ই ওকে দেখে অস্বস্তিতে আছে বলে মনে হয়েছে, কিন্তু তার পরও রান করার দারুণ প্রবণতা ছিল ওর।"
বিদায় বেলায় তার ভূয়সী প্রসংশা করতে ভুললেন না সতীর্থ খেলোয়ার সর্বকালের সেরা স্পিনার মুত্তিয়া মুরলিধরন। তিনি বলেন, " শ্রীলঙ্কার জন্য কুমার ছিল অসাধারণ এক ক্রিকেটার। দেশকে অনেক অনেক ম্যাচ জিতিয়েছে সে। দুঃখজনক যে সে অবসরে যাচ্ছে, তবে এই দিনটি সব খেলোয়াড়ের জীবনেই আসে। আমার মতে, সঠিক সময়ই বেছে নিয়েছে সে। আমার দৃষ্টিতে ওর সেরা ইনিংস, লাহোরে এশিয়ান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ২৩০।"
ক্রিকেট মাঠে যিনি ছিলেন খুব গোছালো একজন খেলোয়ার, ব্যাক্তি জীবনে নাকি তিনি সাংঘাতিক অগোছালো, এমন কথায় বলেছেন তার স্ত্রী ইয়েহিলি। তিনি বলেন, "সাঙ্গা খুবই অগোছালো একজন। বলা যায় বিশ্বের সবচেয়ে অগোছালো মানুষ।"
সাঙ্গা ভাল রান্না করতে পারেন বলে প্রসংশাও করেছেন স্কুল জীবন থেকে সাঙ্গার সাথে ঘনিষ্ট ইয়েহিলি।
আর কখনো ক্রিকেট মাঠে হাসিখুশি, শান্ত, বিনয়ী কুমার সাঙ্গাকারকে দেখা যাবে না। দেখা যাবে না তার ক্ল্যাসিক ব্যাটিংয়ের চোখ জুড়ানো সব শটগুলি। সবারই দরজায় বিদায় শব্দটি কড়া নারে একসময়, হাজার হাজার ক্রিকেটার অবসরে চলে গেছে, তার মাঝে খুব কম সংখ্যক খেলোয়ারই মানুষের মনে জায়গা করে নিতে পারে। তেমনি একজন ক্রিকেটার কুমার সাঙ্গাকারা। শুধু শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটেই নয়, লিজেন্ড হয়ে থাকবেন পুরো ক্রিকেট বিশ্বে। তার বিদায়ে শ্রদ্ধা ও ভালবাসা।
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
|
||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
উৎস: ইএসপিএন ক্রিকইনফো, ২৮ এপ্রিল ২০১৭
|
What's Your Reaction?






