ইমরান আহমদ খান নিয়াজি এর জীবনী-Biography of president imran khan
ইমরান আহমদ খান নিয়াজি এর জীবনী

ইমরান খান
মরান খানের জীবনটাই এক রোমাঞ্চকর গল্প। লাহোরের এক সিভিল ইঞ্জিনিয়ারের সন্তান ইমরানের ছোটবেলা কেটেছে বেশ আরামেই। লাহোরের শতাব্দীপ্রাচীন অ্যাচিসন কলেজের পর উচ্চশিক্ষার জন্য পাড়ি দেন ব্রিটেনে। ভর্তি হন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯৭৫ সালে অক্সফোর্ডের কিবল কলেজ থেকে দর্শন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান আর অর্থনীতি নিয়ে স্নাতক হন। অক্সফোর্ডে পড়াশোনা চলাকালীনই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিকেট দলে খেলেছেন নিয়মিত। এরপর সাসেক্সের হয়ে খেলেন কাউন্টি ক্রিকেটও। ১৯৭১ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচের মাধ্যমেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে ইমরানের। এরপর বাকিটা ইতিহাস। ব্যাটিং কিংবা বোলিং- উভয় বিভাগেই পাকিস্তান দলের অন্যতম ভরসার প্রতীক ছিলেন তিনি।
১৯৮৭ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে হারের পর অভিমানের কারণে ছেড়ে দিয়েছিলেন ক্রিকেটটাও। কিন্তু এরপর তৎকালীন পাকিস্তান প্রেসিডেন্টের আহ্বানে আবারও ফিরে আসেন ক্রিকেটে। ফিরে আবারও দলটির অধিনায়কের দায়িত্ব তুলে নেন নিজের কাঁধে। এরপর জেতান বিশ্বকাপও। ১৯৯২ বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলেই বিদায় জানান আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে। এরপর হয়ে যান রাজনীতিবিদ। এমনকি একটা সময় বসেন দেশটির রাষ্ট্রপ্রধানের আসনেও। পাকিস্তানের হয়ে ৮৮ টেস্টে ইমরানের রান সংখ্যা ৩৮০৭ এবং উইকেট ৩৬২। এ ছাড়া ওয়ানডে ক্রিকেটে ১৭৫ ম্যাচে ৩৭০৯ রানের পাশাপাশি উইকেট শিকার করেছিলেন ১৮২। বিভিন্ন সময়ে, নারী কীর্তির জন্য ব্যাপক সমালোচনার শিকার হয়েছিলেন ইমরান। পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর পাশাপাশি বলিউড অভিনেত্রী জিনাত আমান ও রেখার সঙ্গেও জড়িয়েছিল তার নাম।
জন্ম ও পরিবার
অবসরের পর পুরোদস্তুর রাজনীতিবিদ বনে যাওয়া ইমরান এখন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী। ১৯৫২ সালের ২৫ নভেম্বর লাহোরে জন্মগ্রহণ করা এই কিংবদন্তির আজ ৭০তম জন্মদিন। মরান খানের মায়ের দিক থেকে একাধিক ক্রিকেটার এসেছেন যারা পাকিস্তানের প্রতিনিধিত্ব করেছেন, তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন জাভেদ বুরকি ও মাজিদ খান। মায়ের দিক থেকে তিনি সুফি যোদ্ধা-কবি ও পশতু বর্ণমালার উদ্ভাবক পির রোশনের বংশধর।
কে এই ইমরান খান?
জামায়াতের সঙ্গে প্রদেশে সরকার গঠন, তালেবানদের ব্যাপারে উদারতা, সেনা-ঘনিষ্ঠতা—এত সব ‘বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত’ ব্যাপক ডানপন্থী ইমরান খানের বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধ প্রসঙ্গে সঠিক অবস্থানে দাঁড়ানোটাই হতো আশ্চর্যের। পাকিস্তান জানে যে, আজ হোক কাল হোক, একাত্তরের অপরাধসমূহের জন্য পাকিস্তানি রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং সামরিক নেতৃত্বের বিচারের উদ্যোগ নেবে বাংলাদেশ। আর কাদের মোল্লার সাজার ব্যাপারে তাঁদের চুপ থাকার অর্থ হতো একাত্তরে যুদ্ধাপরাধ-মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটিত হওয়ার ব্যাপারটি মেনে নেওয়া। দেয়ালের লিখন পড়তে না পারলে যে ভুল হয়, ইমরান খান তথা পাকিস্তানি কায়েমি স্বার্থবাদীরা সেই ভুলই করছে।
কিন্তু বাংলাদেশে যাঁরা ইমরান খানের ভূমিকায় ব্যথা পেয়েছেন, তাঁদের তো ব্যথা পাওয়া চলবে না। জানা থাকতে হবে যে পাকিস্তানের ইমরানের তো এটাই করার কথা। ইমরানে ইমরানে কত তফাত। পাকিস্তানি ইমরান যুদ্ধাপরাধ, গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের বিরুদ্ধে দাঁড়ায়। আর বাংলাদেশের ইমরানরা গণজাগরণ মঞ্চ বানায় যুদ্ধাপরাধ, গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শেষ না করে ঘরে না ফেরার কথা বলে।
ক্রিকেটার থেকে প্রধানমন্ত্রী হওয়া একমাত্র ক্রিকেটার ইমরান খান
যারা ক্রিকেট খেলা তেমন দেখেননি কিংবা বোঝেন না, তাদের সামনে যদি তার কোনো আলোকচিত্র তুলে ধরা হয়; বেশির ভাগেরই উত্তর হবে তিনি কোনো নায়ক কিংবা মডেল। কিন্তু না, তিনি যে পাকিস্তানের সর্বকালের সেরা অধিনায়ক। হ্যাঁ, বলছি পাকিস্তানের সাবেক কিংবদন্তি অলরাউন্ডার ইমরান খানের কথা। তার অধীনেই নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসের একমাত্র বিশ্বকাপ ট্রফি জিতেছিল পাকিস্তান। যা এখনো কারও কারও কাছে রূপকথার গল্পের মতো। ক্রিকেটটাই ছেড়ে দিয়েছিলেন ইমরান।
কিন্তু এরপর তৎকালীন পাকিস্তান প্রেসিডেন্টের ডাকে ফেরেন অবসর ভেঙে। ভাঙাচুরা এক দলকে করে তোলেন চ্যাম্পিয়ন।১৯৮৭ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে হারের পর অভিমানের কারণে ছেড়ে দিয়েছিলেন ক্রিকেটটাও। কিন্তু এরপর তৎকালীন পাকিস্তান প্রেসিডেন্টের আহ্বানে আবারও ফিরে আসেন ক্রিকেটে। ফিরে আবারও দলটির অধিনায়কের দায়িত্ব তুলে নেন নিজের কাঁধে। এরপর জেতান বিশ্বকাপও। ১৯৯২ বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলেই বিদায় জানান আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে। এরপর হয়ে যান রাজনীতিবিদ। এমনকি একটা সময় বসেন দেশটির রাষ্ট্রপ্রধানের আসনেও। পাকিস্তানের হয়ে ৮৮ টেস্টে ইমরানের রান সংখ্যা ৩৮০৭ এবং উইকেট ৩৬২।
কারাগারে থেকেও যেভাবে পাকিস্তানের রাজনীতিকে প্রভাবিত করছেন ইমরান খান
জনসমক্ষে আসতে না পারালেও এই সাবেক ক্রিকেট তারকার সঙ্গে নিয়মিত দেখা করতে আসা অল্প কিছু মানুষ বহির্বিশ্বের কাছে তার (ইমরান খানের) বার্তা পৌঁছানোর একমাত্র দূত হয়ে উঠেছেন। এই তালিকায় রয়েছেন মি. খানের আইনজীবীরা ও পরিবার।
৩৬৫ দিন ধরে কারাগারে থাকা সত্ত্বেও যে মি. খান মাথা নত করেননি, সেই বার্তা পাঠাতেই আগ্রহী তইমরান খানের আইনজীবী ও তার পরিবারের সদস্যরা।
ইমরান খানের বোন আলিমা খানম বলেন, “ওর মধ্যে একটা সদম্ভ ব্যাপার আছে। ওর কোনও চাহিদা নেই, কোনও চাওয়া-পাওয়া নেই। আছে শুধুমাত্র একটা উদ্দেশ্য।”
যারা দেখা করতে যান, তাদের মতে, এই সাবেক ক্রিকেট তারকার দিন কাটে এক্সারসাইজ বাইকে কসরত করে, বই পড়ে এবং ভাবনা চিন্তা করে। উঠোনে ঘুরে বেড়ানোর জন্য তার হাতে দিনে এক ঘণ্টার মতো সময় থাকে।পরিবার কত তাড়াতাড়ি তাকে নতুন বই সরবরাহ করতে পারে তা নিয়ে অবশ্য মাঝে মাঝে মতবিরোধও দেখা যায়।
কিন্তু বাস্তব বিষয় হলো, ইমরান খান ও তার স্ত্রী বুশরা বিবি এখনও কারাগারে আটক আছেন। এবং তাদের মুক্তি পাওয়ার কোনও লক্ষণ খুব শিগগিরি দেখা যাচ্ছে না।
কেউ কেউ অবশ্য মনে করেন, এটা খুব একটা আশ্চর্য হওয়ার বিষয় নয়। "কারাগারে এক মিনিটও সময় নষ্ট করছেন না বলে জানিয়েছেন উনি (ইমরান খান)। এটা তার কাছে আরও জ্ঞান অর্জন করারএকটা সুযোগ," বিবিসিকে বলছিলেন আলিমা খানম।
একনজরে ইমরান খানের উত্থান-পতন
পাকিস্তানকে একটি মানবিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে নীতিমালা প্রণয়ন করবেন বলে দাবি করেছিলেন। তবে তিনি পাকিস্তানের অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করতে ব্যর্থ হন। দেশে জঙ্গি কার্যকলাপ বাড়তে থাকে। বেকারত্বের হার, মূল্যস্ফীতির হারও ঊর্ধ্বমুখী। আল-কায়দা জঙ্গি ওসামা বিন লাদেনকে ‘শহিদ’ আখ্যা দিয়ে বিতর্কে জড়ান। আফগানিস্তানের পালাবদলের সময় তালিবানদের পক্ষে সওয়াল করেন ইমরান।
ইতিহাস
পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের সংবিধান লাহোরের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির দ্বারা ২৪ জানুয়ারি ১৯৯৯ তারিখে অনুমোদিত হয়েছিল। ২০০২ সালের অক্টোবরে, ইমরান খান জাতীয় নির্বাচনে অফিস দখল করেন এবং নিজের শহর মিয়ানওয়ালীর জন্য সংসদ সদস্য (এমপি) হন। তবে, পাকিস্তানের সম্পূর্ণ রাজনৈতিক আদেশের গভীরভাবে সমালোচনামূলক ছিল, যা তিনি পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠিত নীতির অন্যতম দুর্নীতিগ্রস্ত, অদক্ষ এবং নৈতিকভাবে অসহায় মনে করেছিলেন। প্রতিবাদে, খান তার রাজনৈতিক দলের সচেতনতা বাড়ানোর জন্য একটি তৃণমূল প্রচারণা শুরু করেন।
চিন্তাধারা
পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের এজেন্ডা একটি আধুনিক ইসলামী প্রজাতন্ত্রকে আলোকিত করে, যা সম্প্রদায়ের সহযোগিতায় ব্যক্তিদের কল্যাণকে সমর্থন করে। পিটিআই সকল ধর্মীয়, জাতিগত সম্প্রদায়ের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, সামাজিক সম্প্রীতি ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথে পাকিস্তানকে প্রতিষ্ঠা করতে চায়।
ইমরানের জেল
প্রায় ১৮ মাস ধরে কারাগারে বন্দী আছেন ইমরান খান। এবার উনিশ কোটি পাউন্ডের আর্থিক দুর্নীতি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলেন পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী। মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন তার স্ত্রী বুশরা বিবিও। ২০২৫ সালের ১৭ জানুয়ারি রাওয়ালপিন্ডির একটি দুর্নীতি দমন আদালতের বিচারক ইমরান খানকে দোষী সাব্যস্ত করে তাকে ১৪ বছরের কারাবাসের সাজা শুনিয়েছেন। আর তার স্ত্রী বুশরার সাত বছরের কারাদণ্ড হয়েছে।
What's Your Reaction?






