আইয়ূব (আঃ) এর জীবনী | Biography of Ayyūb (Alayhi assalam)
আইয়ূব (আঃ) এর জীবনী | Biography of Ayyūb (Alayhi assalam)

নবী
আইয়ুব
أيوب ইয়োব আলাইহিস সালাম
|
|
---|---|
![]() ইসলামি চারুলিপিতে লেখা আইয়ুব
|
|
জন্ম |
জর্ডান
|
মৃত্যু |
ওমান
|
অন্যান্য নাম |
אִיּוֹב ʾIyyôḇ |
পরিচিতির কারণ |
অসংখ্য পরীক্ষার সম্মুখীন হওয়া সত্ত্বেও আল্লাহর প্রতি বিশ্বস্ত ছিলেন |
হযরত আইয়ূব (আলাইহিস সালাম) ইসলামের একজন মহান নবী
আইয়ুব
(আরবি: أيّوب, প্রতিবর্ণীকৃত: Ayyūb) ইসলামে একজন নবী হিসেবে গণ্য এবং মুসলমানদের পবিত্র গ্রন্থ কোরআনে তার উল্লেখ রয়েছে।[১] ইবনে কাছীরের বর্ণনা অনুযায়ী তিনি নবী ইসহাক এর দুই জমজ পুত্র ঈছ ও ইয়াকূবের মধ্যে পুত্র ঈছ-এর প্রপৌত্র ছিলেন। আর তার স্ত্রী ছিলেন ইয়াকূব-পুত্র নবী ইউসুফ-এর পৌত্রী ‘লাইয়া’ বিনতে ইফরাঈম বিন ইউসুফ। বিপদে ধৈর্য ধারণ করায় এবং আল্লাহর পরীক্ষাকে হাসিমুখে বরণ করে নেওয়ায় আল্লাহ কোরআন শরীফে আইয়ূবকে ‘ধৈর্যশীল’ ও ‘সুন্দর বান্দা’ হিসাবে প্রশংসা করেছেন। ধারনা করা হয় আনুমানিক খ্রিষ্টপূর্ব নবম অথবা দশম শতাব্দীতে তিনি নবী ছিলেন।
বংশ ও পরিবার
আইয়ূব (আঃ) ছিলেন ইবরাহীম (আঃ)-এর বংশধর এবং ইসহাক (আঃ)-এর পুত্র আমওয়াস-এর সন্তান। তাঁর স্ত্রী ছিলেন রাহমা, যিনি ইয়াকুব (আঃ)-এর বংশধর ছিলেন। তাঁদের পরিবার ছিল ধনী ও সমৃদ্ধ, এবং তাঁরা শাম অঞ্চলে (বর্তমান সিরিয়া) বসবাস করতেন।
আল কোরআনে
পবিত্র আল কুরআনের ৪টি সূরার ৮টি আয়াতে নবী আইয়ূবের কথা এসেছে। সুরাগুলো হচ্ছে নিসা ১৬৩, আন‘আম ৮৪, আম্বিয়া ৮৩-৮৪ এবং ছোয়াদ ৪১-৪৪।
আল কোরআনের ২১ নম্বর সুরা আম্বিয়ার ৮৩-৮৪ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন,
وَأَيُّوْبَ إِذْ نَادَى رَبَّهُ أَنِّيْ مَسَّنِيَ الضُّرُّ وَأَنْتَ أَرْحَمُ الرَّاحِمِيْنَ- فَاسْتَجَبْنَا لَهُ فَكَشَفْنَا مَا بِهِ مِنْ ضُرٍّ وَّآتَيْنَاهُ أَهْلَهُ وَمِثْلَهُم مَّعَهُمْ رَحْمَةً مِّنْ عِنْدِنَا وَذِكْرَى لِلْعَابِدِيْنَ-
‘আর স্মরণ কর আইয়ূবের কথা, যখন তিনি তার পালনকর্তাকে আহবান করে বলেছিলেন, আমি কষ্টে পতিত হয়েছি এবং আপনি সর্বোচ্চ দয়াশীল’। ‘অতঃপর আমি তার আহবানে সাড়া দিলাম এবং তার দুঃখ-কষ্ট দূর করে দিলাম। তার পরিবারবর্গকে ফিরিয়ে দিলাম এবং তাদের সাথে তাদের সমপরিমাণ আরও দিলাম আমার পক্ষ হ’তে দয়া পরবশে। আর এটা হ’ল ইবাদতকারীদের জন্য উপদেশ স্বরূপ’।
সুরা ছোয়াদের ৪১ ও ৪২ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন,
وَاذْكُرْ عَبْدَنَا أَيُّوْبَ إِذْ نَادَى رَبَّهُ أَنِّيْ مَسَّنِيَ الشَّيْطَانُ بِنُصْبٍ وَعَذَابٍ، ارْكُضْ بِرِجْلِكَ هَذَا مُغْتَسَلٌ بَارِدٌ وَشَرَابٌ، وَوَهَبْنَا لَهُ أَهْلَهُ وَمِثْلَهُم مَّعَهُمْ رَحْمَةً مِّنَّا وَذِكْرَى لِأُوْلِي الْأَلْبَابِ، وَخُذْ بِيَدِكَ ضِغْثاً فَاضْرِب بِّهِ وَلاَ تَحْنَثْ إِنَّا وَجَدْنَاهُ صَابِراً نِعْمَ الْعَبْدُ إِنَّهُ أَوَّابٌ-(ص ৪১-৪৪)-
‘আর তুমি বর্ণনা কর আমাদের বান্দা আইয়ূবের কথা। যখন সে তার পালনকর্তাকে আহবান করে বলল, শয়তান আমাকে (রোগের) কষ্ট এবং (সম্পদ ও সন্তান হারানোর) যন্ত্রণা পৌঁছিয়েছে’ (ছোয়াদ ৩৮/৪১)। ‘(আমরা তাকে বললাম,) তুমি তোমার পা দিয়ে (ভূমিতে) আঘাত কর। (ফলে পানি নির্গত হ’ল এবং দেখা গেল যে,) এটি গোসলের জন্য ঠান্ডা পানি ও (পানের জন্য উত্তম) পানীয়’ (ছোয়াদ ৩৮/৪২)। ‘আর আমরা তাকে দিয়ে দিলাম তার পরিবারবর্গ এবং তাদের সাথে তাদের সমপরিমাণ আমাদের পক্ষ হ’তে রহমত স্বরূপ এবং জ্ঞানীদের জন্য উপদেশ স্বরূপ’ (ছোয়াদ ৩৮/৪৩)। ‘(আমরা তাকে বললাম,) তুমি তোমার হাতে একমুঠো তৃণশলা নাও। অতঃপর তা দিয়ে (স্ত্রীকে) আঘাত কর এবং শপথ ভঙ্গ করো না (বরং শপথ পূর্ণ কর)। এভাবে আমরা তাকে পেলাম ধৈর্যশীল রূপে। কতই না চমৎকার বানদা সে। নিশ্চয়ই সে ছিল (আমার দিকে) অধিক প্রত্যাবর্তনশীল’ (ছোয়াদ ৩৮/৪৪)।
সুরা আন'আমের ৮৪ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, وَكَذَلِكَ نَجْزِي الْمُحْسِنِيْنَ ‘আর এভাবেই আমরা সৎকর্মশীলদের পুরস্কৃত করে থাকি।
হাদিসে
আবু হুরায়রা কর্তৃক বর্ণিত হাদিসে রাসূলুল্লাহ বলেন, আইয়ূব একদিন নগ্নাবস্থায় গোসল করছিলেন। এমন সময় তাঁর উপরে সোনার টিড্ডি পাখির দল এসে পড়ে। তখন আইয়ূব সেগুলিকে ধরে কাপড়ে ভরতে থাকেন। এমতাবস্থায় আল্লাহ তাকে ডেকে বলেন, হে আইয়ূব! (أَلَمْ اَكُنْ أُغْنِيَنَّكَ عَمَّا تَرَى؟) আমি কি তোমাকে এসব থেকে মুখাপেক্ষীহীন করিনি? আইয়ূব বললেন, (بَلَى وَعِزَّتِكَ ولكن لاغِنَى بِى عَنْ بَرَكَتِكَ) তোমার ইজ্জতের কসম! অবশ্যই তুমি আমাকে তা দিয়েছ। কিন্তু তোমার বরকত থেকে আমি মুখাপেক্ষীহীন নই’।
আইয়ুব (আ.)-এর ধৈর্যের পরীক্ষা
ধৈর্যের মূর্তপ্রতীক ছিলেন আইয়ুব (আ.)। বছরের পর বছর শারীরিক ও আর্থিক কষ্টে ভুগেও মহান আল্লাহর প্রতি পরিপূর্ণ কৃতজ্ঞ ছিলেন তিনি। পবিত্র কোরআনে চারটি সুরার আটটি আয়াতে আইয়ুব (আ.)-এর কথা এসেছে। যথা- সুরা : নিসা, আয়াত : ১৬৩, সুরা : আনআম, আয়াত : ৮৪, সুরা : আম্বিয়া, আয়াত : ৮৩-৮৪ এবং সুরা : সাদ, আয়াত : ৪১-৪৪।
কোরআন থেকে শুধু এতটুকু জানা যায় যে তিনি কোনো দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হয়ে সবর করে যান এবং অবশেষে আল্লাহর কাছে দোয়া করে রোগ থেকে মুক্তি পান। এই অসুস্থতার দিনগুলোতে তাঁর সন্তান-সন্ততি, বন্ধু-বান্ধব সবাই উধাও হয়ে গিয়েছিল। এরপর আল্লাহ তাআলা তাকে সুস্থতা দান করেন। মহান আল্লাহ তাঁকে সন্তান ও সম্পদ দিয়েছিলেন, অসুস্থতার পাশাপাশি সেগুলোও ছিনিয়ে নেন।
কিন্তু তাঁর স্ত্রী ছিলেন অত্যন্ত স্বামীভক্ত। তিনি সারাক্ষণ তাঁর সেবা করতেন। এমনকি একপর্যায়ে পরিবারের খরচ মেটাতে তিনি অন্য মানুষের বাসায় কাজ করতেন। অন্যদিকে ধীরে ধীরে রোগ-ব্যাধি, দুঃখ-কষ্ট বাড়তে থাকে আইয়ুব (আ.)-এর।
বিপদ যত বাড়ে, তিনি তত বেশি আল্লাহকে ডাকতে থাকেন, যেভাবে শীত যত বাড়ে মানুষ তত বেশি শীতবস্ত্র দিয়ে নিজেকে জড়িয়ে রাখে। আল্লাহর জিকির দিয়ে তিনি তাঁর দেহ ও অন্তর তরতাজা রাখেন।
বিপদে ধৈর্য ধারণ এবং আল্লাহর পরীক্ষা হাসিমুখে বরণ করে তিনি ‘সবরকারী’ ও ‘চমৎকার বান্দা’ খেতাবে ভূষিত হয়েছেন। তাঁর ধৈর্যের পরম পরাকাষ্ঠা দেখে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি (আল্লাহ) তাকে ধৈর্যশীল হিসেবে পেয়েছি।’ (সুরা : সাদ, আয়াত : ৪৪)
বছরের পর বছর তিনি অসুস্থ শরীর নিয়ে সন্তানহীন, সঙ্গীহীন ও সম্পদহীন হয়ে কোনো এক প্রান্তরে একান্তে অবস্থান করেন।
আর মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করতে থাকেন। তাঁর দোয়ার ভাষ্য কোরআনে এভাবে এসেছে : ‘আর স্মরণ করো আইয়ুবকে, যখন সে তার রবকে ডেকেছিল, (বলেছিল) আমি তো দুঃখ-কষ্টে পড়েছি (দুঃখ-কষ্ট আমাকে স্পর্শ করেছে), আর আপনি তো সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু!’ (সুরা : আম্বিয়া, আয়াত : ৮৩)
দোয়ার ধরন অত্যন্ত নমনীয় ও মার্জিত; যথাযথ আদব ও শিষ্টাচারপূর্ণ। নেই অভিযোগ, নেই অনুযোগ। ‘কষ্ট আমাকে স্পর্শ করেছে’—কঠিন বিপদেও মধুময় আবেদন। আবেদনের ভেতর ভাব আছে, মর্মস্পর্শী আবেগ আছে, আছে কষ্টের কথাও। তবু কোনো আবদার নেই, চাওয়া-পাওয়া নেই। শুধু এ কথা বলে থেমে যাচ্ছেন : ‘আপনি তো সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু।’
আল্লাহর বিরুদ্ধে কোনো নালিশ নেই, কোনো জিনিসের দাবি নেই। তাতেই খুশি হয়ে মহান আল্লাহ তাঁর দোয়া কবুল করেন। তাঁর দোয়া কবুল করে আল্লাহ বলেন, ‘আমি তার ডাকে সাড়া দিলাম। আর তার যত দুঃখ-কষ্ট ছিল তা দূর করে দিলাম এবং তার পরিবার-পরিজন তাকে দিয়ে দিলাম। তাদের সঙ্গে তাদের মতো আরো দিলাম আমার পক্ষ থেকে রহমত এবং ইবাদতকারীদের জন্য উপদেশস্বরূপ।’ (সুরা : আম্বিয়া, আয়াত : ৮৪)
কিভাবে দূর হলো অসুখ—সে বিষয়ে পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘(আমি তাকে বললাম,) তুমি তোমার পা দিয়ে (ভূমিতে) আঘাত করো। (ফলে পানি নির্গত হলো এবং দেখা গেল যে) এটি গোসলের জন্য ঠাণ্ডা পানি ও (পানের জন্য উত্তম) পানীয়।’ (সুরা : সাদ, আয়াত : ৪২)
এটি ছিল অলৌকিক ঝরনা। ইতিপূর্বে শিশু ইসমাঈল (আ.)-এর ক্ষেত্রে এমনটা ঘটেছে। তাঁর পদাঘাতে জমজমকূপ তৈরি হয়েছিল। এটা নবীদের মুজিজা। এটা নবীদের বরকত। নবী-রাসুলদের পদতলে মহান আল্লাহ বরকত ঢেলে দেন। সেই বরকত থেকে সিক্ত হয় প্রকৃতি ও পৃথিবী। এই বরকতের পানি দিয়ে আইয়ুব (আ.) গোসল করেন। তিনি সুস্থ হয়ে যান। একে একে সম্পদ ফিরে পান এবং সন্তান লাভ করেন।
আইয়ুব আলাইহিস সালাম তাঁর প্রাকৃতিক কাজ সারতে বের হতেন। কাজ সারার পর তাঁর স্ত্রী তার হাত ধরে নিয়ে আসতেন। একদিন তিনি প্রাকৃতিক কাজ সারার পর স্ত্রীর কাছে ফিরতে দেরি করছিলেন। আগমনে দেরি দেখে স্ত্রী এগিয়ে যান। ততক্ষণে অলৌকিক ঝরনায় গোসল করে আইয়ুব (আ.) সম্পূর্ণ সুস্থ ও সুন্দর হয়ে যান। তাঁর স্ত্রী তাকে দেখে বলেন, হে মানুষ, আল্লাহ আপনার ওপর বরকত দিন, আপনি কি ওই অসুস্থ আল্লাহর নবীকে দেখেছেন? আল্লাহর শপথ, যখন তিনি সুস্থ ছিলেন তখন তিনি দেখতে আপনার মতো ছিলেন। তখন আইয়ুব (আ.) বলেন, আমিই সেই ব্যক্তি। এভাবে তিনি সুস্থ হন।
আইয়ুব (আ.)-এর দুটি উঠান ছিল। একটি গম শুকানোর, অন্যটি যব শুকানোর। মহান আল্লাহ সে দুটির ওপর দুই খণ্ড মেঘ পাঠালেন। এক খণ্ড মেঘ সে গমের উঠানে এমনভাবে স্বর্ণ ফেলল যে সেটি পূর্ণ হয়ে গেল। অন্য মেঘ খণ্ডটি সেটির ওপর এমনভাবে রৌপ্য বর্ষণ করল যে সেটাও পূর্ণ হয়ে গেল। (সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস : ২৮৯৮, মুস্তাদরাকে হাকিম, হাদিস : ৪১১৫)
এভাবে সোনা-রুপায় দানায় তিনি প্রচুর সম্পদের মালিক হয়ে যান। হাদিসের বর্ণনা থেকে আরো জানা যায়, আল্লাহর পক্ষ থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে স্বর্ণের পঙ্গপাল আইয়ুব (আ.)-এর কাছে আসে। তিনি সেগুলো সংগ্রহ করেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, একবার আইয়ুব (আ.) কাপড় খুলে (অর্থাৎ বাথরুম ছাড়াই খোলা স্থানে) গোসল করছিলেন, এ অবস্থায় একঝাঁক স্বর্ণের পঙ্গপাল তাঁর ওপর পড়তে শুরু করে, তিনি সেগুলো মুঠি মুঠি তার কাপড়ে জমা করছিলেন। তখন মহান আল্লাহ তাঁকে ডাক দিয়ে বলেন, হে আইয়ুব, আমি কি তোমাকে যা দেখছ তা থেকেও বেশি দিয়ে ধনী বানাইনি? জবাবে আইয়ুব (আ.) বলেন, ‘ইয়া রাব্বি, লা গিনা বি আন বারাকাতিকা (অর্থ : হে রব, তবে আপনার দেওয়া বরকত থেকে আমি কখনো মুখাপেক্ষীহীন হবো না।’ (বুখারি, হাদিস : ৭৪৯৩)
পুরো ঘটনা থেকে জানা যায়, বড় পরীক্ষায় আছে বড় পুরস্কার। সম্পদ ও সন্তান হারিয়ে কঠিন অসুস্থ হয়েও জিকির, ইবাদত ও আমল থেকে বিচ্যুত হননি আইয়ুব (আ.)। আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হননি। মার্জিত ভাষায় অভিযোগহীন, বিরামহীন তিনি দোয়া করেন। মহান আল্লাহ তাঁর দোয়া কবুল করেন। সবরের ফল দুনিয়ায় দিয়ে দেন। সুস্থতা, সম্পদ ও সন্তান—সব কিছু ফিরিয়ে দেন। মুমিনদের জন্য এই ঘটনায় আছে বিশেষ বার্তা।
নবুয়ত ও দাওয়াত
আল্লাহ তাআলা আইয়ূব (আঃ)-কে নবুয়ত দান করেন এবং তিনি তাঁর সম্প্রদায়কে তাওহীদের দাওয়াত দেন। তিনি ছিলেন একজন সৎ, পরহেজগার ও আল্লাহভীরু ব্যক্তি, যিনি সর্বদা আল্লাহর প্রশংসা করতেন এবং তাঁর ইবাদতে লিপ্ত থাকতেন।
পরীক্ষাসমূহ ও ধৈর্য
আল্লাহ তাআলা আইয়ূব (আঃ)-কে বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে পরীক্ষা করেন:
-
সম্পদের ক্ষতি: তাঁর সমস্ত সম্পদ, গবাদি পশু ও জমি ধ্বংস হয়ে যায়।
-
সন্তানদের মৃত্যু: তাঁর সব সন্তান মারা যান।
-
শারীরিক অসুস্থতা: তিনি দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে কঠিন রোগে ভোগেন, যা তাঁর দেহকে দুর্বল করে তোলে।
এই সমস্ত পরীক্ষার মধ্যেও তিনি কখনো আল্লাহর প্রতি অভিযোগ করেননি; বরং সবসময় ধৈর্য ধারণ করে আল্লাহর স্মরণে লিপ্ত ছিলেন।
স্ত্রীর সহানুভূতি ও আল্লাহর করুণা
আইয়ূব (আঃ)-এর স্ত্রী রাহমা তাঁর সমস্ত পরীক্ষায় পাশে ছিলেন। একবার তিনি তাঁর চুল বিক্রি করে খাবার সংগ্রহ করেন, যা জানার পর আইয়ূব (আঃ) শপথ করেন যে সুস্থ হলে তাঁকে ১০০ বার প্রহার করবেন। আল্লাহ তাআলা তাঁকে নির্দেশ দেন একটি ঝাঁটি নিয়ে তা দিয়ে একবার আঘাত করতে, যাতে তাঁর শপথ পূর্ণ হয় এবং স্ত্রীর প্রতি অবিচার না হয়।
আরোগ্য ও পুনরুদ্ধার
আইয়ূব (আঃ) আল্লাহর কাছে দোয়া করেন:
"আমি কষ্টে পড়েছি, আর তুমি দয়ালুদের মধ্যে সর্বাধিক দয়ালু।"
আল্লাহ তাআলা তাঁকে নির্দেশ দেন তাঁর পা দিয়ে ভূমিতে আঘাত করতে, যার ফলে একটি ঝর্ণা নির্গত হয়। তিনি সেই পানি দিয়ে গোসল করে সুস্থ হন এবং আল্লাহ তাঁকে পূর্বের সমস্ত সম্পদ ও সন্তান ফিরিয়ে দেন।
কুরআনে উল্লেখ
আইয়ূব (আঃ)-এর কাহিনী কুরআনের বিভিন্ন স্থানে বর্ণিত হয়েছে, যেমন:
-
সূরা আন-নিসা (৪:১৬৩)
-
সূরা আল-আনআম (৬:৮৪)
-
সূরা আল-আম্বিয়া (২১:৮৩-৮৪)
-
সূরা সাদ (৩৮:৪১-৪৪)
মৃত্যু ও সমাধি
আইয়ূব (আঃ) ৯৩ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন এবং তাঁর সমাধি সিরিয়ার হাওরান অঞ্চলে অবস্থিত বলে ধারণা করা হয়।
sourse: wikipedia
https://www.kalerkantho.com/online/Islamic-lifestylie/2023/09/06/1315507
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%86%E0%A6%87%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A7%81%E0%A6%AC_(%E0%A6%A8%E0%A6%AC%E0%A7%80)
What's Your Reaction?






