এ.পি.জে.আব্দুল কালামের জীবনী | Biography of A.P.J. Abdul Kalam

এ.পি.জে.আব্দুল কালামের জীবনী | Biography of A.P.J. Abdul Kalam

May 11, 2025 - 01:45
May 11, 2025 - 20:04
 0  0
এ.পি.জে.আব্দুল কালামের জীবনী | Biography of A.P.J. Abdul Kalam

গত শতকের প্রথমার্ধে তামিলনাড়ুর রামেশ্বরমের এক প্রত্যন্ত গ্রামে এক মা তাঁর সাত ছেলেমেয়ের জন্য শুধু ভাত রাঁধতেন। কিন্তু ছোটো ছেলেটির জন্য তৈরি করতেন কয়েকটা রুটি, যাতে পড়ার সময় তার খিদে না পায়। নামমাত্র পুঁজি থেকে কিনতেন কেরোসিন তেল, যাতে ছেলেটির রাতের পড়ায় ব্যাঘাত না ঘটে। আর স্বপ্ন দেখতেন যে, তাঁদের বাড়ির কাছে আছে যে বঙ্গোপসাগর, সেই বিশাল সমুদ্রকেও ছাপিয়ে যাবে তাঁর ছেলেটির নামডাক। সমুদ্রের কোল ঘেঁষে ছোটো একটি গ্রামে লালিত সেই স্বপ্নেরই নাম আবুল পাকির জয়নুল আবদিন আবদুল কালাম ।

এ.পি.জে.আব্দুল কালামের জন্ম পরিচিতি:

আবুল পাকির জয়নুল আবেদিন আব্দুল কালাম ওরফে এ.পি.যে.আব্দুল কালাম তথা ভারতের একাদশতম রাষ্ট্রপতি তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির রামনাথস্বামী জেলার রামেশ্বরামে অর্থাৎ বর্তমান ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের রামেশ্বরামের এক তামিল মুসলিম পরিবারে ১৯৩১ সালের ১৫ই অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। এই মহান আত্মার বাবা হলেন আবুল পাকির জয়নুল আবেদিন, যিনি ছিলেন এক ইমামসাহেব ও মা হলেন গৃহবধূ অশিয়াম্মা। এই পরিবারের কনিষ্ঠ সন্তান হলেন আব্দুল কালাম স্যার! খুবই গরিব এই পরিবারের পঞ্চম সন্তান ছিলেন আব্দুল কালাম। ছোট থেকেই অনেক কষ্টে ও আধপেটা খেয়ে জীবনযাপন করতে হয়েছিলো তাঁকে।

ছাত্রজীবন:

অত্যন্ত গরিব পরিবারের সন্তান অথচ পড়াশোনার প্রতি ভীষণ আগ্রহ ছিল তাঁর ছোটবেলা থেকেই। ভীষণই মেধাবী ছাত্র ছিলেন আব্দুল কালাম স্যার। ছাত্রাবস্থা থেকেই তাঁর ছিলো শিক্ষাগ্রহণের তীব্রবাসনা! প্রাথমিক শিক্ষা অর্জনের পরে রামনাথপুরম ‘স্কোয়ার্টজ ম্যাটিকুলেশন স্কুল’ থেকে বাকি শিক্ষা সম্পূর্ণ করেন। উচ্চশিক্ষার জন্য এরপর তিরুচিরাপল্লীর ‘সেন্ট জোসেফস কলেজ’এ ( St. Joseph’s College) ভর্তি হন ও ১৯৫৪ সালে সেখান থেকে পদার্থ বিজ্ঞানে স্নাতক (Graduation) ডিগ্রি লাভ করেন। এরপরে ১৯৫৫ সালে তিনি মাদ্রাজে চলে আসেন ও সেখানেই ‘মাদ্রাজ ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি’ (madras institute of technology) থেকে বিমানপ্রযুক্তি বিষয়ে শিক্ষা লাভ করেন।

কর্মজীবন

১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে আবদুল কালাম ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অরগানাইজেশনের অধীনস্থ অ্যারোনটিক্যাল ডেভেলপমেন্ট এস্টাবলিশমেন্টে একজন বিজ্ঞানী হিসেবে যোগ দেন। এই সময়ে তিনি ভারতের প্রবাদপ্রতিম মহাকাশবিজ্ঞানী বিক্রম সারাভাই, অধ্যাপক সতীশ ধাওয়ান প্রমুখের সান্নিধ্যে আসেন। ১৯৬৩-৬৪ খ্রিস্টাব্দে মাত্র একবারই কালাম গিয়েছিলেন মার্কিন মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র নাসায়। ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে আবদুল কালাম যোগ দেন ইসরোতে।

প্রথম ভারতীয় মহাকাল উৎক্ষেপণযান এসএলভি-র প্রকল্প আধিকারিক ছিলেন স্বয়ং কালাম। কৈশোরে বিমানচালক হওয়ার স্বপ্ন দেখা আবদুল কালাম হয়ে উঠেছিলেন ভারতের ‘মিসাইলম্যান’। অগ্নি, পৃথ্বী ইত্যাদি তাঁরই সফল সৃষ্টি। ১৯৯২ থেকে ১৯৯৯ পর্যন্ত তিনি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য বিজ্ঞান বিষয়ক পরামর্শদাতা এবং প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা (DRDO)-র সচিব। ভারতকে পরমাণু শক্তিধর দেশে পরিণত করেছিল যে পোখরান বিস্ফোরণ, তারও মূল কারিগর ছিলেন তিনিই।

রাজনৈতিক জীবন:

অটল বিহারী বাজপেয়ীর প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন কে.আর.নারায়ণের স্থলাভিষিক্ত হয়ে ভারতের একাদশতম পদপ্রার্থী হন স্যার এ.পি.জে.আব্দুল কালাম এবং জয়লাভও করেন। ২০০২ সালের ২৫শে জুলাই থেকে ২০০৭ সালের ২৫শে জুলাই পর্যন্ত তিনি রাষ্ট্রপতির স্থানে অধিষ্ঠিত ছিলেন। রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি।

উক্তি

১) স্বপ্ন সেটা নয় যেটা তুমি ঘুমিয়ে দেখো। স্বপ্ন সেটা যেটা তোমায় ঘুমোতে দেয় না।

২) সূর্যের মতো দীপ্তিমান হতে হলে প্রথমে তোমাকে সূর্যের মতোই পুড়তে হবে।

৩) যদি তুমি তোমার কাজকে সম্মান কর, দেখো তোমায় আর কাউকে সম্মান করতে হবে না। কিন্তু তুমি যদি তোমার কাজকে অসম্মান কর, তাহলে তোমায় সবাইকে স্যালুট করতে হবে।

৪) একজন খারাপ ছাত্র একজন দক্ষ শিক্ষকের কাছ থেকে যা শিখতে পারে, তার চেয়ে একজন ভালো ছাত্র একজন খারাপ শিক্ষকের কাছ থেকে অনেক বেশি শিখতে পারে।

৫) প্রতিদিন সকালে এই পাঁচটা লাইন বলো :
    – আমি সেরা।
    – আমি করতে পারি।
    – সৃষ্টিকর্তা সব সময় আমার সঙ্গে আছে।
    – আমি জয়ী।
    – আজ দিনটা আমার।

৬) আমি আবিষ্কার করলাম সবচেয়ে দ্রুতগতিতে বেশী বিক্রি হয়ে যায় সিগারেট ও বিড়ি। অবাক হয়ে ভাবতাম, গরিব মানুষেরা তাদের কঠোর পরিশ্রমে উপার্জিত অর্থ এভাবে ধোঁয়া গিলে উড়িয়ে দেয় কেন।

৭) জীবন একটি কঠিন খেলা। ব্যক্তি হিসেবে মৌলিক অধিকার ধরে রাখার মাধ্যমেই শুধুমাত্র তুমি সেখানে জয়ী হতে পারবে।

৮) আকাশের দিকে তাকাও। আমরা একা নই। পুরো মহাবিশ্ব আমাদের প্রতি বন্ধুত্বসুলভ।

৯) তৃপ্তি একটি চলমান প্রক্রিয়া এবং এটি কোনো আকস্মিক ঘটনা নয়।

১০) যদি একটি দেশকে দুর্নীতিমুক্ত এবং সুন্দর মনের মানুষের জাতি হতে হয়, এ ক্ষেত্রে তিনজন মানুষ পার্থক্য এনে দিতে পারে। তারা হলেন : বাবা, মা এবং শিক্ষক।

১১) সমস্যাকে কখনো এড়িয়ে যেতে চাইবে না। বরং সমস্যা এলে তার মুখোমুখি দাঁড়াবে। সমস্যাবিহীন সাফল্যে কোনো আনন্দ নেই। সব সমস্যার সমাধান আছেই।

১২) জীবনের অভিজ্ঞতা দিয়ে মূলত ৪টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রতি আমি লক্ষ্য করি :
    ক) জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ
    খ) জ্ঞান আহরণ
    গ) অনেক বড় সমস্যায় পড়লেও লক্ষ্য থেকে সরে না আসা
    ঘ) কোনো কাজে সাফল্য ও ব্যর্থতা দুটোকেই নেতৃত্বগুণে সামাল দিতে পারা।

পুরস্কার ও সম্মানপ্রাপ্তি:

ভারতের মিসাইল ম্যান স্যার এ.পি.জে.আব্দুল কালাম নিজের কর্মকাণ্ডের দ্বারা পেয়েছেন বিভিন্ন সম্মান ও পুরস্কার। তিনি মোট ৪০টি দেশীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও মোট ৭টি আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট উপাধি পেয়েছেন। ১৯৮১ সালে পেয়েছেন পদ্মভূষণ, ১৯৯০ সালে পেয়েছেন পদ্মবিভূষণ এবং নিজের অসামান্য বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও প্রযুক্তির জন্য ভারতরত্ন পান ১৯৯৭ সালে! এছাড়াও তাঁর নামে বিভিন্ন রাস্তা, বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, সংস্থা ইত্যাদির নামকরণ করা হয়েছে।

প্রয়াণ:

এই মহান কর্মঠ মানুষটির ২০১৫ সালের ২৭শে জুলাই মেঘালয়ের শিলং শহরে প্রতিষ্ঠিত ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট’ নামক প্রতিষ্ঠানে ‘পৃথিবীকে কীকরে আরো বসবাসযোগ্য করে তোলা যায়’-এই বিষয়ে বক্তব্য দেওয়ার সময় সন্ধ্যা ৬:৩০টা নাগাদ হৃদরোগে আক্রান্ত হন ও সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও শেষরক্ষা হয়না! এই মহান আত্মা ইহলোক ত্যাগ করে ৭:৪৫টা নাগাদ পরলোকগমন করেন।

What's Your Reaction?

Like Like 0
Dislike Dislike 0
Love Love 0
Funny Funny 0
Angry Angry 0
Sad Sad 0
Wow Wow 0