সুলতান মোহাম্মদ ঘুরি এর জীবনী | Biography Of Muhammad Ghuri
সুলতান মোহাম্মদ ঘুরি এর জীবনী | Biography Of Muhammad Ghuri

মুইজউদ্দিন মুহাম্মাদ |
|
---|---|
ঘুরি সালতানাতের সুলতান |
|
রাজত্ব |
১১৭৩-১২০২ (তার ভাই গিয়াসউদ্দিন মুহাম্মাদের সাথে); |
পূর্বসূরি |
গিয়াসউদ্দিন মুহাম্মাদ |
উত্তরসূরি | ঘুর: গিয়াসউদ্দিন মাহমুদ গজনি: তাজউদ্দিন ইলদিজ দিল্লি: কুতুবউদ্দিন আইবেক বাংলা: মুহাম্মাদ বিন বখতিয়ার খিলজি মুলতান: নাসিরউদ্দিন কাবাচা |
জন্ম |
১১৪৯ঘুর, বর্তমান আফগানিস্তান |
সমাধি |
দামিয়াক, ঝিলম জেলা, বর্তমান পাকিস্তান
|
পিতা |
প্রথম বাহাউদ্দিন সাম |
ধর্ম |
ইসলাম (সুন্নি)[১] |
মৃত্যু |
মার্চ ১৫, ১২০৬দামিয়াক, ঝিলম জেলা, বর্তমান পাকিস্তান |
সুলতান মোহাম্মদ ঘুরি (মুহাম্মদ ঘোরী) ছিলেন একজন প্রভাবশালী মুসলিম শাসক, যিনি দ্বাদশ শতকে ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলামি শাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তার পূর্ণ নাম ছিল মুহাম্মদ বিন সাম। তিনি ঘুরিদ সাম্রাজ্যের শাসক ছিলেন, যা বর্তমানে আফগানিস্তান এবং ইরান অঞ্চলের মধ্যে বিস্তৃত ছিল।
মুহাম্মাদ ঘুরি
মুইজউদ্দিন মুহাম্মাদ (ফার্সি: معزالدین محمد), জন্মনাম শিহাবউদ্দিন (১১৪৯ – মার্চ ১৫, ১২০৬), (মুহাম্মাদ ঘুরি বলেও পরিচিত) ছিলেন ঘুরি সাম্রাজ্যের সুলতান। তার ভাই গিয়াসউদ্দিন মুহাম্মাদের সাথে তিনি ১১৭৩ থেকে ১২০২ পর্যন্ত শাসন করেন। এরপর ১২০২ থেকে ১২০৬ পর্যন্ত তিনি সর্বোচ্চ শাসক হিসেবে শাসন করেন।
মুইজউদ্দিন ঘুরি সাম্রাজ্যের অন্যতম মহান শাসক ছিলেন। দক্ষিণ এশিয়ায় মুসলিম শাসনের ভিত্তি তিনি স্থাপন করেছেন। তার শাসনাধীন অঞ্চলসমূহের মধ্যে রয়েছে বর্তমান আফগানিস্তান, ইরান, তুর্কমেনিস্তান, তাজিকিস্তান, পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও ভারত।
১১৭৩ খ্রিষ্টাব্দে মুইজউদ্দিন গজনি শহর দখল করে নেন। তিনি উত্তর ভারতে অভিযানের জন্য এই শহরকে সূচনাস্থল হিসেবে ব্যবহার করেন। এ সময়ে পশ্চিম এশিয়ায় বৃহত্তর খোরাসানের আধিপত্য নিয়ে খোয়ারিজমীয় সাম্রাজ্যের সাথে প্রতিযোগীতায় তিনি তার ভাই গিয়াসউদ্দিনকে সহায়তা করেন। ১১৭৫ খ্রিষ্টাব্দে হামিদ লুদি রাজবংশের কাছ থেকে মুইজউদ্দিন মুলতান জয় করেন। হামিদ লুদিরা পশতু ছিল তবে ইসমাইলি শিয়াদের সাথে তাদের সংযোগের কারণে অনৈসলামিক বলে অভিযোগ ছিল। ১১৭৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি উচ অধিকার করেন। এছাড়াও তিনি ১১৮৬ খ্রিষ্টাব্দে লাহোরের গজনভি রাজ্যকে নিজ অধিকারে নিয়ে আসেন। এটি ছিল তার সর্বশেষ পারস্যায়িত প্রতিপক্ষ।[১] ১২০২ খ্রিষ্টাব্দে গিয়াসউদ্দিনের মৃত্যুর পর মুইজউদ্দিন ঘুরি সাম্রাজ্যের শাসক এবং ১২০৬ খ্রিষ্টাব্দে নিহত হওয়ার আগ পর্যন্ত শাসন করেন।
এ সময় ঘুরি নেতৃবৃন্দের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখা দেয়। ১২১৫ খ্রিষ্টাব্দের দিকে খোয়ারিজমীয়রা ঘুরি সালতানাতের উপর জয়ী হয়। ঘুরি সাম্রাজ্য ভেঙে পড়লেও তৈমুরীয়দের আগমনের আগ পর্যন্ত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কিছু ঘুরি রাজ্য টিকে ছিল। মুইজউদ্দিনের বিজয় অভিযান ভারতে মুসলিম শাসনের ভিত্তি স্থাপন করে। মুইজউদ্দিনের একজন সাবেক দাস কুতুবউদ্দিন আইবেক দিল্লির প্রথম সুলতান ছিলেন।
প্রথম জীবন
মুইজউদ্দিন ১১৪৯ খ্রিষ্টাব্দে বর্তমান আফগানিস্তানের ঘুর অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করেন। তার জন্মের প্রকৃত তারিখ অজ্ঞাত। তার বাবা প্রথম বাহাউদ্দিন সাম ছিলেন ঘুরের একজন স্থানীয় শাসক। মুইজউদ্দিনের বড় ভাই ছিলেন গিয়াসউদ্দিন মুহাম্মাদ। জীবনের প্রথমদিকে তাদের চাচা আলাউদ্দিন হুসাইন তাদের দুজনকে বন্দী করেন। কিন্তু পরে তার ছেলে সাইফউদ্দিন মুহাম্মাদ তাদের মুক্তি দেন। ১১৬৩ খ্রিষ্টাব্দে সাইফ মারা যাওয়ার পর ঘুরি অভিজাত ব্যক্তিরা গিয়াসউদ্দিনকে সমর্থন দেন এবং তার ক্ষমতালাভে সহায়তা করেন। গিয়াসউদ্দিন এরপর মুইজউদ্দিনকে ইসতিয়ান ও কাজুরানের শাসনভার দিয়েছিলেন। বেশ কয়েকজন ঘুরি নেতৃবৃন্দ সিংহাসনের দাবি নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জড়িয়ে পড়লে তাদের পরাজিত করার জন্য মুইজউদ্দিন তার ভাই গিয়াসউদ্দিনকে সহায়তা করেন।
ভারত আক্রমণ
১১৭৫ সালে মুহম্মদ ঘুরী তাঁর সর্বপ্রথম ভারত অভিযানে সৈন্য প্রেরণ করেন। ওই সময় মুলতানে ইসমাইলিয়া সম্প্রদায়ের মুসলিমগণ ইসলাম ধর্মের বিরোধিতা করছিলো এবং সেখানে তাদের প্রাধান্য ছিলো বেশি। মুহম্মদ ঘুরী প্রথমে ইসমাইলিয়াদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে মুলতান অধিকার করেন। তারপর ১১৭৫-৭৬ সালে সিন্ধুর উচদুর্গ অবরোধ করে অতি সহজে দখল করেন। এর দুই বছর পর ১১৭৮ সালে গুজরাটের বাঘেলা বংশের রাজাভীম এর রাজধানী আনহিলওয়ার দখল করতে অসমর্থ হন। দুর্ভাগ্যক্রমে তিনি মুলরাজের নিকট চরম পরাজয়বরণ করতে বাধ্য হন।
তবে নিরুৎসাহ হওয়ার পাত্র নন মুহম্মদ ঘুরী। ১১৭৯ সালে তিনি পেশাওয়ার আক্রমণ করে গজনী বংশের শেষ সুলতান খুসরু মালিককে পরাজিত করেন। খুসরু মালিক তাঁর হাতে বন্দী হলেন। তিনি গজনী রাজ্যের শেষ অবলম্বন লাহোর জয় করেন। সমগ্র পাঞ্জাব অধিকার করার ফলে সমগ্র ভারত জয় করার পথে রাজপুত শক্তি ভিন্ন অন্য কোনো বাধা থাকল না।
তরাইনের প্রথম যুদ্ধ
গজনীদের পতনের পর মুহম্মদ ঘুরী রাজপুতদের তীব্র বাধার সম্মুখীন হন। ১১৯০-৯১ সালের শেষের দিকে তিনি দিল্লি ও আজমীরের চৌহানরাজ পৃথ্বিরাজের রাজ্য ভাতিন্দা দখল করেন। বিজয়ী মুহম্মদ ঘুরীর কথা শুনে রাজা পৃথ্বিরাজ বিশাল সৈন্য-সমাবেশ করে তাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। উত্তর ভারতের রাজাদের সম্মিলিত বাহিনীর সাথে জয়চাঁদ ও মুহম্মদ ঘুরী পেরে উঠেন নি। এর কারণ হিসেবে জয়চাঁদের বিরদ্ধে রাজা পৃথ্বিরাজের বিরূপ থাকাকে দায়ী করা যায়।
তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধ
তবে মুহম্মদ ঘুরী পরাজিত হয়ে মোটেও বিচলিত হলেন না। বরং রাজা পৃথ্বিরাজকে পরাজিত করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হন। তার পরের বছর ১১৯১ সালে এক বিশাল সেনাবাহিনী নিয়ে তিনি পুনরায় তরাইনে উপস্থিত হন। পৃথ্বিরাজের নেতৃত্বে ভারতীয় সম্মিলিত বাহিনীর সাথে মুহম্মদ ঘুরীর সেনাবাহিনীর যুদ্ধ হয়।
মুহম্মদ ঘুরী রাজপুতদের এই মিলিত বাহিনীকে তীব্র আক্রমণ করে শোচনীয়ভাবে পরাজিত করেন। পৃথ্বিরাজের রাজপুত বীরত্ব মুসলিম সৈন্যবাহিনীর নিকট পরাজিত হলো। তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধ ইতিহাসে এক যুগান্তকারী ঘটনা। হিন্দুদের এই যুদ্ধে পরাজয়ের ফলে উত্তর ভারত তুর্কী মুসলিমদের অধিকারে আসে। মুসলিমরা দিল্লির উপকণ্ঠ পর্যন্ত বিস্তৃত হলো। প্রকৃতপক্ষে এই বিজয় ছিলো উল্লেখযোগ্য ঘটনা। হান্সি, সামান, গুহরাম ও অন্যান্য কয়েকটি সুরক্ষিত দুর্গ মুহম্মদ ঘুরীর নিকট আত্মসমর্পণ করে।
উত্তর ভারতের শাসনকর্তা নিয়োগ
গজনীতে প্রত্যাবর্তনের আগে কুতুবউদ্দিনকে ভারতের বিজিত রাজ্যের শাসনকর্তা হিসেবে নিযুক্ত করেন। কুতুবউদ্দিন আইবক ধীশক্তি দ্বারা সমগ্র উত্তর ভারতে প্রভুত্ব কায়েম করেন। তিনি যখন এসব কাজে ব্যস্ত, তখন তাঁর এক সৈনাধ্যক্ষ ভাগ্যান্বেষী সৈনিক ইখতিয়ারউদ্দিন মুহম্মদ বিন বখতিয়ার খলজি ১২০১ (১২০৩>১২০৪) সালে নদীয়া ও লক্ষ্ণৌ বিজয় করেন।
ভাইয়ের মৃত্যুতে দিল্লীর সুলতান পদে অধিষ্ঠান
এদিকে মুহম্মদ ঘুরীর ভ্রাতা গিয়াসউদ্দিনের মৃত্যু হলে ১২০৩ সালে তিনি দিল্লি, ঘুর ও গজনীর সুলতান হন। কিন্তু অল্পদিনের মধ্যে বিদ্রোহ বিপ্লবের ফলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে ওঠে। ১২০৪ সালে মধ্য এশিয়াস্থ খাওয়ারিজমের শাহ আলাউদ্দিন মুহম্মদ ঘুরীকে আক্রমণ করলে তিনি পরাজিত হন। এই শোচনীয় পরাজয়ের খবর সারা রাজ্যে পৌঁছে গেল এবং অধিকাংশ প্রদেশের শাসনকর্তাগণ স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। সবচেয়ে বেশি বিপজ্জনক বিদ্রোহ দেখা দিলো পাঞ্জাবের খোকার জাতির মধ্যে। তারা মুহম্মদ ঘুরীর আনুগত্য অস্বীকার করে স্বাধীনতা ঘোষণা করে। এই খবর পেয়ে মুহম্মদ ঘুরী বিদ্রোহ দমন করেন এবং ১২০৫ সালের মধ্যে খোকারদের চরমভাবে পরাজিত করেন। তবে তাঁর জীবনাবসানের দিন ঘনিয়ে আসছিলো। ১২০৬ সালের ১৫ মার্চ লাহোর থেকে গজনী প্রত্যাবর্তনের পথে আততায়ীর ছুরিকাহত হন।
অবদান:
-
মোহাম্মদ ঘুরি সরাসরি শাসন না করে ভারতীয় শাসনভার তার অন্যতম সেনাপতি কুতুবউদ্দিন আইবক-এর হাতে তুলে দেন।
-
আইবক পরে দিল্লি সালতানাত প্রতিষ্ঠা করেন এবং গুলাম বংশের (Mamluk Dynasty) সূচনা করেন।
মৃত্যু:
-
মৃত্যু: ১২০৬ খ্রিষ্টাব্দে
-
তাকে একবার একদল বিদ্রোহী (সম্ভবত খোকর জাতি) হত্যা করে যখন তিনি ঘাজনির দিকে যাচ্ছিলেন।
What's Your Reaction?






