অভিনেত্রী কাজল এর জীবনী | Biography Of Kajol
অভিনেত্রী কাজল এর জীবনী | Biography Of Kajol
 
                                
| পরিচিতি আছে | শাহরুখ খান DDLJ (দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে যায়েঙ্গে) এর সাথে তার সবচেয়ে জনপ্রিয় সিনেমা | 
| ডাকনাম | কাদস, কাজল | 
| পুরো নাম | কাজল মুখার্জি | 
| পেশা | অভিনেত্রী | 
| জাতীয়তা | ভারতীয় | 
| বয়স | 47 বছর বয়সী (2022 সালে) | 
| জন্ম তারিখ | 1974 সালের 5 আগস্ট | 
| জন্মস্থান | মুম্বাই, মহারাষ্ট্র, ভারত | 
| ধর্ম | হিন্দুধর্ম | 
| রাশিচক্র সাইন | লিও | 
| অনার্স | পদ্মশ্রী (2011) | 
কাজল (জন্ম কাজল মুখার্জী;
৫ আগস্ট ১৯৭৪), এছাড়াও বিবাহত্তোর কাজল দেবগন নামে পরিচিত, একজন ভারতীয় বাঙালি চলচ্চিত্র অভিনেত্রী, যিনি মূলত হিন্দি চলচ্চিত্রে কাজ করেন। ভারতের মুম্বইয়ে মুখার্জী-সমর্থ পরিবারে জন্ম নেওয়া কাজল অভিনেত্রী তনুজা সমর্থ এবং চলচ্চিত্র নির্মাতা শমু মুখার্জী দম্পতির কন্যা। কাজল ভারতের অন্যতম সফল এবং সর্বোচ্চ পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত অভিনেত্রী। কর্মজীবনে তিনি বারটি ফিল্মফেয়ার পুরস্কার মনোনয়নের মধ্যে ছয়টি পুরস্কার জিতেছেন। তার মাসী নূতনের সাথে যৌথভাবে তিনি সর্বোচ্চ পাঁচবার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার বিজয়ের রেকর্ড ধরে রেখেছেন। ২০১১ সালে তিনি ভারত সরকার কর্তৃক দেশের চতুর্থ সর্বোচ্চ সম্মানিত পুরস্কার পদ্মশ্রীতে ভূষিত হয়েছেন।
কাজলের চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় ১৯৯২ সালে তার মায়ের সাথে প্রণয়ধর্মী বেখুদি চলচ্চিত্রে। তার প্রথম বাণিজ্যিক সফল চলচ্চিত্র রহস্যধর্মী বাজীগর (১৯৯৩) এবং যুগান্তকারী প্রণয়ধর্মী চলচ্চিত্র ইয়ে দিল্লাগি (১৯৯৪)। নব্বইয়ের দশকে তিনি কয়েকটি শীর্ষ-উপার্জনকারী চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে আরো সাফল্য অর্জন করেছিলেন, যার মধ্যে অ্যাকশন-থ্রিলার করন অর্জুন (১৯৯৫), হাস্যরস ইশ্ক (১৯৯৭) এবং প্রণয়ধর্মী নাট্য চলচ্চিত্র প্যায়ার কিয়া তো ডরনা ক্যায়া (১৯৯৯), প্যায়ার তো হোনা হি থা (১৯৯৯) এবং হাম আপকে দিল মেঁ রেহতে হ্যাঁয় (১৯৯৯) অন্তর্ভুক্ত। ১৯৯৭ সালে গুপ্ত: দ্য হিডেন ট্রুথ রহস্য চলচ্চিত্রের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ খল অভিনয়শিল্পী বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার অর্জন করেন
এবং ১৯৯৮ সালে মনস্তাত্ত্বিক রহস্য চলচ্চিত্র দুশমন তাকে সমালোচনামূলক স্বীকৃতি এনে দেয়। ১৯৯৫ সালে প্রণয়ধর্মী নাট্য দিলওয়ালে দুলহনিয়া লে যায়েঙ্গে চলচ্চিত্রে এরআরআই পরিবারের কন্যা, ১৯৯৮ সালে প্রণয়মূলক-নাট্যধর্মী কুছ কুছ হোতা হ্যায় চলচ্চিত্রে প্রথমে বালকসুলভ ও পরে আদর্শ ভারতীয় নারী চরিত্রে, ২০০১ সালে পারিবারিক-নাট্যধর্মী কাভি খুশি কাভি গাম... চলচ্চিত্রে নিম্নমধ্যবিত্ত পাঞ্জাবি নারী, ২০০৬ সালে ফনা চলচ্চিত্রে অন্ধ কাশ্মিরি নারী, এবং ২০১০ সালে মাই নেম ইজ খান চলচ্চিত্রে বিচ্ছেদ হওয়া একক মা চরিত্রে অভিনয়ের জন্য রেকর্ড সংখ্যক পাঁচবার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার অর্জন করেন। তার অভিনীত সর্বাধিক উপার্জনকারী চলচ্চিত্র হল অ্যাকশন-প্রণয়ধর্মী দিলওয়ালে (২০১৫) ও ঐতিহাসিক জীবনীমূলক তানহাজী (২০২০)।
প্রাথমিক জীবন এবং পটভূম
কাজল ১৯৭৪ সালের ৫ আগস্ট ভারতের বম্বের (বর্তমানে মুম্বই) বাঙালি-মারাঠি মুখার্জী-সমর্থ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার মা তনুজা সমর্থ অভিনেত্রী এবং বাবা শমু মুখার্জী ছিলেন পরিচালক ও প্রযোজক।তার বাবা শমু ২০০৮ সালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। কাজলের ছোট বোন তানিশা মুখার্জী একজন বলিউড অভিনেত্রী।
তার মাসী ছিলেন অভিনেত্রী নূতন এবং তার নানী শোভনা সমর্থ ও প্রো-পিতামহী ছিলেন রতন বাই; তারা সকলেই ভারতীয় চলচ্চিত্রের সাথে জড়িত ছিলেন। তার দুই চাচা জয় মুখার্জী ও দেব মুখার্জী চলচ্চিত্র প্রযোজক। তার দাদা শশধর মুখার্জী এবং নানা কুমারসেন সমর্থ চলচ্চিত্র নির্মাতা ছিলেন। কাজলের চাচাত বোন রানী মুখার্জী ও শ্রাবণী মুখার্জী বলিউডের অভিনেত্রী এবং চাচাতো ভাই মোহনিশ বেহল অভিনেতা, এবং অয়ন মুখার্জী চলচ্চিত্র পরিচালক
| উচ্চতা | 5 ফুট 3 ইঞ্চি (1.61 মিটার) | 
| ওজন | 57 কেজি (125.6 পাউন্ড) | 
| কোমর | 27 ইঞ্চি | 
| পোঁদ | 34 ইঞ্চি | 
| জামার মাপ | 5 (মার্কিন) | 
| শারীরিক প্রকার | ঘন্টাঘাস | 
| চোখের রঙ | বৃক্ষবিশেষ | 
| চুলের রঙ | কালো | 
১৯৯২-১৯৯৬: অভিষেক ও খ্যাতি অর্জন
কাজলের চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে সতেরো বছর বয়সে ১৯৯২ সালে প্রণয়মূলক-নাট্যধর্মী বেখুদি চলচ্চিত্রে আরেক অভিষিক্ত কমল সাদানাহ ও তার মা তনুজার সাথে।[১০] এই চলচ্চিত্রে তার মা তার চরিত্রের মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করেন। কাজল রাধিকা নামে এক তরুণীর চরিত্রে অভিনয় করেন যে সাদানাহের চরিত্রের প্রেমে পড়ে,
কিন্তু তার পিতামাতার ইচ্ছা তার অন্য একজনের সাথে বিয়ে দেওয়ার। যদিও চলচ্চিত্রটি বক্স অফিসে ব্যর্থ হয়, কিন্তু কাজলের অভিনয় সকলের দৃষ্টি কাড়ে এবং তাকে পরিচালক যুগল আব্বাস-মাস্তানের রোমহর্ষক বাজীগর (১৯৯৩) চলচ্চিত্রের জন্য চুক্তিবদ্ধ করা হয়। ₹১৮২.৫ মিলিয়ন (ইউএস$ ২.২৩ মিলিয়ন) রুপী আয়কারী চলচ্চিত্রটি সে বছরের অন্যতম ব্যবসাসফল এবং চতুর্থ সর্বোচ্চ আয়কারী চলচ্চিত্র ছিল।
মার্কিন চলচ্চিত্র আ কিস বিফোর ডাইং থেকে অনুপ্রাণিত চলচ্চিত্রটিতে শাহরুখ খান, শিল্পা শেট্টি ও সিদ্ধার্থ রায়ের সাথে তিনি প্রিয়া চোপড়া নামে এক তরুণীর ভূমিকায় অভিনয় করেন, যে তার বোনের খুনীর প্রেমে পড়ে। এটি খানের সাথে তার অভিনীত অসংখ্য কাজের মধ্যে প্রথম।
১৯৯৪ সালে কাজল উধার কী জিন্দগি চলচ্চিত্রে জিতেন্দ্র ও মৌসুমী চট্টোপাধ্যায় অভিনীত চরিত্রের দৌহিত্রীর ভূমিকায় অভিনয় করেন। তেলুগু সীতারমাইয়া গারি মানাভারালু চলচ্চিত্রের পুনর্নির্মিত চলচ্চিত্রটি বক্স অফিসে ব্যর্থ হয়। তবে কাজল তার অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে বাংলা চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি পুরস্কার অর্জন করেন।[১৩] এরপর তিনি যশ রাজ ফিল্মসের প্রণয়মূলক নাট্যধর্মী ইয়ে দিল্লাগি চলচ্চিত্রে অক্ষয় কুমার ও সাইফ আলি খানের সাথে অভিনয় করে আরো খ্যাতি অর্জন করেছিলেন।
 এটি বিলি ওয়াইল্ডার পরিচালিত ১৯৫৪ সালের সাবরিনা মার্কিন চলচ্চিত্রের পুনর্নির্মাণ। চলচ্চিত্রে তাকে এক ভৃত্যের কন্যার চরিত্রে দেখা যায়, যে মডেল হবার পর দুই ভাইয়ের সাথে ত্রিভুজ প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে যায়।[১৪] ইয়ে দিল্লাগী চলচ্চিত্রের সাফল্য কাজলের প্রথম আলোচিত সাফল্য হিসাবে বিবেচিত এবং তিনি এই কাজের জন্য তার প্রথম শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন।
১৯৯৫ সালে কাজল দুটি ব্যবসাসফল চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন, সেগুলো হল রাকেশ রোশন পরিচালিত করন অর্জুন এবং আদিত্য চোপড়া পরিচালিত দিলওয়ালে দুলহনিয়া লে যায়েঙ্গে। দুটি চলচ্চিত্রে তার বিপরীতে ছিলেন শাহরুখ খান। প্রথমটি পুনর্জন্মের গল্পে একটি নাট্যধর্মী থ্রিলার, যেখানে তিনি সোনিয়া সাক্সেনা নামক একটি পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করেন যে শাহরুখের চরিত্রের প্রেমে পড়ে। চলচ্চিত্রটি সে বছরে ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আয়কারী চলচ্চিত্র ছিল।
পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় সম্পর্কে তিনি বলেন, "আমি করন অর্জুন চলচ্চিত্রটি করেছি কারণ জানতে চেয়েছিলাম কেবল অলংকার হতে কেমন লাগে। এই চলচ্চিত্রে আমার সুন্দর মুখশ্রী ধরে রাখা ছাড়া আর কিছু করার ছিল না।একই বছরে কাজলের পরবর্তী তিনটি কাজ—তাকত, হালচাল ও গুন্ডারাজ—বাণিজ্যিকভাবে ব্যর্থ হয়। শেষ দুটি চলচ্চিত্রে তিনি তার ভবিষ্যৎ স্বামী অজয় দেবগনের সাথে অভিনয় করেন।[
১৯৯৫ সালে কাজল অভিনীত ও মুক্তিপ্রাপ্ত পঞ্চম চলচ্চিত্র ছিল প্রণয়ধর্মী দিলওয়ালে দুলহনিয়া লে যায়েঙ্গে। এটি শুধু ১৯৯৫ সালের সবচেয়ে ব্যবসাসফল চলচ্চিত্রই নয়, বরং ভারতের সর্বকালের সবচেয়ে সফল চলচ্চিত্র।
মুক্তির সময় চলচ্চিত্রটি বিশ্বব্যাপী ₹ ১.২৩ বিলিয়ন (ইউএস$ ১৫.০৩ মিলিয়ন) আয় করে,[২০] এবং পরবর্তী কালেও নিয়মিত মুম্বইয়ে প্রদর্শিত হতে থাকে।[২১] চলচ্চিত্রটি সমালোচনামূলক দিক থেকেও সফল হয় এবং শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রসহ দশটি বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার অর্জন করে এবং কাজল লন্ডন প্রবাসী ভারতীয় তরুণী সিমরান সিং চরিত্রে তার অভিনয়ের জন্য তার প্রথম শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার অর্জন করেন।
২০০৫ সালে ইন্ডিয়াটাইমস মুভিজ চলচ্চিত্রটিকে "২৫টি অবশ্য দর্শনীয় বলিউড চলচ্চিত্র" তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে এবং চলচ্চিত্রটিকে "এক ধরনের নতুন ধারা সৃষ্টিকারী" বলে মন্তব্য করে।[২৩] এই বছরের এক ফিরে দেখা চলচ্চিত্র পর্যালোচনায় রেডিফ.কম-এর রাজা সেন বলেন "কাজলকে সিমরান চরিত্রে অভিনয়ের জন্য চাতুর্যের সাথে নির্বাচন করা হয়, শুরুতে সিমরান হিসেবে বিনয়াভিমানী ও অনিচ্ছুক হলেও পরে
তিনি আবেগ-উত্তেজনা ও বিশ্বাসপ্রবণতা দেখিয়েছিলেন।[২৪] পর্দায় তার রসায়নকে আলাদাভাবে উল্লেখ করার প্রয়োজন নেই, কারণ এটি ইতোমধ্যে কিংবদন্তিতুল্য হয়ে গেছে।" ১৯৯৬ সালে কাজল বিক্রম ভাট পরিচালিত মারপিট-নাট্যধর্মী বম্বাই কা বাবু চলচ্চিত্রে সাইফ আলি খান ও অতুল অগ্নিহোত্রীর সাথে অভিনয় করেন। মুক্তি পর ছবিটি সমালোচনামূলকভাবে এবং বক্স অফিসে ব্যর্থ হয়
১৯৯৯-২০০১: উত্থান-পতন ও কভি খুশি কভি গম...
১৯৯৯ সালে অজয় দেবগনকে বিয়ের পর কাজল প্রকাশ ঝার নাট্যধর্মী দিল ক্যায়া করে চলচ্চিত্রে অজয় ও মহিমা চৌধুরীর সাথে পার্শ্ব ভূমিকায় অভিনয় করেন। তিনি দেবগন অভিনীত অনন্ত কিশোরের জীবনে দ্বিতীয় নারী নন্দিতা রাই চরিত্রে অভিনয় করেন। ফিল্মফেয়ারকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে কাজল বলেন, "আমার এই চরিত্রের অভিনয় করতে রাজি হওয়ার একমাত্র কারণ হল এতে ধূসর ছায়া ছিল। আমি কিশোরের স্ত্রীর চরিত্রটি হয়তো প্রত্যাখ্যান করতাম। কারণ আমার মনে হয়েছে তাতে আমার করার কিছু ছিল না।"
চলচ্চিত্রটি মুক্তির পর ব্যাপক নেতিবাচক পর্যালোচনা দেখা যায়। সমালোচক শর্মিলা টেলিকুলাম কাজল সম্পর্কে লিখেন যে "একমাত্র তিনিই বিচারবুদ্ধি সম্পন্ন চরিত্রে কাজ করেছেন।" ব্যবসায়িকভাবেও চলচ্চিত্রটি ব্যর্থ হয়। তার পরবর্তী মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র ছিল সতীষ কৌশিকের নাট্যধর্মী চলচ্চিত্র হাম আপকে দিল মেঁ রেহতে হ্যাঁয়। চলচ্চিত্রটি সমালোচনামূলক ও ব্যবসায়িকভাবে সফলতা অর্জন করে।
অনিল কাপুরের বিপরীতে তার চরিত্রের প্রতারিত স্ত্রী মেঘা চরিত্রে অভিনয় করে
তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে আরেকটি ফিল্মফেয়ার পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন। চলচ্চিত্রটি ভারতে নারী কেন্দ্রিক চলচ্চিত্র হিসাবে ব্যবসায়িক সাফল্য অর্জন করে গণমাধ্যমে বিপুল প্রচার লাভ করে। ১৯৯৯ সালের কাজলের তৃতীয় ও শেষ মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র ছিল প্রণয়মূলক নাট্যধর্মী হোতে হোতে প্যায়ার হো গয়া। জ্যাকি শ্রফ, অতুল অগ্নিহোত্রী ও আয়েশা ঝুলকার সাথে অভিনীত এই চলচ্চিত্রটি সমালোচনামূলক ও ব্যবসায়িকভাবে ব্যর্থ হয়।
পরের বছর তিনি তার স্বামী অজয়ের প্রযোজনা সংস্থার রাজু চাচা চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। ₹৩০০ মিলিয়ন (ইউএস$ ৩.৬৭ মিলিয়ন) রুপী ব্যয়ে নির্মিত শিশুতোষ চলচ্চিত্রটি সে সময়ে বলিউডের সবচেয়ে ব্যয়বহুল চলচ্চিত্র ছিল। মুক্তির পর চলচ্চিত্রটি নেতিবাচক পর্যালোচনা লাভ করে এবং বক্স অফিসে ব্যর্থ হয়।
২০০১ সালে কাজলের মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম চলচ্চিত্র ছিল রাহুল রাওয়াইলের হাস্যরসাত্মক কুছ খাট্টি কুছ মিঠি। এতে তিনি জন্মের সময়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া যমজ বোন টিনা ও সুইটি খান্না চরিত্রে দ্বৈত ভূমিকায় অভিনয় করেন। এই চলচ্চিত্রটিও ব্যবসায়িকভাবে ব্যর্থ হয় এবং সমালোচকদের নিকট থেকে নেতিবাচক পর্যালোচনা দেখা যায়। রেডিফ.কম-এর সাভেরা আর সোমেশ্বর এই চলচ্চিত্রে কাজলের কাজ করার সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেন এবং তার অভিনয়কে "নিষ্প্রাণ" বলে বর্ণনা করেন।
এই বছরের শেষভাগে তিনি করণ জোহর পরচিালিত পারিবারিক নাট্যধর্মী কভি খুশি কভি গম... চলচ্চিত্রে শ্রেষ্ঠাংশে অভিনয় করেন। চলচ্চিত্রটি ভারতে ব্লকবাস্টার এবং ২০০৬ সালের পূর্ব পর্যন্ত আন্তর্জাতিক বাজারে সর্বোচ্চ আয়কারী ভারতীয় চলচ্চিত্র ছিল। অমিতাভ বচ্চন, জয়া বচ্চন, শাহরুখ খান, হৃতিক রোশন, ও কারিনা কাপুরের সাথে অভিনীত চলচ্চিত্রটিতে তিনি দিল্লির চাঁদনী চক এলাকার এক তরুণী পাঞ্জাবি নারী অঞ্জলি শর্মা চরিত্রে অভিনয় করেন, যে শাহরুখ খান অভিনীত ধনী রাহুল রাইচন্দের প্রেমে পড়ে এবং এ নিয়ে রাহুলের সংসারে জটিলতার সৃষ্টি হয়। কাজল চিত্রধারণকালে পাঞ্জাবি ভাষায় স্বচ্ছন্দে কথা বলতে না পারায় শুরুতে কিছুটা সমস্যায় পড়েন।
তবে তিনি প্রযোজক যশ জোহর ও তার কলাকুশলীদের সহায়তায় সঠিক উচ্চারণ রপ্ত করে নেন। তার হাস্যরসাত্মক-নাট্যধর্মী অভিনয় বিপুল সমাদৃত হয় এবং তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে তার তৃতীয় ফিল্মফেয়ার পুরস্কার ও দ্বিতীয় স্ক্রিন পুরস্কার-সহ একাধিক পুরস্কার অর্জন করেন। তরণ আদর্শ তাকে "প্রথম-সারির" বলে আখ্যায়িত করেন এবং প্রত্যাশা করেন তার পাঞ্জাবি উচ্চারণ তাকে অনেক প্রশংসিত করবে। দ্য হিন্দু এক পর্যালোচনায় লিখে, "কাজল তার যথাযথ সময়জ্ঞান ও সূক্ষ্ণ দীর্ঘস্থায়ী মুখাভঙ্গী দিয়ে সবর্দায় পুলকিত ছিলেন।
কভি খুশি কভি গম... ছবির সফলতার পর কাজল পূর্ণ-সময় অভিনয় থেকে বিরতি নেন। দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, "আমি চলচ্চিত্র ছাড়ছি না, আমি কেবল বেছে বেছে কাজ নিচ্ছি। ভাগ্যবশত আমি এমন অবস্থানে আছি যেখান থেকে আমি বাছাই ও পছন্দ করতে পারি।"[৫৩] তিনি আরও বলেন চলচ্চিত্র থেকে বিরতি নেওয়ার অন্যতম কারণ হল বৈবাহিক জীবনে মনোযোগ দেওয়া ও "সংসার শুরু করা"।
২০০৬-২০১০: ফনা এবং মাই নেম ইজ খান
কাজল ২০০৬ সালে আমির খানের বিপরীতে কুনাল কোহলির প্রণয়ধর্মী থ্রিলার চলচ্চিত্র ফনা দিয়ে চলচ্চিত্রাঙ্গনে প্রত্যাবর্তন করেন। তবে তিনি ফনাকে তার প্রত্যাবর্তন বলে অস্বীকার করে বলেন, "আমি কখনো
অবসর নেইনি। আমি শুধু একটু বিরতি নিয়েছি।"[৫৫] বিশ্বব্যাপী ₹ ১ বিলিয়ন (ইউএস$ ১২.২২ মিলিয়ন) আয়কারী চলচ্চিত্রটি বক্স অফিসে ব্যাপক সফলতা অর্জন করে।[৫৬] তিনি অন্ধ কাশ্মিরী তরুণী জুনি আলি বেগ চরিত্রে অভিনয় করেন, যে অনিচ্ছাকৃতভাবে আমির খান অভিনীত একজন সন্ত্রাসীর প্রেমে পড়ে।
চলচ্চিত্রটি এবং কাজলের অভিনয় বিপুল প্রশংসিত হয়। পর্যালোচক সুদিশ কমত বলেন কাজল "এই চলচ্চিত্রটি দেখার একমাত্র কারণ" এবং আরও বলেন, "কাজল এমনভাবে অভিনয় করেছেন যে তিনি পর্দা থেকে কখনোই বিরতি নেননি এবং তার উপস্থিতি দিয়ে চলচ্চিত্রটিকে উজ্জীবিত করেছেন।
ব্লুমবার্গ-এর এক পর্যালোচনায় উল্লেখ করা হয় যে, "কাজল এখনো সহজাতভাবে পর্দাকে আলোকিত করার ক্ষমতা রয়েছে, এবং তিনি আমির খানের পদ্ধতিগত দক্ষতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ গুটিকয়েক প্রধান অভিনেত্রীদের একজন।"ফনা চলচ্চিত্রে তার কাজের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে তার চতুর্থ ফিল্মফেয়ার পুরস্কার এবং দ্বিতীয় জি সিনে পুরস্কার অর্জন করেন।
ফনার সাফল্যের পর কাজল এই দশকের বাকি সময় সবিরাম কাজ করে গেছেন। তিনি পরে তার স্বামী অজয় দেবগনের পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র ইউ মি অউর হাম (২০০৮)-এ আলৎসহাইমারের রোগে আক্রান্ত নারী পিয়া চরিত্রে অভিনয় করেন। দেবগন কাজলের এই চলচ্চিত্রে অভিনয় সম্পর্কে বলেন, "সে সবসময় শুটিং শুরুর পূর্বে তার চরিত্রের সারকথা নিয়ে আপোসহীন থাকেন। যেহেতু বাড়িতেই চিত্রনাট্য রচনার কাজ হয়েছিল, কাজল সেখানে উপস্থিত ছিলেন এবং তার অভিনীত চরিত্রেও কিছু যোগ করতেন।
"
চলচ্চিত্রটি মুক্তির পর বক্স অফিসে মধ্যম মানের ব্যবসা করে এবং তার অভিনয়ের জন্য সমালোচকদের নিকট থেকে ইতিবাচক পর্যালোচনা লাভ করে। উদিতা ঝুনঝুনওয়ালা উল্লেখ করেন, "কাজল এখানে তার ভঙ্গুর ও নাজুক অবস্থা সম্পর্কে অজ্ঞ নারী চরিত্রে পুরোপুরিভাবে তার নিজস্বতা নিয়ে ফিরে এসেছেন। তিনি অসাধারণ।"রাজা সেন বলেন,
"[কাজল] শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তার বন্ধ চোখ দিয়ে সুখী পরিবেশ তৈরি করতে পারেন এবং প্রথমার্ধ্বে তার জন্য কষ্টসাধ্য না হলেও আলৎসহাইমারের রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর যখন তিনি তার জীবনের সবকিছু ভুলতে শুরু করেন, কাজল এই দুইয়ের মধ্যে স্পষ্ট পার্থক্য গড়ে তুলেন।" এই কাজের জন্য কাজল শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে আরেকটি ফিল্মফেয়ার পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন।
পুরস্কার ও মনোনয়ন
কাজল ছয়টি ফিল্মফেয়ার পুরস্কার অর্জন করেছেন, তন্মধ্যে দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে যায়েঙ্গে (১৯৯৫), কুছ কুছ হোতা হ্যায় (১৯৯৮), কভি খুশি কভি গম... (২০০১), ফনা (২০০৬) এবং মাই নেম ইজ খান (২০১০) চলচ্চিত্রের জন্য পাঁচটি শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে এবং গুপ্ত: দ্য হিডেন ট্রুথ (১৯৯৭) চলচ্চিত্রের জন্য একটি শ্রেষ্ঠ খল অভিনয়শিল্পী বিভাগে। শিল্পকলায় অনন্য অবদানের জন্য তিনি ২০১১ সালে ভারত সরকার কর্তৃক প্রদত্ত চতুর্থ সর্বোচ্চ ভারতীয় বেসামরিক সম্মননা পদ্মশ্রীতে ভূষিত হন।
What's Your Reaction?
 Like
        0
        Like
        0
     Dislike
        0
        Dislike
        0
     Love
        0
        Love
        0
     Funny
        0
        Funny
        0
     Angry
        0
        Angry
        0
     Sad
        0
        Sad
        0
     Wow
        0
        Wow
        0
     
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 

 
                                                                                                                                                     
                                                                                                                                                     
                                                                                                                                                     
                                                                                                                                                     
                                                                                                                                                     
                                             
                                             
                                             
                                             
                                            