মুঘল সম্রাট শাহ জাহানের জীবনী ।। Biography Of Shah Jahan

মুঘল সম্রাট শাহ জাহানের জীবনী ।। Biography Of Shah Jahan

May 20, 2025 - 02:05
May 20, 2025 - 17:04
 0  0
মুঘল সম্রাট শাহ জাহানের জীবনী ।। Biography Of Shah Jahan

সম্রাট শাহজাহান (১৬০৭-১৬৫৮) মুঘল সাম্রাজ্যের একজন মহান সম্রাট ছিলেন, যিনি ১৬২৮ থেকে ১৬৫৮ সাল পর্যন্ত শাসন করেছেন। তাঁর শাসনামল ছিল ইতিহাসের অন্যতম স্বর্ণযুগ, বিশেষত স্থাপত্য এবং সংস্কৃতির ক্ষেত্রে। তিনি পৃথিবীর অন্যতম প্রখ্যাত স্থাপত্য সৌধ তাজমহল নির্মাণের জন্য খ্যাত।

৫ম মুঘল সম্রাট

রাজত্ব

১৯ জানুয়ারি ১৬২৮ – ৩১ জুলাই ১৬৫৮

রাজ্যাভিষেক

১৪ ফেব্রুয়ারি ১৬২৮, আগ্রা

পূর্বসূরি

জাহাঙ্গীর (আইনত)
শাহরিয়ার মির্জা (কার্যত)

উত্তরসূরি

আওরঙ্গজেব

সমাধি

তাজমহল
দাম্পত্য সঙ্গী

মোট ৪ জন বিবাহিত স্ত্রী

  • কান্দাহারি বেগম
  • মমতাজ মহল
  • ইজউন্নিশা বেগম
  • লীলাবতীবাই
রাজবংশ

মুঘল

পিতা

জাহাঙ্গীর

মাতা

রাজকন্যা মানমতি

ধর্ম

সুন্নি (ইসলাম)

সম্রাট শাহ জাহান:(১৬২৮-১৬৫৮)

মুঘল সাম্রাজ্যের শাসক ছিলেন যিনি ১৬২৮ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৬৫৮ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ভারত উপমহাদেশ শাসন করেছেন। শাহ জাহান নামটি এসেছে ফার্সি ভাষা থেকে যার অর্থ "পৃথিবীর রাজা" তিনি ছিলেন বাবর, হুমায়ুন, আকবর এবং জাহাঙ্গীরের পরে পঞ্চম মুঘল সম্রাট।

তিনি সম্রাট জাহাঙ্গীর এবং তার হিন্দু রাজপুত স্ত্রী তাজ বিবি বিলকিস মাকানির সন্তান। সিংহাসন আরোহনের পূর্ব পর্যন্ত শাহাজাদা খুররাম নামে পরিচিত ছিলেন। ১৬২৭ সালে পিতা জাহাঙ্গীরের মৃত্যুর পর তার উত্তরাধিকারী হিসেবে সিংহাসনে আরোহণ করেন। তার শাসনামলে মুঘলরা স্থাপত্য এবং সাংস্কৃতিক গৌরবের শিখরে পৌঁছেছিল। 

প্রাথমিক জীবন:

শাহজাহান ছিলেন সম্রাট আকবরের নাতি এবং সম্রাট জাহাঙ্গীরের ছেলে। তাঁর জন্ম১৬০৭ সালে , পৃথিবীর অন্যতম ঐতিহাসিক শহর, আগ্রাতে। শাহজাহান ছোটবেলা থেকেই একজন সাহসী এবং গুণী সৈন্য ছিলেন, এবং তাঁর শৈশবকাল ছিল কিছটা রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে, কারণ মুঘল সাম্রাজ্যে ক্রমাগত ক্ষমতার লড়াই চলছিল।

শাহজাহানের রাজত্ব:

শাহজাহান ১৬২৮ সালে তাঁর বাবা সম্রাট জাহাঙ্গীরের মৃত্যুর পর মুঘল সাম্রাজ্যের সম্রাট হন। তিনি শাসনের প্রথম দিকে সাম্রাজ্যকে অভ্যন্তরীণ বিপর্যয় থেকে রক্ষা করার জন্য সাফল্যের সাথে যুদ্ধ করেন। তাঁর শাসনামল ছিল শান্তি ও সমৃদ্ধির সময়, যদিও শেষের দিকে তাঁর শাসন ক্ষমতার জন্য অভ্যন্তরীণ দুর্নীতির ফলে কিছু অস্থিরতা দেখা দেয়।

স্থাপত্য নিদর্শন:

সম্রাট শাহজাহান অত্যন্ত শিল্পানুরাগী ছিলেন। তাজমহল ছাড়াও তার অমর কীর্তি গুলো হচ্ছে:

  • জামা মসজিদ, দিল্লি, ভারত
  • শাহজাহান মসজিদ, সিন্ধু, পাকিস্তান
  • মতি মসজিদ, লাহোর, পাকিস্তান
  • শালিমার গার্ডেন, লাহোর, পাকিস্তান
  • ওয়াজির খান মসজিদ, লাহোর, পাকিস্তান
  • দেওয়ান-ই-আম
  • দেওয়ান-ই-খাস
  • ময়ূর সিংহাসন

সম্রাট শাহজাহান ও মমতাজের প্রেমের সংক্ষিপ্ত ঘটনা:

সময়টা ছিল ১৬১২ খ্রিষ্টাব্দ। সম্রাট শাহজাহানের বয়স তখন ২০ বছর। একদিন আগ্রার বাজার দিয়ে যাওয়ার পথে হঠাৎ শাহজাহানের চোখ চলে যায় পরমা সুন্দরী এক মেয়ের দিকে। আরজুমান্দ বেগম নামের মেয়েটির বয়স ১৫। প্রথম দেখাতেই আরজুমান্দ বেগমকে ভালো লেগে যায় শাহজাহানের। পরবর্তীতে ১৬১২ খ্রিস্টাব্দের ১০ মে মমতাজের বিয়ে হয় যুবরাজ খুররমের (সম্রাট শাহজাহান) সঙ্গে। (কিন্তু উইকিপিডিয়ায় বলা আছে বিয়ের সময় তাদের দুজনের বয়স ছিল যথাক্রমে ১৫ ও ১৪)। তবে এর আগে রাজনৈতিক কারণে পারস্যের রাজকন্যাকে বিয়ে করেন সম্রাট শাহজাহান। পরবর্তীতে সম্রাট শাহজাহান তার স্ত্রীর নাম পরিবর্তন করে রাখেন মমতাজ মহল।মমতাজই ছিলেন শাহজাহানের সব চেয়ে প্রিয় বেগম । উনিশবছরের বিবাহিত জীবনে মমতাজের মোট চোদ্দটি সন্তান হয়। মমতাজ মহল ১৬৩১ সালে ৩৯ বছর বয়সে বুরহানপরে ১৪তম সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মারা যান। স্ত্রী হারানোর শোকে মুহ্যমান শাহজাহান তাঁর প্রাণপ্রিয় স্ত্রীর স্মৃতির জন্য নির্মাণ করেন ভালবাসার এই অপরূপ নিদর্শন। স্ত্রীর মৃত্যুর পর সাতদিন সাতরাত শাহজাহান কিছু খান নি। ঘর থেকেও বার হন নি। সাতদিন পর শাহজাহান বাইরে বেরোলেন। তখন তার চুলের রং ধুসর হয়ে গেছে , মুখ ফ্যাকাসে।

তাজমহল:

শাহজাহান সবচেয়ে বেশি পরিচিত তাঁর প্রেমের স্মৃতিস্বরূপ "তাজমহল" নির্মাণের জন্য। এটি একটি মহান স্থাপত্য শিল্পের উদাহরণ, যা তিনি তাঁর স্ত্রী মমতাজ মহলের মৃত্যুর পর তার স্মৃতিতে তৈরি করান। তাজমহল, যা ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে তালিকাভুক্ত, বিশ্বের অন্যতম সুন্দর এবং মহিমান্বিত স্মৃতিস্তম্ভ। এটি একটি বিশাল মার্বেল মসজিদ এবং স্মৃতিসৌধ, যা মুসলিম স্থাপত্যশিল্পের শ্রেষ্ঠ উদাহরণ।

শেষ জীবনে সংকট:

শাহজাহানের শাসনামল শেষ হয়েছিল তাঁর নিজ পুত্র আওরঙ্গজেবের হাতে। আওরঙ্গজেব এক ত্রাস সৃষ্টি করে এবং ১৬৫৮ সালে শাহজাহানকে বন্দি করে। শাহজাহান পরবর্তী আট বছর আগ্রার ফোর্টে বন্দি অবস্থায় কাটান, যেখানে তিনি তাজমহলের দিকে দেখেই তাঁর দিনগুলি অতিবাহিত করেন। তাঁর মৃত্যুর পর, তাজমহলে তাঁর লাশ মমতাজ মহলের সাথে সমাধিস্থ করা হয়।

উত্তরাধিকার:

শাহজাহান মুঘল সাম্রাজ্যকে একটি সমৃদ্ধ, সাংস্কৃতিকভাবে বিকশিত এবং স্থাপত্যে অত্যন্ত উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন। তবে তাঁর শাসনকাল শেষের দিকে বেশ কিছু অভ্যন্তরীণ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিল, এবং তাঁর পুত্র আওরঙ্গজেব সম্রাট হয়ে সাম্রাজ্যকে এক কঠিন ও সাংস্কৃতিক দৃষ্টিতে সংকীর্ণ পথে পরিচালিত করেন।

শাহজাহান, তাজমহল এবং তাঁর শাসনের ঐতিহাসিক গুরুত্ব আজও মানব ইতিহাসে স্মরণীয়।

মমতাজ মহল ছিলেন সম্রাট শাহজাহানের অতি প্রিয়তমা সম্রাজ্ঞী। যিনি ছিলেন সেই সময়কার সবচেয়ে অভিযাত্রা এবং সবচেয়ে ধনী নারী। সম্রাট শাহজাহানের সঙ্গে তার বিবাহের ১৯ বছর পরে তার মৃত্যু হয়। বিবাহের বছরের মধ্যে ১৪ জন সন্তানের জন্ম দেন। বলা বাহুল্য 14 তম সন্তানের জন্ম দেওয়ার সময় দীর্ঘ ক্লান্তিকর পথযাত্রায় অসময়ে প্রসবের ফলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের জন্য তার মৃত্যু ঘটে। তার মৃত্যুর পর মোট তিনবার সমাধি প্রদান করা হয়েছিল। তার তিন নম্বর তথা একেবারে শেষ সমাধির নাম হল তাজমহল।

What's Your Reaction?

Like Like 0
Dislike Dislike 0
Love Love 0
Funny Funny 0
Angry Angry 0
Sad Sad 0
Wow Wow 0